#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#পর্ব ৩৩
#আনিশা_সাবিহা
মাধুর্য উঠে আসে বেড থেকে। বেলকনির কাছে দাঁড়ানো দরজায় অনুভবকে ভালোভাবে দেখে নেয় সে। সামনে কি আসলেই অনুভব দাঁড়িয়ে আছে নাকি এটা অরুণ বা তার মতোই কোনো শয়তান। অনুভব মাধুর্যের দৃষ্টি দেখে হেসে ওঠে। তবে হাসির মাঝে প্রাণ নেই। মাধুর্যের বেশ ইচ্ছে করল অনুভবের সুন্দর এবং সতেজ হাসি দেখতে। লোকটার হাসি যে এতো সুন্দর তা শুধু সারাদিন দেখতেই মন চায়।
–“সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে তা নিয়ে কনফিউজড হয়ে পড়েছো তো? যেহেতু এখানে এতো ইনসিকিউরিটি নিয়ে থাকতে হচ্ছে তাহলে থাকছো কেন মাধুর্য?”
মাধুর্য নিশ্চিত হয় সামনে অনুভবই রয়েছে। সে অনুভবকে অনুভব করতে ভুল করে না। আবেগে আপ্লুত হয়ে আসে তার চোখজোড়া। তার চোখ এখনো বলছে সে অনুভবকে কতটা চায়। তবে নিজোর দৃষ্টি পাল্টে ফেলে সে। বিরক্ত হওয়ার চেষ্টা করে বলে…..
–“কেন এসেছো এখানে?”
অনুভব এসে মাধুর্যের বাহু ধরে শক্ত করে। মাধুর্যের চোখমুখ কুঁচকে আসে।
–“কি করছো তুমি?”
–“এই প্রশ্ন তো আমাকে তোমার করা উচিত। তুমি কি করছো মাধুর্য? তুমি হয়ত ভুলে গেছো তুমি কে আর যার বাড়িতে এসে উঠেছো তারা কে। তোমার তো সব মনে পড়ে গেছে। তাহলে এটা কি মনে পড়েনি অরুণ কে? ও কতটা জঘন্য?”
–“অরুণ আর যেই হোক! ও তোমার মতো ঠকায় না। আমার বিশ্বাস আছে অরুণের ওপর। সে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা অন্তত করবে না।”
অনুভবের রাগ হয়। আজ কি না ওই শয়তান ওয়ারওল্ফের প্রিন্সের সঙ্গে মাধুর্য ওট তুলনা করল? রাগে কটমট করে আরো জোরে শক্ত করে মাধুর্যের বাহু একপ্রকার খামচে ধরে অনুভব। মাধুর্য চোখমুখ জড়িয়ে বলে….
–“ছাড়ো আমাকে।”
অনুভব ছাড়ে না তাকে। তৎক্ষনাৎ ঘরে প্রবেশ করে অরুণ। পায়ের শব্দে অনুভব মাধুর্যকে ছেড়ে দিয়ে তাকায় সেদিকে। রাগে চোখ লাল করে তাকায় অরুণ।
সরাসরি গিয়ে অনুভবের কলার চেপে ধরে সে। অনুভব ভেবে পায় না অরুণের সাহস। রাগে ফসফস করে ওঠে বাঘের মতো। অরুণের হাতের ওপর হাত রেখে বলে…..
–“কলার ছাড়।”
–“তুই এখানে কি করছিস বল তো? মাধুর্য তোকে পছন্দ করে না মাথায় ঢোকেনি এই কথা? ঘৃণা করে তোকে। তাও কেন এখানে এসেছিস ওকে জ্বালাতে।”
–“আমার হুডির কলার ছাড় অরুণ। আর তোকে আমাদের মাঝে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে?”
অরুণের হাত খামচে ধরে বলে অনুভব। অরুণ দাঁতে দাঁত চেপে বলে….
–“মাধুর্য দিয়েছে।”
অনুভবকে ধাক্কা দেয় কথাটি বলেই। অনুভব দমে না। হুড়মুড় করে এসে অরুণের গেঞ্জির একপাশ খামচে ধরে ঘুরাতে থাকে। অরুণের হাতে অনুভবের বড় বড় নখের দাগ বসে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ছুটে আসে মাধুর্য। অনুভবের বুকের দুপাশে হাত রাখতেই সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় সে।
–“কেন ঝামেলা করতে এসেছো? আমি এখানে ভালো আছি। তোমার কাছে ভালো থাকতে পারব না আমি। কখন না জানি এসে তুমহ আমাকে মেরে দেবে। আমি এই ভয় নিয়ে বাঁচতে পারব না। চলে যাও এখান থেকে।”
অনুভবের নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তার এমন দুর্দিন আসবে সে হয়ত কখনো স্বপ্নে ভাবতে পারেনি। তার ভেতরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে মাধুর্যের চোখের দিকে। মাধুর্য নিজের চোখ বন্ধ করে আবারও বলে…..
–“চলে যাও।”
অনুভব ছেড়ে দেয় অরুণের গেঞ্জি। বড় একটা শ্বাস নিজের মাঝে নিয়ে বেরিয়ে যায় দ্রুত চোখের পলকেই। কাছে থাকা কাঁচের জানালা দিয়ে তাকায় মাধুর্য। নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পায় অনুভব এলোমেলো ভাবে হেঁটে যাচ্ছে।
–“অনুভব সিনহার থেকে তোমার প্রাণ সংশয় এটা কেন বললে তুমি মাধুর্য? তুমি কি জানো অনুভব কে?”
অরুণের প্রশ্নে তার দিকে তাকায় মাধুর্য। কিছু একটা ভেবে বলে…..
–“হুমম। ও রক্তচোষা প্রাণী। ওর সঙ্গে কি করে সংসার করব আমি? আমি তো মানুষ। এভাবে সংসার করা যায় না।”
–“ভাগ্যিস জেনে গেছো। নয়ত আমিই জানিয়ে দিতাম। এবার বুঝতে পারছো কত বড় ভুল করেছো? তোমার মনে হয় না? এমন প্রাণীর বাঁচার কোনো অধিকার নেই?”
চোখ ছলকে তাকায় মাধুর্য। ফট করে বলে উঠল….
–“না। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি কোনো জীবেরই বাঁচার অধিকার তিনি করে দিয়েছেন। তবে বাঁচার অধিকার তো তাদের নেই যারা অন্যদের বাঁচতে দেয় না।”
অরুণ মাধুর্যের কথার মানে বুঝতে পারে না। ঘড়ির দিকে তাকায় সে। সাড়ে বারোটা পেরিয়ে গেছে। এখনই মাধুর্যকে ঘুমোতে হবে নয়ত ভোর রাতে তার সমস্যা হবে মাধুর্যকে সম্মোহিত করতে। সে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে ওঠে….
–“তুমি ঘুমাও। অনেক লেট হয়ে গিয়েছে। আমি আসছি। গুড নাইট।”
অরুণ চলে গেলে মাধুর্য এসে শুয়ে পড়ে।
বেশ কয়েক ঘন্টা কেটে যায়। সূর্যের আলো তখনও বের হয়নি। রাত প্রায় সাড়ে চারটা। দরজা দিয়ে প্রবেশ করে অরুণ। মাধুর্য ডান পাশ ফিরে ঘুমিয়ে রয়েছে। তার পাশে গিয়ে আলতো করে বসে অরুণ। আস্তে করে ডাকতে থাকে মাধুর্যকে।
–“মাধুর্য। মাধুর্য।”
মাধুর্য বেশ কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়েছে। এমনিতে তার ঘুম বেশ হালকা। একটু শব্দ হলেই ঘুম ভেঙে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। নড়েচড়ে উঠে চোখ মেলতেই এক অদ্ভুত কন্ঠের সুর ভেসে আসে।
–“তাকাও আমার চোখের দিকে।”
কপাল কুঁচকে বাম পাশ ফিরতেই একটা লাল জ্বলজ্বল করা চোখজোড়া দিকেই তাকাতেই ঘোর লেগে যায় তার। নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সে।
–“কে তুমি? কি তোমার নাম? আসল পরিচয়?”
–“আমি মাধুর্য চৌধুরী।”
যন্ত্রের মতল বলে ফেলে মাধুর্য। অরুণ নিশ্চিত হয়ে হাসে। সে আর যাই হোক ভাবনা নয়। ভাবনা হলে তার জাদুর কোনো প্রভাব পড়তো না ওর ওপর।
অরুণ গমগমে আওয়াজে বলে ওঠে…..
–“আমি যা বলব তুমি তাই করবে। আমি যেখানে নিয়ে যাবো তুমি সেখানে যাবে। কোনো প্রশ্ন করবে না।”
মাধুর্য মাথা দুলায়। তার চোখের পলক পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একভাবে তাকিয়ে আছে সে। অরুণ উঠে আসতে থাকে বাইরে। পেছনে অনুসরণ করে মাধুর্যও চলতে থাকে।
তারা এসে পড়ে ওয়ারওল্ফ রাজ্যে। অরুণ রাজ্য জয়ের হাসি হেসে ওঠে। অনেকটা সুনিশ্চিত হয়ে বলে…..
–“আর কিছুক্ষণ। মাধুর্যকে একটা ঘরে নিয়ে যাব। সেখানে শুধু রয়েছে কালো শক্তি! একবার সেইসব শক্তি মাধুর্যের মাঝে প্রবেশ ঘটলে আমাদের মতোই ভয়ানক হয়ে উঠবে ও।”
অরুণ নিজের কালো আর অন্ধকার প্রাসাদের ওপর দোতালায় উঠে শেষ প্রান্তের ঘরে আসে। মাধুর্যকে ঘরে ঢোকে। এমনিতে প্রাসাদটা ভয়ঙ্কর! যেকোনো সাধারণ মানুষ এখানে এলে জ্ঞান হারাবে এটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তার থেকেও ভয়ানক মাধুর্যকে যেই ঘরে এনেছে সেই ঘরটা। আশেপাশে শুধুই কালো শক্তির মেলা!
ঘরে ঢুকতেই এক হাওয়া বসে গেল মাধুর্যের শরীরে। হাওয়াটা যেন ভালো ছিল না। খুবই বাজে ছিল। মাধুর্য শিরশিরে উঠল। অরুণ মাধুর্যের হাত ধরে আনে ঘরের মাঝখানে। ঘরে কিছুই নেই শুধু একটা পালঙ্ক ছাড়া। পালঙ্কের ওপর ভয়ানক কিছু কারুকার্য। অরুণ আদেশের সুরে বলে….
–“যাও। গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি যতক্ষণ না আসছি উঠবে না।”
মাধুর্য দ্বিমত না করে রোবটের মতোই শুয়ে পড়ে। অরুণ মাধুর্যের কাছে চোখের ওপর হাত রেখে চোখ বুজিয়ে দেয়। তারপর ভয়ানক হেসে বিদায় নেয় সেখান থেকে।
অরুণ বিদায় নিতেই চোখ খোলে মাধুর্য। উঠে বসে সে। আশেপাশে এবং ওপরে তাকায়। কালো কালো কিসব ছায়া ঘুরছে! কালো কালো ধোঁয়া আশেপাশে। এসব একবার তার মাঝে প্রবেশ করলেই তার মাঝে শয়তানি সত্তা ঢুকে যাবে। কিন্তু আফসোস এসব তার কাছেই আসতে পারবে না। শুধু কালো কালো ধোঁয়াগুলো তার আশেপাশেই ঘুরছে। তাকে ছোঁয়াতেও পারছে না। মাধুর্য এক রহস্যময়ী হাসি দেয়। তাকে আস্ত রহস্যময়ী লাগছে। যেন কোনো রহস্যপুরীর রহস্যময়ী সুন্দরী এক রাজকন্যা সে!
–“তুমি হয়ত ভাবছো তুমি আমাকে এখানে এনেছো। কিন্তু তা তো নয় ওয়ারওল্ফ প্রিন্স অরুণ! আসল সত্যি হলো আমি তোমাকে এখানে এনেছি। সব সত্যিটা জানতে আমি নিজেই তোমার বাড়িতে এসেছিলাম। যদিও এখনো জানতে পারিনি কিন্তু খুব শীঘ্রই জানতে পারব। তোমরা তোমাদের কবর নিজেরাই খুঁড়ে রেখেছো। কবিতাকে কে মারল সেটা আমাকে জানতে হবে। ওকে যে তোমরাই মেরেছ সেটা আমার আগের স্মৃতি ফিরতেই বুঝতে পেরেছি। কারণ ওই আঘাতের দাগগুলো তোমাদেরই দেওয়া। আর আমার ধারণা সত্যি হলে তোমাদের ধ্বংস করে তবেই আমি ছাড়ব।”
কথাগুলো বলতে বলতে সেকেন্ডেই দরজা ভেঙে কেউ ঢুকে আসে। মাধুর্য আঁতকে ওঠে। তবে যে ঘরে ঢুকে আসে তাকে দেখে তার চোখ খুশিতে ছলছল করে ওঠে। এই চোখের পানি আঁটকে রাখার মতো না। সামনে যে রয়েছে তাকে দেখে নিজেকেও আঁটকে রাখার মতো ক্ষমতা নেই মাধুর্যের। অনেক কষ্টে দূরে রেখেছে নিজেকে। আর পারল না। উঠে দাঁড়িয়ে ছুটেই এসে বুকে এসে আঁচড়ে পড়ে। অনুভবের শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে যায়। মাধুর্য অনুভবের শার্ট খামচে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। অনুভব মেয়েটার কাঁদার কারণ খুঁজে পায় না। ভ্রু কুঁচকে মাধুর্যের মাথায় হাত দিয়ে বলে….
–“এই মেয়ে কাঁদছো কেন?”
–“হয়ত আমি এখনো তোমার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাইনি। তবুও আমার মন বার বার জানিয়ে দেয় তুমি আমাকে ভালোবাসো। এই ভালোবাসা অন্তত কাউকে খুন করতে পারে না। এসব অভিনয় আমার পক্ষে কঠিন ছিল। খুব কঠিন ছিল। আমার মন প্রতি মূহুর্তে তোমার নাম করেছে। এই সামান্য সময় তুমি আমার পাশে ছিলে না বলে আমি অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। তাতেই বুঝতে পেরেছি তুমি ছাড়া আমার কোনো অস্তিত্বই নেই। আমি পারব না তোমাকে ছাড়া সারাজীবন থাকতে।”
ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলে মাধুর্য। অনুভবের মরুভূমির মতো মনে পানির সঞ্চার হয় মাধুর্যের কথায়। তার মনে ভালোবাসা জাগাবার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট। অনুভব মাধুর্যকে জড়িয়ে ধরতে নেবে তখনই সরে যায় মাধুর্য। আশেপাশের কালো ছায়া খেয়াল করে সে। অনুভবকে ধাক্কা দিয়ে বলে….
–“তু….তুমি এখানে এসেছো কেন? এখানে আসতে তো বারণ করেছিলাম না? এখানে আমি যতটা নিরাপদ তুমি ততটা নও। তোমায় তো বারণ করেছিলাম। এটা তো আমাদের প্লানের অংশ ছিল না।”
–“আমি কি করতাম মাধুর্য? তোমায় একা ছাড়তে মন সায় দেয়নি। অন্তত ওই শয়তান, ব্লাডি ওয়ারওল্ফের সঙ্গে তো নই-ই। তোমার কাছে না আসলে নিশ্চিত তোমার চিন্তায় জ্ঞান হারাতাম আমি।”
মাধুর্য খেয়াল করে কালো ছায়ার মতো সবটা ধেয়ে আসছে অনুভবের দিকে। তাই সে আরো জোরে ধাক্কা মারে অনুভবকে। অনুভব কয়েক ধাপ সরে গেলেও রেহায় পেল না।
এই রাজ্যে আসার পরই তার মাঝে শয়তান সত্তা প্রবেশ করেছিল। এখন পুরোপুরি ভাবে সকল খারাপ সত্তা তার মাঝে ঢুকে গেল। অনুভবের কয়েকটা ধাক্কা অনুভূত হয়। মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে তার। মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে সামনে তাকানোর চেষ্টা করে। অনুভবের লাল চোখজোড়া দেখে ভড়কে যায় মাধুর্য। এটার ভয় পাচ্ছিল সে। মাথায় হাত দিয়ে নিচে পড়ে যায় অনুভব। চোখ বুজে ফেলে সে। মাধুর্য দিশেহারা হয়ে পড়ে। অনুভবকে বেশ কয়েকবার ডাকে সে। সাড়া না পেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে সে। আশেপাশে তাকিয়েও কোনো কিছু খুঁজে পায় না যা কাজে লাগে। দৌড়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে সে। বিভ্রান্ত হয়ে বলে….
–“এখন কি করব? কোথায় যাব? অনুভবের কি হবে?”
বেশ রাগ হয় তার অনুভবের প্রতি। কে আসতে বলেছিল তাকে? হলো তো বিপদ! কাটাবে কি করে এই বিপদ? কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মাধুর্য। হঠাৎ তার কানে আসে একটা অদ্ভুত শব্দ! কারো মৃদু চিৎকারে ভ্রু কুঁচকে যায় তার।
আশেপাশে তাকায় সে। এই আওয়াজটা আবার কোথা থেকে আসছে? তার মস্তিষ্ক বলছে আওয়াজটা আশেপাশে থেকেই আসছে। মৃদু চিৎকার শুনে বোঝা যাচ্ছে কেউ খুব কষ্ট আছে। মাধুর্যের মনে অজানা মায়া বাসা বাঁধে। খুঁজতে শুরু করে সেই শব্দের উৎস। একে একে প্রতিটা রুমে কান লাগিয়ে দেয় সে। দুটো রুম পড়েই একটা রুমে কান লাগিয়ে দিতেই সেই চিৎকারের আওয়াজটা দৃঢ় হয়। একটা পুরুষের চিৎকারের আওয়াজ। যে কিনা বার বার, পানি পানি করছে। আরেকটা মহিলার গোঙানির আওয়াজ। শুধু উম..উম… আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
–“কি নির্দয় এরা! পানি পর্যন্ত দেয়নি।”
মাধুর্য আশপাশটা ভালোভাবে দেখে দেয়। দরজার কাছে একটা ছোট্ট ফাঁকা দেখতে পায়। যেখান দিয়ে সম্ভবত খাবার দেওয়া হয়। মাধুর্য নিচু হয়ে সেই ফাঁকা দিয়েই দেখার চেষ্টা করে। তার তীক্ষ্ণ চোখজোড়া দিয়ে দেখতে পায় একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ এবং মহিলাকে। বুকটা ধক করে ওঠে মাধুর্য। অজানা অস্থিরতায় ছারখার হয়ে যায় আশপাশটা।
চলবে…..??