অপছন্দের জামাই (সিজন২),পর্বঃ২

0
4377

অপছন্দের জামাই (সিজন২),পর্বঃ২
লেখকঃরনি হাসান

আজ কেন জানি নিজের রুমে যেতেই সংকোচবোধ হচ্ছে, ভাবতে অবাক লাগছে, যে স্ত্রীকে জনসম্মুখে তালাক দিলাম তাকেই আবার আপন করে নিতে বাধ্য হলাম, সে যাই হক ওকে এত সহজে মেনে নিচ্ছি না, আমার সঙ্গে করা প্রতিটা অবহেলা ফিরিয়ে দিবো তারপর মেনে নিবো এর আগে না, আনমনে ভেবে দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলাম, রিমা আমাকে দেখে কিছুটা কাচুমাচু হয়ে বিছানার এককিনায় বসল। আমিও কথা বলার কোনো আগ্রহ দেখালাম না, নিশ্চুপ হয়ে আছি, কিছুক্ষন পর আচমকাই রিমা আমার পা জড়িয়ে কান্না করে বলতে লাগল”

–“আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ, আমি বুঝতে পারিনি আমার প্রতি আপনার এতটা বিরক্তি চলে আসবে, আগে সবসময় ভেবেছি কীভাবে আপনার কাছ থেকে দূরে থাকা যায়, কিন্তু আমার চাওয়াটা যে আপনি জলদি পুরন করবেন তা আমি কল্পনা ও করতে পারিনি,এ সমাজে বিবাহিতা মেয়ের স্বামী ছাড়া কোনো মূল্য নেই এ কদিনে তা আমি ভালো করেই বুঝে গেছি।

ও হুট করেই যে আমার পা জড়িয়ে ধরে এসব বলবে তার জন্য আমি মোটে ও প্রস্তুত ছিলাম না,যে মেয়ে আমার ছায়া পযন্ত দেখতে পারত না, আর সেকি না আজ আমার পা জড়িয়ে কান্না করছে, নিজেকে বেশ সংযত রেখে বললাম,

–“পা ছাড়েন

–“তার আগে বলুন আমায় ক্ষমা করেছেন

–“ক্ষমা চাওয়ার কি আছে, আপনার তো কোনো ভুল হইনি, ভুল তো আমার হয়েছে, কালো হয়ে সুন্দরী বউকে ঘরে তুলেছি এটাই আমার ভুল

আমার কাছ থেকে এসব কথা শুনে রিমা অনুশোচনায় মাথা নিচু করে সরে গেলো, বুঝতে পারলো এত সহজে তার ক্ষমা হবে না। ব্যস তারপর বালিশ নিয়ে অন্যরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবো এমন সময় রিমা বলে উঠলো,

–“বালিশ নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন_?

–“অন্যরুমে ঘুমাতে যাচ্ছি

–“অন্যরুমে ঘুমানোর প্রয়োজন নেই আপনি এখানেই থাকেন আমার কোনো অসুবিধা হবে না

–“এখানে থাকার প্রয়োজনবোধ মনে করি না। তাছাড়া অতীতের কথাগুলো বেশ ভালোই মনে আছে, ভুলে যায়নি।

রনির কথাগুলো শুনে রিমা চুপটি মেরে গেলো, মাথা নিচু করে রইলো। এখন হইত তার বলবার মতো কোন ভাষা নেই। কি বা বলবে, হাসবেন্ড কালো সুদর্শন না বলে দিনের পর দিন অবহেলা করে গেছে তার বদলেই তো এতকিছু হয়ে গেলো। রিমার এখন খুব ইচ্ছা করছে তার হাসবেন্ডকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে, কেননা রিমা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে এ সমাজে বিবাহিতা নারী স্বামী ছাড়া মূল্যহীন, আর এখন তাদের সম্পর্ক দ্বিতীয়বারে মতো জুড়া লেগেছে ঠিকই কিন্তু রাগ অভিমানটা বড্ড চেপে আছে, সময় সাপেক্ষে প্রকাশ করাই বাকি, ব্যস রিমাকে রুমে একা রেখে রনি অন্যরুমে ঘুমাতে চলে গেলো, রিমা শুধু তাকিয়ে দেখলো কিন্তু অধিকার খাটিয়ে আটকাতে পারলো না।রাতটা দুইজন দুইরুমে কাটিয়ে দিলো, চলুন এবার সকালের ঘটনাটি দেখা যাক,

সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খাবার জন্য মাকে ডাক দিবার মনোস্থির করবো এমন সময় রিমা চা নিয়ে হাজির, চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে বলল”

–“এই নিন আপনার চা

রিমার হাতে চায়ের কাপ দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে গেলাম, কিছুদিন আগে আমাকে যে দেখতেই পারত না আর এখন সে আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসছে, দাড়াও দেখাচ্ছি মজা আনমনে ভেবে রিমার হাত থেকে চায়ে কাপ হাতে নিয়ে এক চুমুক খেতে না খেতে চায়ের কাপটি ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিলাম। রাগান্বিত কন্ঠে রিমার উদ্দেশ্য বলতে লাগলাম ” এটা কোনো চা হলো, যেটা বানাতে জানেন না তা করতে জান কেনো। ধুর সাদসকালে মেজাজটাই খারাপ করে দিলো,

আমার এমন রাগান্বিত হওয়া দেখে রিমার মুখশ্রী মুহূর্তেই কালো করে ফেললো, চোখের কোনে ইতিমধ্যে নোনা জল এসে ভিড় করেছে, এই বুঝি বৃষ্টি হয়ে ঝড়বে, আদো কান্না হয়ে ভাঙ্গা কাপের টুকুরো গুলো নিয়ে চলে গেলো। আপনারা কি ভাবছেন চা টা কি আসলেই অখাদ্য ছিলো _? না একদমই নাহ রিমাকে কষ্ট দিবার জন্য সাদসকালে সিনক্রিয়েট করলাম,

তারপর বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিবার জন্য চলে আসলাম। আমাকে দেখে তারা নানান রকম কথা তুলছে সেদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি শুধু ভাবছি কীভাবে রিমার সঙ্গে সিনক্রিয়েট আরও বেশি করা যায়, আনমনে ভেবে যাচ্ছি হঠাৎ নিধির কথা মনে পড়ে গেলো। কলেজ লাইফে ভালো বন্ধুত্বর ছিলো। যাক একে দিয়েই কাজে লাগানো যাবে, যে ভাবা সেই কাজ নিধির ফেসবুক একাউন্টে মেসেজ দিলাম”কিরে পেত্নী কেমন আছিস_?

কিছুক্ষন পর নিধি রিপ্লাই দিলো

–“আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো, তা হঠাৎ আমার কাছে কি মনে করে মেসেজ পাঠালি হুম

–“না মানে একটু প্রেম করতাম আরকি

–“এই ফাজিল কি বলছিস এগুলা হ্যা

–“ফাজলামো কই করছি প্রেম ওই তো করতে চেয়েছি তাই না

–“আর একবার এধরণের কথা বললে কিন্তু সত্যিই ব্লক করে দিবো (রেগে)

–“এ না না ব্লক করছিস না, আমি তো তোর সাথে ফাজলামো করছিলাম, আচ্ছা বাদ এসব দে কথা। একটা হেল্প করতে পারবি

–“কি হেল্প লাগবে বল

–“বেশি কিছু করতে হবে না, শুধু প্রেমের অভিনয় করবি ব্যস তাতেই হবে

–“কিইইইইই

–“আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো পুরো ঘটনা তো শুন আগে,,

–“কি ঘটনা বল

তারপর নিধির সঙ্গে আমার বিবাহিত জীবনের ঘটনা খুলে বললাম, নিধি শুনে বুঝতে আর বাকি রইলো না যে কেনো তার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করতে চাচ্ছি।ব্যস নিধিও প্রেমের অভিনয় করতে রাজি হয়ে গেলো, বাসায় এসে রিমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিধির সঙ্গে লাউড স্পিকারে কথা বলছি, রিমা আমার দিকে একবার বাকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখশ্রীতে রাগের আভা ফুটিয়ে রুমে চলে গেলো, যাক থেরাপিটা তাহলে কাজেই লেগেছে, কেবল তো শুরু আর ও অনেক কিছু তোমাকে সহ্য করতে হবে রিমা, দেখতে থাকো আনমনে রিমাকে নিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলাম হঠাৎ মা এসে ফোনের দিকে ইশারা করে বলল__?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here