অন্তর্দহন (সিজন-২) পর্ব- ৪

0
2113

অন্তর্দহন (সিজন-২)
পর্ব- ৪
লেখিকা- #অলিন্দ্রিয়া_রুহি

চোখে রোদ চশমা, পরনে নেভি ব্লু জিন্স, একটা টকটকে লাল কুর্তি। এক হাতে ভীষণ ভালো দেখানো ওয়াচ, অপর হাতে কয়েক গাছি চুরির ন্যায় দেখতে কিছু! মুখে যে মেকাপ করেছে তা বোঝা গেলেও খারাপ লাগছে না মোটেও। উল্টো শায়লার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে। শিখা মেয়ের দিক থেকে চোখই সরাতে পারলেন না। বিদেশের হাওয়া বাতাস গায়ে লাগিয়ে শায়লার রূপ তরতর করে বেড়েছে। আগের শায়লার রূপ সুন্দর থাকলেও এখনের শায়লার রূপ ভয়ংকর সুন্দর। শিখা বারে বারে ফাঁকা ঢোক গিললেন। এই মেয়ের জন্য একটা রাজপুত্র জোগাড় করতে হবে।

শায়লা সবার সঙ্গে ‘হাই,হ্যালো’ করে করে কথা চালিয়ে গেল অনেকক্ষণ। সালামটা অবধি দিলো না। এ কী অধঃপতন তার! নিতু আড়ালে মুখ ভেংচি কেটে সরে গেল। শায়লা আসাতে তার খুশি যতটুকু ছিল, তার পুরোটাই নাই হয়ে গেছে। সে সোজা ছাদে চলে গেল জাওয়াদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার জন্য। সকাল থেকে একশোটারও বেশি ফোন দিয়েছে জাওয়াদ। অনেক হয়েছে। এবার বেচারাকে ঠান্ডা করা দরকার।

শায়লা চোখ থেকে চশমা খুলে এদিক ওদিক তাকাল, যেন কাউকে খুঁজছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখতে না পেয়ে সে প্রশ্ন করল,
-“পড়ন্ত কই? ওকে দেখছি না যে।”
নাসরিন বিষন্ন গলায় বললেন,
-“অভ্র চলে যাওয়ার পর থেকে ও অন্যরকম হয়ে গেছে রে শায়লা। ঘর থেকেই বের হতে চায় না। কারো উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। সারাক্ষণ রুমের দরজা আঁটকে বসে থাকে। তুই এসেছিস শুনেও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই ওর মনে। নিজের রুমে বসে আছে।”
-“ওহ। ওর অবস্থা এতটা খারাপের দিকে, আর তোমরা আমাকে জানাওনি! আমি দেখছি। এখন যখন এসে গেছি, তখন আর চিন্তা করিও না কেউ। ওকে আমি সুস্থ করেই তুলবো। আর তাতে তোমাদের সবারও সাহায্য প্রয়োজন।”
নাসরিনের চোখে জল চলে এলো। কেউ তার ভেতরে আবারও আশার বাতি জ্বালিয়েছে। ভবিতব্য কী, কেইবা জানে! তবুই মানুষ তো আশাতেই বাঁচে। নাসরিন শায়লার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-“যত ধরনের সাহায্য প্রয়োজন করব। তুই শুধু আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে তোল মা। ওর এই অবস্থা আমার আর সহ্য হয় না রে মা।” নাসরিন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। শায়লা নাসরিনকে আশ্বস্ত করল। তারপর ফ্রেশ হয়ে পড়ন্তর ঘরের দিকে পা বাড়ালো। পথিমধ্যে ভরা পেটের উল্লাসীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল শায়লার। উল্লাসীকে আগে থেকে চিনলেও কখনো সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। আসার পর উল্লাসী তাকে সালাম জানিয়েছিল, সে উত্তর দিয়েছে। কথোপকথন এইটুকুই।
উল্লাসী শায়লাকে দেখে থমকে দাঁড়াল। ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে রইলো, যেন কিছু বলতে।চায়। শায়লা নিজে থেকে জানতে চাইলো,
-“কিছু বলবে উল্লাসী?”
-“জি আপা। আপনি কী পড়ন্ত আপার ঘরে যাচ্ছেন?”
-“হ্যাঁ।”
-“এখন না গেলেই ভালো হয়। বিকেল টাইম তো। এই সময়ে আপা অভ্র ভাইয়ের কথা খুব বেশি মনে করে আর কাঁদে। তখন কেউ তাকে ডিস্টার্ব করলে সে প্রচুর রেগে যায়। আম্মাও এই সময়টায় পড়ন্ত আপার রুমে যায় না।”
শায়লা ঠোঁট চোখা করে হাসল।
-“তাই? থ্যাংকিউ ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন। বাট আমি যাবো,আর এক্ষুনি যাবো। এরপর দেখবো কী হয় আর না হয়। কেমন?”
শায়লা মিষ্টি করে হেসে চলে গেল। উল্লাসী ভ্রু কুঁচকে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। শায়লার আচরণ তার কাছে ভালো লাগে না। একটা অহংকারী ভাব স্পষ্ট। অহংকারী বা দেমাগ ওয়ালা মানুষকে উল্লাসী মোটেও পছন্দ করে না। উল্লাসী ভাবনা থামিয়ে নিজের কাজে চলে গেল।

দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। পড়ন্ত জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে। তার দৃষ্টি সামনের খোলা মাঠটায় নিবদ্ধ। অপেক্ষা করছে রাতের। কেননা রাত হলেই অভ্রর অবয়ব ওই মাঠে এসে বসে থাকে। পড়ন্ত সেই সময়টুকু খুব উপভোগ করে। এক পলক যে অভ্রকে দেখতে পারে, ওর উপস্থিতি বুঝতে পারে, এটাই তো অনেক কিছু!
শায়লা নিঃশব্দে রুমে ঢুকে পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর পড়ন্তকে হালকা কণ্ঠে ডেকে উঠল,
-“কীরে পড়ু..আছিস ভালো?”
পড়ন্ত ভয় পেয়ে আঁতকে উঠল। সে শায়লার উপস্থিতি একেবারেই টের পায়নি প্রথমে। পেছন ফিরে শায়লাকে উৎসুক চোখে চেয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির দম নিলো। তার মনটা আরও ঘন মেঘে ঢেকে গেল হঠাৎ করেই। শায়লা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
-“রিল্যাক্স! এটা আমি..ভূত না।”
-“কে…কমন আছো?”
-“ভালো। তুই কেমন আছিস? যদিও দেখে মনে হচ্ছে না যে তুই ভালো আছিস।”
পড়ন্ত জবাব দিলো না।
-“জানালায় কী দেখিস?” বলতে বলতে শায়লা এগিয়ে এসে জানালায় উঁকি দিয়ে খোলা মাঠটা এক পলক দেখে নিলো। তারপর পড়ন্তর দিকে তাকিয়ে মৃদু ধমকের সুরে বলল,
-“চেহারার এ কী অবস্থা পড়ু! এরকম পাগলামি করলে চলবে কেমন করে? তুই কী ছোটো মানুষ? শুধু নিজের কথাই ভেবে যাচ্ছিস। তোর কী অভ্রই সব ছিল? কাকা-কাকী এরা কেউ না? তোর কারণে কাকীর কী হাল হয়ে গেছে! আমি তো এসে অবাক হয়ে গেছি। মোটাসোটা ছোট কাকীর চোখের তলায় কালি, গলার হাড্ডি ভেসে উঠেছে। তোরও একই অবস্থা! আমি জাস্ট ভেবে অবাক হই, তোর মতো এত জ্ঞানীগুণী মেয়ে কী করে এত দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে! তুই বড় মেয়ে। কাকার পাশে দাঁড়াবি, সংসারের হাল ধরবি। তা না… আচ্ছা মৃত্যুর উপর কারো হাত আছে কী পড়ন্ত? তুই বলতে পারবি, কবে কীভাবে মারা যাবি তুই? তুই মরলে এই পৃথিবী কী থেমে যাবে? আমরা থেমে যাবো? বড় চাচীও নিজেকে সামলে নিয়েছেন, আর তুই কীনা শোকে শোকে পাগল হয়ে গেছিস? মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি দেখছি!”
পড়ন্তর গাল ফুলে গেল। নাকের পাটা ফুলে গেল। শায়লা চেয়ে চেয়ে দেখলো শুধু। কিছু বলল না। একটা অবিশ্বাস্য চাহনি নিয়ে ক্ষণকাল পড়ন্তর দিকে তাকিয়ে থাকার পর ধীর পায়ে সরে এলো। দরজার কাছাকাছি এসে আবার থামলো। পেছন ফিরে পড়ন্তর দিকে তাকিয়ে বলল,
-“হাতজোড় করে অনুরোধ করছি। একটু বোঝার চেষ্টা করিস। সবকিছু এত সহজ না, আবার সবকিছু এত কঠিনও না।চাইলেই সব ভোলা যায়। আর তোকে তো অভ্রকে ভুলতে বলছে না কেউ। অভ্রর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাক তুই। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে। এক ছাদের তলায় আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের সাথে একটা পাগল কখনোই বাস করতে পারে না পড়ন্ত। এতে স্বাভাবিক মানুষগুলোও পাগল হয়ে যাবে পড়ন্ত।”
-“যে মরে যায় তাকে ভোলা যায় আপু। যে বেঁচে আছে, তাকে কী করে ভুলি আমি?”
শায়লা হতবুদ্ধির ন্যায় তাকিয়ে রইলো।
-“তুই বলতে চাইছিস, অভ্র বেঁচে আছে?”
-“হুম, আছে। ও প্রতিদিন এই মাঠে আসে। আমি ওকে দেখি, ও আমাকে দেখে। তারপর ও চলে যায়। আমার কাছে আসে না আপু..” জোরালো কণ্ঠে কথাটি বলতেই শায়লাকে বিভ্রান্ত দেখালো। সে এগিয়ে আরও একবার মাঠটিকে আগাগোড়া পরখ করে নিলো। তারপর চিন্তিত গলায় বলল,
-“তুই শিউর পড়ু?”
-“একশোভাগ।”
শায়লা উপর নিচ দুইবার মাথা ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করল,
-“কয়টায় আসে?”
-“রাতে। যখন মাঠ একদম খালি থাকে। তখন..”
-“আচ্ছা। আমি আজকে তোর সাথে তোর রুমে থাকব। আমিও দেখবো কোন অভ্র আসে এখানে।”
পড়ন্ত খুশি হলো। যাক, এই প্রথম কেউ তো তাকে বিশ্বাস করলো! সে হাসিমুখে রাজী হয়ে গেল। শায়লা পড়ন্তকে আশ্বস্ত করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

ফোনটা কানে ধরেই গম্ভীর স্বরে নিতু বলল,
-“হ্যালো!”
ওপাশ থেকে জাওয়াদ মেজাজ দেখালো।
-“তোমার সমস্যা কী নিতু! দু’দিন পর পর এরকম করো কেন? আমাকে প্রতিবারে শুধু ভয় দেখানো।”
নিতু হাসি চেপে বিস্ময় প্রকাশ করে বলল,
-“তুমি আমার উপর চেঁচাচ্ছো জাওয়াদ!”
-“তা নয়তো কী করব? এইটুকুন পুঁচকে একটা মেয়ে তুমি, অথচ তোমার ভয়ে আমাকে তটস্থ থাকতে হয় সবসময়। এটা কোনো কথা বলো!”
-“হইছে.. এটাই ফ্যাশন ব্রো! বয়ফ্রেন্ডরা ভেজা বিল্লি হয়ে থাকবে গার্লফ্রেন্ডদের কাছে।”
-“রিয়েলি? এটা কে বলেছে তোমাকে? কোনো কিতাবে এমনটা লেখা আছে নিতু?”
-“না, নেই। এটা নিতুর ডিকশনারিতে লেখা অনলি। মানলে মানো,না মানলে ফুটো।”
নিতু হাসি আঁটকালো। জাওয়াদকে আর একটু বাজিয়ে দেখবে সে। জাওয়াদকে জ্বালাতন করতে ভীষণ আরাম লাগে, মজা পাওয়া যায়। কিন্তু নিতুর আরাম অথবা মজা কোনোটাই জাওয়াদের কাছে সহ্য হচ্ছিল না বিধায়, সে ফট করে বলে বসল,
-“ওকে ফুটলাম। এত চাপের রিলেশন আমার লাগবে না। রাখছি।”
নিতু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। জাওয়াদ তো এত ফটরফটর এর আগে কখনো করেনি।
নিতু অবিশ্বাস্য গলায় বলল,
-“কী বললে তুমি! সিরিয়াসলি রিলেশন ব্রেক আপ?”
-“হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ… তুমি ফুটতে বলছো না? আমিও ফুটলাম। এবার তোমার ডিকশিনারির নতুন নতুন নিয়মকানুন নিয়ে তুমিই থাকো। আমি বাবা পারব না। আমি রিলেশন করতে আসছি, কোনো সেনাবাহিনীর পরীক্ষায় টিকতে না। বায়..”
জাওয়াদ খট করে ফোনটা কেটে দিয়ে আরও একটি দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলল। ফোনটা অফ করে দিলো। এদিকে নিতু তখন পাগল প্রায়। চার বছর হতে চললো সম্পর্কের! বুড়ো ভামের নতুন ভীমরতি উঠল নাকি! এর আগে তো এমন কখনো করেনি। নিতু যতই পাগলামি করুক, জাওয়াদ ঠান্ডা মাথায় সামাল দিয়েছে। তাহলে আজ এমন করল কেন? নিশ্চয়ই কাউকে পেয়েছে। নিতুর চেয়ে সুন্দর, ভালো! এই জন্যেই তো এত পাওয়ার! রাগে,দুঃখে নিতুর চোখে পানি চলে এলো। সে এক নাগাড়ে কল করে যেতে লাগল। প্রতিবার ফোন বন্ধ বলছে। নিতু সজোরে ছাদের জমিনে ফোন আঁছড়ে ফেলে দিলো। মেজাজ তুঙ্গে তার। ঠিক এমন সময়ে শায়লার উপস্থিতিতে হকচকিয়ে গেল নিতু। শায়লাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসার পথে শায়লা দাঁড়া করালো তাকে।
-“এই দাঁড়া, তুই ফোন ভাঙলি কেন?”
নিতু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মিনমিনিয়ে জবাব দিলো,
-“হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে আপু। আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি।”
শায়লা বিশ্বাস করল কী করল না বোঝা গেল না। সে ভ্রু কুঁচকে নিতুর দিকে তাকিয়ে রইলো। নিতু ঢোক চেঁপে বলল,
-“আর কিছু বলবে? আমার একটু তাড়া আছে।”
-“কীসের এত তাড়া?”
-“আমার বান্ধবী অপর্ণার বাসায় যাবো একটু। আমার ফোন তো গেল। ওর কাছ থেকে নোটস গুলো ফটোকপি করিয়ে নিয়ে আসতে হবে।”
শায়লা জবাব দিলো না। নিতু দ্রুত পালিয়ে বাঁচলো।

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে পড়ন্তর ঘরে এসে হানা দিলো শায়লা। পড়ন্ত আজ অনেকদিন পর সবার সঙ্গে একত্রে বসে ডিনার করেছে। এর পেছনে সমস্ত ক্রেডিট শায়লার। পড়ন্তকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। নাসরিন প্রাণে নতুন পানি পেলেন যেন। তার বিশ্বাস, শায়লা পড়ন্তকে আবার আগের মতো করে ফেলবে।
পড়ন্ত জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে শায়লা বলল,
-“আসছে তোর অভ্র?”
পড়ন্ত মেদুর মুখে এদিক ওদিক মাথা নাড়লো। প্রতিদিন রাত সাড়ে নয়টার পর থেকেই যেকোনো এক সময় অভ্রর দেখা পাওয়া যায়। আজ এগারোটা বাজতে চললো, অথচ কেউ এলো না! পড়ন্ত ফিসফিসিয়ে স্বগতোক্তি করল,
-“কেন আসছো না অভ্র! শায়লা আপু তোমাকে দেখলে বাসার সবাই বিশ্বাস করবে আমাকে। আমি যে সঠিক বলছি, তা মানবে। তুমি কেন আসছো না অভ্র! কোথায় তুমি?”
পড়ন্তর চোখে পানি চলে এলো। শায়লা আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কতক্ষণ ফোন টিপলো। তারপর উঠে বসে পড়ন্তকে নিজের সামনে ডাকলো। মুখোমুখি বসিয়ে বলল,
-“এবার অন্তত বিশ্বাস করতে চেষ্টা কর, যা ছিল সব তোর অবচেতন মনের কল্পনা। নইলে আজই কেন এলো না অভ্র? ও তো জানে না যে আমি এসেছি আর তোর রুমেই থাকছি! তাই না?”
পড়ন্ত জবাব না দিয়ে ছলছল চোখে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে পাহাড় সমান গাঢ় কষ্টের তপ্ত শ্বাস ক্ষণে ক্ষণে বেরিয়ে যাচ্ছে। শায়লা আরও কিছুক্ষণ পড়ন্তকে বোঝানোর চেষ্টা করল। তারপর একসময় ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল। ঘুমাতে পারল না পড়ন্ত। বারবার উঠে গিয়ে অন্ধকার মাঠ দেখার চেষ্টা করল। গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদল। দু’ঠোঁট গোল করে বিড়বিড় করল, ‘অভ্র, অভ্র’। তার কান্নারা গাল বেয়ে চিবুকে মিশলো। তবুও অভ্রর দেখা পাওয়া গেল না। একসময় জানালার পাশেই বসে ঘুমিয়ে পড়ল পড়ন্ত। প্রায় মাঝরাতে আচমকাই একটা অন্যরকম সুগন্ধে ঘরটা ভরে গেল। পড়ন্ত ধড়মড়িয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল। বাহিরে নিকষ কালো অন্ধকার। কোথাও আলো নেই। কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবুও পড়ন্তর মনে হলো, জানালা বরাবর মাঠটায় অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখছে। পড়ন্তর মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল…

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here