অন্যরকম ভালবাসা,৩য় পর্ব

0
3796

অন্যরকম ভালবাসা,৩য় পর্ব
মারিয়া আফরিন নুপুর

শরীরের প্রতিটি খাঁজ যেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে স্নেহার।টিশার্ট পরা তো রিনিকে দেখেছে কই এমন তো লাগে নি আর কখনও। চোখ যেন অদৃশ্য কোন এক শক্তিতে আটকিয়ে গেছে মেয়েটার দিকে।” ও তো মেয়ে নয় যেন এক মায়া ” মনে মনে ভাবল আহাসান।বেবি পিংক অফ শোল্ডার টিশার্ট আর ঢোলা প্লাজুতে একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে, আহাসান চোখ বন্ধ করার ভাব ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে স্নেহাকে দেখছে আর ভাবতেছে। ফিটিং টিশার্টে যেন অন্যরকম লাগছে স্নেহাকে। ডাক্তার মানুষ তো এই জন্যই মনে হয় শরীরের এত খেয়াল রেখেছে। আচ্ছা কেউ কারো বউকে লুকিয়ে লুকিয়ে এমন করে দেখে, আহাসান মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করল। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে স্নেহার যেন মনে হল আজকে খুব শান্তিতে একটা ঘুম হবে। কালকে শাড়ির টেনশনে টেনশনে ঘুমই আসে নাই। কিন্তু সকালে উঠে দেখেছে ঠিকই একই কাহিনী করেছে। শাড়ি ছিল চন্ডিপাড়া ও ছিল দাস পাড়া। খাটের কাছে এসে দেখলো আহাসানের কোন নড়া চড়া নেই। যাক ভালই হয়েছে। এই ড্রেস আপে তো ওকে দেখলো না।
আস্তে করে এসে শুয়ে পড়লো স্নেহা। কেন জানি না শীত করতে লাগল ওর এসির দিকে তাকিয়ে দেখলো ২৪°এ দেওয়া। ” এত টেম্পারেচার কমায় কেউ” মনে মনে এত মেজাজ খারাপ হল স্নেহার যা বলার মতন না। পায়ের কাছের কম্বল গায়ে টেনে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল।

আহাসানের ফোনে এলার্ম ঠিক সাড়ে পাঁচটায় দেওয়া। যদিও কখনোই ওটার প্রয়োজন হয় না তার আগেই তার চোখ খুলে যায়। আজকের ঘুমটা যেন ভাঙ্গলো এক উষ্ণ কোমলতায়। প্রথমে আবছা অন্ধকারে আহাসান বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই বুঝলো যে স্নেহা ওর বুকের মধ্যে লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে। আহসান যেন হালকা টানে স্নেহাকে আরো কাছে নিয়ে আসে।ঘরটা প্রচন্ড শীতল হয়ে আছে তাকিয়ে দেখলো এসি অন তাও আবার টেম্পারেচার খুবই লো করা। এর জন্য রাতে হয়ত ও ঘুমের ঘরেই স্নেহার কম্বলের নিচে ঢুকেছে৷ স্নেহার কপালের কয়েকটা চুল এসে মুখের উপরে পড়েছিল। আহাসান আলতো হাতে মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিল। স্নেহা নড়েচড়ে আর একটু কাছে এলো। স্নেহার নিঃশ্বাস গুলো ঠিক আহসানের বুকের উপরে পড়ছিল। আহাসান স্নেহাকে জড়িয়ে ধরেই যেন বিশাল এক কারেন্টের শক খেলো। স্নেহা খালি গায়ে ঘুমাচ্ছে। প্রথমে কেন জানি না আহসানের বিশ্বাস হল না পরে যখন কম্বল উঁচু করে দেখলো যেন ও শরীরের প্রতিটা শিরায় উপশিরায় শিহরণ বয়ে গেল। ও যেন নিঃশ্বাস নিতেই ভুলে গিয়েছিল। এত সুন্দর লাগে মেয়েদের এই অবস্থায়? জাষ্ট ভাবাই যায় ন্য। সম্ভিত ফিরে পেতেই আহসানের মনে পড়লো স্নেহা তো টিশার্ট পরে ঘুমিয়েছিল কিন্তু ওটা গেল কই? আস্তে করে উঠে বসে দেখলো গেল কই টিশার্টটা। দেখে স্নেহার পায়ের কাছে পড়ে আছে সেটা। মুচকি একটা হাসি দিয়ে বিছানা ছাড়লো আহসান। ফ্রেশ হয়ে গোসল করে খালি গায়ে টাওয়াল পরে যখন বের হল আহসান দেখলো স্নেহা উঠে বসে কম্বল গলা পর্যন্ত টেনে দিয়ে রেখেছে। স্নেহার ওই ভাবে বসে থাকার কারণ জানা স্বত্তেও আহসান ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল
___ কি ব্যাপার ওভাবে বসে আছো যে? উঠে ফ্রেশ হও
আমি অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি।
স্নেহা যে কি থেকে কি বলবে খুঁজে পেতে না পেয়ে বলল
___ ” আমাকে একটু হেল্প করবেন?
___ ” কি হেল্প শুনি? ”
___ আপনি একটু রুমের বাইরে যাবেন। জাষ্ট ৫ মিনিট এর জন্য।
আহসান কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বলল,
___ মাথা কি ঠিক আছে না ডাক্তার দেখাতে হবে। আমার অফিস টাইম হয়ে যাচ্ছে আর উনি আমাকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলতেছে। যত্তসব…..
এই বলেই আবার ফিরে চুল ঠিক করতে লাগল। উপায় অন্ত না পেয়ে স্নেহা কম্বল মুড়ি দিয়েই টিশার্ট খুঁজতে লাগল। এত বড় এক কম্বল মুড়ি দিয়ে টিশার্ট খুঁজতে লাগল স্নেহা। আর টিশার্টই বা পাবে কি করে সেটা তো আহসান অনেক আগেই ওয়াশরুমে রেখে দিয়ে এসেছে। টিশার্ট খুঁজতে খুঁজতে কখন যে টেবিলের কোনায় কম্বল বেঁধে গিয়েছে স্নেহা টেরও পায় নি। কম্বল টান লেগে নিচে আর স্নেহা মুখ থুবড়ে পড়ার আগেই ওকে ধরে ফেলে আহসান। কেন জানি না আহসানের মনে হচ্ছিল মানুষ এত সুন্দর হয়। স্নেহা যেন লজ্জায় একাকার হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কেন জানি না অজানা এক ভাললাগা কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল এই অবস্থায় সারা জীবন আটকে থাকুক উনার বাহুডোরে। আহসানের কি হল কে জানে আস্তে করে স্নেহার কপালে গাড় করে একটা চুমু খেয়ে নিল। ঠিক তখনই রুমের দরজা খুলে গেল।
___ ” আহসান তোমার ভাই……….
এটুকু বলেই যেন নীলা থমকে গেল। আহসান আর স্নেহাও যেন কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। নীলা যেন এক প্রকার দৌড়েই ওদের রুম থেকে চলে গেল। স্নেহা যেন একপ্রকার ঠেলেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেল আহসান কে সরিয়ে।ওয়াশরুমে বসে বসে ও যে মরে যাচ্ছিল এই ঘটনার কথা ভেবে। ইসস কি অবস্থায় উনি ওকে দেখলেন। উফফ স্নেহা যেন কিছুই ভ্যবতেজ পারছে না। আহসানও ড্রেস পরে রেডি হল নিচে নামার জন্য। স্নেহা যখন বের হল একবারে ফ্রেশ হয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছিল মাথা নুইয়ে নুইয়ে কাজ করছিল। যখনই আহসানের দিকে নজর পড়লো যেন আর চোখ ফিরাতে পারছিল না। আর্মির ড্রেসে এত সুন্দর লাগতে পারে কোন মানুষ। আগে স্নেহা ভাবতো ঝাকড়া চুলেই মনে হয় ছেলেদের সুন্দর লাগে কিন্তু আর্মি ছাটেও যে ছেলেদের এতটা মানায় সেটা স্নেহার জানা ছিল না। স্নেহাকে দেখেই আহসান বলে উঠলো
___” নিচে চলো। সবাই অপেক্ষা করতেছে। আমাদের বাসায় নাস্তা নরমালি ৭টার ভিতরেই খায় সবাই “।
স্নেহা মাথা কাত করে সায় দিল। তার পর আহসানের পিছু পিছু নিচে নেমে আসলো। নীলাকে দেখেই স্নেহার যেন লজ্জায় একুল ওকুল অবস্থা। নীলাও সুযোগ বুঝে মোঁছের নিচে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসি দিতে লাগল। নাস্তার পরে আহসান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। আর স্নেহাও উপরে চলে আসল। একটু পরে ওর রুমে অতশী আর নীলা এসে হাজির। স্নেহাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগল
___ ” বুঝলে অতশী তোমার ছোট ভাইয়ের রুমে একটা কলিংবেল লাগিয়ে দিতে হবে। এখন এটা প্রাইভেট রুম হয়ে গেছে “।
___ ” ভাবী তুমি তো লেট করে ফেলেছ। আরে আমি তো কাল রাতেই বলেছি ছোট ভাইয়ের রুমের বাইরে ঢোল ফিট করে দেবো “।
খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলল অতশী। ওদের দুজনের কথা শুনে স্নেহার মনে হচ্ছিল লজ্জায় যেন মরে যাচ্ছে।
___ ” থাক ভাই থাক তোমার আর লজ্জা পেতে হবে না। যে ভাবে লাল হয়ে যাচ্ছে তোমার গাল কখন না টাস করে ফেটে যাও “।
নীলা হাসতে হাসতে স্নেহাকে বলল।
___ ছোট ভাবি আমার অফারটা কিন্তু ভেবে দেখো “।
এই বলেই অতশী চোখ টিপ দিল। স্নেহা না বুঝেই প্রশ্ন করে বসলো,
___ ” কোন অফারের কথা বলতেছ অতশী?”
___ ” ঢোলের অফারের কথা বলতেছি ভাবি “।
নীলা আর অতশীর সাথে এবার হাসিতে স্নেহাও যোগ দিল। তিনজনের মিলে গল্প করতে করতে দুপুর হয়ে গেল। ওদিকে আজকের রান্নাবান্নার দ্বায়িত্ব ফিরোজা খানম নিজেই নিয়েছিলেন। দুপুরের গোসল করে নীলা যখন বের হল তখন গাড়ির শব্দ শুনলো মানে আহসান এসে গেছে। তাড়াতাড়ি নীলা শাড়ি পরে রেডি হয়ে বের হল। নীলা নিচে নামতে নামতেই দেখলো আহসান বাসায় ঢুকছে।
___ ” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন খাবার দিচ্ছি”।
আহসানকে দেখেই বলে উঠল স্নেহা।
___ ” সবার খাওয়া শেষ”?
আহসানের প্রশ্নের উওরে মাথা ঝাকিয়ে না বলল স্নেহা। উপরে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে যখন নিচে নামল সে দেখলো সবাই টেবিলে বসে অপেক্ষা করতেছে তার৷ খাওয়া শেষ হতেই নীলা বলে উঠলো,
___ ” আহসান এক্ক কাজ করো স্নেহাকে নিয়ে ঘুরে এসো। কাল থেকে স্নেহার ডিউটি আছে। ঘুরে আসলে ভাল লাগবে “।
সাথে সাথে ফিরোজা খানমও সায় দিলেন,
___ ” যা দুইজনে বেড়িয়ে আয় ভাল লাগবে তোদের”।
সবার চাপাচাপিতে মোটামুটি অনিচ্ছায় হলেও স্নেহাকে নিয়ে বের হতে হল আহসানকে। গাড় নীল কালারের একটা পাঞ্জাবি পরেছে আহসান আজকে আর সাথে স্কাই ব্লু জিন্স। চুল তো এমনিতেও নড়েচড়ে না তারপরও হাত বুলিয়ে ঠিক করে নিল। স্নেহা যখন রেডি হয়ে নিচে গাড়ির কাছে আসলো আহসান মনে হয় গোটা দশেক হার্টবিট মিস করলো। কালো মার্বেল জর্জেট শাড়ি ম্যাচিং ব্লাউজ। হাতে পাতলা দুগাছা চুড়ি কানে গোল্ডের দুল আর হ্যাঁ কপালে ছোট্ট একটা টিপ। এ যেন এক অন্য স্নেহাকে আবিষ্কার করে ও রোজ। আচ্ছা কোন স্বামী তার বউকে এভাবে দেখে কি না কে অনেক জনে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওর বউকে ও ঠিক স্ক্যান করে রোজ। স্নেহা গাড়ির পেছনের দরজা খুলে পিছনে বসতে যাচ্ছিল। তখনই আহসান বলল,
___ ” আচ্ছা আমি কি তোমার ড্রাইভার নাকি “?
___ ” এ মা তা হবে কেন? আমি কি কখনও এটা বলেছি”।
___ ” বলো তো নি কিন্তু কাজে বুঝাচ্ছ”।
___ ” মানে ”
স্নেহা চোখ কুঁচকে প্রশ্ন করল।
___ ” পেছনের সিটে বসতেছ কেন সামনে এসে বসো “।
এই বলেই হাসান গাড়ি স্টার্ট দিল। স্নেহা সিটে বসতে বসতে ভাবল নাক মনে হয় সোজা দেখাইতেই শেখে নাই।গাড়ি ছুটে চলল শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে। যখন ওরা উওরার তিনশ ফিট রাস্তায় এসে পৌঁছালো প্রায় বিকেল গড়িয়ে এসেছে।কেন জানি না স্নেহার খুব ভাল লাগছিল। নিরিবিলি দেখে এক জায়গায় গাড়ি পার্ক করল আহসান।হাতের ইশারায় স্নেহাকে বের হতে বলল সে। দুজনে যেয়ে পানির কিনারায় চুপ করে বসল। কেন জানি না স্নেহার খুব ইচ্ছা করছিল আহসানের কাঁধে মাথা দিতে।আস্তে করে আহসানের হাতটা জড়িয়ে ধরল স্নেহা। ওর কাঁধে মাথা দিয়ে আকাশ দেখতে লাগল স্নেহা। কেমন যে লাগছিল স্নেহার ও যেন কাউকেই বুঝাতেই পারবে না। আহসানেরও কেন জানিনা মনে হচ্ছিল থাক না আজকে। না দেই বাঁধা আজকে স্নেহাকে। দুজনে এমন কতক্ষন বসে ছিল জানে না। ঠিক তখনই এমন একটা জিনিস ঘটল যার জন্য আহসান কখনোই প্রস্তুত ছিল না। ও দেখলো………

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here