৭.
অর্ণা প্রচন্ড উচ্ছ্বাসের সাথে গোছগাছ করছে। খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে ওর রাহিপুর বিয়ে নিয়ে। যখন বিয়ে কি জিনিস সেটা বুঝতেও শিখেনি তখন থেকেই কোন বিয়ে বাড়িতে গেলেই বলতো আমার রাহিপুর বিয়েতেও আমি এভাবে নাচবো, ওভাবে সাজবো, একে দাওয়াত করবো, ওকে দাওয়াত করবো।
ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়তেই আনমনেই হেসে ফেললো ও। রিখিয়া ভ্রু নাচিয়ে কি জিজ্ঞেস করতেই ও মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়।
রাহির ভার্সিটির পাট চুকেছে দুইবছর হলো। আরো আগে থেকেই ওর বিয়ের জন্য দেখাশোনা চলছিলো। গায়ের রঙ কালো হওয়ায় রাহিকে পাড়া প্রতিবেশী এমনকি নিজের আত্মীয়স্বজনদের কাছেও নানান সময় নানান কথা শুনতে হয়েছে। কিছু কিছু পাত্রপক্ষ তো মুখের উপর বলেই দিতো এমন কালো মেয়েকে কারা বাড়ির বউ করবে?
অথচ একমাত্র এই গায়ের রঙ ছাড়া আর কোন খুত নেই ওর। রান্নাবান্না, ঘরের কাজ, হাতের কাজ, সেলাই সবকিছুতেই ও একদম পটু। এমনকি পড়াশুনোতেও সবসময় টপ করেছে।
গায়ের রঙ কালো হওয়ার পেছনে ওর তো কোন দোষ নেই। সবাই ই’তো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। তাও মানুষ অন্যকে হেয় করার সুযোগ পেলে কখনোই তা হাতছাড়া করেনা।
অর্ণার আজ এতোটা খুশি হওয়ার পেছনে মুখ্য কারণটা হলো ওর ভালোমানুষ বোনটা যে কিনা এতদিন বিনা কারণে প্রতিটা পদক্ষেপে মানুষের কাছে অপমানিত হয়েছে এবার অন্তত এসবের হাত থেকে রেহাই পাবে।
দুজনেই পরিপাটি হয়ে তৈরি হয়ে নেয়। গোছগাছ সম্পন্ন হতেই রিখিয়া ওর দাভাইকে ফোন করে।
” দাভাই কোথায় তুমি? আমরাতো তৈরি হয়ে গেছি। কিন্তু তোমার তো এখনো আসার নামই নেই । ”
” এইতো চলে এসেছি। আর জাস্ট দুই মিনিট। ”
রায়ান গাড়ি নিয়ে আসতে আসতে আরো পাঁচমিনিটের মতন লেগে যায়।
রায়ান গাড়ি নিয়ে আসলেই রিখিয়া আগে গিয়ে পেছনে বসে পড়ে। অর্ণাও পেছনে বসতে গেলে একটা ধমক মেরে বলে, ” তোরকি আমার দাভাইকে ড্রাইভার মনে হয়। পেছনে আসছিস কেন? সামনে গিয়ে বস। ”
অর্ণা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে, ” তাহলে তুই সামনে বস। আমি পেছনে যাচ্ছি। ”
রিখিয়া চোখ গরম করে তাকাতেই অর্ণা ভয়ে ঢোক গিলে বলে, ” আচ্ছা ঠিক আছে। আমিই সামনে যাচ্ছি। ”
এরপর আর কথা না বাড়িয়ে ও চুপচাপ সামনে গিয়ে বসে।
রিখিয়া অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছে।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। গাড়িতে বসে থাকা তিন মানব মানবীর মাঝে বিরাজ করছে পিনপতন নিরবতা। কেউই কারো সাথে কোন কথা বলছেনা। রিখিয়া একমনে ফোনে স্ক্রল করে যাচ্ছে।
আর রায়ান তো গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে একটু পরপর তার প্রেয়সীকে দেখে চলেছে। ব্যাপারটা যে অর্ণা বুঝতে পারছেনা তেমনটা নয়। বুঝতে পেরেই ওর আরো অস্বস্তি হচ্ছে। বারবার লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে ও। মাথা নিচু করেই বসে আছে, একটাবারের জন্যেও মুখ তুলে তাকাতে পারছেনা। এতোটাই লজ্জা পাচ্ছে ।
চাঁদপুর যেতে বেশ অনেকটা সময় লাগবে। তাই রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে রায়ান কিছু চকলেট, চিপস আর আইসক্রিম কিনে নেয়। প্যাকেটগুলো ওদের হাতে দিয়ে রায়ান আবার গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দেয়। রিখিয়া আর অর্ণা আইসক্রিমটা খেয়ে নেয়।
অর্ণা কিছুক্ষণ ইতস্তত করে রায়ানকে বলে, ” আপনি কিছু খাবেননা? ”
রায়ান কিছু বলার আগেই রিখিয়া বলে, ” তুই কি গাধী নাকি? দেখছিস না গাড়ি চালাচ্ছে, গাড়ি চালাতে চালাতে খাবে কি করে? তবে একটা কাজ করতে পারিস। একটা চকলেট খুলে খাইয়ে দিতে পারিস। ”
রিখিয়ার কথা শুনে অর্ণার চোখগুলো বড়বড় হয়ে যায়।
” আমি! ”
” হ্যা তুই। তো কি হয়েছে? আমার ভাইকে খাইয়ে দিলে কি তোর হাত ক্ষয়ে যাবে? ” মুখ ভেঙছে কথাটা বলে রিখিয়া।
তাতেও অর্ণার কোন হেলদুল নেই। ও কিছুতেই পারবেনা।
এবার রায়ান মুখ খুলে, ” থাক ছুটকি। যদিও খিধেয় আমার পেট চু চু করছে। কিন্তু কি আর করার? আমায় খাইয়ে দিলে তো আবার কারোর হাতে ফুসকা পড়ে যাবে। তাই থাক বাদ দে। ”
ওদের দুভাইবোনের কথার প্যাঁচে পড়ে শেষমেশ রায়ানকে অর্ণার খাইয়ে দিতে হয়। এরকম বিপাকে আর কখনো পড়তে হয়নি ওকে। একরাশ লজ্জা এসে যেন আজ ঘিরে ধরেছে চারদিক থেকে।
আর এদিকে পেছনে বসা রিখিয়া ওর অবস্থা দেখে মুচকি হাসি হাসতে থাকে।
বেশ অনেকটা সময় পর ওদের গাড়ি এসে থামে অর্ণাদের বাসার সামনে। পুরো বাড়িটাই আজ নানান রঙের ম্যাজিক বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। অর্ণারা খুব ধনী না হলেও আর্থিক অবস্থা ওদের অতোটাও খারাপ নয়। ছয়রুমের একতলা একটা টিনশেড ঘর। এর সামনে আছে আরেকটা টিনের তৈরি দোচালা ঘর। আর বাড়ির সামনেই রয়েছে বিশাল এক উঠোন। সেখানেই প্যান্ডেল টানানো হয়েছে। অতিথিদের খাওয়ার ব্যবস্থা ওখানেই করা হবে।
রায়ান ওদেরকে নামিয়ে দিয়েই চলে গেছে। অর্ণা অনেকবার অনুরোধ করার পরেও ও থাকেনি। ওকটা মেয়ের সাথে এভাবে একটা যুবক ছেলেকে আসতে দেখলে গ্রামের মানুষ ব্যাপারটাকে খারাপভাবে নিতে পারে। তাই আর বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেনি। ওদের গেইট পর্যন্ত নামিয়ে দিয়েই তাই ও ফেরত চলে এসেছে। অর্ণাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখেই ভেতর থেকে ওর ফুফাতো বোন দিয়া দৌড়ে এসে বলে, ” যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই। কথাটা একদম ঠিক। আমরা সেই কোন সকালে এসে বসে আছি আর বিয়ের কনের মাত্র আসার সময় হলো? ”
দিয়ার কথা শুনে অর্ণার মাথায় যেন গোটা আকাশটাই ভেঙ্গে পড়লো। দিয়া কিসব বলছে কিছুই ওর মাথায় ঢুকছেনা। বিয়েতো ওর বড় বোন রাহির, তাহলে দিয়া কেন ওকে বিয়ের কনে বলছে?
(চলবে)———-
৮.
কোনরকম টলমল করতে করতে অর্ণা ভেতরে প্রবেশ করলো। ওর মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বিয়ে বাড়ির হই হুল্লোড় একদম অসহ্য মনে হচ্ছে।
অথচ একটু আগেও কতোটা হাসিখুশিই না ছিলো ও। শুধুমাত্র একটা সংবাদ মুহূর্তের মাঝে সব কেমন উলটপালট করে দিলো।
হাতের ব্যাগটা কোনরকম রুমে ছুড়ে মেরেই অর্ণা ছুটলো ওর মায়ের কাছে। মায়ের কাছ থেকেই ওর সব প্রশ্নের জবাব জানতে হবে। অর্ণাকে এরকম উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে আসতে দেখে অর্ণার মা দ্রুত ওর বাবাকেও খবর পাঠায়।
————–
রিখিয়া বাইরে দাঁড়িয়ে ছটফট করছে। অনেকক্ষণ হলো অর্ণা আর ওর বাবা মা একটা ঘরে ঢুকে কথা বলছে। এদিকে টেনশনে রিখিয়ার অবস্থাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কি হয়েছে সবটা না জেনে রায়ানকেও খবরটা দিতে পারছেনা।
বেশ অনেকটা সময় পর অর্ণা ওঘর থেকে বেরিয়ে আসে। অর্ণার চোখমুখের অবস্থা দেখে রিখিয়ার বুকে মোচড় দিয়ে উঠে। অর্ণাকে দেখে একদম নিষ্প্রাণ মনে হচ্ছে। মুখটা রক্তশূন্য হয়ে আছে।
রিখিয়ার এ মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিৎ সেটাই ও বুঝতে পারছেনা। তখন থেকেই অর্ণা ঘরে এসে একপাশ ফিরে শুয়ে আছে। রিখিয়ার সাথে একটা কথাও বলেনি। অন্যপাশ ফিরে শুয়ে থাকলেও রিখিয়া কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারছে যে অর্ণা কান্না করছে। কারণ থেকে থেকে একটু পরপর ওর শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
————
অর্ণার সাথে এখনো পর্যন্ত রিখিয়ার বাড়তি কোন কথা হয়নি। অর্ণার আচরণে রিখিয়া অবাকের চূড়ান্ত। একদম স্বাভাবিক বিহেভ করছে, যেন কিছুই হয়নি। এতোটা শান্ত কিকরে থাকছে অর্ণা সেটাই রিখিয়ার মাথায় ঢুকছেনা।
হলুদের দিন বিকালবেলা গ্রামের মুরব্বি মহিলারা রাহি আর অর্ণাকে তাদের মাঝে বসিয়ে নানা ধরনের গীত গাইলো। ছেলেমেয়েরা নাচ গান করে পুরো বিয়ে বাড়ি মাতিয়ে রাখলো।
সন্ধ্যার পরপরই হলুদ। অর্ণা আর রাহি দুজনকেই কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করিয়ে সাজানো হয়েছে। দুজনকেই ভারি মিষ্টি লাগছে দেখতে। কাঁচা ফুলের গহনায় সেজেছে ওরা দুবোন। রিখিয়াকেও দিয়া আর অর্ণার অন্য কাজিনরা মিলে জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে।
সকলের সাজ কমপ্লিট হতেই রিখিয়া অর্ণাকে নিয়ে পাশের একটা খালি ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
কপট রাগ দেখিয়ে রিখিয়া অর্ণাকে প্রশ্ন করে, ” এসব কি করছিসটা কি তুই? ”
” দেখতেই তো পাচ্ছিস কি করছি। ”
” অর্ণা রাগ উঠাবি না বলে দিলাম । ”
এবার আর অর্ণা নিজেকে সামলাতে পারলোনা। রিখিয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
অর্ণার অবস্থাটা বুঝতে পেরে রিখিয়া ওর মাথায় খানিকক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
নিজেকে শান্ত করে অর্ণা এবার বলতে শুরু করে,
” রাহি আপুর যখন বিয়ে ঠিক হলো তখনও বাবা মা পাত্রপক্ষের চালাকিটা ধরতে পারেনি। পারলে হয়তো বিয়েটাই ঠিক করতোনা। বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে যখন সব আত্মীয়স্বজনদের বলা হয়ে গেছে তখন একদিন ওরা এসে হুট করে বলে ওদের বাড়ির ছোট ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে। বাবা মা রাজি না হওয়ায় তারা থ্রেট দেয় যদি আমার সাথে ওদের বাড়ির ছোট ছেলেকে বিয়ে না দেয় তাহলে নাকি ওরা এই বিয়েটা ভেঙ্গে দিবে। হলে দুটো বিয়েই হবে নাহলে একটাও না। এর আগেও রাহিপুর অনেকগুলো বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো। এবারের শকটা বোধহয় ও আর নিতে পারতোনা। আসলে পাত্রপক্ষের লোকগুলো খুব চালাক বুঝেছিস। তাই এভাবে চালাকি করে ওদের বিগড়ে যাওয়া নেশাখোর আর মেয়েবাজ ছেলেটাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিতে চাইছে।
একদিকে রাহিপুর জীবন অন্যদিকে বাবার মান সম্মান সব জড়িয়ে আছে। আমার যে কিছুই করার নেই। নিজেএ বাবাকে সকলের সামনে অসম্মানিত হতে দেখতে পারবোনা।
অর্ণার কথা শুনে রেগে রিখিয়া অর্ণার কাঁধ ঝাকিয়ে বলে, ” বাকিদেরটা জীবন আর তোরটা জীবন নয়? তুই এক্ষুণি গিয়ে সবাইকে বলবু যে তুই এ বিয়েটা করছিস না। চল আমার সাথে। ”
রিখিয়া অর্ণার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলে অর্ণা ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ” তুইতো দেখিসনি রাহিপুকে কিভাবে সাফার করতে হয়েছে। প্রতি পদে পদে ওকে মানুষের কাছে কতোটা লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। এখন যদি শেষমুহূর্তে এসে বিয়েটা ভেঙ্গে যায় তখন কি হবে তুই ভাবতে পারছিস? ”
অর্ণা আর কিছু না বলে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।
রিখিয়াও বুঝতে পারছে যে এভাবে হবেনা। তাই ও আর দেরি না করে রায়ানকে ফোন করে সবটা জানায়। রায়ানতো কিছুক্ষণ থ মেরে বসে ছিলো সবটা শুনে। ও আর বেশি কিছু চিন্তা না করেই দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কিছুদূর যাওয়ার পর ওর ফোনটা বেজে উঠে। অনিচ্ছা সত্যেও ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অর্ক ফোন করেছে। ব্লুটুথটা কানে দিয়ে রায়ান কথা বলে। অর্ককে সবটা বলতেই অর্ক রায়ানকে অর্কদের বাসায় আসতে বলে।
” কিন্তু। ”
” কোন কিন্তু নয় তুই এক্ষুণি আমাদের বাসায় আয়। তাছাড়া এতো রাতে ওখানে গিয়ে কোন লাভও হবেনা। আমরা কাল সকালেই যাবো ওখানে। ”
রাতও প্রায় বারোটার মতো বাজে। এখন যাওয়াটা ঠিক হবেনা তাই রায়ানও আর দ্বিরুক্তি না করে অর্কদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
———
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। পার্লারের মেয়েরা এসে বিয়ের দুই কনেকেই সাজিয়ে দিয়ে গেছে। রাহির গায়ের রঙ কালো হলেও চেহারাটা বেশ মিষ্টি। পুরো চেহারাটাতেই যেন মায়া ভরা। পবোনের দিকে তাকিয়ে অর্ণা একটা মিষ্টি হাসি হাসে। মনে মনে বলে, এ গায়ের রঙের জন্য কত কথাই না শুনতে হয়েছে ওর বোনকে। আচ্ছা ঐ মানুষগুলো কি আজও ওর বোনকে দেখে একই মন্তব্য করবে। আবার নিজে নিজেই উত্তর দেয়, করতেও পারে। কিছু কিছু মানুষের মন মানসিকতা কখনোই পরিবর্তন হয়না।
———–
অর্ণা ওর বাবা আর মায়ের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রিখিয়া আর রাহি। আর ওদের সামনে আছে রায়ান আর তার সাথে একটা ছেলে। ছেলেটাকে অর্ণা বা রিখিয়া কেউই চেনেনা। তবে পাঁচ ফিট আট ইঞ্চি হাইটের ফরসা মতন এই সুদর্শন ছেলেটার চোখদুটো রিখিয়ার বেশ চেনা মনে হচ্ছে। রায়ানের এমন কোন বন্ধুকে এর আগে কখনো দেখেছে বলে ওর মনে পড়ে না।
সবটা জেনে রাহির নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। আজ ওর জন্যেই ওর ছোট বোনের জীবনটা নষ্ট হতে যাচ্ছিলো। কিন্তু না বাবা মা যা’ই বলুক সবটা জানার পর ও এই বিয়েটা কিছুতেই হতে দেবেনা। তাতে যদি ওর নিজের বিয়েটাও ভেঙ্গে যায় তো ভাঙবে।
অর্ণার বাবা ‘আলমগির হোসেন’ ঠিক কি করবেন কিছু বুঝতে পারছেন না। অর্ণার সাথে যে ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথে বিয়ে হলে যে ওর জীবনটা শেষ হয়ে যাবে সেটা উনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন। এখন তো বরপক্ষের আসার সময়ও হয়ে এসেছে। তাদেরকে কি জবাব দিবে এখন?
উনার ভাবনাচিন্তার মাঝেই বাইরে থেকে সকলের হাঁকফাক শোনা যায় ‘বর এসেছে, বর এসেছে’।
পরে ঠিক করা হলো অর্ণা আর রাহি দুজনের হবু বরকে ডেকে এনে আগে তাদের সাথে কথা বলবেন। তারপর তিনি নিজের সিদ্ধান্ত নিবেন।
দুজন আসলে অর্ণার হবু বরকে দেখে অর্ণা আর রিখিয়া দুজনেরই চক্ষু ছানাবড়া।
(চলবে)———–
জাহানারা রিমা