অন্যরকম ভালবাসা,৫ম পর্ব

0
4563

অন্যরকম ভালবাসা,৫ম পর্ব
মারিয়া আফরিন নুপুর

“রিমি ” নামটা শোনার পরেই আশ্চর্য হয়ে গেল স্নেহা। সে তাও রিমি নামের কাউকে চেনে না তাহলে কে এই মেয়ে যে হসপিটালে আসছে দেখা করতে। অবাক হলেও স্নেহা চলল গেষ্ট রুমে রিমি নামক মেয়ের সাথে দেখা করতে। রুমে ঢুকেই দেখলো দক্ষিন দিকের কোণায় একটা মেয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। কলাপাতা কালারের একটা লেডিস শার্ট আর ব্লাক জিন্স পরনে। ফিট ফিগার যারে বলে। বসে আছে তাও দেখে মনে হচ্ছে অনেক লম্বা হবে। স্নেহাকে দেখেই মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো। স্নেহা সামনে যেয়ে দাঁড়াতেই মিষ্টি হাসি দিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য,
____ ” হাই, আমি রিমি তুমি নিশ্চয় স্নেহা”।
___ ” হুম আমি স্নেহা। আসলে আমি চিনতে পারি নি আপনাকে “।
___ ” চিনতে পারার কথাও না। কারণ এর আগে তুমি আমাকে দেখো নি কখনও। আর হ্যাঁ তোমাকে তুমি করে বলতেছি প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড”।
রিমি কথা শুনে স্নেহা বেশ কনফিউজড হয়ে গেল। ও আসলে বুঝতে পারছিল না ওর কি বলা উচিত। তারপরও মুখে হাসি টেনে বলল,
___ ইটস ওকে, বলতে পারেন।
___ ” শোনো স্নেহা আমি কথা খুব ফ্যাংকলি বলতে পছন্দ করি। কে কি বলল না বলল আই ডোন্ট কেয়ার”
এটুকু বলেই রিমি দম নিল। মনে হচ্ছে কথার টুকরো জোড়া দিতেই নিরবতা। স্নেহা ততক্ষনে বুঝে গেছে এ মেয়ে যাই হোক আর দশটা মেয়ের মত নয়। তাই মনোযোগ দিল কথায়। রিমি বলতে শুরু করল,
___ ” আমি জানি না আমার কথা শুনে কেমন লাগবে তোমার বাট প্রশ্নটা আমার না করলেই নয়। আমি আহসানের এক্স গার্লফ্রেন্ড “।
এটুকু শোনার পরেই স্নেহার মনে হতে থাকল পুরো পৃথিবীই ঘুরছে। স্বামীর এক্স থাকা অন্যায় কিছু না তাই বলে বিয়ের দুই দিনের মাথায় তার স্বামীর এক্স তার সাথে দেখা করতে এসেছে। এসব ভাবতে ভাবতে স্নেহা যেন ঘোরের মধ্যে ছিল। আবার খেয়াল করল রিমির কথায়।
___ ” একচ্যুয়েলি আমিও একটা মেয়ে। আসলে তোমার কাছে একটা কথাই জানতে আসা। আমি জানি তোমার ওড লাগছে বাট আমার কিছুই করার নেই। আমি শুধু জানতে চাই একটা ব্যাপার তাই এখানে আসা”।
___ ” জি বলুন কি জানতে চান “?
স্নেহা শীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করল। স্নেহার কন্ঠের মধ্যেই জানি কি ছিল রিমি চমকে তাকালো তার দিকে। একটু সময় নিয়ে আবার শুরু সে,
___ ” আমার সাথে আহসানের সম্পর্ক প্রায় চার বছর ছিল। অনেস্টলি বলতে ও অনেক কেয়ারিং একটা পারসোন। কিন্তু স্নেহা কি জানো ওর একটা সমস্যা আছে। তোমার কাছে লুকানোর কোন দরকার নেই। আমার মনে হয় ওর ফিজিক্যাল সমস্যা আছে “।
রিমির কথা শুনেই স্নেহার গা গোলাতে লাগল। এই মেয়েটা কি কি বলছে। এ যে শোনাটাও পাপ। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে স্নেহা রিমির চোখে চোখ রেখে বলল,
___ ” আপনি কি করে জানলেন যে আমার হ্যাজবেন্ড ফিজিক্যালি অক্ষম। আর হ্যাঁ এমন একটা লোকের সাথে চার বছর সম্পর্ক কন্টিনিউ করলেনই বা কি করে? ”
___ ” আমি জানতাম স্নেহা তুমি এই প্রশ্নটাই করবে। তাহলে উওর শোনো। যেখানে রিলেশনের ছয় মাস না যেতেই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এর ফিজিক্যাল রিলেশন হয় সেখানে আমি দুই বছর অপেক্ষা করেছি। নরমাল ডেটে যেতাম দুজনে গল্প করতাম এই পর্যন্তই। আমার হাতটুকু পর্যন্ত সহজে ধরত না আহসান। এর পরে না পেরে আমিই জোর করতাম। হ্যাঁ ঠিক ই শুনেছ আমি জোর করতাম যাতে আমরা আরো ইন্টিমেট হতে পারি। বাট হি কান্ট। এই কারণেই রিলেশনের চার বছরের মাথায় ব্রেকাপ আমিই ঘটাই”
অনেক্ষন বলে যেন রিমি ক্লান্ত হয়ে গেল। স্নেহা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল। পানি খেয়ে রিমি চুপ করে বসলো। তখন স্নেহা বলল,
___ ” আপনার অনেক কথাই শুনলাম বাট এটা বুঝতে পারলাম না আপনি আমার কাছে জানতে চাচ্ছেনটা কি ”
___ ” স্নেহা আই জাষ্ট ওয়ান্ট টু নো ইজ হি এব্যেল অর নট। আই হোপ ইউ আর আন্ডারস্ট্যান্ড মাই কোয়েসচেন?”
জ্বল জ্বলে চোখে স্নেহা রিমির দিকে তাকালো। হিম শীতল কণ্ঠে বলা শুরু করল,
___ ” জানেন খুব হাসি পাচ্ছে আপনার উপরে। ভালোতো বেসেছিলেন নাকি ওই লোকটাকে। ব্রেকাপ হয়ে গেছে এখন ভালবাসেন না ইটস ওকে বাট রেসপেক্ট তো করতে পারেন “।
___ ” স্নেহা আমি আহসানকে অলওয়েজ রেসপেক্ট করি।”
স্নেহা উঁচু করে থামালো রিমি কে। তারপর বলল,
___ ” আপনি কথা বলার সময় কিন্তু আমি শব্দ করি নি আশা করব আমার পুরো কথা শোনার পরে আপনার মতামত দেবেন। আমার স্বামী অক্ষম কি সক্ষম সেটা আমার আর আমার স্বামীর ব্যাপার। তৃতীয় কোন ব্যক্তির কাছে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য না। আর আপনার সাথে তো তার ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে। তাহলে কেন তার পেছনে পড়ে আছেন।”
কথা শেষ করে স্নেহা হাঁপাতে লাগল। মনে হচ্ছিল যেন মনের আকাশে বিশাল কালো মেঘের আগমন হয়েছে।একটু অঝোর বর্ষন হয়ে হয়ত ভালই হত। রিমি আস্তে করে উঠে দাঁড়ানো। স্নেহা তখনও চুপ করে বসে আছে সোফায়। রিমি স্নেহার কাধেঁ হাত দিয়ে বলল,
___ ” বেষ্ট অফ লাক”।
এটুকু বলেই হিলের খট খট আওয়াজ তুলে বেরিয়ে গেল। কতক্ষন মাথা নিচু করে ভিজিটার্স রুমে স্নেহা বসে ছিল নিজেও জানে না। মজিদ চাচার ডাকে সম্ভিত ফিরল তার। ” ম্যাডাম আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে “। স্নেহা উওর দিল ” না চাচা একটা কাজ কর‍তে পারেন। আমাকে একটা সিএনজি ডেকে দিতে পারেন বাসায় যাব”। স্নেহার এই কথা শুনে মজিদ বাইরে চলে গেল। এক অজানা অভিমান যেন স্নেহার বুকটাকে ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছিল। কিসের যে অভিমান সে বুঝতেই পারছিল না। সব গুছিয়ে সিএনজি দিয়ে স্নেহা সোজা তার বাবার বাড়িতে চলে এলো। মেয়েকে হঠাৎ দেখে শফিক সাহেব খুব খুশি হলেন। কিন্তু একটু অবাকও হলেন। হাসিমাখা মুখে প্রশ্ন করলেন,
___ ” কি রে মা তুই একা আসলি, আহসান কই? ”
___ ” উনার কাজ আছে আব্বু তাই আসতে পারে নি। আমার সামনে টেষ্ট আছে খুলনা যেতে হবে তাই রেষ্ট করতে চলে এসেছি “।
মেয়ের কথা শুনে শফিক সাহেব হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। ততক্ষনে স্নেহার মা এসে হাজির। মেয়েকে হঠাৎ দেখে কতক্ষন থ খেয়ে চেয়ে থেকেই মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর স্নেহা বলল,
___ ” মা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি ভাত বাড়ো ক্ষিদে পেয়েছে চরম “।
___ ” যা হাত মুখ ধুয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি “।
___ ” হাত মুখ ধোবো না ডাইরেক্ট গোসল দিতে হবে। রাস্তার ধুলো সব মুখে লেগে আছে “।
হাসতে হাসতে বলল স্নেহা। ওর রুমে এসে স্নেহার মনে হতে লাগল এ যেন অপরিচিত কোন এক জায়গা আপন তো ছিল ওইটা যেখানে ও ছিল। কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে কান্নায় গড়িয়ে পড়লো স্নেহা। কেন এমন হল তার সাথে। এ মানা যে বড্ড কঠিন।

ওদিকে তিনটার দিকে আহসান গাড়ি নিয়ে হাসপাতালের বাইরে এসে হাজির ফোনের উপরে ফোন দিচ্ছে স্নেহার ফোন সুইচ অফ। কপাল কুঁচকে গেল আহসানের মেয়েটা কই যে গেল। না পেরে কল দিল অতশীকে।
____ ” হ্যালো, অতশী তোর ভাবি বাসায় গেছে “?
____ ” না ভাইয়া, ভাবি তো এখনও আসেই নাই “। কেন কি হইছে ”
____ ” কিছুই হয় নাই ওকে পিক করতে আসছি ফোন অফ তাই ভাবলাম বাসায় গেল কি না। আচ্ছা আমি রাখি দেখি কই গেল “।
___ ” ভাইয়া জানিও আমাকে কি হয় “।
আহসান ফোন কেটে দিয়ে শফিক সাহেবকে কল করল। ফোন ধরার সাথেই সাথেই শফিক সাহেব বলল,
___ ” বাবা স্নেহা একা এসেছে তুমিও তো আসতে পারতে “।
এটুকু শুনেই আহসানের খুব অবাক লাগল স্নেহা না বলেই ওবাসায় চলে গেছে? এমন তো কিছু হয় নি যে স্নেহার ও বাসায় এমন করে চলে যেতে হবে।পরক্ষনেই সুন্দর করে বলল,
___ ” বাবা আসলে স্নেহাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। আপনি ওকে বলবেন না আমি আসতেছি”।
___ ” আচ্ছা বাবা আসো আসো তোমার মা খুব খুশি হবে।
কথা শেষে আহসান আবার কল দিল অতশীকে বলল যে সে স্নেহাদের বাসায় যাচ্ছে রাতে নাও আসতে পারে। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ভাবতে লাগল স্নেহার কি এমন হল যে ওকে না বলেই চলে যেতে হল। স্নেহা সবে খেয়ে উঠে বসে ওর মাকে বলল ” মা আমি একটু ঘুমাবো খুব টায়ার্ড লাগছে।যতক্ষন না উঠি ডেকো না “। এই বলেই রুমে যেয়ে এসি অন করে ঘুমিয়ে পড়লো। একটু পরে যখন শীত লাগা শুরু করল পাতলা কম্বল টেনে দিল শরীরের উপরে। কখন যে ঘুমের অতল গহব্বরে তলিয়ে গেল নিজেও জানে না।
আহসান এসেই দেখে তার শশুর টিভি দেখছে। ঘরে ঢুকেই সালাম করল শফিক সাহেবকে। জামাইকে আর্মির ড্রেসে দেখে তার বুকের ছাতি গর্বে টানটান হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি করে স্নেহার মাকে ডাক দিলেন। কুশল পর্ব শেষ আহসানকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে স্নেহার মা বললেন ” স্নেহা রুমে ঘুমাচ্ছে। তুমি যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও আমি খাবার দিচ্ছি”। ” না মা এখন কিছুই খাব না জাষ্ট কিচ্ছুক্ষণ আগেই খেয়েছি। আমিও একটু রেষ্ট করব ” এই বলেই আহসান স্নেহার রুমের দিকে রওনা হল। রুমের দরজার লক মোচড় দিতে দিতে ভেবেছিল হয়ত লক করা থাকবে কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে লক খুলে গেল। রুমে ঢুকেই দেখে আবছা অন্ধকার পুরোটা রুম। এসির কারনে হিমশীতল হয়ে আছে ঘরটা। আর মহারানী খাটে এলো চুলে কম্বল নাক পর্যন্ত টেনে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। বাহ, তাকে টেনশনে রেখে এখানে এসে ঘুমানো হচ্ছে। সবার আগে আহসান শার্ট খুলে হুকে ঝুলিয়ে রাখল। বেল্ট খুলে টেবিলে রাখল। কথা হল কি পরবে ফ্রেশ হয়ে। পরে মনে পড়ল স্নেহা বলেছিল ওর বাবা আহসানের জন্য নতুন লুঙ্গি পাজামা শার্ট সব কিনে রেখেছেন। কিনেছে বাল কথা বাট জিনিস গুলো কোথায়। স্নেহার ঘুম ভাঙ্গাতে চাইল না আহসান তাই নিজে নিজেই ফোনের টর্চ নিয়ে খুঁজতে বসলো কোথায় আছে সেই জিনিস। অবশেষে লাষ্টের ড্রয়ারে পেয়েও গেল প্যাকেটটা। ঠিক তখনই আহসান যা শুনলো তাতে তার হাত পা হিম হয়ে গেল। ও শুনলো স্নেহ বলছে….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here