অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-চুয়াল্লিশ (দ্বিতীয় অংশ)
নাফিসা নীলয়া!
সকালবেলা নীরা আগের মতো সব কাজ সেরে হসপিটালে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। শিহাব ভেবেছে নীরা তার স্কুলে যাবে। কিন্তু নীরা শিহাবের ভাবনা পাল্টে দিয়ে বললো।
-আসাদের মা মানে আন্টিকে দেখতে যাবো। তুমি কি যাবে আমার সাথে?
শিহাব নীরার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। বললো।
-কেন?
নীরা শিহাবের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
-কেন মানে? কাল ওনাকে আমরাই তো হসপিটালে নিয়ে গেলাম। আজ উনি কেমন আছেন একটু দেখে আসবো না?
শিহাব অবাক ভাব কাটিয়ে বললো।
-হ্যা তবে সকালেই তো ডিসচার্জ করে দেওয়ার কথা ছিলো। যদি না পাই?
শিহাবের কথা শুনে নীরা বললো।
-আসাদের সাথে কথা হয়েছে। ও বললো আজকের দিনটা রাখবে আন্টিকে।
নীরার কথা শুনে শিহাব গম্ভীর স্বরে বললো।
-কথাও হয়েছে এর মধ্যে?
নীরা শিহাবের কথা শুনে হালকা হাসলো। তারপর শিহাবের কাছে গিয়ে বললো।
-আমার সাথে কথা হয়নি। আমার ফোন তো ওই বাড়িতে। মিলার ফোনে সকালে রুমার সাথে কথা হলো তখন ও ই বললো।
নীরার কথা শুনে শিহাব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। নীরা সেটা দেখে খিলখিল করে হেসে ফেললো। বললো।
-আর কথা বললেই বা কি! উই আর কলিগ। কথা তো হতেই পারে। ওর মায়ের অবস্থা জানাটা তো জরুরিই তাই না?
শিহাব নীরার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে বললো।
-যাই ই হোক ওর সাথে কথা বলবে না। ওর আর ওর সো কল্ড এক্স গার্লফ্রেন্ডকে তো আমি দেখে নিবো। এন্ড আই মিন ইট। এমন হাল করবো যে স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।
নীরা শিহাবের কথা শুনে আতকে উঠলো। এতোদিনে তো সে জেনেই গেছে শিহাব কেমন। সে বললো।
-একদম না। কিচ্ছু করবে না তুমি। প্লিজ!
শিহাব আর কিছু না বলে নীরাকে তাড়া দিলো।
-চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
নীরা শিহাবকে আবার বললো।
-আগে আমার কথা শোনো। ওদের তুমি কিছু করবে না।
শিহাব এবার বিরক্ত হলো। মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করে বললো।
-এমনভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমি ওদের একদম মেরে দিচ্ছি।
নীরা শিহাবের কথা শুনে হতাশ হয়ে বললো।
-চলো। আর শোনো প্লিজ কিছু বলবে না।
শিহাব বললো।
-হু চলো।
তিতলি মিলা আর জহুরা মিলে সকালের নাস্তার পর একসাথে বসে অনেকক্ষন গল্প করেছে। তিতলি আর মিলা দুজনে মিলে রেহানকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। রেহান বেচারা দুজনের অত্যাচার থেকে বাঁচার চেষ্টা করেও পারেনি। জহুরাও হেসেছেন ওদের কান্ড দেখে। রেহান মনে মনে ভেবেছে সারাজীবন তাকে এসব সহ্য করতে হবে। তিতলির সাথে মিলা হাত মিলিয়ে এভাবেই তাকে জ্বালাতন করবে। ভেবেই তার আফসোস লাগলো। ইস কি হতো যদি না মিলাকে তার ভালো লাগতো। আর সেই ভালো লাগার মাত্রা এতো গভীরে না পৌছাতো। এখন সবজায়গায় মিলার খবরদারি চলতেই থাকবে। ভেবেই তার নিজের মাথা নিজেরই ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।তাদের এসব ঝগড়াঝাঁটির মধ্যেই নীরা আর শিহাব বেড়িয়ে এলো। নীরা এসেই রেহান আর মিলাকে বললো।
-তোরা ইউনিভার্সিটি তে কখন যাবি? এখনো বসে আছিস কেন?
মিলা নীরাকে দেখে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো।
-আজকে যাবো না। আজ সবাই মিলে শুধু ঘুরবো।
তিতলিও মিলার সাথে তাল মিলালো।
-আজ শুধু ঘুরাঘুরি হবে। পড়তে পড়তে আমি বড় ক্লান্ত।
নীরা তিতলির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো।
-টেস্ট এক্সামের রেজাল্ট খারাপ হোক তারপর বোঝাবো আমি।
তিতলি আর কিছু বলার সাহস পেলো না। তার মুখ চুপসে গেল। শিহাব সেটা দেখে একটু হাসলো। নীরা আবার বললো।
-আচ্ছা করিস ঘুরাঘুরি। কিন্তু কোনো ঝামেলা যেনো না হয়।
নীরার কথা শুনে মিলা আর তিতলি লাফিয়ে উঠলো। নীরা রেহানকে উদ্দেশ্য করে বললো।
-দুইটাকে ঘুরতে নিয়ে যেও। তোমাকে দায়িত্ব দিলাম।
নীরার কথা শুনে রেহান আতকে উঠলো।
-আস্তাগফিরুল্লাহ তওবা তওবা। না আমি পারবো না৷ প্লিজ ভাবিমনি। নো!
নীরা ভ্রু কুঁচকে বললো।
-তুমিই যাবে৷ আর কোনো কথা হবে না।
তিতলি আর মিলা রেহানের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসলো। তিতলি আর মিলা নীরা আর শিহাবকে ওদের সাথে যেতে বললে নীরা আর শিহাব না করে দিলো। বললো এখন ওরা গিয়ে ঘুরে আসুক। রাতে সবাই একসাথে সাইফের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসবে। এতে ওরা সবাই আর দ্বিমত করলো না।
নীরা আর শিহাব বেড়িয়ে এসে গাড়িতে উঠলো। শিহাব গাড়ি স্টার্ট করলো। নীরা শিহাবকে হুট করে বললো।
-তোমার রেহান আর মিলাকে একসাথে কেমন লাগে?
নীরার কথা শুনে শিহাব সামান্য হেসে বললো।
-কেমন লাগে আর একজন আরেকজনের দুশমন লাগে।
নীরা শিহাবের হাতে চিমটি কেটে বললো।
-গাড়ি থামাও বুদ্ধু। সব বুঝিয়ে বলতে হবে তোমাকে।
শিহাব হতভম্ব হয়ে গাড়ি থামালো। নীরা এবার সরাসরিই বললো।
-ওরা সবসময় এমন ঝগড়া করলেও একে অপরকে পছন্দ করে।
নীরার কথা শুনে এবার শিহাব বিষম খেলো। নীরা তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে শিহাবকে খেতে দিলো। শিহাব পানি খেয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-কিহ্?সত্যিই? কিভাবে সম্ভব?
নীরা হালকা হেসে বললো।
-সবই সম্ভব। কেন সাইফ আর রুমাও তো এমনই দেখো না তুমি?
শিহাব আবার বললো।
-কিন্তু মিলা আর রেহানের বিষয়টা আলাদা। সাইফ আর রুমা তো এতোটাও ঝগড়ুটে না। যতোটা ওরা দুজন। ওরা তো সারাদিন ঝগড়া করে। একজন আরেকজনের পেছনে লেগেই থাকে। ওরা কি করে একসাথে থাকবে?
-একসাথেই থাকবে। একসাথে না থেকে সারাদিন ঝগড়া করতে না পারলে ওরা কেউই সুখী হবে না।
শিহাব আর কিছু বললো না। সে এখনো ব্যপারটা হজম করতে পারছে না। তার কাছে এটা কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য কথা মনে হচ্ছে না। শিহাব গাড়ি স্টার্ট দিলো। নীরা জিজ্ঞেস করলো।
-তোমার কি আপত্তি আছে? এরকম ফেস করেছো কেন?
শিহাব নীরার দিকে একদন্ড তাকিয়ে বললো।
-তোমার আপত্তি আছে?
নীরা শিহাবের প্রশ্নের উত্তরে বললো।
-ওরা যদি একে অপরের সাথে ভালো থাকে। তাহলে আপত্তি করার কিছু নেই। বাকিটা সময় হলে পরিবারের সবার সাথে কথা বলে দেখবো। আপাতত মিলাকে বলেছি ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে। আমার বিশ্বাসটা রাখতে। আমার বোন আমার সব কথা শোনে। ইনশাআল্লাহ এই কথাটাও ও শুনবে।
নীরার কথা শুনে শিহাব বললো।
-তাহলে আমারও আপত্তি নেই। সময় হলে পরিবারের কেউও আপত্তি করবে না।
নীরা শিহাবের কথা শুনে হেসে বললো।
-আমার আপত্তি থাকলে কি করতে?
শিহাবও হাসলো। বললো।
-তোমার আপত্তি থাকতো না। কারন আমাদের ভাইবোনেরা আমাদের খুব আদরের হলেও ওরা নিজেদের ভালোমন্দ বোঝে। আমাদের বিশ্বাস ওরা রাখবে।
নীরা শিহাবের কাঁধে মাথা দিয়ে বললো।
-ঠিক। কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
শিহাব চিন্তিত কন্ঠে বললো।
-কি হয়েছে?
-আমার সারাটাজীবন ওদের ঝগড়া মিটাতে মিটাতে যাবে।
নীরার কথা শুনে শিহাব উচ্চ আওয়াজে হেসে ফেললো।
কথা বলতে বলতে ওরা হসপিটালে পৌছে গেল। শিহাব নীরার হাত ধরলো। নীরা বাঁধা দিলো না।
আসাদ ওর মায়ের পাশে বসে গল্প করছে। আসাদের মা বারবার নীরার কথা জিজ্ঞেস করছেন। আসাদ বলেছে নীরা একটু পরেই আসবে। কিন্তু আসাদের মায়ের নীরার সাথে দেখা করার জন্য তর সইছে না। গতকাল জ্ঞান ফেরার পর একটু দেখা হয়েছিলো। নীরাই এসে কথা বলেছে। তবে সেসময় তিনি অত্যন্ত দূর্বল থাকায় ঠিক করে কথা বলতে পারেননি। আসাদ তার মাকে বললো।
-তুমি কেন যে একা একা শপিং করতে গেলে। বাড়ির কাউকে তো সাথে নিয়ে যেতে পারতে। তা না করে কেন গেলে একা একা?
আসাদের মা আসাদের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে গেলেন। ধমকে বললেন।
-আর কতোবার বলবি এই এক কথা। গতকাল থেকে শুনছি।
আসাদ মায়ের ধমক শুনে চুপ করে গেল। এরমধ্যেই নীরা আর শিহাব নক করে ভেতরে ঢুকলো। নীরা মিষ্টি করে হেসে সালাম দিলো।
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন এখন?
আসাদের মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো নীরাকে দেখে। তিনি নীরাকে কাছে ডাকলেন। নীরা গেল। শিহাব চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। আসাদ সেটা দেখে বললো।
-প্লিজ বসুন না।
শিহাব সৌজন্যতামূলক হেসে বললো।
-ব্যস্ত হবেন না ইট্স ওকে।
আসাদের মা নীরাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন।
-তোমাকে আর তোমার বান্ধবিকে ধন্যবাদ দিলেও কম হবে। তোমরা না থাকলে যে আমার কি হতো।
আসাদের মায়ের কথা শুনে নীরা বললো।
-আন্টি এসব বলে লজ্জা দিবেন না। আল্লাহই রক্ষা করেছেন। আমরা উসিলা মাত্র।
-তোমার বান্ধবি কোথায়?
-আন্টি ওর মা একটু অসুস্থ তাই আসতে পারলো না।
-ও আচ্ছা!
শিহাব দাড়িয়ে দাড়িয়ে আসাদকে দেখছে। কিন্তু কোনো কথা বলছে না। তার ইচ্ছে করছে আসাদকে মারতে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব না। সেজন্য চুপ করে আছে।
আসাদের মা ভীষণ সহজসরল মহিলা। ওনার মুখে যা আসে উনি সেটাই বলেন। এক দেখায়ই সবাইকে বিশ্বাস করেন। এবারও তাই হলো। তিনি নীরাকে বললেন।
-তোমার বাবা মায়ের ফোন নাম্বার দিও তো। কথা বলবো।
নীরা অবাক হয়ে গেলেও মাথা নেড়ে বললো।
-ঠিক আছে আন্টি।
আসাদ তার মায়ের কথা শুনে হাসলো। সে একবার শিহাবের দিকে তাকালো। শিহাব বিরক্তি নিয়ে দাড়িয়ে আছে দেখে সে আবারও হাসলো। আসাদের মা নীরাকে বললেন।
-তোমার মতো মেয়ে যেই ঘরে যাবে সেই ঘরই আলোকিত করে রাখবে। পারলে আমিই তোমাকে ছেলের বউ করি।
আসাদের মায়ের কথা শুনে শিহাবের মুখের রঙ উবে গেল। মুখভঙ্গি এতোক্ষন ছিলো বিরক্তিকর ওই মুহূর্তে হয়ে গেল গম্ভীর। নীরা আড়চোখে শিহাবের দিকে তাকিয়ে দেখলো শিহাবের মুখে রাগের ছাপ। আসাদ দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা নিচ্ছে। কিছুই বলছে না। শিহাবের রাগী মুখ দেখে তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। নীরা বুঝতে পারলো শিহাব ভয়াবহ রেগে যাচ্ছে। সেজন্য সে পরিস্থিতি হালকা করার জন্য হেসে শিহাবকে দেখিয়ে বললো।
-আন্টি ও আমার হাজবেন্ড শিহাব। পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি। ও আমার সাথে আপনাকে দেখতে এসেছে।
নীরার কথা শুনে আসাদের মা ভীষণ বিব্রত হলেন। আসাদ হেসে বললো।
-মায়ের আর কি দোষ নীরা। তুমি এমনই যাকে সবাই পছন্দ করবে।
আসাদের কথা শুনে শিহাবের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনই আসাদকে উত্তম মাধ্যম দিতে। নীরার এবার ভয়ই হচ্ছে শিহাবকে নিয়ে। সেজন্য সে দ্রুত অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল।
-আন্টি আপনাকে কখন ছাড়বে?
নীরার বিয়ে হয়ে গেছে শুনে আসাদের মায়ের মন খারাপ হয়ে গেছে। তিনি মনমরা কন্ঠেই বললেন।
-এইতো দুপুরের মধ্যেই ছেড়ে দিবে। আচ্ছা তোমার কি কোনো ছোট বোন আছে?
আসাদের মায়ের কথা শুনে নীরা আর কি বলবে খুঁজে পেলো না। আসাদ নিজেও ভাবেনি তার মা এমনসব কথা বলবে। প্রথমে সে মজা পেলেও এবার সে তার মাকে থামাতে চাইলো।
-আহা মা চুপ করো না। চুপ করে রেস্ট করো। বেশি কথা বলো না।
শিহাব এবার সরাসরিই আসাদের মাকে বললো।
-আচ্ছা আন্টি আমরা আজ আসি। আমাদের কিছু জরুরি কাজ আছে।
বলেই সে এগিয়ে এসে নীরার হাত ধরলো শক্ত করে। নীরা বুঝলো তাকে এবার উঠতে হবে। সে ও ভদ্র মেয়ের মতো উঠে আসাদের মাকে বললো।
-আন্টি আসি ভালো থাকবেন। আসাদের সাথে একদিন আপনাদের বাড়ি গিয়ে আপনাকে দেখে আসবো। আসাদের মা হেসে বিদায় দিলেন। আসাদ নীরাদের সাথে বাইরে আসতে চাচ্ছিলো। কিন্তু শিহাব বাঁধা দিয়ে বললো।
-আপনি আন্টির কাছে থাকুন। আমাদের সাথে আসতে হবে না।
নীরার হাত ধরেই শিহাব হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসলো। নীরা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো তবে পারলো না। হতাশ হয়ে বললো।
-এতো রেগে যাওয়ার কি আছে?
শিহাব নীরার দিকে রাগে কটমট করে তাকিয়ে বললো।
-তুমি চুপ করো। ওখানে যে আমি কিছু বলিনি এটাই ভাগ্য।ওই মহিলা কি করে আমার বউকে নিজের বউমা বানানোর স্বপ্ন দেখে।
-আহা বয়স্ক মানুষ না হয় ভুল কিছু বলেই ফেলেছে। আর উনি কি জানতেন নাকি যে আমি বিবাহিত।
চলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
শিহাব আর কিছু বললো না নীরাকে। তার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এখন চুপ থাকাই শ্রেয়। নইলে সে আবার উল্টাপাল্টা বলে ফেলবে নীরাকে।
জায়মা তিশার সাথে দেখা করতে এসেছেন। যদিও তিশা জায়মার সাথে যোগাযোগ করে না। তবুও তিনি একবার দেখতে এসেছেন তিশাকে। তিশা দরজা খুলে জায়মাকে দেখে অবাক হয়ে গেল। জায়মা তিশাকে বললেন।
-ভেতরে আসতে বলবি না?
তিশা কিছু না বলে দরজা থেকে সরে গেল। জায়মা ভেতরে ঢুকে দেখলেন সব এলোমেলো হয়ে আছে। তিনি নিজেই গিয়ে সোফাতে জায়গা করে বসলেন। তিশা রান্নাঘরে গেল। জায়মা উঠে সব গোছানো শুরু করলো। তিশা দুই মগ কফি এনে দেখলো জায়মা সব গোছাচ্ছে। সে জায়মাকে বললো।
-তোমার কষ্ট করতে হবে না খালামনি। আমিই সময় পেলে গোছাবো।
জায়মা কাজ করতে করতে বললেন।
-সময়টা কখন পাবি?
তিশা আর কিছু বললো না। চুপচাপ বসলো। জায়মা সব কাজ করে তিশার সামনে বসলেন। বললেন।
-ভালো আছিস?
তিশা তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো।
-খুব!
জায়মা তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।
-কি লাভ হচ্ছে এসব করে? নিজেকে নিজেই কষ্ট দিচ্ছিস।
তিশা হাসিমুখেই বললো।
-আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে বলছো সরে আসতে?
জায়মা অপরাধী কন্ঠে বললেন।
-আমি মানছি আমার অন্যায় হয়েছে। তাই বলে তুই নিজের সাথে এমন করতে পারিস না।
-তোমার ছেলে আমাকে সবার সামনে অপমান করেছে। সেই অপমান কি করে ভুলি?
জায়মা তিশার দিকে চেয়ে রইলেন। তিশা কি আদোও নিজের ভেতর আছে! জায়মা হতাশ হয়ে বললেন।
-আমার ছেলের সেদিন ওভাবে রিয়্যাক্ট করার যথেষ্ট কারন ছিলো। আমরাও নিশ্চয়ই নীরার সাথে খুব ভালো কাজ করিনি।
জায়মার কথা শুনে তিশা চুপ করে রইলো। বলার মতো কিছু পেলো না। জায়মা তিশার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
-রিশাদ বলছিলো ও ওর তিশা আপুকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। মানে ওর বন্ধুর ভাই সাইকিয়াট্রিস্ট সেখানে যাবে একটু। তুই কি ওর সাথে যাবি?
তিশা জায়মার কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললো। বললো।
-আমাকে তোমরা কি মনে করো খালামনি? আমি কি বাচ্চা? তোমরা যে আমাকে পাগল মনে করছো সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। নইলে বাবা আর তুমি দুজনেই আমাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে বলতে না। বাবাও আমাকে বারবার বোঝাচ্ছেন। আজ তুমিও তাহলে এই কারনেই এসেছো। সোজাসুজি বললেই পারো। এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে। শোনো খালামনি। স্পষ্ট করে বলছি এসব করে লাভ নেই। আমি কোনো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাবো না।
জায়মা বুঝলেন তিশাকে এভাবে বোঝানো যাবে না। অন্যভাবে ওকে বোঝাতে হবে। ও যা করছে সেটা কারো জন্যই ভালো না এটা উপলব্ধি করাতে হবে। সেজন্য তিনি আপাতত এই প্রসঙ্গে আর কথা বলতে চাইলেন না। তিনি অন্য কথায় চলে গেলেন।
-আচ্ছা যাস না। তোর মা বললো একা একাই নাকি রান্না করে খাস। বাবা মায়ের সাথে থাকলেই তো হয়। কেন যে এমন করিস! যাক আমার জন্য আজ রান্না করবি। এই আমি বসলাম যা।
তিশা আর কোনো কথা না বলে রান্না করতে চলে গেল। জায়মা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
-চলবে!