অন্তরীক্ষে_অন্ধকার পর্ব ৫

0
253

#অন্তরীক্ষে_অন্ধকার
পর্ব ৫
লিখা- Sidratul Muntaz

[কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য]
জিসানের ঘুম ভাঙল তীক্ষ্ণ গর্জনে। রাইসা চিৎকার করছে বিকট শব্দে। কানের মধ্যে ভয়ানক যন্ত্রণা হয় এই চিৎকার শুনলে। জিসান যন্ত্রণা সহ্য করছে তাও চোখ খুলে তাকাচ্ছে না৷ কারণ সে তাকালেই রাইসার পাগলামি বেড়ে যাবে৷ কিছুক্ষণ এভাবেই কাটল। তারপর হঠাৎ রাইসা উপুর্যুপরি হামলে পড়ল জিসানের উপর। জিসানের পেটের উপর বসে গলা চেপে ধরল। জিসানের চোখে ঘুম লেগেছিল৷ তাই সে তৎক্ষণাৎ কিছু করতে পারল না। শুধু বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গলা দিয়ে শব্দ বের করতে চাইল। কিন্তু শব্দ বের হচ্ছে না। রাইসা এতোটাই শক্ত করে গলা চেপে রেখেছে যে দম আটকে আসার মতো অবস্থা। জিসান ধস্তাধস্তি শুরু করল। তার মনে হলো, এখনি মরে যাবে। এতো কষ্ট কেন দিচ্ছে রাইসা তাকে? জিসানের চোখ দু’টো রক্তিম হয়ে গেল। খুব কষ্টে, চাপা কণ্ঠে, আর্তনাদের মতো বলল, ” রাইসা… ছাড়ো..”
রাইসা দিশেহারা উন্মাদিনীর মতো আওড়াতে লাগল,” ছাড়বো না। কেন ছাড়বো তোকে? মেরে ফেলবো। আজকেই মেরে ফেলবো! তুই যদি আমার না থাকিস তাহলে আর কারো হতে পারবি না। তোকে আমি কারো হতে দিবো না।”
” আমি কারো হইনি রাইসা৷ আমাকে ছাড়ো…”
জিসান প্রত্যেকটি শব্দ থেমে থেমে খুব কষ্টে উচ্চারণ করছে। রাইসা হিমশীতল গলায় বলল,” রত্নার ঘরে কেন গিয়েছিলি? ওর মাথায় বরফ কেন লাগিয়েছিস? ওকে ঔষধ খাইয়েছিস তুই! কপালে চুমু দিয়েছিস। তারপর দু’জন বসে আমাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিস! কেন? আমি মরে গেলে খুব লাভ তোদের তাই না? পথের কাঁটা সরে যাবে। তোরা বিয়ে করবি? নতুন করে সংসার পাতবি? পাতাচ্ছি তোদের সংসার! তুই ম’রে গেলে রত্না কার সাথে সংসার পাতে আমিও দেখবো।”
জিসান কোনোমতে ধাক্কা মেরে রাইসাকে নিজের উপর থেকে সরালো। এই কাজ আরও আগেই করা যেতো। রাইসার রোগা-পাতলা শরীরের থেকেও জিসানের পেশিবহুল হাতের শক্তি বেশি। কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভেঙে এমন আক্রমণে জিসান নিশ্চল অনুভব করছিল। এখন শরীর সচল হয়েছে। জিসানের ধাক্কায় রাইসা কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগল। তার শরীর ঘেমে একাকার। ফোঁসফোঁস করে এমন শব্দে শ্বাস ফেলছে যেন হিংস্র কোনো জন্তু! জিসান স্বাভাবিক হয়ে বলল,” তুমি স্বপ্ন দেখেছো রাইসা! আমি সারারাত তোমার পাশেই ঘুমিয়েছিলাম। একবারও রত্নার ঘরে যাইনি।”
তারপর মনে মনে চিন্তা করল, তার রত্নার ঘরে যাওয়া উচিৎ ছিল। মেয়েটার এখন কি অবস্থা? শেষবার যখন রত্নাকে দেখেছিল, তখন মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে তো? জিসানের মনে দুশ্চিন্তা। তাও একবার রত্নার ঘরটিতে উঁকি মারার সাহস নেই। এতে রত্নারই বিপদ। জিসান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। রাইসা ধপ করে শোয়া থেকে উঠে বসল। জিসানের বুকে আঘাত করে বলতে লাগল,” আমি বিশ্বাস করি না। তুই অবশ্যই রত্নার ঘরে গিয়েছিলি। ওকে তুই আদর করেছিস। ওর জন্য খুব কষ্ট হয়েছে তোর তাই না? এখন যদি ওকে আমি মে’রে ফেলি? কি করবি তুই? বাঁচাতে পারবি না। যেকোনো একজনকে ম’রতেই হবে। হয় ও ম’রবে নাহয় তুই ম’রবি!”
রাইসা এই কথা বলেই দৌড়ে রত্নার ঘরের দিকে যেতে লাগল। জিসান হতাশ দৃষ্টিতে নিচে তাকিয়ে রইল। সে জানে এখন কি হবে! রত্না মা’র খাবে। এতোক্ষণ তার সঙ্গে যা কিছু হয়েছে রত্নার সঙ্গেও তাই হবে। রাইসাকে থামিয়ে লাভ নেই৷ কারণ থামাতে গেলে সে আরও ভয়াল রূপ ধারণ করবে। এর চেয়ে সহজ উপায় মেনে নেওয়া। এখন সকাল ছয়টা বাজে৷ এই সময় রাইসার মেজাজ সবচেয়ে জঘন্য অবস্থায় থাকে। আস্তে আস্তে সে শান্ত হবে। নয়টার দিকে পুরোপুরি শান্ত। অতএব তিনঘণ্টার অত্যাচার সহ্য করা খুব বড় ব্যাপার না। রত্নার ঘর থেকে আর্তচিৎকার শোনা গেল। জিসান নিশ্চিন্তবোধ করছে। রত্না ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করেছে এর মানে সে এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। যদি চিৎকার না শোনা যেতো তাহলে একটা চিন্তার ব্যাপার ছিল। জিসান চোখ বন্ধ করে শুনল রাইসা উন্মত্তের মতো বলছে,” বেরিয়ে যা৷ এক্ষুণি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। নয়তো তোকে আমি খু’ন করবো! তোর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিবো৷ জ্বলে-পুড়ে ছাড়খাড় হবি তুই। যেভাবে আমি জ্বলছি, সেভাবে তুইও জ্বলবি! তোকে জ্বলতে দেখে আমি আনন্দে হাততালি বাজাবো।”
রত্না আরও জোরে চিৎকার করল। এক চিৎকারে শুধু “না,না” করছে মেয়েটা৷ রাইসা কি সত্যি পেট্রোল ঢেলে দিচ্ছে রত্নার গায়ে? অবস্থা বেগতিক দেখে জিসান ভাবল একবার যাবে। কিন্তু গেল না। সে গেলেই রত্নার বিপদ আরও বাড়বে। রাতের ঘটনা তো মনে আছেই। মেয়েটার মাথা ফেটে গেল। জিসান তাকে বাঁচাতে গিয়েছিল বলেই ওমনটা হয়েছিল। জিসান চুপচাপ বসে রইল। এই মুহূর্তে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া অন্যকোনো উপায় নেই। জিসান ঘড়ির দিকে তাকালো। নয়টা বাজতে এখনও অনেক দেরি!
রাইসা রত্নাকে ঘাড় ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বের করে তবেই ক্ষান্ত হলো। তাও এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে। এতে জিসান পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হলো। অন্তত মে’রে ফেলেনি মেয়েটিকে। শুধু ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। তার মানে একটু পর সব এমনিই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। রোজ সকালে তো এমনটাই হয়। রত্নাকে সকাল নয়টা পর্যন্ত বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নয়টার পর রত্না আস্তে-ধীরে দরজায় নক করে ঘরে ঢোকে। নীরবে নিজের কাজ কর‍তে থাকে। রাইসাও তাকে কিছু বলে না। কারণ ততক্ষণে রাইসা দুঃস্বপ্নের কথাটা ভুলে যায়। শুধু দুঃস্বপ্ন দেখেই যে রাইসা তাদের দু’জনের উপর এই অমানুষিক নির্যাতন করে তা না। রাইসার এহেন হিংস্রতার কারণ সন্দেহ আর অবিশ্বাস। জিসানকে রত্নার ঘরে থাকা অবস্থায় কয়েকবার দেখে ফেলেছিল রাইসা।সেই থেকেই তার মনে অবিশ্বাস তৈরী হয়েছে। রত্নার সাথে এখন জিসানকে এক মুহূর্তও সহ্য করতে পারছে না সে।
জিসানের প্রতি তার এমন পজেসিভনেস নতুন কিছু নয়। রাইসা তো প্রথম থেকেই সর্বোচ্চ পজেসিভ। এর কিছু উদাহরণ জিসান রিলেশনের প্রথম দিকেই পেয়েছিল। তখন অবশ্য জিসান ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবতো। কিছু মেয়ে থাকেই এমন। নিজের কাছের মানুষের সাথে অন্যকারো ঘনিষ্ঠতা তারা মেনে নিতে পারে না। ঈর্ষাটা তাদের মধ্যে প্রবল আকারে বিদ্যমান। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে এমন গৎবাঁধা ধারণা নিয়েই বসেছিল জিসান। কিন্তু দেখা গেল, বিয়ের পর দিন দিন রাইসার এই ঈর্ষা সর্বনাশের রূপধারণ করছে। জিসান প্রতিদিন চোখের সামনে মহাপ্রলয় দেখে। চূড়ান্ত সর্বনাশ হওয়ার আগেই এই প্রলয় থামাতে হবে।
বছর তিনেক আগের কথা, জিসানের সাথে তখন রাইসার সম্পর্ক চলছে গোপনে। জিসান ঘন ঘন অফিস থেকে ছুটি নিচ্ছে। আসাদ সাহেবও জিসানকে কিছু বলতেন না৷ কারণ জিসান যতই ছুটি নিক, পরবর্তীতে কাজ করে সব পুষিয়ে দিতো। রাইসা নিয়মিত জিসানের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতও তখন। হুটহাট যেকোনো সময় এসে বলবে,” আজরাতে এখানেই থাকবো। ”
জিসান নিষেধ করতে পারে না। রাইসাকে কোনো বিষয়ে নিষেধ করা সম্ভবও নয়। ভয়ংকর জেদী মেয়ে। মাঝে মাঝে তাকে মনে হয় ছোট বাচ্চাদের মতো। যে বায়না মেটানো না হলেই কেঁদে ভাসায়।জিসানের মা জেসমিন আর ছোটবোন জেসি মফস্বলে থাকতো। জিসানও মফস্বলেই পড়ালেখা করেছে। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুবাদে ঢাকায় এসেছিল। তারপর চাকরীর ফাঁকে আটকে গেল। আর মা-বোনের কাছে ফিরে যাওয়া হলো না। তারা আলাদাই ছিল। জিসান ঢাকায় ছোট্ট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতো। আগে তার রুমমেট ছিল৷ এখন সে একাই থাকে। তাই রাইসা বাড়িতে এলে সমস্যা হয়নি; যতদিন ব্যাপারটা প্রতিবেশীদের চোখে ধরা পড়েনি।
একদিন রাইসা মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠেই জিজ্ঞেস করল,” একটা প্রশ্ন করি তোমাকে?”
জিসান ঘুমো ঘুমো কণ্ঠে বলল,” করো।”
” যদি আমার চেয়েও সুন্দরী কোনো মেয়ে তোমার জীবনে আসে তাহলে তুমি কি করবে? আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?”
ঘুমের ঘোরেও হাসি পেল জিসানের। রাইসার ধারণা, কেবল সুন্দরী বলেই জিসান তাকে ভালোবাসে! কি অদ্ভুত! ভালোবাসা কি বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের উপর নির্ভর করার জিনিস? ভালোবাসা খুব দামী অনুভূতি। সৌন্দর্য্য,জৌলুস,অর্থবিত্তের মতো অস্থায়ী আর ঠুনকো ব্যাপারগুলো কখনোই ভালোবাসার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় না। যদি এমনই হতো তাহলে সামান্য একটি পথের কুকুরের কষ্ট দেখে কেন সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের চোখেও জল আসবে? কেন হৃদয় এক মুহূর্তের জন্য কাতর হবে? ভালোবাসা, মায়া, মমতা সবই হচ্ছে আন্তরিক ব্যাপার। মানুষ শুধু অনুভব করতে পারে। নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মনে মনে এসব ভাবলেও রাইসাকে তাতানোর জন্যই জিসান হাসিমুখে বলল,” হয়তোবা। কেন? যদি ছেড়ে যাই তাহলে কি করবে?”
রাইসা অতি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,” তোমাকে মেরে ফেলবো।”
জিসান হু হা করে হেসে উঠল। রাইসাকে জড়িয়ে ধরল। কথাটা দুষ্টুমি ভেবেই উড়িয়ে দিয়েছিল সে। কিন্তু কে জানতো? রাইসা সেদিন সত্যিটাই বলেছিল!
পরদিন ছিল শুক্রবার। জিসানের অফ ডে। রাইসা সকাল সকাল গোসল করে তৈরী হয়ে নিচ্ছে, বেড়াতে যাবে তারা। তখনও তাদের বিয়ে হয়নি। কিন্তু মেলামেশাটা বিবাহিত দম্পতির মতোই ঘনিষ্ট। রাইসা বেশিরভাগ সময় শাড়ি পরতে পছন্দ করতো। জিসানও তাকে শাড়িতে দেখতেই বেশি ভালোবাসতো। রাইসা ব্লাউজের শেষ হুকটি লাগাতে পারছিল না। জিসানকে অনুরোধ করল লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু জিসান এসে পুরোটাই খুলে ফেলল। রাইসা চোখ বড় করে বলল,” এসব কি হচ্ছে?”
জিসান রাইসার পিঠের বাদামী তিলে চু’মু দিয়ে বলল,” আই লভ দিস স্পট।”
রাইসা হেসে ফেলল। সামনে ঘুরে বলল,” এইটা দেখেই কি তাহলে প্রেমে পড়েছিলে?”
জিসান একটু ভেবে উত্তর দিল,” তিল দেখে তো প্রেম হয় না। তবে বলতে পারো আকৃষ্ট হয়েছিলাম। আমার নজর আটকে গিয়েছিল এখানেই।”
রাইসা তখন গম্ভীর গলায় বলল,” এর মানে বাদামী তিল হচ্ছে তোমার উইকনেস পয়েন্ট! আমার এখন কি ইচ্ছে করছে জানো?”
” কি?”
” পৃথিবীতে যত বাদামী তিলওয়ালী মেয়ে আছে, সবাইকে মে’রে ফেলি। যাতে তুমি আর কখনোই কারো প্রতি আকৃষ্ট হতে না পারো।”
জিসান এই কথা শুনে খুব চমকে গেল। তার অদ্ভুত লাগল। মেয়েটার কি আসলেই মাথায় ঝামেলা আছে? এমন সাংঘাতিক চিন্তা কারো মনে কিভাবে আসে! রাইসার কণ্ঠে ক্রোধ ছিল। জিসান তবুও ব্যাপারটা মজা হিসেবেই গ্রহণ করল। হেসে উড়িয়ে দিল। কিন্তু সেদিন ঘুরতে যাওয়ার পর রেস্টরন্টে যা হলো তা মোটেও মজা ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার মতো ব্যাপার ছিল না।
ঘড়িতে সকাল নয়টা বাজছে। বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল রত্না। পরিবেশ এখন ঠান্ডা, নিশ্চুপ। বারোটা পর্যন্ত সব এমনই থাকবে। তারপর আবার শুরু হবে অশান্তি। প্রতিদিন এতো অত্যাচার সহ্য করেও রত্না এই বাড়িতে পড়ে আছে। রাইসাও রত্নাকে পুরোপুরি বের করে দিচ্ছে না। এর একটা কারণ আছে। রত্না এই বাড়ির কাজের মেয়ে এই ব্যাপারটা শুধু জিসান জানে। কিন্তু সত্যি ঘটনা হলো, রত্না রাইসার বোন হয়। পাঁচবছর বয়সে আসাদ সাহেব আর সালেহা বানু মানে রাইসার মা-বাবা রত্নাকে অনাথ আশ্রম থেকে দত্তক নিয়েছিলেন। রাইসার বয়স তখন বারো। সে ছোটবোন হিসেবে রত্নাকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি। শুরু থেকেই রত্নার প্রতি তার একটা ক্রোধ ছিল। এই মেয়ে তার জীবনে সুখের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে৷ রাইসা নিজের মা-বাবাকে রত্নার সাথে ভাগ করতে পেরেছে কিন্তু জিসানকে কিছুতেই পারবে না। শুধু রত্না কেন? পৃথিবীর অন্যকিছুর সাথেই জিসানকে সে ভাগ করতে পারবে না। সেজন্যই জিসানের পোষা কুকুর ‘ প্রিন্স’ কে পর্যন্ত হ’ত্যা করেছিল রাইসা। প্রিন্সের শোকে জিসান একমাস কাতর ছিল। রাইসা উপরে উপরে বোঝাতো তারও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মনে মনে সে সুখের হাসি হাসতো। জিসানের ভালোবাসার ভাগ সে কাউকে নিতে দিবে না। নিরীহ কুকুরকেও না। প্রিন্সের মৃত্যু যে রাইসার কারণেই হয়েছিল এই ব্যাপারটা জিসান এখনও জানে না। যদি জানতে পারে তাহলে সে রাইসাকে ঘৃণা করবে। কিন্তু রাইসা তো জিসানের ঘৃণা সহ্য করতে পারবে না। জিসান যদি কখনও রাইসাকে ভালোবাসার পরিবর্তে ঘৃণা করতে শুরু করে তাহলে সেই দিনটিই জিসানের জীবনের শেষ দিন হবে!
এখন রাইসার বয়স তেইশ। আর রত্নার ষোল। এগারো বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু রত্নার প্রতি রাইসার ক্ষোভ একটুও বদলায়নি। বরং সময়ের সাথে সাথে তা বেড়েই চলেছে। রাইসা রত্নাকে খু’ন করার জন্যেও প্রস্তুত। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। রত্না রান্নাঘরে ঢুকে কাজ শুরু করেছে৷ রাইসা হঠাৎ তার পেছনে এসে দাঁড়ালো। আচমকা রাইসাকে দেখে ভয়ে চিৎকার বেরিয়ে এলো রত্নার মুখ দিয়ে। আপা একদম ভূতের মতো। কখন আসে, কখন যায় টের পাওয়া মুশকিল। রাইসা রোবটের মতো শান্ত গলায় বলল,” জিসানের জন্য ব্ল্যাক কফি।”
রত্না দ্রুত ঘাড় নাড়িয়ে বলল,” দিচ্ছি। এখনি দিচ্ছি।”
পাঁচমিনিটের মধ্যে কফি বানিয়ে রাইসার হাতে দিয়ে দিল রত্না। রাইসা অপলক রত্নার দিকে চেয়ে থেকে কফির কাপ হাতে বেরিয়ে গেল। রত্নাও তার পেছন পেছন এলো। কারণ রাইসার আচরণ স্বাভাবিক লাগছে না। সে জিসানের ঘরের দিকেও যাচ্ছে না। সে ঢুকলো সিকরেট রুমে। এই রুমে ঢুকেই যত উল্টা-পাল্টা কাজ করে রাইসা। তাই রত্না গোপনে একটা হোল বানিয়ে রেখেছে। এই ফুঁটো থেকে সে সবকিছু দেখতে পারে ভেতরে কি হচ্ছে! রাইসা কফিতে কিছু একটা মেশাল। রত্নার বুক ধুকপুক করতে লাগল। কি মিশিয়েছে রাইসা? এই কফি জিসানকে খেতে দেওয়া যাবে না। রত্না লুকিয়ে রইল দরজার একপাশে। তার পরিকল্পনা হলো, রাইসা ঘর থেকে বের হতে নিলেই সে ল্যাং মেরে ফেলে দিবে। এই ভেবে অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু রাইসা কোন ফাঁকে বের হয়ে গেছে তা টেরও পায়নি রত্না। যখন সুযোগ হাতছাড়া হলো তখনি টের পেল। রাইসা জিসানের ঘরের দিকে যাচ্ছে। রত্নাও পেছন পেছন গেল। জিসান বিছানায় বসে আছে। রাইসা জিসানকে ব্ল্যাক কফি দিল। জিসান কোনো টু-শব্দটিও না করে কফিতে চুমুক দিচ্ছিল। দুইবার চুমুক দেওয়ার পর সে দরজার সামনে রত্নাকে খেয়াল করল। রত্না সমবেগে ঘাড় নেড়ে নিষেধ করছে কফি না খাওয়ার জন্য। জিসান বুঝে গেল। সে কফিতে তৃতীয়বার আর চুমুক দিল না। রাইসা হয়তো ব্যাপারটা বুঝে ফেলল। দরজার কাছে তাকিয়ে রত্নাকে দেখেই প্রচন্ড রাগে কাঁপতে লাগল। কাছে এসে এক থাবায় রত্নাকে সরিয়ে দিল। রত্না ছিটকে গিয়ে পড়ল মেঝের উপর। জিসান দাঁড়িয়ে গেল হাতে কফির কাপ নিয়ে। তার হাত কাঁপছে, সাথে কফির কাপটাও। রাইসা দরজা বন্ধ করে জিসানের সামনে এলো। অগ্নিদৃষ্টিতে এমনভাবে চোখ বড় করে তাকালো যে মনে হচ্ছে এখনি তার চোখের মণি দু’টো খুলে বেরিয়ে আসবে। জিসানের গলা শুকিয়ে গেছে। রাইসা বলল,” তুমি কাকে বিশ্বাস করো? আমাকে নাকি রত্নাকে? যদি আমাকে বিশ্বাস করো, তাহলে কফিটা তুমি শেষ করবে। আর যদি রত্নাকে বিশ্বাস করো, তাহলে আমি তোমাকে শেষ করবো!”
জিসান কোনো কথা বলল না। চুপচাপ কফিটা খেয়ে নিল। মৃত্যু যদি কপালে থাকে তাহলে এমনিও ম’রতে হবে। কষ্ট পেয়ে মৃ’ত্যুর চেয়ে ভালো স্বস্তি নিয়ে মৃ’ত্যু।

চলবে

( এটা থ্রিলার। অনেক অপ্রীতিকর ব্যাপার ঘটবে। শিক্ষণীয় কিছু নেই। থ্রিলারপ্রেমীরা আওয়াজ তুলবেন। কেমন লাগছে জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here