অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #পর্ব ৫

0
1078

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#পর্ব ৫
#আনিশা_সাবিহা

সবে ক্লাস শেষে বের হচ্ছিল মাধুর্য। পাশেই রয়েছে কবিতা। ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই সিঁড়িতে অরুণ নামক বাঁধা পড়ল। চোখমুখ কুঁচকে ফেলে মাধুর্য। এই লোকটার কি আর কাজ নেই? কবিতাও ড্যাপড্যাপ করে চেয়ে আছে। এই এক মাসে অন্তত এতটুকু সে বুঝেছে অরুণ মাধুর্যকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু মাধুর্যের রিজেক্ট করার হিসেব মিলাতে পারে না সে। মাধুর্য সিঁড়ির অন্যপাশ দিয়ে যেতেই ডেকে ওঠে অরুণ।
–“মাধুর্য! একটু দাঁড়াবে প্লিজ?”
না চাইতেও দাঁড়ায় মাধুর্য। কারণ এটা অভদ্রতা হবে। পেছন ফিরে তাকাতেই অরুণ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
–“আমাকে এতো অপছন্দ করার কারণ কি বলা যাবে?
–“সব কিছুর কারণ লাগে না। কিছু কিছু জিনিস অকারণেই হয়। আর আমি সবকিছু সবাইকে বলতে পছন্দ করি না।”

মাধুর্যের কথার জবাবে কি বলবে ভেবে পায় না অরুণ। আসলে মেয়েটা এমনভাবে কথাগুলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলে যে উত্তর দেওয়ার মতো কোনো ভাষা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তবে অরুণও আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ও আজ মাধুর্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেই ক্ষ্যান্ত হবে। হাত বাড়িয়ে মাধুর্যের হাতটা স্পর্শ করে অরুণ। হাত ধরতেই মাধুর্যের কি যেন হয়! এই অনুভূতিটাও অন্যরকম। যেন এটা ঠিক নয় বা ঠিক হচ্ছে না। হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পারে না সে। কন্ঠে রাগি ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে….
–“মেয়েদের পারমিশন ব্যতীত স্পর্শ করতে নেই জানেন না?”
অরুণ হাসে। খানিকটা সময় হেসেই বলে ফেলে…..
–“পারমিশন নিতে চাইলেও তুমি কি কখনো এই হাত ধরার পারমিশন দিবে আমায়?”
মাধুর্য চুপ করে থেকে অন্যদিকে ফিরে তাকায়। তার চুপ থাকা দেখে অরুণ আবারও বলে…..
–“আই নো তুমি পারমিশন দেবে না। অগত্যা হাত ধরেছি। আমি মানছি সেদিন ওই অসভ্যতামি তোমার মনে দাগ কেটেছে। বাট তার মানে আমাকে অন্তত খারাপ ছেলে ভেবে বসো না।”

বিরক্ত হয়ে তাকায় মাধুর্য। নিজের প্রশংসা নিজে কি করে করছে অরুণ? সেটাই তার ভাবনায় আসছে না। তবে নিশ্চুপই থাকে সে।
–“ওকে, তোমাকে আমি আমার ভালো লাগাটা এক্সেপ্ট করতে বলছি না। বাট আই লাইক ইউ। আমাকে একটা সুযোগ তো দাও। আমরা বন্ধু হিসেবেও তো থাকতে পারি তাই না?”
–“কিন্তু আপনি আমার সিনিয়র। আমাদের মাঝে বন্ধু…..”
মাধুর্যকে কথার মাঝে থামিয়ে দেয় অরুণ।
–“আজকাল বন্ধুত্ব বয়স দেখে হয় না। জাস্ট গিভ মি ওয়ান চান্স।”
এই ছেলের কথা না মানলে যে হবে না সেটা বুঝে যায় মাধুর্য। তাই মুখে একটা জড়ো হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে….
–“ঠিক আছে। আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে রাজি।”
মুখে খুশির ঝিলিক দিয়ে ওঠে অরুণ। খুশিতে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও থেমে যায় সে। জ্বিহ্বা কেটে বলে….
–“সরি!”

মাধুর্য অরুণের মুখভঙ্গিতে না পেরে হেসে ফেলে ফিক করে। তার হাসির আওয়াজ চারিদিকে ঝংকার তুলছে যেন। এই মুক্তঝরা হাসি কারো সাথে মিলে যায়। অরুণ মনে করার চেষ্টা করেও মাথায় আসে না। তাই সেদিকে মাথা ঘামায় না সে। হাসি থামিয়ে দেয় মাধুর্য অরুণের চাহনি দেখে। অস্বস্তি ঘিরে ধরে তাকে।
–“তাহলে আজ আসি। চল কবিতা।”
পেছন দিকে ঘুরে সজোরে সিঁড়ি থেকে নামতে থাকে মাধুর্য। ওর বেগ দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অরুণ। মাধুর্য আর কবিতা একটু পরেই ওর চোখের আড়াল হয়ে যায়।
কলেজ থেকে বেরিয়ে ধীরেধীরে হাঁটছে দুই বান্ধবী। মাধুর্য খামখেয়ালি হয়ে হাঁটছে। সামনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে ও। ওর ভাবনায় এখনো সকালের দেখা হওয়া ওই অদ্ভুত লোকটি। তার মন থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দিতে চেয়েও পারছে না মাধুর্য। এমন তো কখনো হয় না। অরুণকে এক মাস দেখার পরেও এমন হয়নি। বরণ অরুণ ওর অস্বস্তি সৃষ্টির কারণ। তাহলে অচেনা লোকটির ক্ষেত্রে এমন কেন হচ্ছে?

এমন সময় তাকে নিজের বাহু দিয়ে আলতো ধাক্কা মারে কবিতা। ভেংচি কেটে বলে…..
–“কোন প্রেমিকের কথা ভাবছিস বল তো?”
কবিতার উদ্ভট কথায় মোটেও চমকায় না মাধুর্য। কবিতার হুটহাট এসব উদ্ভট কথায় অভ্যস্ত সে। মাধুর্যের ধারণা এই মেয়েটার জন্ম উদ্ভট কোনো সময় হয়েছিল। ওর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব অদ্ভুত! বিরক্তির শ্বাস ফেলে মাধুর্য বলে…..
–“আমার যদি কোনো প্রেমিক থাকত তাহলে সবার আগে তুই জানতিস। তাই লজিক ছাড়া কথাবার্তা বলবি না।”
–“ওহ হো! অরুণ তবে কে? পুরো একমাস তোর পিছে পিছে ঘুরঘুর করছে। কেসটা কি রে?”
চোখ গরম করে তাকায় মাধুর্য। সঙ্গে সঙ্গে কবিতা ভীতু চোখে তাকিয়ে বলে….
–“আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম অরুণ তোকে পছন্দ করে। কিন্তু তুই তো করিস না। তাহলে অরুণ তোর মজনু। তবে তোর লায়লা হওয়া এখনো বাকি।”

–“আমি ওই অরুণ হোসাইনের কথা ভাবছি না এই মূহুর্তে। ওর কথা ভাবলেও কেমন জানি লাগে আমার। আমি তো ভাবছি ওই সকালে দেখা হওয়া ওই অদ্ভুত মোহময় লোকটার কথা।”
কথাগুলো আনমনে বলতেই চোখ বড় বড় করে কবিতা। ও ঠিক শুনছে তো? যেই মেয়ে আজ পর্যন্ত কোনো ছেলের দিকে ঠিকঠাক দেখেও না সেই মেয়ে কি না আজ একটা লোককে মোহময় বলছে। ভাবা যায়? কবিতা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল….
–“সিরিয়াসলি? কেমন ছিল রে? কেমন ছিল বল না! তোর মতো মেয়ে যেহেতু মোহময় বলছিস নিশ্চয় সুপার হ্যান্ডসাম হবে?”
ঘোরে ডুবে যায় মাধুর্য। অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসে….
–“মোহময় ছিল উনার নীল চোখজোড়া, কন্ঠ ছিল নেশা ধরিয়ে দেওয়ার মতো, চাপা আর গম্ভীর কন্ঠই যেন উনাকে মানায়। হুট করেই রাগে লাল হয়ে যাওয়া উনার উজ্জ্বল চোখমুখ একটু অন্যরকমই ছিল আর….”

পুরোটা বলতেই মাধুর্য থামে। কাকে কি বলছে সে? যাকে বলছে সে এখন পুরো সময় ঢোল পিটিয়ে সবাইকে বলে বেড়াতে ওস্তাদ। হালকা কাশি দিয়ে চুপ হয়ে যায় মাধুর্য। কবিতা দাঁত বের করে হাসে। দুষ্টু হেসে বলে…..
–“থামলি কেন? বল। আরো বল। তোর কথায় তো ছেলেকে না দেখলে চলছে না। তোর বর্ণনায় তো আমার অর্ধেক কলিজা দখল করে নিল। সামনা-সামনি দেখলে না জানি স্ট্রোক করি।”
বাঁকা চোখে তাকায় মাধুর্য। আরো কথাবার্তা বলতে বলতে বাড়িতে পৌঁছে যায় ওরা।

–“২১ বছর পার হয়ে গেল। ওই মেয়েটার খোঁজ এখনো কেউ দিতে পারল না। মূর্খের দল সব পুষে রাখছি আমি।”
রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে হুংকার ছাড়ে একজন অজানা ব্যক্তি হুংকার ছাড়ে। আশপাশটা রাতের অন্ধকারে ছেয়ে আছে। যতটুকু দেখা যাচ্ছে সবই আগুনের মাধ্যমে। বড় এই গুহাতে আশেপাশে হাজারো কঙ্কাল ঝুলতে দেখা যায়। কারণ এখানে হাজারো জাদুমন্ত্র করা হয়। শয়তান রাজ্য। ওয়ারওল্ফ এর শয়তান রাজ্য। যেখানে কোনো ভালোর জায়গা নেই। রয়েছে শুধু পাপ আর খারাপ। আশেপাশের সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা সবাই ব্যর্থ। একটা সামান্য মেয়েকে খুঁজতে ব্যর্থ। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সঙ্গে ওয়ারওল্ফের শত্রুতা বহু বছরের। একদিকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য যেমন নিজের সৃষ্টিকর্তার প্রতি অনুগত থাকে অন্যদিকে ঠিক ওয়ারওল্ফেরা বিভিন্ন শয়তানের পূজোয় মগ্ন থাকে। এই রাজ্যের ছোঁয়া লাগলেও যে কেউ বশ হয়ে যায়। শয়তান আঁকড়ে ধরে সেই মানুষটির চারপাশ। তাই কোনো ভ্যাম্পায়ার যেচে পড়ে এদের সঙ্গে যুদ্ধ লাগতে আসে না।

ওয়ারওল্ফের কিং যখন সবার ওপর রাগ ঝাড়তে ব্যস্ত তখন আগমন ঘটে কিং এর ছেলের। ওয়ারওল্ফের ভবিষ্যত কিং!
–“বাবা, আমি খবর পেয়েছি। ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে। ওই রাজ্য আগের মতো করার পরিকল্পনা চলছে।”
–“শুধু খবরই নিতে থাক। আর সামান্য একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খা। এছাড়া কিছু হবে না তোর দ্বারা।”
মাথা নত করে যুবকটি। কিং রেগেমেগে সিংহাসনে বসে থাকে। কবে পাবে সেই মেয়েটির দেখা? অবশ্য দেখা পেয়েই বা কি হবে? ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স অনুভব অভিশাপ মুক্ত হয়েছে। কিন্তু কে করল তাকে অভিশাপ মুক্ত? মাথা কিছু না আসায় আস্তে আস্তে হিংস্র রুপে আসে ওয়ারওল্ফ কিং। হুংকার ছাড়ে জোরে। কেঁপে ওঠে আশাপাশটা। সেই সঙ্গে সেখানে উপস্থিত থাকা সবাই।

রাত বারোটা বেজে তেত্রিশ মিনিট। একটু পর পর এদিক থেকে সেদিক ফিরছে মাধুর্য। চোখে বিন্দুমাত্র ঘুমের রেশ নেই। নিজের ঘুমের প্রতি বিরক্ত সে। কোনো রাতেই ভুল করেও রাত তিনটার আগে ঘুম আসে না তার চোখে। যেন সে কোনো রাত জাগা প্রাণী। একসময় উঠে বসে পড়ে মাধুর্য। পাশে তাকায় সামিহার দিকে। নিশ্চিতে ওপাশ ফিরে ঘুমোচ্ছে সামিহা। মিষ্টি হাসে মাধুর্য। তার হাসির কারণ কাল সামিহার জন্মদিন। এই জন্মদিনে প্রতিবার নিজ হাতে কেক বানায় মাধুর্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। সে কেক বানিয়ে রেখেছে। এখন শুধু সকাল হওয়ার পালা। ঘুরে বসে হাঁটুতে ভর দিয়ে চোখ রাখে কিছুদূরে থাকা জানালার বাইরে আকাশের ওপর। আবারও আকাশে ভেসে ওঠে সেই পুরুষটির অবয়ব। চোখ বুজে নেয় মাধুর্য।
–“মনে রেখো, পৃথিবীটা গোল। যেখান থেকেই পথ শুরু করো না কেন শেষমেশ গোলকধাঁধার মতো একই জায়গায়ই পৌঁছাবে তুমি। তাই কারো সাথে যদি এক্সিডেন্টলি বা কোয়েনসিডেন্টলি দেখা হয় আর ভাগ্যে যদি লিখা থাকে তবে একবার নয় বারবার দেখা হবে তোমার সাথে।”

কেঁপে উঠে চোখ খুলে তাকায় মাধুর্য। অনুভবকে দেখে বিষম খায় সে। কাঁপা সুরে বলে ওঠে….
–“আ…আপনি এখানে?”
–“ইয়েস। আমি যখন খুশি যেখানে খুশি আসতে পারি।”
কথাটা বলে শব্দ করে হাসে অনুভব। পাশে তাকায় মাধুর্য। সামিহা দিব্যি ঘুমিয়ে আছে। সে কি শুনতে পাচ্ছে না অনুভবের হাসি? অবাক চাহনিতে আবার অনুভবের দিকে তাকায় মাধুর্য। কিন্তু আশেপাশে লোকটাকে না পেয়ে বোকা বনে যায় সে। অস্থির গলায় বলে…..
–“কি হচ্ছে আমার সাথে? কেনই বা হচ্ছে?”
দ্রুত আবারও চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে মাধুর্য। চোখ বন্ধ করে সে। যেন এখন ঘুমিয়ে পড়াই একমাত্র লক্ষ্য। অনেকক্ষণ পর ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যেতে সক্ষম হয় মাধুর্য।

–“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মাই ডিয়ার সামিহা আপু।”
কথাটা বলে কেক নিয়ে হাজির হয় মাধুর্য। সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে সামিহা। তখনই শুনতে পায় মাধুর্যের কন্ঠ। এটা ওর কাছে নতুন কিছু নয়। সকাল থেকে সবাই উইশ করে গিফট দিলেও মাধুর্যের উইশ তার সবচেয়ে ভালো লাগে। মাধুর্যের পেছন পেছন হাজির হন রেনুকা, সানিয়া আর বিভোর। দ্রুত ছোট টেবিলে কেক রেখে মাধুর্য বলে ওঠে….
–“এসো এসো, কেক কেটে ফেলো। সময় নেই আমার হাতে।”
সানিয়া টেনে নিয়ে এসে বসায় সামিহাকে। সামিহা সবার দিকে তাকিয়ে কেক কাটে। কিছুক্ষণের জন্য সবাই আনন্দে মত্ত হয়ে পড়লেও সামিহা খুঁজছে মাধুর্যের সঙ্গে একা কথা বলবার সুযোগ। অবশেষে ফাঁকা হয় ঘর। মাধুর্য রেডি হতে শুরু করে দৈনন্দিন এর মতো ইউনিভার্সিটি যাবার জন্য। তখনই সামিহা এসে টেনে নিয়ে মাধুর্যকে বেডে বসিয়ে দেয়। আকস্মিক ঘটনায় একটু অবাক হয় মাধুর্য।
–“কিছু বলবে সামিহা আপু?”

সামিহা ইনিয়েবিনিয়ে বলে ওঠে….
–“আজ তো আমার জন্মদিন তাই না মাধুর্য?”
ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাধুর্য। এ কেমন করছে সামিহা আপু তাকে? নিজেকে সামলে সে বলে….
–“হ্যাঁ। এসব কেমন প্রশ্ন সামিহা আপু?”
–“উহু, যা বলব তুই শুধু সেটার উত্তর দিবি।”
মাধুর্য সম্মতি জানায়।
–“আজ আমি তোর কাছে একটা জিনিস চাইব। দিবি আমাকে?”
সন্ধিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে হঠাৎ হাসে মাধুর্য।
–“এ কেমন অদ্ভুত প্রশ্ন করছো বল তো তুমি? তুমি কিছু চাইবে আর আমি তা দেব না? তুমি তো প্রথম আমার থেকে কিছু চাইলে। মানা করার সাধ্যি আছে আমার?”
–“সত্যি তুই দিবি তো?”
মাধুর্য কিছু না ভেবেই সায় দিয়ে বসে। সামিহা মাধুর্যের হাতে একটা পেপার গুঁজে দেয়। দৃষ্টি সরু হয়ে যায় মাধুর্যের।
–“এটা কি?”

–“এটা একটা নিউজ পেপার। এখানে বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে একটা বড় কোম্পানির জবের ব্যাপারে। আর আমি চাইছি তুই জব কর। এতে আস্তে আস্তে এখান থেকে আলাদা হয়ে যা।”
আকাশ থেকে পড়ে মাধুর্য। তার সামিহা আপু এসব কি কথা বলছে? অস্পষ্ট ভাবে বলে….
–“কি বলছো তুমি এসব আপু? জব, আলাদা হওয়া, কোম্পানি। কিছুই বুঝতে পারছি না। অবশেষে কি তোমার কাছেও আমি বোঝা হয়ে গেলাম?”
–“আমি সেটা বলিনি। তুই আমার বোনের চেয়ে কোনো অংশে কম নস। বরণ তার থেকে বেশি। এই বাড়িতে থাকলে তুই বাঁচতে পারবি না। আমার মা সহ্য করতে পারে না। তাই আমি চাই তুই আলাদা হয়ে থাক। তোর বায়োডাটা সহ সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি আর নেটের মাধ্যমে সাবমিট করেও দিয়েছি। তুই শুধু ইন্টারভিউ দিতে যাবি।”
–“কিন্তু আপু…..”
থামিয়ে দেয় সামিহা মাধুর্যকে। কোমলভাবে ধরে মাধুর্যের হাত। নরম সুরে বলে….
–“কোনো কিন্তু নয়। তুই আজই এই কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিস। আর তুই যে ব্রাইট স্টুডেন্ট তোকে এই পদে অবশ্যই জব পাবি। পার্ট টাইম জব এটা।”
মানা করতে পারে না মাধুর্য। ইউনিভার্সিটি যাওয়ার বদলে বেরিয়ে পড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে। জানে না কি ইন্টারভিউ দেবে। কোনো প্রস্তুতি ছাড়া যে তার জব হবে না তা সে নিশ্চিত।

নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে অবাক চোখে আশপাশটা দেখে নেয় মাধুর্য। দুটো বড় বিল্ডিং জয়েন্ট করা এক সাথে। পুরোটাই চকচক করছে। ওপরে বড় বড় করে লিখা ‘SS Company’। সামান্য ঢক গিলে এগিয়ে ঢুকে যায় সিকিউরিটি গার্ড কে বলে ভেতরে যায়। তাকে বসতে দেওয়া হয় কেবিনের বাইরে। অফিসের এমডি এখনো আসেনি। সোফায় বসে অপেক্ষা করতে থাকে মাধুর্য। সে সহ অনেকে এসেছে ইন্টারভিউ দিতে। তাতে মাধুর্যের কিছু যায় আসে না। কারণ চাকরিতে ওর মোটও মন নেই। শুধু এসেছে সামিহার জন্য।
কিছুক্ষণ পরেই এক মহিলা এসে তার সামনে দাঁড়ায়।
–“এখানে মাধুর্য চৌধুরী কে?”
মাধুর্য কিছুক্ষণ স্থির থেকে উঠে দাঁড়ায়।
–“আমি মাধুর্য চৌধুরী।”
–“আপনাকে ভেতরে ডাকা হয়েছে। আসুন আমার সাথে।”
প্রশ্নসূচক চেহারা নিয়ে তাকায় মাধুর্য। না পেরে প্রশ্ন করেই ফেলে….
–“একটু আগে যে এনাউন্সমেন্ট করা হলো, অফিসের এমডি আসেনি!”

–“হ্যাঁ, কিন্তু আপনার জরুরি ডাক পড়েছে।”
হতভম্বতা না কাটাতেই মহিলাটি চলে যায়। মাধুর্য নিজেও পা চালাতে শুরু করে। মহিলাটি একটা কেবিন দেখিয়ে দেয়। দরজার সামনে নেমপ্লেট লেখা, ‘প্রলয় সিনহা’। এক পলক নামটা দেখে ঢুকে পড়ে দরজা খোলে মাধুর্য।
–“মে আই কামিং?”
–“ইয়েস কাম ইম।”
এক গম্ভীর এবং চাপা গলা শুনে পাথর হয়ে যায় মাধুর্য। এলোমেলো পায়ে ঢুকে পড়ে কেবিনে। চেয়ারে বসে থাকা মানুষটি জানালার দিকে মুখ করে উল্টো হয়ে বসে আছে। মানুষটাকে দেখার জন্য আকুপাকু করতে শুরু করল মাধুর্যের মন। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না তাকে। অবশেষে চেয়ার দিকে ঘুরে বসে ব্যক্তিটি। যাকে দেখে বিস্ময়ের সপ্তম আকাশে ভাসতে থাকে মাধুর্য। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে….
–“আপনি?”
সামনের মানুষটা হাসে।
–“প্রথমেই বলেছিলাম পৃথিবী গোল! আর ভাগ্যে থাকলে আমার সামনা-সামনি আবার হতে হবে। বার বার হতে হবে। না চাইলেও হতে হবে। বার তোমার লাক এতো ভালো জানতাম না। না হলে কি এই অনুভব সিনহার সাথে আবার দেখা হতো তোমার??”

চলবে…..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here