অপছন্দের জামাই (সিজেন২),পর্বঃ ৩ অন্তিম পর্ব

0
5173

অপছন্দের জামাই (সিজেন২),পর্বঃ ৩ অন্তিম পর্ব
লেখকঃরনি হাসান

বাসায় এসে রিমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিধির সঙ্গে লাউড স্পিকারে কথা বলছি, রিমা আমার দিকে একবার বাকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখশ্রীতে রাগের আভা ফুটিয়ে রুমে চলে গেলো, যাক বাবা থেরাপিটা তাহলে কাজেই লেগেছে, কেবল তো শুরু আরও অনেক কিছু তোমাকে সহ্য করতে হবে রিমা, দেখতে থাকো আনমনে রিমাকে নিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলাম হঠাৎ মা এসে ফোনের দিকে ইশারা করে বলল”কিরে বাপ ফোনে কোন মাইয়ার লগে কথা কস

রিমাকে নিয়ে আনমনে বিড়বিড় করতে হঠাৎ মার কন্ঠ সুর শুনে ভাবনার ঘোর কেটে গেলো, হকচকিয়ে বললাম

–“কই না তো

–“মার সঙ্গে মিথ্যা বলিস, নিজের ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে তো দেখ

এই সেরেছে রিমাকে নিয়ে ভাবনার ঘোরে থাকতে ওপাশ থেকে নিধি যে হেলো হেলো বলছে, সেদিকে খেয়াল ওই করতে পারনি, যাই হক মাকে কিছু একটা বলে বুঝাতে হবে

–“কিরে এতো ভাবছিস

–“না তেমন কিছু না, মা আমি একটু আসি

–“আসি মানে সাদসকালে না খাইয়ে কই যাবি

–“দুই মিনিটে মধ্যে আসছি

এ বলে ছাদে চলে আসি, আর নিধির ফোনে আবার কল দিই ও সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করে বলে উঠে ”

–“ওই হাদারাম তখন ফোনে কথা বলছিস নাই কেনো

–“ইয়ে মানে রিমাকে নিয়ে কিছু একটা ভাবতে তোর সাথে যে কথা বলছিলাম সেটা ক্ষনিকের জন্য ভুলে গেছিলাম

–“বাহ রিমার প্রতি তাহলে ভালোবাসা আছে দেখছি

–“হুম তা তো আছেই

–“তো এতো নাটক করে লাভ কি, অতীতে যা কিছু হক না কেন, সবকিছু ভুলে রিমাকে মেনে নে, তাহলেই তো ঝামেলা চুকে গেলো

–“আরে এতো সহজে মেনে নিলে কেমনে কি, অবহেলা কাকে বলে সেটা আগে বুঝক তারপর নই মেনে নিবো

–“আহারে বেচারা রিমার প্রতি আমার খুব মায়া হচ্ছে, থাক না সিনক্রিয়েট করার কি দরকার মেনে নে

–“বাহ আমার বউ, আমার খারাপ লাগছে না, তোর কেনো এত মায়া হচ্ছে হুম, আচ্ছা বাদ দে এসব, এখন রিমার সামনে যাবো, অভিনয় গুলো ভালো মতোই করবি কেমন

–“ওকে

তারপর রিমার সামনে গিয়ে লাউড স্পিকার বাড়িয়ে বললাম”জানু আজ কোন কালারের টিশার্ট পড়বো

নিধি ওপাশ থেকে আদরে কন্ঠ বলল”তোমাকে নীল টিশার্ট পড়লে অনেক কিউট লাগে, তুমি বরং নীল টিশার্ট পড়েই আসো কেমন

–“তবে কেউ একজন আমাকে এক সময় বলত, আমার এই কালো চেহারায় নাকি সবকিছু বেমানান, কোনো পোশাক আশাকে ভালো নাকি মানাই না,

–“বাদ দাও না এসব কথা, অতীতকে নিয়ে পড়ে থেকে কি লাভ, বর্তমান আমি তোমার পাশে আছি এবং সারাজীবন তোমার পাশেই থাকবো

–“তোমার সঙ্গে যদি ২-৩ মাস আগে পরিচয় হতো তাহলে তোমাকে বিয়ে করতাম

–“এখন বিয়ে করলে অসুবিধা কি

–“এখন কেমনে সম্ভব

–“তোমার বর্তমান স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে ঘরে তুলে নাও

–“ওকে বেবি উম্মমমা আমি তাই করবো রাখছি এখন

এবলে ফোনের ডিসপ্লের উপর একটা কিস করে কল কল কেটে দিলাম, পিছন ফিরে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম রিমা ছলছল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কিছুটা বলবে মনে হই, আমি তো এটাই চাই নিধির সঙ্গে ফোনে কথা বলার জন্য ও জ্বলক, আনমনে ভেবে রিমাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে যাবো এরমধ্যে রিমা আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল”

–“আপনি কার সঙ্গে এতক্ষণ ফোনে কথা বলছিলেন

–“কেনো সমস্যা

–“হ্যা সমস্যা আপনি আর ওই মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন না

–“কেনো কথা বলবো না

–“কারণ আপনার ঘরে একটা স্ত্রী আছে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তার সঙ্গে আপনি কথা বলবেন, বাহিরে কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন না এটা ফাইনাল

রিমার এরকম অধিকার খাটিয়ে কথা বলাতে আমি পুরোই অবাক, নিধির সঙ্গে ফোনে কথা বলছি রিমা তা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না, বাঙালি মেয়ের এই একটা সমস্যা, স্বামীকে যতই অবহেলা করুক না কেন ভুলেও অন্য মেয়ের সংস্পর্শে যেতে দিবে না, নিধি সঙ্গে কথা বলছি এটা সহ্য করতে পারছে না, যাই হক আমি তো এটাই চাচ্ছিলাম, আনমনে ভেবে রিমাকে বললাম

–“অন্য মেয়ের সঙ্গে কথা বললে তোমার তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না, একটা সময় তো আমাকে অপছন্দ অই করতে স্বামী বলে মানতে নাহ, আজ কোন অধিকার খাটিয়ে আমাকে এইগুলো বলছো হুম

–“আপনি আমাকে যত খুশি বকা দেন, তবুও অন্য মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন না প্লিজ

–“ধুর সামনে থেকে সরে যাও তো, তোমার এসব কথা বার্তা আমার ভালো লাগছে না,

এবলে রিমাকে পাশ কাটিয়ে বাহিরে চলে যায়, এভাবেই রিমাকে অবহেলা করতে শুরু করি, কখনো রাগের ঘোরে চড় থাপ্পড় মেরে আবার তুই তুংকারি করতাম, রাতে ঘুমানোর সময় রিমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ভিডিও কলে নিধির সঙ্গে মিথ্যা প্রেমলাপ করতাম, রিমা শুধু নিরব দর্শকদের মতো চুপচাপ আমার কান্ড দেখে যেত ভয়ে কিছু বলতে পারত না, তবে এখন রিমা কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে গেছে , আগেকার রিমা আর এখনকার রিমার মাঝে দিন রাত তফাত, আগেকার রিমা আমাকে শুধু অবহেলা করত, আর এখন উল্টো আমি তাকে অবহেলা করি তবুও আমাকে ছেড়ে যাবার কোনো কথায় নেই। উল্টো সুপার গুলুর মতো লেগে থাকে, আমি যত অবহেলা করি ও তত আমার সংস্পর্শে আসার চেষ্টা করে, আর আমি ইচ্ছাকৃতভাবে রিমাকে কষ্ট দিতে শুরু করি, এভাবেই কিছুদিন কেটে গেলো, ইদানীং আমার বাবা-মার হাত ফরমায়েশ গুলো হাসি খেলে সব করে দিতে শুরু করেছে, বাবা মার কাছে ও খুব জলদি প্রিয় হয়ে উঠেছে কিন্তু আমার কাছে প্রিয় হতে পারেনি। কারণ সে সুযোগ আমি ইচ্ছাকৃতভাবে দিইনি, ও যখন আমার কাছে আসত তখনি মিস বিহেব করে দূরে সরিয়ে দিতাম, তবুও আমার নামে অভিযোগ করত না, মাঝেমধ্যে আমি নিজেও অবাক হয়ে যায়, রিমার পরিবর্তন দেখে, এত অবহেলা করি তারপরও কোনো অভিযোগ নেই। কিছুদিন এভাবে চলার পর আমার নিজের কাছেই কেন জানি অনুশোচনা হতে লাগল, মনোস্থির করলাম, রাগ অভিমান অনেক হইছে এবার রিমাকে আপন করে নিবো,সারাদিন ব্যস্ততায় কেটে গেলো রাতে বাড়ি ফিরার উদ্দেশ্যে ধীর গতিতে বাইক চালাচ্ছি আর রিমাকে নিয়ে ভাবছি, হঠাৎ ঝনঝন শব্দে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো, ব্যস ভিজে পুড়ে বাড়িতে ফিরতে হলো, দরজায় এসে কয়েকবার কলিং বেল বাজানোর পর রিমা এসে দরজা খুলে দিলো, তখন কিছু বললাম না। চুপচাপ ভিতর এসে পড়লাম, ফ্রেশ টেবিলে বসা মাত্র ও খাবারটা পরিবেশন করতে লাগলো, আচমকাই বলে উঠলাম” রিমা তুমি খেয়েছো_?

আমার একথা শোনামাত্র অবাকদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কেননা ১ মাস পর রিমার সঙ্গে ভালো বিহেব করছি, ও হইত আমার একথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। ও আমতা আমতা করে বলল”

–“ইয়ে মানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম

–“বসো একসাথে খাওয়া যাক

–“না আপনি আগে খান তারপর আমি খেতে বসবো

–“বসতে বলছি বসো (চোখ রাঙিয়ে)

আমার চোখ রাঙানো দেখে রিমা কোনো না বলে বসে পড়ল, খাবাবের পর্ব শেষ করে ঘুমানো জন্য প্রত্যেকদিন ওই মাঝখানে কোলবালিশ রাখতাম, আজ আর কোলবালিশটি রাখলাম না, এক লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলাম, রিমা আমার কান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে বলে উঠে ”

–“আজ হঠাৎ কোলবালিশটারে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিলেন কেনো

–“এই কোলবালিশটার জন্য আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ফাটল ধরাচ্ছে

–“মানে

–“মানেটা হলো এখন থেইক্কা আমার বউটারে আমি অনেক ভালোবাসবো

এবলে রিমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম, আমার জড়িয়ে ধরাতে রিমার চোখজোড়া চড়কগাছ, ও হইত ভাবতে পারেনি আচমকাই ওকে জড়িয়ে ধরবো, রিমা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল”

–“আপনার আজ কি হইছে হুম,

–“কই কি হইছে

–“ইয়ে মানে আমি আপনার বাড়িতে আসার পর আমাকে দুচোখে দেখতেই পারতেন না, সবসময় কেমন জানি অবহেলা করতেন আমার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতেন না, আমার কাছে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগত আমাকে রেখে যখন অন্য মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন, আমি শুধু নিরব দর্শকদের দেখে যেতাম আপনাকে বলবার মতো সাহস আমার হয়ে উঠত না, আজ হঠাৎ আপনার ভালো আচরণে আমার কেমন জানি লাগতেছে

রিমা এবলে তার চোখজোড়ার জমে থাকা অশ্রু গুলো দুইহাতের উল্টো পাশ দিয়ে আড়াল করে নিলো, আর আমি অনুশোচনায় রিমাকে আমার বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে বললাম

–“সরি বউ আমি আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে তোমাকে কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করতাম, যাই হক এখন থেইক্কা আর কষ্ট দিবো না,শুধু ভালোই বাসব (কপালে চুমু একে)

–“অহহ আচ্ছা ঠিক আছে, এবার যদি আপনি আমাকে কষ্ট দেন তো আমি আমার বাপে বাড়ি চলে যাবো

–“বাপের বাড়ি যাওয়া কথা বললে মেরে একদম হাড়গোড় ভেঙে বিছানায় ফেলে রাখবো

–“এএ শখ কত

–“দাড়াও দেখাচ্ছি মজা

এবলে রিমাকে বিছানায় ফেলে দিলাম তারপর, তারপর বাকিটুকু ইতিহাস, ইতিহাস জানতে চাহিয়া কেউ লজ্জা দিবেন না, আল্লাহ হাফেজ, আবারও দেখা হবে নতুন কোনো গল্পে, আর হ্যা ভুলত্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ সবাইকে

!

!

______________ সমাপ্ত ________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here