অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-একত্রিশ

0
747

অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-একত্রিশ
নাফিসা নীলয়া!

সব মান অভিমানের পালা শেষ হলে মালিহা এসে সবাইকে খেতে ডাকলেন। তিতলি শিহাবকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। শিহাব বললো।

-না, আন্টি এখন বাড়িতে যেতে হবে। অন্য একদিন।

শিহাবের কথা শুনে মালিহা বললেন।

-কোনো কথা শুনছি না। মায়েদের কথা সবসময় শুনতে হয়। সবাই খেতে এসো।

মালিহার একগুঁয়ে কথা কেউ ফেলতে পারলো না। তিতলি তিড়িংবিড়িং করতে করতে মালিহার সাথে চলে গেল। নীরার ঘরে কিছু কাজ ছিলো। বিছানায় বইপএ ছড়ানো ছিটানো ছিলো। তাই সে ভাবলো এগুলো গুছিয়ে তারপর যাবে। নীরা বিছানায় থাকা বইপএ উঠাচ্ছিলো। শিহাব এখনো যায়নি। দাড়িয়ে দাড়িয়ে নীরার কাজ দেখছে। নীরা শিহাবের দিকে না তাকিয়েই বললো।

-দাড়িয়ে আছো কেন? বাইরে যাও। আম্মা ডেকে গেল শুনতে পাওনি?

শিহাব কোনো উওর দিলো না। চুপ করে দাড়িয়েই রইলো। নীরা বই সেল্ফে রেখে শিহাবের দিকে ফিরে বললো।

-কি হলো যাও।

শিহাব নীরার কাছে এসে বললো।

-তোমার ফোন কই?

-আমার ফোন দিয়ে আবার কি করবে ভাঙবে?

নীরার এই কথায় শিহাব আর কিছু বললো না। নীরা বললো।

-তিতলির সাথে ওরকম আচরন করা তোমার একদম ঠিক হয়নি। তোমার থেকে আমি এটা আশা করিনি এট লিস্ট। কিছু না জেনে না শুনেই রেগে যাবে! রাগ কমাও বুঝলে। সবসময় এমন রাগ সবার জন্য ভালো হয় না। তোমার রাগের কারনে অনেকেই কষ্ট পায়।

নীরার কথা শুনে শিহাব হাসলো। তারপর নীরার দুই হাত ধরে বললো।

-তুমিও কষ্ট পাও?

নীরা কিছু বললো না। হাতও ছাড়িয়ে নিলো না। শিহাব এক হাত দিয়ে নীরার দুই হাত ধরে আরেকহাতে নীরার এলোমেলো চুল ঠিক করে দিলো। এইবার নীরা বললো।

-চুল থেকে হাত সরাও। কেউ এসে পরলে কি ভাববে!

বলেই নীরা এবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। তবে শিহাবের একহাতেই তার দুই হাত লক হয়ে আছে। নীরা শিহাবের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো।

-হাত ছাড়ো। আমরা কিন্তু টিনএজ নই। তোমার এতো ইমোশনস কোত্থেকে আসে?

শিহাব কোনো কথা না বলেই নীরার চুল ঠিক করছে চোখের দিকে তাকিয়ে।

-শিহাব তুমি কিন্তু বয়সে আমার খুব একটা বড় না। মাএ দুই-তিন বছরের বড় হবে। সুতরাং এখন যদি হাত না ছাড়ো তাহলে পরবর্তীতে আমার হাতের মার খাবে।

নীরার এই কথা শুনে শিহাব হাসতে হাসতে নীরার হাত ছেড়ে দিলো। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরার মতো অবস্থা তার। শিহাবের হাসি দেখে নীরা বললো।

-হাসি থামাও আর বাইরে চলো।

শিহাব হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পরেছিলো। নীরার কথা শুনে উঠে দাড়ালো। তারপর বললো।

-আমার সব ইমোশনস শুধু তোমার জন্য। এটা মানতেই হবে।

-উফ আল্লাহ যাও তো।

শিহাবকে যেতে বলে নীরাই আগে আগে চলে গেল। শিহাবও হাসতে হাসতে বের হলো।

ড্রয়িংরুমে তখন মিলা আর রেহান ঝগড়া করছিলো। তিতলি সোজা রেহানকে জড়িয়ে ধরাতে ঝগড়া থেমে গেল। রেহান তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।

-স্যরি।

তিতলি রেহানকে ছেড়ে দিয়ে বললো।

-বাড়িতে যাই একবার তারপর তোর মতো ব্যক্কলকে সাইজ করবো।

তিতলির এই কথা শুনে মিলা পাশ থেকে ফিক করে হেসে ফেললো। রেহান মুখটা গোমড়া করে ফেললো। আজ সবাই তাকে ব্যক্কল বলছে। মিলা হাসতে হাসতে তিতলির সাথে হাই ফাইভ করে বললো।

-একদম ঠিক বলেছো।

ওরা কথা বলতে নীরা আর শিহাব এসে গেল। নীরা এসে বললো।

-বাহ্ মিল হয়ে গেছে সবার। গুড খুব খুশি হয়েছি।

নীরার কথা শুনে সবাই হাসলো। নীরা সবাইকে বললো।

-গল্প করো। আমি রান্না করবো আজকে সবার জন্য।

নীরার রান্না করার কথা শুনে সবাই চেঁচিয়ে উঠলো একসাথে নীরা কানে হাত দিয়ে বললো।

-চুপ করো সবাই। চেঁচানোর কিছুই নেই।

বলেই সে রান্নাঘরে চলে গেল।

মিলা সবাইকে বললো।

-এই সময় সাইফ ভাই আর রুমা আপা থাকলে আরো ভালো হতো। কি আর করার ওরা দুজনেই রুমা আপার বাড়িতে আছে। এখন তো ওখান থেকে ডাকা যায় না।

মিলার কথা শুনে তিতলিও বললো।

-ঠিক বলেছো আপু। থাক অন্য একদিন সবাই মিলে একটা গেট টুগেদার হবে।

তিতলির কথায় মিলা আর রেহান সায় জানালো।

মালিহা আর নীরা মিলে সবার জন্য রান্না করলো। খাওয়ার সময় নূরজাহান বেগমও টেবিলে এসে বসলেন। রেজাউল এখনো ফেরেননি। ফিরতে তার রাত হবে। এজন্য সবাই একসাথে খেতে বসে পরলো। নীরা আর মিলা মালিহাকে বসতে বলে সবাইকে সার্ভ করতে লাগলো। নীরা সবাইকে সার্ভ করে দিলেও শিহাবের কাছে গেল না। ওদিকে মিলাকে দিতে বললো। এতে নূরজাহান বেগম নীরাকে ধমকে উঠলেন।

-এই মেয়ে সবাইকে বেড়ে দিলে হবে? নিজের হবু জামাইকে দিতে হবে না? কিচ্ছু শিখলি না! যা জামাইকে যত্ন করে খাওয়।

নূরজাহান বেগমের ধমকানি শুনে সবাই হেসে ফেললো। নীরা মুখ মলিন করে শিহাবের কাছে গেল। সবার সামনে ধমক খেতে সে অভ্যস্ত না। তাই একটু খারাপ লাগলো। শিহাবের কাছে গিয়ে প্লেটে খাবার তুলে দিলো। সবাই খেতে ব্যস্ত। নীরা শিহাবের পাশ থেকে সরতে গেলেই শিহাব নীরার ওড়নার কোনা ধরে রাখলো। নীরা অবাক চোখে তাকালো। শিহাব এমন ভাব করলো যেনো সে কিছুই জানে না। নূরজাহান বেগম নীরাকে এখনো শিহাবের পাশে দাড়ানো দেখে আবার ধমকালেন।

-খাবার বেড়ে দিতে বলেছি। বাড়া শেষ হয়ে গেছে তাহলে নিজে এখনো বসছিস না কেন? খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছিস কেন?

নূরজাহান বেগমের এমন কথা শুনে তিতলি বললো।

-নট ফেয়ার দাদী তুমি আমার ভাবিকে এতো বকবে না তো।

তিতলির কথা শুনে নূরজাহান বেগম বললেন।

-তোমার ভাবি তার হবু স্বামীর পাশে এমন খাম্বার মতো দাড়িয়ে থাকলে তো বকা খাবেই।

নূরজাহান বেগমের কথা শুনে আরেক দফা হাসির রোল পরে গেল। নীরার অবস্থা এখন শোঁচনীয়। সে কিছু বলতেও পারছে না। শিহাব ও এমন ভাব করছে যেনো সে দুনিয়ার সবথেকে অবুঝ মানুষ। নীরা শিহাবের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। কিন্তু শিহাবের কোনো হেলদোল নেই। নীরা ওড়না ছাড়াতেও পারছে না। সে শিহাবের হাতে চিমটি কাটলো। শিহাব তাও ছাড়লো না। খানিকক্ষণ পর শিহাব নীরার দিকে তাকালো। দেখলো নীরা অসহায় চোখে তারই দিকে তাকিয়ে আছে। শিহাব হেসে নীরার ওড়নার কোনা ছেড়ে দিলো। নীরা দ্রুত শিহাবের পাশ থেকে সরে পরলো।

হাসি মজায় সবার খাওয়া শেষ হলো। নীরার রান্নার প্রশংসা করলো সবাই। রেহান বললো।

-ভাবি আন্টি সেদিন ঠিকই বলেছে। তোমার রান্না সত্যিই অসাধারণ। নেভার মাইন্ড আন্টি।

মালিহা হেসে বললেন।

-একদম না।

তিতলি বললো।

-এমন রান্না আমিও শিখতে চাই। আন্টি ভাবিকে যেমন শিখিয়েছেন আমাকেও তেমন শেখাবেন।

-অবশ্যই শেখাবো।

মিলা বললো।

-দেখতে হবে না কার আপা! এজন্যই রান্না এতো ভালো।

রেহান এই কথা শুনে বললো।

-হ্যা হ্যা নিজে তো একটা অকর্মা। নিজে তো কিছুই পারো না।

এতে মিলা রেগে গিয়ে বললো।

-তোমার কি! তোমার এতো সমস্যা কেন ব্যক্কল ছেলে রেহান।

-আমার কোনো সমস্যা নেই। জোয়ালামুখী টিলা।

-এই কি বললে?

ওদের ঝগড়া দেখে নীরা অতিষ্ট হয়ে ধমক দিলো। মিলা আর রেহান চুপ করে গেল। শিহাব বললো।

-অথচ একটু আগে নীরা নিজেই ধমক খাচ্ছিলো।

শিহাবের কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো। নীরা রাগী চোখে শিহাবের দিকে তাকালো। শিহাব চুপসে গেল। তারপর মালিহা আর নূরজাহান বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো।

-আন্টি বিয়ের ডেট তাড়াতাড়ি ফিক্সড করতে চাইছি। কোনো সমস্যা নেই তো? সব সবার সুবিধামতোই হবে।

মালিহা এতে সায় দিয়ে বললেন।

-আরে না কোনো সমস্যা নেই।

-তাহলে বাবা দুইদিন পর আসবেন কথা বলতে।

-আচ্ছা বাবা।

নীরা শিহাবের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকালো। কেউ নিজের বিয়ের কথা এভাবে বলে সেটা সে জানতো না। শিহাব মিটিমিটি হেসে নীরার দিকে তাকালো। নীরা মুখ ফিরিয়ে নিলো।

সবাই আড্ডা দিয়ে বাড়ির পথ ধরলো। যাওয়ার সময় নূরজাহান বেগম আবার নীরাকে ধমকে বললেন শিহাবকে এগিয়ে দিতে। নীরা মুখ গোমড়া করে ওদের সাথে বের হলো। তিতলি আর রেহান বকবক করতে করতে আগে গেল। শিহাব পেছনে ছিলো। নীরা এই ফাকে শিহাবকে রাগান্বিত হয়ে বললো।

-তখন ওটা কি ছিলো?

শিহাব কাধ ঝাঁকিয়ে বললো।

-কি ছিলো?

নীরা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।

-কিছুনা। আমি গেলাম।

বলেই ভেতরে চলে গেল। শিহাব হাসতে হাসতে তিতলিদের কাছে গেল।

এরমধ্যে দুইদিন দেখতে দেখতে চলে গেল। আজ নীরা আর শিহাবের বিয়ের তারিখ ঠিক করবে সবাই। রুমা আর সাইফ তো এক্সাইটমেন্টে খুশিতে মরে যাচ্ছে।

স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় রুমা নীরাকে বললো।

-ফাইনালি তুইও আমার মতো বিবাহিতা হয়ে যাবি। উফ ভাবতেই আনন্দ লাগছে।

-বুঝলাম না। তোর আনন্দ লাগার কারন কি?

-আরে একা একা সিঙ্গেল থাকতে কার ভালো লাগে! আমি বিবাহিতা হয়ে গেছি। আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এখনো সিঙ্গেল সেটা মানতে আমার কষ্ট হচ্ছিলো।

নীরা রুমাকে ধমকে বললো।

-চুপ থাক। শুধু শুধু আজকে আমার ছুটি নিয়ে নিলি। তারিখই তো ঠিক করবে। আর শিহাবের বাবা আসবেন বিকেলে। শুধু শুধু ক্লাস মিস করলাম আমরা।

-তুই চুপ কর ডাফার। বুঝবি না তুই।

ওরা কথা বলতে বলতেই স্কুলের বাইরে চলে এলো। রুমা বাইরে এসে দেখলো সাইফ এখনো ওদের পিক করতে আসেনি। অথচ ওর আরো আগে আসার কথা ছিলো। রুমা রেগে বললো।

-দেখলি এখনো আসেনি গর্ধবটা। একটা কাজও ঠিকঠাক করে না।

বলেই রুমা ফোন দিলো সাইফকে। সাইফ ফোন কেটে দিলো। নীরা আর রুমা কথা বলতে বলতেই দেখলো সাইফ এসে গেছে। সাইফ ওদের সামনে তড়িঘড়ি করে এসে বললো।

-এক্সট্রেমলি স্যরি লেট হয়ে গেল।

রুমা রাগী চোখে তাকিয়ে বললো।

-তোর তো লেট হবেই। গাঁধা। একটা কাজও ঠিক করে করতে পারিস না।

সাইফ রুমার কথা শুনে বললো।

-এখন কি কানে ধরবো?

-কানে ধরতে হবে না চল।

নীরা এদের কথা শুনে হাসলো।

আসমা তিশার ঘরে এসে দেখলেন জানালা বন্ধ করা। লাইটও অফ করা। তিশা বিছানায় চোখ বন্ধ করে পরে ছিলো। আসমা এসে জানালা খুলে দিলেন। তিশা বিরক্ত হয়ে বললো।

-মা চলে যাও ঘর থেকে। আর জানালা বন্ধ করে দাও। ভালো লাগছে না আলো।

আসমা মেয়ের অবস্থা দেখে কষ্ট পেলেন। মেয়ের কাছে বসে বললেন।

-এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ তিশা? শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানেই হয় না। ইউনিভার্সিটি তেও যাচ্ছিস না তুই।

তিশা এবার বেশ বিরক্ত হয়েই বললো।

-আমার ঘর থেকে যাও তো।

-তুই কার জন্য নিজেকে এমন কষ্ট দিচ্ছিস বলবি? কেন এমন করছিস? যা হওয়ার হয়ে গেছে। জীবন তো থেমে থাকবে না। তোর জন্য শিহাবের থেকে ভালো ছেলে দেখবো আমরা।

তিশা এবার শোয়া থেকে উঠে বসলো। বেড সাইড টেবিল ধাক্কা দিয়ে ফেলে চেঁচিয়ে বললো।

-আমার শিহাবকেই লাগতো। অন্য কাউকে না। এই সিম্পল কথাটা কেন বুঝতে পারো না তোমরা? আমি কখনো হারতে শিখিনি। যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। আমি এই হারটা মানতে পারছি না।

আসমা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন।

-তুই যা চেয়েছিস তাই দিয়েই জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা করেছি। তোকে প্রশ্রয় দিয়ে ভুল করেছি।

তিশা আসমার কথা শুনে চেঁচিয়ে বললো।

-যাও মা। আমার ঘরে আসবে না। যাও।

আসমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন। তিশা উঠে জানালা বন্ধ করে দিলো। আবার বিছানায় গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পরলো।

রেজা সাহেব হাসতে হাসতে রেজাউলকে বললেন।

-আপনাকে তাহলে মাহমুদ ভাই বলবো কি বলেন? রেজাউল ভাই বললে মনে হয় নিজের নামের অর্ধেক বলছি।

রেজা সাহেবের কথা শুনে রেজাউলও হাসলেন। বললেন।

-আপনি চাইলে বেয়াইও বলতে পারেন।

-বেয়াই যদিও শুনতে মজার। তবে মাহমুদ ভাই সাউন্ডস গুড। তাহলে ওই কথাই রইলো মাহমুদ ভাই আপনার মেয়েকে আমরা কয়েকদিনেই নিয়ে যাচ্ছি। আমার ছেলে-মেয়েরা তো নীরাকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে।

-একদম ভাই এটা তো আমাদের সৌভাগ্য। তাহলে মিষ্টিমুখ হয়ে যাক। মালিহা মিষ্টি নিয়ে এসো।

মালিহা মিষ্টি নিয়ে আসলেন। সবাই মিলে মিষ্টি মুখ করলো।

রেহান সাইফ, মিলা তিতলি আর রুমা সবাই নীরাকে ঘিরে বসে গল্প করছে। তিতলি হাসতে হাসতে বললো।

-ভাইকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। তবে বাবা বলেছেন কয়েকদিন পরই বিয়ে। সব কাজ দুইদিনের ভেতর শেষ করে ফেলতে। এজন্য ভাইয়ের আর আসা হলো না। রুমা আপু ভাইয়ের মুখটা তখন দেখার মতো হয়েছিলো। তোমরা যদি দেখতে একবার!

রুমা তিতলির কথায় তাল মিলিয়ে বললো।

-আহারে বেচারা! নীরাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে গেছিলো। কিন্তু পারলো না। আহারে।

রুমার মজা করা দেখে এবার নীরা রুমার দিকে রেগে তাকালো। রেহান মিলার দিকে তাকিয়ে বললো।

-ভাবি তো আমাদের বাড়িতে একেবারে চলে যাচ্ছে। কি টিলা কেমন লাগে?

রেহানের এই এতোটুকু কথায় মিলা প্রায় কেঁদে ফেললো। সাইফ রেহানকে বললো।

-রেহান এভাবে বলো না মিলা এবার কেঁদেই ফেলবে। ও তো নীরাকে ছাড়া থাকতেই পারে না।

এই কথা শুনে এবার মিলা সত্যিই কেঁদে ফেললো। মিলার কান্না দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল।

নীরা বোনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। মিলা এসে জড়িয়ে ধরে বললো।

-আমি কি করে থাকবো তোমাকে ছাড়া?

নীরা কিছু বললো না। সবাই চুপ করে আছে। হাসিঠাট্টায় যে এমন একটা আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেটা কেউ বোঝেনি।

মিলা নীরাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। মিলা সবাইকে অগ্রাহ্য করে ফোন নিয়ে শিহাবকে ফোন করলো।

শিহাব তখন অফিসে প্রচুর কাজের মধ্যে ছিলো। মিলার কল আসলে সে কল রিসিভ করলো।

মিলা ফোন স্পিকারে দিলো যেনো সবাই শুনতে পায়। মিলা প্রথমেই শিহাবকে বলে উঠলো।

-ভাইয়া আমার আপাকে আপনি নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শুনে রাখেন আমার আপার কাছে আমি যখন ইচ্ছে চলে যাবো।

শিহাব হেসে বললো।

-এনিটাইম। আমি তো ভেবেছি আমি তোমাকেও নিয়ে যাবো। আমার তো এখন দুইটা বোন। একদম মন খারাপ করবে না।

শিহাবের কথা শুনে মিলা খুশি হয়ে গেল। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললো।

-শুনেছো সবাই?

মিলার কান্ড দেখে সবাই হেসে ফেললো। রেহান তিতলিকে বললো।

-আমাদের ভাইয়ের আদরে ভাগ বসাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা নেই আমাদেরও ভাবি আছে।

তিতলি হাসতে হাসতে বললো।

-একদম ছোট ভাই।

মিলা মুখ ভেঙ্চি কাটলো। তারপর আবার শিহাবকে বললো।

-আচ্ছা ভাইয়া লাভ ইউ!

-লাভ ইউ টু।

মিলা আর শিহাবের কথা শুনে নীরারও খুব ভালো লাগলো। মনে হচ্ছে ঘাড়ত্যাড়া শিহাবটা সত্যিই খুব ভালো। ভেবেই নীরা হাসলো।

–চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here