অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা,২৬,২৭ #The_Mysterious_Love

0
807

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা,২৬,২৭
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৬

হাঁটু ভাঁজ করে বেডে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে মাধুর্য। ঘরে নীল রঙের আলো জ্বলছে টিমটিম করে। রায়মা তাকে ঘরে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। আজ থেকে এটাই মাধুর্যের বাড়ি। আর এটাই তার এবং অনুভবের ঘর। তা ভাবতেই হৃদয়ে এক সূক্ষ্ম আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে। তবে অন্যদিকে এক বড় ধরনের শূন্যতা অনুভব করছে সে। বড় ঘরে নিজেকে বড়ই একা লাগছে মাধুর্যকে। পৃথিবীতে সে খুব একা হয়ে পড়েছে। নিজের বলতে যেন কেউ নেই। যারা আছে আজ তাদের থেকেও বিদায় নিয়ে এই বাড়িতে এসে উঠেছে। পাশে আছে একমাত্র অনুভব। ভয়ে বুকটা ঢিপঢিপ করতে শুরু করে মাধুর্যের। এই মানুষটা সারাজীবন থাকবে তো? নাকি সেও অন্যদের মতো তাকে একা করে চলে যাবে। কবিতার কথা মনে আসতেই চোখজোড়া ভরে ওঠে তার। ওপরের দিকে তাকিয়ে বলে….
–“কেন চলে গেলি কবিতা? তোকে বিরক্ত করতে মানা করতাম সবসময়। তাই বলে সারাজীবনের জন্য এভাবে আমাকে রেখে চলে যাবি? ফিরে আয় না রে।”

বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে মাধুর্যের। হাঁটুতে মাথা লাগিয়ে নিচু হয়ে কাঁদতে শুরু করে। সবটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। তার জীবনে কোনো কিছুই গোছালো নেই। শুধু তাই নয়, তার জীবনে সুখপাখিরও কোনো দেখা নেই। তার খুব ইচ্ছে করল একবার সুখপাখিকে ছুঁয়ে দেখতে। ‘সুখ’ কেমন হয়? খুবই অদ্ভুত আনন্দ হয় বুঝি?
আকাশকুসুম ভাবতে ভাবতে নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব বুঝতে পেরে মাথা তুলে তাকায় মাধুর্য। হুট করে অনুভবকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে সে। অনুভব মাধুর্যের ভেজা গালের ওপর হাত রেখে বলে….
–“শান্ত হও। এটা আমি। ভূত দেখার মতো চমকে গেলে হবে? এরপর থেকে সারাজীবন আমাকে তোমার সঙ্গেই দেখতে হবে।”
মাধুর্য শান্ত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে অনুভবের দিকে। ও চেয়েছিল অনুভব যেন একান্তই তার হয়। কিন্তু এভাবে চায়নি। অনুভব সযত্নে মাধুর্যের চোখের আশেপাশে লেগে থাকা পানি মুছিয়ে দেয়। হুট করে উঠে দাঁড়ায় মাধুর্য। অনুভব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে মাধুর্য ঠিক কি করতে চাইছে। নিচু হয়ে অনুভবের পা ছুঁতেই দুই কদম পিছিয়ে দাঁড়ায় অনুভব। খানিকটা মেজাজ দেখিয়ে বলে….
–“কি করছো?”

মাধুর্য নির্বিকার সুরে উত্তর দেয়…..
–“সালাম করছি। রায়মা মণি বলছিল আপনি এলে পা ধরে সালাম করতে। আমি তো বিয়ের এতসব রীতিনীতি জানি না। মা তো নেই যে বলে দেবে বা শিখিয়ে দেবে। রায়মা মণি যেটুকু বলেছে করছি।”
–“এসব ফালতু নিয়ম পালন করতে হবে না। ওযু করে এসো। এই রাতে নাকি নামাজ পড়তে হয়। নামাজ পড়ব দুজনে।”
মাধুর্য কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ওয়াশরুমে ঢোকে। ওয়াশরুমটা দেখে হা হয়ে যায় সে। ঘরটা তো বড় ছিলই, ওয়াশরুমটাও বড়। বলা চলে তার ঘরের সমান। সামনে ইয়া বড় আয়না, আয়নার সামনে বেসিন, গোসলের জায়গা কাঁচ দিয়ে আলাদা করা। কাঁচের দরজা দিয়ে গোসলের জায়গায় ঢুকতে হবে। ঘুরে ঘুরে সব দেখে নিতেই দরজায় টোকা পড়ে। মাধুর্য গিয়ে হালকা করে দরজা খুলতেই অনুভবের গম্ভীর গলা ভেসে আসে।
–“শাড়ি, জামা, টাওয়াল কিছুই তো নিয়ে যাওনি। ফ্রেশ হয়ে কি পড়বে?”
মাধুর্য চিন্তায় পড়ে যায়। সত্যি তো! কি পড়বে সে? আসার সময় তো কিছু আনে নি। তৎক্ষনাৎ দরজার ফাঁক দিয়ে মেরুন রঙের শাড়ি এগিয়ে দেয় অনুভব। শাড়ির সঙ্গে যাবতীয় সবই আছে।
–“মণির কাছ থেকে নিয়ে এসেছি। চেঞ্জ করে নাও।”

মাধুর্য সব নিজের হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগে, মানুষটা চমৎকার। তার জন্য কত ভাবনা তার! একটু মেজাজ দেখায় কিন্তু সেই মেজাজের মাঝেও ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে যেন।
মাধুর্য ফ্রেশ হয়ে নিয়ে বাইরে বের হলে বেডে হাতে ভর দিয়ে বসে থাকা অনুভব ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়। মেরুন রঙে মোড়ানো সুন্দর মেয়েটিকে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় তার। তার বড় বড় চোখজোড়া কাঁদার কারণে ফুলে গেছে, আর নাকের ডগা হালকা লাল। নীল আলোতে সবটা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছে অনুভব। এই মেয়েটা আজ থেকে শুধুমাত্রই তার ভাবতেই তার হার্টবিট মিস হয়ে যায়। অনুভবের এমন দৃষ্টি দেখে গলা খাঁকারি দেয় মাধুর্য। অনুভব দৃষ্টি সরিয়ে দ্রুতই চলে আসে ওয়াশরুমে। চোখের পলকে বাতাস অনুভব করাতে মাধুর্য বুঝতে পারে অনুভব ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়েছে। ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করে সে। ঘরটা বড় হলেও ঘরে তেমন কিছুই নেই। একটা বেড, পাশে বড় ড্রেসিং টেবিল, একটা সিংগেল সোফা, তার পাশে গোল ছোট একটা টেবিল আর একটা আলমারি। ব্যাস…রুমের বেশির ভাগ অংশই ফাঁকা। রুমে একটা ছবিও নেই। বড়ই অদ্ভুত। ঘুরে দেখতে দেখতে অনুভব ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আলতো হেসে ইশারা করে নামাজের জন্য।

দুজনে নামাজ সেড়ে নেয়। মাধুর্যের মুখ এখনো ভার। নামাজ পড়ে বেডে বসে পড়ে মাধুর্য। আঁড়চোখে তাকায় অনুভবের দিকে। মানুষটা কি এখন তার সঙ্গেই ঘুমাবে। নিজের ভাবনার ওপর নিজেই বাড়ি দেয় মাধুর্য। অনুভব এখন তার স্বামী। তার সঙ্গেই তো ঘুমাবে। কিন্তু রাতে যদি তার রক্তের প্রতি নেশা বাড়ে তখন কি হবে? সে কি অনুভবকে আঘাত করে বসতে পারে?
আগপাছ ভাবতেই অনুভব তার সামনে একটা চুটকি বাজায়। আমতা আমতা করে তাকায় মাধুর্য। অনুভব তাকে প্রশ্ন করে…..
–“আমার সঙ্গে ঘুমোতে পারবে কি না সেই নিয়ে চিন্তা করছো তাই তো?”
মাধুর্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। জবাবে কিছু না বলতেই অনুভব আবার বলে….
–“ঠিক আছে তুমি যদি কমফোর্টেবল ফিল না করো তাহলে ওকে। আমি বাইরে যাচ্ছি।”
কথাটুকু বলে বাইরের দিকে পা বাড়ায় অনুভব। নিজের হাতে টান অনুভব করে সে। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মাধুর্য আকুলতা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। সে ঢক গিলে বলে….
–“আপনি আমার সঙ্গেই থাকুন। আমি আবারও একা হয়ে যাব।”
অনুভব আলতো করে হাসে। মাধুর্যের পাশে বসতেই মাধুর্য তার কোলে মাথা রাখে।

অনুভব অবাক হলেও তার মনে খুশি বিরাজ করে। মাধুর্য তাকে মেনে নিয়েছে। এই মেয়েটাকে সে আর হারাতে দেবে না। নিজের #অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা কে পূর্ণ করবে। নিজের বুকের পিঞ্জিরা তে সযত্নে রেখে দেবে।
–“আপনার কোলে মাথা রাখি কিছুক্ষণের জন্য?”
বাচ্চাদের মতো করে আবদার করে মাধুর্য। অনুভব শীতল গলায় জবাব দেয়….
–“প্রশ্ন কেন করছো? যখন তোমার সামনে থাকা পুরো মানুষটাই তোমার?”
অনুভবের কথাগুলো মাধুর্যের হৃদয়ে গিয়ে করাঘাত করে। না চাইতেও হাজারো কষ্টের মাঝে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। এতোকিছুর মাঝেও এই মানুষটা তো ওরই। আরো ভালো করে মাথা রাখে অনুভবের কোলে মাধুর্য। প্রিয় মানুষটার সংস্পর্শে চোখ বন্ধ হয়ে আসে ওর। অনুভব নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় মাধুর্যের মাথায়। চুলের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বিলি কেটে দিতে থাকে।
–“জানেন, শুনেছি প্রিয় মানুষের কোলে মাথা রাখলে কষ্টের ভার কমে যায়।”
–“জানি। তোমার থেকে শুনেছি।”

মুখ ফসকে বলে ফেলে অনুভব। মাধুর্য ভ্রু কুঁচকে মাথা সোজা করে তাকায়। এমন কোনো কথা বলেছে সে কখনো সেটা মনে করতে পারছে না সে। পারবেই বা কি করে? মাধুর্য যেদিন কথাটি বলেছিল সেদিন সে ঘুমন্ত অবস্থার ছিল।
–“কবে বলেছি আপনাকে এই কথা?”
–“বলেছো একদিন। তবে আমাকে যে তুমি প্রিয় মানুষের তালিকায় রেখেছো ভাবতে মনটা খুশি খুশি হয়ে আসছে।”
–“অনেক আগেই রেখে দিয়েছিলাম। বলার সুযোগ হয়নি।”
লাজুক চোখে অনুভবের কোলে মুখ গুঁজে দিয়ে মিনমিন করে বলে মাধুর্য। তবে তার কথা শুনতে একটুও ভুল করে না অনুভব। সে প্রতিত্তোরে সুন্দর হাসি দেয় তাও নিঃশব্দে। মেয়েটাকে লজ্জা দিতে চায় না এই মূহুর্তে। কিছুক্ষণ দুজনেই নীরব থেকে তাদের মূহুর্ত উপভোগ করে। এই মূহুর্তটা সব থেকে বেশি উপভোগ করছে মাধুর্য। এই মূহুর্ত কি এখানেই থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়? ঝট করে সে বলে….
–“কবিতাকে কে খুন করল অনুভব?”
মাথা নিচু করে তাকায় অনুভব। তার টাওজার ভেদ করে ভিজে যাচ্ছে মাধুর্যের চোখে পানি।

–“জানি না কে করেছে। তবে যে করেছে সে অবশ্যই একদিন তার প্রতিদান পাবে। ‘রিভেঞ্জ ওফ নেচার’ বলে একটা কথা আছে। এই রিভেঞ্জ তো নেচার নেবেই নেবে।”
শেষ কথাটি বেশ তীক্ষ্ণ ভাবে বলে ওঠে অনুভব। মাধুর্য আর কিছু বলতে পারে না। আরো বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে…..
–“সবাই আমাকে একা করে দিয়ে যায় কেন বলুন তো? প্রথমে মা-বাবা তারপর মামা এখন কবিতা। এরা কেন আমার সঙ্গে এমন করল? বলতে পারেন?”
মাধুর্যের বলার প্রতিটা শব্দে অভিমান স্পষ্ট। যারা চলে গেছে তারা রেখে গেছে মাধুর্যের মনে একরাশ অভিমান। যেই অভিমান মানানোর জন্য বোধহয় অনুভবই রয়েছে একমাত্র। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে অনুভব কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাধুর্য নিজের হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে….
–“আমি আর কাউকে হারাতে চাই না। আর আপনাকে তো কখনোই না। অন্যদের মতো আপনিও আমার সঙ্গে ছলনা করে চলে যাবেন না বলুন।”

অনুভব কয়েক সেকেন্ড পর মাধুর্যের হাতে হাত রাখে। মাধুর্য হৃদয় শীতলতায় ভরে যায়।
–“আমার ওপর শুধু একটুখানি বিশ্বাস রাখো। কখনো ছলনা করব না। হারিয়ে যাওয়া তো অনেক দূর।”
মাধুর্য নিশ্চিন্ত হয়ে হাসে। একসময় অনুভবের হাত জড়িয়েই ঘুমে ঢলে পড়ে সে। অনুভব তার নীল চোখজোড়া সরাতে পারে না তার অর্ধাঙ্গিনীর থেকে। মেরুন রঙের শাড়ির আঁচল মাথার ওপর দিয়ে আছে সে। মুখটা শুকিয়ে গেছে তবে স্নিগ্ধতা মোটেও কমেনি। এ দেখা যেন শেষ হবার নয়।
–“যতই দেখব দেখবার তৃষ্ণা ততই বাড়বে।”
হালকা নিচু হয়ে মাধুর্যের কপালে গভীর চুমু এঁকে দেয় অনুভব। খুব সাবধানে তার গালে-মুখেও ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। বালিশ এগিয়ে এনে শুইয়ে দেয় মাধুর্যকে। বেড থেকে নেমে এসে জানালার পাশে দাঁড়ায় সে। ঠোঁটের কোণে হাত বুলাতে বুলাতে খুঁজতে থাকে নানান প্রশ্নের উত্তর। আজকের সকল ঘটনা কেমন জানি রহস্য হয়ে গেল। নিজের প্রশ্নগুলো নিজে নিজে আওড়াতে শুরু করে অনুভব।
–“কবিতাকে কে মারল? ওর গায়ে যত আঘাত সেসব কোনো মানুষ করতে পারে না। তিনটে নখের আঘাত ছিল। ভ্যাম্পায়ার হলে অন্তত চারটে নখের আঘাত থাকা উচিত ছিল। কারণ ভ্যাম্পায়ারের পাঁচটা আঙ্গুলই থাকে মানুষের মতো। আঘাত করলে বৃদ্ধা আঙ্গুল ছাড়া চারটা আঙ্গুলের দাগই থাকবে। তিনটে নখ তো ওয়ারওল্ফের থাকে। তাহলে আমি যা ভাবছি তা কি সঠিক?”

সবটা ভেবেও এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কবিতাকে ওয়ারওল্ফেরা ভাবনা ভাবল কেন? ওরা কবিতার মাঝে কি এমন দেখল যে ওকে ভাবনা ধরে নিল? চোখ বন্ধ করে নিল অনুভব। নিখুঁত ভাবে ভাবতে থাকল আগের সব ঘটনা। সেদিন হসপিটালের ঘটনাতে গিয়ে থমকে যায় ও। সেদিন কবিতা সবুজ লেন্স পড়েছিল। আর অনুভবের সাথে ওর বিয়েটাও তো ঠিক হয়েছে। বাই এনি চান্স এই বিয়ের খবর ওয়ারওল্ফের কাছে পৌঁছায় নি তো? তৎক্ষনাৎ অনুভব চোখে খোলে।
–“ওহ নো! তার মানে কি অরুণই শেষমেশ কবিতার মতো নির্দোষ মেয়ের খুন করল? যদি তাই হয় তাহলে এর দাম ওকে দিতে হবে। অনেক বড় মূল্য চুকাতে হবে ওয়ারওল্ফ প্রিন্স অরুণ!”
অনেক রাতে মাধুর্যের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে অনুভব।

সকালে…..
ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে অনুভব। চোখ ডলতে ডলতে ঘড়ির দিকে তাকায় সে। আজ কবিতার শেষকার্যে উপস্থিত থাকতে হবে। প্রায় আটটা বাজে। মুহূর্তের মাঝে আড়মোড়া ভেঙে সাদা টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে সে। চোখ থেকে ঘুম নামক জিনিসটি এখনো পুরোপুরি যায়নি। সেকারণে তার খেয়ালই নেই ওয়াশরুমে পানির পড়ার আওয়াজ আসছে। ওয়াশরুমে মাধুর্য শাওয়ার নিচ্ছে। দরজাটা লক করেনি মাধুর্য। করেনি বললে ভুল হবে। করতে পারেনি। দরজার লকটা অন্যরকম ছিল। যা সে আগে কখনো দেখেনি। অনুভবের উঠতে দেরি হবে ভেবে নিজের লক না করেই শাওয়ার নেয় মাধুর্য।
অনুভব দরজা খোলা পেয়ে আরো সিউর হয়ে যায় সেখানে কেউই নেই। বেসিনের সামনের গিয়ে ব্রাশ হাতে নিয়ে পেস্ট ভরিয়ে নেয় অনুভব। যেই ব্রাশ মুখের মাঝে নিতে যাবে তখনই চোখ কপালে ঐঠে যায় ওর। বাম দিকে কাঁচের ভেতরে শাওয়ার নিচ্ছে মাধুর্য। কাঁচের ভেতরে সবটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শাড়িটা ওর গায়ে লেপ্টে গিয়েছে। চুলগুলো বার বার নাড়াচ্ছে সে। হাত থেকে ব্রাশ পড়ে যায় অনুভবের। দুই পা পিছাতেই পিছলে পড়ে যায় পানি ভর্তি বাথটাবে। পানির থইথই শব্দে পেছন ফিরে তাকায় মাধুর্য। সঙ্গে সঙ্গে থ মেরে যায় সে।

চলবে…..??
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৭
অনুভব কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিল মাধুর্যও রয়েছে তার ঘরে এবং তার সঙ্গে। কপাল কুঁচকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকে অনুভব। মাধুর্য বেশ লজ্জায় পড়ে গেছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তবে অনুভবের কোনো হেলদোল নেই। আধশোয়া হয়ে বাথটাবে। নীল এবং ঘায়েল করা চোখজোড়া মাধুর্যের ওপর স্থির। কপালের ওপর ভিজে চুলগুলো নেতিয়ে পড়েছে। মাধুর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বুঝতে পারে মানুষটা বোধহয় ব্যাথা পেয়েছে। তড়িঘড়ি করে কাঁচের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে বাইরে। তার ভিজে চুলগুলো লেপ্টে গালের সঙ্গে লেগে আছে। চোখের পাতা আলতো নড়ছে, চুল থেকে পানিগুলো মাধুর্যের রক্তের মতো লাল চিকন ঠোঁটজোড়াকে ছুঁইয়ে দিচ্ছে। গলার ভেতরের হার একবার উঁচু একবার নিচু হচ্ছে সেখানে থাকা ফোঁটা ফোঁটা পানি চিকচিক করছে। অনুভব বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে দৃশ্যগুলো। তার চোখ এবং মন মেতে উঠছে তার প্রেয়সীকে এই রুপে দেখতে। মাধুর্য এসে অনুভবকে বেশ ধীর গলায় ডাকে…..
–“অনুভব।”
অনুভবের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে নেই। মাধুর্য মাঝে মাঝে কি জাদু করে তার ওপর সে নিজেও জানে না। ও সেভাবেই থেকে ছোট্ট করে উত্তর দেয়….
–“হু??”

–“আপনার বোধহয় খুব লেগেছে তাই না?”
–“হু।”
–“উঠে আসুন।”
হাত বাড়িয়ে দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে বলে মাধুর্য। অনুভব আগের ন্যায় বলে ওঠে….
–“হু।”
মাধুর্য এবার বিরক্ত হয়ে গেল। লোকটা বার বার ‘হু হু’ বলে কি বোঝাতে চাইছে? সে ভালো করে খেয়াল করে দেখে অনুভব বিমোহিত দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। গলা শুকিয়ে গেল মাধুর্যের। নিজেকে সামলে শুকনো কাশি দিয়ে খানিকটা গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বলল….
–“অনুভব আপনার ব্যাথা লাগেনি??”
চমকে চোখ বন্ধ করে মাথা এপাশ-ওপাশ ঝাঁকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আচমকা উত্তর দেয়….
–“হ্যাঁ লেগেছে তো। খুব লেগেছে ঠিক এখানে।”
সরাসরি নিজের ভিজে হাত বুকের বা পাশে রেখে বলে অনুভব। লজ্জায় বিষম খায় মাধুর্য। ঘনঘন চোখের পাতা ফেলে তাকায় সে। এখন কি মাটির নিচে ঢুকে যাওয়া সম্ভব? অনুভব মাধুর্যের অবস্থা দেখে নিজের ভিজে চুলে হাত দিয়ে এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে বলে….
–“এই ব্যাথার কি কোনো মেডিসিন হবে?”

মাধুর্য তাৎক্ষণিক বলে ওঠে….
–“জ্বি?”
–“ডক্টর ম্যামের কাছে মেসিডিন অবশ্যই আছে। বাট সে দিতে চাচ্ছে না। দ্যাটস নট ফেয়ার।”
বাথটাব থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আলতো হেসে বলে অনুভব। মাধুর্য চোখ ছোট ছোট করে বলে….
–“আমার কাছে?”
–“হুমম তোমার কাছে।”
মাধুর্য কিছু বলতে চাইতেই বাইরে থেকে রায়মার গলার আওয়াজ ভেসে আসে।
–“অনুভব, মাধুর্য? ওয়াশরুমে কে গেছো?”
অনুভব ও মাধুর্য দুজন দুজনের দিকে তাকায়। মাধুর্য ভাবে অনুভব হয়ত চুপ করে থাকবে তাই সে জবাব দেয়….
–“আমি আছি।”
দুর্ভাগ্যবশত সে জবাব একা দেয় না। অনুভবও সঙ্গে সঙ্গে মুখ খুলে একই কথা বলে ওঠে। সে ভেবেছিল মাধুর্য হয়ত জবাব দেবে না। কথাটা বলা শেষে দুজনেই দুজনের দিকে তাকায় চোখ বড় বড় করে।
–“আপনি কেন জবাব দিলেন? আমরা দুজন একসাথে ওয়াশরুমে আছি ব্যাপারটা উনি কিভাবে নেবেন এখন?”
–“তোমাকে কে জবাব দিতে বলেছিল? তুমি ইচ্ছে করে দিয়েছো।”

মাধুর্য লজ্জায় নখ কামড়াতে শুরু করে। রায়মা বাইরে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে। গলা খাঁকারি পরিষ্কার ভাবে বলে…..
–“সরি তোমাদের ডিস্টার্ব করার আমার কোনো ইচ্ছে ছিল না। আমি তো এসেছিলাম এটা বলতে যে, বাইরে সবাই তৈরি হয়ে গেছে। খেয়েদেয়ে কবিতার শেষকার্য সম্পন্ন করতে বের হবে। তোমরাও এসো।”
হাসতে হাসতে দ্রুত বেরিয়ে গেল রায়মা। ওয়াশরুমে মাধুর্য লজ্জায় স্ট্রবেরি আকার ধারণ করল। রায়মা মণি কি না কিই ভাবল তাদের নামে? বিরবির করে বলল….
–“সব আপনার জন্য। সব আপনার জন্য।”
এক হাত দিয়ে নিজের অর্ধেক মুখ থেকে মাথা নাড়াতে থাকে মাধুর্য। তার গালে এক উষ্ণ স্পর্শে হাত নামায় সে। অনুভব ভিজে ঠোঁটে মাধুর্যের গাল স্পর্শ করেছে। নিজের শাড়ি খামচে ধরে মাধুর্য। ঠোঁট সরিয়ে মাধুর্যের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে সে। হাসি থামিয়ে ফিসফিস করে বলে….
–“বলেছিলাম, আই লাইক স্ট্রবেরি। সেদিন স্ট্রবেরি খেতে পারিনি। কারণ তাতে তখনও লিগাল অধিকার ছিল না। আজ অধিকার আছে। অধিকার থাকতে বঞ্চিত হবো কেন বলো?”

শ্বাস আটকে যাওয়ার পরিক্রম হয় মাধুর্যের। বাম পাশে কেউ ইচ্ছেমতো হাতুড়ি পিটিয়ে চলেছে। অনুভব চোখ টিপ দিয়ে দ্রুত বিদায় নেয়। মাধুর্য যেন এবার শ্বাস নিতে সক্ষম হয়। লোকটার সামনে শ্বাস নেওয়াও দায় হয়ে পড়েছিল!
শাওয়ার নেওয়া শেষে ওরা দ্রুত রেডি হয়ে পড়ে। রুম থেকে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়ে। নিচে যেতেই আরো কয়েক পাহাড় সমান লজ্জা ভর করে মাধুর্যের। নতুন বউ এতো দেরি করে উঠেছে ব্যাপারটা বেশ লজ্জার। আজ যেন লজ্জার দিন। সারা রাজ্যের লজ্জা শুধু মাধুর্যেরই লাগছে। পা টিপে টিপে নিচে নেমে খাওয়ার টেবিলের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ায় মাধুর্য। অনুভব তাকে ইশারা করে খেতে বসতে। মাধুর্য খেতে বসে না। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। প্রণয় বিষয়টা খেয়াল করে বলে ওঠে….
–“মাধুর্য, দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।”
রায়মা বিষয়টি লক্ষ্য করে সেও হাসি হাসি মুখ করে বলে…..
–“শোনো মাধুর্য, আমাদের বাড়িতে নতুন বউয়ের জন্য এতো ফর্মালিটি বা নিয়ম নেই। তুমি বসে পড়ো। দেরিতে উঠলেও কোনো ক্ষতি নেই। বাড়িতে কোনো কাজ নেই। সব কাজ করার জন্য লোক আছে।”
মাধুর্য এবার সায় দিয়ে বসে পড়ে সবার সাথে। অল্প করে খেয়ে সবাই বেরিয়ে পড়ে কবিতার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

মাথায় কাপড় দিয়ে এক ধ্যানে বসে আছে সামিহা। সবাই শোক পালন করছে। কান্নাকাটি করবার মানুষের অভাব নেই। সব থেকে বেশি ভেঙে পড়েছে কবিতার মা। উনার মুখে বার বার একটাই কথা…
–“আমি একা হয়ে গেলাম। কবিতা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমাকে একা করে রেখে চলে গেল।”
উনি পাগলের মতো কেঁদে চলেছেন। সামিহা চেয়েও সামলাতে পারছে না। কি বলে সামলাবে। নিজের সন্তান হারানোর কষ্ট তো সে জানে না আবার অনুভবও করতে পারে না। না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সামিহা। কবিতার লাশ নিয়ে যাওয়ার হয়েছে কবর দেওয়ার জন্য। এতোক্ষণে হয়ত কবিতাকে মাটির নিচে রেখেও দেওয়া হয়ে গেছে। অথচ তাকে কে মারল তা এখনো ধোঁয়াশা। এই রহস্যময় জগতে কখন কার মৃত্যু কার হাতে তা একমাত্র নির্ধারণ করেন সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং। গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে সামিহা গিয়ে পৌঁছায় পাশের ঘরে। মাধুর্য একধ্যানে বসে থেকে কিছু একটা বিরবির করছে। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে সামিহা বলে….
–“কি বলছিস একা একা?”
–“কিছু না সামিহা আপু। ব্যাস ভাবছি কবিতা ভাবনা বলতে কাকে বোঝাতে চাইলো।”

–“ওকে কে মারল তাও তো স্পষ্ট নয়।”
–“হয়ত। তবে একটা কথা জানো, ভাবনা নামটা মনে হয় আমি আগেও কোথাি শুনেছি। নামটা যখন কবিতা আমাকে বলেছিল এক অদ্ভুত অনুভূতি এসে আমার মনের মাঝে আঁচড়ে পড়েছিল। কিন্তু এঔ অদ্ভুত অনুভূতি কেন হলো তার উত্তর আমি এখনো অবধি পাইনি।”
সামিহা শুধু শোনে। উত্তরে কিছু বলে না। জানালা দিয়ে দেখতে পায় ছেলেরা আসছে। বুঝতে পারে কবিতার শেষ কাজ সম্পাদন করা হয়ে গিয়েছে। তাকে আর দেখতে পাওয়া যাবে না। তার হাসিমাখা মুখে কথার পপকর্ন ফুটবে না। বলবে না দম ফাটানো হাসির কথা! কথাগুলো ভাবতে ভাবতে তার চোখ যায় গতকাল দেখা হওয়া সেই চরম লেভেলের অসভ্য ছেলেটার দিকে। জোহান চশমা ঠিক করতে করতে অনুভবের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আসছে। দেখেই একটা মুখ ভেংচি দেয় সামিহা। বিরবির করে বলে….
–“আহা! মুখে কত সুন্দর একটা ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে থাকে। অথচ আসলে একটা ফাজিলের হেড মাস্টার।”

বিরবির করতে করতে সে মাধুর্যকেই প্রশ্ন করে….
–“আচ্ছা মাধুর্য, অনুভব কি সব ফাজিল ছেলেদের সাথে চলাফেরা করে নাকি রে?”
মাধুর্য হঠাৎ প্রশ্নটা শুনে ভ্রু কুঁচকায়। উঠে এসে সামিহার পাশে দাঁড়িয়ে বলে….
–“হঠাৎ এই কথা?”
–“ওইযে অনুভবের সঙ্গে যেই ছেলেটাকে দেখছিস সেই ছেলেটা একটা চরম মাপের বেয়াদব জানিস?” (ইশারা করে দেখিয়ে)
মাধুর্য সামিহার ইশারা অনুযায়ী তাকায়। জোহানকে দেখে স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়….
–“কি বলছো! জোহান ভাইয়া তো ভালোই ছেলে শুধু একটু মজা করে বেশি।”
–“মজা না ছাই। কোনো ম্যানার্স বলতে কিছু নেই। কপাল খারাপ ছিল তাই লোকটার সঙ্গে ধাক্কা লেগেছিল উনার ক্যামেরার দফারফা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি তো ইচ্ছে করে ধাক্কা দিইনি। উনি সরাসরি টাকা চেয়ে বসল। ভাবা যায়?” (গোমরা মুখে)
মাধুর্যের শুকনো হাসি বিহীন মুখে হাসির রেখা ফোটে। সামিহা আবারও বলে….
–“শুধু কি তাই? বলে কি না আমার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নাকি মজা নেই। সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার মজাই আলাদা। হুহ।”
মাধুর্য এবার ফিক করে হেসেই দেয়। সামিহা মুখ বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

কবিতার বাড়ি থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল গড়িয়ে যায়। মাধুর্যের মন আবারও খারাপ হয়ে গিয়েছে কবিতার বাড়ি যাবার পর থেকে। সে ভাবতে থাকে তার আর কবিতার পুরোনো স্মৃতি।
–“আচ্ছা মাধু শোন, আজকে আমি ফেসবুকে পোস্ট দেখেছি জানিস? সেখানে লিখা ছিল, বিয়ে হয়ে যাবার পর নয় বছর পুরোনো বেস্টফ্রেন্ড ভুলে গিয়ে এখন একটা খবর অবধি নেয় না।”
অসহায় মুখ করে বলে কবিতা। কবিতার হাবভাব দেখে ভ্রু উঁচিয়ে ক্ষীণ চোখে তাকায় মাধুর্য। কবিতার মুখ দেখে মনে হচ্ছে বিষয়টা ওর সঙ্গেই ঘটেছে। অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে ফিচেল গলায় বলে ফেলে….
–“তাতে কি হয়েছে? সেটা ওদের ব্যাপার। আমার কি?”
–“তোর কি মানে? দেখ মাধু, তোর সঙ্গে আমার ছোটবেলার বন্ধুত্ব তুই কিন্তু আমাকে ভুলে যাবি না বিয়ে হলে। ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তোর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জ্বালিয়ে আসব। তোকে ভুলতে দেব না।”
কবিতার কথাগুলোতে বাচ্চাদের আবদার খুঁজে পায় মাধুর্য। একমনে তাকিয়ে হেসে দেয় সে। কবিতা তাকে জাপ্টে ধরে বলে….
–“বুড়ি হয়ে মরলে এক সঙ্গে মরব বুঝলি। বুড়ি হলে তুই আমার পাকা চুলে তেল লাগিয়ে দিবি। আমি তোর পাকা চুল তুলে দেব। মনে থাকে যেন!”

কল্পনায় কবিতার কথাগুলো ভেবে ভেবে মিটিমিটি হাসতে হাসতে মুখ ভার হয়ে আসে মাধুর্যের। কষ্টমাখা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে….
–“নিজের কথা তুই নিজেই রাখলি না। বুড়ি হলে আমার পাকা চুলে নাকি তেল লাগিয়ে দিবি। কোথায় গেল তোর ওসব দেওয়া কথা। বেইমানের বেইমান কোথাকার!”
অনুভব নেই বলে একা একা সন্ধ্যেটা কাটিয়ে দেয় মাধুর্য। রাত করে বাড়িতে অনুভব। তার হাতে একগুচ্ছ লাল টকটকে গোলাপ। গোলাপের সুভাস যে কাউকে পাগল করে দিতে সক্ষম হয়। এই গোলাপ ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের। তাই এর সুভাস আলাদা। যে কাউকে সম্মোহিত করে ফেলতে পারে এটি। অনুভব একবার গোলাপের সুভাস নিয়ে মুচকি হেসে ওপরে উঠে যেতে থাকে। আজ সে জানাবে তার না বলা কথাগুলো মাধুর্যকে। যেই কথা বলার আগেই এক বিরাট বড় দেওয়াল উঠে গেছিল তাদের মাঝে সেসব কথা প্রকাশ করবে অনুভব। নতুন করে নিজের ভালোবাসা নিবেদন করবে মাধুর্যের কাছে। ভালোবাসার এক রুপ দিতে চায় সে।

দরজা আলতো ফাঁক করতেই তার চোখজোড়া যায় সিঙ্গেল বড় সোফার দিকে। যেখানে চোখ বন্ধ করে বসে আছে মাধুর্য। সেই সঙ্গে গোল টেবিলে রয়েছে খাবারের প্লেট। বসে বসে অনুভবের জন্যই অপেক্ষা করছিল সে। পায়ের আওয়াজ পেয়ে আধো আধো চোখ খুলে তাকায় মাধুর্য। অনুভবকে দেখে বলে….
–“আপনি এসেছেন? আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
–“হুমম। বেশ রাত হয়েছে খাওনি এখনো?”
মাধুর্য মাথা নাড়ায়। অনুভব নিজের হাত সামনে নিয়ে আসে। তার গোলাপগুচ্ছ বাইরে রেখে এসেছে দরজার কাছে ফুলদানির ওপর। এগিয়ে এসে বলে….
–“আমাকে ছাড়া খেতে ইচ্ছে করছিল না বুঝি?”
মাধুর্য কিছু না বলে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকে। অনুভব চুটকি বাজিয়েই চোখের পলকে ওয়াশরুমে ঢোকে। মিনিট পাঁচেক পরেই বেরিয়ে এসে মাধুর্যের সামনে খাবার তুলে ধরে ও। অনুভবকে দেখে মিষ্টি হাসে ও। হা করে খাবার মুখে তুলে অনুভবকেও খাইয়ে দেয় সে।

খাওয়া শেষে মাধুর্য বিছানায় বসে পড়ে। রাত অনেক হলো। তার তৃষ্ণাও পাচ্ছে। বুঝতে পারছে এটা হয়ত রক্তের প্রতি তৃষ্ণা। চিন্তাই পড়ে যায় মাধুর্য। এই তৃষ্ণা কি করে মেটাবে সে। এরই মাঝে বাইরে থেকে হাওয়ার বেগে এসে তার সামনে দাঁড়ায় অনুভব। হালকা চমকে সামনে তাকাতেই অনুভব এগিয়ে দেয় তার কাছে গোলাপের ফুলগুলো। মাধুর্য মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে। সাধারণ গোলাপের মতো মটেই নয় এগুলো। এক অদ্ভুত ও গোপন সৌন্দর্য রয়েছে এর মাঝে। আঙ্গুল দিয়ে ছুঁতেই অনুভব বলে….
–“বলতে চেয়েছিলাম অনেক আগেই। অদ্ভুত ভাবে আমাদের দেখা হলেও অনুভূতি ছিল বড়ই পরিচিত। এই পরিচিত অনুভূতি চিনতে চিনতে বুঝে ফেললাম আমি এক ভয়ানক রোগে আক্রান্ত। এই রোগের উপশম হওয়া অসম্ভব! তবে রোগের একটি ঔষুধ রয়েছে। যেটা পৃথিবীতে এক পিসই তৈরি হয়েছে। সে হচ্ছে শুধু এবং শুধুমাত্র তুমি। যেদিন বুঝতে পেরেছি তোমাকে ছাড়া আমার একমুহূর্ত চলবে না সেদিন থেকে তোমাকে নিজের করতে পাগলের মতো ছুটে বেড়িয়েছি। এখন বলো, তুমি আমার এই রোগের ঔষুধ হয়ে থাকতে রাজি?”

অনুভবের অদ্ভুত কথাগুলো শুনে মাধুর্যের মনে দোলা লাগে। হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে হয় এক অজানা রাজ্যে এই মানুষটির সাথে। লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে মাথা দুলিয়ে ফুলগুলো নিতে যাবে অনুভব সরিয়ে দেয় ফুলগুলো। একটা একটা করে ফুল খুলে ওপরের দিকে ছুঁড়তে লাগে। সেসব বিছানায় গিয়ে পড়তে শুরু করে। সরু চোখে তাকায় মাধুর্য। অনুভব নিজের হাত মাধুর্যের হাতের সঙ্গে আবদ্ধ করে ওর নাকে নাক ঘষে বলে….
–“ভয় নেই। গোলাপে কাটা নেই।”
মাধুর্যের গালে নিজের গাল মিশিয়ে দেয় অনুভব। মূহুর্তটি উপভোগ করতেই তার মনে আসে সে একজন ভ্যাম্পায়ার। তার ধারণামতে, যেটা অনুভব জানে না। কাঁপতে শুরু করে সে। তার সংস্পর্শে আসলে যদি অনুভবের ক্ষতি হয়? বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চায় অনুভবকে মাধুর্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। অনুভব আজ নিজের এতো বছরের অপেক্ষার ফল চায়। আর সেটা সে নিয়েই ছাড়বে। একসময় তারা খুঁজে নেয় এক অন্য ভালোবাসার রুপ। কাছাকাছি আসতে থাকে তারা। দুটো আত্নার মিলন ঘটে।

রাতে যখন মাধুর্য অনুভবের গায়ের সঙ্গে লেপ্টে ছিল তখন মাধুর্যের ঘুমের মাঝে মনে হলো অনুভব উঠে কোথাও যাচ্ছে। ঘুম ঘুম চোখে তাকায় মাধুর্য। অনুভব সত্যিই ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। একটু খানি অবাক হয় মাধুর্য। উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকায় সে। কিছুক্ষণ বসে থেকে মনে হলো তারও বাইরে যাওয়া উচিত। একটু সন্দেহ সঙ্গে রক্তের প্রতি নেশা বাড়ছে তার। বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে। অনুভবকেই অনুসরণ করে বাইরে যায় মাধুর্য। মাধুর্যকে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে অনুভব যায় বাড়ির বাইরে। নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে মাধুর্যও পিছু নেয় তার।

চলবে…..??
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here