#অপরিচিতা_ভালোবাসা
(পর্ব-৫)
#ফাবিহা_নওশীন
??
বর্ণা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।দু পরিবারের মধ্যে বাধা হবেনা।রাফির জীবন থেকে সরে যাবে।দুই পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে রাফিকে কিছুতেই পাবেনা।তাই সরে যাওয়াই শ্রেয়।
বর্ণা ভাবছে,
তাছাড়া রাফি আমাকে দেখেনি কোনোদিন।আমাকে চিনেনা,জানেনা।হটাৎ করে হারিয়ে গেলে কষ্ট পাবে তারপর ঘৃণা করে ভুলে যাবে।শুরু হলো বর্ণার রাফির প্রতি অবহেলা।ইচ্ছে করে এভয়েড করা,ব্যস্ততা দেখানো।
রাফি সব নীরবে মেনে নিচ্ছিলো।কিন্তু এক সময় সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।একদিন ফোন করে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,
—বাণু তুমি কি আমাকে এভয়েড করছো?
বর্ণার গলার স্বর কেমন জানি হয়ে আসছে।
—রাফু তোমাকে এভয়ড কেন করবো?
—সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি?কি করেছি আমি?কেন এমন করছো?আমার অন্যায়টা কি?আগের মতো কথা কেন বলোনা?কেন সবসময়ই ব্যস্ততা দেখাও?আই ওয়ান্ট টু নো দ্যাট।(চিতকার করে)
বর্ণা কেপে উঠলো রাফির চিতকারে।ওর মন বারবার কু ডাকছে মনে হচ্ছে আজই সেইদিন।সবটা শেষ হওয়ার দিন।
বর্ণা নিচুস্বরে বললো,
—-আমার ভালো লাগে না তাই।
রাফি অবাক হয়ে বললো,
—ভালো লাগেনা?আমাকে তোমার ভালো লাগেনা।
কিছুক্ষণ স্থির থেকে বললো,
—-নতুন কাউকে জুটিয়েছিস?আমার সাথে প্রতারণা করছিস?আমি পুরনো হয়ে গেছি তাই আমাকে ভালো লাগেনা?নতুন খোজে নিয়েছিস?এই তোর চরিত্র?
বর্ণার চোখে পানি এসে পড়লো।ও চাইছে রাফি ওকে বাজে কথা বলুক কিন্তু কেন জানি সহ্য করতে পারছেনা।
বর্ণা নিজেকে স্বাভাবিক করে কঠোর গলায় বললো,
—-রাফু!!!ছিহ।আমি বলেছি কথা বলতে ভালো লাগে না তাও কথার পিঠে বলেছি।আমি একবারো বলিনি তোমাকে ভালো লাগেনা।তুমি আমাকে এমন নোংরা কথাগুলো বলতে পারলে?ছিহ।এই তাহলে তোমার আসল রুপ?আমি তোমাকে এত দিন ভুল চিনেছি।এইজন্য মানুষ বলে ভার্চুয়াল লাইফে কাউকে বিশ্বাস করতে নেই।আমি করেছিলাম ভুল করেছি।তোমাকে আমার চিনা হয়ে গেছে।আজ তুমি সব শেষ করে দিলে রাফু।আই হেইট ইউ।যে আমাকে এমন বাজে কথা বলতে পারে সে না জানি আর,,
—বাণু প্লিজ।আমি রাগের মাথায় এসব বলে ফেলেছি।আমি এমন নই।আমি তোমাকে ভালোবাসি।
—রাখো তোমার ভালোবাসা।যে রেস্পেক্ট দিয়ে কথা বলতে পারে না সে কিভাবে ভালোবাসবে?
তোমার সাথে থাকা পসিবল না রাফু।
—-বাণু আমি এসব বলতে চাই নি।সরি বলছি।কত বার সরি বললে তুমি মেনে নিবে?
এর পর আমি তোমাকে আর এমন কথা বলবোনা কখনো ঝগড়া করবোনা।তুমি ঝগড়া করলে রাগ করলেও আমি সব মুখ বুজে সহ্য করবো।তোমার হাজার অবহেলা,অপমান সব মেনে নিবো।সবসময় আমি তোমাকে সরি বলবো।সব সময় আমি হার মেনে নিবো।তোমার প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো।সবকিছু করবো তোমার জন্য তবুও তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ।
বর্ণা ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাদছে।নিজের কন্ঠ স্বাভাবিক করে বললো,
—-রাফু আই কান্ট।তুমি আজ যা করেছো আর তাছাড়া আমি ঢাকায় থাকি অন্য এলাকার ছেলের সাথে সম্পর্ক কেউ মেনে নিবেনা।আমারও উচিত হয়নি তাই সব শেষ করে দেওয়া উচিত।
—এই লেইম এক্সকিউজ দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিচ্ছো?
তুমি সামনে থাকলে আমি তোমার পায়ে ধরে এই কথাগুলোর জন্য ক্ষমা চাইতাম।তবুও কি আমাকে ক্ষমা করতে না বাণু।তোমার রাফুকে তুমি ভুলে থাকতে পারবে? আমি তো পারবোনা?কিছুতেই না।প্লিজ।একটু দয়ে করো বাণু।
—-রাফু আজ থেকে তোমার আর আমার পথ আলাদা।আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
—-বাণু…
—-হুম ভালো থেকো।আজকের পর আর কথা হবে না।
রাফির বুক ফেটে যাচ্ছে বর্ণার কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছেনা।এতো সহজে কিভাবে ছাড়ার কথা বলছে।
—-ভালো থেকো নিজের খেয়াল রেখো।বাই।
রাফি স্তব্ধ হয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।বর্ণা ফোন কেটে দিলো।রাফি ওভাবেই আছে।
বর্ণা সব সোসাইল সাইট ডিলিট করে ফোন বন্ধ করে দেয়।
বর্ণা বাথরুমে গিয়ে চিতকার করে কাদছে কাদতে ফ্লোরে বসে পড়ল।তারপর সেন্স হারায়।
রাফি কিছুক্ষণ পর আবার বর্ণার নাম্বারে ফোন করে কিন্তু অফ।রাফি ভাবে যে হয়তো রাগ করে আছে তাই এমন করছে।পরে নিজ থেকেই ফোন করবে কিন্তু রাফির অপেক্ষার শেষ হয়না।বর্ণা ওকে ফোন দেয়না।না কোনো ভাবে যোগাযোগ করেছে।রাফি অনেক চেষ্টা করে বর্ণার সাথে যোগাযোগ করার।রোজ ওর নাম্বারে ফোন দেওয়া,মেসেজ করা,ফেসবুকে চেক করা কিন্তু কিছুতেই লাভ হয়নি।এভাবে দুমাস যাওয়ার পর রাফি বুঝতে পারে মরিচীকার পেছনে ছুটছে।যে নিজ থেকে থাকতে চায়না,আসতে চায়না তাকে কিভাবে পাবে।রাফিরও এক সময় অভিমান হয়,রাগ হয় বর্ণার প্রতি কিন্তু ভালোবাসা হারায়না।
~~~বর্তমান ~~~
রাফির মন খচখচ করছে।নিজের ফ্যামিলির কথা মানতে গিয়ে রুপাকে ঠকাচ্ছে কেননা মন থেকে যতই অপরিচিতাকে বের করতে চাইছে পারছেনা।একজনকে মনে রেখে অন্য একজনকে বিয়ে করা অনুচিত।রাফি রুপাকে ফোন করে। রুপা রিসিভ করতেই কোনো ভনিতা না করে বললো,
—-রুপা আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে ফোন করেছি।আপনি প্লিজ মন দিয়ে শুনবেন।
—-হ্যা বলুন।
—আমি একজনকে ভালোবাসতাম।মানে এখনো ভালোবাসি।সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে,হারিয়ে গেছে কিন্তু আমি আজো তাকে ভুলতে পারিনি।জানিনা কোনোদিন পারবো কিনা।আপনার সাথে বিয়ে আমি বাবার অসুস্থতার জন্য করছি।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি অন্যায় করেছি তাই আপনাকে আমার জানানো উচিত।এখনো এনগেজমেন্ট হয়নি আপনি চাইলে আমি বিয়েটা ভেঙে দিতে পারি যদিও ওতটা ইজি না তবুও চেষ্টা করবো।
রুপা স্তব্ধ হয়ে আছে।যাকে ভালোবাসে,বিয়ে করতে চায় সে অন্য একজনকে ভালোবাসে।যাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন সাজিয়েছে সে,,
—-কি হলো কথা বলুন।আমি কি বিয়েটা ভেঙে দেবো?
—-নাহ,,(দ্রুত কিছুটা জোরে)
মানে আপনি যাকে ভালোবাসেন সে কোথায়?
—-জানিনা।সে আমার কাছে থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।আমার কাছে সে ফিরতে চায়না।অনেক অপেক্ষা করেছি।৬মাস অপেক্ষা করছি কিন্তু সে ফিরেনি মনে হয়না আর ফিরবে।জানি না।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসি।
—-আমি বিয়েতে রাজী।আমার কোনো সমস্যা নেই।
রাফি অবাক হয়ে বললো,
—-মানে??
—-জ্বি আপনাকে বিয়ে ভাংতে হবেনা আমি ভেবেচিন্তেই বলছি।
রাফির যতটুকু আশা ছিলো তাও এখন আর নেই।
রুপা মনে মনে বলছে,
—-বিয়ের আগে এমন দুচারটে এফেয়ার অনেকেরই থাকে।আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকে আমার চাই।আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার অতীত মুছে দেবো।একদিন তুমিও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসবে।অতীত স্মৃতি সব ভুলে যাবে।
~~এনগেজমেন্ট ডে~~
রুপা সাদা আর গোল্ডেন মিক্সড লেহেঙ্গা পড়েছে।এমনিতেই সুন্দরী আজ আরো সুন্দর লাগছে।রাফি কালো রঙের স্যুট পরেছে।হাতে ওয়াচ,চুলগুলো স্পাইক করা।একদম জেন্টেলম্যান লুক।বর্ণা কালো রঙের শাড়ির সাদা স্টোন,ফুল হাতা ব্লাউজ,খোলা চুলগুলো সামনে এনে রেখেছে তাতে দুটো লাল গোলাপ,দুহাত ভর্তি কালো চুড়ি।হালকা মেকাপ,
কাজল,লিপস্টিক ব্যাস ওর সাজ কমপ্লিট।মনের কষ্ট যেনো কোনো মতেই বাইরে না আসে তাই সাজগোজ করেছে।কিছুতেই ভিতরের দুঃখী ভাব কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা।চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে রাফির বর্ণাকে চোখে পড়লো।পাশে বসে থাকা অপ্সরীর চেয়ে বর্ণার দিকে নজর বেশি।মেয়েটাকে দেখলেই বুকের ভিতরে ঘন্টা বাজতে থাকে।
রুপা বর্ণাকে ডাকছে কিছুক্ষণ পরেই এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান শুরু হবে।কিন্তু বর্ণা কিছুতেই যাবেনা।কেননা ওদের দুজনের আংটি বদলের মুহুর্ত নিজের চোখে দেখতে পারবেনা।এতটা শক্তি ওর নেই।
বর্ণা দূরে দাড়িয়ে আছে।রাফি আংটি নিয়ে রুপার হাতে পড়িয়ে দিলো আর রুপা রাফিকে বর্ণার চোখ বেয়ে একফোঁটা পানি পড়লো।বর্ণা আর ওখানে দাড়াতে পারছেনা।চোখের পানি মুছে সবার অগোচরে বাইরে চলে গেলো।
বর্না কাদছে আর চোখের পানি মুছছে।
—-আপনার কি মন খারাপ?
বর্ণা পিছনে কারো আওয়াজ পেয়ে চমকে গেলো।।তাড়াতাড়ি চোখ মুছে পিছনে ঘুরে দেখে রাফি দাড়িয়ে আছে।
বর্ণা কাচুমাচু হয়ে বললো,
—-জ্বি না।
—-তাহলে আপনার চেহেরা এমন কেন?
দেখে মনে হচ্ছে কেদেছেন।
—-না মানে..মন খারাপ কিছুটা।আপু আমার আপন বোন না হলেও কম নয়,আমার বোন,আমার বন্ধু।ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি।ওর বিয়ে হলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।যতই বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে আমার মন খারাপ বাড়ছে।তাই আর কি,,
রাফি বর্ণাকে পরখ করে বললো,
—-এজন্যই?
—জ্বী।
—-ডোন্ট ওরি।আপনাদের দুবোনের মাঝে আমি আসবোনা।আপনার যখন ইচ্ছে আমাদের বাড়িতে চলে যাবেন,রুপাও যখন তখন আসবে আমি বাধা দেবোনা।
বর্ণা হাত দিয়ে গাল মুছে বললো,
—-ধন্যবাদ।আপনি খুব ভালো আপু খুব ভালো থাকবে আপনার কাছে।
রাফির তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বর্ণার হাতের দিকে।চোখে পানি ছলছল করছে।অদ্ভুত চাহনি দিলো বর্ণার দিকে।হটাৎ দৃষ্টি আর ফেসের পরিবর্তন কেন হলো সেটা বর্ণার বোধগম্য হচ্ছেনা।
রাফি কিছু না বলেই ঝড়ের গতিতে স্থান ত্যাগ করলো।
রাফি বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্মোক করছে।ধোয়ার সাথে নিজের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিচ্ছে।সিগারেট ফেলে বলছে,
—-কেন বাণু,,কেন?কেন এমন করলে?এভাবে অভিনয় করতে পারলে আমার সাথে?তুমি তো বুঝতে পারছিলে আমি তোমার মাঝে কিছু খোজছি?আমার অস্থিরতা অনুভব করতে পারোনি?তবুও কিভাবে এতো সুন্দর করে ড্রামা করলে দিনের পর দিন?
~ফ্ল্যাশব্যাক~
এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানে ওই সময় বর্ণা হাত উচু করায় রাফি বর্ণার হাতে একটা তিল দেখেছে।বর্ণালীর চুড়ি খুব পছন্দের ছিলো।ফেসবুকে একবার প্রো পিকে চুড়ি পড়া দু’হাতের পিক দিয়েছিলো।সেখানে একটা কুচকুচে কালো রঙের তিল দেখেছিলো।আজও বর্ণালীর হাতে সেইম তিল দেখেছে।
.
.
রাফি,রাফির বোন রাফসা,রুপা ,বর্ণা বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছে।রাফি একবারের জন্যও বর্ণার দিকে তাকায়নি।বর্ণা বারবার আড়চোখে রাফিকে দেখছে।সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত।রাফি চুপচাপ এক পাশে বসে আছে তখনই ফোন বেজে উঠে।
রাফি রাফসাকে বললো,
—-আপু অফিস থেকে আমার ফোন এসেছে।আমাকে যেতে হবে।তোমরা কেনাকাটা করো।এই যে আমার ক্রেডিট কার্ড।
—-আচ্ছা ঠিক আছে।
রাফি বিদায় নিয়ে চলে গেলো।বর্ণার এসব শপিং দেখতে ভালো লাগছে না।তাই মার্কেট ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো।
—আপু আমি আশেপাশটা দেখে আসি।
বর্ণা ঘুরতে ঘুরতে একটা কসমেটিকস শপে গেলো।সেখানে কাচের চুড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে।বর্ণা আনমনে চুড়িগুল হাতে পড়ে ট্রাই করছে।
রাফির অফিস থেকে ফোন এসেছে যেতে হবেনা সেটা জানানোর জন্য।রাফি কান থেকে ফোন নামায় তখন চোখ যায় বর্ণার দিকে।বর্ণা চুড়ি ট্রায় করছে।রাফি কিছুটা কাছে গিয়ে দাড়ালো তারপর বললো,
—বাণু!!
বর্ণা অন্য ধ্যানে ছিলো তাই আনমনে বলে ফেললো,
—হ্যা রাফু!!
রাফি স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে।বর্ণা বুঝতে পারলো বেখেয়ালে কতবড় ভুল করে ফেলেছে।ওর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।রাফি কি ওকে ধরে ফেললো। রাফির ফেস এএক্সপ্রেশন দেখলে বলতে পারতো কিন্তু বর্ণা তো নিজের দৃষ্টি সরিয়ে রেখেছে।
পিনপতন নীরবতা দুজনের মাঝেই বিরাজ করছে।কেউ কিছু বলছে না।
বর্ণা নীরবতা ভেঙে কথা ঘোরানোর জন্য বললো,
—-আয়া,,প,,নি?
আপনি না চলে গেলেন?
রাফি কোনো কথা বলছেনা।রাফির কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে।বর্ণা রাফির দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলো।
রাফি বর্ণার হাত ধরে টানতে টানতে নিরিবিলি এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিলো।
বর্ণা কিছু না বুঝার ভান করে বললো,
—-কি হলো আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলেন?
রাগি দাতে দাত চেপে বললো,
—-চুপ ড্রামাবাজ।কি ভেবেছো আমি বোকা?আমি কিছুই বুঝিনা?
বর্ণা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বললো,
—-কি বুঝতে পেরেছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা?
—আবার?আবার শুরু করেছো?আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছো?কেন এমন করলে বাণু?
—-কি করেছি?কি বলেছি?আপনি এসব উল্টো পাল্টা কি বলছেন?আর আমার নাম বর্ণালী, বাণু নয়।
—আমিও জানি তোমার নাম বর্ণালী।আমি প্রথম দিন থেকেই সন্দেহ করছি কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রুভ ছিলোনা।তুমি দক্ষ অভিনেত্রী হলেও এতটা দক্ষ নও।
—-আরে কি অভিনয় কি বলছেন?আমাকে যেতে দিন।
রাফি শপের সাটারে ঘুষি মেরে বললো,
—-আবার?আই জাস্ট ফিড আপ।হোয়াই আর ইউ ডুয়িং দিস?
তুমি সেই বর্ণালী যার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো যাকে সামান্য একটা কারণে ছেড়ে দিয়েছো।
—আমি সে নই।আমি আপনাকে চিনিনা?
—-আমাকে চিনোনা রাফুকে চিনো?আর এই হাত(হাত ধরে উচু করে)এটা কি?হাতের এই তিলটা?আমি কি এটা ভুলে গেছি? এত সহজ?স্বীকার করো বাণু প্লিজ।
আমি আর পারছিনা।
রাফি বর্ণাকে আচমকা জড়িয়ে ধরলো।বর্ণা থমকে আছে।এখন কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।রুপার সাথে রাফির বিয়ের কথা মনে পড়তেই বর্ণা রাফিকে সরিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
রাতের বেলায় রাফির ফোন এসেছে বর্ণার ফোনে।রাফির নাম্বার দেখে বর্ণা ঘামছে।দেখতে দেখতে ফোন কেটে গেলো।বারবার বেজে চলেছে কিন্তু বর্ণা ফোন তুলছেনা।রাফি একটা মেসেজ এলো।যদি ফোন না তুলো তবে আমি তোমার বাড়িতে আসছি।
বর্ণা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে।
রাফি ওপাশ থেকে বললো,
আগামীকাল ভিক্টোরিয়া পার্কে আমার সাথে দেখা করবে।সময় সকাল ৯টা।যদি না আসো আমি তোমার বাসার সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে দেবো।
বর্ণা পার্কে গিয়ে রাফি কে বললো,
—সমস্যা কি আপনার? এভাবে ব্ল্যাকমেইল কেন করছেন?কি চাই আপনার?মানলাম আমি সেই বর্ণালী কিন্তু আমাদের মাঝে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।আমার বিএফ আছে।আপনার আপুর সাথে বিয়ে হচ্ছে তাহলে সমস্যাটা কোথায়?কেন এমন ঝামেলা করছেন?
রাফি বর্ণার দুবাহু চেপে ধরে বললো,
—এই মেয়ে চুপ।আমি এখানে তোমার কথা শুনতে আসিনি।আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।কেন সেদিন আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলে?অনেস্ট এন্সার চাই আমার।
—সেটা আমি জানিয়েছি।
—নো নো সেটা রিজন ছিলোনা।তুমি যদি মনে করো আমি তোমার কথা বিশ্বাস করবো তাহলে ইউ আর রং।
—কারণ যেটাই হো সেটা ফ্যাক্ট না।তুমি রুপা আপুকে বিয়ে করছো এটাই সত্যি।
—আমি তোমাকে ভালোবাসি বাণু।আর তুমিও আজো আমাকে ভালোবাসো সেটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।সো ডোন্ট স্টে এওয়ে ফ্রম ইউর ফিলিং।
—আমি তোমাকে ভালোবাসি না।আর তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো তবে তোমার সেই ভালোবাসার দোহাই রুপা আপু এসবের কিছুই জানবেনা আর তুমি রুপা আপুকে বিয়ে করবে আর সুখীও রাখবে।
—আর ইউ ম্যাড?রুপাকে কিভাবে আমি ভালো রাখবো?একজনকে ভালোবেসে আরেকজনকে সুখী রাখা কি আদোও সম্ভব?
—কেন সম্ভব নয়।দ্বিতীয় বার কেউ প্রেমে পড়ে নি।বিয়ে করে প্রেমিকাকে ভুলে যায়নি।রুপা আপু অনেক ভালো মনের মেয়ে,দেখতে সুন্দরী আর তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।তুমি ওকে বিয়ে করলে সব ভুলে যাবে।
—আর, তুমি?
—-আমি কি?আমিও ভালো আছি আর থাকবো।তুমি রুপাকে বিয়ে করবে ব্যাস।এই বিয়ে ভেঙে গেলে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে।মরবো আমি বুঝেছো।(বর্নার চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে)
—বাণু!!
—ডিসিশন ইজ ইউরস।বায় মি.রাফি।
রাফি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
.
~বিয়ের আগেরদিন~
রুপা হলুদের শাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।অন্ধকারের মধ্যে দুটো ছায়া দেখতে পেলো।রুপা কৌতুহল বশত এগিয়ে গেলো। তারপর যা দেখলো,যা শুনলো তাতে পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো।
চলবে….❤❤