অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-তেইশ
নাফিসা নীলয়া!
শিহাব আর নীরার ব্যপারটা রুমা আর সাইফ শোনার পরে একইসাথে অবাক আর খুশিও হয়েছে। শুক্রবার সকাল সকাল দুজন মিলে নীরাদের বাড়িতে এসে পরেছে। রুমা নীরাকে পিঞ্চ মেরে কথা বলছে। সাইফ কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাদের আড়ালে এতোকিছু হয়ে গেল। অথচ তারা জানতেই পারলো না। এসব নিয়েই আক্ষেপ করছে। রুমা সাইফ মিলা আর নীরা নীরার ঘরে বসে আছে। তাদের সামনে মালিহা নাস্তা রেখে গেছেন। রুমা একটু পরপর নাকি সুরে কথা বলছে। নীরা বিরক্ত হয়ে তাকালো রুমার দিকে।
-রুমা আর একবার উল্টাপাল্টা বললে তোর খবর আছে বলে দিচ্ছি। সাইফ ওকে থামা। নইলে তোর বউকে মেরে ফেলবো একদম।
নীরার ধমক শুনেও রুমা চুপ করলো না। সে একাধারে বলতেই থাকলো।
-কেন আমি চুপ করবো কেন? আমি নাকি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড অথচ আমাকেই বললি না তুই?
তারপর নীরাকে ধাক্কা দিয়ে বললো।
-এই এই তোরা নাকি বন্ধু? আমার তো সেদিনই সন্দেহ হয়েছিলো। ও মাই গড কওবড় মিথ্যা কথা বলেছিস সেদিন।
রুমার সাথে সাইফও তাল মেলালো।
-একদম। আমিও সেদিন হসপিটালে শিহাব ভাইয়ের বিহেভিয়ার দেখে ভড়কে গেছিলাম। আমিও তো সন্দেহ করছিলাম। কিন্তু নীরা কি সুন্দর করে সবাইকে বোকা বানালো! এটা তুই করতে পারলি নীরা? এই নাকি আমি তোর ভাই?
নীরা ত্যাক্ত হয়ে অসহায় চোখে সাইফ আর রুমার দিকে তাকালো। এরা যে থামবে না তা বুঝে গেল। মিলা এখানে মিটিমিটি হাসছে। কারন সে যদি কিছু বলে তাহলে তার আপা তাকে বকবে! নীরা মিলার দিকে এবার কড়া দৃষ্টিতে তাকালো। যার অর্থ তোর খবর আছে। মিলা নীরার তাকানো দেখে নাটকীয় ভঙ্গিতে কান্না কান্না ভাব করলো। সাইফ আর রুমাকে মিলাই সমস্ত বিষয় খুলে বলেছে। এজন্যই ওরা দুজন এখন নীরাকে এতোসব বলছে। নীরা কাউকেই কিছু বলতে পারছে না। রুমা আবার বলে উঠলো।
-এই নীরা শিহাব ভাই কিভাবে প্রোপোজ করলো রে তোকে? বল না?
নীরা বিরক্ত হয়ে তাকালো রুমার দিকে।
-আমাকে প্রোপোজ করেনি।
-মিথ্যা বলছো কেন আপা? শিহাব ভাইয়ের সাথে কিন্তু আমার কথা হয়েছে। ভাইয়া আমাকে বলেছে।
মিলার কথা শুনে নীরা ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালো। মিলা চুপসে গেল। অন্যদিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসলো।
-হায় হায়রে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে আবার মিথ্যা বললো রে।
রুমা নাকি সুরে বিলাপ করে উঠলো। নীরার এবার মন চাচ্ছে এই তিনজনের মাথা ফাটিয়ে দিতে পারলে তার খুব ভালো লাগতো।
-ওটাকে প্রোপোজ বলে না রুমা। শুধু বিয়ের জন্য বলেছিলো। আমি কিন্তু বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো বলে দিচ্ছি। এতো জ্বালা আর ভালো লাগছে না।
নীরার চেঁচানো দেখে সবাই এবার চুপ করলো। মালিহা এসে দেখলেন এরা আজকে শুধু আড্ডাই দিয়ে যাবে আর কিছু করবে না। তিনি সবাইকে ধমক দিলেন। রুমা আর মিলাকে বললেন তাকে কাজে সাহায্য করতে। কারন দুপুরের আগেই শিহাবদের বাড়ির সবাই এসে পরবে। সাইফকে বললেন রেজাউলের সাথে বাজারে যেতে। ওরা সবাই মালিহার কথামতো কাজ করলো। নীরা একাই বসে রইলো। মালিহা তাকে কোনো কাজও করতে দিচ্ছে না। আর সে ও মুখ মলিন করে বসে রইলো। কেউ তার মতামতই নিলো না। সেই দুঃখেই তার ভালো লাগছে না।
শিহাবদের বাড়ির অবস্থা জমজমাট। রেহান আর তিতলি হইচই করছে। জহুরাও তাদের সাথে হইচই করে সব আয়োজন করছেন। করবেন ই না কেন শিহাব, তিতলি,রেহান তো তার সন্তানের মতো। জহুরা ওদের ছোট থেকে আগলে রেখেছেন।
-খালা এবার যাও তাড়াতাড়ি তৈরি হও। সব কাজ তো শেষ এবার আমরা তৈরি হবো। তুমিও যাও।
তিতলির কথায় জহুরা হাসলেন। ছেলে মেয়ে গুলো তাকে এতো ভালোবাসে যে শিহাবের জন্য মেয়ে দেখতেও তাকে নিয়ে যাচ্ছে। জহুরা হেসে তৈরি হতে গেলেন।
রেজা সাহেব পাঞ্জাবি পরে তৈরি হয়ে গেছেন। তিতলি বাবার ঘরে ঢুকলো। রেজা সাহেব তিতলিকে দেখে বললেন।
-দেখ তো মা হ্যান্ডসাম লাগছে না আমাকে?
তিতলি হেসে বললো।
-একদম বাবা। তুমি আমার বাবা আর তোমাকে হ্যান্ডসাম লাগবে না? ইউ আর দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম এভার।
রেজা সাহেব তিতলিকে জড়িয়ে ধরলেন। রেহান এদিকে এসে তাড়া দিচ্ছে। তিতলি রেজা সাহেবকে ছেড়ে রেহানের সাথে শিহাবের ঘরে গেল। শিহাব ফর্মাল সাদা শার্ট কালো প্যান্টের সাথে ইন করে পরেছে। রেহান ভাইকে দেখে একটা চিৎকার দিলো।
-একি ভাই? এসব কি? পাঞ্জাবি পরোনি কেন তুমি? তোমাকে না বলে গেছি পরতে।
তিতলিও রেহানের কথায় মাথা নাড়িয়ে বললো।
-ভেরি ব্যাড ভাই। এটা কি করেছো তুমি?
শিহাব দুই ভাই বোনের কান্ডে হতভম্ব।
-আশ্চর্য আমি কি বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি নাকি?
রেহান আর তিতলি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো।
-তবুও ভাই! বিয়ের কথা তো বলতে যাচ্ছো।
শিহাব এবার ধমক দিলো।
-চুপ কর দুজনে। আমি পাঞ্জাবি পরে গেলে তোদের ভাবি আমাকে হ্যাংলা বলবে। এমনিতেই তোদের ভাবি আমাকে দেখতে পারে না।
শিহাবের কথা শুনে দুজনেই হেসে ফেললো। তিতলি বললো।
-বাহ্! আমার ভাই তো দেখি দিওয়ানা হয়ে গেছে।
শিহাব আর কথা বাড়ালো না। সবাইকে তাড়া দিলো। সবাই বের হওয়ার সময় দেখলো আসমা আর তিশাও ওদের সাথে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে। সবাই একটু অবাক হলো। রেহান আর তিতলি তো শক্ড হয়ে গেছে। তবে শিহাবের কোনো ভাবন্তর হলো না। রেজা সাহেব বললেন।
-এতো দেরি করলে কেন আসমা? রাতে বলেছিলে যাবে না আমাদের সাথে। এখন যাচ্ছো দেখে খুব খুশি হয়েছি।
আসমা হাসলেন। তিশাকে ইশারা করে বললেন কিছু বলতে। তিশা শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
-আঙ্কেল শিহাব ভাইয়ের বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছেন আর আমরা যাবো না তা কি করে হয়?
শিহাবও তিশার দিকে তাকালো তবে কিছু বললো না। সবাই মিলে হইচই করতে করতে নীরাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
নূরজাহান বেগম, মালিহা,রুমা আর মিলা সবাই মিলে নীরাকে শাড়ি পরানোর চেষ্টা করছে। তবে নীরা তার কথায় অনড়।
-আম্মা তুমি জানো আমার অসুবিধা হয়। তবুও বারবার এক কথা বলছো।
নীরার কথা শুনে নূরজাহান বেগম বিরক্তবোধ করলেন।
-এ কেমন কথা? তুই কি দৌড়াবি? যে তোর সমস্যা হবে! পরতে হবে মানে হবেই।
নূরজাহান বেগমের সাথে মিলা আর রুমাও চিল্লিয়ে বলে উঠলো। নীরা তবুও পরবে না বলে ঠিক করলো। মালিহা বুঝলেন নীরা তার ওপর রাগ করেছে তবে সেটা প্রকাশ করছে না। তিনিও কিছু বললেন না। বাইরে বাকি আয়োজন দেখতে গেলেন।
-দাড়া শিহাব ভাইকে ফোন করি। উনি বললে তুই নিশ্চয়ই পরবিই পরবি।
নীরা কিছু বললো না। সে সবার ওপর বেজার। তাকে কেউ মূল্যায়ন করেনি। এজন্য সে চুপ করে বসে আছে। রুমা শিহাবের নাম্বারে ডায়াল করলো।
শিহাবরা তখন রাস্তায় ছিলো। শিহাব, তিতলি রেহান আর জহুরা এক গাড়িতে ছিলো। শিহাব ড্রাইভ করছিলো। শিহাবের ফোন বেজে উঠলে সে তিতলিকে বললো রিসিভ করে স্পিকারে দিতে। তিতলি তাই করলো।
-রুমা বলো।
-শিহাব ভাই আপনার বউ যে কি ঘাড় ত্যাড়া! কথাই শোনে না।
-কেন আমার বউ আবার কি করলো?
-আর বলবেন না ওকে শাড়ি পরতে বলছি সে পরবে না। এতো ঘাড়ত্যাড়ামি কেউ করে বলেন?
রুমার কথা শুনে রেহান আর তিতলি হেসে ফেললো। তিতলি জোরে বলে উঠলো।
-রুমা আপু আমার ভাই বললে ভাবি অবশ্যই কথা রাখবে।
-সেজন্যই তো তোমার ভাইকে ফোন করেছি।
শিহাব দু দন্ড কিছু ভেবে বললো।
-রুমা ওকে ফোর্স করার দরকার নেই। ও যেটাতে কম্ফোর্টেবল ওকে সেটাই পরতে বলো। আমার কোনো সমস্যা নেই।
-শিহাব ভাই কি বলেন এগুলো?ধুর! কিছু হলো এটা।
-রুমা প্লিজ ও যেভাবে চায় সেভাবেই সব করুক। তোমরা আর কিছু বলো না।
শিহাবের কথা শুনে রুমা মুখ বেজার করে ফোন কেটে দিলো। এদিকে তিতলি আর রেহান হাসছে। জহুরা ও এদের কান্ড দেখে আনন্দ পাচ্ছেন। তবে তিনি চুপ করে বসে আছেন। শিহাব বিরক্ত হয়ে বললো।
-হাসি থামা নইলে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো দুটোকে।
রেহান আর তিতলি দুজনে চুপ করে বসলো।
নীরা নিজের কথাই রাখলো সে শাড়ি পরলো না তো পরলোই না। মিলা হাসিখুশিই আছে। তার আপার জীবনে সত্যিই রাজপুএ এসেছে। তার স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে। মিলা নীরার চুল বেঁধে দিচ্ছে। রুমা বসে আছে পাশেই।
নীরা একটা হালকা গোলাপি আর সাদার কম্বিনেশনের সালোয়ার কামিজ পরেছে। রুমা এজন্য মুখ গোমড়া করে আছে। মিলা নীরাকে লিপ্সটিক দিয়ে দিতে গেলে নীরা বাধা দিলো।
-আমার কি আজ বিয়ে নাকি? এরকম করছিস কেন তোরা? আশ্চর্য!
বলেই ওড়না মাথায় পেঁচিয়ে নিলো নীরা। একদম সাদামাটা।
রুমার এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে বলে উঠলো।
-যা খুশি কর কিছুই বলবো না আমি। আমার কথা পাওাই দিস না।
অন্যান্য দিন হলে নীরা রুমার রাগ ভাঙাতো তবে আজ তা করলো না। মিলা খুশিই আছে। তার আপা যে বিয়েতে বাগড়া দিচ্ছে না এটাই তো বেশি। মিলা নীরাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
-রুমা আপা। আমার আপাকে সাজতে হয় না। আমার আপা সবসময়ই সুন্দর।
ওরা কথা বলতে বলতেই সাইফ এসে জানালো শিহাবরা এসে গেছে। রুমা আর মিলা তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেল।
রেজাউল আর মালিহা রেজা সাহেব,আসমা আর জহুরার সাথে কুশল বিনিময় করলেন। মিলারা রেহানদেরকে ভেতরে নিয়ে আসলো। সবাই একসাথে বসলো। তিশা চুপ চাপ সব পর্যবেক্ষন করছে। সে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। শিহাব ও সবার সাথে কথা বলছে। সবাইকে খুব সুন্দরভাবে আপ্যায়ন করা হলো। রেজা সাহেব আর রেজাউলের ও খুব খাতির হয়ে গেল। জহুরা মালিহা আর নূরজাহান বেগমের সাথে লাগাতার গল্পে মেতে গেলেন। আসমা চুপচাপ বসে আছেন। দুই একটু হু হা করছেন। রেহান আর মিলা বলে উঠলো।
-আমরা ভাবির কাছে যাবো। এখনই ভাবিকে দেখবো। আর তর সইছে না।
রেজা সাহেবও বললেন।
-হ্যা এবার আমিও আমার পুএবধূকে দেখতে চাই।
রেহান আর তিতলি মিলার সাথে চলে গেল নীরার ঘরে। নীরার কাছে গিয়েই তিতলি দৌড়ে নীরাকে জড়িয়ে ধরলো। নীরাও ধরলো। রেহান নীরার সামনে গিয়ে বসেছে। তিতলি নীরাকে ছেড়ে বললো।
-আপু উফ না ভাবি। মাই গড তুমি আমার ভাবি হবে? আল্লাহ আমার স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে। ও আল্লাহ এতো খুশি আমি কোথায় রাখি!
রেহান নীরার হাত ধরে বললো।
-তুমি তো জানোই তোমাকে আমরা কতো ভালোবাসি। আমার মাঝেমধ্যে মনে হতো তোমার মতো একটা বড় বোন থাকলে আর কি লাগে জীবনে! আর এবার তুমি সারাজীবনের জন্য আমাদের বাড়িতে যাবে ভাবি হয়ে। আজকে আমাদের মতো খুশি বোধ হয় কেউ হয়নি।
নীরা অন্যান্যদিন হলে এই কথাগুলো শুনে খুব খুশি হতো। আজও খুশি হয়েছে। তবে ততোটা বেশি নয়। তবুও সে মুখে মিষ্টি হাসি ধরে রাখলো। রেহান আর তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
-তোমারা দুইজনও তো আমার ভাই বোন। এরকম পরিস্থিতি না হলেও ভাই বোনই থাকতে।
রেহান মিলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
-শুনছো টিলা, ভাবি তো আমাদের হয়ে যাবে। তোমাকে ভাবির ভাগ দিবো না। অনেকবছর তো ভাবির আদর খেয়েছো এবার আমার পালা।
মিলা কপট রাগ দেখালো রেহানকে। আজ সে খুব খুশি সেজন্য আর ঝগড়া করলো না।
বাইরে থেকে ডাক পরলো নীরার যাওয়ার জন্য। রেহান আর তিতলি আগে গেল। মিলা নীরার সাথে গেল। নীরা গিয়ে সবাইকে সালাম দিলো। সবাই উওর নিলো।
নীরার হাটা দেখেই তিশা আর আসমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তিশা আসমার হাত ধরলো। আসমাও মেয়ের দিকে তাকালেন। এতোক্ষনে নীরার সমস্যা টা বুঝেছে তারা। তিশা রাগে ক্ষোভে ফোসফোস করতে লাগলো। এইরকম ডিজেবল মেয়ের জন্য তাকে রিজেক্ট করা হলো। সে মানতে পারলো না। কি কম আছে তার!
রেজা সাহেব নীরাকে পাশে বসতে বললেন। নীরা বসলে তিনি বললেন।
-কেমন আছো মা?
-আলহামদুলিল্লাহ আংকেল আপনি ভালো আছেন?
-আমিও আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে দেখে আমার কি যে ভালো লাগছে বলে বোঝানো যাবে না মা। আমি তোমার ব্যপারে সবই শুনেছি। তোমার কাজগুলো সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এরকম কাউকেই আমি শিহাবের জন্য খুঁজছিলাম আর আমার ছেলে নিজেই তোমাকে খুঁজে নিলো।
-দোয়া রাখবেন আংকেল।
-অবশ্যই। এররপর থেকে তুমিও আমার আরেকটা মেয়ে। বাবা বলার অভ্যাস করবে ঠিক আছে?
নীরা কি বলবে বুঝলো না। শুধু মাথা নাড়ালো। শিহাব একধ্যানে নীরার দিকে তাকিয়েই আছে। চোখের পলক ফেলছে না। নীরার অস্বস্তি লাগছে। এতোগুলো মানুষের সামনে এভাবে তাকিয়ে থাকলে কার না অস্বস্তি লাগবে! রুমা শিহাবের তাকানো দেখে সাইফকে গুতো দিয়ে দেখালো। সাইফও তাকালো। রুমাকে বললো।
-আমি খুব খুশি রুমা ফাইনালি আমাদের নীরার জন্য এমন একজন ভালো মানুষ পেয়েছি।
রুমা বললো।
-আমিও খুব খুশি।
রেজা সাহেব জহুরার কাছ থেকে বালা নিয়ে নীরার হাতে পরিয়ে দিলেন। জহুরা ও নীরার সাথে কথা বললো। জহুরারও নীরাকে খুব ভালো লেগেছে। সবাই একসাখে খাওয়াদাওয়া শুরু করেছে। শিহাব একটু দূরে গিয়ে রুমাকে ডাকলো। রুমা কাজ রেখেই শিহাবের কাছে আসলো।
-নীরার সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দাও না।
রুমা মিটিমিটি হেসে বললো।
-ওহ্হো শিহাব ভাই একেবারে কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে গেছেন যে!
-রুমা প্লিজ!
রুমা হেসে বললো।
-আচ্ছা একটু অপেক্ষা করুন।
নীরা মালিহার সাথে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছিলো। তখন রুমা গিয়ে বললো।
-নীরা তোর ফোন বাজছে গিয়ে রিসিভ কর। এদিকটা আমি দেখছি।
নীরা ঠিক আছে বলে রুমে চলে গেল। যাওয়ার পর দেখলো শিহাব বসে আছে তার ঘরে। নীরা ভ্রু কুঁচকালো। তবে পাওা দিলো না শিহাবকে সে ড্রেসিংটেবিল থেকে ফোন নিয়ে দেখলো কারো ফোন আসেনি। তারমানে রুমা মিথ্যে বলেছে ভেবেই নীরার মাথা গরম হয়ে গেল। দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজে নীরা পেছন ফিরলো। শিহাবও দরজার দিকে তাকালো। তারপর হাসলো। রুমাই দরজা লাগিয়ে দিয়ে গেছে। শিহাব জানে সেটা সেজন্যই হাসলো। নীরার এখন প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তবুও সে শান্ত রইলো। দরজার কাছে গিয়ে খোলার চেষ্টা করলো তবে পারলো না।
-লাভ নেই। আমি রুমাকে ফোন করলেই ও দরজা খুলে দিবে তার আগে না।
শিহাবের কথা শুনে নীরা শিহাবের দিকে সরু চোখে তাকালো। শিহাব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে এগিয়ে এসে নীরার হাত ধরলো নীরাকে নিয়ে বসালো। তারপর নিজে হাটু মুড়ে ফ্লোরে বসলো। পকেট থেকে একটা রিং এর বক্স বের করে নীরার বাম হাতের অনামিকায় রিং পরিয়ে দিলো। নীরা কিছুই বলতে পারলো না শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। হাতের আংটির দিকে তাকালে দেখতে পেলো সুন্দর একটা ইউনিক ডিজাইনের আংটি পরিয়েছে শিহাব। শিহাব নীরার হাত ধরে আংটির দিকে ইশারা করে বললো।
-এটা অফিশিয়াল সাইন! তুমি অফিশিয়ালি অর্ধেক আমার। তুমি আমার জন্য কি তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না।
নীরা চুপচাপ দেখছে শুধু।
-কিছু বলো? থাক কিছু বলতে হবে না। নীরা একটা কথা বলতে চাই। স্পষ্ট করেই বলি। আমি আজই তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এই খেয়ালটা আগে আসেনি। এখানে আসার পর তোমাকে দেখতে পেয়ে ভাবনাটা মাথায় এসেছে।
এবার নীরা হতভম্ব হয়ে শিহাবের দিকে তাকালো। শিহাব নীরার হাতে আলতো চাপ দিয়ে বললো।
-দেখো আমি নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। প্লিজ সম্মতি দাও। নইলে আমি শান্তি পাবো না। শুধু মনে হবে আমি তোমাকে পুরোপুরি ভাবে পেলাম না এখনো। আরো অপেক্ষা করা সম্ভব না।
নীরা শিহাবের হাতের মাঝ থেকে নিজের হাত সরিয়ে ফেললো।
-এতদূর পর্যন্ত কেউ আমার মতামত জানতে চায়নি। আজ এখন আপনিও চাইলেন না। শুধু নিজেরটা বলে গেলেন।
নীরার কথায় শিহাবের একটু খারাপ লাগলো তবে সে পাওা দিলো না। হয়তো নীরার কাছে এসব স্বার্থপরতা লাগছে। কিন্তু শিহাবের করার কিছু নেই। আর এক মুহূর্তও নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না। তাদের বিয়ে তো হবেই। তবে আজ হলে ক্ষতি কি!
-দেখো আই প্রমিস আজ বিয়ে পড়ানোর পরে যতোদিন না পর্যন্ত তোমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিয়ে যাচ্ছি, ততোদিন পর্যন্ত আমি তোমার থেকে দূরে থাকবো। ফোনকলও করবো না। আই প্রমিস ইউ তুমি এখানেই থাকো আমার সমস্যা নেই। কিন্তু না করবে না।
-আপনি আমার কথা কি আসলেই ভাবেন? আমার তো মনে হয় না। আপনি আমার মতামতও জানতে চান না শুধু অনুরোধ করেন। একবারও জানতে চান না আমি কি চাই। এটাকে আমি কি বলবো? আপনিই বলুন।
শিহাবের এবার রাগ হচ্ছে। সে তো কোনো অন্যায় আবদার করছে না তার কাছে এটাই মনে হচ্ছে। তবে নীরার কথাগুলোও যৌক্তিক। শিহাব হার মেনে নিলো।
-ওকে ফাইন। তবে খুব দ্রুতই আমাদের বিয়ে হবে জেনে রাখো। আর হ্যা আমি সত্যিই খুব সেলফিশ।
বলেই শিহাব উঠে গেল। ফোন বের করে রুমাকে কল করলো রুমা তৎক্ষনাৎ এসে দরজা খুলে দিলো। শিহাব কথা না বলে বেড়িয়ে গেল। রুমা ঘরে এসে দেখলো নীরা বসে আছে। সে কারন জানতে চাইলো এভাবে বসে থাকার। তার আগেই তার চোখ নীরার হাতের আংটির দিকে পরলো। সে চেঁচিয়ে উঠলো।
-ও মাই গড! নীরা এটা কি? শিহাব ভাই দিয়েছে। হাউ রোমান্টিক ইয়ার।
নীরা বিরক্ত হলো খুব।
কথাবার্তা ঠিক করে গল্পগুজব শেষ হলে বিদায় নেওয়ার পালা আসলো। সবাই যাওয়ার সময় আরেকবার কুশল বিনিময় করলো। তিশা নীরার কাছে আসলো। এই প্রথম কথা বললো।
-তুমি খুব লাকি। শিহাবকে পাচ্ছো। সবার এমন ভাগ্য হয় না। আমাকেই দেখো!
নীরা তিশার কথার মানে বুঝতে পারলো না। তবুও সৌজন্যতার খাতিরে হাসলো। তিশা নীরার থেকে কন্ট্যাক্ট নাম্বার নিয়ে রাখলো। বললো।
-তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। আমাদের পরবর্তীতে অনেক কথা হবে কেমন?
-ইনশাআল্লাহ!
-আচ্ছা আসি ভালো থেকো।
রেহান আর তিতলিও বারবার নীরার থেকে বিদায় নিলো। নূরজাহান বেগম খুব খুশি হয়েছেন। এমন ছেলের সাথে নীরার বিয়ে হবে বলে। তিনি কখনো ভাবেননি এমনটা। তবে নাতনির জন্য এখন আর কোনো দুঃশ্চিন্তা রইলো না। সাইফ এগিয়ে এসে শিহাবকে জড়িয়ে ধরলো। শিহাব সাইফকে জড়িয়ে ধরেই নীরার দিকে তাকালো। শিহাবের তাকানো দেখে নীরাও তাকিয়ে রইলো। শিহাব বেশিক্ষন তাকালো না। সবাই কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিলো। শিহাব পেছনে ছিলো। নীরা দাড়িয়ে আছে। শিহাব এগিয়ে গেল।
-যতোই চেষ্টা করো। বিয়ে তোমার আমাকেই করতে হবে। মাইন্ড ইট!
-আপনার মনে হয় না আপনি সবসময় দুই লাইন বেশি বোঝেন?
-একদম না। আমার কথাটা মাথায় রেখো!
বলেই শিহাব চলে গেল। নীরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলো।
—চলবে!