অন্তর্দহন_২ ?
অলিন্দ্রিয়া_রুহি
শায়লার সঙ্গে অভ্রের যেটা ঘটেছে, সেটা নিছকই একটা এক্সিডেন্ট। অথচ তারই রেশ ধরে একেবারে অনুষ্ঠান করতে যাওয়া মানে সামাজিক,পারিবারিক দুটো দিকেই শায়লাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। আর এমনটা মরে গেলেও চায় না অভ্র। তার চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় টুকরো টুকরো অতীত,যেখানে পড়ন্ত চপল পায়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে… আর সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য গিলছে। মনে পড়ে যায়, অনেকদিন আগের একটি ঘটনা… বড় ফুপির মেয়ের জন্য পাত্র দেখা হয়েছে। এবার পাত্রের বাসায় গিয়ে সামাজিক দেখা সাক্ষাৎের পালা। নিতু,পড়ন্ত,আর অভ্র বাদে বাকী সবাই গিয়েছিল সেই অনুষ্ঠানে। নিতু যায়নি, ওর পেট খারাপ বলে। আর পড়ন্ত যায়নি অভ্র যায়নি বলে.. এটা ওটা নানান ছুতো দিয়ে থেকে গিয়েছিল। তখন তাদের সম্পর্কটার কথা শায়লাও জানতো না, এইজন্যে মাঝখানে সেও বাগড়া সৃষ্টি করেনি। যাইহোক, অভ্রর হাতে তখন মোক্ষম সুযোগ। পরিবারের সবার ভয়ে পড়ন্তকে পারতপক্ষে বোনের চোখে দেখা লাগলেও, সেদিনটা পড়ন্তকে আগাগোড়া প্রেমিকার চোখে দেখেছে, প্রিয়তমার রূপে দেখেছে। পড়ন্ত বিকেলে দু’জনে হাত ধরাধরি করে ছাদে উঠে। জমিয়ে তোলে গল্পের আসর! বিনা বাধায় সেদিন পুরো বিকেলটা তারা গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছিল। গল্পেরই এক ফাঁকে অভ্র মজার ছলে বলেছিল,
-“আচ্ছা, ধর, আমি তোকে বিয়ে না করে অন্য কাউকে করে ফেলি যদি?”
-“একদম এখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেব। একবারও ভাববো না, হুহ!” রাগী রাগী চেহারায় বলেছিল পড়ন্ত।
অভ্রর হাসি পেয়ে গেল। সেই সঙ্গে চোখে জমলো জল। সে ছেলে মানুষ, তাকে তো কান্না মানায় না। পৃথিবী উল্টেপাল্টে যাক, তাকে শক্ত থাকতে হবে। কঠোর থাকতে হবে। কিন্তু কীভাবে থাকবে সে? মন চায় একজনকে, অথচ ভাগ্য লিখে রেখেছে অন্যজনকে। তমিজ উদ্দিনের সাথেও কথা বলেছিল অভ্র, ইনিয়েবিনিয়ে না, সাফ সাফই জানিয়েছিল শায়লাকে বিয়ে না করার কথা, ওটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ব্যতীত অন্যকিছুই তো নয়!কিন্তু উত্তরে তমিজ উদ্দিন বলেছেন,
-“এটা তোমার আগে খেয়াল হয়নি যে একটা মেয়েকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছো, তাও এমন এক জায়গায় যেটা গ্রামোঞ্চলের মতোন। সেখানে তো যেকোনো বিপদ হতে পারে। তুমি মানা করে দিতে শায়লাকে, সে অন্য কাউকে নিয়ে যেতো, নইলে যেতো না। নিজে আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নিতে গেছো যখন, তখন পুরো জীবনেরই দায়িত্ব নাও। আর শোনো, বিয়েটা যেভাবেই হোক, ভাগ্যকে মেনে নিতে শেখো। এতে তোমারই ভালো। জীবনে সুখী হতে পারবে। এখন যদি তুমি শায়লাকে অস্বীকার করতে চাও, মেয়েটা অনেক বড় ধাক্কা খাবে। সে অলরেডি তোমাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে। উপরন্তু শায়লার মা আর আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল, তোমাদের বিয়ে দেওয়া নিয়ে। সেটা যখন হচ্ছেই, তখন আমি কিছুতেই ভাঙতে দেব না মনে রেখো। এবার ঘরে যাও। সন্ধ্যায় তোমার গায়ে হলুদ।”
-“কী আমার বিয়েরে তার আবার গায়ে হলুদ!! উটকো যন্ত্রণা..” মনে মনে বিড়বিড় করলেও মুখে কিছুই বলতে পারল না অভ্র। তমিজ উদ্দিন কে শুধু অভ্রই না, এই বাড়ির সবাই যমের মতোন ভয় পায়। উনি সকলের হর্তাকর্তা কী-না!
সন্ধ্যের সময় তাকে লুঙি আর উদোম শরীরের উপর একটি গামছা জড়িয়ে মা-চাচীরা মিলে যখন ছাদে নিয়ে উঠল, তখন অভ্র ‘হা’ হয়ে শুধু দেখছিলই। স্টেজের কারুকাজ টা খুব চেনা চেনা লাগছিল তার কাছে। উমম… কোথায় দেখেছে? হ্যাঁ, পড়ন্ত দেখিয়েছিল! স্বপ্নে… সে বলেছিল,আর চোখের পাতায় অভ্র সাজিয়েছিল! ঠিক এভাবেই.. এভাবেই তো পড়ন্ত আর তার গায়ে হলুদের স্টেজের সাজ নির্ধারণ করে রেখেছিল পড়ন্ত! এই মেয়েটা কী তাকে কাঁদিয়ে মারবে? কেন পোড়া মনে বারবার আঘাত করছে? নাকি সে পড়ন্তকে কাঁদিয়ে মারছে? সারাদিনে একটিবারও দেখা হয়নি। সে নিজেই রুম থেকে বের হয়নি দেখা হয়ে যাবার ভয়ে। পড়ন্তর দীঘি টলমল চোখ জোড়া যদি সে দেখে ফেলে.. তখন নিজের অন্তর্দহনে নিজেকে পুড়ে মরতে হবে। একদিকে পরিবার, অপরদিকে ভালোবাসা… আফসোস, মানুষ এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়ালে পরিবারকেই বেছে নেয়। তাহলে ভালোবাসা কী? খুবই ঠুনকো মানসিক রোগের নামই ভালোবাসা?
এসব সাতপাঁচ চিন্তাধারা মাথায় উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভ্র পড়ন্তকে দেখতে পেল। তার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু একটা করছে… আর করতে করতেই মাথা ঘুরে শুয়ে পড়ল পড়ন্ত। অভ্র চমকে উঠল। একটা হুলুস্থুল কান্ড বেধে গেল মুহূর্তেই। অভ্র দৌড়ে এগোলো। পড়ন্তকে একটাবার ছোঁয়ার আশায়… নাসরিন হায় হায় করে বিলাপ জুড়ে দিলেন। দাদীবু তটস্থ, একই দিনে দুই-দুইটা অশুভ কাজ কেন ঘটে গেল? তবে কী কারও নজর পড়ল এই সুন্দর বাড়িটির উপর?
অভ্র সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ব্যতিব্যস্ত গলায় বলল,
-“দেখি, আমি ঘরে নিয়ে যাচ্ছি ওকে।”
পড়ন্তকে তুলতে যাবে, তখনি পেছন থেকে একটি কর্কশ কণ্ঠস্বর শোনা গেল,
-“তুমি স্টেজে বসো গিয়ে… যাও।”
অভ্র পেছনে তাকিয়ে দেখল, তমিজ উদ্দিন দাঁড়িয়ে, গরম চাউনি। অভ্র গুটিয়ে গেল। পড়ন্তের বাবা মিথুন উদ্দিন মেয়েকে পাজাকোলে করে নিয়ে ঘরের দিকে ছুটলো। নাসরিনকে শোনা গেল, বলছেন,
-“সারাদিনে কিচ্ছু খায় নাই। অথচ কত জায়গায় দৌড়াইলো! ও অজ্ঞান হবে না তো কে হবে?”
অভ্রর বুকটা ভার হয়ে এলো ক্রমশ। পড়ন্ত সারাদিনে কিচ্ছুটি মুখে তুললো না? মেয়েটা… মেয়েটা জীবনে এগিয়ে যাক খোদা, আমাকে ভুলে যাক- মনে মনে প্রার্থনা করল সে। তাকে ধরে বসানো হলো শায়লার পাশে। পড়ন্ত অজ্ঞান হয়েছে,তা নিয়ে শায়লার ভেতর কোনো উৎকণ্ঠা নেই। সে খুশি, তার পাশে অভ্র এসে বসায়। অভ্র একবারও শায়লার দিকে তাকালো না। চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো। নাক মোছার বাহানায় টিস্যু দিয়ে বারবার চোখ মুছতে লাগল। আর তাকে বারবার নুয়ে যেতে দেখে পাড়াপড়শিরা হাসাহাসি করল এই বলে যে, ছেলেও লজ্জা পাচ্ছে!
বারোটার ঘরে ঘড়ির কাটা এসে থামতেই পড়ন্ত জেগে উঠল। তার শিয়রের কাছে নাসরিন ছাড়া আর কেউ নেই। পড়ন্তকে চোখ মেলতে দেখে নাসরিন ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।
-“মা.. পড়ন্ত মা, তুই ঠিক আছিস?”
-“আছি আম্মু।” ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করল পড়ন্ত। তাকে বসতে সাহায্য করল নাসরিন। তারপর শুরু করলেন বকা… একেবারে ধুঁয়ে দিলেন পড়ন্তকে। এটাও বললেন, যদি ফের খাবারে অনিয়ম করে তবে চ্যালাকাঠ দিয়ে পিটিয়ে পিঠের ছাল বাকড়া তুলে ফেলবেন। পড়ন্ত একটি শব্দও উচ্চারণ করল না। নাসরিন থামলে সে শুধু প্রশ্ন করল,
-“আম্মু.. অনুষ্ঠান কী শেষ?”
-“হুঁ.. কিছুক্ষণ আগেই শেষ হইছে। এখন ওদিকটা গুছানো হচ্ছে। বিরিয়ানি খাচ্ছে সবাই। তোর জন্য নিয়ে আসি? খাবি?”
পড়ন্ত ফাঁকা ঢোক গিললো। তার অজ্ঞান হওয়া দেখেও কী করে পারল অভ্র গায়ে হলুদ মাখতে? এতটা পাল্টে গেল একদিনেই? পাষাণ! অবশ্য শায়লার মতো আগুন সুন্দরী পেলে তো শ্যামলাকে কালাই মনে হবে সবার কাছে! এ আর নতুন কী!
-“কীরে? আনবো বিরিয়ানি?”
-“না আম্মু, ওসব তৈলাক্ত খাবার ভালো লাগছে না। তুমি আমাকে সাদা ভাত দাও। সাথে একটু ভর্তা করে দিতে পারবে?”
-“এই রাতে ভর্তা ভাত খাবি?”
-“হুঁ.. ওই যে শুটকির একটা ভর্তা করো না তুমি.. পাঁচ মিনিটেই হয়ে যায় যে, ওটা বানিয়ে দাও। কয়টা খেয়ে ঘুমাই। শরীর ভাল লাগছে না।” বলে মিথ্যে হামি তুললো পড়ন্ত। নাসরিন হেসে ভর্তা বানাতে গেলেন। মায়ের হাতে বেশ আয়েশ করেই ভাত খেলো পড়ন্ত। তারপর শুয়ে পড়ল। ওর শরীর খারাপ দেখে নাসরিনও আজ মেয়ের সঙ্গেই ঘুমোলেন। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ, নিঝুম হয়ে উঠলেও ঘুম এলো না পড়ন্তের চোখ জোড়ায়। সে কাঁদছে.. নিঃশব্দে, একাকী, খুব সঙ্গোপনে… পাছে কেউ টের পেয়ে যায় তাই হা করে কাঁদছে। একটু শব্দ হলেও যে মা বুঝে যাবে! এই কষ্ট তার একার.. এখানে কারও ভাগ নেই.. কাউকে বুঝতে দিলেও চলবে না। ভালোবাসাটা যেমন তার একার ছিল, এবার কষ্টটাকেও একা মনে পুষতে হবে!
★
পরদিন বেশ আড়ম্বর করে না হলেও মোটামুটি আয়োজনে শায়লাকে অভ্রর স্ত্রী হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হলো। অসুস্থতার বাহানা দিয়ে পুরোটা সময় ঘরের খিল এঁটে শুয়ে রইলো পড়ন্ত। যখন উচ্চ আওয়াজে গান বাজানো হলো, সে কানে হেডফোন গুঁজে নিজের পছন্দের গান শুনতে লাগল। একবার শুধু শুনলো, সবাই সমস্বরে বলছে, “আলহামদুলিল্লাহ”। পড়ন্ত তখন আর থামাতে পারল না নিজেকে। বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ে হাপুস নয়নে কেঁদে গেল। অতিরিক্ত কান্নার ফলে সন্ধ্যের পর পরই গা কাঁপিয়ে ধুম জ্বর এলো পড়ন্তর। নাসরিন মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে এসেও বারবার মেয়েকে দেখে যেতে লাগলেন। এদিকের ঝামেলা শেষ হলেই একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন বলেও মনস্থির করলেন। আটটার পর… দরজায় টোকা পড়লে নাসরিন গিয়ে খুলে দিলেন। শায়লা এসেছে।
-“পড়ন্ত কই চাচী? আমার বিয়েতে ওকে একবারের জন্যেও দেখলাম না!”
-“ওর শরীরটা অনেক খারাপ রে মা। ঘুমোচ্ছে.. যা ভেতরে।”
শায়লা ভেতরের রুমে এসে দেখলো পড়ন্ত কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। ওর কপালে হাত রেখে কিছুটা চমকে উঠল শায়লা। প্রচুর জ্বর।এই প্রথম পড়ন্তের জন্য শায়লার মন খারাপ হলো। আশাভঙ্গ হওয়ায় মেয়েটা ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। একদিনেই চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ফোলা চোখমুখ তার কান্নার সাক্ষী। আচ্ছা, কাউকে কাঁদিয়ে কেউ কী সুখী হতে পারে? শায়লা ভেতরে ভেতরে ভয় পেয়ে গেল। সে নিজেই নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল,
-“আরে আমি তো কিছু করিনাই! ওর ভাগ্যে অভ্র নাই, তাতে আমার কী দোষ?”
নাসরিনের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে শায়লা বিদায় নিতেই ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে চোখ খুললো পড়ন্ত। শায়লার কণ্ঠ শুনেই সে ঘুমের ভান ধরেছে। বউ সাজে শায়লাকে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই। আচ্ছা, আজ তো তাদের বাসর রাত। যতই হোক, অভ্র নিশ্চয়ই শায়লাকে নিজের কাছে টেনে নিবেই নিবে! অভ্রর গালে কতশত চুমু খেয়েছে পড়ন্ত! আর আজ সেখানে শায়লা আদর করে দিবে! অভ্রর বুকে প্রায়ই মাথা রেখে হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানি শুনত পড়ন্ত। অথচ আজ থেকে তা শায়লার দখলে চলে গেল। অভ্র ঠিক যেভাবে যেভাবে তাকে আদর করত, আজ শায়লাকে তার চেয়েও বেশি আদরে মুগ্ধ করে তুলবে!
হাপড়ের মতো বুকটা ওঠানামা করতে লাগল পড়ন্তের। এই কষ্ট, এই জ্বালা, কাকে বোঝাবে সে? পুরো পৃথিবীতে এমন কেউ কী নেই পড়ন্তের কষ্টটা বোঝার? তাকে স্বান্তনা স্বরুপ দুটো বাক্য বলার? কেউ কী নেই যার কাছে মন খুলে কাঁদা যাবে? পড়ন্তের চোখ দিয়ে জল পড়তে শুরু করল আবার। অস্থির লাগছে প্রচুর। অন্তরে তোলপাড়… মনবাড়িতে কড়াঘাত চলছে। ভেতর থেকে কেউ চিৎকার করে কাঁদছে। না চাইতেও মন অভিশাপ দিচ্ছে,
-“তুমি সুখে থাকতে পারবে না অভ্র… একদম পারবে না।”
আবার অপর মন বলছে,
-“ছিঃ ছিঃ এসব বলিস না… যে তোর ছিলোই না,তাকে নিয়ে এসব ভাবনা বন্ধ কর। অল্প সময়ের আবেগে গা ভাসিয়ে আজ তার শাস্তি পাচ্ছিস। তুই তোর মতো ভালো থাক, তাকে তার মতো ছেড়ে দে। প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে একটা কথা আছে!”
নাসরিন ঘরে ঢুকে চমকে গেলেন। পড়ন্ত পাগলের মতো কাঁদছে। তিনি একপ্রকার ছুটে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।
-“পড়ন্ত.. কী হইছে মা? কী হইছে তোর? বল আমাকে…”
-“কষ্ট হচ্ছে মা.. খুব কষ্ট হচ্ছে! আ…আমার দম টা…বন্ধ হয়ে আসছে মা… আ…আমার…” কথা সম্পূর্ণ করার আগেই মায়ের বুকে নেতিয়ে পড়ল পড়ন্ত। নাসরিন চমকের উপর চমক খেলেন।
★
তমিজ উদ্দিন নিজে এসে অভ্রকে তার রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাহির থেকে দরজার ছিটকিনি আঁটকে দিলেন। অভ্র রাগে ফেটে পড়ল তবে সেটা মনে মনে… শায়লা বিছানার মাঝখানে লম্বা ঘোমটা টেনে চুপচাপ বসে আছে দেখে অভ্রর মাথায় রক্ত চড়ে গেল। একহাত দিয়ে পাগড়ীটা খুলে ছুঁড়ে মারল অভ্র, তারপর উদ্ভ্রান্তের ন্যায় শায়লার ঘোমটা সরিয়ে তার দুই গাল চেপে ধরল। হিসহিসিয়ে বলল,
-“আমার স্ত্রী সাজার নাটক করবি না খবরদার। যদি করিস, আমার চে খারাপ কেউ হবে না। আমি খুন করে জেলে যাব দরকার পড়লে… তাও আমার স্ত্রীর জায়গা তোকে দেব না।”
শায়লা বলার চেষ্টা করল,
-“আমার লাগছে তো…”
-“তাই? লাগছে? তাহলে আরও লাগুক।” বলে গালের চাপ আরও শক্ত করল অভ্র। তারপর হঠাৎই বিমর্ষ সুরে বলল,
-“তুই তো জানতিস, পড়ন্তকে আমি কত্তটা ভালোবাসি! তবুও আমাদের আলাদা করে দিলি। নিজের স্বার্থে..”
শায়লা ঠেলে অভ্রকে সরিয়ে দিলো।
-“আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি!”
-“তোর ভালোবাসাটাই সব? আমার আর পড়ন্তর ভালোবাসাটা কিছু না?”
-“ওসব অতীত… আর অতীত ভুলে যেতে হয়। আমি তোমার স্ত্রী, আমি তোমার সব কষ্ট মুছে দেব।” বলে অভ্রর গলা জড়িয়ে ধরবার চেষ্টা করল শায়লা। অভ্র তীব্র ধাক্কায় শায়লাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
-“একটা চড় মারলে কান টান সব ঘুরে যাবে বেয়াদব!! দূরে দূরে থাকবি আমার থেকে একদম… নইলে…” অভ্র তেড়ে এসে ঝুঁকে পড়ল শায়লার উপর। শায়লাকে চোখ দিয়ে গরম চাউনি ছুঁড়ে মারলো, শায়লা তো ভয় পেলোই না উল্টো অভ্রর গলা দু’হাতে জড়িয়ে তাকে নিজের উপর ফেলে দিলো। অভ্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার গালে শায়লার অধর স্পর্শ পেলো। শায়লা ঠোঁটের দিকেও নিজের ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নিলো, কিন্তু তার আগেই শক্ত হাতের চড়ে তার মাথা ভন ভন করে উঠল। সে বিস্ফোরিত নয়নে অভ্রর দিকে তাকাল। অভ্র ততক্ষণে উঠে পড়েছে। এক হাতে গাল ডলছে। কিছু বলছে না তবে অগ্নি চোখে ক্ষণকাল শায়লার দিকে তাকিয়ে রইলো। সেই চোখের অর্থ, ‘আমার থেকে দূরে দূরে থাকিস, নইলে এরকম হাজারটা উপহার পাবি।’
কিছুক্ষণ পর অভ্র বাথরুমে ঢুকে গেলে শায়লা কাঁদোকাঁদো চোখে উঠে বসলো। সেই সঙ্গে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে মনে মনে গালিও আওড়ালো কয়েকটি।
চলবে…
(সবাইকে গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করা হলো)