অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-ছিচল্লিশ
নাফিসা নীলয়া!
আসমা সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকেন। জগতের কোনোকিছুতে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। তিশার জন্য অনেকের কাছেই অনেক কথা শুনতে হয় তাদের। নিজের একমাত্র মেয়েকে ভুল পথে পা বাড়াতে দেখে তার কষ্ট হতো। তিনি বারবার বোঝাতেন তবে তিশা বুঝতো না। এখনো বুঝলো না। এভাবে কিছুই হাসিল হবে না একথা তিনি তিশাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছেন না বলে নিজের প্রতি নিজেরই এখন ঘৃণা হয়। ছোট থেকেই যদি তিশাকে শাসন করতেন তবে হয়তো আজ তার এই দিন দেখতে হতো না। আসমা অবসন্ন হয়ে বসে ছিলেন। কাকে দোষ দিবেন তিনি নিজেকে নিজের বোনকে না নিজের মেয়েকে! এই ভাবনাগুলোই কুড়ে কুড়ে খায় তাকে। তিনি নিজের হাতে ফোন তুলে নিলেন। জায়মার নাম্বারে কল দিলেন। জায়মা রিসিভ করার সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন।
-তিশা কি রাজি হয়েছে?
জায়মা মলিন কন্ঠে বললেন।
-না আপা।
আসমা হাতাশ হয়ে বললেন।
-কাকে দোষ দিবো আমি জায়মা? বলতে পারিস?
জায়মা আসমার প্রশ্ন শুনে চুপ করে রইলেন। তার কাছে বলার মতো কিছুই নেই।
রেহান শিহাবের কাছ থেকে তিশার পাঠানো ছবিটা দেখেছে ছবিটা দেখেই তার প্রচন্ড রাগ লাগলো। একটা মানুষ কতোটা নিচে নামতে পারলে এরকম কাজ করতে পারে সেটাই ভাবছে সে। রেহানকে চুপ করে থাকতে দেখে শিহাব বললো।
-চুপ করে আছিস যে?
রেহান রাগান্বিত স্বরে বললো।
-ভাবছি একটা মেয়ে কতোটা নিচে নামলে এরকম করতে পারে।
শিহাব রেহানের কথা শুনে কিছু বললো না। রেহান শিহাবের অফিসে এসেছিলো। দুই ভাই একসাথে লাঞ্চ করলো। তারপর শিহাব রেহানকে ছবিটা দেখিয়েছে। রেহান ফোনের স্ক্রিনে ছবিটা দেখতে দেখতে বললো।
-ও তো যেচে পড়েই তোমার গায়ের ওপর পরেছিলো। সেসময়ই ছবিটা ক্যাপচার করা হয়েছে। এই ছবিটা ও এভাবে ব্যবহার করলো। ভেবেই তো আমার ওকে থাপড়াতে ইচ্ছে করছে।
শিহাবকে চুপ করে থাকতে দেখে রেহান বললো।
-এ কারনেই তোমার আর ভাবিমনির মধ্যে মনোমালিন্য চলছিলো?
শিহাব মাথা নেড়ে বললো।
-যেকোনো মেয়েই নিজের স্বামীর সাথে অন্য মেয়ের এরকম ছবি দেখলে রিয়্যাক্ট করবে। সেই জায়গায় নীরা আমাকে বিশ্বাস করেছে সময় নিয়েছে।
রেহান শিহাবকে বললো।
-তিশাকে কিছু বলবে না?
শিহাব রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো।
-ওকে আর কিভাবে বলা উচিত? তবুও আমার একটা প্ল্যান আছে। সময় এলেই প্ল্যান এপ্লাই করা হবে। এমনি এমনি তো ছেড়ে দেওয়া যায় না।
শিহাবের কথা শুনে রেহান হেসে বললো।
-আমার ভাই নিশ্চয়ই ইউনিক কিছু করার প্ল্যান করছে।
রেহানের কথার ধরনে শিহাবও হাসলো।
নীরা আর রুমার সাথে আজ সাইফও এনজিওতে এসেছে। দুজনে ফিসফাস করে কথা বলছে। নীরা আগে আগে হাটছে। আর ওরা পেছন পেছন। নীরা পেছনে তাকিয়ে বললো।
-ফিসফাস না করে যা বলার সামনাসামনি বল।
নীরার কথা শুনে সাইফ আর রুমা থতমত খেয়ে গেল। সাইফ নীরাকে বললো।
-আগে কাজ করে নেই তারপর বলবো।
নীরা ভ্রু কুঁচকে বললো।
-নিশ্চয়ই দুজন মিলে কোনো খিঁচুড়ি পাকাচ্ছিস!
সাইফ দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো।
-একদম না ইয়ার। তুই অযথা ভাবছিস। তাই না রুমা?
রুমাও সাইফের সাথে তাল মেলালো। মাথা নেড়ে বললো।
-অবশ্যই অবশ্যই!
নীরা আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে গেল। সাইফ আর রুমাও নীরার সাথে গেল। আসাদ দাড়িয়ে ছিলো নীরাদেরই অপেক্ষা করছিলো সে। নীরা আর রুমা সামনে গেলে সে হেসে বললো।
-তোমাদেরই অপেক্ষা করছিলাম।
আসাদকে দেখে রুমাও হেসে বললো।
-কেমন আছো?
আসাদ সাইফকে লক্ষ করে বললো।
-ভালো আছি। তবে উনি কে?
সাইফ আসাদ আর রুমার এমন ফ্রিলি কথা বলা দেখে বিরক্তবোধ করছিলো। আসাদের প্রশ্ন শুনে আরো বিরক্তবোধ করলো। রুমা হাসতে হাসতে বললো।
-আমার হাজবেন্ড।
তারপর সাইফকে গুতো দিয়ে বললো।
-পরিচিত হ।
আসাদ নিজ থেকেই হাত বাড়িয়ে দিলো। সাইফ অনিচ্ছাস্বও্বেও হাত মেলালো। আসাদ বললো।
-তোমরা একে অপরকে তুই করে বলো?
এবার নীরা কথা বলে উঠলো।
-আমরা তিনজনই বন্ধু। সেই ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকে।
আসাদ সে কথা শুনে বললো।
-ইন্টারেস্টিং তো!
সাইফ এবার বিরক্ত হয়ে বললো।
-যে কাজের জন্য এসেছি এবার সেই কাজ করতে গেলে ভালো হতো।
আসাদও সাইফের কথা শুনে বললো।
-শিওর। এসো তোমরা।
সাইফ আর রুমা কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেল। নীরার ফোনে তিতলির কল আসায় সে একটু পেছনে পরে গেল। নীরা করিডোরে দাড়িয়ে কথা বলছিলো তিতলির সাথে। আসাদ সেটা লক্ষ করে নিজেই নীরার পাশে গিয়ে দাড়ালো। নীরা আসাদকে দেখে তিতলিকে বাই বলে ফোন রেখে দিলো। তারপর আসাদকে বললো।
-কিছু বলবেন?
-তুমি ভালো আছো?
নীরা ভ্রু কুঁচকে বললো।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো থাকবো না কেন!
-না এমনিই বললাম।
নীরা মনে পরার ভঙ্গিতে বললো।
-আন্টি কেমন আছেন এখন?
আসাদ হেসে বললো।
-ভালো আছে। নীরা তুমি কিন্তু আমাকে তুমি করেই বলতে পারো। আমরা সমবয়সী হবো।
নীরাও এবার হেসে ফেললো। বললো।
-আপনি যদি বন্ধুসুলভ আচরণ করেন তবে আমি আপনাকে তুইও বলতে পারবো। কোনো দ্বিধা নেই আমার। কিন্তু আপনার কার্যকলাপ আর আচরণ বন্ধুসুলভ না। সবাইকে সব নজরে দেখতে হয় না আসাদ। আর ক্ষনিকের ভালো লাগাকেও প্রাধান্য দিতে হয় না। এমন কিছু করবেন না যাতে পরে নিজেই অনুতপ্ত হন। আমি কি বলছি আপনি কি তা বুঝতে পারছেন?
নীরার কথা শুনে আসাদের হাসি মিলিয়ে গেল। সে ভাবুক হয়ে বললো।
-তোমার সাথে আমার আগে কেন দেখা হলো না?
-আগে দেখা হলেও কিছু হতো না। আমি আশা করবো তুমি নিজেকে শুধরে নিবে। আর তুমি যে তিশার এক্স বয়ফ্রেন্ড ছিলে সেটা কিন্তু আমি জানি।
আসাদ অবাক হয়ে নীরার দিকে তাকালো। হুট করে তুমি বলাতে সে চমকে গেছে। আসাদ প্রশ্ন করলো।
-কিভাবে?
নীরা হেসে বললো।
-শিহাব যেভাবে তোমাকে চেনে। ঠিক সেভাবেই আমি চিনি।
আসাদ এবার সিরিয়াসভাবে বললো।
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো নীরা। কোথাও গিয়ে কথাগুলো বললে ভালো হয়। সময় হবে?
নীরা আসাদের দিকে তাকিয়ে বললো।
-তোমাকে জানাবো আমি। অবশ্য আমার হাজবেন্ড অনুমতি দিলে, এবং আমার হাজবেন্ড ও আমার সাথে আসলে।
আসাদ নীরার কথা শুনে বললো।
-ঠাট্টা করছো?
-একদম না।
আসাদ হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে সামনে এগিয়ে যেতে বলে বললো।
-তুমি আমার ভাবনার চাইতেও বেশি ইন্টেলিজেন্ট। বিউটি উইথ ব্রেইন!
নীরা হাটতে হাটতে বললো।
-কমপ্লিমেন্টের জন্য ধন্যবাদ দিবো না।
আসাদ হেসে ফেললো। বললো।
-না দিলেও চলবে। শুধু আমার কথাগুলো শুনতে হবে এবং আমার স্যরি এক্সেপ্ট করতে হবে।
-অন্যায় গুরুতর না হলে স্যরি এক্সেপ্ট করা হবে। তাছাড়া না।
আসাদ শুধু হাসলো। নীরাকে আর কিছু বললো না। নীরার সাথে সে ও এগিয়ে গেল।
আসমা অনেকদিন পর তিশার কাছে এসেছেন। তিশা অনেকদিন পর নিজের মাকে দেখে খুশিই হয়েছে। তার মানসিক অবস্থা বেশি ভালো না। এখন আর একা থাকতে ইচ্ছে করে না। তবে নিজের জেদ আর ইগোর জন্য সে বাবা মায়ের সাথেও থাকতে পারছে না। তার শুধু এটাই মনে হয়। সে নিজে সুখে থাকতে না পারলে কেউ সুখে থাকতে পারবে না। সে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। আজ না পাওয়ার কষ্ট টা মানতে পারছে না কোনোমতেই। আসমাকে দেখে তিশা খুশি হলো। নিজ থেকে অনেকদিন পর মাকে জড়িয়ে ধরলো। আসমা অবাক হয়ে গেলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। তিশা আসমাকে ছেড়ে বললো।
-বাবা কেমন আছে?
আসমা ভেতরে ঢুকে বললো।
-ভালো থাকার মতো অবস্থায় ছেড়ে এসেছো যে ভালো থাকবে?
তিশা আসমার মুখে তুমি ডাক শুনে অবাক হলো। আসমা কখনোই তাকে তুমি করে ডাকে না। সে আসমাকে জিজ্ঞেস করলো।
-তুমি করে বলছো কেন?
আসমা রাগান্বিত হয়ে বললেন।
-তুই বলবো কোন সাহসে? আমার মেয়ে কি আমার আছে?
তিশা আসমার দিকে পলক না ফেলে তাকিয়ে রইলো। আসমা ঠিক করেছেন আজ আর নরম স্বরে বোঝাবেন না মেয়েকে। মেয়েকে আজ বাস্তবতা দেখিয়ে দিয়ে যাবেন। অনেক হয়েছে আর না। তিশার জন্য সবার কাছে কথা শুনতে হচ্ছে তাদের। আত্মীয়রা পর্যন্ত বাজে বাজে কথা বলছে তিশা বাড়িতে না থাকায়। আজও একজন প্রতিবেশী বাড়ি বয়ে এসে ইনিয়েবিনিয়ে তিশার মাকে বাজে কথা বলে গেছেন। তিশার বাবাও এসব নিতে পারছেন না। দিনদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পরছেন। আসমা আজ আর সহ্য করতে পারলেন না। তিনি আজ তিশাকে উচিত শিক্ষা দিয়েই যাবেন বলে ঠিক করেছেন। আসমাকে অস্বাভাবিক ভাবে রাগতে দেখে তিশা বললো।
-তুমি আগে বসো মা।
আসমা তিশার এই কথা শুনে গর্জে উঠলেন। বললেন।
-খবরদার ওই মুখে আমাকে মা ডাকবে না। যেই সন্তান বাবা-মায়ের কষ্ট বোঝে না তার মুখে বাবা-মা ডাক শোনাও পাপ।
আসমার কথা শুনে তিশা ব্যথিত কন্ঠে উচ্চারন করলো।
-মা কি বলছো এসব?
আসমা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন।
-ঠিকই বলেছি। মানুষ যা চায় তা ই কি পায়? ছোট থেকে তুমি যা চেয়েছো তাই পেয়েছো। যখন যা আবদার করেছো তাই এনে দিতে হয়েছে তোমাকে। কারন তুমি জেদী ছিলে। কিছু না পেলে নিজেরই ক্ষতি করতে। সেজন্য আমরাও দিতে বাধ্য হতাম। তাই বলে যে তুমি এমন বঁখে যাবে তা তো আর জানতাম না। তিশা একটা কথা বলো তোমার মতো তো এমন অনেকেই আছে যারা না চাইতেও সব পেয়ে যায় কিন্তু নিজের পছন্দের মানুষকে পায় না। কই তারা তো তোমার মতো এমন পাগলামি করে না। তাহলে তুমিই কেন? কেন এমন করছো? কেন অন্যের সংসার নষ্ট করছো? শিহাব তোমাকে ভালোবাসে না। ও কখনোই তোমার সাথে কমিটেড ছিলো না। শিহাব কখনোই তোমাকে প্রশ্রয় দেয়নি। ও নিজের মুখেই না করেছে। তবুও কেন তুমি ওকে নিয়ে আশায় ছিলে? কেন? এটাও কি ওর অপরাধ? এটাও কি নীরার অপরাধ? কেন ওই মেয়েটার সংসার নষ্ট করার জন্য উঠে পরে লেগেছিস তুই? কেন?
আসমা একটানা কথা বলে চুপ করলেন। তিশা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো নিজের মায়ের দিকে। আসমা আবার বলতে শুরু করলেন।
-আমার মাঝেমাঝে নীরাকে দেখে খুব আফসোস হয়। ওর মতো একটা মেয়ে কেন আমার গর্ভে জন্মালো না। ওর মাকে বলতে ইচ্ছে করে কতোটা ভাগ্যবতী হলে এমন মেয়ের মা হওয়া যায়! তুই আর জায়মা ওকে এতোকিছু বলার পরেও ও কিছু বলেনি। সেটা ভেবেই আমি অবাক হই। ও ডিজেবল্ড,ও স্বয়ংসম্পূর্ণ না এসব বলেই তো তোরা অপমার করেছিলি। শুনে রাখ ও ঠিকই স্বয়ংপূর্ণ তোরা না। ও যা করেছে জীবনে তা অনেক মানুষ সুযোগ পেয়েও করতে পারে না। তোকেই দেখ এতোকিছু পেয়েও কিছু করতে পারিসনি। বাবা মায়ের ওপর নির্ভর করে চলিস। তাতে আমার কখনো আফসোস ছিলো না। নিজের সন্তান তো নিজের সন্তানই হয়। আমার তোকে নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিলো না। কিন্তু দিনশেষে তুই কি করছিস? অন্যের সংসার ভাঙার চেষ্টা? তোর জন্য শুধুমাত্র তোর জন্য আমাদের লোকের কাছে কথা শুনতে হয়। তোর জন্য তোর বাবা অসুস্থ হয়ে পরছে। তোর জন্য আমাদের আজ ধুঁকে ধুঁকে মরতে হচ্ছে। তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে। তোকে নিয়ে তো আমাদের অনেক আশা ছিলো। কিন্তু তুই সেই আশা ভেঙে দিয়েছিস। একটা সামান্য ব্যপারকে কোথায় নিয়ে গেছিস কোনো আইডিয়া আছে? আমি যেদিন শিহাবের মুখে শুনলাম বিয়ের আগেই আরেকজন ছেলের সাথে এটাচ্ড হয়েছিস। সেদিন লজ্জায় ঘৃণায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে হলো। সেদিন আমি শুধু ভাবছিলাম। সব মনে হয় আমারই দোষ। আমিই মেয়েকে মানুষ করতে পারিনি। তাই সেদিনও তোকে কিছুই বলিনি। আচ্ছা একটা কথা বল তুই যদি সত্যিই শিহাবকে ভালোবাসতিস তাহলে কি অন্য কারো সাথে নিজেকে জড়াতে পারতি? না পারতি না। আচ্ছা মানলাম সব জায়মার দোষ ও তোকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিন্তু যেই মেয়ে নিজের ইচ্ছায় নিজের সম্মান বিলাতে দুইবার ভাবে না। তাকে নিজের জীবনে কোন ছেলে জায়গা দিবে? তুই আবার আশা করিস শিহাব তোকে বিয়ে করবে! তোর জন্য আমদের জীবন নরক হয়ে যাচ্ছে। তোর ছোট ভাইটা তোর বাবা-মার কথা একবারও ভাবলি না না? শুধু নিজের জেদের কথাই ভাবলি! তোর বাবা অসুস্থ হয়ে পরেছে। আমাকে লোকের কথা শুনতে হচ্ছে। এটাই তো চেয়েছিলি। তুই মরিস না কেন? তোর মতো মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। এখন আমার মনে হয় তুই মরলেই সবাই শান্তি পাবে।
এতো কথা একসাথে কেঁদে কেঁদে বলে আসমা ক্লান্ত হয়ে বসে পরলেন। তার আর ভালো লাগে না এসব। তিশা নিজের মায়ের মুখে এই নির্মম সত্য কথা শুনে স্বব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো। তার চোখে পানি নেই। সে চাইলেও এখন কাঁদতে পারে না।তার গলা দিয়েও কোনো আওয়াজ বেড়োচ্ছে না। তার মা এসবেই তাকে এতো কথা বললো। মরেও যেতে বললো। আর সে যে আরো অনেককিছু করেছে সেসব শুনলে তার মা কি করতো। তিশার মনে এখন এই ভাবনাই চলছে।
আসমা উঠে দাড়ালেন। তিশার দিকে আর একবারও না তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলের। তিশা কয়েক মুহূর্ত ওভাবেই দাড়িয়ে ছিলো। তারপর ধীরে ধীরে হেটে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো। তার মাথায় শুধু আসমার বলা কথাগুলোই ঘুরছে। সত্যিই কি তার জন্য সবাই অশান্তিতে আছে! সে কি সত্যিই শিহাবকে ভালোবাসেনি। তার জেদের জন্যই কি এমন হচ্ছে। তার বাবা মাকে তার জন্যই অপমান সহ্য করতে হয়। মনে হয় তার মরে যাওয়াই ভালো। তার মা তো এটাই বললো। তার মতো সন্তান থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। কেউ তাকে ভালোবাসেনি। সে নিজেও হয়তো কাউকে ভালোবাসতে পারেনি। প্রায় সরারাত তিশা এসবই ভাবলো। শেষ রাতের দিকে সে ঠিক করলো তার মরে যাওয়াই ভালো। তার মা ও এটাই বললো। এতো ঘৃণা পাওয়ার চেয়ে মরে গেলেই হয়তো ভালো হবে। সে নিজের ঘরে গিয়ে তিনটা চিরকুট লিখলো। একটা নিজের মায়ের জন্য একটা নীরার জন্য আরো একটা আসাদের জন্য।
তারপর ড্রয়ার থেকে ঘুমের ওষুধ বের করলো। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখে পানি আসার তো কথা না তবুও আসছে। তিশা অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ একসাথে নিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে সবগুলো মুখে পুরলো। আস্তে আস্তে বিছানায় শুয়ে পরলো। তারপর ভাবলো৷ আজই তার শেষ দিন এই দুনিয়ায়। নিজের বাবার মুখটা দেখতে পারলো না শেষবারের মতো। মায়ের মুখটা দেখেছে এটা ভেবেই একটু শান্তি পেলো। আরো একজনের গলার স্বর শুনতে ইচ্ছে করছে হঠাত। আশ্চর্য সে তো শিহাবকে ভালোবাসতো। তবে এখন শিহাবের কন্ঠ শোনার ইচ্ছে হওয়ার বদলে আসাদের কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে করছে কেন! এই জবাব তার কাছে নেই। এখন তার কাছে সময়ও নেই এর জবাব খোঁজার। সে বহু কষ্টে নিজের ফোন হাতে নিলো। আসাদের নম্বরে ডায়াল করলো। কিন্তু আসাদ ধরলো না। হয়তো ঘুমাচ্ছে। তিশার এই ইচ্ছেটা পূ্রণ হলো না। তার খুব ঘুম পাচ্ছে সে ফোন রেখে আরাম করে চোখ বুজলো। এতো শান্তির ঘুম তার কখনোই আসেনি।
–চলবে!