অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-আঠারো

0
769

অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-আঠারো
নাফিসা নীলয়া!

রুমা বিয়ের ছুটি শেষ করে আজ স্কুল জয়েন করেছে। সবাই তাকে অভিবাদন জানাচ্ছে। বাচ্চারা তাকে ফুল দিচ্ছে। রুমার খুব আনন্দ হচ্ছে। প্রথমে তার এই প্রফেশনে ইন্টারেস্ট ছিলো না। কিন্তু নীরার সাথে থাকতে থাকতে ইন্টারেস্ট জেগেছে। এখন এটাকেই সে ভালোবেসে ফেলেছে। কি সুন্দর করে বাচ্চারা তাকে ফুল দিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে। দেখেই মন ভরে উঠলো। নীরা দেখলো রুমার চোখ মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। নীরারও খুব ভালো লাগছে। রুমা সবার থেকে ফুল নিয়ে নীরার কাছে আসলো। এসেই হাসতে হাসতে বললো।

-দেখেছিস। কি সুন্দর সবার থেকে স্পেশাল অভিবাদন পাচ্ছি। তুইও বিয়ে করে ফেল নীরা। তাহলে তুইও এমন স্পেশাল ফিল পাবি।

-তুই আসলেই পাগলি রুমা। অভিনন্দন আর ফুল পাওয়ার জন্য এখন আমাকে বিয়ে করতে হবে। পাগল।

-ঠিক বলেছিস। তবে আমার সাথে সাথে তুইও পাগলি। কারন পাগলির বেস্ট ফ্রেন্ড পাগলিই হয়।

কথাটা বলেই রুমা হাসতে হাসতে নীরাকে জড়িয়ে ধরলো। নীরাও হাসলো।

-আচ্ছা এবার ছাড় আমাকে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তো।

-আচ্ছা!

রুমা হাসতে হাসতে ক্লাস নিতে চলে গেল। নীরা করিডোরে দাড়ালো। ভাবলো শিহাবের সাথে তার দেখা করার কথা ছিলো। কিন্তু বিভিন্ন কারনে তা সম্ভব হয়নি। আজ দেখা করলে কেমন হয়! এসব এখানেই থামাতে হবে। কারন শিহাবের ব্যবহার দিনদিন পরিবর্তন হচ্ছে। মিলা তো জেনেই গেল। রুমা আর সাইফও সন্দেহ করছে। সবার জানার আগেই এসব এখানেই শেষ করলে ভালো হতো। ভাবতে ভাবতে শিহাবের নাম্বারে ডায়াল করলো নীরা।

শিহাব অফিসে কাজ করছিলো। কাজের সময় সে দিন দুনিয়া ভুলে যায়। কোনোদিকে খেয়াল থাকে না। তার সামনেই ফোন বাজতে বাজতে থেমে গেল। সে রিসিভ করলো না। দ্বিতীয় বার বাজার পর সে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নীরা তাকে ফোন করেছে। সে অবাক হলো প্রথমে। তারপর রিসিভ করলো। প্রথমে নীরাই কথা বলে উঠলো।

-আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়ালাইকুমুস সালাম।

-আপনি আজকে কখন ফ্রি থাকবেন শিহাব?

-আচ্ছা তোমার এখন মনে পরলো? আমাদের দেখা করার কথা ছিলো আরো চারদিন আগে। অথচ আজ মনে পরলো বাহ্!

-তার জন্য আমি খুব দুঃখিত। এখন এটা বলুন যে আজ আপনার সময় হবে কিনা।

-বিকালে সময় হবে।

-ঠিক আছে। আমি আপনাকে লোকেশন টেক্সট করে দিবো। রাখছি।

বলেই নীরা ফোন কেটে দিলো। শিহাব কান থেকে ফোন নামিয়ে বললো তুমি এটাই করতে পারো নীরা। খালি রাখছি রাখছিই করতে পারো। আমাকে বুঝতে পারো না।

মিলা ক্যাম্পাসের এক কোনায় বসে আছে মন খারাপ করে। কাল তার আপার বলা কথাগুলো বারবার মনে পরছে। কি হয় শিহাব ভাইকে একটা সুযোগ দিলে। এটাই সে ভেবে পাচ্ছে না। তার আপার জীবনটা কি এমনই থাকবে। কষ্ট হচ্ছে মিলার। অনেক কষ্ট। সবসময় সবাই বলতো নীরার নাকি বিয়ে হতে অনেক সমস্যা হবে। মিলা তখন বলতো আমার আপার জন্য রাজপুএ আসবে দেখে নিও। কিন্তু সবাই তখন মুখ বাঁকাতো। আজ তাদেরকে বলতে ইচ্ছে করছে দেখো আমার আপার জন্য রাজপুএই এসেছে। দেখেছো তোমরা!
কিন্তু আফসোসের বিষয় তার আপা রাজপুএকে পাওা দিচ্ছে না।

মিলা এসবই ভাবছিলো বসে বসে। তখনই রেহান ধপ করে তার পাশে বসে পরলো। মিলা ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো রেহান বসে আছে। মিলার রাগ হলেও আজ আর কিছু বললো না। কারন তার আজকে মন খারাপ। রেহান অবাক হয়ে দেখলো মিলা তাকে কিছুই বললো না। উল্টো সামনের দিকে তাকিয়ে বসেই রইলো৷ রেহান দূর থেকে দেখেছে মিলা মুখ গোমড়া করে বসে আছে। এজন্যই সে দেখতে আসলো। ভেবেছিলো মিলা বোধ হয় তাকে বকবে। কিন্তু না এ তো মিরাক্কেল হয়ে গেল। রেহান কাশি দিয়ে কথা বলা শুরু করলো।

-হোয়াট হ্যাপেন্ড টিলা? মুখ কালা করে বসে আছো কেন? ভালো লাগছে না দেখতে।

মিলা আগুন চোখে রেহানের দিকে তাকালো।

-তাতে তোমার কি? তুমি এখানে কি করো? যাও এখান থেকে। ভালো লাগছে না আমার।

-তোমার বোধ হয় মন খারাপ টিলা। মন খারাপের কারন জিজ্ঞেস করবো না। তবে এটুকু বলবো যে মন খারাপ করে থেকো না। তোমাকে অগ্নিকন্যা হিসেবেই মানায়। গোমড়াকন্যা হিসেবে না।

অন্যান্যদিন রেহানের এই কথাতেও মিলা রেগে গিয়ে যাচ্ছে তাই বলে দিতো। কিন্তু আজ বললো না। মুখটা মলিন করেই বসে রইলো। রেহান মিলার দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখলো মিলা মুখ আরো মলিন করে বসে আছে।

-দেখো মিলা মুড অফ করে থেকো না। সিরিয়াস কিছু হয়েছে?

-না।

-তবে? সিরিয়াস কিছু না হলে মুড অফ করে থাকার প্রশ্নই আসে না।

-উফ রেহান বিরক্ত করো না তো যাও। সমস্যায় আছি সমাধান করতে পারছি না। তার উপর তোমার বকবক।

-নিজেই মন খারাপ করে বসে থাকলে কি করে সমাধান করবে বলো! মুড অন করো। তারপর দেখবে সমস্যা সমাধানের অনেক উপায় মাথায় এসে গেছে।

মিলা এবার আর কিছু বললো না। রেহান উঠে গেল। তারপর আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসলো। সে রুমার বিয়ের সময় দেখেছিলো মিলা আইসক্রিম খেতে ভালোবাসে। শীতের সময় ও আইসক্রিম খেয়েছিলো। এজন্য নীরার কাছে বকাও খেয়েছে। এখনও শীত চলছে। তবে একটা আইসক্রিম খেলে কিছু হবে না ভেবেই রেহান আইসক্রিম নিয়ে আসলো। মিলার সামনে আইসক্রিম ধরলো। মিলা আবার চমকে উঠলো। রেহান মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো।

-তুমি বোধ হয় আইসক্রিম খেতে ভালোবাসো টিলা। রুমা আপুর বিয়ের সময় দেখেছিলাম। ধরো আইসক্রিম খাও আর মুড অন করো।

মিলা প্রথমে নিতে চাচ্ছিলো না। তবে চোখের সামনে পছন্দের আইসক্রিম রয়েছে তাই আর না করলো না। চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আইসক্রিমটা হাতে নিলো মিলা।

-তুমি এতো করে রিকুয়েষ্ট করলে বলে নিলাম। নয়তো নিতাম না।

রেহান মুচকি হাসলো হেসে নিজেও আইসক্রিম খেতে শুরু করলো। মিলাকে আর কিছু বললো না। মিলাও আইসক্রিম খাওয়া শুরু করলো গম্ভীর মুখেই। দুজন সবসময় দুজনের পেছনে লেগে থাকে। তবে এখন ওদের দেখলে কেউই বলতে পারবে না যে এরা সবসময় ঝগড়া করে।

স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। নীরা আর রুমা একএে বের হলো স্কুল থেকে। বের হয়ে দেখলো সাইফ রুমাকে পিক করার জন্য এসেছে। রুমা খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। নতুন বিয়ের পর এক্সট্রা কেয়ার সবারই ভালো লাগে। নীরা আর রুমা এগোলো সাইফের দিকে।

-বাহ্ আমার ভাই তো খুব দায়িত্বান স্বামী হয়ে গেছে।

নীরার কথায় সাইফ আর রুমা দুজনেই হাসলো।

-তুই ই তো বলেছিলি ভালো স্বামী হয়ে দেখাতে। তাই চেষ্টা করছি।

-হুম বুঝলাম। আমাদের সাইফ এখন সব করতে পারে।

নীরার কথায় ফোড়ন কাটে রুমা।

-ছাই করতে পারে। সবসময় ঝগড়া করে আমার সাথে।

-আমি ঝগড়া করি? না তুই ঝগড়া করিস।

-দেখলি আবার শুরু হয়ে গেল। ভাল্লাগে না!

নীরা দেখলো এই টম এন্ড জেরি আবার ঝগড়া শুরু করবে। তাই সে দুজনকে চুপ করতে বললো।দুজন চুপ হলো। সাইফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো

-এবার চল দুজন। নাকি এখানেই দাড়িয়ে থাকবি দুইজনই?

সাইফের কথা শুনে নীরা হাসলো। সে ওদের দুজনের জন্য একটা সারপ্রাইজ রেখেছে। নদীর পারে খুব সুন্দর নতুন একটা জায়গা তৈরি হয়েছে কাপলদের জন্য। নীরা ওদের জন্য আলাদা স্পেস বুকিং করে রেখেছে। সেখানে গিয়ে একসাথে সময় কাটিয়ে একেবারে ডিনার করে ফেরা যাবে। এখন সময় সারপ্রাইজ দেওয়ার। তাই নীরা দুজনকেই বললো।

-তোদের জন্য সারপ্রাইজ আছে। গেস হোয়াট?

সারপ্রাইজের কথা শুনে দুজনেই খুশি হয়ে গেল। রুমা উচ্ছাসিত কন্ঠে বললো।

-কি সারপ্রাইজ নীরা?

-তোদের জন্য একটা সুন্দর জায়গা বুকিং করেছি। ওখানে গিয়ে ঘুরবি সময় কাটাবি। তারপর একেবারে ডিনার করে বাসায় যাবি।

নীরার কথা শুনে দুজনই খুব খুশি হলো। নীরা মাঝেমাঝেই ওদের এমন সারপ্রাইজ দিতো। আর বিয়ের পর এটা নীরার দেওয়া এমন প্রথম সারপ্রাইজ।

সাইফ লাজুক মুখে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো।

-এসবের কি দরকার ছিলো নীরা?

নীরা খিলখিল করে হেসে ফেললো। রুমাও হাসছে নীরার সাথে।

-আহারে আমার ভাই। আর কিছু বলতে হবে না তোর। আমি জানি ভেতরে ভেতরে তুই খুশিতে লাফাচ্ছিস।

সাইফ আর রুমা দুজনই নীরাকে দুইদিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। নীরা হাসছে এদের কান্ড দেখে।

-হয়েছে ছাড় এবার। আর ঘুরতে যা। আর একদম ঝগড়া করবি না!

দুজন নীরাকে ছেড়ে দাড়ালো। রুমা বললো।

-আমরা তোকে নামিয়ে দিয়ে যাই। চল।

-হ্যা চল তোকে নামিয়ে দিয়েই আমরা যাবো।

ওদের কথায় নীরা ভাবলো ওদের সাথে সে কিভাবে যাবে। শিহাবের সাথে দেখা করার কথা তার। তাই সে এড়িয়ে গেল।

-একদম না। উল্টো পথ পরে যাবে তাহলে। তোরা যা আমি একাই চলে যাবো।

দুজন তবুও কিছুক্ষন নীরাকে জোরাজুরি করলো। তবে কাজ হলো না। শেষে হাল ছেড়ে দিলো ওরা।

-আচ্ছা। যাই তাহলে আমরা। থ্যাংক ইউ দিবো না তোকে।

রুমার কথায় ওর মাথায় গাট্টা মারলো নীরা।

-দিতে হবে না এবার যা।

সাইফ আর রুমা দুজনে নীরাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। নীরা আস্তে আস্তে হাটতে থাকলো। ওমনিই একটা গাড়ি ঠিক তার সামনে থামলো। নীরা বিরক্ত হয়ে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো কিন্তু গাড়ির ভেতর থেকে শিহাব বেড়িয়ে আসলো। শিহাবকে এখানে দেখে নীরার আরো বিরক্ত লাগলো।

-আপনি এখানে কেন? আর এটা কেমন অভদ্রতা?

-তোমাকে নিতে আসলাম।

শিহাবের সোজাসাপটা জবাব। নীরা বিরক্তিতে ভ্রু আরো কুঁচকালো।

-আমাকে আপনার নিতে আসতে হবে কেন? আমার টেক্সট করা জায়গাতে গেলেই তো পারতেন। আপনাকে তো আমি এখানে আসতে বলিনি।

-না আমি ভেবেছিলাম এবার ও না আমাকে তিন ঘন্টা পনেরো মিনিট দাড়িয়ে থাকতে হয়। তাই আমি আজ স্কুল ছুটির সময়েই এসে গেছি। এসে এখানেই দাড়িয়ে ছিলাম। তোমার বন্ধুদের যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।

পিঞ্চ মেরে বললো শিহাব। নীরা প্রচন্ড বিরক্ত হলো এবার। শিহাবের দিকে তাকিয়ে বললো।

-আপনার পিঞ্চ মারা শেষ হলে এবার আমরা যেতে পারি?

একটু জোরে হাসলো শিহাব। নীরা সেই হাসি দেখলো। হাসলে শিহাবের গজ দাঁত বের হয়। ঠোটের দুই পাশে সুন্দর গর্ত হয়। শিহাবের গজ দাঁত আছে। এই প্রথম খেয়াল করলো নীরা। মেয়েদের গজ দাঁতের হাসি সুন্দর হয় জানতো নীরা। তবে ছেলেদের গজ দাঁতের হাসিও যে এতো সুন্দর হয় এই প্রথম সে দেখলো। শিহাবের হাসি থামলে সে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলো।

-চলো।

নীরা চুপচাপ শিহাবের গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে আর কোনো কথা হলো না দুজনই চুপচাপ ছিলো। নির্দিষ্ট স্থানে এসে গাড়ি থামালো শিহাব। কাছেরই একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে ওরা। নামার সময় শিহাব গাড়ির দরজা খুলে দিলো। নীরা মনে মনে বিরক্ত হলেও কিছু না বলেই নামলো। দুজনে একটা টেবিলে গিয়ে বসলো।

-কি খাবে বলো তো?

-কিছু খাবো না। কথা বলেই চলে যাবো।

-কেন খাবে না?

-কারন আমি খেতে আসিনি।

-তাহলে রেস্টুরেন্টের লোকেশন টেক্সট করেছিলে কেন? অন্য কোনো জায়গা ঠিক করতে পারতে।

শিহাবের ক্রমাগত কথায় নীরা রাগী চোখে তাকালো। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

-মিনিংলেস কথাবার্তা একদম বলবেেন না। রাগ হচ্ছে আমার এখন।

-তো রাগো। রাগতে না করিনি তো।

কাঁধ ঝাকিয়ে বললো শিহাব। নীরা শিহাবের দিকে হতাশ চোখে তাকালো। কে বলবে এই ছেলে সবার সাথে গম্ভীরমুখে কথা বলে। সবসময় মেপে মেপে সবার সাথে কথা বলে। শিহাব বোধ হয় ধরতে পারলো নীরা কি ভাবছে। তাই বললো।

-আমি বলেছিলাম, আমি সবার সামনে এক। আর তোমার সামনে আরেক।

-ডাবল স্ট্যান্ডার্ড!

-একদম।

-সবার সামনে যেমন থাকেন আমার সামনেও তেমনই থাকবেন। তাতেই ভালো হবে।

শিহাব এই কথার উওরে আর কিছু বললো না। ওয়েটারকে ডেকে শুধু কফি অর্ডার করলো।

-তো কি বলতে চাইছিলে তুমি? যার জন্য আমাকে চারদিন অপেক্ষা করতে হলো।

-আপনি জানেন গত চারদিন আমি কি পরিস্থিতি তে ছিলাম। আর দেখা আপনিও করতে চাইছিলেন আপনারও কিছু বলার ছিলো।

-আচ্ছা ঠিক আছে। এখনো কি জ্বর আছে তোমার?

জিজ্ঞেস করতে করতেই শিহাব নীরার কপাল ছোঁয়ার জন্য উঠে ওর দিকে ঝুঁকে গেল। নীরা মাথাটা পিছিয়ে নিলো।

-এখনো আমার কোন কুক্ষনে জ্বর থাকবে। আশ্চর্য!

শিহাব হেসে আবার বসে পরলো।

-আচ্ছা শোনো নীরা। সোজাসুজিই বলছি রুমার বিয়ের দিন তোমার সাথে আমার বিহেভ একদম ঠিক ছিলো না। তার জন্য আমি অনুতপ্ত। ক্ষমা করে দিও। আসলে আমার রাগ হলে নিজেকে সামলাতে পারি না। উল্টোপাল্টা কর্মকান্ড করি। বাসায় গিয়ে আমার প্রচন্ড খারাপ লেগেছে। আই গিল্টি ফর দ্যাট।

কথা শেষ করে থামলো শিহাব। নীরা স্থির চোখে তাকালো।

-সেদিনের সেই ব্যবহারের জন্য আমার আপনাকে একটা চড় মারা উচিত ছিলো। মারিনি কারন তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিলো। আর কখনো কারো সাথে দ্বিতীয় বার এরকম ব্যবহার করবেন না শিহাব।

নীরার কথা শুনে একটু হাসলো শিহাব।

– অন্য কারো দিকে তো তাকাতেই পারি না। সেখানে অমন আচরণ বহু দূরের কথা। তুমি কি ক্ষমা করোনি?

-বাদ দিন বিষয়টা। আমি যা বলতে চাইছি বলে ফেলি।

-বলো!

-দেখুন আমার প্রতি আপনার যেই আচরন তা খুবই দৃষ্টিকটু। প্রথমে আমি বিষয়টা ইজিলি নিয়েছি। কিন্তু এখন নিতে পারছি না। আপনার এরকম টিনেজারের মতো বিহেভ কিন্তু নেওয়া যায় না। আমার এসব খুব বিরক্ত লাগে। আশা করি আমার দিকটা ভেবেও আপনি আর এরকম আচরণ করবেন না। আপনার আচরণে অপরজন বিরক্ত হোক আপনি নিশ্চয়ই সেটা চাইবেন না৷ কি ঠিক তো?

নীরা জবাবের আশায় শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইলো। শিহাব একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। শিহাব কিছু বলছে না কেন বুঝতে পারলো না নীরা। একটুপর শিহাব নীরার দিকে তাকালো। নীরা ইতিবাচক জবাবের আশায় এখনো তাকিয়ে আছে।

-আমার আচরণ খুব বেশি বিরক্তকর?

নীরা উওরের বদলে প্রশ্ন একদম আশা করেনি। তবুও বললো

-অবশ্যই বিরক্তকর। আমি এসব পছন্দ করি না। আপনি কি বোঝাতে চান তা আমি বুঝি। এই সাধারণ বিষয় বোঝার মতো যথেষ্ট জ্ঞান আমার আছে।

-তাহলে বুঝেও না বোঝার ভান কেন করে থাকো?

শিহাবের মুখে এতক্ষন সূক্ষ হাসি ছিলো। এখন তাও মিলিয়ে গেল। মুখ হয়ে উঠলো গম্ভীর। নীরা একটু হাসলো। নরম স্বরে বললো

-বোঝার ভান করলে কি খুব ভালো হতো? তাছাড়া এই যে এখন বললাম বুঝি।

-বোঝো। তুমি বোঝো নীরা তারপরও আমাকে এসব কেন বলছো?

-কারন শুধু আপনার দিকটাই আমার ভাবলে চলবে না। নিজের দিকটাও ভাবতে হবে। যেখানে আমার কোনো ইন্টারেস্ট ই নেই। যেই বিষয়ে আমার কোনো ইন্টারেস্ট কাজ করে না। সেই বিষয়টা আমি কি করে বাড়তে দেই?

নীরার কথাগুলো শুনে শিহাব এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবুও সে সরাসরি কথায় চলে গেল।

-আমি তোমাকে বিয়ে করবো নীরা।

নীরার কাছে শিহাবের কন্ঠ আকুল শোনালো। কথাটা দৃঢ় শক্ত অথচ আকুল কন্ঠে বলেছে শিহাব। নীরা এরকমই কিছু ভেবেছিলো। তাই সে ঘাবড়ালো না।

-কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। বিয়ে একটা পবিএ সম্পর্ক যেনতেনভাবে কিছু না ভেবেই এতে জড়ানো যায় না।

-আমি সব ভেবেই বলছি।

-কিন্তু আপনি একবারো আমার মতামত জানতে চাননি। শুধু নিজের কথাই বলে গেছেন।

এবার শিহাব অধৈর্য হয়ে পরলো। সে নীরাকে কি করে বোঝাবে যে নীরা তার জন্য কি!

-তুমি ভাবো নীরা। সময় নাও আমি না করছি না। কিন্তু প্লিজ আমাকে নিরাশ করো না।

-মিথ্যে আশা আমি দিতে পারবো না শিহাব।

শিহাব পারছে না নীরাকে বোঝাতে। রিজেকশন এর এতো কষ্ট হতে পারে সেটা সে আগে কখনো বোঝেনি। শিহাবকে রিজেক্ট করছে নীরা! ভেবেই তার বুকের ভেতর কষ্ট হচ্ছে। সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।

নীরা চুপচাপ আছে। হঠাত চারদিকে ঝনঝন শব্দের প্রতিদ্ধনি শোনা গেল। রেস্টুরেন্টের সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে। শিহাব টেবিলের সব ফেলে দিয়েছে। উঠে দাড়িয়ে সে চিৎকার করে উঠলো!

-তাহলে আমার অনুভূতির কি হবে? আমার অনুভূতির কোনো দামই নেই তোমার কাছে। সবার সামনে মহান তুমি! অথচ অথচ!

আর কিছুই বলতে পারলো না সে। রাগ,দুঃখ কষ্ট হতাশা সব একসাথে গ্রাস করেছে তাকে। নীরা শিহাবের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর উঠে দাড়িয়ে বললো।

-আপনি আমাকে অসম্মান করছেন শিহাব।

শিহাব নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। তবে পারছে না। তারপরও সে নীরার দিকে তাকিয়ে বললো।

-আমি তোমাকে অসম্মান করার কথা ভাবতেও পারি না নীরা।

-তাহলে এখন যা করলেন তা কি ছিলো?

শিহাব নীরাকে আর কিছুই বললো না। বেড়িয়ে গেল। যাওয়ার সময় রেস্টুরেন্টের ক্ষতি পূ্রণের টাকা দিয়ে গেল। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। চারদিকে অন্ধকার। নীরাও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো। বেড়িয়ে দেখলো শিহাব এখনো যায়নি। গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। নীরা শিহাবের দিকে না গিয়ে ফোন নিয়ে উবার কল করার ট্রাই করছিলো। শিহাব দেখলো নীরা তার সাথে যেতে ইচ্ছুক না। তবুও সে নীরার কাছে গেল।

-আমি তোমাকে ড্রপ করে দিবো। আসো।

বলে সে নীরার জবাবের অপেক্ষায় রইলো। নীরা কিছু বললো না। ফোন ঘাটতে থাকলো। নীরার ইগনোরেন্স দেখে শিহাবের মাথায় আগুন ধরে গেল আবার। সে এখনো শান্ত হতে পারছে না। বহু কষ্টে নরম স্বরে নীরাকে যাওয়ার জন্য বললো। আর নীরা কি না চুপ করে দাড়িয়ে ফোন ঘাটছে। শিহাব নীরার দিকে সরু চোখে তাকালো।

-আই সোয়্যার নীরা তুমি যদি এখন না আসো, তাহলে আমি কি করবো তুমি ভাবতেও পারছো না।

নীরা ফোন ব্যাগে রেখে শিহাবের চোখের দিকে তাকালো। নীরার তাকানো দেখে শিহাব চোখ সরিয়ে নিলো। নীরা নিজেই শিহাবের গাড়িতে উঠে বসলো। শিহাব ও গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। নীরা থম মেরে আছে। শিহাব ও আর কিছু বলেনি। নীরার বাড়ির সামনে শিহাব গাড়ি থামালে নীরা নেমে গেল। কিছু বললো না। শিহাবের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসলো। সে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। জীবনে সে বেশি কিছু চায়নি। কখনো কারো প্রতি সুন্দর অনুভূতি জন্মায়নি। তার মা ছেড়ে যাওয়ার পর সে ধুঁকে ধুঁকে মরেছে। তার মাকে সে ভালোবাসতো। তবে মা তাকে ভালোবাসেনি তাই তো চলে গেল। জীবনে সে যাকেই মন প্রান দিয়ে চেয়েছে। সে ই থাকতে চায়নি।

–চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here