#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#পর্ব ১৩
#আনিশা_সাবিহা
মাধুর্য বার বার অনুভবের হাত ধরে টানছে। রাতের নিস্তব্ধতায় ফ্যান চলার আওয়াজ বেশ কড়া। তবুও অনুভব ঘামছে। তার ঠান্ডা শরীর থেকে ঘাম বেয়ে পড়ছে। শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খোলা থাকায় চিকচিক করছে অনুভবের বুকে ঘাম। বার বার একটু করে নিশ্বাস নিচ্ছে অনুভব। নিজেকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই মাধুর্য ঘুমন্ত অবস্থায় হুট করেই অনুভবের হাঁটুতে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে। অনুভব নিঃশ্বাস প্রশ্বাস আর গাঢ় হয়। করছে টা কি মেয়েটা? একে বোধহয় বলে নিজের গর্তে নিজেই পড়া। চুপচাপ ওড়না রেখে কেটে পড়তে চেয়েছিল অনুভব। মাধুর্যের লাল চুলগুলো এলোমেলো হয়ে চাঁদের আলোতে চিকচিক করছে। যেন এ কোনো এক রাজ্যের রূপবতী রাজকন্যা। যাকে একবার দেখলে দ্বিতীয় বার দেখার ইচ্ছে জাগবেই জাগবে।
–“শুনেছি, প্রিয় মানুষের কোলে মাথা রাখলে সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যায়। আমার তো কেউ নেই। মা-বাবাও নেই। একমাত্র আপনি আছেন। যাকে আমি প্রিয়জন ভেবে উঠতে পেরেছি। এবার আমার কষ্ট দূর হবে তো?”
বিরবির করা কথাগুলো অনুববের কানে স্পষ্ট ভেসে আসে। কারণ ওর শ্রবন শক্তি সাধারণ মানুষের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। কেউ অন্যের কানে কানেও কথা বললে তার কানে আসে। অনুভব একটু হেলে পড়ে মাধুর্যের দিকে। শীতল মাখা গলায় বলে….
–“এতো কীসের কষ্ট তোমার?”
–“জানি না আমার কীসের কষ্ট। নিজেকে সব থেকে সুখী প্রমাণ করতে গিয়ে দিনশেষে মনে হয় আমি শূন্য। আমি কাউকে খুঁজছি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে পাচ্ছি না। কাকে খুঁজছি তাও জানি না।”
অনুভব আরেকটু হেলে মাধুর্যের কপাল বরাবর চুমু খায়। এতে যেন তার নিজেরই হৃদয় শান্তিতে ছুঁয়ে যায়। মুখ উঠিয়ে মাধুর্যকে হালকা করে ধরে বালিশে শুইয়ে দেয় সে।
–“দ্বিতীয় বার! হ্যাঁ দ্বিতীয় বারের মতো চোখ ছলকে উঠেছে আমার।
তাহলে তুমিই কি সেই প্রেয়সী?
দ্বিতীয় বারের মতো মাতাল হয়েছি আমি তোমার সংস্পর্শে এসে।
তুমিই কি আমার ভাবনা?
দ্বিতীয় বারের মতো সেই ঘ্রাণটা পেয়েছি আমি। যা আমার সর্বাঙ্গ কাবু করে ফেলে।
তবে, তুমিই কি আমার ভালোবাসা? যার অপেক্ষায় প্রহর গুনছি আমি?”
কথাগুলো বলে চুপ হয়ে যায় অনুভব। তার কথায় প্রতিধ্বনি হয়ে তার কানে আসছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজের চুল খামচে ধরে সে। হাত নামিয়ে বলে…..
–“কালকে প্রমাণ হয়ে যাবে। কে তুমি? কি তোমার আসল পরিচয়? এই ওড়না যখন তুমি এখানে দেখবে তখন যদি সত্যি এটা তোমার হয়। তুমি চিনে ফেলবে এই ওড়নাকে। আর আমি চিনে ফেলব তোমাকে।”
অনুভব ওড়না জানালার এক সূক্ষ্ণ লোহার সাথে রেখে বেরিয়ে যায় জানালা দিয়ে। জানালাটি খোলায় থেকে যায়।
ওয়ারওল্ফ রাজ্যে…..
–“কিং, আমাদের দল থেকে একজন খুব শক্তিশালী শয়তান ওয়ারওল্ফ কমে গেল। একজন মেয়ে মেরে ফেলল ওকে।”
মাটিতে বসে শয়তানের ধ্যানে মগ্ন ছিল অরুণ এবং তার বাবা। মগ্ন থাকতে পারল না একটি সাধারণ প্রজা ওয়ারওল্ফের কথা শুনে। দুজনেই উঠে গিয়ে হকচকিয়ে তাকায়। কিং হুংকার দিয়ে বলে ওঠে….
–“কি বলছো? কি করে হলো এসব? কখন হলো?”
–“আজকে সন্ধ্যার পর রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে কিং। প্রথমে সাধারণ মেয়ে ভেবে রেবিক(ওয়ারওল্ফ) এগিয়ে গিয়েছিল হামলা করবে বলে। কিন্তু মেয়েটি উল্টে নিজেই হামলা করে বসে। মূহুর্তেই পাল্টে যায় তার চেহারা। ভ্যাম্পায়ারে রুপ নেয় সে।”
ভ্যাম্পায়ারের কথা শুনে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় কিং। অরুণ কিছুটা অবাক হয়েই সব শুনছে। অরুণ হতভম্ব হয়ে বলে….
–“কোন মেয়ের এতোবড় সাহস ও শক্তি? সে রেবিকের মতো একজন শয়তান ওয়ারওল্ফকে মেরে ফেলল…??”
মাথা নত করে সামনে থাকা সাধারণ ওয়ারওল্ফটি। ঢক গিলে বলে….
–“মেয়েটার চোখেমুখে যা মায়া ছিল প্রিন্স। দেখলে বিশ্বাস হবে না ও ভ্যাম্পায়ার। চাঁদের আলোতে ওর সৌন্দর্য আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল। আর কত বড় বড় চোখ ছিল মেয়েটার। ভয়ে মুখটা কাঁচুমাচু করে হাঁটছিল। ভাবিনি ও আমাদের এতোবড় শত্রুর দলের হবে।”
কিছুক্ষণের জন্য থতমত খায় অরুণ। এই রুপের বর্ণনা একজনের সঙ্গে বেশ মিলছে। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে….
–“মাধুর্য?”
–“কি বললি তুই?”
কিং চোখ গরম করে কথাটা বলে ওঠেন। অরুণ হুঁশে ফেরে। চাপা সুরে বলে….
–“বাবা, আমার মনে হচ্ছে মেয়েটাকে আমি চিনি। মেয়েটা যদি সেই তাহলে কি হবে আমার?”
অরুণের বাবাও চমক লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন অনেকক্ষণ।
সকালে….
ওড়না হাতে নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাধুর্য। কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে উঠছে সে। কাঁপার কারণটা ভয় নাকি উত্তেজনা সেটা সে জানে না। ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে ওঠার পর ওড়নাটা জানালার লোহার সঙ্গে আটকানো দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় মাধুর্য। এই সাদা ওড়না তো সে সেদিনই ফেলে এসেছিল ওই রহস্যপুরী তে। এখন তার কাছে সব ভূতুড়ে ভূতুড়ে লাগছে। সে বিষাদ মাখা কন্ঠে বলে…..
–“সবকিছু কেমন জানি অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। যতই ভাবছি সেদিন আমি যে জগতে পৌঁছেছিলাম সেই জগত আমার কল্পনা ততই যেন প্রকৃতি নিজ থেকে আমার কল্পনাকে সত্যি প্রমাণ করার দায়িত্ব নিয়েছে। আবারও কি করে এলো আমার এই ওড়নাটা?”
তার কন্ঠ বেশ ধীর হলেও আড়াল থেকে নিজের শ্রবণশক্তির মাধ্যমে শুনে নেয় অনুভব। দরজার ওপারে আড়ালে লুকিয়ে সবটা দেখছে ও শুনছে। এবার ভেতরে যাওয়ার পালা তার। নিজেকে প্রস্তুত করে দরজার সামনে দাঁড়ায় সে। গটগট করে ভেতরে চলে আসে।
–“একদৃষ্টিতে কি এতো হচ্ছে মিস. মাধুর্য? যেন ওড়নার মধ্যে ভূত রয়েছে। আর সেটাকে বের করার জন্যই তুমি ধ্যানে বসেছো।”
হুট করে পুরুষালি কন্ঠ পেয়ে ওড়না থেকে চোখ সরিয়ে চমকে তাকায় মাধুর্য। ওড়নাটা নিজের গলায় জড়িয়ে নেয় সে। অনুভব এসে পা তুলে বেতের মোড়ায় বসে নিজের হাতে থাকা অ্যাপেলে কামড় দিয়ে বলে….
–“ওড়নাটা তোমার?”
সন্দেহি দৃষ্টিতে তাকায় মাধুর্য। অনুভব তার দৃষ্টি দেখে হালকা সামলে নেয় নিজেকে। মাধুর্য বলে….
–“হু আমারই তো হবে। আমার ঘরে যেহেতু রয়েছে।”
বাঁকা হাসি দিয়ে অ্যাপেল চিবুতে থাকে অনুভব। প্রসঙ্গ পাল্টাতে সে বলে ওঠে….
–“এখন কেমন ফিল করছো?”
–“মাচ বেটার।”
বিছানা থেকে নেমে চুল বাঁধতে শুরু করে মাধুর্য। অনুভব কিছুক্ষণ এক নাগাড়ে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে….
–“তোমরা মেয়েরা কি ইচ্ছে দেরিতে রেডি হও নাকি আসলেই তোমাদের দেরি হয়? কোনটা বলো তো?”
চুলে বাঁকা করে বেনী করতে করতে ফিরে তাকায় মাধুর্য। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে….
–“এটা কি আপনি প্রশ্ন করলেন? নাকি অপমান?”
–“হাউ ইন্টেলিজেন্ট ইউ আর! যাক তোমার আরেকটা গুন পেলাম। এনিওয়ে, এই প্রশ্নের মাধ্যমে দুটোই করলাম।”
মাধুর্য বেশ রাগ হয়। অনুভবের ডেভিল মার্কা হাসি দেখে নাক ফুলিয়ে ফেলে সে। এক সেকেন্ড পরই তার মাথার বাত্তি জ্বলে ওঠে। চুটকি দিয়ে চোখের পলকেই মাথা বেঁধে ফেলে কাঁধে ব্যাগ তুলে নেয়। অনুভব কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। তারপর মাধুর্যের দিকে ভ্রু নাচিয়ে তাকায়। মনে মনে বেশ হাসি পাচ্ছে তার। অনুভব মনে মনে বলে ওঠে….
–“ভেরি গুড মাই ডল! নিজের পরিচয়ের প্রমাণ নিজেই দিয়ে চলেছো তুমি। দিতে থাকো। আমিও একশ ভাগ নিশ্চিত হয়ে নিই। কিপ ইট আপ।”
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অনুভবের মুখে অদ্ভুত হাসি চলেই আসে।
মাধুর্যের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পায় মাধুর্য তার নকল করে বাঁকা হাসছে। এতে হাসিটা আরো বেশি পেলেও মুখটা গম্ভীর করে ফেলে অনুভব। অ্যাপেলের বাকি অংশ পুরোটাই মুখের ভেতর পুরে দিয়ে হাত ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মাধুর্যের কাছে যায় সে। মাধুর্য এখনো সেভাবেই হেসে দাঁড়িয়ে আছে। অনুভব ওর ঠোঁটের দুইপাশ স্পর্শ করে নিজের আঙ্গুল দিয়ে। সেই চরম অনুভূতি আবারও হৃদয়ে দপদপ করে জ্বলে ওঠে মাধুর্যের। ঘনঘন চোখের পাপড়ি ফেলা শুরু করে। অনুভব ঠোঁটের দুইপাশ হালকা টেনে দিয়ে মেয়েটার বাঁকা থেকে হাসি মিষ্টি হাসিতে রুপান্তর করে। গাড়ির চাবি হাতড়ে দিয়ে ক্যাচ করতে করতে বলে….
–“তোমার মতো মেয়েকে মিষ্টি হাসি আর লাজুক হাসি ভালো লাগে। শয়তানি বা বাঁকা হাসি নয়।”
চোখের পলক ফেলতে ভুলে যায় মাধুর্য। নিজের মাধুরিতে ভরানো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে….
–“তার মানে আপনি শয়তান?”
–“হতে চাইনি। হয়ে পড়েছি। ভালোবাসার অভাবে আর কোনো শত্রুর চক্রান্তে।”
–“মানে?”
মাধুর্য আর মানের উত্তর খুঁজে পায় না। অনুভবও কোনো জবাব দেয় না। চোখের পলকেই গায়েব হয়ে যায় সে। মাধুর্য চোখের পলক ফেলে যখন আর দেখতে পায় না তাকে আশেপাশে খুঁজতে থাকে নিজের উত্তর নেওয়ার জন্য। কিন্তু পায় না সে। ডান পায়ের ধাপ ফেলে ঠোঁট উল্টে বলে….
–“কোথায় গেল? ধুর!”
ধীর পায়ের ধাপ ফেলে সেও বাইরে চলে আসে। কিচেন থেকে খাবারের দারুণ গন্ধ আসছে। গন্ধ শুঁকে সে ভাবতে থাকে কে রান্না করছে? এলিনা? আগ্রহ নিয়ে কিচেনে যায় সে। তার ধারণায় সত্যি হয়। এলিনা এপ্রন পড়ে কয়েকটা আইটেম রান্না করে ফেলেছে। এলিনার পেছনে দাঁড়িয়ে সে বলে…
–“এতো খাবারের আইটেম? কখন থেকে বানাচ্ছো এক খাবার-দাবার?”
এলিনা সুন্দর করে হাসে। হাতে পানি দিয়ে পাত্রে ঢেলে বলে…
–“বেশিক্ষণ নয়। এইতো প্রায় একঘন্টা হয়েছে।”
–“একঘন্টা মাত্র? আমি হলে তো দুই ঘন্টাতেও পারতাম না। তোমরা কি দিয়ে তৈরি বলো তো?”
–“আস্তে আস্তে তুমি নিজেই জেনে নিও।”
এলিনার কথাগুলো বেশ ভালো আর মজার লাগে মাধুর্যের। কিন্তু মজার ছলে এলিনা যে কত সত্যি কথা বলে ওঠে সেটা কি মাধুর্য জানে?
খাবার টেবিলে বসতেই বাইরে থেকে আওয়াজ আসে।
–“ওহ হ্যালো মিস. লেজি আমি কিন্তু তোমার জন্য কিন্তু ওয়েট করতে পারব না। ইউ হ্যাভ অনলি টেন মিনিটস।”
খাবার মুখে দিতেই যাচ্ছিল মাধুর্য। অনুভবের কথায় মুখে খাবার না দিয়ে প্লেটে রেখে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় লিভিং রুমে থাকা বড় জানালার দিকে। অনুভব হাই তুলে নিজের ঘড়ি দেখছে।
–“ওহ হ্যালো মি. ফাস্টের ঢেঁকি! আপনার যাওয়ার হলে চলে যান। আমি একাই যেতে পারব। কে আসতে বলেছিল আপনাকে আগ বাড়িয়ে?”
–“কে আবার তুমি! ডাইরেক্টলি হয়ত বলোনি। ইন্ডাইরেক্টলি বলেছো। কালকে যেভাবে রাস্তায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে ছিলে। আবার যদি এমন হয় তাহলে তোমার বোন আছে না সামিহা? আমাকে জেলে পুড়ে দিতে পারে। আর আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”
বিরক্তিতে মুখটা কাঁদো কাঁদো করে পরোটার এক অংশ মুখে দেয় মাধুর্য। ছেলে মানুষ হয়ে কি করে এতোটা ঝগড়ুটে হতে পারে?
এলিনা দুজনের কান্ড দেখে মুখ টিপে হেসে মাধুর্যের দিকে সবজি এগিয়ে দেয়। অতঃপর বলে….
–“কত বছর পর যেন একই দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি।”
মাধুর্য খাওয়াতে ব্যস্ত ছিল। ঠিকঠাক ভাবে শুনতে পায়নি এলিনার কথা। মাথা তুলে কান এগিয়ে বলে….
–“কিছু বললে তুমি?”
এলিনা কিছু না জানার ভান করে বলে….
–“কিছু না তো। আসলে অনুভব এমনই। সবসময় ডেয়ারিং হয়ে থাকবে। কিন্তু কাছের লোকের জন্য খুব ভাবে। এমনভাবে ভাবে আর কেয়ার করে যে তুমি এমনই বিরক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু ওটাই তার স্টাইল।”
মাধুর্য বেশ মনোযোগী হয়ে শোনে সবটা। মনে করতে থাকে আর পুরো স্মৃতি যখন থেকে অনুভব এসেছে তখন থেকে মনে করতে থাকে। বেশিরভাগ মূহুর্তে অনুভবের বিরক্তিকর কেয়ারিংটা খুঁজে পাচ্ছে মাধুর্য। এই সুন্দর মূহুর্ত কল্পনা করার মধ্যে অনুভব স্বয়ং বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
–“মিস. লেজি, নয় মিনিট দশ সেকেন্ড হয়ে গিয়েছে।”
অনুভবের কথায় তেমন পাত্তা দেয় না মাধুর্য। এলিনার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে সে।
–“আচ্ছা কাল রাতে কি তুমি আমার ঘরে গিয়েছিলে? আমি যখন ঘুমোচ্ছিলাম?”
–“না তো। আমি তো আমার ঘরেই ছিলাম।”
মাধুর্য ছোট্ট করে “ওহ” বলে ওঠে। এলিনাকে বিদায় জানিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে সে। আনমনা হয়ে হাঁটতে থাকে। ওর কাল গভীর রাতে কারোর স্পর্শ পেয়েছে। বেশ মোহনীয় ছিল সেই স্পর্শ। বার বার ধরতে মন চাইছিল আরো ছুঁতে মন চাইছিল। কারো সংস্পর্শে মাথা রেখেছিল সে। কে ছিল সে? যেন রুপকথার রাজ্য থেকে উড়ে আসা রাজপুত্র। ভাবলেশহীন হয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে পড়তেই মাধুর্যকে দেখে নিয়ে মূহুর্তেই চোখ নামিয়ে সামনে তাকায়। দ্রুত চোখ না সরালে ওই চোখজোড়া সরতে চাইবে না। আটকে থাকবে মাধুর্যের মাধুর্যতে।
প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ায় বেরিয়েছে বেশির ভাগ স্টুডেন্ট ক্লাস থেকে। ইউনিভার্সিটি লাইফ মানে ইনজয় এটা বেশির ভাগ স্টুডেন্টের ধারণা। বেশির ভাগ স্টুডেন্ট আড্ডা দেওয়া, প্রেম করা, ঘুরাঘুরিতে ব্যস্ত থাকে। মাধুর্য আর কবিতার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ব্যতিক্রম নয়। তবে তাদের ফ্রেন্ডশীপের মাঝে কেউ তেমন একটা ঢুকতে পারে নি। কারো সাথে দুই একটা কথা হলেও দিনশেষে দুজন দুজনের সাথে সবসময় থাকে। এটাই হয়ত বন্ধুত্ব!
ক্যান্টিনে চেয়ারে বসে বসে ফোন ঘাঁটছে মাধুর্য। কবিতা বার্গার খেতে আর ধরতে অতি মনোযোগী হয়ে পড়েছে। তার কাছে ‘বার্গার’ জিনিসটা খাওয়ার থেকে সামলানো বেশ কঠিন। কিন্তু খাবারটা তার কাছে ফেবারিটও বটে। তখনই একটা মেয়ে এসে মাধুর্যের কাঁধে হাত রেখে ডাকে। মাধুর্য চিনতে পারে না মেয়েটাকে। ভদ্রতার খাতিরে দাঁড়িয়ে বলে….
–“তোমাকে কি আমি চিনি?”
–“না আমাকে চেনো না। তবে ওকে নিশ্চয় চেনো।”
মেয়েটি ইশারায় সামনের দিকে তাকাতে বলে মাধুর্যকে। মাধুর্য সেদিকে তাকিয়ে দেখে অরুণ কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
কবিতা বার্গার মুখে দিয়ে মোটা সুরে বলে….
–“আহা! দেখ তোর রোমিও তোর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে।”
–“শাট আপ। বার্গার খাচ্ছিস। সেটাই খা। নয়ত করলা দিয়ে স্পেশাল বার্গার বানিয়ে তোর মুখে ঢুকিয়ে দেব। ডাফার।”
ধমক দিয়ে কথা বলতেই ভেংচি কাটে কবিতা। অরুণ মাধুর্যের দিকে এসে ছোট্ট করে বলে….
–“সরি মাধুর্য। আই এম সরি।”
–“সরি কেন হঠাৎ?”
অরুণ মাধুর্যের হাত ধরে। মাধুর্যের চোখমুখে গুনে গুনে তিনবার ফুঁ দেয়। মাধুর্য চোখ বন্ধ করে। হালকা অস্বাভাবিক কিছু অনুভূত হতেই চোখ খুলে নিজের ভেতরের অনূভুতি বোঝার চেষ্টা করে। অরুণের দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে ও অভূতপূর্ব কিছু দেখছে। মাধুর্য হাত সরিয়ে বিব্রত হয়ে বলে….
–“কি হলো? বলুন, সরি কেন বলছেন?”
নিজের মাথা এপাশ-ওপাশ নাড়িয়ে নেয় অরুণ।
–“না কিছু না। কাল তোমার সাথে মিসবিহেব করে ফেলেছিলাম না তার জন্য।”
জোর করে হাসার চেষ্টা করে অরুণ কবিতার হাত ধরতেও উঠে দাঁড়ায় কবিতা। ভ্রু কুঁচকে বলে….
–“আপনি তো মাধুর্যকে পটাতে চাইছেন না? আমার হাত ধরলেন যে? চয়েস বদলে ফেললেন নাকি?”
–“সরি তোমাকেও সরি।”
কথাটি বলে কবিতাকেও গুনে গুনে তিনবার ফুঁ দেয় অরুণ। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটে না যেটা আশা সে করছে। কবিতাকে মাধুর্য নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে….
–“আমরা আপনার ওপর রাগ করিনি। আমরা আসছি ক্লাশ শুরু হয়েছে।”
দ্রুত কবিতাকে নিয়ে কেটে পড়ে মাধুর্য। অরুণের চোখ লাল হয়ে ওঠে। মুখ বিষন্ন করে নিজের হাত টেবিলে আঘাত করে বলে….
–“এটা কি হচ্ছে? এই সম্মোহন করার জাদু কাজ করল না কেন? তাহলে কি বাবা যা বলছে তাই ঠিক?”
চলবে…..??