#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা #The_Mysterious_Love #১৬,১৭ #আনিশা_সাবিহা

0
881

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#১৬,১৭
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৬
প্রতিদিনের মতো মাধুর্যকে নিতে সকাল বেলা তার ফার্মহাউজে চলে আসে অনুভব। দরজার কলিংবেল বাজালে কিছুক্ষণ পর দরজা এসে খুলে দেয় এলিনা। ভ্যাপসা গরমের মাঝে দরদর করে ঘামছে অনুভব। ওদের ক্ষেত্রে গরমের মাঝে থাকা ক্ষতিকারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবুও বাইরে বের হয় অনুভব। এলিনা অনুভবকে দেখে মাথা নত করে। অনুভব শার্টের কলার ঝাড়তে ঝাড়তে ভেতরে প্রবেশ করে বলে….
–“মাধুর্য কোথায়? এখনো জ্ঞান ফেরেনি? নাকি ঘুম থেকে ওঠেনি?”
এলিনা সোজা ভাবে নরম গলায় জবাব দেয়….
–“উঠেছে তো অনেক আগে প্রিন্স তবে ও আজ বাইরে গেল তাড়াহুড়ো করে। খেয়েও গেল না।”
স্থির হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় অনুভব। কড়া গলায় বলে….
–“আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি না আসা অবধি ওকে কোথাও যেতে দেবে না। তাহলে কেন দিলে?”
–“আমি তো অনেক বার বারণ করেছিলাম কিন্তু ও শোনে নি প্রিন্স। আমি দুঃখিত।”

নিজের চোখের দুই কোণে হাত রেখে হালকা চোখ কচলে নেয় অনুভব। তারপর সেই হাত পকেটে গুঁজে বলে….
–“কোথায় গেছে আর এতো সকালে তো ওর ইউনিভার্সিটিও নেই। তবে?”
–“হসপিটালে যাবে বলল। ওর কোনো বন্ধুর নাকি বিপদ হয়েছে। এতটুকুই বলল। এই কাছের হসপিটালেই গেছে।”
চোখ বড় বড় তাকায় অনুভব। চোখমুখ জড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে….
–“ওহ নো! হসপিটাল এর মানেই তো রক্ত। মাধুর্য যদি একবার রক্ত দেখে আর ওর রুপ বেরিয়ে আসে। তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। এলিনা!”
–“হ…হ্যাঁ প্রিন্স।”
–“আমি যাচ্ছি। আর এরপর থেকে যদি মাধুর্য একা একা কোথাও যায় সবার আগে আমাকে ইনফর্ম করবে। ফোন শুধু মুখ দেখার জন্য নয়। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
এলিনা মাথা ওপর-নিচ দুলাতেই হনহন করে বেরিয়ে যায় অনুভব।

হসপিটালের ভেতর তাড়াতাড়ি ছুটে আসে মাধুর্য। এপাশ ওপাশ চোখ বুলিয়ে খুঁজতে থাকে অরুণকে। না পেয়ে ফোন বের করে কল করে অরুণকে। রিংটোন তৎক্ষনাৎ বেজে ওঠে আশেপাশেই। থতমত খেয়ে পেছনে তাকায় মাধুর্য। অরুণকে দেখে অশান্ত হয়ে ছুটে আসে।
–“অরুণ, আপনি আমাকে এমনভাবে ডাকলেন আর বিপদের কথা বললেন যে আসতে হলো। কি হয়েছে?”
–“সেটা বলছি কিন্তু তোমার ওই বান্ধবী আসেনি?” (আশেপাশে তাকিয়ে)
–“ও আসছে। রাস্তায় আছে। কিন্তু আপনি কেন ডাকলেন আমাকে সেটা তো বলবেন!”
অরুণ তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করে নেয় মাধুর্যকে। এই মেয়েটাকে দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। বার বার ছুঁতে ইচ্ছে করে কিন্তু তা তো সে পারবে না। যদি তাকে নিজের করতেই হয় তাহলে কৌশলে করতে হবে। সে মুখটা থমথমে করে বলে ওঠে…..
–“আমার একটা ফ্রেন্ড এক্সিডেন্ট করেছে। তার অনেক রক্তপাত হয়েছে। আর ওর রক্ত নেগেটিভ যেটা কারোর নেই। তোমার আর কবিতার কি আছে?”

বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে মাধুর্য। দিশেহারা হয়ে বলে….
–“তা তো জানি না। কারণ আমি নিজের রক্ত পরীক্ষা কখনো করায়নি। তাই বলতে পারছি না। আর কবিতার কথাও জানি না। ও আসুক সে বলবে। আচ্ছা আপনার ফ্রেন্ড কোথায় আছে চলুন।”
–“ঠিক আছে এসো।”
অরুণ আর মাধুর্য চলতে শুরু করে। একটা কেবিনে গিয়ে ঢুকে একটা ছেলেকে পড়ে থাকতে দেখতে পায় তারা। ছেলেটাকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। মাধুর্য ফিচেল গলায় বলে ওঠে….
–“ওকে তো রক্ত দেওয়া হচ্ছে।”
–“এই এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে হবে না। আরো লাগবে। ব্লাডব্যাংকে এক ব্যাগই ছিল।”
মাধুর্য জবাব দেয় না। স্থির চোখে তাকায় রক্তের ব্যাগের দিকে। চোখের পলক ফেলা বন্ধ করে ফেলে সে। অরুণ মনোযোগ দিয়ে তাকায় মাধুর্যের চোখের দিকে। খেয়াল করতে থাকে ওর চোখের রঙ পাল্টায় কি না। কিন্তু প্রথম পদক্ষেপেই ব্যর্থ হয়। বেজে ওঠে মাধুর্যের ফোন। মাধুর্যের দৃষ্টি সরে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে অন্যদিকে তাকায় অরুণ। মাধুর্য কবিতার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যায়। তার পেছন পেছন বেরিয়ে আসে অরুণ।

কবিতাকে দেখতে পেয়ে ফোন কাটে মাধুর্য। সানগ্লাস পড়ে দাঁড়িয়ে আছে কবিতা। সে হন্তদন্ত হয়ে এসে বলে….
–“কি হয়েছে রে? এভাবে ডাকলি যে। আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।”
–“অরুণের ফ্রেন্ড এক্সিডেন্ট করেছে। রক্ত দরকার। তাও নেগেটিভ গ্রুপের। ডক্টর যোগার করতে বলেছে।”
কবিতা চিন্তিত হয়ে বলে….
–“আমার রক্ত তো পজিটিভ।”
কবিতার কথা শুনে মুখটা শুকনো করে অরুণের দিকে তাকায় মাধুর্য। অরুণ নিজের মুখটা থমথমে করাট ভাব ধরে। সামনে রক্তের ব্যাগ নিয়ে আসা নার্সকে দেখে আনমনে হেঁটে এসে হালকা ধাক্কা লাগিয়ে ফেলে দেয় অরুণ। নার্সের হাতে থাকা ট্রে এর ওপর রক্তের ব্যাগ পড়ে যায়। ফ্লোরের আশেপাশে ছিটে যায় রক্ত। মাধুর্য আর কবিতা দুজনেই চমকে তাকায় ফ্লোরে। ঠোঁট কাঁপতে শুরু করে মাধুর্যের। কিন্তু দৃষ্টি শান্ত হয়ে যায়। অরুণ তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় দুজনের দিকে। কবিতা সানগ্লাস খুলে তাকায়। বাইরে প্রচন্ড রোদ। তাই সানগ্লাস পড়ে বেরিয়েছিল সে।

কবিতার সানগ্লাস খুলতেই অরুণ হতভম্ব হয়ে যায়। কবিতার চোখের রঙ সবুজ হয়ে এসেছে। কবিতার দিকে এগুতে গিয়েও থেমে যায় অরুণ। হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে মাধুর্যের দিকে খেয়াল নেই তার। মাধুর্য হুট করেই নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। তখনই পেছন থেকে এক পুরুষালি গলা ভেসে আসে….
–“মাধুর্য!”
চোখ খুলে পেছন ফিরে তাকায় মাধুর্য ও কবিতা। সেই সঙ্গে অরুণও। অনুভব ইচ্ছে করেই জোরে মাধুর্যকে ডেকেছে। কারণ মাধুর্য নিশ্চয় রক্তের দিকে তাকিয়ে ছিল। দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসতেই ওর চোখ যায় অরুণের দিকে। একটু হলেও কয়েক মূহুর্তের জন্য শকড হয়ে পড়ে সে। পায়ের গতি কমে যায়। চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে। যার জন্য ভয় পাচ্ছিল সে ঠিক তাই হলো। দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় অনুভব। মাধুর্যের কন্ঠে চোখমুখ স্বাভাবিক করে ফেলে সে।
–“আপনি এখানে?”
–“হ্যাঁ মানে এলিনা বলল তুমি এখানে এসেছো তাই। কেন এসেছো?”

মাধুর্য কিছু বলার আগেই অনুভব বেশ শক্ত গলায় বলে ওঠে….
–“যাও গাড়িতে গিয়ে বসো। আর কবিতা তুমিও। গো।” (বাইরে ইশারা করে কারো দিকে না তাকিয়ে)
–“কিন্তু…. ”
–“আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে মাধুর্য। আর আমি যেতে বলেছি।”
অনুভবের লাল চোখ দেখে কিছু বলতে গিয়েও আঁটকে যায় মাধুর্য। কবিতা সানগ্লাস পড়ে ফিসফিস করে বলে….
–“এই চল না। অযথা কেন রাগাচ্ছিস হিরো টাকে?”
কবিতা মাধুর্যের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। বাইরে।
বড় নিশ্বাস নিয়ে অরুণের দিকে তাকায় অনুভব। দুই ধাপ এগিয়ে আসে সে।
–“তোর চেহারা ভুলে যাইনি আমি। তুইও জানিস আমিও জানি তুই কে। কিন্তু নিজের সীমানা অতিক্রম করিস না। তোর ভাগ্য কিন্তু তোর সাথ দেয় বলতে হয়। নয়ত এতো জনবহুল জায়গায় তোর সঙ্গে আমার দেখা হতো না। নয়ত আজই আমি নিজ হাতে তোর মৃত্যু লিখতাম। মাধুর্যের থেকে দূরে থাক দ্যাটস মাই ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট ওয়ার্নিং। এরপর ওয়ার্নিং দেব না কিন্তু।”

অনুভব হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু পেছন থেকে অরুণের তাচ্ছিল্যময় কথাগুলো শুনে যেতে পারে না সে।
–“কেন মাধুর্যের পেছনে পড়েছিস? ও তো সাধারণ মানুষ। নাকি ভাবনাকে মেরে ফেলে আফসোস করছিস। তাই এখন মানুষের পেছনেও ঘুরতে হচ্ছে। হাহাহা।”
চোখের পলক ফেলার আগেই দ্রুত ঘুরে অরুণের কাছাকাছি এসে ধাক্কা দেয় অনুভব। রাগের বশে পাল্টে যায় তার চোখের রঙ।
–“অন্য সবার মতো শান্ত ভ্যাম্পায়ার আমাকে খবরদার ভাববি না। মনে রাখিস, তোরা আমার মনে যে শয়তান সত্তা ঢুকিয়েছিস সেটা কিন্তু এখন অবিচল গতিতে রয়েছে। তোর হৃদয় টেনে বের করতে এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না আমার। নিজেকে দূরে রাখ আমার থেকে।”
–“একি! আপনারা এখানে ঝগড়া করছেন কেন? এটা ঝগড়া করার জায়গা নয়। বাইরে যান আপনারা।”
একটি নার্স অনবরত কথাগুলো বলে চলে যায়। অনুভবও নিজেকে স্বাভাবিক করে বেরিয়ে আসে হসপিটাল থেকে।

–“এই মাধু, দেখ না নতুন চোখে লেন্স পড়েছি। কেমন লাগছে?”
থম মেরে বসে আছে মাধুর্য। অনুভবের আজকের ব্যবহারটা অন্যরকম ঠেকল তার কাছে। সেটা নিয়েই ভাবছে সে। কবিতার কথায় বাঁকা চোখে তাকায় সে।
–“আর কোনো কালার পাসনি? সবুজ কালার?”
–“উঁহু… এমনি এমনি তো এই কালার নিইনি। কাল রাতে ভ্যাম্পায়ার মুভি দেখেছি। উফফ…কি জোস লাগছিল জানিস সবুজ রঙের মনি যখন হয়ে গিয়েছিল হিরোর? আর হিরোকে না একদম আমার মি. ক্রাশ অনুভবের মতো দেখতে। দিল ছুঁ দিয়া।”
বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে হাস্যকর ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে কবিতা। মাধুর্য না চাইতেও হেসে ওঠে। এই হাসাহাসির মাঝে হানা দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে অনুভব। স্টিয়ারিং এ হাত রেখে অনুভব বাঁকা হেসে বলে….
–“কি নিয়ে কথা হচ্ছিল?”
কবিতা লাফিয়ে বলে ওঠে….
–“ভ্যাম্পায়ার।”
–“দেখেছো কখনো?”

কবিতা মাথা নাড়িয়ে না জানায়।
–“শুধু মুভিতে দেখেছি। এটা কি রিয়েলে হয় নাকি?”
অনুভব সামনের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দেয়। তা নজর এড়ায় না মাধুর্যের। কিছুটা কনফিডেন্স এর সুরে সে বলে ওঠে….
–“হতেই পারে। দুনিয়ায় এমন অনেক কিছুই ঘটে বা থাকে যেটা মানুষের কাছে শুধুমাত্র রূপকথা হিসেবেই পরিচিত। কখন কি ঘটে তা কি কেউ বলতে পারে?”
অবাক চোখে তাকায় মাধুর্য। অনুভবের কথায় মনে পড়ে ওর সেদিনের কথা। অন্য এক জগত। ওটা তো ছিল রূপকথারই জগত। গা শিউরে ওঠে চুপ করে বসে থাকে সে এক কোণে ঠেস লাগিয়ে।
হালকাপাতলা কথা বলতে বলতে ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছে যায় ওরা। কবিতা নেমে গেলেও মাধুর্য নামতে নিলে ওর হাত পেছন থেকে টেনে ধরে অনুভব। গোল গোল চোখে তাকায় মাধুর্য। কবিতা আগে আগে চলে গেছে।

–“কি হলো? ছাড়ুন। ইউনিভার্সিটি যেতে হবে তো।”
–“আজকে যাবে না তুমি। গাড়িতে বসো।”
–“কিন্তু কেন?”
অনুভব কোনো রকম ভাবভঙ্গি না করেই সোজাসাপটা ভাবে উত্তর দেয়।
–“কারণ আমি বলেছি। আর আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে।”
–“আপনি এতোটা নিশ্চিত হচ্ছেন কি করে? আমি আপনার কথা শুনবই?”
অনুভব আবারও সাবলীল ভাবে প্রতিত্তোর দেয়।
–“বিশ্বাস নিয়েই বলছি। সব কিছুতে নিশ্চয়তা খুঁজতে নেই। কিছু কিছু সময় বিশ্বাস রেখে কথাগুলো বলতে হয়।”
হাতটা ছেড়ে দেয় অনুভব। ঘড়ির কাটা দেখে স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বলে ওঠে….
–“২ মিনিট। জাস্ট ২ মিনিট অপেক্ষা করছি। তুমি ভেতরে যাও ফিরে আসতেই হবে এই ২ মিনিটে।”
কিছুক্ষণ সরু চোখে তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে চলে গেল ইউনিভার্সিটির ভেতরে। অনুভব হালকা হেসে বলে….
–“আমার ভাবনা কখনোই আমার কথা নড়চড় করার ইচ্ছেটুকু প্রকাশ করত না। আজও করবে না। তুমি একই রকম রয়ে গেছো ভাবনা।”

ঠিক মিনিট দুয়েক পরই হন্তদন্ত হয়ে গেট থেকে বের হতে দেখা যায় মাধুর্য। জানালা দিকে মাধুর্যকে দেখে নিজের হাসি প্রসারিত করে অনুভব। গাড়ির কাছে আসতেই অনুভব দ্রুততার সঙ্গে বলে ওঠে….
–“রিলাক্স! আমি চলে যাইনি এখানেই আছি। এমন ভাব করছো যেন বিয়ে করার জন্য পালিয়ে এসেছো।”
–“হোয়াট ননসেন্স!”
–“তোমার এভাবে আসা দেখে সবাই এটাই ভাববে। এনিওয়ে, তুমি ফিরলে কেন?”
মাধুর্য মিইয়ে যায়। মিনমিন করে বলে….
–“আপনি কি এমন জাদু করেছেন আমার ওপর? অমান্য করতে পারিনি আপনার কথা।”
অনুভব নিজের কন্ঠস্বর ক্ষীণ করে বলে ওঠে…..
–“রোগ! ভয়ানক রোগ আঁকড়ে ধরছে যে তোমায়। আমার প্রতি তোমার একটা অনুভূতির সংমিশ্রণ তৈরি হয়েছে। বৃথা নিজের মনের বিরুদ্ধে যেও না। বসো গাড়িতে।”
মাধুর্য মাথা নাড়ায়। উঠে বসে অনুভবের পাশে।

ভ্যাম্পায়ার রাজ প্রাসাদ আলোয় ঝলমলে হয়ে উঠেছে। কোথাও কোনো কমতি নেই। আশপাশের সবকিছুতে রাজকীয় ভাব। এই বড়সড় প্রাসাদকে আবারও আগের মতো করার চেষ্টায় সফল হয়েছেন ভ্যাম্পায়ার কিং প্রলয়। তবে মনের মাঝ থেকে কমেনি চিন্তা। প্রণয় বেশ কিছুক্ষণ ধরে তার ভাইয়ের চোখেমুখে দুঃশ্চিতার ছাপ লক্ষ্য করছেন। এবার না পেরে প্রশ্ন করে ওঠে……
–“কি হয়েছে তোমার প্রলয় ভাই? তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। আমাদের রাজ্য আগের মতো হতে চলেছে। আমাদের তো খুশি হওয়া উচিত।”
কিং প্রলয় চিন্তিত সুরে বলে ওঠেন….
–“আমি জানি প্রণয়। কিন্তু আমি খুশি হতে পারছি না। তুমি জানো আমি কালকে মাধুর্য চৌধুরীকে দেখেছি। ওর ব্যবহার, ওর চেহারায় ভাবনার প্রতিচ্ছবি দেখেছি আমি। বুঝতে পেরেছি আমি অনুভবের কেন এতোটা টান ওই মেয়ের প্রতি।”
–“কিন্তু এতে ক্ষতি কোথায়? ভাবনা যদি ফিরে আসে অনুভবের জীবনে তাহলে তো ভালোই।”
–“ক্ষতি আছে প্রণয়। ভাবনা এলে এর উল্টো টাও হতে পারে। হতে পারে, ও আমার ছেলের ওপর প্রতিশোধ নিতে এলো। তখন কি হবে?”

এবার প্রণয়ও চিন্তিত হয়ে পড়ে।
–“তাহলে এখন উপায় কি প্রলয় ভাই?”
–“আমি উপায় ভেবে রেখেছি প্রণয়। মাধুর্য থেকে অনুভবকে দূরে করার একটাই উপায়। অনুভবকে বিয়ে দেব আমি। এতে অনুভব দূরে সরে আসবে। প্রণয় তুমি মেয়ে দেখো। যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিতে চাই আমি অনুভবের। দেরি করে লাভ নেই। নয়ত ছেলেকে হারিয়ে বসব আমি। চাই না আমি ছেলেকে হারাতে।”

চলবে…..??
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৭
–“জানেন আপনার সঙ্গে কাটানো প্রত্যেকটা মূহুর্ত আমার কাছে বিশেষ মনে হয়? মনে হয়, এই মূহুর্ত এই সময় এখানেই থেমে যাক।”
ফার্মহাউজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনুভবের গাড়ি। অনুভব গাড়ি থেকে নামতে উদ্যত হতেই মাধুর্যের মুখে এমন কথা শুনে ও শান্ত চোখে তাকায়। স্মিত হেসে বলে…..
–“মূহুর্ত কখনো থামানো যায় না। বহমান থাকে সব সময়। তবে মানুষ যদি কখনো চায় সে তার পছন্দের মানুষের সঙ্গে নিজের প্রত্যেকটা মূহুর্ত কাটিয়ে দিতে পারে। তুমি কি চাও সেটা?”
লাজুক চোখে তাকায় মাধুর্য। কি বলবে ভেবেও পায় না সে। শুধু তাকিয়ে থাকে স্থির চোখে। এক মূহুর্তে সরিয়ে নেয় চোখ। শান্ত সুরে বলে ওঠে….
–“আপনাকে দেখে একটা জিনিস বুঝেছি। সব বড়লোকের ছেলেরা খারাপ হয় না। আপনার মতো কিছু মানুষ আজও পৃথিবীতে আছে বলেই হয়ত পৃথিবীটা সুন্দর।”

অনুভবের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। মাধুর্যের কথা ওকে দুর্বল করে তুলছে। সে মাধুর্যের মনের বিশ্বাসের অনেকাংশে জুড়ে আছে সেটা বুঝে ফেলেছে অনুভব। কিন্তু সেদিন কি হবে যেদিন মাধুর্যের সবটা মনে পড়বে? ও তো সবটা অবিশ্বাস করবে। মাধুর্যের ডাগরডোগর চোখে ভাসতে থাকা ভালোবাসা নিমিষেই ঘৃণাতে পরিণত হবে। দাঁত শিরশির করে ওঠে অনুভবের। ও মাধুর্যের ভালোবাসা না নিয়ে বাঁচতে পারলেও ঘৃণা নিয়ে বাঁচতে পারবে না। ভয়ে নিজের অজান্তে আচমকা ঘুরে পাশের সিটে বসে থাকা মাধুর্যকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে সে। মূহুর্তের মাঝে এমন ঘটনাতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে মাধুর্য। তবে অনুভবের স্পর্শ উতলা করে তোলে তাকে। এই স্পর্শে কেন মিশে আছে এতো ভালো লাগা? সে মনে মনে বলে ওঠে….
–“কি আছে আপনার স্পর্শে? কেন উতলা হয়ে পড়ি আমি এভাবে এই স্পর্শে? যেন আপনার ছোঁয়া এর আগেও পেয়েছি আমি।”
মাধুর্যের সেসব কথাগুলো মনেই থেকে গেল। মুখ বাইরে আর বের হলো না। হাত আস্তে আস্তে উঠিয়ে অনুভবের পিঠে হাত রাখতেই অনুভব ছেড়ে দেয় তাকে। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে….
–“সরি। আই এম সরি।”

অনুভব এতো দ্রুত বেরিয়ে চলে যায় যে মাধুর্যের মনে হলো মানুষটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। কিছুক্ষণ বসে বসে নানান ভাবনায় মেতে থাকল সে।
–“কি আপনার এই অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ? আপনি কি আমায় ভালোবাসেন? তাহলে কেন স্বীকার করেন না? কেন এতোটা রহস্যময় করে রাখেন নিজেকে?”
বাইরের দিকে তাকিয়ে আনমনে কথাগুলো বলে ওঠে মাধুর্য। কিন্তু উত্তরগুলো পাবে কোথায়? নেই উত্তর। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘ নিশ্বাস। বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় সে।
দরজা পেরিয়ে ঢুকতেই এলিনাকে হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু ভ্রু কুঁচকে নিজেও প্রতিত্তোরে মুচকি হাসলো মাধুর্য। কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে বলল…..
–“কি ব্যাপার এতো হাসি কেন মুখে? কোনো খুশির খবর আছে মনে হচ্ছে।”
–“হুমম আছে তো তোমার জন্য। ঘরে যাও দেখতে পাবে।”
–“কি আছে ঘরে?”
এলিনা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ঘরের দিকে ঠেলে দেয় মাধুর্যকে। মাথা নাড়িয়ে ঘরে ঢোকে মাধুর্য। বেডের কোণে বসে থাকা মানুষটিকে দেখে খুশিতে ঝলমল করে ওঠে তার মুখ।

দৌড়ে গিয়ে হামলে পড়ে সামিহার ওপর। সামিহা মাধুর্যের এমন কান্ড দেখে খিলখিল করে হেসে দেয়। তা আড়াল থেকে দেখে অনুভব। মাধুর্যের বাচ্চামি দেখে মনে পড়ে ভাবনার কথা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মাধুর্যের দিকে।
–“তোমাকে দেখে বছরের পর বছর পার করে দিতে পারি। তুমি সাধারণের মাঝে অসাধারণ। তুমি আমার হৃদয়ে এমনভাবে গেঁড়ে বসলে যে এই ৪৯ বছর পাড়ি দিয়েও ভুলতে পারলাম না তোমায়। তোমার হাসি আমাকে হাসায়। তোমার কান্না আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করে। এ কেমন কঠিনতম অনুভূতি? আমার নাম অনুভব। অথচ দুনিয়ার সব থেকে কঠিন অনুভূতির স্বীকার আমি। শুধু তোমার জন্য!”
মাধুর্য সামিহাকে ছেড়ে এক্সাইটেড হয়ে গালে গাল লাগিয়ে বলে…..
–“সামিহা আপু, কখন এলে?”
–“এইতো কিছুক্ষণই হলো মাত্র। কেমন আছিস? এখানে তোর কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?”
মাধুর্য ডানে-বামে মাথা নাড়ায়। প্রশান্তির সুরে বলে….
–“না। আমার এখানে কোনোরকম অসুবিধে হয় না। অনুভব আমার কোনো অসুবিধে হতেই দেয় না। তবে তোমাদের ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হয়।”

সামিহা মাধুর্যের গাল টেনে দিয়ে বলে….
–“প্রথমেই বুঝেছিলাম, অনুভব ছেলেটা বেশ ভালো। আর আমাদের ছাড়া বলিস তো তাহলে আমাদের কথা ভুলেই যা। বাড়িতে ফিরলে মায়ের কষ্টে তুই থাকতে পারবি না।”
–“মামি মা ভালো আছে তো? বিভোর ভাইয়া আর সানিয়া?”
–“মায়ের কথা বলছিস? এখন একা একা সব করে আর আমি যতটুকু হেল্প করি। নিজে নাজেহাল হয়। তার অবস্থার জন্য নিজেই দায়ি। সানিয়া তো ওই এক রুপচর্চা নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত। আর বিভোর ভাইয়া ভালোই আছে। মা মেয়ে দেখছে বিয়ে দেওয়ার জন্য।”
–“বাহ, বেশ ভালো খবর।”
মাধুর্যকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় সামিহা। চোখ ছোট ছোট করে বলে….
–“আজ এখানে আসার একটা কারণ আছে। বল কি কারণ?”
মাধুর্য ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে। কয়েক সেকেন্ড পরেই হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে….
–“উমম….আজ কত তারিখ? কাল আমার জন্মদিন না?”
–“ঠিক ধরেছিস। কাল তোর জন্মদিন।” (হেসে)

হাসিটা নিমিষে মিলিয়ে যায় মাধুর্যের। শুকনো হয়ে যায় তার মুখ। বেড থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। অনুভব পুরো বিষয়টাই আড়াল থেকে লক্ষ্য করে। জানালার কাছে পর্দা ধরে দাঁড়ায় মাধুর্য। বিষন্নতায় ছেয়ে যায় ওর মুখ। সামিহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্রশ্ন করে…..
–“কি হয়েছে মাধুর্য? তোর মুখের হাসি হঠাৎ ফুরিয়ে গেল যে!”
–“কাল আমার জন্মদিন। অথচ যারা জন্ম দিয়েছে তারা আমার জীবনে নেই। ২২ টা বছর পার করলাম তাদের ছাড়া। কিন্তু মনটা এখনো কোথাও না কোথাও বিশ্বাস করে আমার মা-বাবা আজও আছে। কোথাও একটা আছে।”
সামিহা মাধুর্যকে কি বলে শান্তনা দেবে খুঁজে পায় না। মাধুর্যের মলিন হয়ে যাওয়া চোখমুখের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে সে।

নিজের বাড়িতে চেয়ারের ওপরে পা তুলে ডান হাতটা থুঁতনিতে রেখে বসে আছে অরুণ। ও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি আজ। মুখটা জড়িয়ে গ্লাসে থাকা পানীয় এক ঢোকে শেষ করে মাথা হেলে বসে থাকে সে। ভার কন্ঠস্বরে বলে ওঠে….
–“তাহলে কি কবিতায় ভাবনা? নাকি আমার কোথাও ভুল হচ্ছে?”
নিজের চোখ কচলে আয়নার দিকে লক্ষ্য করে সে। পাগলের মতো মাথার চুল এলেমেলো করে বলে….
–“না না। আমি নিজের চোখকে অবিশ্বাস করছি। মাধুর্য তাহলে সাধারণ মানুষ। আর কবিতা ভাবনা। কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে এই মেয়েটার। আর ওই অনুভবেরও। ওর থেকে মাধুর্যকে দূরে সরাতে হবে। যেকোনো উপায়ে আর যেকোনো ভাবে।”
আরো বিভিন্ন বিষয় ভাবতে ভাবতে তার ঘরে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে পড়ে কেউ। এমন কান্ড দেখে অরুণ চোখ লাল করে বলে….
–“কি হলো? ঘরে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয় জানিস না? ভুলে গেছিস নিয়মকানুন?”
ছেলেটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ওঠে….
–“না প্রিন্স। তবে খবরটাই এমন যে দ্রুত আসতে হলো।”

–“কি খবর বল। বিদায় হ। আমার ভালো লাগছে না।”
তিক্ততার সুরে কথাটি বলে ওঠে অরুণ। ছেলেটি ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে…..
–“আমাদের দলের আরেকজন মরে গেছে প্রিন্স।”
চকিতে তাকায় অরুণ। দাঁড়িয়ে পরে চেয়ার থেকে। ধুপধাপ পা ফেলে এগিয়ে এসে চোখ গরম করে জানতে চায়….
–“কে মারা গেছে?”
–“ওইযে, সেদিন ওই সুন্দর মেয়ে ভ্যাম্পায়ারের শিকার যে হয়েছিল না? আর ওই সুন্দর মেয়েকে যে দেখেছিল সে মরে গেছে।”
পুরোটা শুনেই রাগে বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে থাকে অরুণ। নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে নিজের আসল রুপ ধারণ করতে সময় নেয় না অরুণ। হুংকার দিয়ে ওঠে বলে….
–“চলে যা চোখের সামনে থেকে নয়ত….”
কথাটা ছেলেটার দিকে ছুঁড়ে দেয় অরুণ নিজের হাতের কাছে যা পায়। ছেলেটি ভয়ে দৌড়ে পালায়। অরুণ ভেবেছিল কবিতায় ভাবনা কি না নিশ্চিত হতে ওই ওয়ারওল্ফটা কাজে লাগবে। কিন্তু পারল না। রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ল সে।

সন্ধ্যায়….
সামিহা চলে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। রুেনুকা বার বার ফোন দিয়ে চলেছিল ওকে। তাই যেতে হয়েছে তাকে। আজ অফিসেও যায়নি মাধুর্য। অনুভবই যেতে বারণ করেছে। সামিহা এসেছিল তাকেই সময় দিতে বলেছিল। তাই এখন ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে মাধুর্য। ছাঁদটা খুব একটা বড় নয়। মাঝারি আকারের ছাঁদ। ছাঁদে অনেক দিন আসা-যাওয়া করা হয় না। সেটা ছাঁদ দেখলেই বোঝা যায়।
–“কেন গিয়েছিলে আজকে হসপিটালে?”
অনুভবের কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকায় মাধুর্য। অনুভবের প্রশ্নের জবাব দিতে নেয় সে। কিন্তু তার আগেই থামিয়ে দেয় অনুভব। সে এগুতে এগুতে বলে….
–“একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো। আমাকে না বলে কোথাও যাবে না তুমি। এটা আমার রিকুয়েষ্ট নয়। অর্ডার। আর আমার অর্ডার কেউ অমান্য করুক সেটা আমি মোটেই পছন্দ করি না।”
সবটা শোনার পর এবার মাধুর্য সাহস করে বলে ওঠে….
–“আপনি ব্যাপারটা একটু বেশি সিরিয়াসলি নিচ্ছেন। অরুণ বিপদে ছিল তাই….”

মাধুর্যকে থামিয়ে দিয়ে অনুভব জোর গলায় বলে ওঠে….
–“যাকে তাকে নিয়ে এতো চিন্তা কীসের তোমার? তোমার এটাই সমস্যা কারো বিপদ দেখলে তুমি ঠিক থাকতে পারো না। তবে এর জন্য নিজের কত বড় বিপদ হতে পারে জানো তুমি? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া? লিসেন, ইউ আর মাই রেসপন্সিবিলিটি। তোমাকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব আমার। সো এবার থেকে যেখানে যাবে এবং যা করবে সব আমাকে বলে করতে হবে তোমায়। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার মাধুর্য?”
কথা বলা শেষে অনুভবের মাধুর্যের দিকে খেয়াল করে। মাধুর্য মলিন মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এবার মুখে লাগাম দেওয়া উচিত অনুভবের। তাই করে সে। রাগে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল সে। তবে মাধুর্যের মুখ মলিন হওয়ার পেছনে অনুভবের রাগের কথাগুলো জড়িয়ে নেই। তার খারাপ লাগাটা অন্যখানে। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, সে অনুভবের দায়িত্ব মাত্র! সেকারণেই অনুভব এতো কেয়ার করে ওর প্রতি। এসব ভেবে হৃদয়ের মাঝে ভাঙচুর সৃষ্টি হয়। মাধুর্য ভেবেছিল অনুভবের তার প্রতি কোনো অনুভূতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সে ভুল ছিল। মাধুর্য মিনমিন করে বলে ওঠে….
–“হুমম। আর এমন হবে না।”
ছাঁদ থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে নেয় মাধুর্য। দুই ধাপ পা ফেলতেই একটি হাত শক্ত করে আবদ্ধ করে নেয় তাকে।

পিছন ফেরার সময়টাও পায় না। তার আগেই কেউ তার সঙ্গে মিশিয়ে নেয়। আর মানুষটি কে সেটা মাধুর্যের বেশ ভালোভাবে জানা। পিটপিট করে তাকাতে গিয়েও লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে।
–“রাগটা বেশি দেখিয়ে ফেলেছি? সরি। ভেরি ভেরি সরি।”
মাধুর্যের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। অনুভব হাতের বাঁধন আলগা করে। গম্ভীর গলায় বলে উঠল….
–“আমি কিন্তু সরি সবসময় সবাইকে বলি না। তোমার এক্সেপ্ট করে নেওয়া উচিত আমার সরি।”
এবার বাঁকা চোখে তাকায় মাধুর্য। দূরে সরতেই ওর হাতের সাথে অনুভব নিজের হাত আবদ্ধ করে নেয়।
–“ইউ আর নট অনলি মাই রেসপন্সিবিলিটি। তুমি আমার কাছে এমন কেউ যার সঙ্গে আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা সবটা জুড়ে আছে। তুমি এমন কেউ যাকে নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগে। শুধু আমার দায়িত্ব নও তুমি।”
মাধুর্যের প্রাণে পানি আসে। ঠান্ডা হয়ে যায় তার পুরো শরীর। অন্ধকার চারিদিকে। এই ঝাপসা আলোয় দুটো মানুষ একে ওপরকে তাকিয়ে নিজের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। এ যেন হাজার বছরের তৃষ্ণা!

রাত প্রায় ১১ টা। মাধুর্য টেবিলেই মাথা রেখে পড়তে পড়তে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। এই নিস্তব্ধতার মাঝে কারো পায়ের শব্দ। পায়ের শব্দটা আস্তে আস্তে প্রখর হচ্ছে। কেউ হেঁটে আসছে মাধুর্যের ঘরের দিকে।
টেবিলে মাথা লাগিয়ে ঘুমের ঘোরে বিরবির করছে মাধুর্য। এই বাতাসের মাঝেও ও ঘামছে। ওর কপালে কয়েকটা ভাঁজ স্পষ্ট। অতি উত্তেজিত হয়ে একসময় সে বলে….
–“আমি মরতে চাইনি। মারলেন তুমি আমায়। মেরে ফেললে। বিশ্বাসঘাতকতা করে কি পেলে তুমি? কেন করলে এতোসব অভিনয়। তোমার অভিনয়ে ভুলেছি আমি। আমি তো অভিনয় করিনি। সত্যিকারের ভালোবেসেছি। এই ভালোবাসার ফল কি এতোটাই বিষাক্ত যে প্রাণটা কেঁড়ে নিল?”
বুঁজে থাকা বাম চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসে অশ্রু। পেটে হাত দিয়ে গোঙ্গাতে থাকে মাধুর্য। একসময় ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে মাধুর্য। ছটফট করতে থাকে। অনুভব এসেছিল ঘরে। মাধুর্যকে ধরে চেপে ধরে নিজের সাথে। অন্যদিকে মাধুর্য বার বার বলে চলেছে…..
–“খুনি তুমি। শুধু মানুষের নও ভালোবাসারও খুনি তুমি। মেরে ফেলেছো। মেরে ফেলেছো আমায়।”

সে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে নিজেকে। অনুভব আঁতকে ওঠে। ভেতরটা কেঁপে ওঠে তার। তাহলে কি মাধুর্যের সবটা মনে পড়ল? আর ভুল বুঝতে শুরু করল অনুভবকে। সে আলতো করে হাত রাখে মাধুর্যের গালে। অসহায় ভঙ্গিতে বসে পড়ে এক হাঁটু গেঁড়ে।
–“এটা আমি মাধুর্য। কোনো খুনি নয়।”
অনুভবকে দেখে মাধুর্যের ছটফটানি বন্ধ হয়ে যায়। থম মেরে থাকে সে। মাথায় হাত দিয়ে বলে…..
–“স্বপ্ন। আবার সেই স্বপ্ন। আমি মুক্তি এর থেকে। ওই অদ্ভুত মেয়ের মারা যাবার যন্ত্রণা আমি কেন অনুভব করি?”
–“তার মানে স্বপ্ন দেখছিলে?”
মাধুর্য মাথা দুলায়। নিশ্চিন্ত হয় অনুভব। তৎক্ষনাৎ মাধুর্য বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
–“আপনি এই সময় এখানে কি করছেন?”
সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ায় অনুভব। স্মিত হেসে বলে….
–“তোমাকে ডাকতে এসেছিলাম। একটা জায়গায় নিয়ে যাব যাবে?”
–“কোথায়?”
অনুভব মাধুর্যকে হাত ধরে দাঁড় করায়।
–“না বললে যাবে না? বিশ্বাস করতে পারছো না?”
–“এভাবে বলবেন না। আপনাকে অবিশ্বাস করলে যেন নিজের ওপর থেকেই বিশ্বাস উঠে যায় আমার।”
অনুভবের হাসি প্রসারিত হয়। মাধুর্যের হাতটি ধরে বেরিয়ে আসে দুজনে।

চলবে…..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here