অপছন্দের জামাই,পর্বঃ২
লেখকঃরনি হাসান
–শাশুড়ী মার কথা মতো রিমাকে ফুপির বাসায় নিয়ে যায়, ফুপি আমাকে দেখে মুখশ্রী কালো ফেললেন, ফুপি হইত তার ভাতিজির হাসবেন্ড হিসেবে আমাকে পছন্দ করেনি, তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি, তবে ফুপি আমাকে কিছু না বললেও, ফুপির মেয়ে রিদিতা মুখ ফুসকে রিমার উদ্দেশ্য বলল,
–“আপু দুনিয়াতে কি আর কোনো ছেলে আছিলো নাহ। দেখে শুনে এই রকম কালোভুত কে জীবন সঙ্গী নিলে-
রিদিতার এ কথা শুনে রিমা মাথা নিচু করে নিলো,উপরদিকে রিদিতার কথায় অপমান আর লজ্জায় মাথা নিচু নিলাম, এর আগে আমাকে এতটা অসম্মানের মুখে পড়তে হইনি যতটা এখন হচ্ছি, মনে হচ্ছে এখনি যদি রিমার ফুপির বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারতাম তাহলে হইত মনে কিছুটা সুস্থি পেতাম,রিমার ফুপি আমার অপমানিত চেহারা দেখে মানবতার খাতিরে রিদিতাকে ধমক দিয়ে বলল
–“এই মেয়ে থাপ্পড় মেরে কিন্তু দাত গুলো ফেলে দিবো, বেয়াদব মেয়ে একটা, যাও এখান থেকে-
ফুপির রাগান্বিত কথা শুনে রিদিতা মাথা নিচু করে, চলে গেলো, তারপর ফুপি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলল” বাবা তুমি কিছু মনে করো না। ও আসলে একটু পাগলি টাইপের মেয়ে, কখন কি মুখ ফুসকে বলে ফেলে তা ও নিজেও জানে না
ফুপির কথায় নিজেকে স্বাভাবিক রেখে মন খারাপ থাকার পরেও হাসি মুখে বললাম,
–“না না আমি কিছু মনে করিনি, ও তো আমার সঙ্গে দুষ্টমি ফাজলামো করতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক বিষয়,
–“হ্যা তাই ভালো, আমি তো ভেবেছিলাম তুমি রিদিতার কথা শুনে, মন খারাপ করে ফেলছো, যাই হক এখন একটু রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও, এই রিমা জামাই বাবাজিকে রুমে নিয়ে যা
–“জি ফুপি
ফুপির কথা মতো রিমা আমাকে রুমে নিয়ে যায়,বিছানায় বসে পড়লাম, রিমা আমার দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছুক্ষন পর রাগান্বিত হয়ে বলল” শুধুমাত্র আপনার জন্য আমাকে আত্নীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের কাছে এতটা অপমানিত হতে হচ্ছে, আজ ফুপির বাসায় এসেও ছোট বোন টার কাছে অপমানিত হতে হলো। শুধুমাত্র আপনার জন্য আমার লাইফ টা এখন নরকে পরিনত হয়েছে। প্রতিবেশী আর বন্ধুবান্ধবদের কথা শুনতে শুনতে কান টাই আমার এখন ঝালাপালা হয়েছে। স্বামী হিসাবে আপনাকে মেনে নেওয়া সম্ভব ওই না, আপনি বরং আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন প্লিজ
–“নিশ্চুপ
–“আমার পছন্দ অপছন্দের কোনো মুল্য বাবা মার কাছে নেই। তারা শুধু আপনার অর্থ সম্পদ দেখেই বিয়ে দিলো,কিন্তু আমার ও যে একটা পছন্দের ব্যাপার আছে তারা সেটা কোনো মূল্যায়ন করলো না,
রিমা এ বলে চোখের জল ছেড়ে দিলো, ওর চোখের জল দেখে বুঝতে পারলাম, যে কালো জামাই পেয়ে নিজের জীবনকে এখন সে নরক ভাবতে শুরু করেছে, অথচ আমাকে যে প্রতিনিয়ত কালো বলে অসম্মান অপমান অপদস্ত রিমার রিলেটিভরা যে করছে। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। রিমার সামনে তারা আমাকে কালো বলে কটুকথা বলে, তবুও কোনো প্রতিবাদ করে না। উল্টো আজ আমাকে বলছে যে আপনার জন্য আমাকে শুধু শুধু অপমানিত হচ্ছে,
নিজের কালো চেহারা জন্য নিজেকে আজ অনেক ছোট বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে রিমাকে যদি বিয়েটা না করতাম, তাহলে হইত এতটা অপমান আর কষ্টের মাঝে পড়তে হতো নাহ। নিজে কষ্ট মাঝে থাকার পরের ও হাসি মুখে বললাম,
–“রিমা আপনি কান্না করছেন কেনো , আপনি তো ফুলশয্যার রাতেই আমাকে বলছেন, স্বামী হিসাবে আমাকে আপনার পছন্দ হইনি।আবার এটাই বলছেন, যে স্বামী অধিকার নিয়ে যেনো আপনাকে স্পর্শ না করি। আমাদের বিয়ের আজ প্রায় ১৫ – ১৬ দিন হয়ে গেলো, কই আপনার কথা অমান্য করে তো কখনো আপনার হাতটিও ধরেনি। যদি ও আমার সম্পুর্ণ অধিকার আছে, তারপর ও আপনার হাতটি ভালোবেসে স্পর্শ করতে পারেনি। আমি আপনাকে আপনার মতো থাকতে দিয়েছি কোনো প্রকার অধিকার খাটাইনি, এতটা ছাড় দিবার পরের ও আজ নিজের জীবনকে নরক ভাবছেন _?
–“নিশ্চুপ
–“বিয়ের আগে আপনার ফটো দেখে বাবাকে আমি ডায়রেক্টলি না বলে দেই যে, সুন্দরী মেয়েকে নিজের বউ বানানো কোনো প্রয়োজন নেই। আমি যেমন কালো তেমনি কালো রঙের কোনো মেয়েকে বিয়ে করবো, কালো মেয়েই আমার জন্য উপযুক্ত হবে। সেদিন আমার কথা বাবা শুনেননি। সে আপনাকেই আমার স্ত্রী হিসাবে সিলেট করছে। প্রকৃতি পক্ষে আপনাকে আমার স্ত্রী বানাতে চাইনি। আমি জানতাম আমাকে দেখলে আপনার পছন্দ হবে না। উল্টো অবহেলা করবেন। এখন ঠিক তাই হচ্ছে, যাই হক এখন আপনি কি আমার কাছ থেকে ডিভোর্স চান_?
রিমা এ কথা শুনে আমার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নিচু করে আস্তে করে বলল” হ্যা আমি ডিভোর্স চাই
রিমার ডিভোর্স চাওয়ার কথাটি শুনে বুকের বা পাশে কেমন জানি দুমড়ে মুচড়ে উঠলো, নিজের অজান্তেই চোখজোড়া ভিজে উঠলো
।কোনোভাবে নিজের অশ্রুগুলো আড়াল করে। শুকনো হাসি হেসে বললাম ” ওকে আপনি যেহেতু ডিভোর্স চাচ্ছেন তো আপনাকে ডিভোর্স দিবো তারজন্য আমাকে কিছুদিন সময় দিন,
রিমা মাথা নিচু করে বলল” ওকে
সেদিন আর রিমার ফুপির বাসায় থাকা হলো না। রিমাকে ওর ফুপির বাসায় রেখে। আমার বাসায় চলে আসি। ডিভোর্স চাওয়ার কথাটি শুনে সেখানে আর মন টিকছিল না। দুই তিন দিন এমনি কেটে গেলো। এরমধ্যে রিমার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করলাম না। মা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে, যে আমাদের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মাঝে কোনো এক ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে।
তো মা আমাকে না বলে রিমাকে আমাদের বাসায় আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। রিমাকে হঠাৎ বাসায় দেখে খুশিতে আত্মাহারা হয়ে গেছিলাম। ভেবেছিলাম, রিমা সব কিছু ভুলে গিয়ে আমাকে হইত মেনে নিয়েছে, এরজন্য বাসায় ফিরে আসছে, খুশি মনে নিজের রুমে গিয়ে লক্ষ্য করি, রিমা জানালার গ্রিল ধরে উদাসীন হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । পিছন দিক থেকে বললাম,
–“রিমা কেমন আছেন_?
রিমা আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার, মুখ ফিরিয়ে নিলো, আমার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ মনে করলো না। রিমার আচরনে মনটা পুনরায় আবার খারাপ হয়ে গেলো। হাসি উজ্জ্বল চেহারাটা আবার মলিনে পরিনত হয়ে যায়। রুম থেকে বের হবো পিছন দিক থেকে রিমা বলে উঠল
–“ডিভোর্সের বিষয়ে কি ভাবলেন_?
আচমকাই ডিভোর্সের কথাটি শুনে কিছুটা আঁতকে উঠি, নিজের মনকে শান্ত রেখে কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বললাম ” চিন্তা কইরেন না। আমি যখন আপনাকে ডিভোর্স দিতে চাইছি তো অবশ্য দিবো
এ বলে রুম ত্যাগ করলাম, সারাদিন নিজেকে ব্যস্ততার মাঝে রেখে রাতে বাসায় ফিরলাম, সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ও মা ঘুমাইনি আমার জন্য জেগে ছিল, দরজায় নক করা মাত্র মা এসে দরজা খুলে, রাগান্বিত হয়ে বলল__?
(চলবে)