অন্তরালে_তোমার_বসবাস,পর্বঃ-১৪,১৫
সাদিয়া_সৃষ্টি
পর্বঃ-১৪
কাব্য এসেছিল বারে। ড্রিংক করতে নয়। এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। বন্ধুরা সবাই মিলেই আয়োজন করেছিল এই অনুষ্ঠানের। কিন্তু কোথায় হবে সেটা নিয়ে অনেক প্রশ্নও উঠেছিল। তবে সবাই ইলে সিদ্ধান্ত নেয় যে বারে করবে। সবার থেকেই অন্যরকম। তাই কিছু অভিজ্ঞ বন্ধুদের সাথে কথা বলেই এই জন্ম দিনের আয়োজন। কাব্যর এতে মত না থাকলেও মানা করতে পারে নি। আসতেই হল সবার সাথে। কেক কাঁটা শেষ হয়ে গেলে কাব্য সেখান থেকে সরে আসে। ও জানে এখন ওখানে থাকলে ওকে ড্রিংক করতেই হবে। না হলে জোর করে রিয়ে দিবে। আর বন্ধুরা এখন হয় ড্রিংক করবে নাহয় কেউ চলে যাবে নাচতে। আর এসবের কোনটাই কাব্যর পছন্দ নয়। তাই সে সেখান থেকে আগেই সরে আসে। দূরে গিয়ে এক জায়গায় বসে পড়ে। আশেপাশে তাকাচ্ছে আর মাঝেমধ্যে সফট ড্রিংক এর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ ওই আলো আধারির খেলার মধ্যে পরিচিত মুখ ভেসে উঠায় চমকে ওঠে। মনের ভুল ভেবে সেদিন থেকে নজর সরাতে যায় সে। কিন্তু আবার সেই একই মুখ ভেসে ওঠে।
.
জাহিন টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে সোফায়। অজ্ঞান অবস্থা হয় তো। কাব্য নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারল না। সে নিজে সোফা থেকে উঠে সেদিকে গেল। রংবেরঙের লাইট ছিটে ফোঁটা আলো ছড়াচ্ছে। তাতেই কাব্য বুঝতে পারল জাহিন ওখানেই বসে আছে। ওয়েটার কে ডাক দিয়ে জাহিনের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানাল যে জাহিন বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ওখানেই আছে। কাব্য আর বেশি চিন্তা না করে জাহিনকে তুলে ধরে ধরে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেল। সেখান থেকে বাড়ি পৌঁছে গার্ড দের সাহায্যে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেল চুপি চুপি। যেহেতু বাড়িতে বড় রা আছেন, তারা জানতে পারলে কাব্য কি উত্তর দিবে ভেবে না পেয়েই এভাবে জাহিন কে নিয়ে যেতে হল। তাছাড়া কাব্য নিজেও জানে না যে জাহিন কেন ওই বারে গিয়ে ছিল আর কেনই বা অতো ড্রিংক করেছে। তাই চুপ থাকাই শ্রেয় মনে হল তার কাছে।
.
.
শ্রুতি ঘরেই ছিল। সে জাহিনের অপেক্ষা করছিল। রাত ১২ টার কাছাকাছি হলেও সে তখনও ঘুমায় নি। ঘুমায় নি বললে ভুল হবে, জাহিনের জন্য ঘুমাতে পারে নি। ভারী কাজ গুলো জাহিন ই করত। ভারী কাজ বলতে বিছানা টানাটানি করা। রাতে আলাদা করে দুটো বানানো আর সকালে দরজা খোলার আগে একসাথে লাগানো। এই কাজটা জাহিনের ই ছিল। কিন্তু আজ না জাহিন নিজে এসেছে, না বিছানা আলাদা করেছে আর তাই শ্রুতি ঘুমাতেও যায় নি। নিজেই সরাতে পারতো সে যেহেতু চাকা লাগানো তবে জাহিনকে দিয়ে কাজ করানো একটা গর্বের বিষয় শ্রুতির কাছে। কিন্তু শ্রুতি তো জানে না যে সে রোজ রাতে ঘুমের ওষুধ না খেয়েও সেই স্বপ্ন আর কেন দেখে না। জাহিন তো তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েই ঘুমায় আর সকালে ওর ওঠার আগেই উঠে অন্য বিছানায় চলে যায়। শ্রুতি আগের ট্রেনিং ভালোই কাজে দিয়েছে জাহিনের। অন্তত শ্রুতির আগে উঠতে পারে। কিন্তু শ্রুতি একা একা ভেবে চলেছে যে জাহিন বেশ কয়েক দিন ধরে শ্রুতির সাথে ঠিক করে কথা বলছে না। বাসায়ও না, অফিসেও না। ওকে আড়াল করে চলেছে যেন। আর মাঝে মধ্যে যখন আদিয়াতের সাথে কথা বলে তখন যেন জাহিনের চোখ দিয়ে আগুন ঝরে ঝরে পড়ে। কিন্তু এই রাগের কারণ জানে না শ্রুতি। বুঝতেও চায় না। কিন্তু আজ হঠাৎ যখন একা একা নিজের ঘরে বসে আছে, তখন বড্ড ভাবাচ্ছে এসব ছোট খাটো বিষয়। আবার সেদিন জাহিন কি করল ওর কেবিনে। ভাবতেইই কান লাল হয়ে যাচ্ছে তার। তারপর আগের ওই পার্টির ঘটনা নিয়ে আর পাগলামি করতে দেখা যায় নি শ্রুতিকে । তবে জাহিনের কাজের কথা ভাবতেই তার কান লজ্জায় লাল হওয়ার পাশাপাশি গরম হয়ে যাচ্ছে। যেন তার কানের উপর কেটলি রাখলে তখনই পানি গরম করে দিয়ে সক্ষম হবে। কিন্তু জাহিন কেন করল অমন? তার চিন্তায় ছেদ পড়ে দরজার আওয়াজে। সে ভাবল হয়তো জাহিন এসেছে। তাই বিছানা থেকে উঠে জাহিন কে বড় সড় এক বকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই দরজা খুলল।
.
জাহিন কে দেখল সে ঠিকই। কিন্তু কাব্যর কাঁধে ভর দেওয়া অবস্থায়। শ্রুতি সরে দাঁড়াতেই কাব্য আর ওই গার্ড দ্রুত জাহিনকে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর শ্রুতি কোন প্রশ্ন করবে তার আগেই সে গার্ড কে ইশারা করে বাইরে পাঠিয়ে দিল আর নিজেই বলল,
–ভাই বারে ছিল এতক্ষণ আর অনেক ড্রিংক করেছে। কেন করেছে জানি না। আমি শুধু এক ফ্রেন্ডের বার্থডে তে গিয়েছিলাম। সেখানে হঠাৎ ভাইকে দেখলাম। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না। কাল তুমি জিজ্ঞেস করে নিও যে কেন ভাই এতো ড্রিংক করল যে অজ্ঞান হয়ে ওখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে ছিল?
–ঠিক আছে।
শুনেই কাব্য রুম থেকে চলে গেল। শ্রুতি ভাবতে থাকল যে এতক্ষণ সে কি ভাবছিল। কেন ভাবছিল এসব। জাহিন আর ও… কোনোদিন সম্ভন না। যেখানে জাহিন আজও ওর বুবু কে ভালোবাসে। এতো ভালোবাসে যে আজ ড্রিংক পর্যন্ত করেছে যেটা জাহিন বহুদিন ধরে ছুঁয়ে দেখে নি। জাহিন আগেও ড্রিংক করত কিন্তু কারো প্রকাশ্যে না। শ্রুতি আসার পর সে থামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আবার ধরেছিল যখন শ্রাবণী চলে গিয়েছিল। তখন সে ভেঙে পড়েছিল আর শ্রুতি তখন তাকে সামলেছিল। কিন্তু জাহিনের নানু তারপর ই বিডি তে আসেন আর শ্রুতিকে পছন্দ করে নেন। এক দিন হঠাৎ করেই জাহিনের সাথে বিয়েএ কথা বলতে আসেন আর শেষমেশ বিয়েটা হয়েই যায়। কিন্তু তারপর জাহিন এতো ড্রিংক করে নি। তো আজ হঠাৎ নিশ্চয়ই বুবুর কথা মনে পড়েছে। এই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করার রইল না শ্রুতির। যে জাহিনের খেয়াল রাখল সারা রাত আর সেখানে ঘুমিয়ে পড়ল। সেদিন আর বিছানা আলাদা করা হল না। কিন্তু শ্রুতি তো এখনো জানে না জাহিন তার উপর রাগ করেই ড্রিংক করেছে।
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই মাথা ব্যাথার পাশাপাশি বুকের উপর ভার অনুভব করল জাহিন। দেখল শ্রুতি আবার সেই বিড়াল ছানার মতো তার বুকের মধ্যে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু মাথা টা বেশ ব্যাথা করছে। গত রাতের সব ঘটনা মনে পড়ল তার। সে বারে গিয়েছিল আর ড্রিংক করেছিল। কিন্তু বাসায় কিভাবে। হালকা হালকা সব কিছু তার ধারনায় আসতেই ধীরে ধীরে শ্রুতিকে বুকের উপর থেকে সরিয়ে নিজে উঠে পড়ল আর ফ্রেস হতে বাথরুমে চলে গেল। পরে সব কথা বলে ক্লিয়ার করা যাবে।
.
অফিসে কেয়া ছুটে চলেছে শ্রুতির কেবিনের দিকে। যে খানে কিছুক্ষণ আগে তার মুখে হাসি দেখা যাচ্ছিল, সেখানে এখন রাগ ভর করেছে। কিছুক্ষণ আগে সে জাহিনের অফিসে এসেছে শ্রুতির সাথে দেখা করতে। কিন্তু এখন সে শ্রুতির কাছে দ্রুত কদমে এগিয়ে চলেছে নালিশ দেবে বলে। আর এই নালিশ যে কাব্য সংক্রান্ত সেটা আর বলার বাকি নেই।
.
কিছুক্ষণ আগে,
কেয়া খুশি মনে এলিভেটরের মাধ্যমে উঠে চলেছিল জাহিনের অফিসে। উদ্দেশ্য শ্রুতি কেবিন। কিন্তু সেখা পৌঁছানোর পূর্বে সামনে পড়ল আরেকটি কেবিন যার সামনে দরজায় রোহিতের নাম লেখা। সে কিছুক্ষণের জন্য সেই চেহারায় হারিয়ে গেল। রোহিত কে দেখে বলা যায় সে একদফা ক্রাশ খেয়েছে। হঠাৎ কেই এক জন কাঁধে হাত দিল। কিন্তু তাতেও কেয়ার ধ্যান ভাঙল না। সে কেয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,
–রোহিত দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম না?
কেয়া আনমনে জবাব দিল,
–হ্যাঁ ।
–ক্রাশ খাওয়ার মতো , নাহ?
–হুম।
–তুমিও তাহলে ক্রাশ নামক বাঁশ খেয়েছ রোহিতের উপর?
–হুম।
–কিন্তু এসব চিন্তা বাদ দেও। ওকে তুমি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতেও পারবা না। আর শিল পাটায় পিষতেও পারবে না।
এমন অদ্ভুত কথা একজনই বলতে পারে। ধ্রতে পেরে কেয়া চমকে পিছনে তাকাল। কাব্য কেন এখানে? তাকে এতক্ষণ কি কি প্রশ্ন করেছে? তার উত্তর ও সে দিয়ে ছে কেন? ভাবতেই কেয়ার রাগ উঠল।
–তার বদলে আমার উপর লাইন মারতে পারো কেয়া আমি মাইন্ড করব না। আই এম ফ্রি নাও, এন্ড পিওর সিঙ্গেল অলসো।
রাগের চোটে কেয়ার মুখ থেকেও কিছু বের হচ্ছিল না। সে পিছনে মুড়ে শ্রুতির কেবিনে যাওয়া ধরল। এদিকে রাহুল বলতে গিয়েও বলতে পারল না যে,
–রোহিত ইজ ম্যা…
চলবে।
#অন্তরালে_তোমার_বসবাস
#সাদিয়া_সৃষ্টি
পর্বঃ-১৫
–ওয়েলকাম মিসেস মজুমদার।
–থ্যাঙ্কস ।
বলেই মিসেস মজুমদারের সাথে হাত মিলালো শুভ। সে আপাতত জাহিনের কাজ করে দিচ্ছে। জাহিন অন্য আরেকটা কাজে ব্যস্ত হয়ে পরায় শুভ কে আজ এই মিটিং দেখতে বলেছে। সেই কাজই করছে শুভ। মিসেস মজুমদার জাহিনের কোম্পানির নতুন পার্টনার। আর তারা একটা প্রজেক্ট এ একসাথে কাজ করবে। কিন্তু জাহিন সেদিন ড্রিংক করায় পরের দিন আর কাজ করতে পারে নি ঠিক মত। যার জন্য আজ তাকে সব কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণে শুভর কাছে সাহায্য চেয়েছে আজকের মিটিং সামলানোর জন্য। শুভ ও রাজি হয়ে গিয়েছে। অনেক দিন পর বিজনেসের কোন কাজে হাত দিতে পারবে। অফিসে থাকার অনুভূতি আসবে তাই। ভারত থেকে আসার পর এখানে এসে আর কোন কাজ তেমন করা হওয়া নি। অফিসে যাওয়া হয় নি অনেক দিন। তাই অফিস জিনিসটাকে বেশ মিস করছে শুভ। তাই যখন জাহিন তাকে এই কথা বলল তখন আর সে মানা করল না। তার চেয়ে বড় কথা মিসেস মজুমদার নিজেও ভারতীয়। তাই তার সম্পর্কে শুভ র ভালো করে জানা থাকবে আর সে কোন সমস্যা ছাড়াই মিটিং সামলাতে পারবে। সেই চিন্তা করেই শুভর আছে এই কাজ দেওয়া।
.
শুভ হাত মিলানোর সময় খেয়াল করল মিসেস মজুমদার নিজেকে বেশ ভালোভাবে কাপড়ে মুড়িয়ে এসেছেন। ভারতীয় বিশেষ করে বিজনেস ওম্যান রা খুব স্টাইলিশ হয়ে থাকেন। আপাতত শুভ কাউকে এইভাবে দেখে নি। বিশেষ করেই এতো গরমের মধ্যেও নিজেকে এতো ভাবে আবৃত করে রাখা যে চোখ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না – বেশ অবাক লাগল শুভর ব্যাপাটায়। তার উপর মিসেস মজুমদার একজন হিন্দু।ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেরা ২০ এর মধ্যে একজন। তার অভিজ্ঞতা এতই ভালো আর তিনি বিচক্ষণ। তাই ব্যবসায় এর জগতে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলতে বেশি সময় নেন নি। দেশের বাইরেও তার ভালো পরিচিতি আছে দক্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে। তিনি সেরা ১০ এর মধ্যেই আসতে পারতেন। কিন্তু কোন এক কারণে অনেক গুলো ডিল মিস করে প্রতিবার পিছিয়ে পড়েন। তবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে শুভর এক অন্য অনুভূতি জাগে। এই চোখে ডুব দেওয়ার। পরে নাম টা মাথায় আসতেই নিজের ইচ্ছাকে সংযত করে। উনি অন্য কারো মিসেস। এসব অনুভূতির কোন মূল্য নেই তাদের কাছে। হঠাৎ হাতের কাপড় সরে যেতেই এক লম্বা দাগ দেখল সেখানে। তবু নিজের মনে অনেক প্রশ্ন জাগলেও দমিয়ে রাখল সেগুলোকে। মিসেস মজুমদারও নিজের হাত আবার তাড়াহুড়ো করে ঢেকে ফেললেন। তারপর সরাসরি কাজের কথা দিয়েই শুরু করলেন।
.
তবে শুভ নিজের অবাধ্য ইচ্ছা গুলোকে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারছে না। না চাইতেও কাজ এর কথা ভুলে যাচ্ছে তো কখনো কখনো গুলিয়ে ফেলছে সে। আর চোখে তাকিয়ে থাকছে বার বার। বেশ পছন্দ হয়েছে তার ওই চোখ দুটি। মায়াবী চোখ দুটি বেশ টানছে তাকে। খুব কি ভুল হবে ওই চোখ দুটির প্রেমে পড়লে? খুব কি ভুল হবে ওই চোখ দুটিকে হালকা ছুঁয়ে দিতে চাইলে?
.
এসব চিন্তায় নিজের মাথায় নিজের হাত দিয়ে মারতে ইচ্ছে হল শুভর । সে কেন বার বার ভুলে যাচ্ছে যে উনি মিসেস। অন্য কারো স্ত্রী। তার সাথে কিছু সম্ভব নয়। একদমই না।
.
শুভ আরও কিছু ভাবতে চায় না। তাই নিজেই কাজের কথা আবার শুরু করে দেয়। মিটিং শেষে কাগজে সাইন করে আবার হাত মিলিয়ে বিদায় নেয়। যাওয়ার আগে এক বার পলক ফেলেন মিসেস মজুমদার। এতেই যেন শুভ কয়েকটা হার্ট বিট মিস হয়ে যায়। তবে এসব নিয়ে আর ভাবা যাবে না। তার সাথে তো আর দেখা হবে না শুভর। ধীরে ধীরে সব ভুলে যাবে সে। এই ভেবে লম্বা শ্বাস ফেলে নিজেকে চেয়ারে ছেড়ে দায়। আজকের মিটিং এ যতোটা শারীরিক চাপ কম ছিল তার চেয়ে বেশি মানসিক চাপ ছিল। নিজেকে যে কত করে থামাতে হয়েছে সব অদ্ভুত ফিলিং থেকে বাঁচতে। শুভ নিজেও জানে না। তবে যেহেতু তার সাথে আর দেখা হবে না, তাই এসব অনুভূতির জন্ম হওয়ার আগের গোঁড়া থেকে চাপা দিয়ে রাখতে হবে। প্রকাশ করা যাবে না। তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন নয়, তবে সে নিজেই দেখা করতে চাইছে না। তাদের মাঝে মিসেস নামে একটি দেওয়ার আছে, যার এপারের মানুষ ওপারে কখনই যেতে পারবে না। তাই বৃথা মায়া বাড়িয়ে লাভ কি? আছে শুধু ক্ষতি, দুঃখ, কষ্ট আর অজানা এক অনুভূতি যার শেষ নেই কোন।
.
.
.
কেয়া প্রায়ই অফিসে আসা যাওয়া করছে। বেশির ভাগ সময় এদিক ওদিক থেকে ঘুরে ফিরে রোহিতের রুমের দিকেই আসে। তার সাথে রোহিতের কথা বার্তা ও হয়েছে বেশ কয়েক বার। সে নিজেই শুরু করে। তবে বেশ সময় পর্যন্ত কথা বলে। তবে একটা জিনিস খেয়াল করেছে কেয়া। দরকার ছাড়া কোন কথা বলে না। দেখা যায় কেয়া যখন রোহিতের সম্পর্কে জানতে কিছু জিজ্ঞেস করে, তার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে তখন রোহিত কেয়াকে এড়িয়ে যায়। তাই কেয়া সেসব নিয়ে প্রশ্ন করে না। কাজের কথাই বলে। অফিসের সব কাজ সম্পর্কে জানতে চায়। তখন রোহিত জবাব দেয়। যদি তার দ্বারা কারো কাজ পেতে অভিজ্ঞতা বারে, সাহায্য হয় তাহলে অবশ্যই সাহায্য করবে। কিন্তু কেয়ার ক্ষেত্রে সেই সম্পর্কে মন্তব্য ভিন্ন। কাজের কথাই হোক, তাও তো কথা হয়। এমন তো নয় যে একেবারেই কথা হচ্ছে না। তবে সেই কথার থেকে বেশি ব্যাক্তির দিকে মনোযোগ থাকে তার। কথার দিকেও মনোযোগ রাখতে হয়। নাহলে রোহিতের উত্তর দেওয়া শেষ হলে সে আবার কি প্রশ্ন করবে যাতে রোহিতের সাথে আরও একটু বেশি সময় কাটানো যায়। এই কয় দিন কাব্য ও কেয়াকে জ্বালায় নি বেশি। সেদিকে মন নেই কেয়ার যে বেশ কয়েকদিন ধরে কাব্যর সাথে দেখা হয় নি। তবে একা হলে মনে হয় কি একটা জিনিস বাদ আছে, খালি খালি লাগে সেই জায়গাটা।
.
.
কাব্য ইচ্ছে করেই কেয়ার সাথে দেখা করে নি। কেয়া মেয়েটা বার বার তাকে অপমান করে। সে চেয়েছিল ওর সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে। কিন্তু এক দিনের শুধু একটা মজার জন্য মেয়েটা এমন করে যেন কাব্য ওর কোণ পাকা ধানে মই দিয়েছে। কাব্য ওর সাথে ফ্রি হওয়ার চেষ্টা জতবার করেছে ততবার মেয়েটা শুধু ওর থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছে। এমন এক হাবভাব যেন সে কাব্যকে সহ্যই করতে পারে না। তাই সে কেয়ার সাথে আর না দেখা করে, আর না কথা বলে।
.
কাব্য দেশে এসেছিল মুলত তার দাদি মিসেস রেজওয়ান এর কথায়। তারপর হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক করে ফেললেন। তবে এই সময়ের মধ্যে শুভ আর জাহিন এক সাথে মিলে বিজনেস প্ল্যান শুরু করে দিয়েছে। কাব্যর এখনো পড়া শেষ না হলেও সে ওদের সাথে থাকে যাতে বেশি করে ব্যবসা সম্পর্কে আনতে পারে আর পরে এটা নিয়ে কাজ করতে পারে। সেই সুবাদে সে নিজেও ওদের কাজ করার পদ্ধতি সব কিছুই দেখে। সে নিজেও শুভর সাথে নিজেদের পারিবারিক ব্যবসা সামলাবে ভবিষ্যতে।
.
.
তবে দিন শেষে কেয়ার কথা মনে পড়ে কাব্যর। এই অনুভূতি কিসের সেটা না জানলেও সে যে এই মায়ার জড়িয়ে পড়ছে গভীর ভাবে সেটা বুঝতে বাকি নেই তার। রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর আগে একবার হলেও কেয়ার সাথে করা ঝগড়াটা খুব মিস করে সে ।
–দ্য ওনার অফ ব্লেন্ডার, শিল পাটা !!
.
.
.
শ্রুতির সাথে দরকার ছাড়া কথা হয় না জাহিনের। তাই শ্রুতি আজ পর্যন্ত জানতে পারে নি ঠিক ভাবে যে কেন সেদিন জাহিন অতটা ড্রিংক করেছিল। অবশ্য এই প্রশ্ন করার চেষ্টা করেছে কয়েক বার। কিন্তু নিজেই থেমে গিয়েছে তার আগে। সে তো তার স্ত্রী হলেও সত্যিকারে অন্যকিছু। একটা পিএ এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। সে শুধু জাহিনের বোঝা। সে কি করে তার কাছে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাখ্যা চাইবে? এই ভেবেই নিজেকে থামিয়ে রাখে বার বার।
.
জাহিন কাজ নিজের প্রচুর ব্যস্ত। হঠাৎ করেই অনেক বড় বড় ডিল সাইন করেছে সে। আর সব সামলাতে গিয়ে কখনো ঠিক মত ঘুম হয় না রাতে তার। শুধু দিনে চার ঘণ্টা রেস্ট নেওয়া হয় কিনা তাতেও সন্দেহ আছে। এতে নানির অনুমতি পেতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে। নানু কড়াকড়ি ভাবে ভলে দিয়েছেন্ন কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে সবাই গ্রামে যাবো ঘুরতে তারপর অন্য কোথাও। আর তাতে রাজি হয়েছে জাহিন। তাই শেষ সময় আসতে বেশি দেরি নেই। তবে দিনে যদি চার ঘণ্টা রেস্ট নেয় তবে সেটা রাতে শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কারণ শ্রুতি বেশ সময় ধরে ঘুমের ওষুধ নেয় না আর বলা যায় না কবে আবার ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে ওঠে। তাছাড়া আদিয়াতের চিন্তা কোনোভাবেই মাথা থেকে বের করতে পারছে না। আদিয়াতের কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেদিন শ্রুতির আদিয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার দৃশ্য। তাই তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে চায় জাহিন।
চলবে।