অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #আনিশা_সাবিহা পর্ব ৩২

0
792

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩২

ইউনিভার্সিটির মাঠে একা একা হেঁটে চলেছে মাধুর্য। মাথা নিচু করে দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছে সে। প্রলয় সিনহাকে বলে অনুমতি নিয়ে আজ ইউনিভার্সিটি এসেছে মাধুর্য। অনুভবও আটকায়নি। তেমন কিছু বলেও নি। শুধু চুপচাপ দেখেছে। এই এক রাতেই তাদের মাঝে এসেছে হাজারও মাইলের ব্যবধান!
–“মন খারাপ কেন রে মাধু?”
মাধুর্য চমকে পাশে তাকায়। তবে তার পা থামে না। কবিতাকে নিজের সঙ্গে হাঁটতে দেখে চোখ কপালে উঠে যায় তার। না চাইতেও চোখ ছলছল করে ওড়ে মাধুর্য। অস্ফুটস্বরে বলে…..
–“ক…কবিতা?”
কবিতা হাসছে। তার মুখে হাসিটা কি দারুণই না লাগছে।
–“দেখ দেখ আমাকে দেখ। কত হাসিখুশি থাকি সবসময়। আমাকে দেখে কিছু শিখে নে বুঝলি।”
মাধুর্য এখনো কবিতাকে হা করেই দেখছে। কবিতার হাত ধরতে গেলেই তার হাসিমুখটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মাধুর্য বুকটা ধক করে ওঠে। আশেপাশে হাতায় সে।

হতাশ হয়ে হাঁটতে থাকে সামনের দিকে। কবিতা তো নেই-ই! কোথাও নেই। বলা হয় মানুষ অভ্যেসের দাস। মাধুর্য মানুষ না হলেও কবিতা ছিল তার দৈনন্দিনের একটা অভ্যেস। সবসময় কবিতার তার পাশে থাকত। তাই আজও কবিতাকেই কল্পনা করছে সে। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মাধুর্য। হঠাৎ গরম লাগতেই ওপরে তাকায় সে। সূর্য মামা মেঘের আড়াল থেকে বেড়িয়েছে। তার শরীর পুরে যাবার উপক্রম! দ্রুত পা চালাতেই সামনে অরুণকে দেখে থেমে যায় সে। রোদে তার চোখ ছোট ছোট হয়ে এসেছে। তবে অরুণের চোখেমুখে ভয়ানক রাগ মাধুর্যের কাছে স্পষ্ট। সরাসরি মাধুর্যের বাহু শক্ত করে ধরে অরুণ। চোখেমুখে হিংস্রতা ফুটিয়ে তুলে বলে…..
–“বাহ, বিয়েটা করেই নিলে! আমি এতো বার করে তোমায় বোঝালাম আমি তোমায় ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমাকে ইগনর করে অন্যকাউকে বিয়ে করে ফেললে?”
মাধুর্য নিরবতা বজায় রেখে চুপচাপ অরুণের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই সুযোগে অরুণ আরো পেয়ে বসে। মাধুর্যের বাহুতে চাপ দিয়ে বলে….
–“উত্তর দাও! আমার ভালো লাগার বা ভালোবাসার কোনো দাম নেই তোমার কাছে?”

মাধুর্য নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় এক ঝটকা দিয়ে। পেছন ফিরে থমথমে কন্ঠে বলে…..
–“আমি ভুল করেছি অরুণ!”
অরুণ ঠিক বুঝতে পারে না মাধুর্যের কথা। মাধুর্যের সামনে এসে দাঁড়ায় সে।
–“কি ভুল করেছো তুমি?”
–“অনেক বড় ভুল করেছি। অনুভব সিনহাকে বিয়ে করে ভুল করেছি। কিন্তু আমি করতাম? আমার বেস্টফ্রেন্ডের শেষ ইচ্ছে ছিল যে।”
–“হঠাৎ এই কথা কেন মনে হলো তোমার?”
–“আমি অনুভবের সাথে ভালো নেই। আমার মনে হলো সে আমাকে কোথাও একটা ঠকিয়েছে। কাল রাতে আমাদের মাঝে বড় ঝগড়া হয়েছিল। আমি আর নিতে পারছি না এসব।”
ক্লান্তির শ্বাস ফেলে মাধুর্য। অরুণ এসব শুনে কিছুটা অদ্ভুত হাসি হাসে অগোচরে। এটাই তো সময় মাধুর্যকে নিজের করার। গলার সুর নম্র করে অরুণ বলল….
–“তোমাকে দেখে অনেকটা ক্লান্ত মনে হচ্ছে। চলো আমার সাথে।”

মাধুর্য কিছু না ভেবেই অরুণের সাথে বিষন্ন মনে হাঁটতে শুরু করে। ক্যান্টিনে এসে থামে ওরা। মাধুর্যকে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে পানির গ্লাস তার সামনে ধরে অরুণ। মাধুর্য পানি পান করে একমনে বসে থাকে। তার ভালো লাগছে না। মুখটা একেবারে শুকনো হয়ে গিয়েছে তার। প্রচন্ড নিঃসঙ্গতা অনুভব করছে সে। সেকারণেই হয়ত অরুণের সঙ্গ চাইছে হঠাৎ করেই। এটা ভেবেই মাধুর্যের পাশে বসে পড়ে অরুণ।
–“আমি আর ওই বাড়িতে থাকতে চাই না অরুণ। আমার যাওয়ার তো কোনো জায়গাও নেই। আপনি আমার জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন প্লিজ?”
অরুণের কাছে এটা মেঘ চাইতেই বৃষ্টির মতো। এর থেকে ভালো সুযোগ হয়ত আর দুটো হয় না। কিছু না ভেবেই সে চটপট করে বলে ওঠে…..
–“তুমি চাইলে আমার বাড়িতেই থাকতে পারো। তোমার কোনো অসুবিধে হবে না। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি।”

মাধুর্য অনেকক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। অরুণ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে বোঝায় চেষ্টা করে মাধুর্যকে। তবে এই মেয়ের দৃষ্টি বোঝা দায়। অন্যদের দৃষ্টি দেখে সবটা বুঝে নিতে পারলেও মাধুর্যের দৃষ্টি দেখে কিছুই পড়তে পারে না সে। বেশ খানিকক্ষণ ভাবলেশহীন হয়ে থাকার পর মুখ খোলে মাধুর্য।
–“ঠিক আছে আমি যাব আপনার সাথে।”
অরুণের মুখে ফুটে ওঠে সেই চিরচেনা শয়তানি হাসি। সেটা লক্ষ্য করে মাধুর্যও হাসে। তবে আজ তার হাসিটাও অদ্ভুত! এক রহস্যের ভান্ডার আছে সেই হাসিতে।

প্রায় দুপুর দুটোর সময় বাড়িতে আসে মাধুর্য। অনুভব আগের থেকেই বসে ছিল নিজের ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে। আজ অফিসে যায়নি সে। কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে নিজের রাজ্য থেকে। এই অগোছালো মন নিয়ে কিছুতেই কাজে মন দেওয়া সম্ভব নয়। মনটা তো পরে আছে তার মাধুর্যের কাছে। দরজার খটখট শব্দে ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে তাকায় অনুভব। মাধুর্য দ্রুত ঘরে ঢুকে পড়ে। অনুভবের দিকে একবারও না তাকিয়ে চলে আসে আলমারির কাছে। আলমারির ওপরে রয়েছে লাগেজ। সে আর থাকতে চায় না এখানে। যার প্রতি রয়েছে ওর অসংখ্য অবিশ্বাস তার সঙ্গে এক ছাঁদে থাকা অসম্ভব বটে। লাগেজ নামানোর জন্য হাত বাড়ায় ওপরে মাধুর্য। কিন্তু লাগেজের কিনারা পাচ্ছে না সে। বিরক্ত হয়ে ওপরে হাতড়াতে থাকে ও। অনুভব তা খেয়াল করে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। শান্ত সুরে জিজ্ঞেস করে…..
–“হঠাৎ লাগেজ নিয়ে পড়লে কেন?”
মাধুর্য উত্তর দেয় না। নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে সে। তবে লাগেজটা হাতেই আসছে না। আলমারিটা বেশ উঁচু। প্রথম দিন এই বাড়িতে অনুভবই লাগেজটা তুলে দিয়েছিল।

অনুভব ল্যাপটপ রেখে উঠে আসে মাধুর্য কাছে। গায়ে গা লাগতেই শিহরিত হয়ে তাকায় মাধুর্য। অনুভবের প্রতি এখনো তার হৃদয়ে স্থান রয়েছে। সেই স্থান থেকে মাধুর্য বারংবার সরিয়ে দিতে চেয়েছে অনুভবকে। কিন্তু সে ততবারই ব্যর্থ হয়েছে। এই বেহায়া মন যদি একবার কাউকে জায়গা দেয় তাকে সরানোর মতো ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অনুভব মাধুর্যের পেছনে দাঁড়িয়ে নিজের পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে লাগেজ নিচে নামাতে শুরু করে। তবে মাধুর্য অভিমানে তাকে সরানোর চেষ্টা করে। অনুভব চোখ রাঙিয়ে তাকায় মাধুর্যের দিকে। মাধুর্য সেসবে পাত্তা না দিয়ে ঠেলতে থাকে তাকে। ফলস্বরূপ লাগেজটা পড়ে যায় তাদের মাথার ওপরে। লাগেজের চেইন খোলা থাকায় পুরো লাগেজ তাদের দুজনের মাথা থেকে গলা অবধি থেকে যায়। মাধুর্য পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে সামনের লোকটার দিকে। অন্ধকার হলেও আশপাশটা দেখার মতো দৃষ্টি শক্তি আছে তার। দুজনে পড়তে পারে দুজনের চোখ। মাধুর্যের চোখজোড়া বলে দিচ্ছে….
–“চাইলেই কমিয়ে দিতে পারো এই অভিমান। তবে তুমি করছো না সেই চেষ্টা। তোমার প্রতি আমি বড়ই বেজার প্রিয়!”

মাধুর্য অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অনুভবের নীলাভ আমোদে ভরা চোখজোড়ার দিকে। তার চোখের ভাষাও পড়তে পারছে মাধুর্য।
–“আমি এতো অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত প্রেয়সী! আমি তৃষ্ণার্ত তোমাকে পাওয়ার জন্য। নিজের মতো করে একটা ভালোবাসার রুপ দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই অপেক্ষা আমাকে এতোটা ক্লান্ত করে তুলেছে এবং তোমার অবিশ্বাস আমাকে এতোটাই বিষিয়ে তুলেছে যে আমি আবারও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছি। শক্তিহীন হয়ে পড়েছি।”
চোখে চোখে কথা হলেও মুখ ফুটে কেউই বলল না নিজেদের মনের কথা। অনুভবের চোখজোড়ায় আমোদিত হতে চায় না বলেই সে প্রথমে সরিয়ে নেয় নিজের দৃষ্টি। অনুভব হুঁশে ফিরে নামিয়ে নেয় তাদের মাথার ওপর থেকে লাগেজ।

মাধুর্য শুকনো হাসি দিয়ে লাগেজ বেডের ওপর রেখে নিজের কাপড়চোপড় ভরতে শুরু করে লাগেজে। অনুভব মাধুর্যের হাবভাব বুঝতে পারছে না। অস্থির দৃষ্টি নিয়ে মাধুর্যের পানে চেয়ে রয়েছে। কি করতে যাচ্ছে মাধুর্য? ও কি অনুভবের কাছ থেকে চলে যেতে চাইছে? সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে অনুভব। ওর এতো বছরের অপেক্ষার ফল ব্যর্থ যেতে দিতে পারে না। মাধুর্যের সামনে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় অনুভব। মাধুর্য বেশ শুকনো গলায় বলে….
–“কি বলবে বলো?”
–“এসব কি করছো তুমি? কেন লাগেজে কাপড় ভরছো?”
–“কেন লাগেজে কাপড় ভরা হয়?”
মাধুর্যের দিকে অসহায় ভরা চাহনি নিয়ে তাকায় অনুভব। হুট করে চেপে ধরে তাকে বুকের সাথে। যন্ত্রণার সহিত বলে…..
–“শুনতে পাচ্ছো আমার হৃদয় থেকে রক্তক্ষরণের শব্দ? এতো অবিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারছি না আমি। আমাকে একটুখানি বিশ্বাস করো তুমি। নয়ত আমি মারা যাব।”

–“একবার যার মনে অবিশ্বাসের বীজ বুনে যায়। সেটাকে উপড়ে ফেলা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে অনুভব। আমাকে না হয় আমার মতো যেতে দাও। দয়া করে যেতে দাও।”
মাধুর্য হয়ত কখনোই বুঝবে না অনুভবের যন্ত্রণা। এতো এতো বছর ভালোবাসা না পেয়ে তড়পেছে সে। আবারও তড়পাতে থাকবে। এভাবেই বোধহয় তার মৃত্যু ঘটবে। হাল ছেড়ে দেয় অনুভব। যাক চলে মাধুর্য। সে ভালো থাক। মাধুর্য এই বাড়িতে থাকলে তো তার দিকে ঘৃণার চোখেই তাকাবে। সেটাই অনুভবের কাছে বিষের মতো লাগবে। তার থেকে বরণ ৪৯ বছর আগে কি ঘটেছিল সেটা বের করেই মাধুর্যের সামনে দাঁড়াবে এক গাদা অভিমান নিয়ে। সেদিন না হয় মাধুর্যই ব্যস্ত হয়ে পড়বে তার অভিমান ভাঙাতে। অনুভব নিজের হাত আলগা করে দিতেই মাধুর্য সরে যায়। দ্রুত লাগেজের চেইন লাগিয়ে এক মূহুর্তের জন্য অনুভবের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে।
বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিল অরুণ মাধুর্যের জন্য। বাড়ির ভেতরে যাওয়ার সাহস হয়নি তার। বাড়ির ভেতরে তার যতগুলো শত্রু অবস্থান করছে ভেতরে গেলে তাকে নিশ্চিহ্ন করতে একবারও ভাববে না তারা। গাড়ির সামনের আয়নায় মাধুর্যকে আসতে দেখে মুখে হাসি ফোটে ওর।

মাধুর্য এসে সোজা বসে পড়ে গাড়ির সিটে। পেছনে তুলে দেয় লাগেজ। ওর চোখের পাতা ভিজে দেখে অরুণ প্রশ্ন করে…..
–“কি হয়েছে তোমার? কেঁদেছ? কেঁদো না! নিশ্চয় অনুভব কষ্ট দিয়েছে তোমায় তাই না?”
মাধুর্য তার কোনোরকম উত্তর না দিয়ে উল্টে প্রশ্ন করে ওঠে….
–“আপনি কি করে চেনেন অনুভবকে? ওর সঙ্গে আপনার কোথাও দেখা হয়েছে?”
–“না মানে ওকে তো অনেকেই চেনে প্র…প্রলয় সিনহার ছেলে বলে কথা।”
মাধুর্য তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড অরুণের দিকে। সেই নজরে অরুণ ঘামতে থাকে। মাধুর্য হঠাৎ হেসে বলে…..
–“আমার চাহনিতেই এমন নাজেহাল অবস্থা হওয়ার দরকার নেই। আমরা কি এখান থেকে যেতে পারি?”
–“ওহ ইয়েস ইয়েস। অবশ্যই।”
গাড়ি স্টার্ট দেয় অরুণ। গাড়ি চলতে থাকে অরুণের বাড়ির উদ্দেশ্যে। পেছন থেকে সবটা খেয়াল করে চিন্তা আর রাগ একসাথে ঘিরে ধরে অনুভবকে। মাধুর্য কি করে পারল ওর মতো একটা শয়তানকে বিশ্বাস করতে? হাউ??

ড্রয়িংরুমের এপাশ-ওপাশ হাঁটাহাটি করছে কিং অলক। মাধুর্যকে দেখার পর থেকে হাসফাস করছে সে। ওই মেয়েটাকে দেখার পর থেকে শুধু তার কানে মধুরিমার বলা কথাগুলো বাড়ি খাচ্ছে।
–” ও আমার নাড়ি ছেঁড়া সন্তান। ওকে চিনতে একটুও ভুল হবে না আমার। দৃশ্যতে যা দেখলাম তাতে আমি নিশ্চিত আমাদের মেয়ে নয়। আমাদের মেয়ে তো ছিল রূপনগরীর রাজকন্যার মতো দেখতে। তাকে যে একবার দেখবে সে বিমোহিত হতে বাধ্য। ওর হাসি সবাইকে সম্মোহিত করার ক্ষমতা রাখত।”
মধুরিমার বলা প্রতিটা কথা মাধুর্যের সঙ্গে মিলে যায়। মাধুর্যের যা সৌন্দর্য কিং অলক দেখেছে তা চোখ ধাধানো। তাই সে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। অরুণকে ডেকে পাঠিয়েছে। এতোক্ষণেও অরুণকে আসতে না দেখে ওপরের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে ওঠেন….
–“ছেলেটা গেল কোথায়? অদ্ভুত! দরকারের সময় একদম পাওয়া যায় না।”
বলতে বলতে দেখা পাওয়া যায় অরুণের।

–“বলো বাবা কেন ডেকেছিলে? কোনো দরকার?”
–“কখন ডেকেছি তোকে?”
–“আসলে আমি মাধুর্যকে ওর রুমটা দেখিয়ে দিতে গিয়েছিলাম। তাই দেরি হয়ে গেল।”
কিং অলক তেতিয়ে ওঠে। তিক্ত মেজাজ নিয়ে বলল….
–“এখন কি সারাদিন ওর পেছনেই পড়ে থাকবি?”
–“কি বলবে তাই বলো।”
অরুণ সোজাসাপটা ভাবে উত্তর দেয়। অলক ফিচেল গলায় বলে ওঠে…..
–“ওই মাধুর্য নামের মেয়েটিকে আমার সন্দেহ হচ্ছে। কে ওই মেয়েটা?”
–“বাবা তুমি আবারও শুরু করেছো? আমি ভাবনাকে মেরে ফেলেছি। তবুও কেন ওকে সন্দেহ করছো বলো তো?” (ক্ষিপ্ত হয়ে)
–“সন্দেহ করার কারণ আছে বলেই বলছি।”
অরুণ নিজের বাবার প্রতি ক্ষিপ্ত। তার বাবা কখনোই তাকে বিশ্বাস করতে পারে না। আজও পারছে না। বিরক্তির শ্বাস নিয়ে বলে ওঠে…..
–“ঠিক আছে। ওকে যেহেতু আমি চাই সেহেতু ওকে আমাদের মতো বানানোর দায়িত্ব তো আমার। ওর মাঝে শয়তান সত্তা প্রবেশ করাবো আমি। আজ ভোরে ওকে সম্মোহিত করব। এতেই বোঝা যাবে মাধুর্য কে। খুশি এখন তুমি?”
অলক কিছু বলে না। সেও জানতে চায় মাধুর্যের সম্পর্কে।

নতুন জায়গায় ঘুম আসছে না মাধুর্যের। চোখ বুজে শুয়ে এদিক ওদিক করছে। রাত প্রায় ১২ টা। তারপর তৃষ্ণা পেয়েছে তার। রক্তের তৃষ্ণা। এই সময় ঘুমও আসছে না আবার তৃষ্ণার কারণে ঘুম উড়ে গেছে। আরো একটা সমস্যা রয়েছে। তা হলো অনুভব। লোকটাকে বার বার মনটা চাইছে। নিজের অনেক কাছে চাইছে এখনো।
–“এখনো কেন একই চাওয়াতে মত্ত রয়েছিস মাধুর্য? অনুভব নেই এখানে। আসবেও না। আসা সম্ভব নয়।”
নিজে নিজে বলে ওঠে মাধুর্য। নিজের ওপরই বিরক্ত সে। আবারও জানালার দিক ফিরে শুয়ে থাকে সে।
–“কে বলেছে সম্ভব নয়? পৃথিবীতে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়। তুমি চাইলে আমি এলাম।”
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে তাকায় মাধুর্য। তার সারা শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেছে কথাগুলো শুনে। বেলকনির দরজার কাছে রয়েছে এক পুরুষালি অবয়ব।

চলবে…..??
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here