অপছন্দের জামাই,পর্বঃ১

0
6858

অপছন্দের জামাই,পর্বঃ১
লেখকঃরনি হাসান

–“রিমা তোর জামাই এত কালো কেন, তুই চাইলে তো হিরোদের মতো জামাই পাইতি, আর তুই কিনা এমন কালোভুতকে জীবন সঙ্গী করে নিলি, তোরই বা কি দোষ আংকেল নিজেই তো এমন কালো ভুতকে তোর লাইফে জড়িয়ে দিয়েছে

শশুড় বাড়ি ঘুরতে এসে রিমার বান্ধুবী নিতুর কাছে থেকে এরকম অপমানজনক কথা গুলো শুনে ও না শুনার ভান করে রিমা ও নিতুকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে যায়, কথা গুলো শুনে একটু খারাপই লাগছিল, যে চেহারা রং একটু কালো বলে এরকম অসম্মান হতে হলো। রিমা তো নিতুকে কিছু একটা বলে থামাতে পারত কিন্তু ও তা করল না, মন খারাপ নিয়ে বিছানায় বসে ফোন ঘাটতে লাগলাম, শশুর শাশুড়ী মা তারা আমাকে দেখে হাসি মুখে মত বিনিময় করলেন, কিন্তু রিমা আমাকে দেখে মন ভার করে আছে, হইত আমার এখানে আসাতে ও খুশি হইনি, রিমা ফুলশয্যার রাতেই আমাকে সাফ সাফ বলে দিয়েছে, আমার কাছে কখনো স্বামীর অধিকার দেখাতে আসবেন না। স্বামী হিসাবে আপনাকে আমার একদম পছন্দ হইনি

ফুলশয্যার রাতে সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীরের কাছে কোনো হাসবেন্ড কথাটি মেনে নিতে পারবেনা। কিন্তু আমি সহজেই রিমার কথাটি হজম করে হাসি মুখে বলছিলাম, এখন পছন্দ হইনি তো কি হইছে, ধীরে ধীরে ভালো লাগা ভালোবাসা হয়ে যাবে, আপনি নিশ্চিত থাকুক

রিমা ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলো, আপনি কেন আমায় বিয়ে করতে সম্মতি দিলেন, আপনি চাইলে তো কোনো কালো রঙের মেয়েকে বিয়ে করে নিতে পারতেন, মেয়ে আপনার জন্য ডিজার্ভ করে। মাঝখানে থেকে আমার জীবন টাকে আপনি বরবাদ করে দিলেন

রিমার অপমানজনক কথাগুলো শুনে নিজেকে কেন জানি সংযত রাখতে পারিনি, চোখজোড়া সেদিন ভিজে উঠেছিলো, একসময় বন্ধুদের কাছে অবহেলার পাত্র হয়ে ছিলাম। ভেবে ছিলাম বন্ধুরা আমার গায়ের কালো রঙ নিয়ে উপহাস করলেও। যে আমার স্ত্রী হবে তার কাছে অন্তত গায়ের রং নিয়ে অসম্মানি হতে হবে না, আমার ভাবনা ফুলশয্যার রাতে ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। রিমা ও অন্যদের মতো আমার চেহারা রঙ নিয়ে কটু কথা শুনায়, এবং আমার মতো কালো রঙের স্বামী পেয়ে নিজেকে অনেক আনলাকি মনে করে। তা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারতাম, বিয়ের ১০-১৫ প্রায় হয়ে গেলো এরমধ্যে মুখ ফুটে আমার সঙ্গে একটি কথাও বলেনি, আমি নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলছি,আর এখন রিমাকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এখানে আসছি,রুমে সেই কখন থেকে বসে আছি, রিমা দেখেও পাশ কাটিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো, ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করার ও প্রয়োজন বোধ মনে করলো না

উপরদিকে একা একা বসে থাকতে বোরিং ও লাগছে, উপায় না পেয়ে রিমার ফোনে মেসেজ দিলাম, আমাকে পাশ কাটিয়ে চলছেন কেন, আমি বাঘ না ভাল্লুক যে আপনাকে খেয়ে ফেলবো, প্লিজ রুমে আসেন একা একা টাইম পাস করতে পারছি না।

দশ মিনিট পর রিমা মেসেজের রিপ্লাই দিল ” আপনার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই, এরজন্য পাশ কাটিয়ে চলছি, আর হ্যা যদি পারেন তো একটু জলদি আমাদের বাসা থেকে চলে যাবেন, আপনার জন্য অনেকেই কাছেই আমাকে কথা শুনতে হচ্ছে

রিমার দেওয়া মেসেজটি দেখে, তাদের বাসায় থাকার বিন্দুমাত্র ও ইচ্ছা টা আর রইলো না। রুম থেকে বের হয়ে দরজায় পা রাখবো ব্যস শাশুড়ী মা খাবার হাতে নিয়ে এসে বলল

–“জামাই বাবাজি কোথায় যাচ্ছো_?

–“ইয়ে মানে আমার একটু বাসায় ইমারজেন্সি যেতে হবে

–“যতই ইমারজেন্সি কাজ থাকুক না কেনো, আজ কোনোভাবেই বাসায় যাওয়া হচ্ছে না, কাল রিমার ফুপিদের বাসায় তোমাদের যেতে হবে। ওখানে আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজনরা তোমাকে এখনো দেখেনি, সুতরাং কাল রিমাকে নিয়ে তোমার ফুপির বাসায় যেতে হবে , এখন খাবার গুলো খেয়ে নাও , আমি বরং রিমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি-

শাশুড়ী এ বলে খাবার গুলো সামনে রেখে রুম ত্যাগ করলেন, আর এইদিকে আমার খারাপ লাগা বেড়েই চলছে, মনে হচ্ছে এখান থেকে বের হতেই পারলেই একটু সুস্থি পাবো। খাবার সামনে রেখে আনমনে ভাবছি হঠাৎ রিমা এসে বলল

“এই যে মিষ্টার খাবার সামনে রেখে কি ভাবছেন, খেলে খান, না খেলে চলে যান

রিমার কথা শুনে মুখে একটা শুকনো হাসি হেসে বললাম, আমি কালো বলে অবহেলা করছেন তাই না, আমার বন্ধুরা ও আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা অবহেলা করে , এখন আপনি আমার স্ত্রী হবার সত্ত্বেও, কালো বলে অবহেলা করছেন, সবসময় কেমন জানি দূরে দূরে থাকছেন, সমস্যা নেই আজ হক কাল আপনি আমার কাছে থাকবেন না, সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝেছি। যখন আপনার ডিভোর্স লাগবে তখন আমাকে বলবেন, আর যদি আমাকে মেনে নিতে সময় লাগে সেটা ও আপনার জন্য বরাদ্দ থাকবে

রিমা কিছুটা রেগে বলল” দেখুন আজ হক বা কাল ডিভোর্স তো আমার লাগবেই। আর ফুলশয্যার রাতেই তো বলছি আপনাকে আমার স্বামী হিসাবে আমার পছন্দ না। বাবা মার কথার চাপে পড়ে বিয়েতে মত দিতে বাধ্য হয়েছি। যাই হক এখন এসব কথা বলে লাভ নেই। আপনি আপনার মতো থাকেন আর আমি আমার মতো, আর হ্যা আমাকে ডাকাডাকি করবেন না

রিমা এ বলে রুম ত্যাগ করলো, আজ নিজের কালো রঙের চেহারা নিয়ে, নিজেকে অনেক ছোট বলে মনে হচ্ছে, আজ যদি কোনো কালো রঙের মেয়েকে বিয়ে করতাম তাহলে হইত আমাকে এতটা অসম্মানের মুখে পড়তে হইত না। বাবা যদি আমার কথা শুনে কালো মেয়েকে আমার লাইফ পার্টনার করে দিত, তাহলে হইত আমার মেরিট লাইফ সুখের হত

বাবা মাকেই বা কি দোষ দিবো ” তাদের ও অনেক শখ, ছেলে কালো হইছে তো কি হয়েছে। বউমাকে তো সুন্দরী চাই, ব্যস বাবা মার পছন্দের সুন্দরী মেয়েকে লাইফ পার্টনার করে দিলো ঠিকই, কিন্তু এখন তার কাছে নিজের কালো রঙের চেহারা নিয়ে অসম্মানের মুখে পড়তে হচ্ছে, তা আমার অভিভাবক রা বুঝতে পারছেন না, রিমা বাইরে সবার সামনে এমন রিয়াক্ট করে কথা বলে মনে হই, আমরা হেপি কাপল, সত্যিকারে আমরা কেউ হ্যাপি না,

তো সারাদিন ফোনে টাইম পাস করে একা একা সময় কাটিয়ে দিতে হলো, রাতে কোনোভাবেই শশুর বাড়িতে থাকতে ইচ্ছা করছে না, তবুও থাকতে হচ্ছে, রিমা ঘুমানো জন্য বিছানার মাঝখানে একটা কোল বালিশ রেখে, ঘুমিয়ে পড়লো তার পাশে যে আমি আছি সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, আগ বাড়িয়ে বললাম ” রিমা আপনি ঘুমিয়েছেন-

রিমা বিরক্ত হয়ে বলল” আপনার সমস্যা কি দেখছেন না ঘুমানো জন্য চোখ বুঝে আছি। তারপর ও কেনো ডাকছেন _?

রিমার এরকম বিরক্তময় চেহারা দেখে বললাম” নাহ কিছু না ঘুমিয়ে পড়েন

রাতের ঘুমটাও এমনি এমনি কেটে যায়।সকালে ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে breakfast করার পর শাশুড়ী বললেন, বাবা রেড়ি হয়ে নাও তোমাদের ফুপির এখন বাসায় যেতে হবো।

শাশুড়ী মার কথা মতো রিমাকে ফুপিদের বাসায় নিয়ে যায়, তো রিমার ফুপি আমাকে দেখে মুখশ্রী কালো করে ফেলেন। তারদিকে একবার লক্ষ্য করতেই বুঝে গেলাম, যে তার

ভাতিজির হাসবেন্ড হিসাবে আমাকে একদম পছন্দ হইনি। ফুপি যদি ও আমাকে কিছু বলেনি। কিন্তু তার মেয়ে রিদিতা, মুখ ফুসকে রিমার উদ্দেশ্য যা বলল তা শুনে লজ্জায় আর অপমানে মাথা নিচু করে রইলাম, ফুপি মানবতার খাতিরে রিদিতাকে ধমক দিয়ে বললেন__?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here