অন্তরালে_তুমি
পর্ব_৫
#প্রত্যাশা
❤
১ ঘন্টা যাবত কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি ..এটা কেমন ধরণের পানিশমেন্ট..এত বড় মেয়ে কিনা এইভাবে কানধরে দাঁড়িয়ে থাকবে ..স্কুল লাইফেও জীবনে কান ধরতে হয় নাই আর আজকে কিনা এই বজ্জাতটা আমাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে ..ইচ্ছেতো করছে মাথা ফাটিয়ে ফেলি ..
—-বলছি যে স্যার আর কতক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো আমার না খুব পা ব্যাথা করছে …
এই শয়তানটা তো আমার কথা কানেই তুলছে না মনের সুখে বসে বসে মোবাইল টিপছে ..
—-স্যার ও স্যার ..শুনুন না প্লিজ ..
ব্যাটা খবিশ নির্ঘাত গার্লফ্রেন্ডের সাথে চ্যাট করছে তাই তো আমার কথা কানে যাচ্ছে না ..এইযে মি. কালা শুনছেন..
এবার উনি আমার দিকে তাকাই ..আল্লাহর কি চাহনি মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আমায় পুড়িয়ে ফেলবে ..উনি মোবাইল টা টেবিলের উপর রেখে আমার সামনে এসে দাঁড়ান ..
—-হুম তো কি বলছিলে ..
—-না না মানে আমার পা ব্যাথা করছে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ..
—-তো তাতে আমি কি করতে পারি ..
—-সরি স্যার ..তখন আমার কোনো দোষ ছিল না আমিতো কফিটা ওই জিসানের বাচ্চা জিসানটাকে মারতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও সরে গিয়ে সেটা আপনার গায়ে পরে যায় ..তার জন্য সরি ..আমি ইচ্ছে করে করেনি ..
—-আচ্ছা বুঝলাম ..তো তখন কি বলেছিলে ?
—-কখন?
—-রাস্তায়
এইরে উনারতো দেখছি মনে আছে ..এখন কি বলি ..আল্লাহ আজকের মতো বাঁচিয়ে দাও।।
—-কি হলো চুপ কেনো?
—-না মানে স্যার তখন তো আর জানতাম না আপনি আমাদের প্রধান অথিতি জানলে কখনো ওই ভাবে কথা বলতাম না ..আসলে শাড়ির মধ্যে কাদা লাগার কারণে রেগে গিয়েছিলাম ..
উনি হঠাৎ করে আমার কোমর টেনে উনার কাছে নিয়ে আসেন ..উনার এমন কাজে আমি রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি ..
—-কি হলো এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন .?
—-স্যার ছাড়ুন আমায়
—-যদি না ছাড়ি..
—-তাহলে আমি প্রিন্সিপাল স্যার কে বিচার দিবো ..
—-আচ্ছা তো কি বলবে ?
—-বলবো আপনি আমার সাথে অসভ্যতা করেছেন ..
—-লাইক সিরিয়াসলি!!!তোমার কি মনে হয় প্রিন্সিপাল তোমার কথা বিলিভ করবে ..
—-বিলিভ না করার কি আছে আমি সত্যি কথায় বলবো ..
উনি আমার কোমর ছেড়ে দিয়ে বলে
—-স্টুপিড!!
নিজে যেন খুব ভালো ..আপনি তো স্টুপিডের বাপ্..ইশশ যদি কথাটা জোড়ে বলতে পারতাম
—-হেই স্টুপিড গার্ল নাও লিভ মাই রুম ..
হুম কি একটা ভাব মনে হচ্ছে আমি উনার রুমে থাকার জন্য কাঁদছি ..
উনার বলতে দেরি হয় আর আমার দৌড় দিতে দেরি হয়নি ..আর দৌড় দেয়ার ফলে হলো কি পায়ের সাথে লেগে আমার শাড়ির কুচি খুলে গিয়েছে ..মনটা চাইছে কিযে করি ..কুচিগুলো কোনোক্রমে পেঁচিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই..ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে কুচি ঠিক করছি আর বক বক করছি ..
—-আর জীবনেও শাড়ি পরবো না ..যাই হয়ে যাক না কেন ..উফফ এই রিমি শাকচুন্নিতা যেন কোথায় আছে আল্লাহই জানে ..পেত্নীটাকে কাজের সময় পাওয়া যাই না
বহুত কষ্টে কুঁচিগুলা ঠিক করে ওয়াশ রুম থেকে বের হয় ..বের হতে দেখি ওই শয়তান জিসানের বাচ্চাটা দাঁড়িয়ে আছে ..
আমি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম অমনি আমার হাত ধরে ফেলে ..
—-তোর এতো বড় সাহস তুই আমার হাত ধরিস ..
—-হুম তোমার হাত আমি ছাড়া আরকে ধরবে
—-দেখ জিসান ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম হাতটা ছাড়
—-না ছাড়লে কি করবে বেবি .
—-একদম চুপ ..হাত ছাড় বলছি নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু
—-উফফ জান!!তুমি নিজেই যেন না তোমাকে আজকে কি লাগছে ..তোমার হটনেসের কাছে তো সানি লিওন ও হেরে যাবে
এবার আর পারলাম না রাগে ঠাস করে চড় মেরে দিলাম সাথে সাথে ও আমার হাত ছেড়ে দিলো
—-তোকে কিছু বলছি না বলে যা খুশি তাই করছিস না ..তোকে যদি আর আমার আসে পাশে দেখি না তাহলে সোজা জেলে পাঠাবো
—-তাই নাকি ..জেলে না হয় আমাকে পরে পাঠিয়ো তার আগে নিজেকে তো আমার কাছ থেকে বাঁচাও ..
কথাটা বলে জিসান আমার দিকে এগুতে থাকে ..
—-দেখ জিসান ভালো হবে না কিন্তু ..আমি কিন্তু চিৎকার করবো
—-করো যা খুশি করো কেউ এখানে আসবে না সবাই এখন ফাংশনে busy..এখনিত সময়টা কাজে লাগতে হবে ..
আমি পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে..এখন কি করবো ..সত্যি ই এখানে কেউ নেয় যে আমাকে বাঁচাবে ..জিসান এগুতে এগুতে আমার খুব কাছে চলে আসে ..
—-বেবি এখন তোমায় কে বাঁচাবে খুব তো বড় বড় কথা বলছিলে এখন চুপ কেন বলো ..
—-তোকে আমি খুন করবো জিসানের বাচ্চা
—-ইস বেইব তোমার ওই নরম নরম হাতে আমি একশোবার খুন হতে রাজি ..
জিসান আমার খুব কাছে চলে আসে ..আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি ..হঠাৎ ঠাস করে একটা শব্দ শুনি ..চোখ খুলে দেখি জিসান ফ্লোরে পরে আছে আর আমার সামনে আদিত্য স্যার দাঁড়িয়ে আছে ..এই মুহূর্তে উনাকে দেখে আমার অনেক ভাল লাগছে ..বাহ্ কি এন্ট্রি নিলেন পুরো ফিল্মি হিরোদের মতো ..
উনি জিসানকে ফ্লোর থেকে তুলে ঠাস ঠুস করে মেরেই চলছেন ..মারুক এই শয়তানটাকে মারাই উচিত ..এক পর্যায়ে দেখলাম জিসানের অবস্থা খুব খারাপ ..
—-স্যার হয়েছে থামুন আর মারলে মরে যাবে ..ছেড়ে দিন স্যার ..
স্যার তো আমার কথা শুনছেই না মেরেই চলছে
—-স্যার থামুন প্লিজ ..স্যার শুনছেন না কেন আমার কথা ..মরে যাবেতো ছেড়ে দিন ওকে ..
স্যার জিসানকে ছেড়ে দিয়ে বলে ..
—-আজকের মতো ছেড়ে দিলাম নেক্সট টাইম যদি তোকে আমি ওর আসে পাশে দেখি তাহলে তোকে না মারা অবধি ছাড়াবো না ..
জিসান কোনো রকম ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে সেখান থেকে চলে যায় ..স্যার এবার আমার দিকে তাকান ..
—-স্যার আসলে ..
—-তোমাকে কিছু বলতে বলেনি ..
কথাটা বলে উনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে যান ..
—-ধুর উনাকে তো থেঙ্কস দেওয়া হলো না ..উনি ঠিক সময় না আসলে না জানি ওই শয়তানটা আমার কি করতো ..না স্যারকে একটা থেঙ্কস দিতে হবে ..উনাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম উনি ততটাও খারাপ না ..
আমিও নিজে চলে যাই ..নিচে গিয়ে দেখি আমার প্রানপ্রিয় বান্ধবী আইসক্রিম খাচ্ছে আর মনোযোগ দিয়ে নাচ গান দেখছে ..এটা কোনো কথা আমি ওর বেস্টু আমার উপর দিয়ে এতক্ষন ধরে ঝড় সাইক্লুন টর্নেডো বয়ে গেলো সেসবে তার কোনো খবরই নেয় ..
—-ঐই হারামি
—-ও রুপা তুই এলি ..নে নে বস ।।আরেকটু আগে এলেইতো হতো ..দুটাই আইসক্রিম কিনেছিলাম তুই আসছিস না দেখে আমিই খেয়ে ফেলি .
—-খুব ভালো করেছিস ..এত ভালো কাজের জন্য তো তোকে নোবেল দেয়ার দরকার .
.
—-তাই নাকি সত্যি বলছিস ..
—-চুপ করবি কুত্তি এমনিতেই মাথা গরম ..তুই যদি এখন আর কিছু বলিস তাহলে এখন তুই আমার হাতে মার্ খাবি ..
—-কেন কি হয়েছে ..
—-কি হয়েছে জেনে তুই কি করবি তুই বসে বসে আইসক্রিম খা আর নাচ গান দেখ .
—-রেগে যাচ্ছ কেন বাবু ..বলোনা কি হয়েছে..বাই দা রাস্তা আদিত্য স্যার কি পানিশমেন্ট দিলোরে তোকে
—-চুম্মা দিয়েছে ..বুঝছিস
—-উমা কি বলিস কোথায় ..ইস তোর জায়গায় যদি আমি থাকতাম ..
—-রিমিইইই …
—-আল্লাহ আস্থে আমার কানের পর্দা ফেটে যাবে তো ..আচ্ছা বল এবার কি হয়েছে ..ফান না সিরিয়াসলি বল ..
তারপর আমি রিমিকে ফার্স্ট টু লাস্ট সব কিছু বলি ..
—-বাবা রুপা আমার তো মনে হয় তোর হিরো চলে এসেছে ..
—-ফালতু কথা বলবি না ..এখন এটা বল উনাকে থ্যাংক ইউ কিভাবে জানাবো ..
—-কিভাবে আবার স্যাররে কাছে যাবি গিয়ে বলবি স্যার থ্যাংক ইউ ..
—-ওই তো স্যার চল কথা বলে আসি
—-ওকে চল ..
স্যার ফোনে কথা বলছিলো আমি আর রিমি গিয়ে স্যাররে পেছনে দাঁড়ায়..স্যার কথা শেষ করে পেছনে তাকান.
—-কি ব্যাপার?
—-স্যার আসলে একটা কথা বলার ছিল
—-কি ?
—-স্যার থেঙ্কস!
—-থেঙ্কস কিসের জন্য?
—-তখন জিসানের হাত থেকে আমাকে বাঁচালেন সে জন্য..
আদিত্য স্যার কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে ..
—-আমি আমার জিনিসের উপর অন্য কারোর নজর দেয়া পছন্দ করি না..
উনি কথাটা বলে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যান
—-অদ্ভুত কি বললো ..কিছুই তো বুঝলাম না ..তুই কিছু বুঝেছিস রিমি?
—-নারে আমার ওতো সব মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে.
—-বললাম কি আর উত্তর দিলো কি..ধুরর বাদদে এসব চল স্টেজের কাছে যাই..
—-হুম চল..
চলবে….
(আল্লাহকে ভয় করো. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো)