অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-নয়
নাফিসা নীলয়া।
সকাল সকাল দ্রুত তৈরি হচ্ছে নীরা। আজ স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে আসবে সে। তারপর রুমাদের বাসায় যাওয়ার প্ল্যান আছে। মিলা গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে। সে কাল রাত থেকে নীরার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু নীরা কথাই বলছে না। মিলার এবার কান্না পাচ্ছে। তখনই মালিহা ঘরে আসলেন। দেখলেন তার ছোট মেয়ে গালে হাত দিয়ে কান্নামাখা মুখ করে বসে আছে। মিলা কান্নামাখা মুখ করে কেন বসে আছে তিনি বুঝতে পারলেন না। তিনি নীরার দিকে তাকালেন দেখলেন নীরা আপনমনে তৈরি হচ্ছে। মিলার দিকে তাকাচ্ছে না। এবার তিনি বুঝতে পারলেন তার ছোট মেয়ে মিলার এমন কান্নামাখা মুখের কারন। তিনি এগিয়ে গেলেন।
-কি ব্যপার মুখটা ওমন করে রেখেছিস কেন? খাওয়াদাওয়া করতে হবে না নাকি?
মালিহার কথায় নীরা তার কাজ থামালো। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।
-ওকে খেতে বলো আম্মা। কেউ যেন সকাল সকাল না খেয়ে বের না হয়। অযথা না খাওয়ার মানেই হয় না।
কথা শেষ করেই নীরা আবার তার কাজ করতে লাগলো। মিলা মালিহার দিকে অসহায় চোখে তাকালো।
-ঠিকই আছে। আমার দিকে তাকাচ্ছিস কেন এখন? কাল রাতে ওমন কান্ড করার সময় মনে ছিলো না। আমি কিছু বললে তো কখনো শুনিস না। সবসময় বোনের আশকারা পেয়ে আসছিস। তাই ভেবেছিস বোন এবার ও কিছু বলবে না। ঠিক হয়েছে একদম ঠিক হয়েছে।
মিলার এবার গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে তো বোঝেনি তার আপা এতোটা রেগে যাবে। তার তো অনেক আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিলো এজন্যই সে এমনটা করেছে। এখন কি করে আপার রাগ ভাঙাবে সে। কি করলে আপা এমন রেগে থাকবে না। ভাবতে ভাবতেই সে দেখলো নীরা তার সামনে বসেছে। নীরার হাতে নাস্তার প্লেট।
-হা কর।
-কি আপা?
-বলছি হা কর। কাল রাতেও মাথা ব্যথার অজুহাত দিয়ে খাসনি। এবার তাড়াতাড়ি খা। আমাকে তাড়াতাড়ি বেড়োতে হবে।
-আপা আমি স্যরি স্যরি স্যরি। খুব স্যরি। আর কখনো এমন হবে না। আমি কখনো এমন করবো না। প্লিজ তাও তুই এমন রেগে থাকিস না। প্লিজ। তুই এমন রেগে থাকলে আমার দুনিয়া ভেঙে কান্না পায়। কিচ্ছু ভালো লাগে না।
নীরাকে হুট করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে কথাগুলো বললো মিলা। নীরা বোনের এমন কান্ড দেখে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। সে মালিহার দিকে তাকালো। তিনি হেসে ফেললেন। নীরাও হাসলো।
-কি করবি কর। বোনের আহ্লাদীপনা দেখে মাফ করে দে এবার।
হাসতে হাসতে বললেন মালিহা।
-আম্মা!
অভিমানী কন্ঠে হাঁক ছাড়লো মিলা। নীরা বোনের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলো।
-দেখ মিলা আমি আব্বা,আম্মা সবাই তোকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। তারমানে এই না যে তুই হুট করে যা ইচ্ছে তাই করে বসবি। অত রাতে বের হওয়ার দরকার ছিলো না তোর। আব্বা তখনও জেগে ছিলেন। তাকেও তো বলতে পারতি। দেখিস না চারদিকে কত অঘটন ঘটছে। আর আমাদের এদিকে তো রাতে কতো শুনশান হয়ে থাকে। বাড়ির পাশে হলেও কখন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না। আল্লাহ না করুন। আর এমন করবি না ঠিক আছে?
-ঠিক আছে আপা, আর এমন করবো না প্রমিস। আই লাভ ইউ।
নীরাকে জড়িয়ে ধরেই বললো মিলা। মালিহা দুই মেয়ের কান্ড দেখে হাসছেন। তার মন জুড়িয়ে যায় দুই বোনের এতো মধুর ভালোবাসা দেখে। মিলাটা ছোট থেকে বোনের ন্যাওটা। এখনো তেমনই আছে। ভাবতে ভাবতেই দরজার দিকে তাকালেন তিনি। দেখলেন রেজাউল দাড়িয়ে আছেন। একমনে মেয়েদের ভালোবাসাময় দৃশ্য দেখছেন।
-কি হলো কিছু বলবে? নাস্তা তো টেবিলে দিয়ে এসেছি। খেয়ে নাও।
মালিহার কথায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন রেজাউল। তিনি ইতস্তত করে ঘরে ঢুকেই পরলেন।
-না বলছি ওরা খাবে না?
রেজাউলের কথায় দুই বোনের ধ্যান ভাঙলো। নীরার হাতে তখনো নাস্তার প্লেট। সে উঠে দাড়ালো।
-চলো আব্বা,সবাই একসাথে খাই। মিলা উঠ চোখ মোছ। কথায় কথায় কাঁদে খালি মেয়েটা।
কথা বলতে বলতে মিলাকে নিয়ে বাইরে গেল নীরা।
-আমি নীরাটার সাথে খুব অন্যায় করেছি মালিহা। সেই অপরাধবোধে আমি ঘুমোতে পারি না। মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে আমি ঠিক থাকতে পারি না। ও কি কখনো আমাকে মাফ করবে!
রেজাউলের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মালিহা। অন্যায় তো অবশ্যই করেছে। কিন্তু নীরা এসব মনে রাখেনি। তার কাছে তার পরিবারই সব। মালিহা জানেন তার মেয়ে কেমন। ওপরে যতো শক্ত ভেতরে ততো নরম। একদম নারকেল। কিন্তু নীরা ক্ষমা করলেও তার পক্ষে নিজের স্বামীকে ক্ষমা করা সম্ভব না।
-অন্যায় তো করেছো রেজাউল। আমার মেয়েটাকে আমি একাই মানুষ করেছি। তুমি কখনো পাশে ছিলে না। যখনই আমাদের তোমাকে প্রয়োজন ছিলো তখনই তুমি আমাদের দূর দূর করেছো। আমার মেয়েটা তোমার একটু ভালোবাসার জন্য ছটফট করতো। তুমি ফিরেও দেখতে না। নীরার স্কুল কলেজ সব জায়গায় আমি একা সব দায়িত্ব পালন করেছি৷ অথচ বাবা হিসেবে তুমি কোন দায়িত্বটা নিয়েছো ওর? কোনো দায়িত্ব নাওনি। শুধু মাএ নীরা প্রতিবন্ধী বলে। আজ দেখো আমার সেই মেয়ে প্রতিষ্ঠিত। আজ আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার মেয়ে অসহায়দের পাশে দাড়াতে সক্ষম।
মালিহার কথা শুনে রেজাউল মাথা নিচু করে নিলেন। দেওয়ার মতো কোনো উওর তার কাছে নেই। তিনি নীরাকে ভালোবাসতেন। কিন্তু চারদিকের মানুষের কথা নিজের আত্মীয় স্বজনের কথায় অতিষ্ট হয়ে তিনি নীরার প্রতি অবিচার করেছেন। যা করা একদমই উচিত হয়নি। আগে নিজের মেয়ে তারপর বাকি সবকিছু। কিন্তু তিনি কি করলেন! এই অপরাধবোধ শেষ করে দিচ্ছে তাকে।
-আমাকে ক্ষমা করা যায় না মালিহা?
-তোমাকে আমি ক্ষমা করতে পারছি না রেজাউল। আমার মেয়েটার আর আমার কষ্টের কথা যে মনে পরে যায়। তবে তুমি চিন্তা করো না আমার মেয়ে তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। ও তো সেসব মনেই রাখেনি। আমার মেয়েটা একটা রত্ন।
মালিহা কথা শেষ করে চলে যান। রেজাউল ওখানেই দাড়িয়ে রইলেন। এখন থেকে নিজের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সবসময় নীরার পাশে থাকবেন। মনে মনে এই প্রতিজ্ঞাই করলেন তিনি।
-কি হয়েছে তোর রেহান? কাল থেকে এমন মুখ গোমড়া করে আছিস কেন? তিতলিও বললো আমাকে। আমার ভাই তো এমন মুখ গোমড়া করে রাখে না। তাহলে কি হলো তোর?
সকালে সবাই মিলে একসাথে ব্রেকফার্স্ট করার সময় রেহানকে প্রশ্ন করলো শিহাব। রেহান হাসিখুশি ছেলে। কখনো কারো কথায় কিছু মনে করে না। সবসময় সবাইকে মাতিয়ে রাখে সফ্ট হার্টেড ছেলে। সেই ভাইয়ের এমন গোমড়া মুখ ভালো লাগছে না শিহাবের।
-এক্স্যাক্টলি ভাই। তুই বোঝা ওকে। আমি কাল থেকে ট্রাই করছি৷ কিন্তু নবাব তো আমার কথা শোনেনই না।
তিতলির কথায় ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালো রেহান। শিহাব রেহানের দিকে তাকালো।
-আমার দিকে তাকা।
শিহাব রেহানের কথায় ওর দিকে তাকালো।
-দেখ রেহান। আমি এখন আমার কাজের জন্য তোদের সময় দিতে পারি না। তাই বলে এই নয় যে আমি তোদের খেয়াল রাখি না। আমি আমার ভাই-বোনদের রগে রগে চিনি। কি হয়েছে তোর সত্যি করে বল। আমি সল্ভ করবো। সিরিয়াস কিছু?
শিহাব কপাল কুঁচকে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তিতলিও নাস্তা রেখে রেহানের সামনে বসে আছে। দুজনেরই চিন্তামাখা মুখ। দুজনেই রেহানকে নিয়ে ভীষন চিন্তা করছে বোঝা যাচ্ছে। ভাই -বোনের এমন দুঃশ্চিন্তা গ্রস্ত মুখ রেহানকে পীড়া দিচ্ছে। তার এতো ভালো ভাই-বোনকে সে কোন এক মিলা টিলার জন্য কষ্ট দিচ্ছে। তাছাড়া কোথাকার কোন টিলা। তার কথা এতো গায়েই বা মাখছে কেন রেহান। শিহাব আর তিতলি এখনো তার দিকে চেয়ে আছে। নাহ্ রেহান আর ওদেরকে কষ্ট দিবে না। এখন আবার হাসিখুশি হয়ে যাবে। সবাইকে মাতিয়ে রাখবে সে। ভাবলো রেহান।
-ডোন্ট ওয়ারি ভাই। আই এম ওকে। ওই একটা বন্ধুর সাথে সিরিয়াস কথা কাটাকাটি হয়েছিলো এজন্য একটু মুড অফ ছিলো। বাট নাও আই এম গুড। এতো চিন্তা করো না তো তোমরা।
হাসতে হাসতে আগের মতো বললো রেহান। রেহানের হাসি দেখে শিহাব আর তিতলির বুকের ভেতর যেনো হালকা হয়ে গেল। তবুও শিহাব সন্দেহ করে জিজ্ঞেস করলো।
-সত্যি তো দেখিস আবার। কোনো সমস্যা না তো?
রেহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।
-তোমার কি মনে হয় ভাই। আরে আমি ঠিক আছি এখন।
-শিওর?
-ড্যাম শিওর।
-ওকে খা এখন। আর পড়ালেখার কি অবস্থা তোর?
-আমার তো বিন্দাস। আমাদের তিতলি রানী কে জিজ্ঞেস করো। সামনেই প্রি-টেস্টের রেজাল্ট। দেখো গিয়ে ফেইল করে বসে আছে তিতলিরানী।
রেহানের এমন গা জ্বালানো কথাবার্তায় তিতলি রেগে গেল। রেহানের পিঠে দুম করে কিল বসালো সে।
-আমি ফেইল করবো না? আর নিজে যে ইন্টারমিডিয়েট এর টেস্টে ফেইল করেছিলি। কোনোরকম সেবার ভাইয়ের সুপারিশে তোদের ফেইল করা ছাএদের আবার এক্সাম নেওয়ার কারনে বেঁচে গেছিলি। ফেল্টুস কোথাকার আবার আমাকে বলছে আমি নাকি ফেইল করবো। হাহ্!
দাঁত কিড়মিড় করে বললো তিতলি। এদিকে রেহান বেহায়ার মতো হাসতে লাগলো। শিহাব ভাই-বোনের খুনসুটি মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো।
তখনই তাদের বাবা রেজা সাহেব নিচে আসলেন তার ট্যুর শেষ হয়েছে গতকালই। তিনি হেলতে দুলতে এসে চেয়ার টেনে বসলেন।
-জহুরা আমার ব্রেকফার্স্ট তাও। ডায়েট চার্ট অনুযায়ী।
-দিচ্ছি ভাইজান।
রেজা সাহেবের কথায় জহুরা উওর দিলেন। তিতলি আর রেহান বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-মানে বাবা? তুমি ডায়েট করবে? সত্যিই? ও মাই গড!
তিতলি অবাক হয়ে বললো।
-ইয়েস মাই প্রিন্সেস। কেন এতে এতো অবাক হওয়া কি আছে?
-না মানে তুমি তো খাবার দেখলে নিজেকে সামলাতে পারো না সেজন্য৷
বহু কষ্টে হাসি চেপে কথাটা বললো রেহান। তাদের অতি ভোজনরসিক বাবার ডায়েটের বিষয়টা মানতে পারছে না তারা। যেই লোক খাবার দেখলে নিজেকে সামলাতে পারে না। সে করবে ডায়েট। ততক্ষনে জহুরা রেজা সাহেবের খাবার নিয়ে এসে পরেছে।
-নিন ভাইজান।
তিতলি আর রেহান উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে। তাদের বাবা কি করে এই খাবার খাবে তারা সেটা দেখার জন্য উন্মুখ। শিহাব ও খাওয়ার ফাকে ফাকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।
-কি বলো তো তিতলি মাই প্রিন্সেস। ট্যুরে গিয়ে এক সুন্দরী রমনীর সাথে দেখা। তো তিনিই বললেন আমি সবদিক থেকে পার্ফেক্ট আছি শুধু এই ওয়েট টা কমাতে হবে ডায়েট করে। এজন্যই চেষ্টা করছি।
কথাটা বলতে বলতেই তিনি আধ সেদ্ধ সব্জি স্পুন দিয়ে মুখে পুরলেন। মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললেন। তার এই কান্ড দেখে তিতলি রেহান জহুরা সবাই হেসে ফেললো। বহু কষ্টে তিনি খাচ্ছেন। অর্ধেক শেষ করে আর খাওয়া সম্ভব হলো না তার দ্বারা।
-বাবা, সকাল সকাল কোনো ডায়েটিশিয়ানই এই খাবার প্রেফার করবে না। তুমি কোত্থেকে যে এসব জেনেছো কে জানে। এজন্যই এখন খেতে পারছো না।
হাসতে হাসতে বললো তিতলি। তার সাথে সবাই ই তাল মেলালো।
-তিতলি একদম ঠিক বলেছে। আমি এক কাজ করবো নতুন কোনো নিউট্রিশনিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করে তোমার জন্য নতুন ডায়েট চার্ট বানাবো। এটাই ঠিক হবে তাই না তিতলি?
-একদম ছোট ভাই।
-আচ্ছা। তোমরা যখন বলছো তাহলে তাই হবে। আচ্ছা তিতলি ওটা কি নতুন ডেজার্ট? তুমি বানিয়েছো নিশ্চয়ই?
বলতে বলতেই ডেজার্ট আইটেমটা খাওয়া শুরু করলেন রেজা সাহেব। তার খাওয়া দেখে সবাই আরেক দফা হাসলো। এই নাকি তিনি ডায়েট করবেন।
-আচ্ছা আমি আসছি এখন। তোরা তাড়াতাড়ি ক্লাসে যা। নইলে লেট করে ফেলবি।
চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো শিহাব।
-ভাই আমার ক্লাস আজ দুপুরের পরে।
-ও আচ্ছা তাহলে তিতলি তুই আমার সাথে চল। আমিই তোকে নামিয়ে দিবো।
-ওয়ান মিনিট ভাই,ব্যাগটা নিয়ে আসি।
কথাটা বলেই তিতলি দৌড়ে ব্যাগ আনতে গেল।
-তো সব ঠিকঠাক শিহাব?
রেজা সাহেব প্রশ্ন করলেন শিহাবকে। সেই সবসময়ের মতো। শিহাব বাবার দিকে তাকালো।
-অল গুড!
শিহাব ও সবসময়ের মতো উওর দিলো। ইতিমধ্যে তিতলি এসে গেছে।।
-চল ভাই।
-হ্যা চল।
শিহাব তিতলিকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো। রেজা সাহেব, রেহান আর জহুরার সাথে নানা বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলেন।
সাইফ আর রুমা ঝগড়া করছে। নীরা আর মিলা ওদের থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু দুজনের একজন ও থামছে না। আজ শপিং করতে যাওয়ার কথা ওদের। নীরা আজ স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে। তারপর বাড়ি গিয়ে মিলাকে সাথে করে রুমাদের বাসায় এসে পরেছে। সাইফ ও এসেছে একসাথে শপিং করবে বলে। কিন্তু আসার পরপরই রুমা আর সাইফ ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। বাড়ির বড়রা এদিকে নেই। এতে ভালোই হয়েছে। ঝগড়ার মূল বিষয় বিয়েতে কে কোন রঙ পরবে এই নিয়ে। সাইফ চাচ্ছে সবুজ শাড়ি আর সবুজ শেরওয়ানি। এদিকে রুমা চাচ্ছে সব লাল হবে। সে লাল বেনারসী পরবে তার কতো দিনের শখ। দুজনের ঝগড়া থামাতে থামাতে নীরা আর মিলা ক্লান্ত হয়ে পরেছে। তবুও থামছে না দুজন।
-তুই চুপ কর আমি যখন বলেছি সবুজ পরবি তারমানে তোকে সবুজই পরতে হবে।
-একদম না আমি বিয়ের কনে,সুতরাং আমার কথাই শেষ কথা। আমি লাল বলেছি সব লালই হবে।
-তারমানে আমার কথা শুনবি না তুই? বন্ধুরা ঠিকই বলেছে। সমবয়সী বিয়ে করা আসলেই জ্বালা।
সাইফের কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো রুমা। রাগে ফোঁসফোঁস করা শুরু করলো।
-কি? দেখলি নীরা ও কি বললো। তারমানে ও আমাকে বিয়ে করতে চায় না। সব ওর ভন্ডামি। সব! এতবড় কথাটা তুই বলতে পারলি সাইফ? এই তোর ভালোবাসা?
রুমার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সাইফ। সে বললো কি আর রুমা বুঝলো কি। এ তো আবার ইমোশনাল ও হয়ে যাচ্ছে। কি মুশকিল!
-না রুমা আপা। সাইফ ভাই ওভাবে বলতে চায়নি। তুমি ভুল বুঝছো ভাইকে। থামো এবার তোমরা। নইলে আমাদের লেট হয়ে যাবে।
মিলার কথা শুনে ওকে ধমক দিলো রুমা।
-তুই চুপ কর। ছোট বাচ্চা এসেছে আমাকে বোঝাতে। সর সামনে থেকে সাইফ ভাইয়ের চামচি।
রুমার ধমক খেয়ে চুপসে গেল মিলা। নীরার দিকে তাকালো। নীরা চোখের ভাষায় বোঝালো সে দেখছে বিষয়টা।
-মিলা তো ঠিকই বলেছে। তুই এসব আজগুবি কথা বন্ধ কর রুমা। কই থেকে কই চলে গেলি তুই।
-আমি গেছি না তুই গেছিস। তোর সাথে বিয়েতে রাজি হওয়াই ভুল হইছে আমার।
-চুপ কর। দুজনই চুপ কর। নইলে এখনই আমি আর মিলা চলে যাবো এখান থেকে। তোদের বিয়ে তোরাই খা বসে বসে।
নীরার ধমক শুনে চুপ করে গেল দুজনই।
-সেই কখন থেকে দুজন মিলে ঝগড়া করছিস। বড়দের সামনেও এরকমই করবি তোরা তাই না? যওসব। বাচ্চা নাকি তোরা? যথেষ্ট বড় তোরা। খোদা! আর একটা কথা বললে চলে যাবো কিন্তু।
-নাআ।
নীরার কথা শুনে সাইফ আর রুমা দুজনই একসাথে চিৎকার করে উঠলো।
-উই আর স্যরি। আর ঝগড়া করছি না আমরা। ওকে রুমা?
স্যরি বললো সাইফ। ওর কথায় রুমাও তাল মেলালো।
-হ্যা স্যরি আর ঝগড়া করবো না।
-হুম দুজনের পছন্দের রঙই পরা হবে। একটা বিয়েতে তো আরেকটা রঙ রিসেপশনে। ওকে,? আর কোন রঙ কবে পরা হবে সেটা আংকেল আন্টিরা বলবেন। তোরা আর একটা কথা বলবি না।
নীরার কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো দুজন।
-তো এখন চল।
নীরার কথা শুনে রুমা আর সাইফ ঝগড়া মিটিয়ে নিলো। আর শপিং করতে যেতে রাজি হয়ে গেল। ওদের আগে পাঠিয়ে নীরা নিজের ব্যাগ আনতে গেল। তারপর মিলা আর নীরা ও বেড়িয়ে গেল শপিং এর উদ্দেশ্যে।
-এই দুইটাকে তুই কিভাবে সামলাস রে আপা। ও মাই গুড! দুটোই তো ঝগড়া করতে করতে দিন পার করে।
মিলার কথায় মিষ্টি হাসলো নীরা৷
-রুমা আর সাইফ ঝগড়া করলেও একে অপরকে ছাড়া অচল বুঝলি?
-বুঝলাম। বাসর রাতেও দেখা যাবে ঝগড়া করে তোর কাছে ফোন দিয়ে বিচার দিচ্ছে।
হাসতে হাসতে বললো মিলা। মিলার সাথে নীরাও হাসতে লাগলো।
—চলবে।