অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা,২৮,২৯

0
709

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা,২৮,২৯
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৮
অনুভবের চলতে চলতে মনে হয় পেছনে কেউ আছে। তার পায়ের ধাপ ফেলার শব্দ কানে আসছে অনুভবের। চলা থামিয়ে শুনতে থাকে পায়ের আওয়াজ। তবে তার থামার সঙ্গে পায়ের আওয়াজটাও থেমে যায়। দ্রুত পেছন ফিরে তাকায় সে। কাউকে দেখতে না পেয়ে তীক্ষ্ণ চোখে আশেপাশে তাকায় অনুভব। তার চোখের রঙ ক্রমশ সবুজ বর্ণ ধারণ করে। জ্বলজ্বল করে তার চোখের মণি। বড় বড় ঘন শ্বাস ফেলছে সে। কাল থেকে একফোঁটা রক্তও তার গলায় পৌঁছে নি। রক্ত পিপাসু জীবের জন্য এটা কতটা ক্ষতিকর সেটা একমাত্র তারাই জানে। আজ রাত রক্ত না পেলে আধমরা হয়ে পড়বে সে। সামনে ফিরে এবার দ্রুত গতিতে হাঁটতে শুরু করে অনুভব। মাধুর্য আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে কপালে ভাঁজ ফেলে বলে….
–“এতো রাতে বাড়ি থেকে কোথায় যাচ্ছেন উনি? আমার কেন মনে হচ্ছে উনি আমার থেকে কিছু একটা লুকোচ্ছেন?”
কথাগুলো বলতে বলতে মাধুর্য লক্ষ্য করে অনুভব বিদ্যুৎ এর গতিতে চলছে। এই কালো অন্ধকার রাতে নিজে জড়োসড়ো হয়ে অনুভবের মতোই দ্রুত হাঁটতে শুরু করে মাধুর্য।

অনেকটা পথ পেরোতেই মাধুর্যের খেয়াল হয় সে জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে। সে চলতে গেলে শুকনো পাতার অদ্ভুত শব্দ তৈরি হচ্ছে। একটা শুকনো ঢোক গিলে তাকায় মাধুর্য। অনুভব এখনো হেঁটেই চলেছে। মাধুর্যও নিজের চলা থামায় না। এক পর্যায়ে সেই রহস্যময় কুয়োর কাছে এসে দাঁড়ায় অনুভব। নিজের চোখমুখের ঘাম মুছে আবারও আশপাশটা লক্ষ্য করে সে। মাধুর্য গাছের আড়ালে লুকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তার চোখ আচমকা খুলে যায় এক বিকট চিৎকারে। পাতা সরিয়ে নিজের চোখজোড়া অনুভবের দিকে দিতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। অনুভবের বড় বড় নখ, ফর্সা শরীরে রগ গুলো বেরিয়ে আসার উপক্রম আর দুইদিকে বড় বড় দাঁত বেরিয়ে গেছে। তার সর্বাঙ্গে কাঁপুনি ধরে যায় স্বামীর এই রুপ থেকে। কাঁপতে কাঁপতে পিছিয়ে যায় সে। নিজের হাতজোড়া সিঁটিয়ে ধরে কম্পিত গলায় বলে….
–“এ…এই রুপ! মানে অনুভব কোনো সাধারণ মানুষ নন। এমন তো আমারও হয়েছিল। উনিও আমার মতো ভ্যাম্পায়ার।”
নিজের চোখজোড়ায় হাত বুলায় মাধুর্য। নিজের চোখজোড়াকেও বিশ্বাস হচ্ছে না তার। বারংবার মনে হচ্ছে চোখ তাকে ধোঁকা দিচ্ছে।

অনুভব পাগলের মতো আচরণ শুরু করেছে।
–“রক্ত। রক্ত চাই। নয়ত আজই আমি শেষ।”
কিছুক্ষণ এদিক ওদিক উম্মাদের মতো হাঁটাহাঁটি করতে থাকে অনুভব। সে চাইলেই রাস্তায় থাকা যেকোনো মানুষের রক্ত এক মূহুর্তে শুষে নিতে পারত। কিন্তু এটাতে ওর অধিকার নেই। কোনো সাধারণ মানুষের প্রাণ নিজ হাত কেঁড়ে নিতে পারে না সে। এটা ভারি অন্যায়। একসময় কুয়োর ভেতর নেমে যায় সে।
তা দেখে বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় মাধুর্য। তার বিস্ময়ের স্তর আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়ায়। তার পা অবশ হয়ে আসছে। না চাইতেও নিজেকে শক্ত করে মাধুর্য। ও আজ এতোটুকু বুঝেছে, ওই কুয়োর নিচে এক আলাদা জগতের সাথে অনুভবের কোনো সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু অনুভবকে এখনো ভুল বোঝে নি মাধুর্য। কারণ অনুভবের মতো সেও নিজের আসল অস্তিত্ব না জানিয়ে অনুভবকে বিয়েটা করেছে। মনে সাহস জুগিয়ে কুয়োর কাছে আসে মাধুর্য। খুব সাহস করে চোখমুখ খিঁচে নেমে পড়ে সে। তার ভরসা অনুভব যখন নামতে পেরেছে সেও পারবে। হলোও তাই। মাধুর্য নিজেকে আবিষ্কার করে এক অন্য রাজ্যে। চোখ খুলে যেন কল্পনার রাজ্য আবিষ্কার করে সে। মাথার ওপর সূর্য উঠেছে। তবে তা মেঘে মুখ লুকিয়ে আছে। যাক ভালোই হয়েছে। নয়ত তার গায়ের চামড়া লাল বর্ণ ধারণ করতো।

পাশেই একটা নদী। যার পানি ঝকঝকে কাঁচের মতো পরিষ্কার। নিচে রঙবেরঙের মাছ সাঁতার কাটছে। সবটাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর দৃশ্য! তার মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে এলো….
–“নদীও এতোটা সুন্দর হয়? এ কোন জগত?”
আশেপাশে তাকিয়ে কয়েকটা গাছপালার আচ্ছাদন আবিষ্কার করে মাধুর্য। গাছগুলোও অদ্ভুত সুন্দর। গাছের সবুজ পাতা চিকচিক করছে। দুটো গাছের ওপর হালকা গোলাপি ফুলগুলো শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে হালকা হাওয়ায় ফুলগুলো নিচে পড়ে সুন্দর একটা ফুলের রাস্তার মতো তৈরি হয়েছে।
–“আচ্ছা প্রথম বার যখন এসেছিলাম তখন রাত ছিল। কিন্তু আমাদের ওখানে দিন ছিল। আর এখন এখানে দিন আর ওখানে রাত। তাহলে কি এটা সত্যিই এক অন্য জগত?”
একপা দুইপা করে এগুতে এগুতে এই প্রশ্নগুলো জাগে মাধুর্যের মনে। হঠাৎ তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার স্বপ্নে আসা মেয়েটি। মাথায় একটা অসহ্যকর ব্যাথা জেগে ওঠে। মাথা ধরে চোখমুখ খিঁচে দাঁড়ায় মাধুর্য। মাথাব্যাথা সইতে না পেরে বসে পড়ে গাছের নিচে। এবার ওই অচেনা মেয়েটার সঙ্গে অনুভবের কিছু কাছাকাছি দৃশ্যও ফুটে উঠছে। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে…..
–“অনুভব! প্রিন্স অনুভব!”

আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগে এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে ভ্যাম্পায়ার গমগম করত। আশেপাশে ছিল সুখ ও খুশির আমেজ। সবার মুখে সবসময়ের জন্য হাসি লেগে থাকত। তাদের খুশির প্রধান কারণ ছিল তাদের কিং প্রলয়ের সকল সিদ্ধান্ত। সব প্রজাকে কি করে ভালো রাখতে হয় উনি তা ভালোমতোই জানতেন। উনার একমাত্র ছেলে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স অনুভব বড় হয় মানুষের জগতে। শুধুমাত্র শিক্ষার জন্য সকল ছেলেমেয়েদের মানুষের জগতে বসবাস করানো শিখানো হতো। অনুভবসহ তার কাজিনরাও তার সঙ্গে মানুষের জগতেই বড় হয়। যারা ছিল প্রণয় এবং রায়মার সন্তান। তাদের দুটো ছেলে ছিল। নাম ছিল ফারহান এবং জীবন।
অন্যদিকে ভাবনা ছিল এক সাধারণ ভ্যাম্পায়ার। নিজের মায়ের সঙ্গে একা বাস করত সে রাজমহলের ঠিক বাইরের কিছু আলিশান ঘরে। তার কারণ ভাবনার বাবা একসময় সেনাপতি ছিলেন। যিনি ওয়ারওল্ফের সঙ্গে যুদ্ধে মারা যান। তারপর থেকে ভাবনা এবং তার মায়ের দায়িত্ব নেয় কিং প্রলয় নিজেই। ভাবনার সৌন্দর্য ছিল এমনই যা বর্ণনা করতে গেলেও বোধহয় শেষ হবার নয়। অনেকে তো তার সৌন্দর্য দেখার পর বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে এক দেখাতেই। কিন্তু তার মা রাজি হন নি। এতো তাড়াতাড়ি নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে চান না উনি। কারণ উনার মেয়ে ছাড়া কেউ নেই।

এভাবেই চলছিল দিন। একদিন হুট করেই প্রিন্স অনুভব সহ তার বন্ধুবান্ধব এবং ভাইদের প্রবেশ ঘটে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে। মুখরিত হয়ে ওঠে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য। অনুভবের মা ভ্যাম্পায়ার কুইন ইরিনা এবং তার বাবা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছেলের আগমনে। রাজ্যের প্রায় সকলে ছুটে আসে প্রিন্স অনুভবকে দেখতে। সেদিন বিকেলে একা ঘোড়া নিয়ে বের হয় অনুভব। এতোদিন পর নিজের রাজ্যে ফিরেছে আর আশপাশটা দেখবে না তা কি কখনো হয়?
ঘোড়া এক জায়গায় এসে থামিয়ে দেয় অনুভব। নিচে নেমে পড়ে সে। সামনেই রয়েছে নদী। নদীর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শনশন বাতাস অনুভব করে সে। জায়গাটাই প্রচন্ড হাওয়া দিচ্ছে। নিচে নানানরকম মাছ দেখে হালকা নিচু হয়ে পানি ছুঁইয়ে দেয় অনুভব। এই নীল চোখজোড়ার জন্য সবার চেয়ে আলাদা সে। তার এই নীল চোখজোড়া ঘায়েল করতে সক্ষম রাজ্যের মেয়েদের। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে অনেকে এই প্রিন্স কে বিয়ে করতে। কিন্তু কাউকেই মনে ধরে না অনুভবের। এখানে আসার পর পরই তার মা বেশ জেদ শুরু করেছে বিয়ে দেওয়ার জন্য। বয়স তো ছেলের কম হয়নি। ২৭ পেরিয়ে ২৮ বছর হয়েছে তার। এবার ছেলের বিয়ে না দিয়ে কিছুতেই দমবেন না কুইন ইরিনা।

কালকে বেশ কয়েকজন মেয়েদের ডাকা হয়েছে। অনুভবের যাকে মনে ধরবে তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় এঁটেছেন কুইন ইরিনা। অনুভব বিরক্তির শব্দ করে পানিতে হাত দিয়ে দূটে ছিটিয়ে দেয়।
–“মা যে কি করে! হুটহাট করে যাকেতাকে কি করে বিয়ে করি?”
থম মেরে কিছুক্ষণ বসে থাকতেই তার কানে আসে একটা হাসির আওয়াজ। চোখজোড়া নদীর স্রোতের দিকে স্থির করে কান পেতে শোনে হাসির শব্দটা। মন মাতিয়ে ফেলছে সেই হাসির আওয়াজ। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার। হৃদয়ে খেলে যায় উথাল-পাতাল ঢেউ। একটা মেয়ে খিলখিল করে হাসছে। হুঁশে ফিরে এসে সোজা হয়ে দাঁড়ায় অনুভব। মনে মনে ভাবতে থাকে কোথা থেকে আসছে এই হাসির আওয়াজ? আওয়াজে অনুসরণ করে এগিয়ে আসে অনুভব। গাছপালার আচ্ছাদন থেকে বেরিয়ে আসতেই আবিষ্কার করে ফুল লতাপাতায় ঘেরা এক অসম্ভব সুন্দর বাগান। চোখ ধাঁধিয়ে যায় তার।
–“এই বাগান তো আগে কখনো দেখিনি। এখান থেকেই আসছে সেই হাসির আওয়াজ। যা আমাকে অস্থির করে তুলেছে।”

বাগানের সামনে ঘাসের মতো গেট দিয়ে ভিড়িয়ে দেওয়া। এককথায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ! প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে অনুভব ঘাসের গেট খুলে ভেতরে আসে। কয়েকধাপ হাঁটতেই শুনতে পায় গুনগুন গানের আওয়াজ। যেই আওয়াজ অনুভবের কানে নয় হৃদয়ে গিয়ে করাঘাত করে। সামনে তাকাতেই একটি মেয়েকে দেখতে পায় সে। হালকা গোলাপি রঙের লম্বা ড্রেস পড়ে আছে সে। নিচে মাটিতে তার জামার অনেকাংশই লুটিয়ে আছে। হালকা লাল রঙের মন মাতানো তার চুলের রঙ। রিনরিনে মিষ্টি কন্ঠ। অনুভবের ভেতরে বাসনা জাগে সামনে থেকে মেয়েটাকে দেখতে। কে সেই মেয়ে? যে তার মনে ঝংকার তুলতে চাইছে? একসময় অনেকটা কাছে চলে আসে অনুভব। মেয়েটার শরীর থেকে পায় এক মাতাল করা ঘ্রাণ। যেটাতে অনুভব মূহুর্তেই আসক্ত হয়ে পড়ে।
গাছে গাছে পানি দিতে ব্যস্ত ভাবনা। তার ডাগরডাগর আঁখি জোড়াতে খুশি স্পষ্ট। ঠোঁট নাড়িয়ে গুনগুন করে গাইছে সে। আর মাঝে মাঝে পাশের গাছের ডালে থাকা তার প্রিয় বিড়াল পিকুর দিকে তাকাচ্ছে।
–“দেখ পিকু, ফুলগুলো কত সুন্দর না? দেখ কাঁদিস না। ফুলগুলো দিয়ে তোকেও সাজিয়ে দেব। যদিও তুই ছেলে বিড়াল। সমস্যা নেই তুই আমার কাছে একের ভেতর দুই।”

অনুভবের হাসি পেয়ে যায় ভাবনার কথাগুলো শুনে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসে সে। গাছে পানি দিতে দিতে হঠাৎ পেছনে কারো গরম নিঃশ্বাস ভাবনার ঘাড়ে এসে লাগে। গাছে পানি দেওয়া থামিয়ে দেয় ভাবনা। এই প্রথম কারো নিঃশ্বাস তার লোককূপে পর্যন্ত শিহরণ জাগিয়ে দিচ্ছে। হুট করে পেছন মুড়ে ঘুরতেই একজন পুরুষকে দেখে ভড়কে যায় ভাবনা। তার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য পিছুতেই লোকটা তার হাত ধরে হেঁচকা টান দেয়। ভাবনা গিয়ে পড়ে সরাসরি তার বুকে। ভাবনা অজান্তেই খামচে ধরে অনুভবের হাত। বড় নিঃশ্বাস নিয়ে তাকায় সে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার এই প্রথম কোনো পুরুষের সংস্পর্শে এসে। অনুভব হালকা নিচু হয়ে ভাবনার কাঁধে থুতনি রেখে বলে….
–“সামলে। পেছনে তোমার পানি দেওয়া গাছ আছে। তাদের ওপর পড়ে যাবে।”
কথাগুলো ভাবনাকে কাঁপিয়ে তোলে। চোখ পাকিয়ে তাকায় সে। এক ভয়ানক সুর্দশন পুরুষে বাহুতে বন্দি হয়ে পড়েছে ভাবনা। নীল চোখজোড়ার ভয়ানক চাহনি, কপালে আটকে আছে একটা মুকুট, ঠোঁটের কোণে পাগল করা হাসি, আর নাকের ডগায় ছোট্ট তিল। ভাবনা ছিটকে দূরে সরে আসে অনুভবের থেকে।
–“কে আপনি হ্যাঁ? আমার অনুমতি ছাড়া আমার বাগানে ঢুকেছেন কেন?”

অনুভব আশেপাশের গাছপালা লক্ষ্য করে বেশ ভাব নিয়ে বলে……
–“ওহ এটা তাহলে তোমার বাগান। তাই তো বলি এটা তো আগে দেখিনি। আর ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে স্ট্রবেরি গাছও আগে দেখিনি।”
ভাবনা কপাল কুঁচকে তাকায়। স্ট্রবেরি নামটা আগে কখনো শোনে নি সে। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে স্ট্রবেরি নামক কোনো ফল নেই। ভাবনা আধো আধো করে বলার চেষ্টা করে……
–“স্ট্রবেরি? এটা আবার কি?”
অনুভব আরেকটু ঝুঁকে পড়ে ভাবনার ওপর। ভাবনার কোমল গালজোড়া আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে শীতল গলায় বলে…..
–“এটা একটা লাল ফল। যা মানুষের জগতে পাওয়া যায়। এই ফলের রঙটা আমি তোমার মাঝেও দেখতে পাচ্ছি। তাই ভাবলাম তুমিও স্ট্রবেরি গাছ।”
চোখ বড় বড় করে তাকায় ভাবনা। লোকটা কি বলছে? নিজের গালে হাত দিয়ে আরো দুই ধাপ দূরে সরে গিয়ে বলে…..
–“কে আপনি বলুন তো? অচেনা মেয়ের গাল স্পর্শ করছেন কেন? আপনাকে তো আগে কখনো দেখিনি এখানে।”
–“আমাকে চেনো না তুমি?”
–“না চিনি না।” (মাথা নাড়িয়ে)
–” ওহ। সবুর করো। খুব তাড়াতাড়ি চিনে যাবে।”

ভাবনা মুখ বাঁকায়। লোকটা বড়ই অদ্ভুত। অনুভব ভাবনার মুখ বাঁকানো টাও মুগ্ধ হয়ে লক্ষ্য করে। মেয়েটার নেওয়া সমস্ত পদক্ষেপই সুন্দর। মাথা ঝাঁকিয়ে ওঠে সে। তার এমনটা কেন হচ্ছে? মানুষের জগতে সে শিখেছে, একজনের তখনই অন্যের প্রতিটা পদক্ষেপ ভালো লাগে যখন সে ওপর ব্যক্তিটির প্রেমে পড়ে। তবে কি তারও কি প্রেমের রেলগাড়ির টিকেট কাটার সময় এসেই গেল?
তার ধ্যান ভাঙে পায়ের শব্দে। সামনে চেয়ে দেখে মেয়েটা তার বিড়ালকে সযত্নে নিজের দুই হাত দিয়ে আগলে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। অনুভবের মনে হয় সেই বিড়ালটা মনে হয় একটু বেশিই ভাগ্যবান। নয়ত সেই মেয়েটার হাতে আগলে কি থাকতে পারত?
ভাবতে ভাবতে অনুভব দেখে মেয়েটা আবার বিড়াল রেখেই তার দিকে ছুটে আসছে। ভ্রু কুঁচকে তাকায় অনুভব। ভাবনা ঝড়ের গতিতে এসে অনুভবকে ধাক্কা দিতেই সে সাথে অনুভবও পড়ে যায় ফুল বিছানো ঘাসের ওপর। অনুভব চোখ বড় বড় করে দুষ্টু হেসে বলল….
–“প্রথমে তো আমি তোমাকে ছোঁয়ায় বেশ কথা শুনিয়ে দিলে। এখন নিজের ছুটে এসে পড়ছো আমার গায়ের ওপর। আমার কাছে আসার প্লানিং চলছে?”

ভাবনা বিরক্ত হয়ে তাকায়। তৎক্ষনাৎ তাদের থেকে দূরে গিয়ে একটা তীর পড়ে। ভাবনা সেটা দেখিয়ে বলে…..
–“আপনাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল কেউ। সেটা দেখতে পেয়েই ছুটে এলাম বুঝেছেন? এর বেশি কিছুই না। আমার মনে হয় শয়তান ওয়ারওল্ফের কাজ এসব। সাবধানে থাকুন।”
ভাবনা উঠে দাঁড়ায়। নিজের জামা থেকে ধুলোবালি ঝাড়তে ঝাড়তে বিড়ালে উদ্দেশ্যে বলে….
–“চল পিকু। মায়ের কাছে ফিরতে হবে।”
ভাবনা হাঁটতে থাকে। অনুভব পেছন থেকে মনোযোগের সহিত দেখতে থাকে। অবশেষে কি না তাকেও প্রেমের সাগড়ে পড়ে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে সাঁতার না জেনেও!!!

চলবে…..??

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৯
–“আচ্ছা পিকু! শোন একটু আগে যার সাথে দেখা হলো সেই লোকটাকে তুই চিনিস? কে বলতো?”
পিকু নামের সাদা তুলতুলে বিড়ালটি কিছু না বলে শুধু চেয়ে থাকে। ভাবনা জানে পিকু কোনো উত্তর দেবে না। ও কি তার ভাষা বুঝবে নাকি? তবুও যতই হোক বিড়ালটা তার সুখ দুঃখের সাথি। সে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে আবারও বলে….
–“লোকটাকে কখনো দেখিনি ঠিকই তবে না চাইতেও উনাকে নিয়ে ভাবছি। ভাবতে ভালো লাগছে। ইচ্ছে করছে শুধু উনাকে নিয়েই ভাবতে। এই প্রথম কোনো পুরুষের সংস্পর্শে এলাম সেকারণেই কি এমন লাগছে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?”
পিকুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আনমনে যাচ্ছিল ভাবনা। ইতিমধ্যে মায়ের কন্ঠে থেমে যায় সে।
–“বাহ! সারাদিন পর তোর সময় হলো বাড়ি ফেরার? একটু পর সন্ধ্যা নামবে। এখন বাড়ি এলি কেন? বাগানে, বাইরে, জঙ্গলে থেকে গেলেই তো পারিস।”
কথাগুলো ঝাঁঝালো গলায় আওড়ালেন ভাবনার মা। ভাবনা প্রতিত্তোরে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে তার কোল থেকে পিকু কে নামিয়ে মায়ের কাছ আসে।

পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে আয়নার দিকে তাকায় ভাবনা। তার মা কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। লামিসা বেগম(ভাবনার মা) চোখ গরম করে বলেন….
–“দেখো মেয়ের কান্ড। এতো রাগ ঝাড়ছি তাও কি মা হেসে যাচ্ছে। একদম হাসবি না। কারণ তুই জানিস তুই হাসলে আমি আর রাগ করে থাকতে পারি না।”
ভাবনা নিজের হাসি আরো প্রসারিত করে। এমন অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরা মেয়ের হাসি কোন মা উপেক্ষা করতে পারে? লামিসা বেগমও হেসে দিলেন। ভাবনার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন….
–“আমারও তো চিন্তা হয় রে মা। দুপুরে কিচ্ছু খাসনি। সকালে সামান্য কিছু খেয়ে বেরিয়ে পড়েছিস। এমন করলে শরীর তো খারাপ হবে।”
–“উঁহু, কে বলেছে দুপুরে খাইনি? ছোট ছোট লাল লাল চেরিফল খেয়েছিলাম তো। ইশশ…কত মিষ্টি!”
–“হয়েছে? এখন খাবার খেয়ে নে টেবিলে রাখা আছে। তারপর রাজমহলে আয়।”
ভাবনা হালকা ভ্রু কুঞ্চিত করে।
–“হঠাৎ রাজমহলে কেন মা?”
–“জানিস না? অবশ্য তুই জানবিই বা কি করে? আজ প্রিন্স এসেছে অনেকদিন পর রাজ্যে। কুইন ইরিনা আমাদের ডেকে পাঠিয়েছে। আমি যাচ্ছি। তুই আয়।”

ভাবনা মাথা দুলাতেই লামিসা বেগম বেরিয়ে পড়েন। হালকা খেয়ে তৃপ্তি ভরে রক্ত পান করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে নেয়। রক্ত পান করার পর তার গায়ের রঙ যেন আরো চকচক করছে। এটাই হয়ত ভ্যাম্পায়ারদের সৌন্দর্যের রহস্য। প্রতিটা ভ্যাম্পায়ার দেখতে সুন্দর হলেও ভাবনার মাঝে রয়েছে অন্যরকম একটা মাধুর্য যা অন্য কারো মাঝে নেই। রয়েছে মুগ্ধ করার ক্ষমতা। তার অস্বাভাবিক বড় বড় চোখ দিয়ে একবার কারো দিকে তাকালে সেই চোখজোড়ার দিকে তাকিয়েই সম্মোহিত হয়ে পড়তে পারে যে কেউ!
চুলগুলো কোনোরকমে বেনী করে ঘরে তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে ভাবনা। রাজমহলে গিয়ে সবাইকে নানানরকম কাজ করার পরামর্শ দিতে থাকে। তার কাজই এটা। কুইন ইরিনার খুব ভালো লাগে ভাবনাকে। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে ভালো না লেগে উপায় আছে?
ফুলের পাপড়ি দিয়ে ভরা একটা পড় বাটি হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে ভাবনা। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে সে। হঠাৎ করে কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় একজোড়া পা। কোনো পুরুষের পা মনে হচ্ছে। বেশ আগ্রহ নিয়ে মুখ তুলে তাকায় সে। অবাক নয়নে চেয়ে বলে….
–“আপনি?”

চমকে পড়ে যায় তার হাত থেকে ফুলের পাপড়ি দিয়ে ভরে থাকা বাটি। মানুষটা এখানে এই জায়গায় মটেই হজম হচ্ছে না ভাবনার। ভাবনাকে দেখে অনুভবও বেশ অবাক হয় বটে। তবে তা প্রকাশ করে না। বাঁকা হাসি টেনে পা সিঁড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে স্টাইলের সাথে দাঁড়ায়।
–“হ্যাঁ আমি। এখানে তো আমারই থাকার কথা। আর কে থাকবে?”
ভাবনা কিছুটা রাগ নিয়ে তাকিয়ে বসে পড়ে। বিরবির করে বলে….
–“শুধু শুধু লোকটার জন্য এতো কষ্ট করে নেওয়া ফুলের পাপড়ি গুলো পড়ে গেল।”
কথাগুলো স্পষ্ট ভাবে শুনতে পায় অনুভব। সে এসে নিচু হয়ে বসে পড়ে। নিচে পড়ে থাকা পাপড়িগুলো হাতের মুঠোয় তুলে ওপর দিকে ছুঁড়ে দেয়। আর শব্দ করে হেসে ওঠে। সেসব ফুলের পাপড়ি এসে পড়ে ভাবনার ওপর। মাথার চুলে, গলায় আর চোখের ভাঁজে আটকে যায় পাপড়ি। তৎক্ষনাৎ কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায় ভাবনা।
–“ভারি অদ্ভুত লোক তো আপনি! এসব কি করলেন?”

অনুভব এগিয়ে আসে। ভাবনা পিছিয়ে যায়। অনুভব অনেকটা এগিয়ে এসে সরাসরি হাত দিয়ে ভাবনার চোখের ওপরে। পাপড়ি তুলে সেটা দেখায় ভাবনাকে। বড় শ্বাস ছাড়ে ভাবনা। তখনই আগমন ঘটে কুইন ইরিনার। ভাবনাকে দেখে সুন্দর করে হেসে বলেন…..
–“আরে ভাবনা, কখন এলে? আমার সঙ্গে দেখা তো করলে না! (অনুভবের দিকে তাকিয়ে) অনুভব তুই এখানে কি করছিস?”
–“ইনিই প্রিন্স অনুভব?” (চোখ বড় বড় করে পাকিয়ে)
ভাবনার কথায় সায় দেন কুইন ইরিনা। সঙ্গে সঙ্গে জ্বিহ্বা কেটে তাকায় ভাবনা। প্রিন্সকে কত কিছুই না বলে দিয়েছে। সে মনে মনে ভাবে, এখন এখান থেকে কেটে পড়ায় ভালো। তাড়াহুড়ো করে করে হাতে বাটি তুলে বলে….
–“রানি মা, আমি একটু আসছে কাজ আছে।”
দ্রুত গতিতে চোরের মতো কেটে পড়ে ভাবনা। অনুভব বেশ মজা পায় তা দেখে। মায়ের দিকে তাকিয়ে সে প্রশ্ন করে….
–“মেয়েটা কে মা?”
–“সেনাপতির একমাত্র মেয়ে ভাবনা। ভারি সুন্দর না?”
ভাবনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অনুভব মুগ্ধ হয়ে বলে….
–“রুপনগরীর রাজকন্যা!”

রাতে….
ছাঁদে রাতের আকাশে তাঁরা গুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ভাবনা। তার মুখে পড়ছে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো। মোহময় হয়ে পড়েছে আশেপাশের পরিবেশ। আশেপাশের বহমান ঠান্ডা হাওয়ায় মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে ভাবনা। পাশেই রয়েছে তার বিড়াল পিকু। তাঁরার দিকে আঙ্গুল দিয়ে গুনতে গুনতে চাঁদের দিকে আঙ্গুল তুলে থামে সে।
–“পিকু! প্রিন্স অনুভবকে কেমন মনে হয় তোর? ভালো না খারাপ? ইংরেজিতে এই দুটো শব্দকে কি যেন বলে? ওহ হ্যাঁ গুড ওর ব্যাড?”
পিকু ভাষা না বুঝে ভাবনার দিকে তাকিয়ে থেকে ‘মিউ মিউ’ করে ওঠে। ভাবনা এক ঝলক হেসে বলে….
–“আমার কিন্তু দুটোর মাঝামাঝি মনে হয়। তবে উনার চিন্তা মন থেকে সরাতে পারছি না আমি। এমন কিছু বলতে পারবি? যেটাতে উনাকে নিজের চিন্তা থেকে সরাতে পারব? তবে কি জানিস? উনি সত্যিই রাজপুত্রের মতো।”
পিকু আর কি বলবে? ভাবনা নিজেই বকবক করতে থাকে। তার সকল কথা অনুভবকেই নিয়ে।

একসময় এক অদ্ভুত সুর কানে ভেসে আসে তার। তার মনে জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায়। কান পেতে শুনতে থাকে সেই সুর। মন আরো শুনতে চাইছে। কোথা থেকে আসছে সেই মন ভোলানো সুর? তাদের একতলার ছাঁদের থেকে রাজমহলের বড় ছাঁদের দিকে তাকায় সে। দূর থেকে লক্ষ্য করে একজন পুরুষের অবয়ব। ছাঁদের একদম কিনারাই কিছু একটা বাজাচ্ছে। ভাবনার ইচ্ছে করে সেখানে ছুটে গিয়ে দেখতে। যেই ভাবা সেই কাজ! দ্রুত উঠে তড়িঘড়ি করে চলে আসে রাজমহলের বড় ছাঁদে। জ্যোৎস্না মাখা পরিবেশে জোনাকি পোকার নিপুনভাবে প্রাকৃতিক আলো প্রদান পরিবেশটাকে সুন্দর থেকে সুন্দরতম করে তুলছে। ছাঁদে আসতেই অনুভবের ভাইলেন এ তোলা সুর আবার আবদ্ধ করে ফেলে ভাবনাকে। অনুভব কারো অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে গভীরভাবে। এ যেন এক অসামান্য অনুভূতি। যেখানে মানুষ হারাতে চায় বার বার। শুধু মানুষ নয়। তার মতো ভ্যাম্পায়ারও আবার হতে পারে পৃথিবীর প্রতিটা জীবও।

ভাইলেন বাজানো থামিয়ে পেছন ঘোরে অনুভব। মায়াময়ী এক কন্যাকে দেখে হৃদপিণ্ড চলতে শুরু করে দ্রুত গতিতে। হৃদপিণ্ড কি বেরিয়ে আসতে চাইছে? তাকে কোনোভাবেই থামাতে পারছে না অনুভব। ভাবনা আস্তে আস্তে তার সামানসামনি এসে দাঁড়ায়। অনুভবের হাতে থাকে যন্ত্রটি দেখে নেয় সে। জিনিসটা কি জানে না ভাবনা। সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বলে….
–“থামলেন কেন?”
–“তোমার জন্য।”
–“আমি থামিয়েছি?”
–“হয়ত আমার পুরো জীবনই থমকে দিয়েছো। তোমাকে ছাড়া যেন এই থমকে যাওয়া জীবন চলা শুরু করবে না!”
না চাইতেও পুলকিত হয়ে তাকায় ভাবনা। অনুভবের শেষ কথাগুলো তার কানে বার বার বাজছে। একটা বড় শ্বাস নিয়ে সে অনুভবের কাছে আবদার করে….
–“আবার বাজান ওটা। আমি শুনতে চাই।”
–“এসো তুমিও বাজাও ভাইলেন।”
–“আমি? কিন্তু আমি তো পারি না। ওই যন্ত্র কখনো দেখিইনি।”

অনুভব মুচকি হাসে। চাঁদের আলোতে চকচক করে ওঠে ওর দাঁতগুলো। দুই ধাপ এগিয়ে এসে ভাবনার হাতে ভাইলেন ধরিয়ে দিয়ে বলে….
–“আমি শেখাচ্ছি।”
ভাবনা হা করে তাকায়। অনুভব ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবনার হাতের ওপর হাত রাখে। একটু একটু করে মনোমুগ্ধকর সুর ভেসে ওঠে ভাইলেন থেকে। চোখ বন্ধ করে ভাবনা। মুখে এক অদ্ভুত সুন্দর হাসি। ঠান্ডা শিরশিরে বাতাসে এলোমেলো হয়ে যায় ভাবনার লাল রেশমি চুল। অনুভবের চোখেমুখে পড়ে সেই চুলগুলো। অনুভবে নাকে চুলের ঘ্রাণ আসতেই মাতাল লাগে নিজেকে। ভাবনার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে….
–“এই সুরে অনুভবকে অনুভব করতে শেখো ভাবনা।”
সেদিন ভাবনা অনুভব করেছিল অনুভবকে। প্রথমবারের মতো কাছাকাছি ছিল দুজন। বেড়েছিল পাগলামো। কাছে পাবার আকাঙ্ক্ষা জাগে সেখান থেকেই। ভালোবাসার প্রথম অধ্যায় শুরু হয় সেখান থেকেই।

সকালে নানান কাজে ছোটাছুটি করছে ভাবনা। রাজমহলে এসেছে নানানরকম সুন্দর এবং গুনী মেয়ে ভ্যাম্পায়ার। যারা ছিল প্রিন্স অনুভবকে পাওয়ার জন্য পাগল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অস্থির হয়ে উঠেছে ভাবনার মন। খচখচ করছে তার চোখ। এমনটা কেন হচ্ছে তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে এখনো পর্যন্ত পারেনি ভাবনা।
অন্যদিকে অতি বিরক্ত হয়েই মায়ের কথা রাখতে রাজসিংহাসনে এসে বসে অনুভব। সে গতকাল রাতেই বুঝতে পেরেছি তার পুরো মনটা দখল করে বসে পড়েছে ভাবনা। সে মন থেকে ভাবনাকে তাড়াতে ইচ্ছুক নয়। চোখমুখ জড়িয়ে বসে থাকে সিংহাসনে। একটার পর একটা মেয়ে আসছে যাচ্ছে অনুভবের কোনো হেলদোল না পেয়ে কুইন ইরিনা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। উনি যার তার সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিয়েও দিতে পারেন না। তার কারণটা অনেক বিশেষ। অনুভব হওয়ার কথা ছিল এই ভ্যাম্পায়ার জগতের সব থেকে শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার। কিন্তু শয়তান ওয়ারওল্ফ দের চক্রান্তে উনি শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার জন্ম দিতে পারেননি। তবে অনুভবের ঢাল হিসেবে এমন একজন মেয়ে লাগবে যে সবসময় বিপদে-আপদে দুজন দুজনের পাশে দাঁড়াবে একে ওপরকে রক্ষা করবে। এমন মেয়ে কোথায় পাবেন উনি?

একসময় অনুভব বিরক্ত হয়ে উঠে পড়ে।
–“মা, আমি বিরক্ত হয়ে পড়েছি। এসব আর নিতে পারছি না। এদেরকে যেতে বলো।”
–“তাহলে তোর পছন্দ কি অনুভব?”
কাতর গলায় বলেন কিং প্রলয়। অনুভবের নজরে তখনই পড়ে হালকা হলুদে মোড়ানো ভাবনাকে। তাকে ঠিক হলুদিয়া পাখির মতো দেখাচ্ছে। নিজের অজান্তে আঙ্গুল তুলে ইশারা করে ভাবনার দিকে। সবাই হতভম্ব হয়ে পড়ে। হইচই পড়ে যায়। ভাবনা নিজেও চরম বিস্ময়ের পর্যায়ে চলে যায়। প্রথমে কিং প্রলয় এবং কুইন ইরিনা হতভম্ব হলেও নিজেকে সামলে নেন। অনেক আলোচনা করেন। শেষমেশ অনুভবের পছন্দ এবং অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভাবনার সঙ্গে অনুভবের বিয়ে ঠিক হয়। ভাবনা প্রথমে মত না দিলেও যখন তার মা বিয়েতে মত দেন তখন আর না করে না ভাবনা। বিয়ে ঠিক হয় দুই মাস পর। রাজ্যের সবখানে খুশির ঢল নামে। দেখতে দেখতে কেটে যায় এক মাস। তাদের ভালোবাসা প্রগাঢ় হতে থাকে। টান বাড়তে থাকে। আঁটকে পড়ে ভালোবাসার জালে!

একমাস পর হুট করেই ওয়ারওল্ফ হামলা করে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে। সেদিন মারা যায় ওয়ারওল্ফ কিং অলকের হাতে কুইন ইরিনা সহ প্রণয়ের দুটো সন্তান। শোকের ছায়া নেমে আসে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে। অশান্ত হয়ে পড়ে অনুভব। কিং প্রলয়ের বারণ করা সত্ত্বেও অনুভব নিজের হামলা করতে যায় সেই শয়তান ওয়ারওল্ফ রাজ্যে। ওর ধারণার বাইরে ছিল, সেই রাজ্যে কত কালো ছায়া ছড়িয়ে রয়েছে। সেই রাজ্যে গেলে যেকারো মাঝে শয়তান সত্তা ঢুকে পড়তে পারে। হলোও তাই প্রিন্স অরুণ বন্দি করে ফেলে অনুভবকে। সেই খবর পেয়ে আরো ভড়কে যান কিং প্রলয়। ওই জায়গা থেকে এখন কে বের করে নিয়ে আসবে তার ছেলেকে? সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভাবনা নিজে প্রস্তাব দেয় অনুভবকে উদ্ধার করার।
–“মহারাজ, আমি নিজে প্রিন্স অনুভবকে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমাকে অনুমতি দিন।”
কিং প্রলয় অবাক হয়ে বলে…
–“তুমি? তুমি করে পারবে? অন্তত ভয়ানক জায়গা সেটা। তুমি পারবে না।”
–“আমি পারব। উনি আমার ভবিষ্যত স্বামী। উনাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। আমি যাব সেখানে।

চলবে…..??
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here