অন্যরকম ভালবাসা,২য় পর্ব
মারিয়া আফরিন নুপুর
স্নেহা ঘুরেই দেখল আহাসান ঘুমিয়ে আছে ওর পাশে আর তার হাতটা ঠিক স্নেহার পেটের উপরে দেওয়া। স্নেহার মনটা হঠাৎই ভাল হয়ে গেল এই প্রথম ছোঁয়া পেয়ে।ওর মনে হচ্ছিল যেন উষ্ণ মরুপ্রান্তেএ একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া। আসলেই প্রথম ছোঁয়ার অনুভূতির আবেশই অন্যরকম। স্নেহা দেখতেও কিন্তু কম সুন্দরী না। স্কুল কলেজ লাইফে অনেক অনেক প্রোপজ পেয়েছে কিন্তু কখনও এসব বিষয়ে মাথা ঘামায় নি। পড়াশোনাই ছিল তার ধ্যান জ্ঞান কিন্তু এই পড়াশোনা করতে করতে তার ভেতরের আমিত্বটা তো আর মরে যায় নি। কাল থেকে স্নেহার কাছে যেন মনে হচ্ছে সে আবার কিশোরী হয়ে গেছে। একটু ছোঁয়া একটু কাছে পাওয়ার জন্য যেন ব্যকুল হয়ে আছে। ঘুমন্ত আহাসানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল স্নেহা। আস্তে করে আহাসানকে সরিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখলো তখনও বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে মানুষটা। ওয়াশরুমের আলোটা ঠিক মুখের উপরে এসে পড়েছে। ঘুমন্ত কাউকে দেখে এত মায়া লাগে সেটা হয়ত আজই স্নেহা প্রথম অনুভব করল। আর একটু কাছে যেয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা শুরু করল আহাসানকে স্নেহা । নাকের ঠিক উপরে বড় একটা তিল আছে আর সেটা কি না স্নেহা মাত্র দেখতে পেল। এত কঠিন করে রাখে চেহারাটা সব সময় আর এখন ঘুমের কারনে কঠিনতার মুখোশ খুলে যেয়ে যেন ঠিক বাচ্চাদের মত লাগছে আহাসানকে। পা দুটো কুঁকড়ে শুয়ে আছে সে সোজা করে ঘুমালে হয়ত বাইরেই চলে যেত পা। এত লম্বা হয় নাকি মানুষ। স্নেহা নিজেও সাড়ে পাঁচ ফুটের উপরে লম্বা কিন্তু আহাসানের পাশে যখনই দাঁড়িয়েছে তখনই ওর কেন জানি না গ্যালিভার আর লিলিপুটের কথা মনে এসেছে।স্নেহার মনে চাচ্ছিল আরো কিছুক্ষন বসে মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকুক কিন্তু অনেক্ষন হয়েছে সে রুমে এসেছে। নতুন বউ বলে কথা অন্যান্যদের একটু খোঁজও তো তার রাখতে হবে। শাড়ি ঠিক করে ওয়াশরুমের লাইট অফ করে যখন স্নেহা নিচে নামল তখন ঠিক রাত আটটা বাজে। নিচে এসে দেখলো অতশী টিভি দেখলে মায়ের সাথে বসে বসে। নীলা ভাবি রান্না ঘরে সাথে বুয়াও আছে। স্নেহা সোজা যেয়ে রান্না ঘরে ঢুকলো।
___ ” ভাবি কি করতে হবে আমাকে বলেন আমি করছি।
___ ” না না ভাই তোমার কিচ্ছু করতে হবে তোমাকে দিয়ে কিছু করাই আর তোমার বর আমাকে প্যারেড করার তাই না।
এই বলেই নীলা হাসতে লাগল।
___ কিচ্ছু হবে না ভাবী উনি ঘুমে। আপনি আমাকে দেন কি কি করতে হবে।
___ বুঝি বুঝি আমাদেরও এমন হয়ে ছিল। সারারাত জাগলে এমনই হয়।
স্নেহা মনে মনে বড় এক নিশ্বাস ফেলল। যা বাইরের দৃষ্টিতে দেখা যায় তাই কি আর কখনও হয়? নীলা আবারও প্রশ্ন করল
___ স্নেহা ছুটি কবে শেষ তোমার? আবার তো হসপিটালে শুনেছি নাইট ডিউটি হয়। দেবরটা না আমার পাগল হয়ে যায়।
নীলা কথাগুলো বলেই হাসি আর থামাতে পারে না। স্নেহা মনে মনে বলল ” ভাবী আপনার দেবর আমাকে ছাড়া দিব্বি ভাল আছে। আমি না থাকলেই সে ভাল থাকবে “। মুখে হাসি টেনে স্নেহা বলল,
___ হঠাৎ করে এমন হয়ে গেছে তো তাই বেশি ছুটি পাই নি। পরশু থেকেই জয়েন করা লাগবে।
___ কই ভেবেছিলাম জা এসেছে এখন আর একা থাকা লাগবে না। কিন্তু কিসের কি জা টাও নাকি এখন হাসপাতালে ছুটবে।
মুখে কপাট রাগ এনে বলল নীলা। পিছন থেকে নীলাকে জড়িয়ে ধরে স্নেহা বলল ” ভাবী একদম চিন্তা করবেন না তাড়াতাড়ি যাব তাড়াতাড়ি ফিরবো। এসেই আপনার সাথে গল্প করতে বসবো। এবার তো আর রাগ নেই”। নীলা ঘুরিয়ে স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে বলল ” আজকে থেকে আমাকে ভাবী না বুবু বলবি তুই। জানিস আমার না আগে খুব কষ্ট হতো যে বোন নেই কেন। বিয়ের পরে অতশীকে পেয়ে অনেকটাই কষ্ট চলে গেছে। আর আজকে তোকে পেয়ে আর কোন কষ্টই নেই বোন না থাকার। তুই আর অতশীই আমার বোন”। এসব কিছুই পেছন থেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন ফিরোজা খানম।কেন জানি না তার চোখ দুটি বারবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। ছেলে দুটো বড় হওয়ার পরে ফিরোজা খুব চিন্তায় থাকতেন যে কেমন না কেমন মেয়ে আসে ঘরে। যদি সব কিছু মানিয়ে নিতে না পারে তখন কেমন হবে। নীলা আনার পরে যেন এক হাঁফ ছেড়ে ছিলেন অনেক লক্ষী একটা মেয়ে নীলা। আর স্নেহাকে তো এক নজরেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। না ফিরোজা খানম ভুল করেন নি তাহলে। আসলেই তিনি জহুরীর মত আসল হীরাই বেছে নিয়েছেন। বউদের এই মিল দেখলে কার না ভাল লাগে। কিন্তু চিন্তা একটাই আহাসান কি করে কে জানে। তিনি বারবার আল্লাহর কাছে দোয়া করেই যাচ্ছেন যেন ওই বদ মেয়ের উপরের রাগগুলো ছেলেটা এই মেয়েটার উপরে না দেখায়। যেমন নিরবে এসেছিলেন ঠিক তেমনি নিরবে সরে গেলেন ফিরোজা। আবার ড্রইংরুমে ফিরে এসে দেখলেন অতশী টিভি ছেড়ে মনের আনন্দে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। যেটা ফিরোজার একদম অপছন্দের।
___ অতশী এক কাজ করি মা ফোন হাতে ধরে রাখতে তো তোর খুব কষ্ট হয়। আমি তোর গলার সাথে ছোট্ট একটা পিঁড়ি বেঁধে দেই ওটার উপরে রেখে রেখে ফোন টেপাটেপি করবি।
তাড়াতাড়ি ফোন সাইডে রেখে টিভির দিকে মন দিল অতসী কারন সে খুব ভাল করেই জানে এটা মায়ের থ্রেটমূলক আদর। এর পরের ধাপেই ফোন জব্দ করার আশংকা আছে। এর চেয়ে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করাই অতশীর কাছে বেটার মনে হল।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে দুই বউ ডাইনিং টেবিল রেডি করে ফেলল। ফিরোজা টেবিলে বসেই বললেন
___ স্নেহা যাও তো আহাসানকে ডেকে নিয়ে এসো।
___ জি মা।
এই বলেই স্নেহা উপরে গেল আহাসানকে ডাকতে। রুমে যেয়ে দেখলো বিছানা খালি তারমানে সে ঘুম থেকে উঠে গেছে। ওয়াশরুমের দরজাও খোলা কিন্তু সে গেলটা কই। আজব কাহিনী তো। কেন জানি না মনে হল বারান্দায় হয়ত থাকতে পারে। বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলো এক চেয়ারের উপরে বসে অন্য চেয়ারের উপরে পা তুলে গুনগুন শব্দ তুলে গান গাইছে আহাসান। ” বাহ মেজর সাহেব তাহলে গানও গাইতে পারে বেশ ভালই তো ” মনে মনে আউড়ালো স্নেহা। আস্তে করে একটা ছোট্ট কাশি দিল স্নেহা গান বন্ধ করে স্নেহার দিকে তাকালো আহাসান। ” মা খেতে ডাকছিল” এটুকু বলেই চুপ হয়ে গেল স্নেহা। আসলে মেয়েদের মনে হয় এক একসময় এক এক রুপে খুব বেশি ভাল লাগে। এই যে স্নেহা মনে হয় রান্না ঘরে ছিল কপালের উপরে, নাকের নিচে থুতুনীর নিচে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে আর লাইটের আলোয় চকচক করছে সেই বিন্দু গুলি ঠিক যেন এক একটা মুক্তার দানার মত। এ যেন এক অন্যরকম সৌন্দর্য্য যার কোন তুলনাই হয় না। আহাসানের খুব ইচ্ছা হল ওই বিন্দু গুলো ছুঁয়ে দেখার। আস্তে করে উঠে স্নেহার সামনে এসে দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে স্নেহার দিকে আগাতে লাগল আর স্নেহাও পিছনে সরতে সরতে একদম দেওয়ালের সাথে যেয়ে লাগল। দু হাত দিয়ে স্নেহাকে আটকিয়ে চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ” মা অপেক্ষা করছে দেরি হলে চলে আসবে উপরে ” কোন রকমে শব্দ বের করে বলল স্নেহা। আহাসান তখনও একই ভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে স্নেহার ঠোঁটের নিচে জমে থাকা ঘামের বিন্দু গুলো আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করতে লাগল। সেই স্পর্শের জন্যই যেন স্নেহা কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল।
ঠিক তখনই দরজা খুলে গেল। ” কি ব্যাপার ভাবি ভাইয়াকে ডাকতে এসে তুমিও….. ” এটুকু বলেই আহাসান আর স্নেহাকে ওভাবে দেখে অতশী অপ্রস্তুত হয়ে গেল। স্নেহা তো লজ্জায় মরে মরে পালা। আহাসান ও বেশ অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলল ” এত বড় ধিঙ্গি হয়েছিস জানিস না যে কারো রুমে ঢুকতে হলে নক করে ঢুকতে হয়”। ” না জানবো কি করে আগে তো আর তোমার বউ ছিল তাই নক ছাড়াই ঢুকতাম এখন তো সাধের কলশি হইছে তাই দরজার বাইরে একটা ঢোল বসাইতে বলব মা রে। যাতে কেউ ঢুকতে গেলেই সেটায় বাড়ি দেয় আর তোমরা বোঝো যে হ্যাঁ কেউ আসতেছে” এই বলেই হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল অতশী। ” তবে রে আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন ” এই বলেই আহাসান অতশীর পিছনে দৌড় দিল। পিছন থেকে স্নেহাও মুচকি হাসি দিয়ে তাদের পিছনে পিছনে চল। এই মানুষটাই কি সেই মানুষ যে কাল সারারাত একবার ফিরেও তাকায় নি তার নতুন বউয়ের দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল স্নেহা।
রাতে খাওয়ার টেবিলে বেশ মজাই হল। স্নেহা অতশী আর নীলা এরা তিনজন এক দলে আর আহাসান আর ফিরোজা খানম একদলে। অতশীর উকিল হল স্নেহা আর নীলা আর আহাসানের উকিল ওর মা। এমন করে দুষ্টমিষ্টি ঝগড়ায় খাওয়া কমপ্লিট হল। গল্প করতে করতে ঘুমাতে যেতে যেতে প্রায় বারোটার কাছাকাছি বাজলো সবার। স্নেহা যখন রুমে এলো তখনও আহাসান নিচে সবার সাথে গল্প করতেছে। এসে বিছানা ঠিক করে শাড়িটা খুলে চেঞ্জ করে অন্য একটা শাড়ি পরল স্নেহা। রান্না ঘরে কাজ করতে যেয়ে ঘামে একাকার হয়ে গেছিল। ওর আবার খুব খারাপ লাগে ঘামে ভেজা কাপড় পরে ঘুমাতে। শাড়ি পরতে পরতে স্নেহা বারবার ভাবছিল ইসস শাড়ি না পরে একটা টিশার্ট আর ঢোলা একটা প্লাজু পরে ঘুমাতে পারলে কত শান্তি লাগত। শাড়ি পরে ঘুমালে সকালে শাড়ি খুঁজতে আরেকজনকে হায়ার করা লাগে। আর তাছাড়া রুমে তো এখন উনিও থাকে এই অবস্থায় দেখলে মানসম্মান চলে যাওয়ার মত অবস্থা হয় ওর।
আহাসান যখন রুমে আসলো স্নেহা তখন জানালার ধারে দাঁড়ানো মুখ ভার করে। লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরেছে স্নেহ। একদম আলতা রাঙা বউয়ের মত লাগছেছে৷ কিন্তু কেন জানি না মুখটা বাঙলা পাঁচের মত করে রেখেছে। আহাসানের একবার ইচ্ছা হল জিজ্ঞেস করবে পরে আবার ভাবলো না থাক এত কেন আগ্রহ দেখাচ্ছে ওই মেয়েটার উপরে। সব মেয়েই রিনির মত। ভালবাসার কুয়ার ধাক্কা দিয়ে আবার অবহেলার নদীতে ডুবাতেও সময় লাগে না। এর চেয়ে ভাল দূরে দূরে থাকা। কিন্তু কি করে যে আহাসান দূরে থাকবে সেটাই বুঝতেছে না। মেয়েটাকেই দেখলেই মনে চায় একটু ধরে আদর করি। সব ভাবনা পাশে ঠেলে দিয়ে আহাসান এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ওদিকে স্নেহা কতক্ষন ভাবতে ভাবতে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল যে একবার বলে দেখি কি বলে বেশি হলে দুইটা বকাই নাহয় দেবে। আস্তে করে আহাসানের পাশে এসে দাঁড়ালো সে। ” আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন ” জিজ্ঞেস করল স্নেহা। চোখ মেলে ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো আহাসান স্নেহার দিকে। সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন। একটা কথা বলতাম কিছু যদি মনে না করতেন তাহলে” আবারও বলল স্নেহা। ” হুম ” এটুকু বলেই আহাসান আবার চোখ মুদলো। ” আপনার যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে আমি একটু টিশার্ট আর প্লাজু পরে ঘুমাই। আসলে শাড়ি পরলে সকালে উঠে শাড়ি খুঁজেই পাই না। তাই ” এটুকু বলেই স্নেহা চুপ হয়ে গেল। অদিকে আহাসানের খুব হাসি পাচ্ছিল স্নেহার এমন বাচ্চামি মার্কা কথা শুনে।হাসি সামলিয়ে কঠিন মুখে বলল ” যা পরে ঘুমাতে আরাম পাও তা পরে ঘুমাও”। এটুকু বলেই চিত হয়ে শুয়ে পড়ল আহাসান যেন তার কঠিন ঘুম পাচ্ছে। স্নেহা খুশির ঠেলায় লাফাতে লাফাতে আলমারি থেকে টিশার্ট বের করে নিল। শাড়ি রুমেই খোলা শুরু করল। চোখের কোণা দিয়ে স্নেহাকে শাড়ি খুলতে দেখে আহাসানের বুকের হার্টবিট যেন লাফ দিয়েই বেড়ে গেল। মেয়েটা করতেছেটা কি। এ তো মাথা খারাপ করে দেওয়ার পালা করেছে। ফর্সা পেট পিঠ দেখা যাচ্ছে৷ বুকের উপরের হুক একটা খুলে গেছে। নাভিটা বেরিয়ে আছে উফফ এসব সহ্য করার মত না। তখনই স্নেহা ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল। আহাসান কাত হয়ে শুয়ে পড়লো যাতে স্নেহা বের হলেই ওকে দেখতে পারে সে। একটু পরেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে গেল আর…….
চলবে,,