অপরাহ্ন পর্ব ৪

0
174

অপরাহ্ন

পর্ব ৪

( সতর্কতা : অত্যন্ত পরিণতমনস্ক পাঠকের জন্য )

পরের মাসে যখন আমি বললাম, পাঁচদিন বাড়ি থাকবোনা, সানজিদা খুশি হয়ে বললো, এই কটা দিন মার কাছে থেকে আসি? আমি আপত্তি করলাম না। সোমবার সকালে আমার সাইটে উপস্থিত থাকার কথা, রবিবার সন্ধ্যায় আমি গাড়ি নিয়ে রওনা দিলাম।

বাসা থেকে বের হয়েছি ছটায়, ঠিক সাড়ে ছটায় আমি আমার প্ৰিয় ভাঙা টেবিল ফ্যানটাকে অতিক্রম করলাম। সময়ের হিসেব রাখা আমার জন্য খুব জরুরি ছিল, পরিকল্পনামাফিক এগুলে এইখানে আমাদের জোছনাস্নান হবে, পূর্ণিমা রাতে, চাঁদের আলোয়।

বলে রাখা ভালো, মোটামুটি মানের একটি পরিকল্পনা আমার রয়েছে। তবে আমার কোন ধারণা নেই সেটা কাজ করবে কিনা । কাজ করলে ভালো, না করলেও কিছুই করার নেই আসলে। আমি একটা জুয়া খেলা খেলছি। জিতে গেলে গেলাম , হেরে গেলেও খেলার সময় যে তীব্র উত্তেজনার স্বাদ উপভোগ করছি, সেটাও ফেলনা না একদম।আগেই বলেছি, এই উত্তেজনার কাছে স্ত্রীর সাথে ভাব ভালোবাসার উত্তেজনা কিছুই না।

ডাক্তার সাহেব বলেছিলেন রোজ রোজ ভালোবাসার অভ্যাস করতে, আমার স্ত্রীকে একদিন ভালোবাসা দেখাতে গেলে তার পরে পনের দিন ওর মেজাজ খারাপ থাকে, বেশিরভাগ দিন তুচ্ছ কারণে ঝগড়া বাধিয়ে আমাকে বাইরের ঘরে ঘুমাতে বলে।

এইরকম এক রাতে মা এসে বসেছিল আমার পাশে। মা তো মা ই, অন্ধকারেও আমার চোখ ভেদ করে আমার ভেতর পর্যন্ত যেন দেখে ফেলেছিলেন সেদিন ।

” তোমার সমস্যা কোথায় বাবা? ডাক্তার দেখানো যায়না? ”

আমি চমকে উঠলাম, ” ডাক্তার মানে? কি ব্যাপারে কথা বলতেস বুঝতে পারিনি? ”

মা আমার পিঠে হাত রাখলেন, ” জানোই তো আমি তোমাদের মত শিক্ষিত না। তারপরেও বয়স হইসে তো, একদম জ্ঞান বুদ্ধি নাই, এমন ভাবাও ঠিক না।”

আমি উচ্চবাচ্য করলাম না। কিন্তু মনে মনে অন্ধ একটা রাগ হচ্ছিলো। এতো চিন্তা করার ক্ষমতা কি আসলেই আমার মার আছে? নাকি সানজিদা গিয়ে বলেছে কোন একটা ফাঁকে, ” ছেলে আপনার মাকাল ফল। বাইরে দেখে বোঝার উপায় নেই, ভিতরটা অন্তসারশূন্য। ”

” সানজিদা কিছু বলেছে তোমাকে? ”

” নাহ। আমিই বলতেসি। তুমি যা করতেস তা করে বৌ ধরে রাখতে পারবানা বাবা। এর চেয়ে বেশি ভাইঙ্গা তোমাকে বলতে পারবোনা “।

যাক সেসব কথা, রাত আটটায় আমি রিসোর্টএ পৌছালাম। রিসেপশনে কাজ করছিলো কম বয়স্ক একটা ছেলে, আমি ইচ্ছে করেই তার সাথে একটু গল্প জুড়ে দিলাম। আমি তাকে বললাম, আমার স্ত্রী খুব কর্মব্যাস্ত একজন নারী, তাকে অনেক অনুরোধ করা সত্বেও সে আমার সাথে এখানে এসে কয়েকদিন থাকতে রাজি হয়নি।

ছেলেটা আবার বেশি ভালো, আমার মেজাজ সামান্য খারাপ হল যখন সে বললো, ” আপনি সারাদিন কাজ করবেন, উনি এখানে শুয়ে বসে কি করবে? এমন তো না যে খুব সুন্দর কোন জায়গা…. ”

আমার ঠিক পিছনে ছয় সাতজনের একটা দল অপেক্ষা করছিলো, আমি তাদের দিকে ইঙ্গিত করলাম, ছেলেটা বললো, ” এনারা সব একসাথে পড়াশোনা করেছেন, চাকরি বাকরি করেন এখন, বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়না নিয়মিত। এখানে শুধু আসছেন গল্প করতে। চারটা কামরা নিয়েছেন ওরা। ”

রিসোর্ট টা একটা একতলা একটা দালানের মত, লাইন দিয়ে ছয়টা কামরা। এগুলির মধ্যে বড় ছোট আছে, আমি যেহেতু একা থাকবো, আমার জন্য সবচেয়ে ছোটটাই বরাদ্দ আছে। কামরাটি আমার পছন্দ হল, সবচেয়ে পছন্দ হল পেছনের দরজাটা।

” ধূমপানের জন্য এই ব্যবস্থা ” ছেলেটা হাসিমুখে বললো, ” খুব চেষ্টা করছি রুমের ভেতরে যেন কেউ সিগারেট না ধরায়। তারপরেও কথা শোনেনা লোকে জানেন? অলস তো, বিছানায় কাঁথার নিচে শুয়ে বিড়ি টানতে চায়। অথচ বিদেশে গেলে কিন্তু জরিমানার ভয়ে…

” আমি ধূমপান করিনা ” ছোট করে বললাম।

***

রাতে বিছানায় একা শুয়ে আমি নিজেই একটু অবাক হয়ে গেলাম। লোকে বলে, কোন কিছু খুব বেশি করে চাইলে বিশ্ব ব্রহ্মন্ড নিজে থেকে মানুষকে তা পাইয়ে দেয় ( জনপ্রিয় কোন হিন্দি সিনেমায় এই কথাটা ছিল, নাহারের অনুরোধে সেই জিনিস আমি পুরোটা দেখেছি, মনে আছে নায়ক মাথা বাঁকা করে, চোখ মুখ ঘুরিয়ে এই কথা বলছে, আমার পাশে বসে নাহার সেই দৃশ্য দেখে ভ্যা করে কেঁদে ফেলল ) । নাহলে এই যে দরজাটা, এটা কেন আছে এখানে? না থাকলেও যদিও আমি কোন না কোনভাবে ব্যবস্থা করেই ফেলতাম, তবু, এটা কি প্রকৃতির ইশারা নয়, যে আমি যা ভাবছি, ঠিক ভাবছি? যা করছি, ঠিক করছি?

নাহারের কথা মনে পরাতে ফোন করলাম ওকে, ” কিরে, ভাই খেল কিনা, ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে কিনা, খোঁজ নিলিনা? ”

নীরবতা।

” মা কি করে? ”

নীরবতা।

” নাহার? পড়াশুনা কেমন হচ্ছে? ”

এতক্ষনে বললো, ” ভালোই। চিন্তা করোনা। ফাইনালটা দিয়েই জব খোজা শুরু করবো। খুব বেশিদিন বাকি নেই। ”

মন খারাপ হয়ে গেল। এই কথা জানতে চেয়েছি আমি?

***

বৃহস্পতিবার হতে হতে আমি অস্থির হয়ে উঠছিলাম, কাজের সময়টুকু কেটে গেলেও পাঁচটার পরে থেকে শুরু করে সন্ধ্যা আর বিশাল বড় রাত কাটানো খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ঘরের টান আমার ছোট বেলা থেকেই বেশি, যেখানেই থাকিনা কেন, সূর্য ডোবার আগে বাড়ি ফেরা আমার অভ্যাস। আর এখন তো বাড়িতে সানজিদা আছে। এখনকার কষ্ট অন্যরকম।

একদিন রাতে সুন্দর স্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ও যেন ডাকছে আমাকে, সুরেলা মধুর কণ্ঠে, একবার না, বারবার। আমি জেগে উঠে দেখেছিলাম আমি ভিজে উঠেছি, আমার অব্যবহৃত পৌরুষ আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে গেছে।

জীবনে পয়ত্রিশ বছর আমার প্রেমহীন কেটেছে। খুব ছোটবেলায় প্রথমবার প্রেমে পরেছিলাম, তের চৌদ্দ বছর বয়সে। আসমা ছিল তার নাম, আমার কাছে আসমানের মতোই বিশাল মনে হত তাকে তখন। অথচ একদিন শুনি, আমার বন্ধু সাইফুল কে নাকি জামা তুলে দেখিয়েছে সে। আমার কাছে যে ছিল বিশাল, তার এই ক্ষুদ্র মানসিকতা আমাকে বেশ কষ্ট দিয়েছিল সেবার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় বছরে দুইবার প্রেমে পরি। কেন জানিনা, তীব্র প্রেমের আকাঙ্খা বুকে নিয়ে চেপে রাখাকে আমি শ্রেষ্ঠ মনে করতাম। একা একাই কেউ কথা রাখেনি আওড়াতাম অথচ কেউ তো কথাই দেয়নি! সেই সুযোগ ছিলোনা, আমি কথা চাইনি কারো কাছে।

আমার এই চেপে রাখা স্বভাবের কারণ আমি নিজেই চিন্তা ভাবনা করে বের করে ফেলি একসময়। আমার প্রেমে পরা গুলো একটু অন্যরকম ছিল, আজ আর বলতে লজ্জা নেই, আমার কাউকে ভালো লাগলে তীব্র আকর্ষণ বোধ করতাম, স্বপ্নে বা কল্পনায় অনায়াসে সীমা উপসীমা পার করে যেতাম প্রতিনিয়ত। আমার নিজের কাছেই আমার এই আবেগটি খুব একটা গ্রহণযোগ্য ছিলোনা, আমি কোনভাবেই চাইতাম না, যাকে ভালোবাসি সে আমার চরিত্রের এই দিকটি জেনে ফেলুক। ফলে নিজেকে লুকিয়ে রাখতেই বেশি ভালোবাসতাম।

বেশি বেশি আকাঙ্খা ছিল বলেই আমি আমার সব ইচ্ছেগুলি জমা করে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম একদিন কেউ আমার হবে, তার সামনে লজ্জা থাকবেনা, দ্বিধা থাকবেনা। তাই হয়ত সেইরাতে একটু বেশিই… উফ। ওইতো সানজিদার ওয়াক ওয়াক শব্দে বমি করার শব্দ পাচ্ছি। আর আমার সব সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে, আর কোনোদিন সে মাথা উচু করে নিজের অবস্থান জানান দিতে পারবে কিনা আমার জানা নেই।

যাই হোক, বৃহস্পতিবারের কথা হচ্ছিলো। আমি সরাসরি সানজিদার বাবার বাসায় গেলাম ওকে নিয়ে একসাথে বাড়ি ফিরব বলে। বলা বাহুল্য সে আমাকে দেখে খুব খুশি হলোনা। স্বাশুড়ি অবশ্য বারবার আফসোস করলেন তেমন ভালো রান্না নেই বলে। খেয়েদেয়ে যখন রাতের বেলা বের হয়ে আসছি, তিনি আমাকে আড়ালে ডেকে নিলেন।

” তোমাদের তেমন ভাব হয়নি তা আমি বুঝতে পারি ” তিনি বললেন, ” আরেকটু সময় দাও, হয়ে যাবে। মেয়েকে তো চিনি, ছোটবেলা থেকেই এরকম, খুব অহংকারী, নাক উচু স্বভাবের। একটু বুঝে শুনে চলতে পারবে না? ”

আমি খুব অবাক হলাম। যেখানে আমি দিনরাত অস্থির থাকি, ভয়ে তটস্থ থাকি সে আমাকে ছেড়ে যাবে, সেখানে তার মায়ের মুখে এমন কথা সত্যি অভিভূত করার মত।

আমি তৎক্ষণাৎ গলায় অনেকখানি আবেগ নিয়ে আসলাম, রীতিমতো ভাঙা গলায় বললাম, ” ও যদি সময় দিতে রাজি থাকে, আমার সময়ের কোন অভাব নেই… শুধু একটা প্রশ্ন করবো যদি সঠিক উত্তর দেন, খুব খুশি হব। ওর কি বিয়ের আগে কোন সম্পর্ক ছিল আম্মা? ”

উনিও কেঁদে ফেললেন, ” তাহলে যা ভাবছি তাই, তোমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। না বাবা, আমার জানামতে ছিল না। আরেকটু সময় দাও শুধু, সব ঠিক হয়ে যাবে ”

আমার কাছে দেবার মত খুব বেশি সময় ছিলোনা। খুব বেশি হলে দুই মাস।

***

এক রাতে আমি অবশেষে ডাক্তারের দেয়া ওষুধ খেলাম। উনি বলেছিলেন এটা কাজ করতে নাকি ঘন্টাখানেক সময় নেয়। আমি প্রচন্ড ভীতি নিয়ে খেয়াল করছিলাম, সানজিদা তার নিত্যরাতের রূপচর্চা শেষ করে ফেলছে। ফেস ক্রিম, আন্ডার আই সেরাম, হাত পায়ের লোশন.. আর আমি কেবল ভেবে চলেছি এক ঘন্টা এতো দেরিতে যায় কেন?

যথাসময়ের সামান্য আগেই তার কাছে উপস্থিত হলাম, আমার মনের সবটুকু প্রেম নিয়ে। কিন্তু সেই প্রেমের উষ্ণতা তাকে গলাতে পারল কই?

সুবিশাল হাই টেনে সে বললো, ” আজ থাক। খুব ক্লান্ত আমি। আবার ভোর সকালে উঠতে হবে। তোমার আর কি? ওইটুকু পুতুপুতু প্রেম তো? আরেকদিন অপেক্ষা করতে সমস্যা হবার কথা না “।

লজ্জায় আমি বলতে পারলাম না, আমি আজকে সাহায্য নিয়ে এসেছি, আত্মসম্মান আমার মুখ চেপে ধরে রাখল। শুধু অস্ফুট কণ্ঠে বললাম, ” প্লিজ? ”

সে রেগে গিয়ে বললো, ” এখন কি জোর করবে? ”

আমি জোর করিনা, জীবনে কখনো কোন ব্যাপারে কাউকে জোর করিনি। বরং ওর কাছে যেন না থাকতে হয়, বালিশ নিয়ে বসার ঘরে চলে গেলাম।

সারারাত আমার নরক যন্ত্রনায় কাটল। এই বিশেষ যন্ত্রনাটি কোন নারী কখনোই বুঝতে পারবেনা। এক পর্যায়ে আমার চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পরতে লাগল, আর আমি মনে মনে ভাবলাম, ভুল করলে সানজিদা। খুব বড় ভুল করলে।

***

রিসোর্ট থেকে সবচেয়ে কাছে যেখানে বাস থামে, তার দূরত্ব হেটে গেলে পনের মিনিট। গত দুইমাস যাবৎ আমি অনুশীলন করছি। রাত ঠিক সাড়ে নয়টা নাগাদ পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যাই, হেটে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাই। প্রথম দিন আমার অবশ্য বিশ মিনিট লেগেছিলো, আস্তে আস্তে কমতে কমতে বারোতে এসে থামল। এর বেশি কমানো সম্ভব হলোনা। হত হয়ত, দৌড়ে গেলে। কিন্তু আমি হেটে যাওয়াই বেশি পছন্দ করলাম।

আমি এতো তাড়াহুড়ো করে কোথাও পৌঁছুতে চাইনা, জীবন যেখানে নিয়ে যেতে চায়, সেখানে হেটে যাবার সময় আমার আছে… জীবনানন্দের কবিতা না? আমার খুব প্ৰিয় কবি।

ঠিক দশটায় , মাঝে মাঝে পাঁচ দশ মিনিট এদিক সেদিক হয়, ঢাকা যাবার বাস এখানে থেমে যাত্রী তোলে। বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হবার এই একটা সুবিধা, এই রাতেও বাস মোটামুটি ভরা থাকে। একদিন তো মোটামুটি গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগার অবস্থাও হয়েছিল। কেউ আমাকে আলাদা করে চিনবে এমন হবার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।

পাঁচ দশ মিনিট এদিক সেদিক করে একটা ঘন্টা পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাস ঢাকায় পৌঁছে। ধরে নেই সোয়া এগারোটা? একটি সি এন জি নিয়ে আমার বাসা অবধি যেতে আধা ঘন্টার মত সময় লাগে। গভীর রাত বলেই হয়ত যতবার এই কাজটা করেছি, আমার সমস্যা হয়নি। রীতিমতো নির্বিঘ্নে বাসায় পৌঁছে গেছি। অবশ্য ভেতরে ঢুকিনি। পুরো কাজটা রিওয়াইন্ড মোডে করে রিসোর্ট এ ফিরে এসেছি দুটোর কাছাকাছি সময়ে ।

কিন্তু এতো গেল আমার পরিকল্পনার খুব সামান্য একটা অংশ। মাঝখানের বিশাল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা, অত্যন্ত দুঃজনক যে, অনুশীলন করা সম্ভব নয়। যা হবার একেবারেই হতে হবে।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)
আগের পর্ব
https://m.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1655968744918146/?mibextid=Nif5oz

পরের (শেষ ) পর্ব

https://m.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1659837657864588/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here