অন্তরালে_তুমি
পর্ব_7
#প্রত্যাশা
❤
চোখ খুলে দেখি রিমি শাকচুন্নিটা আমার পেটে সুড়িসুড়ি দিচ্ছে আর দাঁত কেলিয়ে হাসছে …
—-ওই শাকচুন্নি এত সকালে তোর এখানে কি ..
—-এতো সকাল কই !!কয়টা বাজে জানিস ১০.০০টা আর তুই বলছিস এত সকাল
—-হুম আমার জন্য ১০টা মানে ভোর ..যাতো এখান থেকে আমাকে ঘুমাতে দে ..
—-আর ঘুমাতে হবে না উঠ এবার ..
—-কেন এখন কেন উঠবো ..কি কাজ হুম ?
—-শপিং এ যাবি আমার সাথে ..
—-কি পারবো না ..যা তুই একা যা আমার বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না
—-তাই তো বলছি বাসায় বসে বসে কি করবি শপিং এ চল অনেক দিন শপিং করি না ..আজ কে অনেক ঘুরাঘুরি করবো ..
—-প্লিজ রিমি আমার আর এসব এখন ভালো লাগে না ..তুই একা যা ..প্লিজ আমাকে জোর করিস না
—-উহু আমি কিছু শুনতে চাই না আমি যখন বলেছি তুই যাবি তার মানে তুই যাবি ..আর একটাও কথা না বলে উঠে রেডি হো ..
—-রিমি প্লিজ দেখ..
—-দেখা দেখির কিছু নাই …তুই আমার কথা না শুনলে আমি আর কখনো তোর সাথে কথা বলবো না আজকেই তোর আর আমার ব্রেকআপ হবে হু ?
—-উফফ আল্লাহ এতো ঢং কি করে করিস বলতো ..হয়েছে আর পেঁচার মতো মুখ করে রাখতে হবে না ..যাবো আমি ..
—-সত্যি ..উম্মাহ বেবি ..?
—-হয়েছে ছাড়..ফ্রেশ হয়ে আসি ..
ফ্রেশ হয়ে এসে আমি আর রিমি একসাথে নাস্তা করে শপিংয়ের জন্য বেরিয়ে পড়ি ..
—-আর কত ঘুরবি ..এবার বাসায় যাই চল .
—-চল না ওই দিকটাই যাই
—-আল্লাহ আর কত দিকে যাবি ..আমার পা ব্যাথা করছে হাটতে হাটতে ..
—-আরেকটু কষ্ট করো জানু একটু পরই বাসায় চলে যাবো ..
*******
আমি আর রিমি শপিং শেষে বাসায় ফিরছিলাম তখন হঠাৎ আমাদের পাশের বিল্ডিং এর একজন আন্টি অন্য আন্টিকে ফিসফিস করে কি যেন বলছিলেন ..আসলে ফিসফিস না আমাকে শুনিয়ে জোরেই বলছিলেন ..
—-দেখেন ভাবি এটা হামিদ সাহেবের মেয়েটা না কয়দিন আগে যে ডিভোর্স হলো ..?
—-হুম ঠিকই বলেছেন এটা সেই মেয়েটাই .
—-দেখেছেন ভাবি একে দেখে কেউ বলবে একে যে স্বামী ছেড়ে দিয়েছে ..দিব্যি মজাই আছে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে শপিং করছে ..আমার কি মনে হয় জানেন তো এরই কোনো দোষ ছিল তাই স্বামী ছেড়ে দিয়েছে।
—-ঐ কি বললেন আবার বলেন তো আমার বান্ধবীর দোষ তাই না ।।তো
আপনাদের কি হে ..আমার বান্দবি আপনার খায় না পরে যে ওকে নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে ..নিজের মেয়ের খবর তো রাখেন না ..আমাদের ভার্সিটিতে পরে আমরা জানি কেমন মেয়ে ..অন্যের মেয়ে কেমন সেটা গবেষণা না করে নিজের মেয়েকে নিয়ে ভাবুন ..
—-চুপ কর না রিমি কি শুরু করলি ..চল এখন থেকে ..
—-কেন চুপ করবো ..আর তুইই বা কিছু বলছিস না কেন ..
—-রিমি কথা না বাড়িয়ে চল এখন থেকে ..
কোনোরকমে টেনেটুনে রিমিকে বাসায় নিয়ে আসলাম ওর যা রাগ ..বলা যায় না কখন কি করে বসে ..
—-কেন নিয়ে আসলি! আজকে ওই হেভি ওয়েট দুইটাকে বুঝিয়ে দিতাম কার বান্ধবীকে নিয়ে কথা বলছে ..নিজে তো কিছু বলিসই নি আমাকেও কিছু বলতে দিসনি ..
—-এভাবে কয়জন কে বলবি বল ..উনারা সামনে সামনি বলেছে বলে তুই প্রতিবাদ করেছিস কিন্তু পেছনে তো আরো এমন কত মানুষ কত কিছু বলছে ..কয়জনের মুখ বন্ধ করবি ..এটাই আমাদের সমাজ দোষী যে তার শাস্তির কোনো ব্যবস্থা নেয় কিন্তু যার দোষ নেয় তাকেই ধরে সবাই শাস্তি দেয় ..এভাবেই চলতে হবে ..
—-না কেন চলবি এভাবে যেখানে তোর কোনো দোষ নেয় সেখানে তুই কেন কথা শুনবি ..ডিভোর্স হয়েছে বলে কি তুই মানুষ থেকে এলিয়েন হয়ে গিয়েছিস যে তোকে সারাদিন রুমে বসে থাকতে হবে বাইরে বের হলে তোকে দেখে সবাই ভয় পাবে ..আমরা মেয়েরা মুখ বুঝে সব কিছু সহ্য করি বলেই আমাদের সাথে এমন হয় ..যদি সাথে সাথে প্রতিবাদ করতাম তাহলে আজকে আমাদের আর এত কথা শুনতে হতো না .
—-আচ্ছা আমার প্রতিবাদী বান্ধবি এবার আপনি শান্ত হন ..
—-না শান্ত হবো আগে তুই আমাকে প্রমিস কর এর পর থেকে যদি তোকে কেউ কিছু বলে তাহলে তুই আর চুপ থাকবি না সাথে সাথে প্রতিবাদ করবি ..কি হলো প্রমিস কর .
—-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে প্রমিস ..আমি আর চুপ করে থাকবো না এখন থেকে আমিও আমার পেত্নীটার মতো প্রতিবাদী করবো ..এবার হেপি তো!!
—-হুম হেপি ..
—-নে এবার ড্রেস গুলা পরে দেখা দেখি তোকে কেমন লাগে..
—-দাড়া এইনে এই দুটা তোর ..
—-কি আমার ..সব গুলা তোর আমার কোনো ড্রেস লাগবে না আমার অনেক আছে ..তুই রাখ তোকে খুব সুন্দর মানাবে ..
—-রাখলে রাখ আর না রাখলে পুড়িয়ে ফেল ..বাট আমি এই গুলা ফেরত নিবো না ..
—-বাবারে বাবা এত রাগ করিস কেন ..আচ্ছা নিচ্ছি ..এবার তুই তোর ড্রেস গুলা পর ..
—-হুম..
—-ওয়াও আমার কিউটি কি লাগছেরে তোকে ..
—-হট লাগছে বুঝি ?
—-ধুরর কুত্তি..সুন্দর লাগছে এসব হট টট লাগছে না ..
—-আচ্ছা তুই ও পর ..
—-ওকে ..
—-ওরেএএ ক্র্যাশ খাইলামরে ..ছেলে হলে এক্ষনি বিয়ে করে ফেলতাম .
—-হয়েছে এত ভাব মারিস না ..
—-সিরিয়াসলি দোস্ত ..পুরা কিউটের ডিব্বা ..
—-যাক ভালো কিছু বললি ..ভেবেছিলাম তোর ওই সব উল্টা পাল্টা শব্দ ইউস করবি ..
—-হুম হট বেবি ..
—-এই শুরু করে দিলি ..
—-হিহি?
—-আচ্ছা আর না ভেটকিয়ে কাপড় গুলা ভাজ করে রাখ ..
—-হুম রাখছি ..
—-আচ্ছা রুপা তোর আদিত্য ভাইয়ার সাথে কথা হয় ..
আমি কাপড় ভাঁজ করছিলাম ..ওর দিকে একবার তাকিয়ে বলি ..
—-না .
—-কথা বলতে ইচ্ছে করে না
—-ফালতু কথা কেন বলছিস উনার সাথে কেন আমার কথা বলতে ইচ্ছে করবে !!
রিমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে ,,
—-সত্যিই তাই ..নাকি আজও মনের মধ্যে সব কথা চেপে রাখবি ?
—-এসব কি বলছিস তুই আমি কেন মনের মধ্যে কিছু চেপে রাখবো ..বল!!
—-তোকে আমি ছোট থেকে চিনি রুপা ..তুই কেমন ধরণের মেয়ে তাও আমি জানি অযথা আমাকে বুঝাতে আসিস না
—-রিমি আমার এই ব্যাপারে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ..
—-ইচ্ছে না করলেও আজ বলতে হবে ..আচ্ছা সত্যি করে বলতো তুই কি আদিত্য ভাইয়াকে ভালোবাসিস না ..সত্যি কি সামান্য ফিলিংসও নেয় তোর মনে ভাইয়ার প্রতি ..?
—-না নেয় নেয় নেয় ..উনার প্রতি আমার মনে কোনো ফিলিংস নেয় ..
—-হুহ।।এইভাবেই চিৎকার করেই বুঝি নিজের মনকে শান্ত করিস ..কত দিন এভাবে নিজের মনকে বুঝাবি..ভাইয়া তোকে ভালোবাসে রূপ ..এখনো উনি তোকে চাই সেটা তুই খুব ভালই করে জানিস ..তাহলে কেন তুই চুপ করে আছিস ..শুধু একবার ভাইয়াকে বল যে তুই উনাকে ভালোবাসিস দেখবি উনি তোকে উনার রানী বানিয়ে রাখবে ..
—-তুই পাগল ..কি বলছিস এসব ..এমনিতেই আমি উনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি ..আর আমি এখন একজন ডিভোর্সি মেয়ে আমার মতো মেয়ে কখনো আদির মতো ছেলে ডিসার্ভ করিনা ..আদি আমার থেকেও ভালো কাউকে ডিসার্ভ করে ..যে উনাকে অনেক ভালোবাসবে আমার মতো কষ্ট দিবে না ..
—-তুই ভুল করছিস রুপা ..আগেও ভুল করেছিলি আর এখনো করছিস ..ভালোবাসিস কিন্তু সেটা স্বীকার করতে পারিস না ..আল্লাহ বার বার সুযোগ দিবে না রুপা ..সময় থাকতে মানুষটার মূল্য দিস..হারিয়ে ফেলার পর হাজার কাঁদলেও কিন্তু তাকে আর ফিরে পাবি না ..
আমি আর কিছু বলেনি ..অনেক মিথ্যে বলেছি আর পারবো না আবার সত্যিটাও বলতে পারবো না তাই চুপ করে যাই ..
এতক্ষন রুমের মধ্যের কথোপকথন গুলো দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে রুপার আম্মু শুনছিলো ..তিনিও কেঁদে ফেলেন ..তাদের ভয়েই তো রুপা তার ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি ..মা বাবার জন্য নিজের মনের মধ্যে সব কিছু চেপে রেখেছে ..কখনো কাউ কে নিজের কষ্টটা বুঝতে দেয়নি ..
—-কিন্তু আর না মা আর তোকে কষ্ট পেতে দিবো না ..যেটা আমাদের আগেই করা উচিত ছিল সেটা এখন করবো ..আর তোকে কষ্ট পেতে দিবো না ..
রুপার আম্মু উনার রুমে গিয়ে কাকে যেন কল দিয়ে বললেন ..
—-হ্যালো!!কোথায় তুমি বাসায় আসো তাড়াতাড়ি ..জরুরি কথা আছে …!!
.
চলবে..
(আল্লাহকে ভয় করো. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো)