#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#পর্ব ৩৪
#আনিশা_সাবিহা
মাধুর্য দোটানায় ভুগছে। এখনো তার চোখজোড়া অন্ধকার এবং বদ্ধ ঘরে থাকা দুটো মানুষের ওপর স্থির। তবে আদোও তারা মানুষ কিনা তা জানে না মাধুর্য। নিজের চোখ দিয়ে শুধু একজন বড় বড় চুলওয়ালা এবং মুখ ভর্তি লম্বা দাঁড়িওয়ালা লোক এবং মুখে কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা মহিলাকে দেখছে। মাধুর্য চোখ সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। একদিনে অনুভবের জ্ঞান ফেরাতে হবে অন্যদিকে এই অসহায় দুটো বন্দিনী মানুষ। কারা এরা?? নিজের লক্ষ্য স্থির রাখতে চাইলেও পারে না মাধুর্য।
–“পা…পানি দাও। আর পারছি না। শ…শক্তি ফুরিয়ে আসছে।”
ভেতর থেকে আসা সেই গলা শুনে মাধুর্য আর অপেক্ষা করে না। আসল রুপে এসে শক্তি দিয়ে ভেঙে ফেলে সেই দরজা। তারপর স্বাভাবিক রুপে ফিরে আবারও আশপাশটা ভালোভাবে দেখে ঢুকে পড়ে। বদ্ধ ঘরে ধুলো এবং বিদঘুটে গন্ধে তার নাক কুঁচকে এলেও কোনো চেনা অস্তিত্ব অনুভব করে মাধুর্য।
অতিরিক্ত আলোতে মধুরিমা এবং মুহিব নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করে। অন্ধকারে থাকতে থাকতে আলো তাদের কাছে অসহ্যকর হয়ে উঠেছে। তবে দুজনেই কৌতুহল দমাতে না পেরে দুজনেই সামনে তাকানোর চেষ্টা করে। আজ না চাইতেও বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবার আশা তড়তড় করে বাড়ছে তাদের মনে। একটা মেয়ের অবয়ব দেখতে পেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায় তারা। মেয়েটি যতই তাদের কাছে আসতে থাকে তার মুখ স্পষ্ট হতে থাকে মধুরিমা আর মুহিবের কাছে। এ যেন পরী এসেছে তাদের মুক্তি করতে।
মাধুর্য তাদের কাছে এসে এক নাগারে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে। তারপর এদিকসেদিক তাকিয়ে পানির কোনো উৎস খোঁজার চেষ্টা করে। ঘরের কোণায় পড়ে আছে একটা মাটির কলসি। কলসির ওপরে রয়েছে স্টিলের গ্লাস। মাধুর্য এগিয়ে যায়। কলসির ওপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে ভালো পানি দেখে গ্লাসে পানি নিয়ে এগিয়ে দেয় মুহিবের দিকে।
মুহিব চোখের পলকই ফেলতে পারছে না মাধুর্যকে দেখে। মেয়েটাকে বড়ই কাছের মনে হচ্ছে। তৎক্ষনাৎ মাধুর্য বলে ওঠে…..
–“কারা আপনারা? আপনাদের তো হাত-পা বাঁধা! দাঁড়ান আমি খুলে দিচ্ছি।”
মাধুর্য প্রথমে মুহিবের বাঁধন খুলে দিয়ে মধুরিমার বাঁধন খুলে দেয়। তাদের দুজনেরই জবান বন্ধ হয়ে গেছে। তারা বুঝতেই পারছে না এটা তাদের স্বপ্ন নাকি বাস্তব।
–“পানির গ্লাসটা নিন।”
মুহিব গ্লাস নিয়ে পানি পান করে। মাধুর্য দুজনকে নিখুঁত ভাবে দেখতে থাকে। এদের বড্ড চেনা মনে হচ্ছে তার। মধুরিমার গায়ে ময়লা জামাকাপড়, মুখচোখে কালো ধুলো পড়ে গেছে। মাথার কত বছর ধরে ঠিকঠাক করে চিরুনী দিয়ে আঁচড়ায়নি। চুলগুলো জট পাকিয়ে গেছে। নখগুলো বড় বড় হয়ে কালো কালো হয়ে গিয়েছে। মাধুর্য চোখ বুজে মাথায় চাপ দিল। তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে মা-বাবার কিছু ছবি। যা ওকে সামিহা দেখিয়েছিল।
ছবিগুলোর সঙ্গে সামনের দুটো ব্যক্তির চেহারা হুবুহু মিলে যাওয়ায় বেশ শক খেয়ে চোখ খুলে ফেলে মাধুর্য। হ্যাঁ এদের ছবি দেখেই তো মাধুর্য বড় হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে অভিমান করে দেখতো না। ভাবত তাকে ছেড়েই তার মা-বাবা চলে গেছে। মাধুর্যের চোখজোড়া ছলছল করে ওঠে। ঠোঁটজোড়া অসম্ভব ভাবে কাঁপতে থাকে। মধুরিমা উঠে দাঁড়ায়। শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গে যেন জং ধরে গেছে। মাধুর্যের কাছে এসে বলে…..
–“ও মেয়ে, কে তুমি?”
–“মা…মাধুর্য! মাধুর্য চৌধুরী।”
মধুরিমা চমকায়। তার চোখকে তার বিশ্বাস হয়না। মুহিবও বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে দেখছে মাধুর্যকে। মধুরিমার হুট করে মনে হয় তাদের মেয়ে কোত্থেকে আসবে? মূহুর্তেই আবারও মাধুর্যের চোখজোড়া দেখে মনে হয়, এইতো সেই মেয়ে যাকে সে জন্ম দিয়েছিল। পুরো রাজ্যের মায়া ছিল তার চোখে। এই সেই মেয়ে।
মাধুর্যের গালে নিজের ময়লা হাতজোড়া রেখে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে থাকে মধুরিমা। তার চোখে পানি ভরে ওঠে। মাধুর্য কান্নামাখা গলায় বলে….
–“তোমরাই তো আমাকে ছেড়ে এসেছিলে না? আমার মা-বাবা?”
–“আমরা তোকে ছেড়ে যায়নি রে মা। আমাদের এখানে আনা হয়েছে আর ভবিষ্যতে আমাদের তোর বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে বলে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল।”
মুহিব কাঁদো কাঁদো গলায় কথাটি বলে ওঠে। মধুরিমা সেই থেকে নিজের মেয়েকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। নিজের এতো বছরের মেয়েকে দেখার তৃষ্ণা মিটিয়ে যাচ্ছে। বিরবির করে বলে….
–“আমার মেয়ে। আমার মেয়ে!”
বুকে টেনে নেয় সে মাধুর্যকে। মাধুর্য এতো বছর পর নিজের মায়ের বুকে মাথা রাখে। মায়ের শাড়িটা ময়লা বটে। তবে মা মা গন্ধ আছে এখানে। আর রয়েছে শান্তি।
–“ওই শয়তান গুলো তোমাদের খুব কষ্ট দিয়েছে না? আমি ওদের ছাড়ব না।”
কিছুক্ষণের মাঝেই মাধুর্যের মনে পড়ে অনুভবের কথা। মাথা উঠিয়ে বাইরের দিকে এসে বলে….
–“আমাদের এখান থেকে যেতে হবে মা-বাবা। আর অনুভব মানে যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে বাঁচাতে হবে। ও জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে।”
মুহিব ও মধুরিমা এলোমেলো পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে আসে। মুহিব প্রশ্ন করে…..
–“অনুভবের সঙ্গে তোর বিয়ে হয়েছে?”
–“হ্যাঁ বাবা। তোমরা নিশ্চয় জানো আমি কোনো মানুষ নই। তোমরা মানুষ হলেও তোমাদের মেয়ে কোনো মানুষ নয়।”
–“আমরা সব জানি। তুই যা জানিস না তাও আমরা জানি। অনুভবকেও চিনি আমরা। যাকে তোর মৃত্যুর দায়ে তোর আগের মা অভিশাপ দিয়েছিল। সে একজন ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স। তাই তো?”
মাধুর্যকে কটাক্ষ করে কথাগুলো বলে ওঠে মধুরিমা। মাধুর্য পেছন ঘুরে অবাক নয়নে তাকায়।
–“তোমরা কি করে জানলে?”
–“এখানেই তো এতোদিন ছিলাম। এদের থেকেই সব জেনেছি। অনুভব তোকে কোনোদিনই আঘাত করেনি মাধুর্য। যা ছিল সবই ছিল এই ওয়ারওল্ফদের ষড়যন্ত্র। এতে ওরা তোকে মারতেও সক্ষম হয়েছিল আবার ভ্যাম্পায়ার রাজ্যকে অন্ধকার বানাতেও পেরেছিল।”
মাধুর্য এসব কিছুর অনেকটাই আন্দাজ করেছিল। মায়ের কথা শুনে নিশ্চিত হলো সে। তবে তার মাথা চক্করও দিয়ে উঠল। ভাগ্যিস সে একটু হলেও অনুভবকে বিশ্বাস করেছে। নয়ত নিজেকেই ক্ষমা করা দায়ের হয়ে পড়তো।
–“তোমরা আমার সাথে এসো। অনুভব একটা ঘরে রয়েছে।”
দ্রুত সেই ঘরে আসে মাধুর্যরা। অনুভবকে সজ্ঞানে দেখে কিছুটা অবাক হলেও খুশি হয় মাধুর্য।
–“তোমার জ্ঞান ফিরেছে? তুমি ঠিক আছো?”
অনুভব কিছু বলে না। ও হাঁটুর ওপর হাত রেখে বসে আছে চুপচাপ। মাধুর্যের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। অনুভবের চোখ লাল হয়ে জ্বলতে শুরু করলে ঢোক গিলে সে। সে জানে না অনুভবের রিয়েকশন কেমন হবে। কাঁপা কাঁপা সুরে সে ডেকে ওঠে….
–“অনুভব!”
তবুও অনুভবের কোনো সাড়াশব্দ নেই। মাধুর্য এগিয়ে যায়। মধুরিমা পেছন থেকে বলে….
–“সাবধানে মা। এই রাজ্য ভালো নয়। আমরা মানুষ এবং শ্রেষ্ঠ জীব বলে আমরা নিরাপদ তবে এটা তোদের জন্য অনেক ক্ষতিকর।”
–“আমি জানি মা। অনুভবের মাঝে বাজে সত্তার প্রবেশ ঘটেছে।”
কথাটুকু বলেই অনুভবের কাঁধে হাত রাখে মাধুর্য। সঙ্গে সঙ্গে অনুভবের চোখ আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। হকচকিয়ে তাকায় সে। মাধুর্যকে দেখে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে তাকে আচমকা জড়িয়ে ধরে অনুভব। ব্যাপারটাই মাধুর্য হতভম্ব হয়ে যায়। সামনেই রয়েছে তার মা-বাবা। তারই সামনে অনুভব তাকে এভাবে?
মাধুর্যের কান গরম হতে শুরু করে লজ্জায়। অনুভবকে যতই ছাড়াতে চাইছে লোকটা তাকে ততই আষ্টেপৃষ্টে ধরে ফেলছে।
–“তোমাকে ছাড়া আমি প্রতি মূহুর্তে ফাঁকা অনুভব করছি মাধুর্য। আমার জাস্ট আর ভালো লাগছে না।”
–“তুমি কি করছো? ছাড়ো আমাকে। এভাবে ওদের সামনে আমাকে….!”
লজ্জায় কথা বের করতে পারে না মাধুর্য। অনুভব ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকায়। দুজন বয়স্ক মানুষকে দেখে ছেড়ে দেয় মাধুর্যকে। মাধুর্য লজ্জায় ফুলের মতো নেতিয়ে পড়েছে। চোখ তুলে তাকাবার মতো অবস্থাতেও নেই সে। মধুরিমা ও মুহিব প্রশান্তির হাসি দিচ্ছেন মেয়েকে দেখে। যতই হোক মেয়েটি সুখে আছে কি না!
মাধুর্যের কানে কানে অনুভব প্রশ্ন করে….
–“উনারা কে?”
–“আমার মা-বাবা। ওদের এখানে বন্দি রাখা হয়েছিল এতোদিন। আর আমরা জানতেও পারিনি।”
–“এখন কি করতে চাও মাধুর্য? আমাকে এখনো হয়ত পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারোনি না? কারণ এখনো তো এমন কোনো প্রমাণ পাওনি আমার পক্ষে।”
অনুভবের কথার ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে অসম্ভব অভিমান। থাকাটাই স্বাভাবিক। মধুরিমা তাদের কথার মাঝে বলে….
–“আমি আর মাধুর্যের বাবা আমরা নিজে তোমার পক্ষে প্রমাণ। আমরা জানি আসল কাজটা অরুণ করেছে। আমাদের সামনে বেশ কয়েকদিন মজার ছলে স্বীকারও করেছিল। অনুভব তো সেদিন সেখানে উপস্থিতই ছিল না যেদিন তোকে মেরে ফেলা হয়। ও পরে তোর কাছে গিয়েছিল।”
–“আমি জানি মা। অনুভবকে যদি আমি বিশ্বাস না-ই করতাম তাহলে আবার সেদিন রাতে আবারও ওর কাছে গিয়ে কথা বলতাম না। তাকে বুঝতে চাইতাম না।” (অনুভবের দিকে চোখ পাকিয়ে)
অতীত…..
সেদিন মাধুর্য অনুভবকে ভুল বুঝে সেই তলোয়ার ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। টেরিসে এসে দাঁড়িয়ে ছিল মাধুর্য। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো শুধুমাত্র অনুভবের বিশ্বাসঘাতকতা। মন ভরে কাঁদতে মন চায় তার। এক ফালি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে…..
–“আমাকে কে বলে দেবে সত্যিটা? আমার যে নিজের স্বামীকে বিশ্বাস করতে বড্ড ইচ্ছে করছে। আমাকে কে বলে দেবে কি হয়েছিল সেই রাতে? আমার মাথা আর কাজ করছে না। পাগল হয়ে যাব আমি। অনুভবের দূরে থাকলেও পাগল হয়ে যাব। কাছে থাকলেও সন্দেহের অবকাশ যাপন করব। এভাবে তো চলতে পারে না। আমি আমার স্বামীকে ছেড়ে যেতে চাই না। চাই না আমার প্রিন্সকে ছেড়ে দূরে যেতে।”
বেশ কিছুক্ষণ মন ভরে কেঁদে নেয় সে। টেরিসের কাঁচের টেবিলে রাখা রয়েছে অনুভবের ভাইলেন। অনুভব একসময় তাকে বলেছিল এটি কষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
কষ্ট কমানোর তাড়নায় ভাইলেন টি হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে টেরিসের ধারে। চাঁদের দিকে তাকাতেই অনুভবের প্রতিচ্ছবি মনে করতেই চোখ বন্ধ করে মাধুর্য। তার চোখ বেয়ে পড়ে পানি। আস্তে আস্তে সুর তুলতে থাকে ভাইলেনে। হালকা বাতাসে দুলতে থাকে তার শাড়ির পাতলা আঁচল। না চাইতেও আবারও অনুভব করতে থাকে অনুভবকে। কানে বাজতে থাকে অনুভবের কথাগুলো। একসময় হাল ছেড়ে বসে পড়ে সে। মাথায় চাপ দিতেই ভেসে ওঠে কবিতার মৃতদেহ। কবিতা বলেছিল, তাকে কেউ ভাবনা ভেবে মেরে ফেলেছে। কিন্তু কে তাকে মেরেছিল তা এখনও অজানা। আর সে ভাবনা হলেও কেউ কেন মারত তাকে? যদি অনুভবই খুনি হতো তাহলে সে বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারত না।
–“নিশ্চয় খুনি অন্যকেউ। ভাবনাকে মেরে কার কি লাভ? সেই আঁচড়ের দাগগুলো একজন ওয়ারওল্ফেরই ছিল। আমি নিশ্চিত। তাহলে কি ৪৯ বছর আগেও এমন কোনো ষড়যন্ত্র হয়েছিল যার কারণে ৪৯ বছর পরেও ভাবনাকে মেরে ফেলার তাড়া ছিল তাদের।”
কিছু একটা ভেবে টেরিস থেকে নেমে নিচে আসে মাধুর্য। ঘরে এসে গেট খুলতেই অনুভবকে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায় সে। অনুভবও তার মতোই চাঁদ দেখে হয়ত কষ্ট কমাতে ব্যস্ত ছিল। মাধুর্যকে দেখে সে মলিন কন্ঠে বলে…..
–“কিছু বলবে?”
–“কি করছো?”
মাধুর্যের এই প্রশ্নে অবাক হয় অনুভব। এই সময় সে এমন প্রশ্ন করবে ভেবেই পায়নি অনুভব। নিজেকে সামলে সে উত্তর দেয়….
–“এইতো, চাঁদ দেখে আরেক চাঁদকে ভোলার চেষ্টা করছিলাম।”
মাধুর্য চমকায় এমন উত্তর শুনে। অনুভব তাকে এমন কিছু বলবে তা ধারণার বাইরে ছিল। গলা শুকিয়ে আসে তার।
–“ভোলার চেষ্টা করলাম ঠিকই। কিন্তু পারলাম না জানো তো। যেই চাঁদকে হৃদয়ে বসিয়ে রেখেছি। সেই চাঁদকে ভোলা তো দূর! ভোলার চেষ্টা করলেও হৃদকম্পন বাড়ছে।”
–“কেন অপেক্ষা করেছো আমার জন্য ৪৯ বছর? কেন নিয়েছিলে আমার মায়ের দেওয়া অভিশাপ মাথা পেতে? তুমি তো বলেন, তুমি নির্দোষ! তবে কেন অভিশপ্ত হয়ে ছিলে?”
অনুভব বিস্ময়ের চোখে তাকায়। সে তো এসব বিষয়ে মাধুর্যকে কিছুই জানায়নি। তবে সে এসব জানল কি করে? মাধুর্য যেন অনুভবের ভেতরে থাকা প্রশ্ন বুঝতে পারে। তাই উত্তরে বলে….
–“এলিনা আমাকে এসব বলেছে। সে হঠাৎ করেই এসব শুনতে পেয়েছিল। আমি বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলাম যখন তখন আমাকে বলেছে।”
অনুভব হাসে। পকেটে হাত রেখে ঘুরে আবারও আকাশের চাঁদের দিকে তাকায় সে।
–“আমি এখন যা বলবো বিশ্বাস করবে?”
–“বলেই দেখো।”
–“আমি তোমার মায়ের অভিশাপ মাথা পেতে নিয়েছি তোমাকে দ্বিতীয় বার পাবার আশায়। তোমাকে দ্বিতীয় বার পাবার লোভেও বলতে পারো। আমি নিষ্প্রাণ হয়ে ছিলাম কারণ তুমি ছাড়া আমি প্রথমেই প্রাণহীন হয়ে পড়েছিলাম। আমি অপেক্ষা করেছি আমাদের #অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা পূর্ণ করতে।”
মাধুর্য না চাইতেও পেছন থেকে অনুভবকে জড়িয়ে ধরে। সে নিজেকে আটকাতে পারছে না। চাইছেও না। মাঝে মাঝে নিজের কাছে হেরে যাওয়া ভালো।
–“আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে চাই। আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছু করতে পারো না। যে আমায় এতো ভালোবাসে সে আমায় এতো নির্মম মৃত্যু দিতে পারে না।”
–“আমাকে জোর করে বিশ্বাস করতে চাইলে বিশ্বাস করার দরকার নেই মাধুর্য। বিশ্বাস মন থেকে আপনা-আপনি আসে।”
সেদিন মাধুর্য অনুভবের ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। দুজন মিলে পরিকল্পনা করেছিল সত্যিটা সামনল আনার। তবে অরুণের বাড়িতে গিয়ে থাকার সম্মতি প্রথমে অনুভব না দিলেও একসময় রাজি করায় মাধুর্য। অরুণের সামনে মাধুর্য ইচ্ছে করেই অনুভবের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিল। যাতে অরুণ ভাবে অনুভবকে সে পছন্দই করে না। আর সেটাই হলো।
বর্তমান….
–“আমাদের এখন এখান থেকে বের হতে হবে।”
মধুরিমা ভীতির চোখে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে। সবাই সম্মতিও জানায়। তবে হঠাৎ কোনো পুরুষালি গলায় সবাই চমকে ওঠে। মাধুর্য অনুভব করে তার গলার সামনে মস্ত বড় তলোয়ার কেউ ধরে রেখেছে।
–“আমার ধারণা ঠিক ছিল। তুই তাহলে সাধারণ মেয়ে নয়। তোরা কি ভাবিস তোরা একা চালাক? আমি শয়তান ওয়ারওল্ফের কিং অলক! আমার চোখ কে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। আমি তোকে তখনই ধরে ফেলেছিলাম যখন প্রিন্স অনুভবের সঙ্গে তোকে এই ঘরে দেখি।”
কিং অলক কে দেখে সবাই ভড়কে যায়। মাধুর্যের গলায় তলোয়ার দেখে ঘাবড়ে যায় মধুরিমা ও মুহিত। মধুরিমা চিৎকার দিয়ে ওঠে….
–“আমার মেয়ে।”
অনুভবের চোখজোড়া সবুজ রঙে ধারণ করার বদলে লাল হয়ে ওঠে রাগে। হিংস্র রুপ ফুটে ওঠে তার মাঝে।
–“মাধুর্য আমার। ওকে ছেড়ে দে।”
মাধুর্য নিজেও চমকিত হয়ে তাকায় অনুভবের দিকে। এ অনুভবের কি রুপ? ও ভয়ঙ্কর রেগে গিয়েছে। অনুভব আবারও হুংকার দিয়ে বলে ওঠে….
–“ছেড়ে দে আমার মাধুর্যকে!”
তার হুংকারে সকল ওয়ারওল্ফ ছুটে আসে। সেই সঙ্গে অরুণও আসে।
চলবে….??