#অনুভূতিহীন,পর্ব ৮,০৯
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
০৮
পুরোটা সময় ধরে আমি রিদ ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম। চার দিকে সবাই হাত তালি দিচ্ছে আমি ছারা। আমি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার এমন বলদের মতো চাহুনিতে মনে হলো খুব আনন্দ হচ্ছে তার। সে একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে উঠে গেলো।
একটু পর তাদের গায়ে হলুদ শুরু হবে। ফাহিম ভাইয়ার সাথে বসা তার হবু বৌ। এতোটা সুন্দরি নয় সে। গায়ের রং শ্যামলা। তবে মুখটা খুব মায়াবি দেখতে।
এই দিনটা অব্দি আসতে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে তাদের। ফাহিম ভাইয়ার বাবা কিছুতেই বিয়েতে রাজি হচ্ছিলো না। প্রথম’তো তিনি প্রেম করে বিয়ে বিষয় টা পছন্দ করেনা। আর দ্বিতীয়’তো, মেয়ের গায়ের রং চাপা।
সে চেয়েছিলো তার ছেলের জন্য পরীর মতো একটা মেয়ে নিয়ে আসতে। পরে ফাহিম ভাইয়ার জেদের কাছে হেরে বিয়েতে রাজি হয় তার বাবা।
ওদেরকে হলুদ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হটাৎ দেখি রিদ ভাইয়া দেওয়াল ঘেষে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার এমন চাহোনির অর্থ খুজে পেলাম না আমি। এক প্রকার বিব্রতকর অবস্থায় পরে গেলাম।
এর পর কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– তোমাকে আজ শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে আরশি। ইচ্ছে করছে তোমাকে সামনে দাড় করিয়ে এভাবেই তাকিয়ে থাকি অনন্তকাল।
খুশিতে যেন আজ বাকবাকুম করতে মন চাইছে আমার। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,
– আমি জানি শাড়িতে আমায় সুন্দর লাগে। এতোক্ষন পর কেও এসে বলতে হবে না তা।
তাকে একটু রাগ দেখানোর চেষ্টা করলাম। করবো নাই বা কেন? বাড়িতে নিজে গিয়ে তার সামনে অনেক্ষন ঘুরেছি, কিন্তু এভাবে ফিরেও তাকায় নি। আর এখন আসছে পিরিত দেখাতে, হুহ্।
বাসায় যখন সে রেডি হতে বলে বাইরে চলে গেলো, তখন আমি শাড়ি টা নিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।
কারণ কখনো শাড়ি পরা হয়নি আগে। বাসায় যখন কেউ থাকতো না, তখন মায়ের শাড়ি অনেকবার লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের সাথে ধরে আয়নায় দেখতাম আমাকে কেমন লাগে। আবার দ্রুত রেখে দিতাম। কারণ হুট করে কেু এই অবস্থায় দেখে ফেলে তাহলে এর চেয়ে লজ্জা আর কিছু হবে না।
লজ্জায় কখনো মা কে বলিনি আমায় শাড়ি পরা শিখিয়ে দাও। তখন যদি শিখে নিতাম তাহলে এখন এভাবে দাড়িয়ে থাকতে হতো না।
আমি অনেক গল্প পড়েছি, যেগুলোতে হিরো এসে হিরোইনকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। আমার বেলায়ও যদি এমন হয়? একটু পর যদি রিদ এসে যদি বলে, দাও আমি পড়িয়ে দিচ্ছি। ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে আমার।
কিন্তু এ লজ্জা বেশিক্ষন থাকলো না এর পর মামি এসে বললো,
– কিরে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন, শাড়ি পরতে পারিস না?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, না মামি।
এর পর মামি একটু হেসে আমায় শাড়ি পরিয়ে দিলো। বললো,
– শাড়ি পরা শিখে নিবি। নতুন বৌ দের শাড়িতেই বেশি সুন্দর লাগে।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালাম।
এর পর যখন শাড়ি পরা শেষ হলো, তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখলাম সত্যিই বেশ লাগছে আমায়। রিদ ভাইয়া ফেরার পর আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সে প্রশংসা লরবে। কিন্তু আমার সব অনুভুতি মাটির সাথি মিশিয়ে দিয়েছিলো ওই অনুভুতিহিন মানুষ টা। আমার দিকে তাকিয়েও স্বাভাবিক ভাবে নিজে রেডি হতে শুরু করলো। প্রশংসা নামক শব্দটা নেই তার কাছে।
তবে এখন পশংসা টা ভালোই লাগলো। আমার ভাবনার ইতি ঘটলো। তখন দেখলাম রিদ ভাইয়া অলরেডি সকলের সাথে মিলে কেক কাটছে। আর আমাকেও ডাকছে।
আমার রাগ হলো প্রচুর। যখন দেখলাম রিদ ভাইয়ার মেয়ে ফ্রেন্ড টা তার মুখে কেল তুলে দিচ্ছে। খুব হিংসে হচ্ছে আমার। কেন যানি মনে হচ্ছে ওই মেয়েটাকে একটা থাপ্পর মারতে পারলে ভালো লাগতো। কারণ আমি মেয়েটা একটু বেশিই জেলাস। নিজের জিনিসে কারো নজর সহ্য হয় না।
,
,
পর দিন বিয়ে হলো তাদের। বেশি মানুষ নেই। অল্প কয় জন মিলে বিয়েটা শেষ করে বৌ কে বাড়ি নিয়ে এলো। ফাহিম ভাইয়াদের বাড়ি এসে নানান কথা কানে আসছিলো আমার।
কেউ বলছে,
– ছবিতে যেম দেখেছিলাম বাস্তবে এতো সুন্দর না।
আবার কেও বলছে,
– এই মেয়ের জন্যই ফাহিম এতো কিছু করলো? যাই হোক কপালে যে আছে সে ই তো আসবে।
পাশে একজন বললো,
-এই মেয়ে আমাদের ফাহিমকে কিভাবে এতোটা বসে আনলো কে জানে? যে ফাহিমের এই মেয়েকেই লাগবে? এ তো ব্রামন হয়ে চাঁদ ছুয়েছে। জাদু টোনা করলো কিনা তাও সন্দেও।
আমার খুব রাগ হচ্ছে তাদের কথা শুনে। নতুন বৌ এসব শুনলে নিশ্চই অনেক কষ্ট পাবে। মানুষ গুলো এমন কেন?
একটা কালো ছেলে যদি কোনো সুন্দরি মেয়েকে বিয়ে করে, তখন তা সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। বলে, তোমাদের খুব সুন্দর মানিয়েছে। আর যদি কোনো শেমলা মেয়ে ফর্শা ছেলেকে বিয়ে করে, তাহলে সবাই বলে জাদু টোনা করেছে নাকি?
হুম এটাই সমাজ। আমার কিছু বলতে ইচ্ছে হলেও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। কারণ এখানে সত্য কিছু বললেও সবাই বলবে, মেয়েটার বয়াবহার ঠিক নেই। বড় দের মুকের উপর কথা বলে। এসব ভেবে চুপ করে রইলাম আমি। আর একটু দুড়েই ফাহিম ভাইয়া আর নিরব ভাইয়ার সাথে দাড়িয়ে তাকতে দেখলাম রিদ ভাইকে। আমি ওদিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই নিরব ভাই লজ্জায় চুপচাপ ওখান থেকে চলে গেলো। হয়তো কাল রাতের ঘটনাটার জন্য।
আমার হাসি পাচ্ছে খুব। বেচারা কত জোরেই না চর টা খেলো।
,
,
বিকেলে আমায় বাসায় পৌছে দিয়ে সে চলে গেলো হসপিটালে। আমি সব চেন্জ করে খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। গ্রিষ্মের গরম, অস্থির লাগছে খুব।
মামিকে দেখলাম নিজের রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। বেলনিতে এসে দেখলাম আকাশে ঘেঙ উড়ে বেড়াচ্ছে। গ্রিষ্ম থেকেই বৃষ্ট শুরু হয়। এর পর তো পুরাই বর্ষা কাল।
কেটে গেলো আরো দুদিন। আমার হয়তো যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এই ৮-১০ দিনে মানুষটা খুব কাছের হয়ে গেছে আমার। ওখানে ফিরে গিয়ে থাকতে পারবো কি না জানিনা। তবে এটা জানি, তাকে খুব মিস করবো আমি। খুব বাজে ভাবে মিস করবো।
আজ সন্ধায় মা ফোন দিয়ে বললো, আমার নিয়ে যেতে আসবে। খুশি হওয়ার বিপরিতে কেন যানি মন খারাপ লাগছে আমার। এখন মনে হচ্ছে বাবা মায়ের মতো এখন এটাও আমার একটা ফ্যামিলি।
সন্ধায়ই বাসায় চলে আসলো সে। আমি সেই সন্ধা থেকেই তার আশে পাশে ঘুর ঘুর করছি। হুটহাট ইচ্ছে করছে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। আবার কোনো এক অজানা কারণে নিজেকে বুঝিয়ে থামিয়ে নিই আমি।
রাতে ঘুমানোর সময় তাকে খুব করে বলতে ইচ্ছি হচ্ছে,
– আজ সোফায় না। আমার সাথে একই বিছানায় থাকবেন? আমি আপনার বুকে মাথা রেখে চুপটি মেরে ঘুমি থাকবো।
কিন্তু তাও বলতে পারছি না। চুপচাপ এক কাত হয়ে শুয়ে আছি।
রাত তখন অনেক গভির। আমার চোখে এখনো ঘুম ধরা দিচ্ছে না। বার বার মানুষটার দিকে তাকাচ্ছি। খুব শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। কিন্তু তার এই শান্ত ভাব যে আমার মাঝে অশান্তের ঢেউ তুলছে বার বার৷ সেটা কি সে জানে?
আর চেয়ে থাকতে পারলাম না। ওর কাছে চলে গেলাম। পাশে বসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। খুব ঘুমাচ্ছে। কেও হয়তো তুলে নিয়ে গেলেও তার হুস থাকবে না। আমি চুপচাপ তার হাত টা সরিয়ে তার বুকের উপর শুয়ে পরলাম। চুপটি মেরে শুয়ে তার হৃদপিন্ডের শব্দ শুনতে লাগলাম। যা হওয়ার হোক। তার বুকে মাথা রেখেই ঘুমাবো আজ।
To be continue,,,,,,
#অনুভূতিহীন (পর্ব ৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
আমি চুপচাপ রিদ ভাইয়ার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে রইলাম। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছি তাকে। আজ এমন লাগছে কেন? হুট করে এতো সাহস কোথায় থেকে আসলো তাও বুঝতে পারছি না আমি।
তার ঘুমন্ত গালে ছোট্ট করে একটা চুমু এঁকে দিলাম। তার ছোট ছোট দাড়ির মাঝে আলতো করে গাল ঘসতে লাগলাম।
ইশ লজ্জায় খুব হাসি পাচ্ছে আমার। আজ কি পাগল হয়ে গেলাম আমি?
তবে অবাক লাগছে মানুষটার এখনো ঘুম ভাঙছে না। আমি চাই তার ঘুম ভেঙে যাক। আমাকে এভাবে দেখুক। এর পর তার প্রতিক্রিয়া কি হয় তা শেষ দিন হলেও দেখে যেতে চাই।
কিন্তু না, আমার এতো কিছুর পরও ঘুম ভাঙলো না তার। এতো গভির ঘুম কিভাবে হয় একটা মানুষের?
যাই হোক এতোকিছু না ভেবে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম আমি। আজ ঘুম আসতে খুব একটা দেরি হলো না। তার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করতেই ঘুম রাজ্যের পরী রা এসে আমার কাছে ধরা দিয়েছে।
রাত আরো গভির হলো। রিদ চোখ মেলে তাকালো। আরশিকে দেখে একটুও অবার হলো না সে। কারণ একটু আগের কর্মকান্ড সবটাই দেখলো সে। তবুও কিছু বলছে না।
আরশির দিকে তাকিয়ে দেখে খুব সুখের ঘুম ঘুমিয়ে আছে।
রিদ আস্তে করে তাকে বুক থেকে সরিয়ে নিলো। তারপর পাজাকোলা করে তুলে খাটের উপর শুইয়ে দিলো। সেই সন্ধা থেকে মেঘ জমেছে পরিবেশ টা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। আরশির গায়ে পাতলা একটা কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার মুহুর্তেই রিদের হাত টা ধরে ফেললো আরশি। ঘুমের ঘোরে কি যেন বকে আবার চুপচাপ হয়ে গেলো সে। রিদ পাশে বসলো তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আরশি ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত নারিকে এতোটা মায়াবি লাগে তা আরশিকে প্রথম দিন ঘুমের মাঝে দেখেই বুঝেছে সে। তবুও এই মুখ যেন তার কাছে প্রতিদিনের নতুন নতুন আবিষ্কার।
আজও কপালে একটা চুমু দিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।
পরিবেশ টা হালকা ঠান্ডা। শিতল পরিবেশে দাড়িয়ে মুখটা উপরের দিকে করে চোখ বুজে রইলো রিদ। কেন সে এতোটা মায়ায় আটকে যাচ্ছে? সে তো চায়নি এখনি এতোটা মায়ায় আটকে যেতে। ভেবেছিলো আরশিকে যখন একেবারে নিয়ে আসবে, তখন না হয় একটু একটু করে মায়া জড়াবে।
এই কয়েক দিনে আরশিকে যা বুঝেছে তাতেই মনে হলো এখন মায়া জড়িয়ে গেলে বাড়ি ফিরে কষ্ট পাবে মেয়েটা। তাই তো দুজনের মাঝে এতোটা ডিস্টেন্স রাখছে বার বার। আরশি কাছে আসতে চাইলেও দুরে চলে যাচ্ছে সে। ভালোবাসাটা হুট করে শুরু না হয়ে ধিরে ধিরেই তৈরি হোক। কারণ হুট করে গড়ে উঠে জিনিস আবার হুট করেই ভেঙে যায়।
এনিতেও আরশিকে দেখে মনে হচ্ছে নিজেকে অনেক মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে। যা কেটে উঠতেও হয়তো কয়েকদিন লেগে যাবে। মেয়েটা একটু বেশিই আবেগি। তাই হয়তো নিজের আবেগ কন্ট্রোল করতে না পেরে এমনটা করেছে।
,
,
মা বাবা সকালের গাড়িতে উঠলো। আসতে আসতে প্রায় দুপুর হয়ে যাবে। এদের মতো পার্সনাল গাড়ি নেই তাদের।
সকাল থেকেই রান্না বাড়ার কাজ চলছে। আগে এক পরিচয় থাকলেও এখন অন্য পরিচয়ে এই বাড়িতে আসছে। আমাকে মামি রান্না ঘরেই যেতে দিলো না। আর গিয়েও আর কি করবো? রান্নাবান্নায় তো আমি একেবারেই ঢেঁড়স।
বাবা মা গাড়িতে উঠলো এটা শোনার পর সেই সকাল থেকে বেলকবিতে বসে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে অনেক দিন বাবা মাকে দেখিনি। সত্যি বলতে তাদের ছারা এতদুড়ে কখনো থাকা হয়নি তাই এমনটা লাগছে। যেন বাবা মা আসতেই দৌড়ে গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরবো আমি।
আবার বাবা মায়ের সাথে এখান থেকে চলে যাবো। ভাবতেই মন খারাপ হচ্ছে খুব।
দুপুরের আগে বাবা মা এসেছে। রিদ ভাই আজ বাড়িতেই আছে। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার মনটা খারাপ খুব।
দুপুরের খাবার শেষে আমি রিদ ভাইয়াকে বললাম,
– কাল সকালে তো চলেই যোবো, আজ আমার একটা ইচ্ছে পুরন করবেন?
ওনি সাথে সাথেই বললো,
– হুম বলো,,,
– আজ বিকেলটা আমাকে দিবেন আপনি? সারা বিকেল ঘুরতে হবে আমাকে নিয়ে।
ওনি আমার দিকে বরাবর তাকিয়ে বললো,
– নিতে পারি একটা শর্তে।
আমি জিজ্ঞাসা ভঙ্গিতে তাকালাম,
– কি?
– ওই দিনের মতো আজও শাড়ি পড়তে হবে। নীল শাড়ি, হাতে নীল কাঁচের চুড়ি।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
– এই মুহুর্তে নীল শাড়ি নীল চুড়ি এসব পাবো কই?
কথার মাঝে আমাকে থামিয়ে সে নীল শাড়ি আর কাচের চুড়ি এনে আমার সামনে বাড়িয়ে দিলো। আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– এগুলো কখন আনলেন?
– আজকে।
– কেন আনলেন?
– তোমার জন্য..
– আমার জন্য কেন?
– তোমাকে দেখবো তাই?
– আমাকে আপনার ভালো লাগে তাই না?
সে আর কথা বাড়ালো না। আমায় বললো,
– শাড়ি পরা শেষ হলে আমায় ডাক দিও।
– কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারি না।
– ঐ দিন কে পড়িয়ে দিয়েছিলো?
– মামি,,,
– আচ্ছা আমি মা কে পাটাচ্ছি।
,
,
মেঘলা আকাশ, হালকা বাতাসে রাস্তার পাশে ফুল গুলো দোল খাচ্ছে। একটা রিক্সায় করে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু আজ ওই দিনের মতো আর দুড়ে সরে বসেনি। বরং এক হাতে ধরে রেখেছে আমায়। আমি একটু অবাক হলেও কিছু বললাম না। বললে পরে যদি কিছু মনে করে আবার ছেড়ে দেয়? তার চেয়ে চুপচাপ থাকাই ভালো।
তবে আমার মাথায় অন্য একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আগামি কালই বাড়ি ফিরে যাবো৷ আর বাড়ি ফেরা মানেই আসিফের কাছাকাছি চলে যাওয়া। সে কি এই কয় দিনে নিজেকে সুধরে নিয়েছে, নাকি আগের মতো আমার পেছনে পরবে কে জানে?
আর জন্ম থেকে গড়ে উঠা বিক্রিত মস্তিষ্কের মানুষ এতো সহজে কিভাবে সুধরায়? না জানি আমার কপালে কি আছে?
আচ্চা পুরো ব্যাপার টা রিদ ভাইয়াকে খুলে বললে সে কি করবে? আমাকে যেতে দিবে না? কয়মাস পরই আমার এক্সাম। যেতেই হবে আমাকে।
নাকি আমার সাথে কুমিল্লা চলে যাবে? আর ওদের সাথে ঝামেলা করবে? কিন্তু ওর মতো একটা সহজ সরল মানুষ কখনোই আসিফের সাথে ঝামেলায় পারবে না। এতে আরো রিদ ভাইয়ারই ক্ষতি হবে। আর ওর কিছু হলে আমি কি করে সইবো?
আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– ভাইয়া,,,,
ওনি আমার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকালেন। হয়তো সে ভাইয়া ডাক টা মেনে নিতে পারেনি। আমি আবার বললাম,
– তো আপনাকে কি ডাকবো?
– এতো দিন কি ডেকেছো?
– কিছুই ডাকিনি, এমনি ইশারা দিলেই বুঝতেন।
– তাহলে এখন ভাইয়া ডাকলে কেন?
– মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে তাই।
সামনে থেকে রিক্সা ওয়ালা মামা বললো,
– কাজিন বিয়ে করেছেন তাই না মামা?
ওনি ছোট করে উত্তর দিলো,
– হুম কেন?
সে রিক্সা চালাতে চালাতে বললো,
– কাজিন বিয়ে করলে এই একটা সমস্যা। আমিও আমার চাচাতো বোনকেই বিয়ে করেছিলাম। আব্বা আর চাচা মিলে আমাদের বিয়ে করিয়ে দিয়েছিলো। এর পর আমার বৌ ও এমন যার তার সামনে আমায় ভাইয়া ডেকে বসতো।
রিদ ভাই একটু হেসে বললো,
– এখনো কি ভাইয়া ডাকে?
– কি কন মামা, এখন কি আর সেই পিচ্চি আছে? বড় হয়েছে না? মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে ডাকে আরকি। তবে আমার প্রথম বাচ্চা হওয়ার পর যখন ওই বাচ্চাটা বড় হচ্ছিলো, তখনও সে হটাৎ হটাৎ আমায় ভাইয়া ডেকে বসতো। একদিন আমার ছেলেটা শুনে ফেলে তা। আর আমাকে এসে মামা ডাকা শুরু করে। বলতো, মামা আম্মু ডাকছে, মামা খেতে আসেন, মামা আজ বের হবেন না? এর পর তাকে যখন বললাম, মামা ডাকস কেন? তখন সে উত্তর দিলো, আপনি আম্মুর ভাই হলে আমার তো মামাই হবেন তাই না?
ওদের কথা শুনে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছি। সামান্ন ভাইয়া শব্দটাকে বাচ্চার মামা অব্দি টেনে নিয়ে গেলো।
কিন্তু আমার পাশে বসে থাকা রিদ ভাই থুক্কু জামাই এক নাগারে হেসেই চলছে। আমি একটু রাগ নিয়ে বললাম,
– এই মামা রিক্সা থামান।
এর পর সে রিক্সা থামাতেই আমি নেমে গেলাম। রিদ ভাই আমার দিকে চেয়ে বললো,
– কি হলো, নেমে গেলে কেন?
– আপনিও নামুন, এক সাথে হাটবো।
পাশাপাশি হাটছি দুজন। তার পাশে হাটতে হাটতে বললাম,
– আমার না খুব কষ্ট হবে আপনাকে ছারা থাকতে।
সে সোজাসুজি ভাবে বললো,
– এটা তোমার আবেগ।
আমি দাড়িয়ে গেলাম,
– তাহলে ভালোবাসা কোনটা?
– তোমার এখনো ভালোবাসার বয়স হয় নি।
আমি একটু ঠোঁট উল্টে বললাম,
– হুম আপনি তো বুড়ো হয়ে একবারে পেঁকে গেছেন। যেভাবে কথা বলেন মনে হয় আপনি কয়েক বাচ্চার বাপ।
ওনি একটু হেসে বললো,
– আমার সেই বাচ্চা গুলো যার পেটে জমা আছে সে নিজেই তো এখনো ম্যাচিউর হতে পারেনি। নিজেই তো এখনো একটা বাচ্চা। তাহলে কিভাবে এখন আমার বাচ্চা গুলো সামলাবে? সময় হলে আমার বাচ্চা সামলানোর দায়িত্ব দিবো তাকে।
লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। ওর মুখে দেখি কিছুই আটকায় না। খবিস একটা।
To be contunue……..