অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #১৪,১৫

0
924

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#১৪,১৫
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৪

কম্পিউটারের মনিটরের সামনে বসে আছে মাধুর্য। তার মন নেই মোটেও কাজে। বার বার নিজে লাগা আঘাতগুলো নেড়েচেড়ে দেখছে সে। ব্যাপারটা না ভাবার খুব একটা সময় না পেলেও ওর আবছা কিছু মনে পড়ছে। ও কাউকে আঘাত করেছে। সেও তাকে আঘাত করেছে। কিন্তু ঠিকঠাক ভাবে তার কিছুই মাথায় আসছে না। ঠিক সেই সময় তার কেবিনে ঢুকে পড়ে নীলিমা। মাধুর্য নীলিমার হঠাৎ আগমনে কিছুটা আঁতকে উঠে নীলিমার দিকে তাকায়। দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে নীলিমা তার হাতে ধরিয়ে দেয় আরো কিছু ফাইল। কম্পিউটারে চোখ বুলিয়ে নীলিমা ঝাঁঝালো গলায় বলে ওঠে….
–“প্রথম দিন বেশ ভালোই কাজ করেছিলে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই দেখছি অলস হয়ে পড়েছো। কাজ করছিলে নাকি ফাঁকিবাজি? স্যার কিন্তু হিসেব-নিকেশ এর ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে বলেছে।”
মাধুর্য ফাইল নিয়ে ঠিকঠাক চোখ বুলিয়ে বলে…
–“আসলে ম্যাম সরি। আমি কিছুটা বেখেয়ালি হয়ে পড়েছি। আর হবে না।”

নীলিমা আরো কিছু বলবার আগেই দরজার খটখট শব্দ হয়। মাধুর্য ও নীলিমা দরজার দিকে তাকায়। র্নিলিপ্ত হয়ে ঢুকে পড়ে অনুভব। কাজের ভীড়ে নিজের চুলগুলো মনে হয় ঠিক করতে পারেনি সে। তাই ডান হাত দিয়ে চুলগুলো এদিক ওদিক করতে। তাতে চুল গোছালো হওয়ার বদলে আরো আশেপাশে মেলে যায়। চোখ তুলে তাকাতেই প্রথমে নীলিমাকে দেখে কপাল কুঁচকে তাকায় সে।
–“মাধুর্যের কেবিনে অসময় কি করছো?”
–“অসময় কোথায় অনুভব স্যার? এখন তো কাজের সময়। আর মাধুর্যকে কাজ দিতেই এসেছি।”
নীলিমা বেশ জবুথবু হয়ে জবাব দেয়। অনুভব কিছুক্ষণ চুপ থেকে চেয়ার টেনে নিয়ে বসে আয়েশ করে জবাব দেয়…..
–“নাউ ইউ মে গো।”
নীলিমা চুপচাপ কেটে পড়ে সেখান থেকে। মাধুর্য ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে অনুভবের দিকে। অনুভব মাধুর্যের দৃষ্টি দেখে টেবিলে হাত রেখে একটু মাথা ঝুঁকিয়ে বলে….
–“আজ কি আমায় বেশি হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে?”

মাধুর্য চোখের পলক ফেলে অন্যদিকে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বলে….
–“আমি জানি না। আপনি কি কোনো কাজ দিতে এসেছেন?”
–“তা তো অবশ্যই। তা তো অবশ্যই।”
নিজের সেই অদ্ভুত হাসিটি দিয়ে আরো চেয়ার টেনে নিয়ে বসে অনুভব। মাধুর্য ইশারা করে বলে….
–“কি কাজ বলুন?”
–“দুপুরে খেয়েছো কিছু?”
–“না।”
ছোট্ট করে জবাব দিয়ে উৎসাহ নিয়ে তাকায় মাধুর্য। হঠাৎ লোকটি এসব জানতে চাইছে কেন? মাধুর্য নিজের কাজেও মন দিতে পারছে না। অনুভব ওর আশেপাশে থাকলে অদ্ভুত এক অনুভূতি ঘিরে ধরে রাখে তাকে। অন্য কোনো কাজে মন দিতে ইচ্ছে করে। এইটা যেন শুধু অনুভূতি নয় আস্ত একটা অনুভূতির জাল। যেই জালে অনুভূতির সংমিশ্রণে রয়েছে মোহ, মায়া, কাছে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষার ও অসম্ভব ভালো লাগা।

কল্পনা থেকে বেরিয়ে অনুভবকে গভীরভাবে লক্ষ্য করে সে। অনুভব টেবিলে থুঁতনি রেখে কি ফোনে কি যেন একটা করছে। এই অবস্থাতেও সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। এতোটা নিখুঁত ভাবে সুন্দর কোনো পুরুষ হয়? এলিনা ঠিকই বলে এতো কোনো রাজ্যের রাজকুমার। মিনিট দুয়েক পড়েই ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে সোজা হয়ে বসে দৃষ্টিপাত করে অনুভব। মাধুর্য হালকা নড়েচড়ে উঠে বলে….
–“আপনার নাকি কোনো কাজ আছে? কোন কাজ বললেন না তো!”
অনুভব ডান হাত তুলে সব আঙ্গুল গুটিয়ে নিয়ে বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে বাইরের দিকে ইশারা করে বলে….
–“কাজ আসছে বাইরে থেকে।”
–“কাজের কি পা রয়েছে? তারা হেঁটে হেঁটে আসবে?”
–“থাকতেই পারে। নাথিং ইজ ইম্পসিবল ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।”
কথাটি বলতে বলতেই একটি লোক অনেকগুলো খাবার নিয়ে প্রবেশ করে। চোখ বড় বড় করে তাকায় মাধুর্য। অনুভবের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে অনুভবে বর্তমানে কি করতে চাইছে। মানুষটির মতিগতি বোঝায় দায়।

খাবারগুলো রেখে লোকটিকে অনুভব ইশারা করতেই চলে যায়। একটা খাবারের প্লেট মাধুর্যের দিকে ঠেলে দিয়ে একটু চাপা সুরে বলে….
–“হা করে তাকিয়ে আছো কেন? শুরু করো।”
–“এসব আমার জন্য? কিন্তু কেন?”
আহাম্মকের মতো মুখটি করে প্রশ্ন করে মাধুর্য। অনুভব কপালের চামড়া জড়িয়ে কপালে হাত বুলিয়ে বলতে থাকে….
–“কিন্তু কেন মানে কি? খাবার তো খেতেই হবে। খাবার না খেলে কাজ করতে কি করে? অসুস্থ হয়ে পড়বে। তারপর দোষ হবে কার? আমার নয়ত আমার ড্যাডের। আমি এসব ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করি বুঝলে? এখন শুরু করো।”
কিছুক্ষণ থ মেরে তাকিয়ে থেকে মনে মনে হাজারটা গালি দিয়ে প্লেটের দিকে তাকায় মাধুর্য। ধীর গলায় প্রশ্ন করে…..
–“আপনার সামনে খাবো?”
–“কেন খাওয়া যাবে না? তোমার লজ্জা দেখে মনে হচ্ছে আজকে আমাদের বাসর রাত। তাই লজ্জায় মুখটা ফুলের মতো নেতিয়ে গিয়েছে।”

মুখটা আরো লাল হয়ে যায় মাধুর্যের। কি নির্লজ্জ কথাবার্তা অনুভবের। রাগে কয়েকটা বড় বড় শ্বাস নিয়ে খাবার মুখে দেয় মাধুর্য। অনুভব মাধুর্যের অগোচরে মুখ টিপে হেসে এমনি কাগজ হাতে নিয়ে দেখতে থাকে যাতে মাধুর্যের খাওয়ার অসুবিধে না হয়।
খাওয়া শেষ পানি মুখে দিয়ে শান্ত হয়ে থাকে সে। অনুভবকে দেখে বোঝার চেষ্টা করে সে কি আজ যাবে না এখান থেকে। কোনোমতে খাবার টুকু খেতে পেরেছে সে। খাবার নিয়ে আসা লোকটিই আবার খালি প্লেট নিয়ে যেতেই গা টানা দিয়ে উঠে দাঁড়ায় অনুভব। দুই পা এগিয়ে এসে মাধুর্যের চেয়ারের হ্যান্ডেল ধরে চোখে চোখ রাখে সে। হুট করে ঘটনা ঘটনায় নড়েচড়ে কেঁপে ওঠে মাধুর্য। শুকিয়ে আসে তার গলা। অনুভব ডান হাতটি মাধুর্যের ঠোঁটের দুইপাশে এগিয়ে এনে আঙ্গুল দিয়ে মুছিয়ে দেয় তার ঠোঁটের আশেপাশে লেগে থাকা পানির ফোঁটা। এই আলতো ছোঁয়ায় যে এতোটা শিহরণ জাগাবে তা মাধুর্যের ভাবনার বাইরে ছিল। আবেশে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসে তার। যখন চোখ খোলে ততক্ষণে অনুভব তার আশেপাশেও নেই। কোথাও নেই। বাইরে বেরিয়ে গেছে। লজ্জায় মিইয়ে পড়ে মুচকি হাসে মাধুর্য।

–“বাবা, বাবা, বাবা! আমি এখন অবাকের চরম সীমায়। মস্তিষ্ক খালি খালি লাগছে। বুঝতে পারছি না কি করব। কেন আমার সম্মোহনী কালো জাদুর প্রভাব পড়লো না ওদের ওপর? কেন পড়ল না?”
অরুণ রাগে গজরাতে গজরাতে কথাটি বলে ওঠে। তার মনে টান টান উত্তেজনা। এতো অবাক করার বিষয়। অরুণের জাদুর প্রভাব পড়েনি এমনটা খুব কমই হয়েছে। তার বাবাকে চুপ দেখে সে আবারও বলে ওঠে….
–“এটা শুধু ভ্যাম্পায়ারের ক্ষেত্রেই সম্ভব হতে পারে। আর সেই ভ্যাম্পায়ারকেও খুব শক্তিশালী হতে হবে।”
এবার মুখ খোলেন অরুণের বাবা। দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠেন….
–“তোকে বলেছিলাম যার তার প্রেমে পড়িস না। আমিও জানি না এখন কি করা উচিত। একে তো ভ্যাম্পায়ার রাজ্য নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে আর তার ওপর তোর পছন্দ করে ওই মেয়েটা কে, আমাদের কোন নতুন শত্রু সেটাও জানতে পারছি না। মনে হচ্ছে সবকিছু ধ্বংস করে দিই।”
অরুণ মুখটি বিষন্ন করে বলে উঠল….
–“বাবা, যদি মেনে নিই মাধুর্য ভ্যাম্পায়ার তাহলে কবিতার ক্ষেত্রেও আমার সব পরিশ্রম বৃথা গেল কেন? কবিতার ওপরেও কোনো প্রভাব পড়েনি বাবা। তাহলে কি সেও ভ্যাম্পায়ার?”

–“হতে পারে। আর আমি নিশ্চিত ওদের মধ্যেই কেউ একজন ভাবনা। আর কে ভাবনা সেটা তোকেই খুঁজে বের করতে হবে। আর ওই অনুভবের কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের প্রদীপ নিভিয়ে দিতে হবে।”
অরুণ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবুক হয়ে কিছু একটা ভাবতে শুরু করে। তাৎক্ষণিক বলে ওঠে…..
–“খুব দ্রুত প্রমাণ হবে। কে ভ্যাম্পায়ার আর কে নয়। ভ্যাম্পায়ারদের সব থেকে বড় দুর্বলতা হচ্ছে রক্ত। আর সেই রক্ত দিয়েই প্রমাণ হবে মাধুর্য আর কবিতা দুজন কে? আর সেদিন তো আমাদের একজন মেয়েটাকে ভ্যাম্পায়ার রুপে দেখেছিল। সে বলতে পারবে কে আসল ভ্যাম্পায়ার।
–“বেশ ভালো পরিকল্পনা। শুধু সুযোগমতো কাজে লাগাতে পারলে হয়।”
জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় অরুণ। ভাবতে থাকে মাধুর্যের কথা আর চেয়ে থাকে বাইরে। তাদের রাজ্যের আকাশ ঘন কালো। সবসময় এমনটাই থাকে। বাইরের গাছপালা শুকনো, শুকনো। যেন নিষ্প্রাণ একটি জায়গা। অরুণ মনে মনে চাইছে মাধুর্য যেন একজন সাধারণ মানুষই হয়।

রাতে…..
মাঝে মাঝে বাতাস বইছে বাইরে। ঘড়িতে প্রায় আটটা বাজে। বাইরের আবহাওয়া তেমন ভালো নয়। যখন তখন বৃষ্টি আসতে পারে। মাধুর্য মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে বইয়ের পাতায়। কিন্তু মন বসলে তো? বইয়ের দিকে তাকালেও যেন ভেসে উঠছে অনুভবের প্রতিচ্ছবি বইয়ের প্রত্যেকটা পাতায়। এই ‘অনুভব সিনহা’ নামক মানুষটির প্রতি ধীরে ধীরে হলেও বেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মাধুর্য। কলমের ঠোঁটের সঙ্গে ঠেকিয়ে সে ভাবতে থাকে, তার প্রতি অনুভবের ফিলিংস কি? অনুভব কি তাকে নিয়ে একই রকম ভাবে? তাকে নিয়ে অনুভবও কি একই অনুভূতির মেলায় মাতে? দমকা হাওয়ায় টেবিল থেকে মাধুর্যের ইম্পরট্যান্ট নোটস পড়ে যেতেই নিজের সুন্দরতম কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে। ইশশ….কত সুন্দর ভাবনায় মেতে ছিল সে। বিরক্তির শব্দ করে একটু নিচু হয়ে নোটস তুলে জোরে টেবিলে রাখে। কলম কামড়াতে কামড়াতে আবার ভাবে অনুভবের অসম্ভব সুন্দর এবং অদ্ভুত হাসির কথা। তার জন্য অনুভব যেমন কেয়ার করে অন্য কারোর জন্য তেমন করে না। সেটাও খেয়াল করেছে মাধুর্য। তাহলে কি মাধুর্য যা ভাবছে তাই? অনুভব তাকে ভালোবাসে?

লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে মাধুর্য। মাথা এপাশ-ওপাশ ঝাঁকাতে থাকে। বিরবির করে বলে….
–“যদি তাই হয়। তাহলে উনার এই অদ্ভুত ভালোবাসার কি নাম দেওয়া যায়? #The_Mysterious_Love?
ফোনের টিংটং রিংটোন বেজে ওঠায় চমকে ওঠে মাধুর্য। দ্রুত হাত বাড়িয়ে ফোন ধরে দেখে ‘স্যার’ নামটি ভাসছে। এটা অনুভবের বাবার নম্বর। মাধুর্য দরকারের জন্য সেইভ করে রেখেছে। যদিও এই নম্বর থেকে ফোন আসবে তা কল্পনাতীত ছিল। ফোনটা রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা কানে ধরে সে।
–“হ্যালো, মাধুর্য চৌধুরী বলছো?”
–“ইয়েস স্যার।”
–“আমাকে চিনতে পেরেছো?”
–“জ্বি।”
–“আজকে এক্ষুনি আমার বাড়িতে এসো কিছু কাজ আছে। হিসেবে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে তোমাকে সমাধান করতে হবে?”
মাধুর্য কিছুটা অবাক হয়।
–“এখনি যেতে হবে? কিন্তু আপনার বাড়ি তো আমি চিনি না স্যার।” (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় প্রলয় সিনহা বলে ওঠেন…
–“হ্যাঁ বেশ আর্জেন্ট। আমি তোমাকে মেসেজ করে দিচ্ছি ঠিকানা। যে কাউকে বললে চিনিয়ে দেবে।”

মাধুর্য বাধ্য মেয়ের মতো বলে….
–“ওকে স্যার। আমি আসছি।”
ফোনটা কেটে দেন প্রলয়। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বড় বেলকনিতে নরম চেয়ারে ঠেস লাগিয়ে বসে পড়ে সে। হাতে তুলে নেয় একটা বেশ বড়সড় পেইন্টিং। পেইন্টিং এ পড়ে অর্ধচাঁদের আলো। আলোকিত হয়ে ওঠে সেটা। চকচক করে ওঠে একটা সুন্দর মেয়ের মুখ। মিষ্টি হাসি দিয়ে যেন সবার মন জয় করে নিতে পারে মেয়েটি।
–“একটা সময় ছিল যখন তোমাকে আমি আমার পুত্রবধূ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একটা ঝড় সব ওলটপালট করে দিল। জানি আবারও ফিরে এসেছো। কিন্তু এবার আমাকে ক্ষমা করো। আমি বাবা হয়ে আমার ছেলের সঙ্গে তোমার মিল হতে দিতে পারব না। কারণ হয়ত তুমি এবার আমার ছেলের ক্ষতি করে দিতে পারো। কারণ ও তোমাকে মেরেছে। আমি আমার ছেলেকে তো মরতে দিতে পারি না। তাই তুমি যেন কখনো আমার ছেলের সামনে না আসো সেটাই কামনা করি।”
কথাটা বলে চোখ বন্ধ করেন প্রলয়। মাধুর্যকে উনি কোনো কাজের জন্য ডাকেন নি। বরণ উনি মাধুর্যকে পরখ করতে ডেকেছেন। এতোদিন রাজ্যের কাজে ডুব দিয়ে ছিলেন। রাত ছাড়া উনার সময় হয় না। তাই রাতেই ডেকেছেন। উনি একবার দেখতে চান সামনাসামনি মাধুর্যকে।

এক ধ্যানে বসে আছে অনুভব। ওর সামনে বসে আছেন এক অভিজ্ঞ মানুষ। যিনি ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সব থেকে বয়স্ক একজন। উনার কথা সবসময় সঠিক হয় বলেই মানা হয়।
–“তুমি কি নিশ্চিত তুমি যাকে ভাবছো সে তোমার ভাবনা?”
–“হ্যাঁ আমি নিশ্চিত। কিন্তু আমি ওকে না নিজের পরিচয় বলতে পারব আর না ওর অতীত। এতে ও ভুল বুঝবে। আমি চাই না ও আমার থেকে দূরে সরে যাক। আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাই প্রথমে।”
মাথা নতজানু করে শান্ত সুরে বলে অনুভব। বর্তমানে সে এখন মুডি অনুভব নেই বড্ড শান্ত হয়ে গিয়েছে। সব ভ্যাম্পায়ারদের নাকি ধৈর্য ধরতে হয়। শান্ত থাকায় তাদের ধর্মের একটা অংশ। কিন্তু অনুভব অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। কখনো শান্ত নয়ত কখনো অতিরিক্ত উত্তেজিত বা রাগান্বিত। অনুভবের সামনের মানুষটি কিছু একটা ভাবছেন। কিছু ভেবেই উনি বলেন….
–“শুনেছি প্রকৃতি সব কিছু দুই বার করে ঘটায়। যেমন তার প্রতি তোমার অনুভূতি জন্মাচ্ছে। হয়ত তারও তোমার প্রতি অনুভূতি জন্মাচ্ছে। কারণ ভাবনাও তোমাকে অসম্ভব ভালোবেসেছিল একসময়। সেই একই অনুভূতি আবারও যে অনুভব করবে। ৪৯ বছর আগের ভাবনা আর এখনকার ভাবনার চেহারার মাঝে যে বদল আছে তার কেন জানো? কারণ এটাই তোমার শাস্তি। ও তোমার আশেপাশে থাকবে কিন্তু তুমি ওকে খুঁজে বেরাবে সব জায়গায়, সবখানে। অথচ সে তোমার কাছেই থাকবে।”

চলবে…..??

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৫
সিএনজি গাড়ি এসে দাঁড়ায় ‘সিনহা প্যালেস’ এর সামনে। গাড়ি থেকে নামে মাধুর্য। ভাড়া মিটিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকায় বড় বাড়িটার দিকে। এতো বড় বাড়িতে তো অনায়াসে দশটা পরিবার থেকে যেতে পারবে! ফোন অন করে টাইম দেখে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায় সে। তাকে বাড়িও তো ফিরতে হবে। মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে নিতেই একজন অর্ধবয়স্ক লোক দেখতে পায় মাধুর্য। লোকটিও মাধুর্যকে দেখে এগিয়ে আসে। লোহার দরজার ওপায় থেকে বলে…
–“আপনে মাধুর্য চৌধুরী?”
–“হ্যাঁ।”
–“ঠিক আছে ভেতরে আসুন। স্যার আপনাকে ভেতরে যেতে বলে দিয়েছে।”
গেট টা আস্তে আস্তে খুলে দিতেই ভেতরে ঢুকে পড়ে মাধুর্য। ধীর পায়ে কংক্রিটের ওপর দিয়ে সোজা রাস্তায় চলতে থাকে সে।

অনেকক্ষণ ধরেই বেলকনিতে বাতাস অনুভব করছেন প্রলয় সিনহা। চোখজোড়া তার বন্ধ ক্লান্তিতে। কাজের ভীড়ে উনি নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছেন। উনি ব্যস্ত থাকার পেছনে অনেক বড় কারণ রয়েছে। তা হলো, উনি দুঃখে জর্জরিত হয়ে পড়তে চান না নিজের স্ত্রীর স্মৃতির মাঝে। আজ কতগুলো বছর নিজের স্ত্রীকে ছাড়ায় কাটিয়ে দিয়েছেন উনি। তবুও বেশির ভাগ সময়ই উনি ভাবেন তার সঙ্গিনীর কথা। সেই কারণে উনার চোখের কোণে জমে পানি। তা উনি লুকোতে চান, এড়াতে চান। একা থাকতে থাকতে আবারও প্রলয়ের চোখে পানির কোণা ভীড় জমায়। দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হতেই লুকিয়ে ফেলেন সেই পানি। গম্ভীর গলায় জবাব দেন….
–“কি বলবে?”
–“স্যার, একটা মেয়ে এসেছে। নাম মাধুর্য চৌধুরী বলছে। আপনি তাকে ডেকেছেন এটাও বলেছে। আপনি কি যাবেন নাকি তাকে আসতে বলব?”
প্রলয় উঠে দাঁড়ান। বেলকনি পেরিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলেন….
–“ভেতরে আসতে বলো।”
চলে যায় মেয়েটা মাধুর্যকে ডাকতে।

প্রলয় পেছন ফিরে ভাবনার পেইন্টিং টি হাতে নিয়ে আবারও ঘরে আসেন। সেটা ঠিকঠাক জায়গায় রাখার আগেই একটি মেয়েলি গলা ভেসে আসে।
–“আসসালামু আলাইকুম। ভেতরে আসতে পারি স্যার??”
সেই মিষ্টি রিনরিনে কন্ঠস্বর শুনেই উল্টে বিছানায় পড়ে যায় ভাবনার পেইন্টিং প্রলয়ের হাত থেকে। অতি আগ্রহের সঙ্গে সামনে তাকান উনি। দরজার হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে মাধুর্য। প্রলয় ভাবনার সঙ্গে মাধুর্যের চেহারা মিলাবার চেষ্টা করেন। হয়ত মিলছে না আবার মিলছে। এ কেমন দ্বিধা? মাধুর্য প্রলয় সিনহার কোনো রেসপন্স না পেয়ে কি করবে ভেবে পায় না। আবার শব্দ করে বলে….
–“স্যার আসব?”
প্রলয়ের ধ্যান ভাঙে। বেশ দম নিয়ে বলেন….
–“এসো।”
মাধুর্য গুটি গুটি পায়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ওর মাথাটা নত হয়ে রয়েছে। ভয়ে নয় শ্রদ্ধায়। বড়দের শ্রদ্ধা করতে হয় এটাই নিয়ম। মাধুর্যের আচরণে এমন বিনীত, শান্ত আর সততা দেখে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বিরাজ করছেন প্রলয়। উনার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে মাধুর্য চোখে চোখ রেখে এখনো তাকায়নি প্রলয়ের দিকে।

বাড়ির টেরিসে এক-পা হালকা উঁচু করে বর্ডারে রেখে হাতে ভাইলেন দিয়ে সুর তুলছে অনুভব। অনেকদিন পর আবারও সেই সুর তুলছে। ইচ্ছে করছে আবারও গাইতে। কিন্তু সেই প্রেয়সী কি আবারও ছুটে আসবে তার সুরে? চোখ বন্ধ করে কল্পনা করে সে তার প্রেয়সীকে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরিবর্তে মাধুর্যের মুখটা জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠছে। ভাইলেন দিয়ে সুর তোলা থামিয়ে দেয় অনুভব। কিছুক্ষণ ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে। ঘন কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে…..
–“তাকেই দেখাও মন যে আমার ভাগ্যে আছে। তাকে নয় যাকে আমি কোনোদিনও পাব না।”
অনুভবের কথাগুলোর ওজন অনেক। এই ওজনের ভাড়ে টেকা যাবে না। তার নীল বর্ণের চোখজোড়া ঘোলাটে হয়ে আসে। বন্ধ করে নেয় চোখজোড়া। কাঁধে ভাইলেন ঠেকিয়ে জোরে জোরে সুর তুলতে থাকে এবার। মুখ দিয়ে সুরেলা কণ্ঠ বেরিয়ে আসে।
“চল বলে ফেলি ,
কত কথা কলি ,
জন্মেছে বলতে তোমায় ,
তোমাকে চাই।
ঝলসানো রাতের ,
এ পোড়া বরাতে ,
তুমি আমার অন্ধকার ,
আর রোশনাই!”

কাঁধে ব্যাগ দিয়ে শুকনো মুখ নিয়ে প্রলয় সিনহার ঘর থেকে বের হয় মাধুর্য। কাজের জন্য ডেকে হঠাৎ প্রলয় সিনহা জানান তার হিসেবের প্রবলেম সলভ হয়ে গিয়েছে সে আসতে পারে। তাই এই ব্যাপারে কনফিউজড সে। চিকন আঁকাবাকা সিঁড়িতে যেই পা রাখতে যাবে তার কানে ভেসে আসে সেই পুরুষালি সুরেলা কন্ঠ। যেটা সে স্বপ্নে শুনেছে। এমনকি সেই রহস্যময় জগতেও শুনেছে। পা আর সিঁড়িতে না রেখে স্ট্রেটকাট দাঁড়িয়ে পড়ে সে। এই কন্ঠ তার হৃদয় ছুঁয়ে দিয়ে যায়। আবার এই কন্ঠই তার উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অস্থির ভঙ্গিতে সে আশেপাশে তাকিয়ে বলে….
–“এই গানের সুর আমার ভ্রম! এটা সত্যি নয়।”
–“কার্নিশে আলতা মাখা মন,
দিনেরা ঢলে পড়ে রাতে,
তারপরে রাত্রি জাগানো,
বাকিটা তোমারই তো হাতে।”
নিঃশ্বাস ওঠানামা করতে থাকে মাধুর্যের। দুই ধাপ পিছিয়ে গিয়ে ছোট গোল টেবিলের সঙ্গে পা লাগলে সামলে নেয় নিজেকে।
–“এ তো সেই সুর। যেটা আমাকে মাতাল করে দেয়। পাগল করে তোলে। কোথা থেকে আসছে এটা? ওপর থেকে?” (সিঁড়ি বরাবর ওপরে তাকিয়ে)

চোখে ঘোর লেগে যায় মাধুর্য। নিচে না গিয়ে ওপরে পা বাড়ায় সে। এক প্রকার দৌড়ে ওপরে যায় সে। একেবারে টেরিসে পৌঁছে পেছন থেকে অনুভবকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। অনুভব কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটু থামে। মনে হচ্ছে এখানে দ্বিতীয় কারো উপস্থিতি রয়েছে। এখন তো এখানে কারো থাকার কথা নয়। তাই নিশ্চিন্ত মনে সুর তুলে আবারও বলে…..
–“জেগে জেগে আমি শুধু ঘুমিয়ে পড়তে চাই ,
থেকে থেকে সেই মেঘেতে যাই বেড়াতে চাই
তোমাকে পাই।”
শেষ শব্দ মুখ থেকে বের হতে না হতে কেউ তাকে জাপ্টে ধরে পেছন থেকে। অনুভবের উঁচু করে ধরে রাখা ভাইলেন নেমে যায়। চোখ নামিয়ে অনুভবের বুকের দুইপাশে মেয়েলি হাত লক্ষ্য করে সে। তৎক্ষণাৎ আকাশে বিদ্যুৎ ঝিলিক দিয়ে ওঠে। অনুভব যেন অন্য কোনো জগতে বিরাজ করছে। যেখানে রয়েছে শুধু ভালোবাসা। বিরবির করে বলে….
–“ভালোবাসা রোগটি এমন কেন? নির্দিষ্ট মানুষ ছাড়া এর উপশম হয় না কেন?”

ঘুরে ফেরার চেষ্টা করে অনুভব। কিন্তু দুটো কোমল হাত তা হতে দেয় না। ফিরে তাকানোর চেষ্টা করতেই বুকের দুইপাশে আলতো ব্যাথা অনুভব করে সে। চোখ নামিয়ে তাকায় সে। মাধুর্যের বড় বড় আর ধারালো নখ অনুভবের শার্ট ফুটো করে ঢুকে যাচ্ছে। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়ে সে। মাধুর্যের এ কি হচ্ছে? হাতটা কোনোভাবে ছাড়াতেই পড়ে যেতে শুরু করে মাধুর্য। অনুভব বিদ্যুৎ এর গতিতে ঘুরে ধরে ফেলে তাকে। মাধুর্যের আসল রুপ বেরিয়ে আসছে। তাই ওর হাতের নখ বড় বড় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন? অনুভব তৃষ্ণা পেতেই ঘড়ি উঠিয়ে দেখে ঘড়িতে প্রায় সাড়ে নয়টা। এর মানে এবার রক্ত না পেলে সে নিজের আয়ত্তে থাকবে না। সে আনমনে বলে ওঠে…..
–“তবে কি মাধুর্যও তৃষ্ণার্তের কারণেই নিজের রুপ ধারণ করে ফেলেছে? ওহ নো! এখন কি করব?”
মাধুর্য জ্ঞান হারিয়েছে।পাঁজকোলে সে তুলে নেয় মাধুর্যকে। সবার অগোচরে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে।

গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ব্রেক কষিয়ে থামিয়ে দেয় অনুভব। গলা শুকিয়ে আসছে তার। গলায় হাত দেয় সে। পাশ ফিরে মাধুর্যের দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে অনুভব। রক্ত ছাড়া শক্তিহীন হয়ে পড়ছে সে। দাঁত কিড়মিড় করছে বার বার। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নিজের রুপ ধারণ করে অনুভব। হিংস্র হয়ে ওঠে সে। তার চেহারার দিকে তাকানো দায়। সুন্দরতম চেহারা নিমিষে ভয়ানক চেহারায় পাল্টে যায়। সবুজ রগ গুলো ফুলে ফেঁপে ওঠে। গাড়িতে পা দিয়ে আঘাত করে গলা উঁচু করে হা করে চিৎকার দিয়ে ওঠে সে।
–“রক্ত! এক ফোঁটা রক্ত চাই আমার।”
নিজের মাথা এপাশ-ওপাশ ঝাঁকুনি দিয়ে ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে সে। হুংকার দিয়ে আশেপাশে তাকিয়েও লাভ হয় না। যাকে তাকে মারতে পারবে না সে। গাড়ির সামনের কাঁচ দিয়ে মাধুর্যের দিকে চোখ যায় তার। বিরবির করে বলে ওঠে….
–“রক্ত!”
জানালার কাছে এসে দাঁড়ায় সে। হাত মুঠো করে জানালার ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দেয় অনুভব।

মাধুর্যের চেহারা চকমকে হয়ে উঠেছে। আর অনুভবের তৃষ্ণা বেড়ে চলেছে। সে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে আসে মাধুর্যের গলার কাছে নিজের মুখ নেয় সে। হা করতেই আবারও মূহুর্তে ঠোঁট সরু করে নেয় সে। কাঁপা কাঁপা ও গোলাপি আভায় আবৃত ঠোঁটজোড়া দিয়ে স্পর্শ করে মাধুর্যের গলা। হালকা কাঁপুনি দিয়ে থেমে যায় মাধুর্য। শীতল মাখা গলায় অনুভব বলে ওঠে….
–“তোমার রক্তে নিজের গলা ভেজানোর আগে যেন আমার মৃত্যু হয়।”
গাড়ি থেকে ছিটকে দূরে সরে আসে অনুভব। তার কান খাঁড়া করে শোনে কারো পায়ের আওয়াজ। এতো ঘন গাছপালায় আবৃত জায়গা দিয়ে কে হাঁটছে? জ্বলজ্বল করে ওঠে অনুভবের চোখজোড়া। মূহুর্তেই ঢুকে পড়ে সেই ঘন গাছপালার আচ্ছাদনে। সেকেন্ডেই সামনে গিয়ে দাঁড়ায় একটা ওয়ারওল্ফের সামনে। বিজয়ের হাসি হেসে ওঠে অনুভব। ওয়ারওল্ফটি পিছিয়ে যায়। অনুভব তৃষ্ণার্ত গলায় বলে ওঠে…..
–“চলো, মানুষের রক্ত না হোক। তোদের রক্তেই কাজ চালিয়ে নিই।”

পা দুটো পিছিয়ে যায় ওয়ারওল্ফটির। অনুভব আক্রমণ করতে এলে সেও আক্রমণ করে বসে। দুজনের মাঝে জয় হয় অনুভবের। একসময় ধারালো নখ দিয়ে গলা চেপে ধরে কাবু করে ফেলে ওয়ারওল্ফটিকে। ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে ভেতর থেকে শুষে নেয় সমস্ত রক্ত। একটা সময় ফেলে দেয় সেই ওয়ারওল্ফটিকে।
ঠোঁটের কোণের রক্ত বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে বেরিয়ে আসে গাছপালায় ঘেরা আচ্ছাদন থেকে অনুভব। গাড়িতে গিয়ে বসে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় মাধুর্যের দিকে। মাধুর্যের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসতেই মেয়েটির মাথা গিয়ে লাগে অনুভবের কাঁধে। এক হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনুভব বলে….
–“দ্বিতীয় বারের মতো পেয়েছি তোমায়। আর হারাতে দেব না। লুকিয়ে রাখব নিজের বুকের মাঝখানে। আর আমি জানি আমি ভুল নই। ভুল হতেই পারে না তোমার প্রতি আমার এই অনুভূতি! চিনতে ভুল করতে পারে না অনুভব তার ভাবনাকে।”

সকালে……
একটি বিরক্তিকর আওয়াজ কানে আসতেই ঘুমন্ত অবস্থায় চোখমুখ খিঁচে বালিশ কানে চেপে ধরে মাধুর্য। কিছুক্ষণ নড়েচড়ে ঘুমঘুম চোখে তাকায় সে। নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে বিস্মিত হয়ে পড়ে মাধুর্য। চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে যায়। সকালের আলো লাল রঙের পর্দা ভেদ করে তার মুখে পড়ছে। ধরফর করে উঠে বসে সে। জানালার বাইরে উঁকি দিয়ে বলে….
–“সকালের আলো ফুটে গেছে? আজ ফজরের নামাজ হলো না!”
মুখ ভার হতেই আবারও বিরক্তিকর আওয়াজ কাজে আসে। আর সেই আওয়াজটি ফোনের রিংটোন। পাশ ফিরে সে চেয়ে দেখে আওয়াজটি তার ব্যাগের ভেতর থেকে আসছে। ব্যাগের চেইন খুলে ফোন বের করে সে। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ‘অরুণ’ নামটি। সকাল বেলার এই সুন্দর সময়টি নষ্ট করার জন্য বোধহয় এই নামই যথেষ্ট। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন রিসিভ করে মাধুর্য।
–“হ্যালো!”
–“হ্যালো মাধুর্য। একবার হসপিটালে আসবে প্লিজ!”

অরুণের গলায় অস্থিরতার ছাপ টের পেয়ে মাধুর্য ক্ষীণ সুরে বলে….
–“কি হয়েছে?”
–“একবার এসো প্লিজ। তোমাকে খুব দরকার। পারলে তোমার বন্ধু কবিতাও সাথে নিয়ে এসো। বিপদে পড়েছি আমরা।”
কথাটা বলেই কল কেটে দেয় অরুণ। মাধুর্য ফোন হাতে নিয়ে কপাল ভাঁজ করে তাকায়। কি এমন বিপদ যে তাকেই পাশে লাগবে অরুণের? তার কি যাওয়া ঠিক হবে? আগপাছ ভাবতে ভাবতে নেমেই পড়ে বেড থেকে হসপিটালে যাওয়ার জন্য। কারো বিপদে হাত না বাড়িয়ে থাকতে নেই।

চলবে……??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here