অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-ত্রিশ
নাফিসা নীলয়া!
শিহাব নীরার সাথে কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছে যে সে নিজেই নীরার ফোন আছাড় মেরে ভেঙে এসেছে। কথাটা মনে পরতেই সে নীরাকে প্রশ্ন করলো।
-এক মিনিট তোমার ফোন কি অক্ষত অবস্থায় আছে? আমি না আছাড় মেরে ভেঙে আসলাম। কথা বলছো কি করে?
শিহাবের কথা শুনে নীরার মনে হলো শিহাবকে সামনে পেলে সে তার ভাঙা ফোনটা দিয়ে শিহাবের মাথায় বাড়ি মারুক। কওবড় সাহস! ফোন ভেঙে আবার জিজ্ঞেস করছে। নীরার শিহাবকে আর সহ্য হচ্ছে না। সে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
-পুরোপুরি ভাঙেনি। তবে একেবারে বিদ্ধস্ত হয়ে গেছে। কুড়িয়ে নিয়ে জোড়া লাগিয়েছি। আমি ঠিক করেছি আমি তবুও এটাই ইউজ করবো। আমার ডিসিশন ফাইনাল। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবো ঘাড়ত্যাড়া শিহাব আমার ফোন ভেঙেছে। আর আমি এটাই ইউজ করবো। যতো যাই ই হোক।
নীরার কথাবার্তা শুনে শিহাব হুহা করে হেসে ফেললো। নীরা তো এভাবে কথাই বলে না। আজ বললো বলে শিহাবের খুব হাসি পাচ্ছে। সে বললো।
-নট ফেয়ার। শিহাব রেজার বউ হয়ে তুমি কিনা ভাঙা ফোন ইউজ করবে! এটা মানাই যায় না। কি যে বলো না তুমি নীরা।
-চুপ থাকো। একদম বউ বউ করবে না। তোমার ব্যবহার আমি ভুলিনি। ফোন রাখো। আর বিদায় হও।
শিহাবের মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। তবুও সে হেসে বললো।
-স্যরি বলেছি তো। ফরগিভ মি।
-ওই ব্যবহার আমি ইহজীবনে ভুলবো না। সারাজীবন তোমাকে এই কথা শুনতে হবে।
নীরার এমন কথা শুনে শিহাব মিটিমিটি হেসে বললো।
-তারমানে তুমি স্বীকার করছো যে তোমার সারাটাজীবন আমার সাথেই কাটবে।
কিছু কিছু মানুষ আছে যারা কথার প্যাচে কি করে ফেলতে হয় তা খুব ভালোভাবে জানে। শিহাবও ওই ক্যাটাগরির মানুষ। নীরা কপাল চাপড়ালো।
-কথার প্যাচে কি করে ফেলতে হয় তা কেউ তোমার থেকে শিখুক।
-তুমিও শিখতে পারো। আমি যেমন ব্যবসার লাভ ক্ষতি বিনিয়োগে পটু তেমনই কথার প্যাচে ফেলতেও পটু। তুমি কি লাকি তাই না? একসাথে কতো প্যাকেজ আমার মধ্যে।
নীরার মাথা ঘুরছে এই ই কি সেই শিহাব যে সারাক্ষণ মুডি হয়ে থাকতো। কম কথা বলতো। সব মেপে মেপে করতো। নীরা হতাশ কন্ঠে বললো।
-তুমি তোমার প্রথম সওাতেই ভালো ছিলে। আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। আমি কি এখন ঘুমাতে পারি?
-প্রশ্ন করছো কেন? অফ-কোর্স ঘুমাবে। যাও ঘুমাও।
শিহাব কথাটা বলার সাথে সাথে নীরা ফোন কেটে দিলো। এবং পাওয়ার বাটনও অফ করে দিলো। শিহাবকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। আবার ফোন করে বসতে পারে। শিহাব একা একাই হাসতে থাকলো। এতোক্ষনের অশান্তি গায়েব হয়ে গেল নীরার সাথে কথা বলে। শিহাব মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হয় সে ও কারো জন্য এতোটা পাগল হলো! আগে খুব গর্ব করে বলতো প্রেম ভালোবাসা বিয়ে এসব থেকে সে দূরে থাকবে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। সব দোষ নীরার। অবশ্য নীরা তার জীবনে এসেছে বলে লাভটা তারই হয়েছে। এসব ভেবেই তার শান্তি লাগছে। সে একরাশ শান্তি নিয়ে ঘুমাতে গেল।
মিলা একটা সুন্দর রানীদের মতো পোশাক পরেছে। সাথে সুন্দর রাজকীয় গহনা। সে ঘুরে ঘুরে নিজেকে আয়নায় দেখছে। আজ তার বিয়ে তার রাজার সাথে। নীরাসহ সকলে তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। তার খুব আনন্দ হচ্ছে। নিজেকে বউরূপে দেখতে সে সবসময় চাইতো। আর আজ সেই দিন। নীরা তার হাত ধরে আসরে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়েই মিলা জীবনের সবথেকে বড় চমকটা খেলো। আর তা হলো। বরের জায়গায় রাজার বেশে রেহান বসে আছে। তাকে দেখে উঠে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো রেহান। মিলা আঁতকে উঠলো। ও মাই গড! বরের জায়গায় রেহান কেন। এই বজ্জাতটা এখানে কেন। আল্লাহ। সে তার আপার দিকে তাকালো। নীরা চোখে হাসলো। মিলা চারদিকে তাকালো। দেখতে পেলো তার বাবা,মা দাদীসহ শিহাব,তিতলি,রুমা,সাইফ সবাই হাসছে। আশ্চর্য সে কি জোকার নাকি যে সবাই তাকে নিয়ে এরকম হাসাহাসি করছে। সে আবার সামনে ফিরে রেহানের দিকে তাকালো। দেখতে পেলো রেহান দাঁত কেলিয়ে হেসে বলছে।
-কি টিলা বেয়াইন। খুব তো ভাব ছিলো তোমার। সেই তো আমার গলাতেই ঝুঁলতে হলো। কি কেমন লাগে এখন?
মিলা চারিদিকে তাকালো। দেখলো রেহানের কথায় সবাই হাসাহাসি করছে। তার বন্ধুরাও তাকে নিয়ে মজা উড়াচ্ছে।
স্বপ্নে এসব দেখেই মিলা আঁতকে উঠে না বলে চিৎকার করে উঠে বসলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো নীরা বসে আছে। নীরা বোনের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি পানি দিলো মিলাকে। মিলা পানি খেয়ে নিজেকে ধাতস্ত করলো। নীরা জিজ্ঞেস করলো।
-কি হয়েছে মিলা? খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস? ফজরের আজান হচ্ছে এজন্য ডাকতে এসেছিলাম। এসেই দেখি তুই ঘুমের মাঝে ছটফট করছিস। কতোবার বলেছি ঘুমানোর আগে আয়তুল কুরসি পড়ে ঘুমাবি। তা তো শুনিস না। কি দেখেছিস?
মিলা ভাবনায় পরে গেল। হায়হায় এখন তো ভোর। আর ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। এটা যদি সত্যি হয় তাহলে সে মুখ দেখাবে কি করে। ও আল্লাহ! এখনই নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলতে হবে এই স্বপ্নটা যেনো সত্যি না হয়। ভেবেই সে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে নীরাকে বললো।
-আপা নামাজের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে। চলো নামাজ পড়ি। ভয়াবহ স্বপ্ন কাউকে বলতে নেই। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি ওজু করতে গেলাম।
মিলার এমন ভাব দেখে নীরা অবাক হয়ে গেল। তবুও কিছু বললো না। পাশাপাশি জায়নামাজ বিছিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। মিলা ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এলে দুই-বোন একসাথে নামাজ আদায় করলো। মিলা নামাজ পড়তে গিয়ে কেন যেনো মন দিয়ে ফরিয়াদ করে বলতে পারলো না স্বপ্নটা যেনো সত্যি না হয়। তবুও বহুকষ্টে সে বললো। নামাজ শেষে নীরা মিলার কপালে হাত দিয়ে চেক করলো। তারপর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলো। মিলা বলে উঠলো।
-তুমি বসো আপা তোমার কোলে মাথা দিয়ে একটু ঘুমাই।
নীরা হেসে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। মিলা নীরার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে ঘুমাতে বিড়বিড় করে বললো।
-ইয়া আল্লাহ স্বপ্নটা যেনো সত্যি না হয়। প্লিজ যেনো না হয়।
বলতে বলতেই সে ঘুমিয়ে পরলো।
তিতলি আজ ঠিক করেছে কলেজে যাবে না। গতকালও যায়নি। এই নিয়ে শিহাব আর রেহান দুজনেই তাকে বকেছে কিন্তু তবুও সে যায়নি। তার কলেজে যেতে একটুও ভালো লাগে না। সে সকাল সকাল গুনগুন করতে করতে সুন্দর করে সাজলো। সাজতে তার ভালো লাগে। খুবই ভালো লাগে। সে নিজেকে বারবার আয়নায় দেখছে। জহুরা তিতলেকে ডাকতে এসে ওকে এভাবে ঘুরতে দেখে হেসে ফেললেন। তিতলি পিছন ঘুরে জহুরার হাসি দেখে বললো।
-হোয়াট হ্যাপেন্ড খালা হাসো কেন?
জহুরা হাসতে হাসতেই বললেন।
-তুই যে কলেজে না গিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে ঢঙ করছিস তোর দুই ভাই জানে?
তিতলি এই কথা শুনে ভেঙ্চি কাটলো। বললো।
-হাহ্ ওদের কি আমি ভয় পাই নাকি? উল্টো ওরাই আমাকে ভয় পায়।
তিতলির কথা শুনে জহুরা আরো জোরে হেসে ফেললেন। তারা কথা বলতে বলতেই তিতলির বারান্দা ওভারটেক করে ঘরে পরপর দুইটা ইটের টুকরোর ঢিল এসে পরলো। দ্বিতীয় বারের ঢিলে তিতলির বারান্দার কাঁচে জোরে শব্দ হলো। এতে জহুরা আর তিতলি দুজনেই আঁতকে উঠলো।
রেহান আর তিতলির ঘর পাশাপাশি। দুজনের ঘরের বারান্দা এটাচ্ড। এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দাতে যাওয়া যায় সহজেই। রেহান সবে ঘুম থেকে উঠেই বারান্দাতে এসেছিলো। তিতলির বারান্দাতে ঢিল ছোড়ার কারনে আওয়াজ হলে তার কানেও আসলো। সে চোখ কঁচলে তাড়াতাড়ি তিতলির ঘরে আসলো। এসেই জিজ্ঞেস করলো।
-শব্দ হলো কিসের?
রেহানের প্রশ্ন শুনে জহুরা ঘাবড়ে বলে ফেললেন।
-রেহান কে যেনো তিতলির ঘরে ঢিল ছুড়েছে। হায় আল্লাহ আমার তিতলির ওপর কার নজর পরলো গো!
জহুরার বিলাপ শুনে তিতলি বিরক্ত হলো খুব। রেহান তিতলির দিকে তাকিয়ে আশেপাশে ইটের টুকরো খুঁজতে থাকলো। খুঁজতে খুঁজতে সে বললো।
-এতো সিকিউরিটির ভেতরে কার এতো সাহস হলো ঢিল ছোড়ার।
রেহান চিন্তিত স্বরে বলতে বলতে ইটের টুকরো খুঁজে পেলো। তাদের বাড়ির এরিয়া অনেক বড়। রেজা সাহেবের বাবার তৈরি করা সুন্দর আলিশান তিনতলা বাড়ি। কিভাবে ঢিল ছোড়া পসিবল সেটাই রেহানের মাথায় আসছে না। সে ইটের টুকরোতে পেঁচানো কাগজ পেলো। সেটা খুলে পড়তেই সে আগুন দৃষ্টিতে তিতলির দিকে তাকালো। তিতলি রেহানের এমন দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে গেল। সে ভয় পায় না রেহানকে। তবে আজ রেহানের দৃষ্টি দেখে সত্যিই ভয় পেলো। তিতলি ভয়ে ভয়ে রেহানকে জিজ্ঞেস করলো।
-কি হয়েছে ছোট ভাই? এনিথিং রঙ?
রেহান রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে বললো।
-রঙ? পুরোটাই রঙ এটা কি? বল!
রেহান তিতলির হাতে চিরকুটটা দিলো। তিতলি হাতে নিয়ে পড়ে যা দেখলো তাতে সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না। চিরকুটে লেখা আছে।
—দুইদিন যাবত কলেজে যাও না কেন তুমি?তোমাকে না দেখলে আমার কতো কষ্ট হয় সেটা কি জানো না? অবশ্যই জানো। তবুও জেনেশুনে এতো কষ্ট কি করে দিচ্ছো তুমি! হোয়াই! দেখো তুমি যদি দেখা না দাও তাহলে কিন্তু আমি কিছু একটা করে ফেলবো। হয়তো তোমাকেই উঠিয়ে নিয়ে যাবো।
তিতলির আশ্চর্যজনক দৃষ্টি দেখে জহুরা চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়লেন। চিরকুট পড়েই তিনি আবারও বিলাপ শুরু করলেন।
-এ কি হলো রে তিতলি। কে এরকম হুমকি দেয়? হায় হায়। তুই কি কাউকে পছন্দ করিস? এরকম চিরকুট লেখা কেন তাহলে?
তিতলি এরকম সিচুয়েশনে ভয়ে ভয়ে জহুরাকে বললো।
-বিশ্বাস করো খালা। আই সোয়্যার আমি কিছু জানি না। আমি কিছু করিনি। বিশ্বাস করো।
জহুরাকে বলে তিতলি রেহানের দিকে তাকালো। রেহান পারছে না তিতলিকে চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিতে। সে আর কিছু না বলে বারান্দা থেকে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো বাইরে কেউ আছে কিনা। তাদের বাড়িটা বড় হওয়ায় অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে। তাছাড়া অনেক সিকিউরিটি রয়েছে। শিহাব নিজেই আরো কঠোর সিকিউরিটি করেছে। তাহলে কিভাবে সম্ভব। এসব ভাবতে ভাবতেই রেহানের নজর গেল বাড়ির বাইরে উওরদিকে। প্রাচীরের বাইরের ওদিকটা বাড়ি থেকে কাছেই। স্পেশালি তিতলির বারান্দা থেকে কাছেই। ওখান থেকে চেষ্টা করলে ঢিল ছোড়া সম্ভব। রেহান অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে চারদিকে দেখলো। তার একটু দূরেই হুডি পরা দুইজন বাইকে বসে আছে। সেটা দেখেই রেহানের মাথা গরম হয়ে গেল। তবুও সে নিজেকে শান্ত রাখলো। এখন চেঁচালে ওরা ঠিক টের পেয়ে যাবে। আস্তে আস্তে গিয়ে ধরতে হবে ভেবেই সে আরেকদফা তিতলির দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেল। তিতলি চুপসে গিয়ে বসে পরলো। জহুরা হায় হুতাশ করছেনই।
বাড়ির বাইরে যেতে যেতে সে বাগানের দিকে তাড়াতাড়ি গেল। শিহাব সেখানে এক্সারসাইজ করছিলো। রেহান তাড়াতাড়ি গিয়ে শিহাবকে ডাকলো।
-ভাই,ভাই তিতলির বারান্দাতে কারা যেনো হুমকিভরা চিরকুটের ঢিল ছুড়েছে। বাইরেই আছে জলদি চলো।
রেহানের কথা শুনে শিহাব হতভম্ব হয়ে গেল। কিভাবে সম্ভব সে ভেবেই পেলো না। শিহাবের হতভম্ব ভাব দেখে রেহান শিহাবকে ঝাঁকিয়ে বললো।
-চলো তাড়াতাড়ি চলো।
শিহাব নিজের হতভম্ব ভাব কাটিয়ে রেহানের আগেই ছুটলো। রেহানও পিছু পিছু ছুটলো। শিহাব আবার থেমে গেলে রেহানও থেমে গেল। শিহাব থেমে সিকিউরিটিদের ফোন করে এলার্ট করে দিলো। তারপর রেহানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ধমকে বললো।
-আমি থেমেছি বলেই কি তোর থামতে হবে? জলদি যা ডাফার।
রেহান থতমত খেয়ে আবার দৌড়ানো শুরু করলো। শিহাব আর রেহানসহ সবাই বাইরে বেড়িয়েছে।
নির্বান আর শিমুল বাইকে বসে ছিলো। শিমুলই বুদ্ধি করে নির্বানকে একটু সাহসী সাজানোর জন্য,আর তিতলিকে ইমপ্রেস করার জন্য ওরকম চিরকুট লিখেছে। নির্বান যেরকম ডেয়ারিং ছেলে সেরকমই লিখতে চেয়েছে। আর নির্বান ও তিতলিকে দেখার জন্য এই কাজ করেছে। নির্বান শিমুলকে বললো।
-এখনো বের হলো না বাইরে দেখেছিস? অথচ কতো আগে ঢিল ছুড়েছিলাম এখনো পায়নি নাকি?
শিমুল দেখতে পেলো তিতলির ভাইরা এদিকেই আসছে। সে জলদি বাইক স্টার্ট করলো। যতোটুকু সম্ভব স্পিড বাড়িয়ে দিলো। হুট করে বাইক স্টার্ট দেওয়াতে নির্বান প্রায় পরে যেতে ধরলো। সে শিমুলকে ধমকে বললো।
-হচ্ছেটা কি? এখনো তো তিতলিকে দেখা হলো না।
শিমুলের ইচ্ছে হলো নির্বানকে সে এখানেই মরার জন্য ফেলে যাক। সে উল্টো ধমকে বললো।
-শালা ওদিক তাকা। দেখ তোর শালারা আসছে তোকে মারার জন্য।
নির্বান ওদিকে তাকিয়ে দেখলো। দেখেই তার রক্ত ছলকে উঠলো। সে এবার শিমুলকে বললো
-জলদি যা আরো স্পিড বাড়া ভুল হয়েছে এসে। সব তোর জন্য।
শিমুল ধমকে বললো।
-সর্বোচ্চ স্পিডই দিয়েছি। তোর ঘ্যানঘ্যানানির জন্যই তো আমি এই বুদ্ধি বের করেছি। তুই ই তো মরে যাচ্ছিলি।
নির্বান শিমুলের কথা আর পাওা না দিয়ে,পেছন ফিরে দেখলো অনেকটা দূরত্বে তারা চলে এসেছে। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো।
-ভাগ্যিস হুডি আর মুখে মাস্ক পরে এসেছি।
শিহাবরা সবাই আসতে আসতে নির্বান আর শিমুল চলে গেল। শিমুল খুব ভালো বাইক রেসার। সেজন্য তাড়াতাড়ি যেতে পেরেছে।
শিহাব এবার রাগান্বিত দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকালো।
-এতো জন থাকতে আমার বোনের ঘরে বাইরের মানুষ ঢিল ছুড়ে কিভাবে? সবাইকে ফায়ার্ড করলাম।
তারপর রেহানের উদ্দেশ্যে বললো।
– আশেপাশের সব সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে বাইকের নাম্বার প্লেট জোগাড় করবি।
-ওকে ভাই।
রাগে শিহাবের মাথা ঠিক নেই। সে রাগে কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে ঢুকলো। তার পেছন পেছন রেহানও ঢুকলো। শিহাব বাড়িতে ঢুকেই তিতলিকে ডাকতে শুরু করলো। তিতলি ভয়ে ভয়ে হাজির হলো। সাথে জহুরা ছিলেন। তিনি আগুনে ঘি ঢালার মতো করে চিরকুটটা শিহাবের হাতে দিয়ে দিলেন।
চিরকুটটা পড়ে শিহাব ও রাগান্বিত দৃষ্টিতে তিতলির দিকে তাকালো। এতোক্ষন রেহানের রাগান্বিত দৃষ্টিই তিতলি হজম করতে পারছিলো না। এখন আবার শিহাবের দৃষ্টি। তিতলি কেঁদেই ফেললো।
শিহাব যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। এই এক সমস্যা অতি আদরের বোনকে কখনো ফুলের টোকাও দেওয়া হয়নি। তিতলি খুব আদরের। দুই ভাইকে সে কখনোই ভয় পায় না। তবে আজ দুই ভাইয়ের রাগ দেখে তার কষ্ট লাগলো। সে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
-সত্যিই আমি কিছু করিনি। আমি তো চিনিই না কাউকে।
রেহান হঠাত মনে পরার ভঙ্গিতে বললো।
-তোর কলেজের সামনে একটা ছেলেকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ধমকি টমকি দিয়ে সব ডিটেইলস নিয়েছিলাম না? ও নয় তো?
এতোক্ষন তিতলির মাথাতেও এই বিষয়টা আসেনি। বিষয়টা মাথায় আসতেই তার মনে হলো ওই ছেলেটা হতেই পারে। তবে কষ্টও লাগলো রেহান যেহেতু বিষয়টা জানে তারপরও এমন করলো। খুব অভিমান হলো তিতলির। শিহাব এবার রেহানের দিকে রেগে গিয়ে তাকালো।
-কোন ছেলে? কার এতো বড় সাহস? আর রুমার বিয়েতে এতো বড় ইন্সিডেন্টের পরেও তোরা আমাকে এই বিষয়টা জানাসনি কেন?
শিহাবের রাগ দেখে তিতলি আর রেহান দুজনেই আমতা আমতা করলো। শেষে রেহান বললো।
-ওর কলেজের সামনে একটা ছেলে দাড়িয়ে থাকতো। তো সেদিন আমি ছেলেটাকে ধমকে টমকে দিয়ে এসেছি। দেখে তো মনে হয়েছিলো ও আর কলেজের সামনেই দাড়ানোরই সাহস পাবে না। কিন্তু আজকের কাজটা কে করতে পারে!
শিহাব চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
-তিতলি সত্যি করে বল চিনিস কিনা। চিরকুটের লেখার ধরণটাই তো কেমন যেনো। সত্যি করে বল।
শিহাবের কথা শুনে তিতলি এবার আরো শব্দ করে কেঁদে ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে রেহান আর শিহাবকে বললো।
-আমাকে বিশ্বাস করিস না? ওকে করতে হবে না। আমি তো বলেছিই যে আমি কিছু জানি না। তবুও আমাকে সন্দেহ করছিস।
বলেই তিতলি নিজের ঘরে চলে গেল। শিহাব নিজেকে শান্ত করলো তিতলি কান্না করে চলে গেল বলে তার নিজেরই খারাপ লাগছে। রেহান আর জহুরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে সব দেখছে। শিহাব জহুরাকে বললো।
-তিতলির কাছে যাও।
তারপর রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো।
-ইউনিভার্সিটি নেই এখনো দাড়িয়ে আছিস কেন?
রেহান শিহাবের কথা শুনে বললো।
-হ্যা আচ্ছা আমি যাই ফ্রেশ হই তারপর যাচ্ছি।
-হ্যা যা। এবার এমন ব্যবস্থা করবো যেনো বাড়ির ধারেকাছেও ওরকম লাফাঙ্গা না আসতে পারে।
রেহান শিহাবের কথা শুনে চলে গেল। মনে মনে ভাবলো ওই ছেলেটার খোঁজ নিবে। আবার ভাবলো বিনা কারনে বিরক্ত করা কি ঠিক হবে! কোনো প্রমান তো নেই। তবুও দেখতে হচ্ছে বিষয়টা।
সন্ধ্যার দিকে ঘটলো আরেক ঘটনা। জহুরা রান্নাঘরে রান্না করতে গিয়েছিলেন। শিহাব, রেহান কেউই বাড়িতে ছিলো না। তিতলি এই ফাকে কাউকে কিছু না বলে,দারোয়ানকে ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল। যেহেতু তার বাড়ির বাইরে যাওয়া একদম নিষিদ্ধ না তাই কোনো সমস্যা হলো না।
নীরা আর মিলা সন্ধ্যার পর মালিহার সাথে বসে পাকোড়া খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। তখনই বেল বেজে উঠলো নীরা যেতে চাইলে মালিহা বললেন।
-আমিই যাচ্ছি তোর যেতে হবে না।
মালিহার কথা শুনে নীরা আর গেল না।
মালিহা দরজা খুলে দেখলেন তিতলি দাড়িয়ে আছে। তিতলির চোখ মুখ ফোলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কেঁদেছে। মালিহা তিতলিকে এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তিনি তাড়াতাড়ি তিতলিকে ভেতরে আসতে বললেন।
-একি অবস্থা তোমার মা? সন্ধ্যার পর একা বেড়িয়েছো কেন? আচ্ছা ভেতরে এসো।
মালিহা তিতলির হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন। তিতলিকে বসিয়ে দিয়ে তিনি মিলা আর নীরাকে ডাকলেন। মালিহার আওয়াজ শুনে নীরা আর মিলা দুজনেই ড্রয়িংরুমে আসলো। তিতলিকে এই অবস্থায় দেখে দুজনেই খুব অবাক হয়ে গেল।
তিতলি নীরাকে দেখামাএই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। নীরা হতভম্ব হয়ে গেল। তিতলি ইতিমধ্যে নীরাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। মালিহা আর মিলাও তিতলির কান্না দেখে ভয় পেয়ে গেল। তিতলি হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকলো। নীরা তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
-কাঁদছো কেন তিতলি? কেঁদো না লক্ষী। আপু কিন্তু কষ্ট পাচ্ছি তোমার কান্না দেখে।
নীরা তিতলিকে ছাড়িয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো।
-কি হয়েছে না বললে আপু কিভাবে সল্ভ করবো? আর তোমার কিন্তু সন্ধ্যার পর একদমই একা আসা উচিত হয়নি।
মালিহা তিতলিকে পানি এনে দিলেন। নীরা তিতলিকে পানি খাইয়ে দিলো। মিলা বলে উঠলো।
-ভাইয়া আর রেহান নিশ্চয়ই জানে না তুমি এসেছো?
মিলার কথা শুনে তিতলি চুপ করে রইলো। মিলা আবার জিজ্ঞেস করলে তিতলি নাক টানতে টানতে বললো।
-কেউই জানে না।
এতে সবাই অবাক হয়ে গেল। নীরা বললো।
-এভাবে না বলে আসাটা উচিত হয়নি তিতলি। আমি কিন্তু এটা তোমার থেকে আশা করিনি।
তিতলি চুপ করে থাকলো। মালিহা নীরাকে ইশারায় বললেন তিতলিকে ঘরে নিয়ে যেতে। নীরা তিতলিকে ঘরে নিয়ে গেল। মিলাও সাথে গেল।
জহুরা তিতলিকে সারা বাড়ি খুঁজে না পেয়ে ভয় পেয়ে গেলেন। সচরাচর তিতলি ওনাকে না বলে কোথাও যায় না। তিতলি একা কোথাও যায়ই না। গেলেও গাড়ি নিয়ে যায়। আজ সেটাও করেনি। তিতলি ফোনও ফেলে গেছে। জহুরা শিহাব আর রেহানকে বলার পর তারা দুই ভাই অস্থির হয়ে পরলো। তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসে গেল। রেহান বললো।
-ভাই আমাদের সকালবেলা তিতলির সাথে ওরকম আচরন করা ঠিক হয়নি।
-এখন আমি তোকে মারবো মাথামোটা। কথা না বলে চল ওকে খুঁজতে হবে। আর ওর ফ্রেন্ডসদেরও কল কর।
জহুরা চিন্তিত কন্ঠে বললেন।
-আমারই দোষ আমি কেন খেয়াল রাখলাম না। তাহলে তো আর এরকম হতো না।
শিহাব জহুরাকে কিছু বলতে চাইছিলো তখনই শিহাবের ফোন বেজে উঠলো। সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো নীরা তাকে কল করেছে। সে ফোন রিসিভ করে অস্থির কন্ঠে বললো।
-নীরা পরে কলব্যক করছি। তিতলি কাউকে কিছু না বলে কোথায় যেনো চলে গেছে। ওকে খুঁজতে যাচ্ছি।
-তিতলি আমাদের বাড়িতে এসেছে। চিন্তা করো না। ও ঠিক আছে।
কথাটা শুনে শিহাবের জান ফিরে এলো। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কাঁপা স্বরে বললো।
-ও ঠিক আছে তো? ওকে ফোনটা দাও।
– ও ঠিক আছে। তুমি এসো এখানে।
-দ্রুত আসছি।
বলেই শিহাব ফোন কেটে দিলো। তারপর জহুরা আর রেহানকে উদ্দেশ্য করে বললো।
-থ্যাংক গড। নীরাদের বাড়িতে গেছে ও। নীরা বললো ঠিক আছে।
শিহাবের কথা শুনে জহুরা আর রেহানও নিশ্চিন্ত হলো। জহুরা বললেন।
-তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় ওকে।
-হ্যা যাচ্ছি। বাবা ফেরেনি?
-না তোরা যা এবার। তোদের বাবাকে জানানোর দরকার নেই এসব। শুধু শুধু চিন্তা করবে।
জহুরার কথা শুনে শিহাব আর রেহান দুজনেই রওনা দিলো।
তিতলি রেগে নীরাকে বললো।
-আমি এসেছি তুমি খুশি নও ভাবি?
নীরা হতাশ হয়ে বললো।
-তুমি আসবে আর আমি খুশি না হয়ে পারি? কিন্তু তুমি ভুল করেছো কাউকে কিছু না বলে এসে। কখন বেড়িয়েছো বাড়ি থেকে?
-সন্ধ্যার আগে।
তিতলির কথা শুনে মিলা চেঁচিয়ে বললো।
-কিহ্! সন্ধ্যার আগে। তুমি তো আমাদের বাড়িতে এলেই সন্ধ্যার পরে। তাহলে এর আগে কোথায় ছিলে?
তিতলি মুখ গোঁমড়া করে বললো।
-পার্কে।
নীরা তিতলিকে নরম স্বরে বললো।
-চারদিকের খবর তো তুমি জানো তিতলি। আর আমি যতোটুকু জানি তুমি সন্ধ্যার পর একা কখনোই বেড়োওনি। আর বাড়ির সবাই কতো দুঃশ্চিন্তা করেছে বলো তো। তোমার প্রতি সত্যিই ডিসেপ্পয়েন্ট আমি।।
তিতলি নিজেও বুঝতে পারলো ঝোঁকের মাথায় সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলো সে। তিতলি এরপর নীরাকে আর মিলাকে সকালের সমস্ত ঘটনা খুলে বললো।
-আমাকে আমার ভাইয়েরা বিশ্বাস করেনি। কিভাবে আমার সাথে কথা বলেছে আর রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়েছে যদি তোমরা দেখতে।
সব শুনে নীরা বললো।
-তোমাকে তোমার ভাইয়েরা খুব বেশি ভালোবাসে তিতলি এজন্যই এমন করেছে। নইলে করতো না। ওদের দুঃশ্চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক তাই না?
-তাই বলে আমাকে বিশ্বাস করবে না?
তিতলির এই কথার পর মিলা বললো।
-রেহান যে একটা বজ্জাত এটা তো আমি জানি। কিন্তু ভাইয়া এমন করলো কিভাবে?
মিলার এই কথা শুনে নীরা চোখ গরম করে তাকালো। মিলা চুপসে গেল।
ওরা কথা বলতে বলতেই শিহাব আর রেহান নীরাদের বাড়িতে এসে পরলো। মালিহা ওদের বসতে বললেন। শিহাব বললো।
-আগে তিতলিকে দেখে নেই আন্টি। তারপর বসবো।
রেহানও তাই বললো।
-হ্যা তিতলি কই?
মালিহা ওদের উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে বললেন।
-নীরার ঘরে। ও বের হবে না বোধ হয় তোমরা যাও।
বলার সাথে সাথেই শিহাব আর রেহান দ্রুত নীরার ঘরে গেল। তিতলি তখন মুখ ফুলিয়ে বসে ছিলো। শিহাব আর রেহান তিতলিকে দেখে শান্তি পেলো। ওরা তিতলিকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তিতলি ওদের দেখামাএই মুখ ফিরিয়ে নিলো।
মিলা তৎক্ষনাৎ বললো।
-ভেরি ব্যাড ভাইয়া। রেহান যে একটা ব্যক্কল সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আপনি কেন এমন করলেন?
মিলার কথা শুনে রেহান ক্ষেপে গেল। সে এমনিতেই চিন্তায় ছিলো। মিলার কথা শুনে সে রেগে গেল।
-টিলার বাচ্চা চুপ করো। আমি ব্যক্কল না তুমি ব্যক্কল!
-আমার নাম মিলা নট টিলা। আর ব্যক্কল তুমি এটা সবাই জানি। সুতরাং আমাকে বলে লাভ হবে না।
এই মুহূর্তে মিলা আর রেহানের বাকবিতন্ডা দেখে নীরা বিরক্ত হয়ে ধমক দিলো।
– চুপ কর দুজন। বাচ্চা নাকি তোরা? আশ্চর্য! মিলা যা বাইরে যা। আর রেহান তুমিও যাও আগে শিহাব কথা বলুক।
নীরার ধমক শুনে মিলা আর রেহান দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ভেঙ্চি কেটে ঘরের বাইরে গেল। দুজনে একসাথে দরজা দিয়ে বাইরে বের হওয়ার সময় ধাক্কা খেলো। মিলা বিরক্ত হয়ে বললো।
-যাও আগে যাও।
রেহান মুখ ফিরিয়ে আগে গেল।
এদিকে শিহাব তিতলিকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। শেষে নীরার সামনেই কানে ধরে তিতলিকে স্যরি বললো।
-স্যরি স্যরি স্যরি আমার জান। ভাইকে কি মাফ করা যায় না?
নীরা শিহাবের কান্ড দেখে হেসে ফেললো। বললো
-আমি বাইরে যাই তোমরা কথা বলো।
নীরা তিতলির পাশে দাড়ানো ছিলো। চলে যেতে চাইলেই তিতলি নীরার হাত ধরে ফেললো। বললো।
-না তুমি যাবে না বসো।
তিতলি হাত না ছাড়ায় নীরা পাশে বসলো। শিহাব তিতলির সামনে আবার কানে ধরে বললো।
-স্যরি তো জান। ভাই আর কখনো এমন করবো না। আসলে তখন মাথা গরম হয়ে ছিলো। কে আমার কলিজাকে চিরকুট দিয়ে হুমকি দিবে! কার এতো সাহস এটা ভেবেই রাগে মাথা কাজ করছিলো না। তাই অমন রিয়্যাক্ট করে ফেলেছি। স্যরি।
তিতলি শিহাবকে পাওা না দিয়ে বললো।
-ভাবি তোমার হাজবেন্ডকে বলে দাও তারা আমাকে অবিশ্বাস করেছে। যেখানে আমি বারবার বলেছি আমি চিনি না। তবুও করেছে।
তিতলির মুখে এমন কথা শুনে নীরা থতমত খেয়ে গেল। সে কি বলবে এখন। শিহাব এবার তিতলিকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
-মুখ ফিরিয়ে রাখছিস কেন? ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলবি। ভাবি কি বলবে! সরাসরি আমাকে বলবি।
স্যরি বললাম তো। জীবনে এতো স্যরি আমি কাউকে বলিনি যতোটা তোর ভাবিকে আর তোকে বলেছি।
শেষের কথাটা শিহাব নীরার দিকে তাকিয়ে বললো। নীরা কথাটা শুনে চোখ গরম করে তাকালো।
তিতলির অল্প অল্প রাগ পরে যাচ্ছে। শিহাব তিতলিকে ছেড়ে দিয়ে বললো।
-তাই বলে তুই কাউকে না বলে এসে পরবি? এটা ঠিক না।
তিতলি নিজের ভুল বুঝলো। তবে হার মানলো না। সে মুখ গম্ভীর করে বললো।
-হুম।
-আর কি করলে মাফ করবি তুই?
তিতলি ঝট করে বলে ফেললো।
-দুই একদিনের ভেতরে ভাবিকে একেবারে নিয়ে গেলে।
তিতলির কথা শুনে শিহাব মিটিমিটি হেসে বললো।
-একদম। তাই ই হবে।
এবার তিতলিও হেসে ফেললো। নীরা বসে বসে এদের দুই ভাইবোনের কর্মকান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। হতভম্ব ভাব কাটিয়ে শিহাবের দিকে তাকালে দেখতে পেলো শিহাব তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। গজ দাাঁতের হাসি, টোল পরা সুন্দর হাসি। নীরা চাইলেও রাগ ধরে রাখতে পারলো না। এতো সুন্দর হাসি দেখলে কে রাগ ধরে রাখতে পারে।
–চলবে!