#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা,০৩,০৪
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩
চোখ খুলে মাধুর্য নিজেকে কুয়োর কাছে দেখতে পায়। অবাক হয়ে তাকায় যে। আকাশের দিকে তাকায়। এখন তো দিন। সূর্য গাছের ওপর দিয়ে চিকচিক করছে। মাথা থেকে হাত সরায় মাধুর্য। ও কি এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? নাহ! ও সব কিছু অনুভব করেছে। গলায় হাত দেয় মাধুর্য। গলায় ওড়না না পেয়ে চকিতে তাকায় সে। ওড়না নেই? আশেপাশে খুঁজেও যখন ওড়না পায় না তখন মনে পড়ে ওর রাজমহল থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসার কথা। তাহলে সবটা কি সত্যি ছিল? ও সত্যিই অন্য দুনিয়ায় চলে গিয়েছিল? কীসের দুনিয়া ছিল সেটা? জানা হলো না মাধুর্যের। গাছের দিকে তাকাতেই দেখে ঠকঠক করে কাঁপছে কেউ গাছের আড়ালে। এগিয়ে গিয়ে কবিতার কাঁধে হাত রাখতেই চমকে চিল্লিয়ে সরে যায় কবিতা। মাধুর্য বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে….
–“আরে আমি। মাধুর্য।”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে কবিতা। মাধুর্য গভীর চিন্তায় মগ্ন। কি হয়েছিল ওর সাথে সে নিজেও জানে না। কাঁধে ব্যাগ তুলে নেয় সে। কবিতা মাধুর্যের গালে হাত রেখে বলে….
–“তুই না কুয়োতে পড়ে গেছিলি? বের হলি কি করে? তাও একেবারে শুকনো অবস্থায়? তোকে পড়তে দেখে ছোট খাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছিল। আমি তোকে বলেছিলাম এসব জায়গায় আসিস না।’
–“ঠিকই বোধহয় বলেছিস। চল এখন তাড়াতাড়ি। ক্লাসে যেতে হবে।”
কুয়োর দিকে আনমনে তাকিয়ে কথাটা আওড়ায় মাধুর্য। কবিতা চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে….
–“তোর ওড়না কোথায়?”
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মাধুর্য। আমতা আমতা করে বলে….
–“জানি না। কুয়োতে পড়ে গেছে মনে হয়। সমস্যা হবে না। কটি পড়ে আছি তো। কিছু হবে না। চল।”
দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায় মাধুর্য ও কবিতা। মাধুর্য যাওয়ার সময় বার বার ফিরে তাকায় কুয়োর দিকে। কিছু আছে ওই কুয়োতে। যা ওকে বার বার টানছে। কিন্তু ও যা যা দেখল সব কল্পনা নাকি বাস্তব তা মেলাতে পারছে না মাধুর্য।
মাধুর্য ও কবিতা ইউভার্সিটিতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা ক্লাস শেষ হয়ে যায় প্রায়। তখন দলে দলে সব ক্লাস থেকে বেরিয়েছে সবাই। ইউনিভার্সিটি লাইফ মানে মজার জীবন সবার কাছে। ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারে সবাই। দোতালার নিজের ক্লাসরুম থেকে বের হয় অরুণ সহ তার বন্ধুবান্ধব। সবাই হাসাহাসিতে মগ্ন। হাসতে হাসতে একে ওপরের গায়ের ওপর পড়ছে। কিন্তু অরুণ আছে অন্য চিন্তায়। ওর কপালে কুঞ্চিত! মাধুর্যকে ইউনিভার্সিটিতে দেখতে পায়নি আজ সে। তার ধারণা কাল ওই অসভ্যতামো করায় মাধুর্য রেগেই আসেনি। নিচে চোখ পড়তেই দাঁড়িয়ে যায় অরুণ। মাধুর্য এসেছে। গার্ডেন পেরিয়ে হেঁটে আসছে।
–“আরে অরুণ, তোর কি হয়েছে বল তো? আজ কোনো মজা করছিস না। চুপচাপ আছিস। নতুন মুরগী বলি দেওয়ার জন্য খুঁজছিস নাকি?”
অরুণের এক বন্ধু প্রশ্ন করেও এটার উত্তর সে পায় না। সবাই ফিসফিস করে অরুণের এসব রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালাতে থাকে। তৎক্ষনাৎ অরুণ বলে ওঠে….
–“তোরা থাক। আমি আসছি।”
একপ্রকার হম্বিতম্বি হয়ে চলে যায় অরুণ। তার বন্ধুরা বোকা বনে যায়। তখন তারা তাকায় মাধুর্যের দিকে। তারপর একে ওপরের দিকে দাঁত কেলিয়ে চিল্লিয়ে বলে ওঠে….
–“ওহ হো! এই ব্যাপার।”
সবাই হাসাহাসি করে। কেউ কেউ সিটি বাজায়। ওরাও যায় অরুণের পেছন পেছন।
গার্ডেন পেরিয়ে মূল বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতেই একজন মানুষকে হুট করে সামনে দেখে চমকে যায় মাধুর্য এবং কবিতা। মাধুর্য এমনিতেই চিন্তিত ছিল। তাই বেশি চমকায় সে। এভাবে অরুণের আগমন পছন্দ করেনি সে।
–“সমস্যা কি আপনার? আচমকা মেয়েদের রাস্তা আটকান কেন? আজও কি কালকের মতো অসম্মান করবার সাধ জেগেছে?”
সানগ্লাস খুলে টিশার্টের গলায় সানগ্লাস ঝুলিয়ে দেয় অরুণ। নিজের ব্রাউন কালার করা চুল এপাশ-ওপাশ নাড়াতে নাড়াতে বলে….
–“মিস. মাধুর্য, আপনার কি মনে হয় না আপনার নামের সঙ্গে যেমন চেহারার মিল রয়েছে তেমনই কথাবার্তাতেও মিল থাকা উচিত?”
–“সরি! আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড?” (ভ্রু কুঁচকে)
অরুণ হালকা ঘাড় নিচু করে ঝুঁকে পড়ে মাধুর্যের দিকে। অস্বস্তিতে সরে যায় মাধুর্য।
–“আই মিন, তোমার কথাতে একটু মাধুর্য মেশানো যায় না?”
–“না যায় না। আপনি যেমন আমি ঠিক তেমন ব্যবহার করছি আপনার সাথে। আর আপনি যদি ভেবে থাকেন আমাকে সরি বলে বা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আমাকে কনভিন্স করে আপনার এসব রাগিং এর ব্যাপারে হেড অফিসে কমপ্লেন দেওয়া থেকে বিরত রাখবেন। তাহলে আপনি ভুল করছেন অরুণ হোসাইন। নাউ সাইড প্লিজ!”
অরুণ সাইড হওয়ার আগেই মাধুর্য হনহন করে চলে গেল তার পাশ কাটিয়ে। কবিতা হাবাগোবার মতো তাকিয়ে ছিল এতোক্ষণ। সব যেন মাথার ওপর দিয়ে গেল ওর। মাধুর্য যেতেই ও নিজেও হাঁটতে শুরু করল। মাধুর্যকে পেছন থেকে পর্যবেক্ষণ করে দুই হাত মাথার পেছনে রেখে অরুণ বলে….
–“যাহ বাবা। আমার নামে কমপ্লেন করবে। তাতে যদি মিস. মাধুর্য খুশি হয় হক!”
মাধুর্যের চলা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে সে। অরুণ বিরবির করে বলে ওঠে….
–“জাস্ট একবার পেছনে তাকাও। তাকাও তাকাও।”
মাধুর্য হাঁটতেই থাকে।
–“একবার পেছনে তাকাও।”
মাধুর্য তাকায় না। অবশেষে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগে ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকায় মাধুর্য। তবে ওর চোখে বেশ রাগ। সেটা স্পষ্ট। তাতে কি? অরুণের ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে। সে হাত মুঠো করে বলে….
–“ইয়েস! ইয়েস!”
মাধুর্য একনজর তাকিয়ে বিরবির করে বলে…..
–“জাস্ট ইম্পসিবল অ্যান্ড বাস্টার্ড বয়।”
সেদিনের অদ্ভুত ঘটনার কেটে যায় প্রায় ১ মাস। অবশেষে ভুলতে বসেছে এসব ঘটনা মাধুর্য। নিজের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকে সে। ভুলেও কোনোদিন আর সেই রাস্তায় পা বাড়ায়নি। কিন্তু কোথাও একটা ইচ্ছে রয়ে গেছে সেইখানে যাবার। মন যেন বলে ওই জায়গায় সঙ্গে কোনো টান আছে। তবুও যায় মাধুর্য। একপ্রকার জোর করেই বিষয়গুলো ভুলে গিয়েছে সে।
অন্যদিকে অরুণ বিভিন্ন ভাবে ইম্প্রেস করবার চেষ্টায় রয়েছে মাধুর্যকে। কিন্তু মাধুর্যের মনে যত ঘৃণা অরুণের মতো ছেলেদের প্রতি সেই ঘৃণা যেন কখনোই কাটিয়ে উঠবার নয়। এই ১ মাসে মাধুর্য নিজে থেকে কখনই অরুণের সঙ্গে কথা বলেনি। শুধুমাত্র দুই থেকে তিনটে বাক্য উচ্চারণ করেছে অরুণের সামনে। সেটা হলো, ‘সামনে থেকে সরুন, আমি ক্লাসে যাব, আমার সামনে আসবেন না।’
এই কয়টা বাক্য শুনতে শুনতে ক্লান্ত অরুণ। ওর মতো একজন সুদর্শন যুবককে কি করে মাধুর্য উপেক্ষা করছে সেটাই ভেবে পায় না অরুণ।
–“মাধুর্য, যা তো গিয়ে ছাদে কাপড় গুলো শুকাতে দে। আর হ্যাঁ বালিশগুলোও নিয়ে যাস। রোদে দিতে হবে।”
ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল মাধুর্য। রেনুকার এমন আদেশে থেমে যায় সে। খানিকটা জোরে বলে….
–“মামি মা, বলছিলাম যে আমি তো রেডি হচ্ছি। আর রোদ বাইরে তো…..”
কথাটা শেষ করবার আগেই রেনুকা তড়িঘড়ি করে ছুটে আসেন। পেছন পেছন আসে সানিয়া। ধমক দিয়ে রেনুকা বলে ওঠেন….
–“তুই যাবি না তো কে যাবে? সামিহা? নাকি সানিয়াকে যেতে বলছিস? আমার মেয়ের স্কিন কালো হয়ে গেলে তখন কি হবে? খালি সবসময় কাজ না করার ছুতো খুঁজিস তাই না? যা ছাঁদে।”
মাধুর্য আর কিছু বলতে পারে না। রেনুকা ভেংচি কাটেন। হাতভর্তি বালিশ সহ কাপড় নিয়ে ওপরে ওঠে।
কড়া রোদে কাপড় শুকাতে দিতে থাকে মাধুর্য। তাকাতেই পারছে না সে। চোখ যেন ঝলসে যাবে। বালিশ রাখতে গিয়ে ওর চোখ পড়ে তার হাতের দিকে। হাত লাল হয়ে যাচ্ছে। হাত নাড়তে থাকে মাধুর্য। থাকা যাচ্ছে না আর। মুখও পুড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। দ্রুত পায়ে নিচে নেমে যায় সে।
ঘরে এসে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজের লাল মুখ আর হাত দেখতে থাকে মাধুর্য। তখনই ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয় সামিহা। মাধুর্যকে এখনো বাড়িতে দেখে বলে ওঠে….
–“মাধুর্য, এখনো ইউনিভার্সিটিতে যাস….”
কথা শেষ না হতেই ওর চোখ পড়ে মাধুর্যের লাল চোখমুখের দিকে। দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মাধুর্যের গালে মুখে হাত দেয় সামিহা।
–“এই অবস্থা কেন তোর? কি করে হলো?”
সামিহার কন্ঠে অস্থিরতা। মাধুর্য নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে….
–“এমনি। বাইরে রোদে ছাঁদে গিয়েছিলাম আপু তাই। আমি আসছি। অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে রে। এবার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
তাড়াহুড়ো করে বের হতে নিতেই সামিহা মাধুর্যের হাতে ছাতা ধরিয়ে দেয়।
–“বাইরে রোদ তাহলে ছাতা নিয়ে যা। আবার সমস্যা হবে।”
মাধুর্য মিষ্টি হেসে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে যায়। সামিহা মাথার চুল মুছতে মুছতে বেডে বসে পড়ে। মাধুর্যকে নিয়ে চিন্তা হয় ওর। সামিহার মা ওকে যেভাবে অশান্তি দেয়। একমুহূর্ত বসে দম ফেলতে দেয় না। এসব নিয়ে চিন্তা হয় ওর। সামিহা কতো আটকাবে নিজের মাকে? মাধুর্যকে অপমান করার ছুতো খুঁজতে থাকেন রেনুকা। কিছু একটা করা দরকার মাধুর্যের জন্য। দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে সামিহা।
আজ মেইন রাস্তায় গাড়ি না পাওয়ায় খানিকটা বিব্রত হয় মাধুর্য। মেইন রাস্তা যেন খাঁ খাঁ করছে। মেইন রাস্তায় গাড়ি না থাকা অস্বাভাবিক বিষয়। তার মধ্যে ওর বাড়ির রাস্তার দুপাশে খানিকটা জঙ্গলের মতো। মাথার ওপর ছাতা ধরে হাঁটছে মাধুর্য। বারে বারে হাতের ঘড়ি দেখছে সে। কবিতা আগেই চলে গিয়েছে আজ। তাই ওকে একা একা হাঁটতে হচ্ছে। মনে মনে গাড়িওয়ালা গুলোর গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলছে মাধুর্য।
———————————-
–“আজ ও আবার বেরিয়েছে? তাও রোদের ভেতরে? ওকে বার বার বলে রেখেছি কয়েকমাস বাড়িতে থাকতে। রোদের মাঝে তো আমাদের সমস্যা হয়। শক্তি কমে আসে। তার ওপর এতে বছর জ্ঞান না থাকায় ওর শক্তি অনেক খানি কমে এসেছে। ওর বাইরে না বের হওয়ায় ভালো। তুমি আটকাতে পারলে না রায়মা?”
প্রলয় কড়া গলায় কথাগুলো বলেন। রায়মা শান্ত গলায় বলে….
–“সে ছেলে কি কারো কথা শোনে? ও হন্নি হয়ে খুঁজে বেরাচ্ছে সেই মেয়েটাকে। যে ওকে অভিশাপ মুক্ত করেছিল।”
–“এতো বছর পর নিজের ছেলেকে পেয়ে আবার হারাতে না হয়! আমরা ভ্যাম্পায়ার। কোনো সাধারণ মানুষ নয়। আমরা নিশাচর প্রাণী। সেটা তো ওকে বুঝতে হবে।”
থমথমে কন্ঠে কথাটা বলে টেবিলে ঘুষি মারেন প্রলয়। হ্যাঁ, প্রলয় সহ প্রলয়ের পুরো পরিবার ভ্যাম্পায়ার। প্রলয় সিনহা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজা ছিলেন। এক রহস্যময় ঘটনাতে রাজ্যসহ তার ছেলে রাজকুমারের ওপর অভিশাপ পড়ে। সেই অভিশাপ কাটাতেই ৪৯ বছর লেগে যায়। আজও তাদের মনে পড়ে সেই রহস্যময় রাতের কথা! সেই ঘটনা ভোলায় নয়।
রাস্তায়…..
–“সবাই উপস্থিত আছে। অনুভব কোথায়? একটু পরেই রেস শুরু হবে।”
চিন্তিত সুরে কথাটা বলে রিহান। আশেপাশে সবার কপালে ভাঁজ। সবার পক্ষ থেকে কার রেসিং এ অংশগ্রহণ করবে অনুভব সিনহা। প্রলয় সিনহার একমাত্র ছেলে অনুভব সিনহা। যে নিজেও একজন ভ্যাম্পায়ার। তার বন্ধুরাও ভ্যাম্পায়ার। তাদের মাঝে একজন বন্ধু জোহান বলে ওঠে….
–“আরো ২ মিনিট বাকি আছে। আর অনুভবের তো অভ্যেস রাইট টাইমে উপস্থিত হওয়া। চিন্তা করিস না এসে যাবে।”
কথাটা বললেও চিন্তার ভাঁজ যায় না ওদের কপালের ওপর থেকে। অপরপক্ষের একজন রিহানকে বলে ওঠে….
–“কোথায় তোমাদের অনুভব? আমাদের কার রেডি আছে। আর ১ মিনিট। রেস তো শুরু হয়ে যাবে। এই রেসের জন্য আমরা এই মেইন রোড খালি করিয়েছি। সে আসছে তো নাকি ভয় পেয়েছে?”
কথাটা বলে হু হা করে হেসে ওঠে অপরপক্ষের লোকজন। রিহান রেগে কিছু বলবার আগেই একটা স্পোর্টস কারের আগমন ঘটে। ব্ল্যাক রঙের স্পোর্টস কার দ্রুত ধেয়ে আসছে। রিহান সহ সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে এসেছে। জোহান ঘড়ি দেখে বলে….
–“রাইট টাইম।”
গাড়িটা এসে থামে রেড লাইনের দাগের একেবারে সামনে। গাড়ির জানালার কাঁচ আস্তে আস্তে খুলে যায়। ভেতরে দেখা যায় এক সুদর্শন যুবক কে। যার ঠোঁটে কিলার স্মাইল লেগে আছে। সানগ্লাস চোখ থেকে খুলতেই ভেসে ওঠে নীল চোখজোড়া। এই সুন্দর পুরুষটি হলো অনুভব সিনহা। রিহান দ্রুত বলে ওঠে….
–“অনুভব, তুই এমন কেন বল তো? আমরা তো ভেবেছিলাম তুই আসবি না। লাস্ট টাইমে এন্ট্রি দেখে জানে পানি এলো ইয়ার।”
অনুভবের হাসি প্রশস্ত হয়। বাম পাশের দাঁতগুলো চকচক করে ওঠে।
–“লাস্ট টাইমে এন্টি! দিস ইজ স্টাইল ওফ অনুভব সিনহা। কারণ অনুভব অপেক্ষা করতে নয়, অপেক্ষা করাতে পছন্দ করে। আমি শুধু একজনের অপেক্ষা করি। সে আসবেই আমার সামনে। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসব। বাই দ্যা ওয়ে, ক্যাম ইউ স্টার্ট দ্যা কম্পিটিশন?”
সবাই মাথা নাড়ায়। জানালার কাঁচ তুলে দেয় অনুভব। ওর মুখে নেই কোনো চিন্তার ভাব। আছে ভর্তি কনফিডেন্স। বিকজ ও রেস জিতবে। সানগ্লাস পড়ে নেয় অনুভব। পতাকা নাড়ানোর সাথে সাথে ফুল স্পীডে গাড়ি স্টার্ট দেয় অনুভব। বেশ মনোযোগ দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে সে। একবার তার বিপক্ষের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে একবার সে। আস্তে আস্তে বেশ এগিয়ে আসে অনুভব। বাঁকা হাসে সে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে একটা মেয়েকে দেখে। চোখ বড় বড় করে তাকায় অনুভব। গাড়ির স্পীড ফুল। গাড়ি থামাতে গেলে রেসে হারতে হবে ওকে। আর মেয়েটাও মাঝপথ দিয়ে হাঁটছে। মেয়েটার মুখ ছাতা দিয়ে ঢাকা।
–“ওহ শিট!”
প্রচন্ড রাগ নিয়ে গাড়ির ব্রেক জোরে কষে অনুভব।
গাড়ি না থাকায় রাস্তার মাঝ দিয়েই হাঁটছিল মাধুর্য। হঠাৎ গাড়ি দেখে পা থেমে যায় ওর। ভয়ে ছাতা শক্ত করে ধরে সে। দ্রুত গতিতে সরবে তাও যেন পারছে না। এই সিচুয়েশনে ব্রেন বা কোনো অঙ্গ চলতে চায় না। কিছু বুঝে ওঠবার আগেই গাড়িটা ওর একদম সামনে এসে থেমে যায়। গাড়ির সঙ্গে আসা বাতাস উড়িয়ে দেয় তার হাতে থাকা ছাতা এবং গলায় থাকা ওড়না। ওড়না গিয়ে পড়ে মাধুর্যের মুখে। কালো ওড়না ঢেকে দেয় তার মিষ্টি মুখ।
অনুভবের বিপক্ষের গাড়ি এগিয়ে চলে যায়। অনুভব মাত্রাতিরিক্ত রেগে একাকার হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সে। বাইরে এসে মাধুর্যের সামনে দাঁড়ায় অনুভব। মাধুর্য ওড়না মুখের ওপর থেকে সরিয়ে নিতেই সামনে থাকা অনুভবের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায়। অনুভব রেগে আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলতে নিলেও থেমে যায়। আঙ্গুল গুটিয়ে যায়। মেয়েটার ডাগর ডাগর আঁখিজোড়া! মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরিয়ে আসতে পারে না। এমন চোখজোড়া আগেও কোথাও দেখেছে অনুভব। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে সে।
চলবে…..??
#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪
মাধুর্যের চোখজোড়া স্পর্শ করতেই দুই ধাপ পিছিয়ে যায় মাধুর্য। মেয়েটার চোখ জোড়ায় আলাদা মাদকতা বিরাজ করছে। যেই মাদকতা ছড়িয়ে পড়েছে অনুভবের নীল বর্ণের চোখের মাঝে। মাধুর্যের গলার হাড় বার বার উঁচু নিচু হচ্ছে। অচেনা যুবকটিকে দেখে ওর চোখ স্থির হয়ে গিয়েছে কেন? হার্টবিট জোড়ে জোড়ে লাফাচ্ছে যেন। তার ঠোঁটজোড়া শুকিয়ে এসেছে। দমকা হাওয়া দুজনকে ছুঁয়ে যেতেই হুঁশ ফিরে দুজনেরই। মাধুর্যকে আগামাথা পর্যবেক্ষণ করে নেয়। স্বাভাবিকের থেকে বড় চোখজোড়া, চোখের মনি ঘন কালো, চিকন গোলাপিনেশা ময় ঠোঁটজোড়া, উজ্জ্বল গায়ের রঙ যেই উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশেও ভ্রুযুগল হালকা কুঁচকানো। পরনে মেয়েটির কালো রঙের থ্রিপিস যেটা যেন ওর জন্যই বানানো। এমন মোহময় মেয়ে যেন দুনিয়াতে নেই! অনুভব এমন মোহময় মেয়ে আরেকজনকে দেখেছিল সেটা ছিল তার প্রেয়সী! সেই প্রেয়সী যাকে মারার দায়ে সে অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার রাজকুমারে পরিণত হয়েছে। ও তবে সেই?
মাধুর্যের কথায় বাস্তবে ফেরে অনুভব।
–“এভাবে রাস্তায় উম্মাদের মতো গাড়ি না চালালে হয় না? ঠিক আপনাদের মতো মানুষদের জন্যই আজ কত কত মানুষ আহত নিহত হচ্ছে। আর আপনারা? বড়লোক বলে কেউ আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলবার সাহস অবধি পায় না।”
মাধুর্যের কথায় রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। রোদের ঝলকানিতে গাল লাল হয়ে যাচ্ছে তার মুখ। অনুভবের শরীরও জ্বলছে তবে তাতে তার কোনো খেয়াল নেই। মাধুর্য রাস্তায় পড়ে থাকা ছাতা তুলে নেয়।
অনুভব নিজেকে ঝাঁকুনি দিয়ে স্বাভাবিক করে। আবারও তাকায় মাধুর্যের দিকে। এই মেয়েটা একে তো নিজেই রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছিল তার ওপর সে অন্যকে জ্ঞান দিচ্ছে? অনুভব আবারও কিছু বলতে নেয় আবারও থেমে যায় মাধুর্যের কথায়।
–“বড়লোকের ছেলে বলে যা ইচ্ছে তাই করবে। মানে যা ইচ্ছে তাই। এজন্য বিরক্তি আর ঘৃণা আসে এদের প্রতি। বাবার টাকা আছে বলে মনে করে সব কিছু টাকা দিয়েই হয়ে যাবে।”
কথাগুলো মাধুর্য বিরবির করে বললেও অনুভব সবটা শুনে নেয়। কারণ ওর শ্রবণ শক্তি মানুষের মতো নয়। ধীরে বলা কথাগুলোও ওর কানে স্পষ্ট ভেসে আসে। যদিও এতো বছর ঘুমন্ত থাকায় ওর শক্তি অচল হয়ে পড়েছে। নিজের রক্তের তৃষ্ণা আসলে কনট্রোলে রাখতে কষ্ট হয়।
মাধুর্যের কথা শুনে কপালে ভাঁজ পড়ে অনুভবের। মাধুর্য দাঁড়াতেই অনুভব ঝড়ের গতিতে মাধুর্যের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সেকেন্ডেই অচেনা যুবকটিকে এতো কাছে দেখে মাধুর্যের অস্বস্তি হচ্ছে সেটা মটেও নয়। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কি করে উনি এলেন? এটাই মাধুর্যের মনে ঘুরছে। অতঃপর সে ভেবে নিল সে তো নিজেও এমনটা পারে। যদিও এতোটা দ্রুত নয়। কিন্তু অন্যদের থেকে বেশ দ্রুত।
–“হোয়াট ডিড ইউ সে?”
মাধুর্য চোখমুখ জড়িয়ে তাকায়। মাধুর্য তো কিছু বলেনি? যা বলেছে ধীরে বলেছে তাহলে? বোকা বোকা সেজে বলে….
–“নাথিং! সরুন আমার ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
অনুভব একচুলও সরে না। ওর একদিকে রাগ লাগছে আরেকদিকে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। সেই চেনাজানা অনুভূতি আবারও কেন ঢেউ খেলছে অনুভবের মনে? এই অচেনা মেয়েটির আড়ালেই কি রয়েছে সেই চেনা মুখ? অনুভব নিজেকে সামলে বলে…..
–“তুমি বলেছো, বড়লোকের ছেলে বলে যা ইচ্ছে করতে পারি, টাকা দিয়ে সব কিনে নিতে পারি তোমার ঘৃণা আর বিরক্তি আসে আমাদের প্রতি ব্লা ব্লা ব্লা! এগুলো কেন বললে? এক্সকিউজ মি! আমি তোমার রাস্তায় আসিনি। তুমি আমার রাস্তায় এসেছো আর আমার রেস….. ”
কথাটা বলে থেমে যায় অনুভব। ও তো রেসের কথা ভুলেই গেছিল। তখনই হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজ এলো তার কানে। অনুভব বুঝতে পারল তার বিপক্ষ দল জিতে গেছে। পাশের গাছে সজোরে ঘুষি দিয়ে সে বলে ওঠে….
–“ড্যাম ইট।”
মাধুর্য অনুভবের হাত স্পর্শ করতে গিয়েও থেমে গেল। অনুভব নিজের হাতে ইচ্ছে করে আঘাত করার জন্য মাধুর্য দুই সেকেন্ডের জন্য উতলা হয়ে পড়েছিল। নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে নিজের মাথাতেই টোকা মারে মাধুর্য। এসব কি হচ্ছে তার সাথে? এই লোকটার সামনে থাকলে না জানি আর কত কি হবে! এই ভেবে দ্রুত গতিতে অনুভবকে পাশ কাটিয়ে অনেকটা দূরে চলে আসে মাত্র এক সেকেন্ডেই। মাধুর্যের চলার গতি দেখে অনুভব কিছুক্ষণের জন্য বিস্মিত হয়ে যায়। মাথাটা বাঁকা করে পেছন দিকে তাকায় সে। মাধুর্যের চলার গতি ভালোভাবে লক্ষ্য করে। অনুভবের চোখে আরেকজনের চলার প্রতিচ্ছবিও ভেসে ওঠে। চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। অতঃপর নিজেও তাড়াতাড়ি চোখের পলক ফেলতেই মাধুর্যের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়। হকচকিয়ে ওঠে মাধুর্য।
–“আ…আপনি?”
অনুভব মাধুর্যের হাত ধরে উঁচু করে। হা করে তাকায় মাধুর্য। দুজনের শরীরের শিরার মাঝে যেন বিদ্যুৎ বয়ে যায়। মাধুর্য আর অনুভব কিছুটা দূরে ছিটকে যায়। দুজন চোখজোড়া বড় বড় করে দুজনের দিকে তাকায়। এটা কি ছিল? অনুভব নিজের হাতের দিকে তাকায় সে হাত দিয়ে মাধুর্যের হাত স্পর্শ করেছিল সে। এমনটা হওয়ার কারণ উপলব্ধির বাইরে দুজনেরই। মাধুর্য চোখ নামিয়ে নিতেই অনুভব নিজেকে আগের মতো করার চেষ্টা করে। মাধুর্যের সামনে গিয়ে চুটকি বাজাতেই আবারও নিজের ডাগরডাগর চোখ দিয়ে চোখ রাঙায় মাধুর্য।
–“তুমি কি ভেবেছিলে? তোমাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেব? নো নেভার। তোমার জন্য রেস হেরে গেলাম আমি। এর দাম না চুকিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”
–“এই মেইন রাস্তায় আপনারা রেস করছিলেন? সিরিয়াসলি? আপনারা জানেন এদিক দিয়ে কত মানুষ চলাফেরা করে? মানুষের সমস্যা বোঝার ক্ষমতা তো নেই আপনাদের। আপনাকে কেনই বা বলছি এসব? আপনি জাস্ট একটা অসহ্যকর বিরক্তিকর লোক।”
মাধুর্য যেতে নিলে আবারও ওর হাত ধরে টান দেয় অনুভব নিজের দিকে। সামলাতে না পেরে মাধুর্য অনুভবের গা ঘেঁষে কাছাকাছি গিয়ে পড়ে। আর এগোতে চায় না সে। তাই অনুভবের বুকে হাত রাখে। দুজনের ভেতরে আবারও অদ্ভুত তরঙ্গ বয়ে যায়। মাধুর্য চোখ তুলে তাকায়। অনুভব স্থির চোখে মাধুর্যকে দেখছে। ওর ভেতরে বিদ্যুৎ বইছে তবুও ছাড়ছে না মাধুর্যকে। ও দেখতে চায় মেয়েটা ওর ওপরে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। আসলে কে এই মেয়েটা? হঠাৎ অনুভব ফুঁ দেয় মাধুর্যের মুখে। সামান্য ফুঁ মেয়েটার চোখমুখে দমকা হাওয়ার মতো লেগে যায়। উড়ে অন্যপাশে চলে যায় ওর আশেপাশের চুল।
–” মনে রেখো, পৃথিবীটা গোল। যেখান থেকেই পথ শুরু করো না কেন শেষমেশ গোলকধাঁধার মতো একই জায়গায়ই পৌঁছাবে তুমি। তাই কারো সাথে যদি এক্সিডেন্টলি বা কোয়েনসিডেন্টলি দেখা হয় আর ভাগ্যে যদি লিখা থাকে তবে একবার নয় বারবার দেখা হবে তোমার সাথে। আর আজ আমাকে রেসে হারিয়ে দেওয়ার মূল্য না হয় তখনই উশুল করে নেব।”
নিঃশব্দে হেঁসে অনুভব মাধুর্যের হাত ছেড়ে দেয়। ফ্যালফ্যাল করে চেয়েই থাকে মাধুর্য। লোকটার কথার আগামাথা কিছুই খুঁজে পায়নি সে। ও যেন কোনো ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। অনুভব নিজের সানগ্লাস বের করে পড়ে নেয়। অন্যদিকে ফিরে হাঁটতে লাগে। কিন্তু পা যেন মোটেই চলছে না তার। মনে হচ্ছে তার যাওয়া উচিত নয়। কোনো মহামূল্যবান জিনিস ও ফেলে যাচ্ছে। নিজেকে মনস্থির করে হাঁটতেই থাকে সে।
মাধুর্যও মানুষটার দিকে তাকিয়ে উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে। ও এখনো ঘোরের মাঝে রয়েছে। এই ঘোর কি করে কাটাবে সে? তবে কি মানুষটির কথা অনুযায়ী এই গোল দুনিয়ায় আবার মুখোমুখি হতে হবে উনার সামনে? কে জানে! দ্রুত দেরি না করে তাড়াতাড়ি যেতে থাকে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
রেস শেষ। জিতেছে অনুভবের বিপরীত পক্ষ। রাগে মুখ লাল বর্ণে পরিণত হয়েছে তার। কিছু বলতেও পারছে না। মোটা ইউকালেক্টার গাছে হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। নিজের ড্যাডির থেকে লুকিয়ে আড়ালে বেরিয়েছিল শুধুমাত্র রেস টার জেতার জন্য। কে জানতো এমনটা হবে? অনুভবের বন্ধুদের মুখও থমথমে।
–“খুব তো কনফিডেন্স নিয়ে বলেছিলি অনুভব সিনহা যে তুই জিতবি। কিন্তু কি হলো? আমাদের রাজ জিতে গেল। শুধুমাত্র মুখে বললেই হয় না। কাজে করে দেখাতে হয়।”
অনুভবের রাগটা দ্বিগুন বেড়ে গেল। তার বন্ধুরা ভয়ে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। আর একটু এদিক ওদিক হলে নিজের আসল ও হিংস্র রুপ বের করতে একটুও দ্বিধাবোধ করবে না অনুভব। সেই ভয়েই আছে তারা। অনুভব ওদের দিকে ফিরে অদ্ভুত গম্ভীর গলায় বলে…..
–“একটা মেয়ে এসেছিল আমার কারের সামনে। ও তো এদিক দিয়েই মেবি গেছে। তোরা সবাই দেখেছিস নিশ্চয়। তবুও এতো বড় বড় কথা বলিস কোন সাহসে?”
জোহান কিছু একটা মনে করে বলে….
–“হ্যাঁ হ্যাঁ গিয়েছিল আমরা দেখেছি। তাই না রিহান?”
রিহানও মাথা নাড়ায়। কিন্তু বিপরীত পক্ষ তা সত্ত্বেও অনুভবের মজা উড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই দুটো সার্কেলের শত্রুতা অনেক দিন থেকেই লেগে আছে। দুই পক্ষের মধ্যে সবসময় কম্পিটিশন চলতে থাকে। অনুভব নিজের রাগ দমাতে পারে না। বড় বড় পায়ের ধাপ ফেলে এগিয়ে যায় রাজের দিকে। জোহান রিহানকে ইশারা করে অনুভবকে শান্ত করার জন্য। কিন্তু রিহান মাথা এপাশ-ওপাশ নাড়িয়ে ভয়াতুর দৃষ্টিতে তাকায়। এখন অনুভবের সামনাসামনি হওয়া মানে নিজের বলি দেওয়া। শেষমেশ দেখা যাবে রিহানের সমস্ত রক্ত খেয়ে ফেলল অনুভব। অকালে মরার শখ নেই তার।
সরাসরি গিয়ে রাজের জ্যাকেটের কলার চেপে ধরতে এক মূহুর্তও লাগায় না অনুভব। কলার ধরেই হালকা উঁচু করে রাজকে। রাজ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে শুরু করে। অনুভব গাম্ভীর্যের সঙ্গে বলে ওঠে….
–“হারতে শিখিনি আমি। আর তোরা যেই জেতার কারণে ঠাট্টা করছিস সেটা মোটেও তোদের জেতা নয়। কারণ আমি একটা মেয়েকে দেখে গাড়ি থামিয়ে দিয়েছিলাম। বুকের পাটা থাকে তো লিগ্যালি জিতে দেখা। যখন গো হারান হেরে যাবি তখন দেখব তোদের এই স্টুপিড হাসি কোথায় যায়।”
জ্যাকেটের কলার ছেড়ে রাজকে ধাক্কা দেয় অনুভব। কারো সঙ্গে কোনোরকম কথা না বলে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে। মাধুর্যের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।
বাড়িতে আসবার পরেই পায়ের বুট জুতো দুদিকে দুটো ফেলে দিয়ে লিভিং রুমের সোফার ওপর জ্যাকেট ছুঁড়ে মারে অনুভব। যতই মেজাজ ভালো করতে চাচ্ছে ততই যেন ভেতরটা তিক্ততায় ভরে উঠছে। কারণটা মাধুর্য। এতোকিছুর পরেও ঘুরেফিরে তার মাধুর্যের কথায় মনে পড়ছে। সোফার হাতল জোরে চেপে ধরে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও মাধুর্যকে নিজের বলা কথাগুলো মনে করতে থাকে অনুভব। আনমনে বলে ওঠে…..
–“জানি না তোমাকে কেন ওসব কথা বললাম আমি। আমি তো বলতে চাইনি ওসব কথা। কিন্তু মনে হয়েছিল তোমাকে কথাগুলো বলা উচিত। এতোটুকু বুঝেছি কিছু একটা তোমার মধ্যে। কি আছে সেটা আমি জেনে ছাড়ব।”
–“কোথায় কি আছে?”
পরিচিত গলা শুনে ভাবনার ফোড়ন কেটে বেরিয়ে আসে অনুভব। হাসিবিহীন মুখে ঘুরে দাঁড়ায় সে। একরাশ বিরক্তি ঘিরে ধরে তাকে। চিকন আঁকাবাঁকা সিঁড়ি দিয়ে নামছেন প্রলয়। অনুভব জানে এখন তাকে হাজারটা প্রশ্ন করা হবে। তাই সেখানে থাকতে চায় না সে। প্রলয় নামতেই অনুভব সিঁড়ির দিকে এগোয়। কিন্তু বাঁধ সাধেন প্রলয়।
–“তোকে বলেছিলাম বাইরে যাস না। রোদের মধ্যে তো আরো যাওয়া বারণ। জন্ম থেকে কি প্রতিজ্ঞা করেছিস নিজের ড্যাডের কথা কানে অবধি তুলবি না? তোর মা যুদ্ধে আহত হওয়ার পর তোর ভালোমন্দ আমাকে বুঝতে দিবি না? কেন বাইরে গেছিলি বল।”
ধমকের সুরে কথাগুলো বলেন প্রলয়। অনুভবের মোটেও পছন্দ নয় ধমকানো সুর। সে যেই হোক। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বলে….
–“আমি বাইরে গিয়েছিলাম। আজকে একটা রেস ছিল সেটাতে গিয়েছিলাম।”
–“আমার কথা ভালোভাবে শোন অনুভব। পুরো ৪৯ বছর পর তোর জীবন থেমে ছিল। তোর জীবনের না সময় এগিয়েছে আর না তুই এগোতে পেরেছিস। এতোদিন ভাবনাকে মারার অভিশাপে অভিশপ্ত ছিলি তুই। যার অভিশাপের রেশ কাটতে এখনো সময় লাগবে।”
হুট করে অনুভবের হৃদয়ে দহন বাড়তে শুরু করে। এখনো তাকে এসব শুনতে হয় তার প্রেয়সী ভাবনাকে নিয়ে। চোয়াল শক্ত করে বলে….
–“আমি ভাবনাকে মারিনি, মারিনি, মারিনি। এটা অলরেডি অনেক বার বলে ফেলেছি। আর এককথা বার বার বলব না আমি।”
–“তাহলে কেন তুমি সেই শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছো?”
প্রনয়ের গলা পেয়ে প্রনয়ের দিকে একপলক তাকায় অনুভব। একটা শ্বাস নিয়ে বলে…..
–“কারণ আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছে মরে গিয়েছিল তখন। কি করতাম আমি বেঁচে থেকে? আর আমি ভাবনাকে মারিনি সেটা একদিন না একদিম ঠিক প্রমাণ হয়ে আসবে। এখন শুধু ওকে নতুন খোঁজার পালা। কতদিন পালিয়ে বেরাবে আমার থেকে। ধরা দিতেই হবে ওকে। আমাদের #অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা পূর্ণ করার জন্য।”
চলবে…..??