অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা,১১,১২ #The_Mysterious_Love #আনিশা_সাবিহা

0
813

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা,১১,১২
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১১

ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে মেইন রোডে দাঁড়িয়ে আছে মাধুর্য। একটা গাছের নিচে দাঁড়ানো সত্ত্বেও সূর্য যখন কালো মেঘ থেকে বেরিয়ে এসে ভেলকি দেখাচ্ছে তৎক্ষনাৎ জ্বলে যাচ্ছে মাধুর্যের শরীর। তার ওপর অরুণের বলা কথাগুলো মাথার ওপর দিয়ে যাওয়ায় সেটা মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করছে মাধুর্য। তবে কিছুতেই কোনো লাভ হচ্ছে না। পাশেই কবিতার মুখে ননস্টপ কথা পপর্কণ ফুটছে। সব মিলিয়ে অতি বিরক্ত সে। তাই একটা গাড়ির অপেক্ষা করছে সে। একসময় মাধুর্য ধমক দিয়ে বলে ওঠে….
–“কবিতা, চুপ করবি? একে তো গাড়ি পাচ্ছি না তার ওপর তোর ননস্টপ বকরবকর। তোর মুখ ব্যাথা করে না?”

ভেংচি কেটে কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে গেলেও আবারও একই প্রসঙ্গ তোলে কবিতা।
–“আরে আমি তো হুদাই কোনো কথা বলছি না। তুই-ই ভাব একটা ছেলে অযথা কেন তোকে জ্ঞান দেবে? মানে দেখ, ওই অরুণ তোকে যেসব কথা বলল সেসব কেন বলল? জানিস কিছু?”
–“না আমি কিছু জানি না।”
কথাটা বলে আনমনে পিচঢালা ঝকঝকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে মাধুর্য। ওকেও সত্যিই অরুণের কথাগুলো বড্ড ভাবাচ্ছে। কি বলতে চায় এই অরুণ?
–“আমি কিন্তু জানি। অরুণ কেন তোকে এই কথা বলেছে।”
কবিতার কথায় রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে বেশ কৌতুহলী চোখে তাকায় মাধুর্য। ও তো এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে। বেশ উত্তেজনা নিয়ে বলল….
–“কেন বলেছে?”

–“অরুণ তোকে লাইক করে বা ভালোবাসে এতে কোনো সন্দেহ নেই। আই থিংক আজ সে অনুভবের সঙ্গে তোকে দেখে নিয়েছে। জেলাসিতে কি উল্টোপাল্টা কথা বলে গিয়েছে সে নিজেই জানে না। সিম্পল!”
মাধুর্য মুখ ফুলিয়ে বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ে। ও ভেবেছিল কবিতা সত্যিই ওকে অরুণের সেসব কথা বলার কারণ ধরতে পেরেছে। কিন্তু না। ওর মাথায় তো গোবর ভরা। সারাদিন মাথায় লাভ, লাভস্টোরি এগুলোই মাথায় গিজগিজ করে। মাধুর্যের এমন রিয়েকশনে কবিতা ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে….
–“আমি ভুল কি বলেছি তুই বল? অরুণ যে তোকে কতটা পছন্দ করে সেটা তুইও জানিস আমিও জানি। কিন্তু তুই ওকে পছন্দ করিস না কেন? আমার তো মনে হয় না ওর মধ্যে কোনো খামতি আছে বলে। গুড লুকিং, ড্যাশিং, স্মার্ট আর সব দিক থেকে পারফেক্ট একটা ছেলে। তোকে ভালোও বাসে। তাহলে?”
–“একপক্ষ থেকে ভালো লাগলে বা ভালোবাসলে সেটা সার্থক হয় না কবিতা। আর আমার অরুণের সংস্পর্শে বিচ্ছিরি একটা অনুভূতি হয় যা তোকে বোঝাতে পারব না। আমার মনে হয় আমি অরুণের নই। আমি অন্য কারোর। আমি যার সে নিশ্চয় আমাকে খুঁজছে।”

কবিতার চোখ চকচক করে ওঠে। মাধুর্যের হাত শক্ত করে ধরে বলে….
–“আহা! কি ফিল্মি কথাবার্তা। তা কোন ফিল্ম দেখছিস আজকাল।”
চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মাধুর্য। ও হুট করেই মুখ ফসকে কথাগুলো বলে ফেলেছে। এই কবিতা মেয়েটা সেটা নিয়েই ফালাতে শুরু করেছে। ভাবা যায়?
আগপাছ ভাবতেই তাদের সামনে এসে হুট করেই একটা গাড়ি থামে। সাদা রঙে চকচক করছে গাড়িটি। মাধুর্যের গাড়িটি চিনতে দেরি হয় না। তবে কবিতা ভ্যাবলাকান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে অনুভব। ওর তখনকার পোশাকের সাথে এখনকার পোশাকে কোনো মিল নেই। পুরো ফর্মাল লুকে এসেছে সে। কালো কোট, ভেতরে সাদা শার্ট, লাল টাই, কালো প্যান্ট, কালো বুট জুতা, হাতে মোটা চেইনের ঘড়ি বরাবরের মতো, চোখে কালো সানগ্লাস, চুলগুলো জেল দিয়ে ওপর দিকে করে রাখা আর ঠোঁটে অদ্ভুত মোহময় হাসি।

তাকে দেখে যে কোনো মেয়ে ঘায়েল হতে বাধ্য। কবিতা তো আগেই হা করে চেয়ে আছে অনুভবের দিকে। মাধুর্য একবার তাকাচ্ছে একবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। ওর চোখ যাচ্ছে বারবার অনুভবের দিকে। সে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে গলা খাদে নামিয়ে বলে….
–“আপনি?”
–“হুমম আমি। আই নো, আমি এই মূহুর্তে এখানে বেশ আনএক্সপেক্টেড। কিন্তু কি করব? সবাইকে চমকে দিতে আমার ভালো লাগে। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলে তোমরা?”
মাধুর্য কিছু বলার আগেই কবিতা এগিয়ে গিয়ে দ্রুত বলে ওঠে…
–“হ্যাঁ। আজ তো আপনাদের অফিসে ওর প্রথম দিন। তাই তাড়াতাড়ি না পৌঁছুলে হয় বলুন?”
বাঁকা চোখে তাকায় মাধুর্য। কবিতা এতো এক্সাইটেড হয়ে কথা বলছে যেন অনুভব ওর সম্পর্কে কেউ। কি আর করার? মেয়েটাই এমন।

অনুভব সানগ্লাস খুলে হাতে নিয়ে কবিতার পাশ কাটিয়ে মাধুর্যের সামনে এসে দাঁড়ায়।
–“আমি অফিসেই যাচ্ছি। চলো একসাথে যাওয়া যাক মিস. মাধুর্য।”
মাধুর্য হালকা হেসে সম্মতি জানায়। অনুভব হালকা ঘুরে কবিতার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে….
–“চাইলে তোমাকেও ড্রপ করে দিতে পারি।”
কবিতা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে….
–“সিউর।”
দ্রুত পায়ে গিয়ে অনুভবের গাড়ির সামনের সিটে বসে পড়ে কবিতা। মাধুর্য দাঁতে দাঁত চেপে কবিতাকে চোখ রাঙায়। কবিতা এতোটা হ্যাংলা হলো কবে থেকে? কি অদ্ভুত আচরণ তার। আর কিছু বলে না মাধুর্য। ও নিজে গিয়ে বসে পড়ে গাড়ির পেছনের সিটে।

কবিতাকে ওর বাড়ির রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে অফিসে পৌঁছে যায় অনুভব ও মাধুর্য। অফিসে প্রবেশ করে ওরা। অনুভবের সঙ্গে একটা মেয়েকে দেখে প্রায় স্টাফের চোখ গোলগোল হয়ে যায়। সবাই কাজ ছেড়ে ওদের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে থাকে। অনুভব পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতেই সে চোখ বন্ধ করে বলে….
–“নিজেদের কাজে মনোযোগ দাও সবাই। এখানে ফ্যাশন শো চলছে না।”
সবাই নড়েচড়ে আবারও কাজে মন দেয়। এই খবর পৌঁছে যায় অনুভবের বাবা প্রলয় সিনহার কাছে। প্রলয় তেমন আগ্রহ দেখান না এই ব্যাপারে। উনি জানেন অনুভব কাকে এনেছে। কিন্তু অনুভব কেন এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে এই ব্যাপারে তা জানা নেই প্রলয়ের। উনি জানবার চেষ্টা কম করেননি। মাধুর্যের মাঝে কি এমন দেখতে পেয়েছে অনুভব? মাধুর্যের পরিচয় জানার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ও সাধারণ পরিবারের মেয়ে। তবে একটা ব্যাপারে তিনি নিশ্চিন্ত তা হলো উনার ছেলে ভাবনার ব্যাপারে কৌতুহলী হয়নি এখনও অবধি। ভাবনার ব্যাপার নিয়ে অনুভব যত দূরে থাকবে ততই ভালো।

মাধুর্যকে কেবিন দেখিয়ে দেওয়া হয়। ও হিসেব-নিকেশের দিকটা দেখবে। এটাই ওর কাজ। অনুভবও ঢুকে পড়ে কেবিনে। চেয়ার এগিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বলে….
–“সিট!”
অনুভবের একটা কথাও ফেলতে ইচ্ছে করে না অনুভবের। তার প্রত্যেকটা কথায় যেন মাধুর্য সম্মোহিত হয়ে পড়ে। কথা অমান্য করবার সাহস পায় না। চেয়ার বসে পড়ে সে। তখনই অনুভব বলে ওঠে….
–“তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। তোমার সঙ্গে বাড়িতে একজন থাকছে। অলরেডি বাড়িতে পৌঁছেও গিয়েছে হয়ত। তুমি ওর সঙ্গে থাকবে আজ থেকে। আর যাকে পাঠিয়েছি তার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে অসুবিধে হবে না আসা করি।”
–“থ্যাংকস। কিন্তু আপনি আমার জন্য এতোকিছু কেন করছেন”

প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে অনুভবকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মাধুর্য। অনুভব পরিবর্তে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে মাধুর্যের চেয়ারের হ্যান্ডেল ধরে হালকা ঝুঁকে বলে….
–“অনুভব সিনহারও স্বার্থ আছে এতে। অনেক বড় স্বার্থ।”
কথাগুলো অদ্ভুত শোনায় মাধুর্যের কাছে। যেন এই মানুষটি কিছু চায়। খুব দামি কিছু চায়। কিন্তু জিনিসটা কি সেটা আন্দাজ করতে পারে না মাধুর্য। তার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে যায় অনুভবের হাতের আওয়াজে। অনুভব আরো ঝুঁকে পড়েছে তার দিকে। কিন্তু তার নীলজোড়া স্থির কম্পিউটারের মনিটরে। মাধুর্যও কম্পিউটারের দিকে তাকায়। কম্পিউটার অন করেছে অনুভব। চোখ মনিটরেই স্থির রেখে সে বলে ওঠে….
–“তা হিসেব নিকেশ করতে জানো তো নাকি?”
–“না জানার কি আছে?”
–“ওহ জানো? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি প্রশ্ন করা আর ভাবাভাবি করা ছাড়া কিছুই পারো না যাক খুশি হলাম।”

কথাটা যে অনুভব মাধুর্যকে ব্যঙ্গ করে বলেছে তা বেশ বুঝতে পারছে মাধুর্য। রাগে কপাল জড়িয়ে সে বলে….
–“আপনার কি মনে হয় হ্যাঁ? সব কাজ আপনি একাই পারেন? আমি কিছু পারি না? শুনুন নিজেকে সবসময় বেস্ট মনে করবেন না। আর….”
বাকিটা বলার আগেই থামিয়ে দেয় অনুভব ইশারা করে। হাসি প্রসারিত করে বলে….
–“তোমার আরেকটা গুন! নাকি অগুন বলব? সবসময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বল। এখন কাজে মন দাও। কাজে লাগবে।”
রাগে গজগজ করতে করতে কাজে মন দেয় মাধুর্য। অনুভব মাধুর্যকে বুঝিয়ে দিতে শুরু করে। আরেকটু নিচু হয়ে মাধুর্যের কাঁধের কাছে এসে থামে সে। মেয়েটার সুন্দর চুলে সুন্দর গন্ধ। যেন তার চুল নয়। ফুলের বাগান। সেই একই চুলের ঘ্রাণ! মন ভরে ঘ্রাণ নিতেই উঠে পরে সে। দ্রুত বলে ওঠে….
–“যা বুঝানোর আমি বুঝিয়ে দিয়েছি। বাকিটা তুমি করতে পারবে আশা করি। আমারও কাজ আছে আমি আসছি।”

এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে নিজের দ্রুত গতি দ্বারা বেরিয়ে যায় অনুভব। অনুভবের ব্যবহার অদ্ভুত ঠেকল মাধুর্যের কাছে। কিছুক্ষণ লোকটার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে। কি রহস্যময় লোকটা। যাকে এক কথায় বলে, ‘Mysterious man’। অতঃপর নিজের কাজে মন দেয় মাধুর্য।
বাইরে বেরিয়ে এসে দেওয়ালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সে। বেশ চাপা এবং ভার সুরে বলতে থাকে…..
–“ইয়েস মাধুর্য চৌধুরী! তোমাকে আমার সান্নিধ্যে রাখার একটা বড় স্বার্থ আছে। আমি যা ভাবছি তাই যদি হয় তাহলে, অনেক দামি জিনিস চাই আমার তোমার থেকে। তোমাকে নিজের থেকে ছিনিয়ে নেব আমি। তোমার সর্বাঙ্গে শুধু থাকবে এই প্রিন্স অনুভব। সেই একই চলার ধরণ, সেই কথা বলার ধরণ, সেই হাসি, সেই ঘ্রাণ কোনোটাই ভুলতে দাওনি তুমি আমায় ভাবনা! আমি জানি আমার ধারণা ভুল হতে পারে না। আমি তোমাকে চিনতে এতটাও ভুল করতে পারি না। আমাকে ছেড়ে যেতে দেব না তোমায়। ভুল ভাঙাবো। শুধু একবার ফিরে এসো।”

ওয়ারওল্ফ রাজ্যে……
–“আমি জানি না বাবা! আমি ওকে চাই-ই চাই। ওকে আজ আমি অনুভবের সঙ্গে দেখেছি বাবা। আমি যাকে পছন্দ করি বারবার ওই ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স অনুভব আমার থেকে কেঁড়ে নেয়। কিন্তু সবসময় তো ওর জেদ চলবে না। এবার ওয়ারওল্ফ শয়তান প্রিন্স জিতবে। আর তুমি আমাকে সাহায্য করবে।”
রাগে কর্কশ গলায় কথাগুলো বলতে বলতে কঙ্কালের ন্যায় মোমবাতি ছুঁড়ে ফেলে দেয় অরুণ। ওর চোখ লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে। এই অরুণ আর অরুণ হোসাইনের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য। এই হিংস্র চেহার এবং কন্ঠ দুটোই আলাদা করেছে। তবে এটাই সেই অরুণ হোসাইন। এই শয়তান ওয়ারওল্ফ রাজ্যের ভবিষ্যত রাজা হবে সে। নিঃসন্দেহে সেও একজন ভয়ানক ওয়ারওল্ফ। অরুণের কথা শুনে তার বাবা চমকে এসে অরুণের গাল মুঠো করে ধরে বললেন….

–“মাথায় একটু বুদ্ধি রেখে চলার চেষ্টা কর। অনুভবকে দেখেছিস তুই। তার মানে ভাবতে পারছিস? অনুভব কাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে জানিস তুই? হতেই তো পারে তুই যাকে পছন্দ করিস সে আদোও কোনো সাধারণ মেয়েই নয়।”
চকিতে তাকায় অরুণ। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই মাধুর্যকে কল্পনা করে বলে….
–“না বাবা। ওর রুপ ছাড়া সবকিছুই সাধারণ। ওর মাঝে আমি এমন কিছু দেখতে পাইনি।”
–“এতোটা নিশ্চিত হচ্ছিস কি করে? আশেপাশের খেয়াল রাখ। শুধু ওই মেয়েটাতে ডুবে থাকিস না। ভুলে যাস না কে তুই। তোর উদ্দেশ্যও ভুলবি না।”
–“ভুলব না বাবা। আমার উদ্দেশ্য ওই অনুভবকে ধ্বংস করা। সেটা তো আমি করবই। অর্ধেক কাজ তো তুমিই করে দিয়েছো। আমাদের রাজ্যে ও এসল যত বড় ভুল করেছিল সেই মাশুল ও যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন গুনতে হবে। ভালোবাসা না পেলে সারাজীবন শয়তান সত্তা বয়ে বেড়াতে হবে।”
কথাটা বলে ভয়ানক হাসিতে মেতে উঠল অরুণ।

রাতের আঁধার নেমে এসেছে চারিদিকে। ঝিকিমিকি করছে ওপরে তাঁরা। অর্ধচাঁদও আলতো আলোয় ছুঁইয়ে দিচ্ছে পৃথিবীকে। সবে কাজ শেষ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের কাজ কমপ্লিট করে মাধুর্য। কপালে হাত লাগিয়ে চোখ বুঁজে থাকতেই দরজায় নক করে ভেতরে আসে কেউ। মাধুর্য দাঁড়িয়ে দেখে একজন মেয়েকে। সে হচ্ছে প্রলয় চৌধুরী পিএ। নীলিমা নাম। নীলিমা তাড়াহুড়োর সুরে বলে ওঠে….
–“কাজ কমপ্লিট?”
মাধুর্য বাধ্য মেয়ের মতো বলে ওঠে…..
–“ইয়েস ম্যাম। এইযে ধরুন।”
নীলিমাকে কিছু হিসেবের কাগজ প্রিন্ট করে দেয় মাধুর্য। নীলিমা বিস্ময়ের দৃষ্টি তাকিয়ে কাগজ নেয়। সাধারণত নতুন কেউ এই অফিসের হিসেব এতো তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারে না। অথচ মাধুর্য বেশ তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। মাধুর্য কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বলে….
–“তাহলে আমি কি এখন যেতে পারি?
নিলীমা মাথা নাড়ায়। বেরিয়ে আসে মাধুর্য কেবিন থেকে।

কেবিন থেকে বেরিয়ে বাইরে পা রাখতেই ওর মনে হয় অনুভবের কথা। অনুভবের সঙ্গে সেই দুপুরে দেখা হয়েছিল। সে আর তার কেবিনে আসেনি। তার কেবিন কোনটা সেটাও তো মাধুর্য জানে না। হয়ত অনুভব কাজে ব্যস্ত। এই ভেবে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে মাধুর্য। সিএনজি নিয়ে চলে যায় সেই ফার্মহাউসের দিকে।
সিএনজি ড্রাইভার মেইন রোডেই নামিয়ে দেয় মাধুর্যকে। কিন্তু ফার্মহাউসটা মেইন রোড ছাড়িয়ে জঙ্গলের আরো ভেতরে। একা যেতে ভয় করছে তার। তবুও ভয়ে ভয়ে হাঁটতে শুরু করল সে। একা চলা তো শিখতে হবে। মিনিট দশেক হেঁটে অনেক গভীর জঙ্গলেই এসেছে সে। রাস্তায় সোডিয়াম আলোটাও একবার জ্বলছে একবার নিভছে। দ্রুত গতিতে পা চালায় মাধুর্য। একটা উটকো আর ভয়ানক গর্জনে থেমে যায় সে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে তার। ভয়ে বুকটা দুরুদুরু করতে শুরু করেছে। জঙ্গলের আশেপাশেই চোখ বুলাতে সে দেখতে পায় লাল চোখজোড়া। সেখানকার ঝোপটা নড়ছে বার বার।

হাঁটতেও পারছে না মাধুর্য। তার পা যেন অবশ হয়ে এসেছে। নিশ্বাস আঁটকে আসছে তার। হুট করে সেই ভয়ানক প্রাণীটা লাফ দিয়ে মাধুর্যের সামনে আসতেই ভয়ে পিছিয়ে যায় সে। একটা অদ্ভুত প্রাণী! এমনটা সে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। কি করবে ভেবে কুল পায়না সে। তখনই প্রাণীটি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে। প্রাণীর বড় বড় নখের আঁচড় লেগে কেটে যায় মাধুর্যের বাম হাতের কনুইয়ের ওপরে। তার নিশ্বাস বার বার উঠানামা করছে। আজ যেন তার রক্ষা নেই। প্রাণীটা ধেয়ে আসতেই চোখের মনির রঙ পরিবর্তন হয় মাধুর্যের। নিজের ডান হাত উঠিয়ে নিজের অজান্তেই নখ দিয়ে আঘাত করে প্রাণীটিকে। সরে যায় প্রাণীটা। মাধুর্যের ছোট ছোট নখ ইতিমধ্যে বিশাল আকার ধারণ করেছে। সারা শরীরের রোগ ফুলে উঠেছে। রাতের আবছা আলোয় ভয়ঙ্করী হয়ে উঠেছে সে। যাকে বলে ভয়ঙ্করী সুন্দর।

প্রাণীটা আবারো আঘাত করতে এলে মাধুর্য উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতের নখ দিয়ে আঘাত করে আবারও। প্রাণীটির গলা ধরে নিজের ধারালো আর তীক্ষ্ণ নখ বসিয়ে দেয় গলায়। আকাশের দিকে মুখ করে হা করে সে। হুংকার দিয়ে ওঠে ভয়ানকভাবে। তার দুইধারে দুটো তীক্ষ্ণ দাঁত বেরিয়ে আসে। সেই দাঁত বসিয়ে দেয় প্রাণীর গলার দিকে।

চলবে…….???
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১২
কিছুক্ষণ পর কাঁপতে কাঁপতে হাত থেকে ছিটকে ফেলে দেয় মাধুর্য ওই প্রাণীটাকে। প্রাণীটা রক্ত শূন্য হয়ে পড়েছে। নিজের এই রুপ দেখে অবাক চোখে তাকায় সে। হাত উঠিয়ে দেখতে থাকে নিজের ধারালো নখগুলো। নখে কিছু তাজা রক্ত লেগে আছে। নিজের রুপ দেখে নিজেই ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মাধুর্য। ঠোঁটের কোণে হাত দিয়ে রক্ত পেতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে তার। চোখমুখ ঝাঁকুনি দিয়ে বন্ধ করতেই সেখানেই জ্ঞান হারায় মাধুর্য।
যখন মাধুর্য পিটপিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করে তখন সে নিজেকে ভীষণ দুর্বল লাগে তার। এই দুর্বলতার কারণ খুঁজে পায় না সে। চোখটা ভালোভাবে মেলতেই একটা অচেনা মেয়েকে দেখে ভালোভাবে তাকায় সে। মেয়েটার মুখে হাসি ফুটে ওঠে মাধুর্যের জ্ঞান ফেরা দেখে।

কিন্তু মাধুর্য মোটেই সন্তুষ্ট নয় মেয়েটাকে দেখে। ভয়ে ভয়ে দ্রুত ওঠার চেষ্টা করে মাধুর্য। তাৎক্ষণিক নিজের বাহুতে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় সে। অনুভবকে দেখতে পেয়ে শান্ত হয় তার চোখজোড়া। অনুভব থমথমে গলায় বলে ওঠে….
–“আর ইউ ওকে?”
মাধুর্য ছোট্ট করে বলে…”হু।”
জ্ঞান হারানোর আগে নিজের হাতের শেষ দৃশ্যটা মনে পড়ে মাধুর্যের। তাড়াতাড়ি করে হাত উঠিয়ে ওলটপালট করে দেখতে থাকে তার নখ। সব ঠিকঠাক আছে। নখও বেশ ছোট ছোট। তাহলে কি সবকিছু ওর কল্পনা ছিল? অনুভবের দিকে তাকিয়ে দুর্বল গলায় মাধুর্য প্রশ্ন করে….
–“আমি কোথায়?”
–“ফার্মহাউজে তুমি এখন। কি হয়েছিল তোমার? রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে ছিলে তুমি মাধুর্য। আমার মনে হয় তোমার প্রেশার ফল করেছিল নয়ত দুপুরে খাওনি তাই শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছিল।”

মাধুর্য কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে বলে ওঠে….
–“তাই হবে হয়ত।”
–“অ্যান্ড লিসেন, এই মেয়েটা আমার বন্ধু। এলিনা ওর নাম। আজ থেকে তোমার সঙ্গে থাকবে।”
মাধুর্য চোখ উঠিয়ে তাকায়। বেশ ফর্সা আর চিকন গড়নের মেয়েটি। মাধুর্য একটা জিনিস খেয়াল করেছে অনুভবসহ তার পরিবার থেকে ওর বন্ধুবান্ধব সবাই বেশ সুন্দর এবং ফর্সা দেখতে। সবাই কি সিক্রেট রুপচর্চা করে নাকি? কথাটা ভেবে জ্বিহ্বাতে কামড় দিয়ে হাসে মাধুর্য। আজকাল বোধহয় কবিতার সঙ্গে থাকতে থাকতে ওর মাথাতেও উদ্ভট চিন্তাভাবনা আসছে।

অনুভব হালকা হাসলেও হাসিটা মিলিয়ে যায়। কারণ অনুভব জানে মাধুর্যের সঙ্গে মোটেও এমনটা ঘটেনি। আজকে যখন সে নিজের কাজ শেষ করে মাধুর্যের কেবিনে আসে তখনই মাধুর্যকে দেখতে পায় না সে। নীলিমা জানায় ও বাড়ি চলে গিয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। অনুভব সিউর হওয়ার জন্য এলিনাকে ফোন দেয়। এলিনা জানায় মাধুর্য এখনো বাড়িতে যায়নি। চিন্তিত হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অনুভব। মেইন রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গলের রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যেতেই গাড়ির লাইটে মাধুর্যকে রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় দেখে গাড়ি থামায় সে। গাড়ি থেকে নেমে মাধুর্যকে কয়েকবার ডাকে অনুভব। মাধুর্যের সাড়া না পেয়ে ওর গলায় আর হাতের একটু ওপরে চোখ যায়। বেশ গভীর আঁচড় দেখে হতভম্ব হয়ে যায় সে। এমন আঁচড়ের দাগ তার অচেনা নয়। হালকা ছুঁইয়ে দেয় মাধুর্যের আঁচড়ের জায়গাগুলো হাত দিয়ে। ওর বুকে চিনচিন যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। এ কেমন যন্ত্রণা? বিরবির করে বলে ওঠে…..
–“ব্যাথা পেয়েছে মেয়েটা আর হৃদয়ক্ষরণ হচ্ছে আমার। কেন?”

উত্তর না পেয়ে আশেপাশে তাকাতেই একটা ওয়ারওল্ফের দেহ দেখে বিস্ময়ের সঙ্গে তাকায় সে। ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে দেহটা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে দেহে কোনো রক্ত নেই। সব শুষে নেওয়া হচ্ছে। বড় বড় চোখ দিয়ে একবার তাকায় ওয়ারওল্ফের দিকে আর একবার মাধুর্যের দিকে। মাধুর্যের নখের আগায় রক্ত লেগে আছে। এতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেও অদ্ভুত হাসি হেসে ওঠে অনুভব। এই হাসিটা ওর খুশির হাসি। মাধুর্য নিজেই ওর পরিচয়ের প্রমাণ দিতে শুরু করেছে। এর থেকে ভালো কি হতে পারে? অনুভব বেশ ভালোভাবে বুঝে যায় মাধুর্য সাধারণ কোনো মেয়ে নয়। এটাতেই তার আনন্দ। নিজের নিশ্চয়তার দিকে এগুচ্ছে অনুভব। মাধুর্যের হাত নিজের হাতের ওপর নিয়ে হাতে একটা আলতো ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলে….
–“তুমি যদি সে হও। তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। এবার আমি তোমাকে লুকিয়ে রাখব নিজের হৃদয়ে।”
সেখান থেকে মাধুর্যকে উঠিয়ে নিয়ে আসে অনুভব।

মাধুর্যের কথায় ধ্যান ভাঙে অনুভবের। মাধুর্য প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনুভব গলার সুর যথাসম্ভব গম্ভীর রাখার চেষ্টা করে বলে…..
–“কিছু বললে?”
–“আমার হাতে এবং গলায় আঘাত লাগলো কি করে? আপনি জানেন?”
মাধুর্যের কন্ঠে জানতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষার। অনুভব বলে ওঠে….
–“বলতে পারছি না আমি। তুমিই জানো।”
মাধুর্য মাথায় চাপ দিয়ে মনে করবার চেষ্টা করে কিন্তু বিফলে যায় তার চেষ্টা। গা গুলিয়ে আসছে তার। মনে হচ্ছে পেট থেকে সব কিছু বেরিয়ে আসবে। মুখে হাত দিয়ে তড়িঘড়ি করে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায় মাধুর্য। গড়গড় করে লাল বর্ণের কিছু একটা বমি করে ফেলে সে। মাধুর্যের গুরুতর অবস্থা দেখে ছুটে আসে এলিনা এবং অনুভব।

মাধুর্য ওয়াশরুমের দেয়ালে হাত ধরে দুর্বলভাবে চোখ বুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সাথে কি হচ্ছে তার ওর নিজেরই অজানা। অনুভব লাল বর্ণের বমি দেখে বুঝতে সময় হয় না এসব রক্ত ছিল। ওয়ারওল্ফের রক্ত।
তবে সেসবে পাত্তা না দিয়ে দুর্বল মাধুর্যকে মূহুর্তেই কোলে তুলে নেয় সে। মাধুর্য হকচকিয়ে গিয়ে অনুভবের সাদা শার্টের কলার চেপে ধরে নিচে তাকায়। অনুভব তাকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে আর এলিনাকে ইশারা করে। মাধুর্য বারণ করে না অনুভবকে কোলে না নিতে। যেন এটাই তার জায়গা। বরণ চোখ বুঁজে অনুভবের বুকে মাথা রাখে। অনুভবের বুকের মধ্যে যে ধুকপুকানি হচ্ছে সেটা উপভোগ করায় বেশ মজা পায় মাধুর্য। হুট করে তাকে চমকে দিয়ে অনুভব বলে….
–“উপভোগ করা ভালো। তবে সেটা যেন ক্ষনিকের না হয়।”
হা করে তাকায় মাধুর্য। অনুভব কি করে বুঝল বিষয়টি। সঙ্গে সঙ্গে কাচুমাচু করে নেয় তার মুখ।

অনুভব গিয়ে মাধুর্যকে বেডে বসায়। মেয়েটাকে আরো এক ধাপ চমকে দিয়ে অনুভব ওর চুলের ওপর চুমু খেয়ে বসে। বিষয়টিকে অনুভব নিজেই বোকা হয়ে যায়। কিসব করছে সে? ভাবনাকে মাধুর্য ভাবছে নাকি মাধুর্য ভাবনা? যদিও ঘুরেফিরে দুটো বাক্য একই সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে সেটা আন্দাজ করতে পারছে অনুভব। নিজেকেই যখন সে বুঝতে পারছে না তখন ঝড়ের গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অনুভব। কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের আঘাত পাওয়া জায়গায় হাত বুলায় মাধুর্য। ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে। ক্লান্তির শ্বাস ছেড়ে স্থির হয়ে বসে থাকে মাধুর্য।
পায়ের ধুপধাপ শব্দ শুনে দেখে মাধুর্য এলিনাকে। এলিনা দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বসে পড়ে মাধুর্যের কাছে। মিষ্টি হেসে সরু কন্ঠে বলে….
–এখন ঠিক আছো?”
–“হ্যাঁ। অনুভব কি চলে গেছেন?”
এলিনা পা তুলে বসে। গালে হাত দিয়ে বেখেয়ালি হয়ে বলে….
–“হ্যাঁ তা তো গিয়েছেন। যাওয়ার আগে কড়াভাবে বলে গিয়েছেন তোমার খেয়াল রাখতে। জানো তো উনাকে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো মেয়ের জন্য এতো অস্থির আর এতো যত্নশীল হতে দেখছি।”

মাধুর্য উৎসুক হয়ে তাকায়। তীর্থের কাকে মতো চেয়ে বলে….
–“মানে?”
–“মানেটা হলো প্রিন্স তো সবসময় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকেন। কার কি আশেপাশে হলো কিছু যায় আসে না। অথচ উনি আবারও তোমার প্রতি এট্রাক্ট হচ্ছেন। ব্যাপারটা সত্যি বেশ কৌতুহলের।”
সবটা ভালোভাবে না শুনলেও ‘প্রিন্স’ শব্দটি বেশ তার কানে বেশ ভালোভাবে এসেছে। তার শরীর অজানা কারণে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। প্রিন্স শব্দটিকে ঘৃণা করে নাকি ভালোবাসে তা মাধুর্যের মনটাও বলতে পারে না। সে অতি আগ্রহের সঙ্গে বলে….
–“কি বললে তুমি? প্রিন্স বললে না অনুভবকে?”
এবার এলিনাও বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে থাকে। চোখ বুলিয়ে এপাশ-ওপাশ তাকায়। সে একটা বাহানা খুঁজছে। ঢোক গিলে বলে….
–“ইয়ে মানে, অনুভবকে তো প্রিন্সের মতো দেখতে। তাই মাঝে মাঝে প্রিন্সের সাথে তাকে গুলিয়ে ফেলি। হেহেহে।”
এলিনার কথাগুলো বেশ অবিশ্বাস্য হয়ে ঠেকে মাধুর্যের কাছে। তবুও তার অবিশ্বাস করার জায়গা নেই। হালকা জড়ো হাসি দিয়ে চুপ থাকে সে।

বেশ হাই স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে অনুভব। জঙ্গল পেরিয়ে হাই রোড ধরে আবারও একটা শুনশান রাস্তায় ঢুকে পড়ে গাড়ি নিয়ে। এদিক দিয়ে বাড়িতে দ্রুত পৌঁছাতে পারবে সে। নয়ত তার ড্যাড তাকে আবারও হাজারটা প্রশ্ন করবে। আর এতো প্রশ্ন বা কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করে না অনুভব। তাই বাড়িতে ঝামেলা হওয়ার থেকে ভালো দ্রুত বাড়ি পৌঁছা। তার ওপর রাত গভীর যতই হচ্ছে ততই রক্তের প্রতি তৃষ্ণা বাড়ছে তার। এভাবে চলতে থাকলে হুট করেই কাউকে আক্রমণ করতে সময় লাগবে না অনুভবের। অস্থিরতায় শার্টের দুটো ওপরের বোতাম খুলে মুখ দিয়ে নিশ্বাস ফেলে ড্রাইভ করতে থাকে সে। কিছুদূর যেতেই সে লক্ষ্য করে কেউ একটা দৌড়ে আসছে। দূর থেকে দেখে একটা মেয়ে মনে হচ্ছে। বেশ ভাবনাচিন্তা করে গাড়ি থামিয়ে দেয় অনুভব। ব্রেক কষতেই মেয়েটি এসে পড়ে তার গাড়ির সামনে। খানিকটা রাগ হয় অনুভব। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এসে গাড়ির সামনের অংশে থাবা মেরে বলে ওঠে….
–“মরণের পাখনা গজিয়েছে? গাড়ির নিচে পড়তে একটু হলে। মরার জন্য আমার গাড়িই পেলে?”

মেয়েটা নিজের সামনে থাকা চুল পেছনে ঠেলে দিতেই ওর চোখমুখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কবিতাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় অনুভব।
–“তুমি? এখানে এতো রাতে?”
কবিতার চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। ও দ্রুত এসে অনুভবের পেছনে দাঁড়ায়। মানুষের গন্ধ পেয়ে মুখ খোলে অনুভব। ও নিজের আয়ত্তের বাইরে চলে আসছে। তৎক্ষনাৎ বন্ধ করে নিজের মুখ।
–“আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ। আমি আমার মায়ের ঔষুধ নিতে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু কোথা থেকে দুটো ছেলে আমার পিছু নেয়। ওদের উদ্দেশ্য ঠিক নয়।”
অনুভবের খানিকটা মায়া হয় কবিতার ভয়ে মাখা কথা শুনে। চোয়াল শক্ত করে চাপা সুরে বলে…
–“ছেলেগুলো কোথায়?”
–“সামনে।”

সামনে তাকায় অনুভব। দুটো ছেলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে। ভ্রু উঁচিয়ে হালকা ঠোঁট বাঁকা করে অনুভব। ঘাড় বাঁকিয়ে বলে….
–“চলে যাও এখান থেকে। আই প্রমিস, ওরা তোমার পিছু নিতে পারবে না।”
ভয়ে কাঁপা-কাঁপি করতে করতে তাকায় কবিতা। অনুভব এবার রেগে উঠে বলে….
–“চলে যাও বলেছি না।”
এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে এক মূহুর্তেই গায়েব হয়ে যায় কবিতা। অনুভব নিজের চোখের রঙ পাল্টায়। নিজের হিংস্র রুপ ধারণ করে সে। নিজের হাতের নখের দিকে তাকায় নখগুলো বেড়ে বড় বড় হয়ে ওঠে। হা করতেই পাশের দুটো দাত বড় হয়ে বেরিয়ে আসে। চোখের পলকে ছেলে দুটোর কাছে পৌঁছে গিয়ে ওদের গলা নিজের নখ বসায় অনুভব। কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হা করে দাঁত বসায় একজনের গলায়। তাদের চিৎকার অবধি চাপা পড়ে যায়। দাঁত উঠিয়ে গর্জন দিয়ে বলে….
–“আমরা রক্তের জন্য কোনো ভালো এবং সাধারণ মানুষের প্রাণ নিই না। এটা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের নিয়মনীতির বাইরে। এই নিয়মটা যে শুরু করে গেছে আমরা আজও তার নিয়ম মেনে আসছি। তোদের মতো জানোয়ারদের প্রাণ তো নেওয়ায় যায়।”

রাত প্রায় তিনটে। মাধুর্য নিজের ঘুমে মগ্ন হয়েছে কিছুক্ষণমাত্র। তার ঘরের জানালার কাঁচের লক খুলে গিয়ে জানালা ফাঁক হয়ে যায়। জানালাটা খোলা। কোনো গ্রীল নেই। সেখান দিয়ে ঢুকে আসে অনুভব। ওর হাতে সাদা ওড়না। সেই ওড়না যেটা ও নিজের প্রাসাদের বাইরে পেয়েছে। ঘরে ঢুকতেই নড়েচড়ে ওঠে মাধুর্য। ওর চোখমুখটা চাঁদের আলোয় স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। এই স্নিগ্ধ মাখা মুখ অনুভবের ইচ্ছে করে নিজের ঠোঁট দিয়ে ছুঁইয়ে দিতে। কিন্তু এটা কি আদোও ঠিক হবে? ওড়নাটা মাধুর্যেড পাশে রাখতেই ঘুমের ঘোরে অনুভবের হাত চেপে ধরে ফেলে মাধুর্য। প্রশান্তি মাখা হাসি দেয় ঘুমের মাঝে। এই প্রশান্তি মাখা হাসিতে একটু চমকায় অনুভব। কীসে এতো প্রশান্তি তার? অনুভবের হাত ধরে নাকি অনুভবের উপস্থিতি পেয়ে? নাকি দুটোই? এই #অপূর্ণ_প্রেমগাঁথায় পূর্ণতা মিলবে কি কখনো?

মাধুর্যের এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিতেই মাধুর্য নিজের ঠোঁট সরু করে অস্পষ্ট গলায় বলে….
–“এতোবছর পর পেয়েছি আবারও সেই স্পর্শ। সেই ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ নেব না তা কি হয়? দিন ভালোবাসার পরশ।”
ফ্যালফ্যাল করে তাকায় অনুভব। ও কি জেগে আছে? কপালে কয়েকটা ভাঁজ ফেলে বলে….
–“তুমি কি জেগে আছো?”
মাধুর্য আবারও একই প্রলাপ বকে।
–“দিন ভালোবাসার পরশ।”

চলবে……
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here