অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-ছাব্বিশ
নাফিসা নীলয়া!
আজকাল রেহান আর মিলার সম্পর্কটা অনেকটা ইজি হয়ে গেছে। ক্যাম্পাসে দুজন একসাথে প্রায়সময় কাটায়। তবে রেহানের জ্বালানো এখনো অব্যহত রয়েছে। আর মিলাও ক্ষেপে গিয়ে রেহানকে দুই কথা শুনিয়ে দিতে সবসময় তৎপর হয়ে থাকে। মিলার যেকোনো কাজে রেহান আগ বাড়িয়ে সাহায্য করে। মিলাও এখন যেকোনো প্রয়োজনে রেহানকে ডাকে। এটা নিয়েও ওদের দুজনের বন্ধুবান্ধব টিপ্পনি কাটতে ভোলে না। মিলার বন্ধুরা তো বলেই দেয় যেই ছেলেকে ও দেখতে পারতো না। তাকেই এখন যেকোনো প্রয়োজনে ডাকে কেন। মিলার তখন উওর রেডিই থাকে। কারন তারা আত্মীয় হতে যাচ্ছে। তেমনই একদিন মিলা ক্লাস থেকে বের হয়ে রেহানের জন্য অপেক্ষা করছিলো। তখনই হুট করে তার সামনে সায়রা চলে আসলো। মিলা একটু চমকে গেল তবে পরক্ষনেই চোখ মুখ কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করলো সায়রা ওর সামনে কি করছে। তারপর নিজেই জিজ্ঞেস করলো।
-কিছু বলবে সায়রা?
-বলার তো অনেককিছুই আছে।
-তো বলো কি বলবে।
-দেখো আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি। এখনো তাই বলতে চাচ্ছি।
মিলা এবারে বিরক্ত হলো। এমনিতেই এমন ন্যাকা মেয়েদের তার পছন্দ না। সায়রাকে তো আরো না। সে দৃঢ়ভাবে বললো।
-আমিও সরাসরি কথা শুনতে পছন্দ করি। এতো হেয়ালি না করে তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে।
-শোনো মিলা তুমি রেহানের থেকে দূরে থাকবে। তোমার জন্য ও আমার দিকে এটেনশন দিচ্ছে না।
-কেন রেহান কি তোমার পার্সোনাল প্রপার্টি? আর তোমার দিকে এটেনশন দিবে মানে? তুমি কি এটেনশন দেওয়ার মতো জিনিস?
মিলা এমনভাবে কথাগুলো বললো যে চারিদিকে হাসির রোল পরে গেল। মিলার একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের সামনে অনেক স্টুডেন্টসই ছিলো। অনেকে ওদের নোটিস করেছে। মিলাও জোরে জোরে কথাগুলো বলেছে এজন্য সবাই শুনতে পেয়েছে। এমন কথা শুনে সায়রা রাগে ভাষা হারিয়ে ফেললো। সে আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো। তার আগে রেহান এসে হাজির হয়ে গেল। মিলা আর সায়রাকে একসাথে দেখে সে মিলাকে জিজ্ঞেস করলো।
-কি হয়েছে মিলা?
-কি আর হবে তোমার সো কল্ড সায়রা তোমার থেকে আমাকে দূরে থাকতে বলছে। আরে ভাই আমি দূরে থাকবো কি করে। আমি কি তোমার সায়রার মতো সবার সাথে চিপকাচিপকি করি যে আমাকে দূরে থাকতে হবে?
মিলার এমন কথায় আবারও সবাই জোরে জোরে হেসে ফেললো। সায়রার এখন মনে হচ্ছে মিলার সাথে কথা বলতে এসে সে মস্তবড় ভুল করেছে। এই মেয়েকে যেমন সহজ দেখা যায় এই মেয়ে আসলে তেমন না। মিলা এবার রেহানের দিকে তাকালো। মিলা এতক্ষন রাগ দমিয়ে রেখেছিলো রেহানকে দেখে তার আবার মাথায় রাগ উঠে গেল। সে রেহানের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
-তুই কি হলিউডের হিরো? নাকি এসব মেয়েদের বেবি চকলেট বয়? যে ওরা এসে আমাকে বলবে তোর থেকে দূরে থাকতে। কেন রে আমি কি তোর সাথে চিপকে থাকি? যে আমাকে দূরে থাকতে বলবে। এমন ছ্যাচড়া পার্সোনালিটি তোদের হতে পারে। আমার না। ওকে? আর মেয়েদের সাথে চিপকে থাকার স্বভাব তো তোর। আর ছেলেদের সাথে চিপকে থাকার স্বভাব সায়রার। তাই না?
কথা শেষ করেই মিলা রেহান আর সায়রার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেল। রেহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। মিলা সবসময় তাকে এমন বোল্ড আউট করে দেয়। তার কি দোষ সে কি সায়রাকে ডেকে ডেকে বলেছে যে সায়রা আমি তোমাকে পছন্দ করি। না বলেনি তো। রেহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সায়রা চলে যাচ্ছে। সে দৌড়ে সায়রার কাছে গেল। সায়রা রাগে ডানেবামে তাকাচ্ছে না। মিলার সাথে কথা বলতে গেলে যে এমন লজ্জার সম্মুখীন হতে হবে তা সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। তখনই রেহান সায়রাকে থামতে বললো। সায়রা থামলো।
-দেখো সায়রা তোমার এমন বিহেভিয়ারের কোনো মানে হয় না। তোমাকে তো আমি প্রথম দিনই বলে দিয়েছি তুমি আর আমি আমাদের মধ্যে কিছু হওয়া সম্ভব না। আর তুমি কিনা মিলার সাথে ওসব কথা বলতে যাও। দেখো মিলা কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার মতো মেয়ে না। সো প্লিজ নেক্সট টাইম এমন করার আগে দুইবার ভাববে।
রেহানের কথা শুনে সায়রার মাথায় আগুন জ্বলে গেল। সে রাগে রেহানের বাকি কথা না শুনেই হনহন করে হেটে চলে গেল। রেহানের থেকে দ্বিগুন হ্যান্ডসাম ছেলে তার পেছনে ঘুরে। আর সে কিনা শুধু শুধু এর পিছে সময় নষ্ট করলো মিলার কাছ থেকে কথা শুনলো। আর না সে আর এদিকে সময় নষ্ট করবে না। একদম না। এটাই ঠিক করলো সায়রা। রেহান সায়রার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তার সবকিছুতেই হাসি পায়। এখন মিলাকে সে কি বলবে জোয়ালামুখী কন্যা তো তাকে একদম ভস্ম করে দিবে। ভেবেই উল্টোদিকে রওনা দিলো রেহান। মিলার সাথে কথা বলতে হবে তাকে।
মিলা ইউনিভার্সিটির বাইরে গিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। তখনই রেহান হাপাতে হাপাতে তার সামনে এসে থামলো। মিলা ভ্রু কুঁচকে রেহানকে দেখলো। তারপর আবার রিকশার খোঁজে অপর পাশে তাকালো। এমন ভাব করলো যেনো রেহান একটা অচেনা মানুষ। রেহান হাসি হাসি মুখ করে মিলাকে বললো।
-ইয়ে টিলা চলো তোমাকে পৌছে দেই। অনেক রোদ পরেছে টিলা। তুমি তো পুড়ে যাবে। তোমার সুন্দর স্কিন পুড়ে যাবে।
রেহানের এমন অহেতুক কথায় মিলা প্রচন্ড রেগে গেল রেহানের দিকে আবারও রাগী চোখে তাকালো। রেহান দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো।
-টিলা বেয়াইন এমন রোদে থেকো না তুমি। তোমার স্কিন পুড়ে যাবে। তখন তো তোমাকে আরো পেত্নী লাগবে। তুমি তো এমনিতেই পেত্নী।
রেহানের জ্বালানো দেখে এবার মিলার ইচ্ছে করছে রাস্তায় বসে পরে সে কাঁদা শুরু করে। কিন্তু সে এটা করবে না। সে রেহানকে উচিত শিক্ষা দিবে। মিলা প্রচন্ড রেগে গিয়ে পায়ের জুতা খুলতে গেল। রেহান ইতিমধ্যে বুঝে গেছে তার সাথে কি হতে চলেছে। সেজন্য সে আবার উল্টো দৌড় দিলো। দৌড় দিতে দিতে বললো।
-ঠিক না টিলা একদম ঠিক না। তুমি শেষমেশ আমাকে জুতা খুলে মারবে!
বলতে বলতেই রেহান দৌড়াতে থাকলো। মিলা ভাবলো সে তো এখনো জুতাই খুলেনি। শুধুমাএ ভয় দেখানোর জন্য জুতায় হাত দিয়েছে। আর ভীতু রেহান এতেই ভয় পেয়ে দৌড় দিয়েছে। মিলা রেহানের কান্ড দেখে একা একাই হেসে ফেললো।
তিতলি কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে। সেদিনের পরে সে আর কোনো ছেলেকে কলেজের সামনে দাড়াতে দেখেনি। তবে চার পাঁচ দিন যাবত একটা অচেনা ছেলে দাড়িয়ে থাকে। তিতলি সহজে ভয় পায় না। তবে ওই ঘটনার পর থেকে সে এসব ছোট ছোট বিষয়েও ভয় পেতে শুরু করলো। রুমার বিয়েতে ওরকম ইন্সিডেন্ট না হলে সে এতখনে ছেলেটাকে জেরা করা শুরু করে দিতো। তিতলি তবুও ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ছেলেটার উদ্দেশ্য কি। তিতলি ওদিকে তাকিয়ে এসব চিন্তা করতে করতেই রেহান তিতলিকে নিতে এসে পরলো। তিতলি তবুও একধ্যানে ওদিকে তাকিয়ে রইলো। রেহান গাড়ি থেকে বের হয়ে তিতলির কাছে গিয়ে একটা ধাক্কা দিলে তিতলির হুস ফিরলো।
-ওদিকে কি দেখছিস। আমি যে এসেছি সেই খেয়াল তো তোর একদম নেই।
তিতলি ভাবলো সে রেহানকে বলে দিবে বিষয়টা। এমনিতেও তারা তিন ভাই বোন একে-অপরকে সব শেয়ার করে। তবে গতবারের বিষয়টা তিতলি বলেনি। আর হয়তো বলেনি বলেই তার সাথে ওরকম একটা ইন্সিডেন্ট ঘটে হেছে। তিতলি দেখলো ছেলেটা এখনো দাড়িয়ে আছে। সে ভাবলো রেহানকে এমনভাবে বলতে হবে যেনো ছেলেটা না বোঝে তিতলি রেহানকে ছেলেটার কথা বলে দিয়েছে। তিতলিকে একধ্যানে কিসব ভাবতে দেখে রেহান আবারো তিতলি ধাক্কা দিলো।
-কি ভাবছিস তুই? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো চল।
তিতলি রেহানকে নিজের হাতের ঘড়িটা দেখিয়ে বললো।
-সুন্দর না?
রেহান বিরক্ত হয়ে তাকালো। এই ঘড়িটা সে ই তিতলিকে এক সপ্তাহ আগে দিয়েছে। তিতলির খুব পছন্দ হয়েছে বলেই সে পরে। তার দেওয়া জিনিস আর তার বোন তাকেই জিজ্ঞেস করছে সুন্দর কিনা!
-এটা তো আমিই দিয়েছি তোকে গাঁধি একটা।
অন্যান্য সময় হলে তিতলি রেহানের সাথে ঝগড়া করতো কিন্তু এখন সেই সময় না। তিতলি রেহানের সামনে নিজের হাত ধরেই বললো।
-বাম সাইডে তাকা একটা ছেলে দেখতে পাবি দেখেছিস?
রেহান চিন্তিত হয়ে বললো।
-হ্যা দেখেছি কি করেছে ও?
-এই ছেলেটা কয়েকদিন ধরে এখানে দাড়িয়ে থাকে। আর আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে।
-কিহ্! আর তুই আমাকে এখন বলছিস এই কথা? একটা থাপ্পড় মারবো।
বলেই রেহান তিতলিকে আর কোনো কথা বলতে দিয়ে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেল। ছেলেটা একদম বোঝেনি তিতলি ওর ভাইকে বলে দিয়েছে। এতোদিন তো বলেনি। রেহান যতো এগিয়ে আসছে ছেলেটা ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। এখান থেকে যেতেও পারছে না। রেহান বড় বড় পা ফেলে একদম ছেলেটার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
-এই ছেলে গার্লস কলেজের সামনে তোমার কি? এখানে কি করো তুমি?
ছেলেটা আমতাআমতা করে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। রেহান ছেলেটার কাঁধে হাত রেখে বললো।
-আমার দিকে তাকা। এদিকে তাকা। গার্লস কলেজের সামনে কি করিস তুই? তোকে চিনে রাখলাম। গার্লস কলেজের সামনে আরেকদিন এদিকওদিক তাকাতে দেখলে আমি তোর কি হাল করবো সেটা তুই ই ভেবে নে।
ছেলেটা ভয়ে কথা বলছে না। রেহান আবার বললো।
-মনে থাকবে?
এবার ছেলেটা কথা বলে উঠলো।
-জ্বি ভাই।৷
-তোর ফোন নাম্বার বাড়ির এড্রেসসহ বাবা-মায়ের নাম্বার সব দে। আমি এখানে দাড়িয়েই কল করে সবকিছু শিওর হয়ে নিবো। সো নো চিটিং।
ছেলেটা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে রেহানের কথামতো সব করলো। রেহানও একে একে কল দিয়ে শিওর হয়ে নিলো।
-আরেকদিন এমন করতে দেখলে তোর ঠ্যাং ভেঙে তোর বাড়িতে দিয়ে আসবো আমি। আর হবে?
-না ভাই।
-নাম কি তোর?
-নির্বান ভাই।
-তোর নাম নির্বান ভাই?
ছেলেটা জ্বিভে কামড় দিলো।
-ইয়ে মানে শুধু নির্বান।
-আচ্ছা কি করিস তুই?
-পড়ি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে।
রেহান দুই মিনিট কিছু ভাবলো। তারপর বললো।
-এনআইডি কার্ড আছে সাথে?
-জ্বি ভাই।
-দেখা।
ছেলেটা পকেট থেকে কার্ড বের করলো। রেহান নিয়ে দেখলো পরিচয় সব ঠিকঠাক আছে। সে কার্ড টা ফেরত দিয়ে দিলো। তারপর বললো।
-আচ্ছা যা। আরেকদিন এরকম করতে দেখলে কি করবো মনে থাকবে?
-একদম মনে থাকবে ভাই।
-আচ্ছা যা।
নির্বান কোনোরকমে দৌড়ে চলে গেল। রেহান আবার তিতলির কাছে আসলো। তিতলি জিজ্ঞেস করলো।
-কি বললি রে ছেলেটার কাছে গিয়ে?
-তোর জানতে হবে না। আরেকদিন যদি শুনি এরকম কোনো বিষয় লুকিয়েছিস বা বলতে দেরি করেছিস। তাহলে আমি তোর ঠ্যাংই ভেঙে দিবো।
তিতলি মুখ গোমড়া করে গাড়িতে উঠে বসলো। তিতলি মুখ ফুলিয়ে আছে দেখে রেহান তাকে চকলেট দিলো। তিতলি চকলেট পেয়ে হাসতে হাসতে রেহানের বাহুতে চাপড় মারলো।
নির্বান চায়ের দোকানে এসে হাঁপাচ্ছে। তার বন্ধু শিমুল বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকালো।
-শালা পুরো এলাকার সামনে তো তুই বাঘ। আর তিতলির ভাইয়ের সামনে গিয়েই বিড়াল হয়ে গেলি। এরকম করলে এই জনমে আর তিতলিকে প্রোপোজ করা হবে না। বিয়ের জন্য তো আরো না।
নির্বান হাপাতে হাপাতে বললো।
-ওর দুই দুইটা ভাই সবসময় ওকে কেমন চোখে চোখে রাখে দেখেছিস। আর একেকজন যেভাবে আশেপাশে শকুনের মতো তাকায়। আমার তো ভয়ই করে। সেদিন ওর বড় ভাইটা এসেছিলো। সেইটাকেও ভয় করে। আর এইটা তো আমার চৌদ্দগোষ্ঠীর সব ডিটেইলস নিয়ে থ্রেট দিয়ে গেল। বড়টা থাকলে তো আমাকে ওখানেই মেরে দিতো।
শিমুল বিরক্তচোখে তাকালো নির্বানের দিকে। কে বলবে এই ছেলেকে এলাকার সবাই ভয় পায়। আর এই ছেলে ভয় পায় তিতলি আর তিতলির দুই ভাইকে।
-এতো ভিতু তো তুই না।
নির্বান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
-জানি না ইয়ার। কথায় আছে প্রেমিকার বড় ভাইকে প্রেমিক বাঘের মতো ভয় পায়। আর এখানে তো তিতলিকে আমি এখনো মনের কথাই বলতে পারলাম না।
শিমুল বললো।
-তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না। ধর চা খা।
নির্বান আর কিছু না বলে চা খেতে লাগলো।
নীরা স্কুলে ক্লাস নেওয়া শেষ করে রুমার সাথে ক্যান্টিনে গেল। দুই বান্ধবি চা খেতে খেতে গল্প করতে থাকলো। রুমা সাইফের নামে একশ একটা বিচার দিচ্ছে আর নীরা হাসতে হাসতে সেসব শুনছে।
-বিচার দেওয়া শেষ রুমা?
-একদম না আরো আছে। শোন। কাল রাতে কি হয়েছে শোন।
নীরা রুমাকে চিমটি কাটলো। এই মেয়ে স্বামী স্ত্রীর সব বিষয়ও বলে দিবে দেখা যাচ্ছে। তাই নীরা রুমাকে থামতে বললো।
-এখানেই থাম আর বলতে হবে না। আমি সাইফকে বলবো ও যেনো আর এরকম না করে ঠিক আছে।
-ঠিক আছে। তুই কিন্তু একদম সাইফের পক্ষ নিবি না বলে দিলাম। একদম না।
নীরা হাসতে হাসতে বললো।
-একদম নিবো না।
ওদের কথা চলাকালীন সময়ে নীরার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো। রুমা মিটিমিটি হেসে নীরাকে জিজ্ঞেস করলো।
-শিহাব ভাই কল করেছে তাই না?
-না আননোন নাম্বার। দাড়া রিসিভ করে দেখি কে কল দিয়েছে।
নীরা ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে তিশা বলে উঠলো।
-হাই নীরা। আমি তিশা। রিমেম্বার?
নীরা এক মুহূর্ত ভাবলো তারপর বললো।
-ও তিশা তুমি? কেমন আছো বলো?
-খুব ভালো তুমি ভালো আছো তো?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
-নীরা একটা কথা ছিলো।
-হ্যা বলো শুনছি আমি।
-আসলে খালামনি তোমার সাথে দেখা করতে চান।
নীরা বুঝলো না ঠিক কোন খালামনি। তাই সে জিজ্ঞেস করলো।
-খালামনি বলতে?
-খালামনি বলতে শিহাব ভাইয়ের মা। ওনার ছেলের বিয়ে ওনারও তো কিছু এক্সপেক্টেশন থাকতে পারে। ছেলের বউকে দেখতে চান খালামনি।
নীরা জানে শিহাবের মায়ের সাথে ওদের সম্পর্ক ভালো না। এ ব্যপারে শিহাবও কিছু শুনতে চায় না। নীরার যা মনে হয় শিহাব ওর মাকে বিয়ের ব্যপারে শামিল করতে চায় না। এই অবস্থায় কি নীরার শিহাবকে ছাড়া ওর মায়ের সাথে দেখা করা ঠিক হবে। ভাবলো নীরা।
তাই সে তিশাকে বলে উঠলো।
-কিন্তু শিহাবকে ছাড়া আমি নিজে একা কি করে আন্টির সাথে দেখা করি?
তিশা এই কথা শুনে রেগে গেল। নীরাকে সত্যিই সহজ ভাবা ঠিক হবে না তাহলে। নিজেকে সামলে সে মিষ্টি স্বরে বললো।
-আরে খালামনি শুধু তোমাকে দেখতে চাইছেন নাথিং এলস। আর আমিও থাকবো সাথে। আমি তো ফ্যামিলিই রাইট? একদম চিন্তা করো না তুমি। আমি তো থাকবোই।
নীরা তবুও ইতস্তত করছে। তিশা ঝটপট বলে উঠলো।
-তাহলে আমি ধরে নিচ্ছি তুমি আসবে। তাহলে আজই আমরা দেখা করছি।
-আজই?
-তোমার সমস্যা আছে কোনো? আসলে খালামনি তাড়াতাড়ি দেখা করতে চাইছিলেন। এরপর উনি সময় পাবেন না।
-আচ্ছা বিকেলের দিকে আমি ফ্রি থাকবো। কোথায় আসতে হবে আমাকে টেক্সট করে দিও।
-ঠিক আছে। থ্যাংক ইউ সো মাচ রাখছি তাহলে।
-আচ্ছা।
নীরা আর তিশার সব কথাই রুমা শুনেছে। সে বলে উঠলো।
-শিহাব ভাই এখানে নেই। আর যতদূর জানি ওনার মায়ের সাথেও তো ওনাদের কারো সম্পর্ক ভালো না। এখন কি তোর ওনার মায়ের সাথে দেখা করা ঠিক হবে?
-আমিও তো সেটাই বলছিলাম। কিন্তু উনি নাকি এরপরে সময় পাবেন না। তিশা বললো আমাকে নাকি দেখতে চাচ্ছেন। তিশাও আসবে সাথে। তিশাও তো ফ্যামিলি তাই যাই গিয়েই দেখি।
-আমি যাবো সাথে?
-আমার সাথে কেন যাবি। আজ না সাইফের রিলেটিভের বাড়িতে যাওয়ার কথা তোদের। ওখানেই যা। নয়তো পরে দেরি হয়ে যাবে।
-আচ্ছা। আজকে ওই প্ল্যানিং না থাকলে আমিই তোর সাথে যেতাম। তাহলে বিকালেই যাচ্ছিস?
-হ্যা আর কি করার।
-আচ্ছা তাহলে চল আরেকটা ক্লাস আছে। নিয়ে নেই গিয়ে।
-চল।
নীরা আর রুমা ক্লাস নিতে চলে গেল।
শিহাব রাজশাহী তে এসেছে দুইদিন হয়ে গেছে অলরেডি। এরমধ্যে বাড়িতে কথা বলারও সময় খুব কম পেয়েছে। নীরার সাথেও কথা কম হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে এই কাজ কমপ্লিট হতে হতেও এক সপ্তাহ লাগবে। শিহাব একটু ফ্রি সময় পেয়েছিলো। তাই সে তিতলি রেহানের সাথে কথা বলে নিলো। তারপর ভাবলো নীরাকে ফোন দিবে এখন। সে নীরার নাম্বারে ডায়াল করলো। নীরা ক্লাস শেষ করে বের হয়েছে। শিহাবের ফোন আসলে সে ভাবলো এখনই শিহাবের মায়ের বিষয়টা শিহাবকে বলা যাবে। সে ফোন রিসিভ করলো।
-আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো?
নীরার কন্ঠস্বর শুনে শিহাবের মন শান্ত হয়ে গেল। মনে হচ্ছে অনেকদিন নীরার কন্ঠ শোনেনি সে।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। আমার মিস বিউটিফুল কেমন আছে?
শিহাবের কথা শুনে নীরা লাজুক হাসলো। শিহাব বললো।
-তুমি নিশ্চয়ই লাজুক হাসি হাসলে? ইশ দেখতে পারছি না।
-দেখতে হবে না।
-আচ্ছা খেয়েছিলে?
-হ্যা তুমি?
-আমিও।
শিহাব আরো কিছু বলতে চাইছিলো। কিন্তু শিহাবের পিএ রাহাত এসে ইমার্জেন্সিভাবে ডাকার কারনে আর বলতে পারলো না। সে নীরাকে বলে উঠলো।
-শোনো এখন খুব আর্জেন্ট কাজ পরে গেছে। আমি তোমাকে পরে কল করছি। এখন রাখছি। নিজের যত্ন নিও।
-শোনো। আচ্ছা থাক পরে বলবো রাখছি।
-ঠিক আছে।
শিহাব ফোন রেখে দিলো। নীরা ভাবলো থাক কি আর করার আছে। দেখা করে এসেই নাহয় শিহাবকে এ ব্যপারে বলা যাবে।
–চলবে!