অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-পঁচিশ

0
786

অপূর্ব প্রাপ্তি,পর্ব-পঁচিশ
নাফিসা নীলয়া!

মিলা খুব ঘুমকাতুরে মেয়ে। ভোরে ফজরের ওয়াক্তে তাকে ওঠাতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় নীরার। আর আজও নীরা মিলার ঘরে এসে দেখলো ফোনের এলার্ম বেজেই যাচ্ছে আর মিলা আরো আরামসে ঘুমাচ্ছে। নীরা গিয়ে ফোনের এলার্ম বন্ধ করলো। মিলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে ডাকলো। তবুও মিলার ওঠার কোনো নামগন্ধ দেখলো না। শেষে না পেরে জগ থেকে পানি নিয়ে মুখে ছিটা দিলো তারপর মিলা ধরফর করে উঠে বসলো।

-কি হয়েছে আপা? কোথাও কি আগুন লেগেছে? ডাকলে কেন। কতো সুন্দর ঘুমাচ্ছিলাম। স্বপ্ন দেখছিলাম আমার প্রেমিকপুরুষকে নিয়ে।

মিলার কথা শুনে নীরা ওর মাথায় একটা গাট্টা মারলো। কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছে মিলা।

-মিলা আজান আরো দশ মিনিট আগে হয়ে গেছে। আর এই দশ মিনিট আমি তোকে ডেকেই যাচ্ছি। নিজেও এখনো নামাজ পড়িনি। ওঠ এখনই নইলে ওয়াসরুম থেকে পানি এনে গায়ে ঢেলে দিবো।

নীরার ধমক শুনে মিলা হুড়মুড়িয়ে উঠে গেল। নীরা ততোক্ষনে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাড়িয়ে গেছে। মিলাও ওজু করে এসে নীরার পাশে নামাজ পড়তে দাড়িয়ে গেল। নামাজ শেষ করেই মিলা আবার ঘুমাতে যাচ্ছিলো নীরা জায়নামাজ রাখতে রাখতে দেখলো মিলা আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীরা দ্রুত গিয়ে মিলাকে আবার টেনে ওঠালো। মিলা এবার বিরক্ত হচ্ছে।

-কি আপা? ঘুমাতেই দাও না তুমি একটু ঘুমাই না। প্লিজ।

-তোর যে আজকে আটটার সময় ক্লাস আছে সেই খেয়াল আছে? না এখন একদম ঘুমানো চলবে না। এখন ঘুমালে তুই আর উঠবিই না তোকে চেনা আছে আমার।

-তাহলে এখন কি করবো?

-চল হাটতে যাই। অনেকদিন সকালে হাটি না। তুই তো পরে পরে ঘুমাস একা একা হাটতে ভালো লাগে না। আজকে হাটবো দ্রুত চল।

মিলা মুখ গোমড়া করে উঠলো।

-চলো। আর কি করার তুমি তো আমাকে ছাড়বেই না। যেতেই হবে।

মিলার মুখ গোমড়া দেখে হাসলো নীরা। সে জানে একটু পরে আর মিলার মুখ গোমড়া থাকবে না। দুইবোন মিলে হাটতে বেড়িয়ে গেল। ভোরের আকাশে তখন সূর্য উঠছে। কুয়াশামাখা সকালের শুরু হচ্ছে ধীরে ধীরে। মিলা কতোক্ষন মুখ গোমড়া করেই হাটলো। কিন্তু যেই মোড়ের মাথায় ভাপা পিঠা চিতই পিঠা নিয়ে একটা মহিলাকে বসে থাকতে দেখলো। ওমনিই তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। নীরা লক্ষ করলো সেটা। সে হেসে বললো।

-তোর ফেভারিট না? চল আজকে সকাল সকাল পিঠা খাই। যাওয়ার সময় বাকি সবার জন্যও নাহয় নিয়ে যাবো।

মিলা এবার খুশি হয়ে নীরার হাত ধরলো। একদম ছোটবেলার মতো। নীরার কাছে এই বিষয়টা খুব ভালো লাগে। নীরা ওদের দুজনকেই পিঠা দিতে বললো। মিলা পিঠা খেতে খেতে মহিলাটির সাথে গল্প করতে লাগলো। নীরাও ওদের গল্প শুনছিলো কিন্তু তখনই তার ফোনে শিহাবের কল আসলো। মিলা বলে উঠলো।

-কে কল করেছে আপা?

নীরা মিলার সামনে ফোন ধরলো। মিলা শিহাবের নাম দেখে হেসে ফেললো।

-যাও যাও কথা বলে আসো আমি গল্প করি। ডিস্টার্ব করবো না আমি।

নীরা কপট ধমক দিলো মিলাকে। মিলা আর কিছু বললো না মহিলাটির সাথে গল্প করতে লাগলো। নীরা ওদের থেকে একটু দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো। করার পরই শিহাবের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।

-শুভ সকাল।

-শুভ সকাল। হঠাত এতো সকালে?

শিহাবের শহরের বাইরে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেতে হবে তিন-চার দিনের জন্য। গতকাল রাতেই এটা হুট করে ঠিক হয়েছে।। সকাল সকাল যাওয়ার জন্যই সে তৈরি হচ্ছিলো। তৈরি হতে হতে সে ভাবলো নীরাকেই আগে ফোন করে জানানো যাক।

-তিন-চার দিনের জন্য আউট অফ টাউন যাচ্ছি। হঠাত করেই গতরাতে ঠিক হলো তাই ভাবলাম তোমাকে জানিয়ে যাই।

-তিন-চার দিন? তো এখনই যাচ্ছো?

-হ্যা একটু পরেই রওনা দিবো। সেজন্যই ফোন করা। কি করছিলে এতো সকালে?

-মিলা আর আমি মিলে হাটতে বের হয়েছি। রাস্তায় হঠাত পিঠা পেয়ে গেলাম তো এখন দুজন মিলে পিঠাই খাচ্ছি।

-বাহ্। আমার যদি এখন যেতে না হতো তবে আমি এখন তোমার কাছে এসে পরতাম।

নীরা শিহাবের কথা শুনে হাসলো।

– শোনো তোমার যখন তখন আমাদের এরিয়ায় আসা যাবে না।

শিহাব ফোন স্পিকারে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে গলায় টাই বাঁধছিলো। নীরার কথা শুনে ফোন হাতে নিয়ে বললো।

-কেন? আমার বউয়ের সাথে আমি দেখা করতে যাবো না? আশ্চর্য!

-উফ তুমি সত্যিই পাগল। আমি কিন্তু তোমার বউ নই।

নীরার এই কথাটা শিহাবের ভালো লাগলো না। সে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো।

-তুমিই আমার বউ হবে আর সেটাও খুব শিঘ্রই। সুতরাং এসব বলে লাভ নেই।

শিহাবের গম্ভীর কন্ঠ শুনে নীরা পুনরায় হেসে ফেললো।

-ডোন্ট বি সিরিয়াস। এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।

-তুমি বলো আর এসব বলবে না তাহলেই হয়।

-ধুর একটা ছোট বিষয় নিয়ে তুমি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো।

নীরা কথা বলতে বলতেই মিলা তাকে ডাক দিলো। অলরেডি সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে ওদের এবার বাড়িতে যেতে হবে। তাই নীরা শিহাবকে দ্রুত বলে উঠলো।

-মিলা ডাকছে এখন রাখছি। আর শোনো খেয়ে বেড়োবে।সাবধানে যাবে। বাই।

শিহাব গম্ভীর মুখেই বললো।

-তুমিও নিজের খেয়াল রেখো। আর আমি যখনই ফোন দিবো তুমি রিসিভ করবে। ব্যস্ততার কারনে যদি ফোন ধরতে না পারো তাহলে পরে কলব্যাক করবে। নইলে আমি আসার পর যা হবে সেটার জন্য আমি দায়ী থাকবো না।

-উফ আল্লাহ। তুমি সত্যিই একটা যা তা। রাখছি সাবধানে যেও।

বলেই নীরা ফোন কেটে দিলো। মিলার কাছে গিয়ে বললো।

-চল বাড়িতে লেট হয়ে যাবে নইলে।

মিলাও দ্রুত খাওয়া শেষ করলো। দুইবোন মিলে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলো।

শিহাব সকালে রেহান আর তিতলিকে তাড়াতাড়ি উঠতে বলেছিলো। সে সকাল সকালই বেড়িয়ে যাবে বলে। তিতলি আর রেহানও জলদি উঠে পরেছে। এর আগেও কাজের জন্য কয়েকদিন বাইরে থাকতে হলে শিহাব তিতলি আর রেহানকে বলেই যেতো। এবারও সেরকমই করলো। তিতলি শিহাবকে বলে উঠলো।

-তিন-চার দিনের জন্য যাচ্ছিস নিজের খেয়াল রাখিস। আর শোন ছোট ভাইয়ের নামে সব বিচার ভিডিও কলে দিবো। তুই এসে বিচার করবি।

তিতলির কথা শুনে শিহাব হাসলো। আর রেহান নিজের কপাল চাপড়ালো।

-তুই কি বিচার দিবি আমিই ভাইকে বিচার দিবো। তুই তো একটা শাকচুন্নি। তুই আবার কাউকে ছেড়ে দিস নাকি?

সকাল সকাল দুই ভাই-বোনের মারামারি লেগে গেল। শিহাব জহুরাকে বললো এদের থামাতে। ওরা দুজন থামলে সকাল সকালই সবাই ব্রেকফার্স্ট করতে বসলো। রেজা সাহেব ও আসলেন ব্রেকফার্স্ট করতে। তিনি শিহাবকে জিজ্ঞেস করলেন।

-কয়দিনের জন্য যেতে হবে শিহাব?

-এরাউন্ড ফোর ডেইস।

তিতলি ফোড়ন কেটে উঠলো।

-তুই তো বলেছিলি তিন-চার দিন।

রেহান তিতলির মাথায় গাট্টা মেরে বললো।

-একই তো হলো শাকচুন্নি।

-ছোট ভাই ভালো হচ্ছে না বলে দিচ্ছি। ভাই কিছু বল ওকে।

শিহাব দুজনকেই ধমকে উঠলো।

-চুপচাপ খা। নইলে দুটোকেই তুলে আছাড় মারবো।

শিহাবেন ধমক শুনে দুজনে চুপ হয়ে গেল। তিশা আর আসমাও আসলো। ওরা এতো সকালে ঘুম থেকেই ওঠে না আর আজ উঠেছে বলে তিতলি অবাক হলো। রেহানকে ফিসফিস করে বললো।

-ওরা এতো তাড়াতাড়ি উঠেছে কেন বল তো?

-সেটা ওদের গিয়েই জিজ্ঞেস কর।

তিতলি একটা ভেঙ্চি কেটে পুনরায় খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। তিশা শিহাবের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। সবসময়ই চেষ্টা করে। তবে শিহাব তাকে পাওা দেয় না।

-শিহাব ভাই আমি তো আরো ভেবেছিলাম আগামীকাল তোমাকে আর নীরাকে নিয়ে একটা গেট টুগেদার করবো। কিন্তু সেটা আর হলো কই তুমি তো তিনদিনের জন্য যাচ্ছো। যাই হোক তুমি এসো আগে তারপর না হয় করবো।

শিহাব চুপচাপ খাচ্ছিলো কিন্তু তিশার কথা শুনে থেমে গেল। তিশার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো।

-নীরা মানে? ওকে ভাবি বা আপু বলতে শিখ। রেস্পেক্ট হার। ও আমার উডবি ওয়াইফ। ও বয়সে এবং সম্পর্কে দুটো জায়গাতেই তোর চেয়ে বড়।

শিহাবের কথা শুনে তিশা ধপ করে নিভে গেল। তিতলি আর রেহান মিটি মিটি হাসছে। আসমা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছেন। তিশা নিজেকে সামলে হাসিমুখে বললো।

-ওকে আই কল্ড হার নীরা ভাবি। ওকে নাও?

শিহাব আর তিশাকে পাওাই দিলো না। রেজা সাহেব জহুরা, তিতলি রেহানের থেকে বিদায় নিলো। তিতলি আর রেহান শিহাবের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে দিতে গেল। রেজা সাহেব ওনার ঘরে চলে গেলেন। জহুরা গেলেন কাজ করতে। তিশা রাগে ফুসছে। আসমা মেয়ের অবস্থা দেখে বললেন।

-তিশা আমার মনে হয় নীরার জন্য শিহাবের মনে যেই জায়গাটা আছে সেটা তুই কখনো পাবি না। খামোখা জায়মার কথা শুনে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস। দেখ আমি মা হয়ে তোর খারাপ চাই না।

তিশা জ্বলন্ত চোখে আসমার দিকে তাকালো।

-তুমি আমার মা তো? তুমি জানো শিহাব আমার জন্য কি তবুও এসব বলতে পারছো? যাই বলো আমি এর শেষ দেখেই ছাড়বো।

বলেই তিশা উঠে ঘরে চলে গেল। আসমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ছোট থেকেই তিশা এমন বেপরোয়া স্বভাবের। সবাই মিলে ওকে লাই দেওয়ার কারনে আরো জেদী একরোখা হয়ে গেছে। সঠিক শাসনের অভাবে আজ মা-বাবার কথাও শোনে না। কোনো কিছু বলতে গেলেই সুইসাইড করার হুমকি দেয়।

মিলা আজকে সকাল সকালই বেড়িয়ে গেছে। তার সকালেই ক্লাস আছে বলে। নীরা একটু দেরিতে বাড়ি থেকে বের হবে ভাবলো। সে তৈরি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছিলো। তার ফোন বেজে ওঠায় সে গিয়ে ফোন হাতে নিলো। দেখলো আবারও শিহাব ফোন করেছে। আবার কেন ফোন করেছে ভাবছে নীরা। ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে গিয়ে দ্বিতীয় বার বেজে উঠলো। এবার নীরা রিসিভ করলো। শিহাব সাথে সাথে বলে উঠলো।

-তুমি এখনই আমার ফোন রিসিভ করছো না দেখলে!

-শিহাব তুমি দিনদিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছো। একদমই এরকম ছিলে না।

-আচ্ছা বাদ দাও আমি তোমার বাড়ির সামনে আছি জলদি নিচে নামো।

নীরা অবাক হয়ে গেল।

-মানে তুমি এখনো যাওনি? আর আমার বাড়ির সামনে কি করছো?

-না যাইনি তুমি আসো। তোমাকে দেখে তারপর যাবো।

-আচ্ছা বাড়ির সামনেই যখন এসেছো বাড়ির ভেতরে এসো। নইলে আম্মা জানতে পারলে খুব রাগ করবে।

-আমার কাছে আধা ঘন্টার মতো সময় আছে। এখন বাড়িতে ঢোকা সম্ভব না তুমি তাড়াতাড়ি এসো। এমনিতেও তো এখন স্কুলে যাবে।

নীরার নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে। এই ঘাড়ত্যাড়াকে লাই দিয়ে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে সে।
সে তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে মালিহাকে বলে নিচে নামলো। নিচে নেমে দেখলো শিহাব দাড়িয়ে আছে ধূসর রঙের শার্টে একদম ফর্মাল লুক। সুন্দর লাগছে শিহাবকে। আশ্চর্যজনক কথা হচ্ছে নীরার চোখে এখন শিহাবকে সুন্দর লাগে। নিজের ভাবনাতে নিজেই চমকে গেল নীরা। কাছে গেলেই শিহাব দ্রুত গাড়িতে উঠতে বললো। নীরা আর কথা না বাড়িয়ে উঠলো। শিহাব গাড়ি স্টার্ট দিলো। নীরা বললো।

-এখানে আসার কি দরকার ছিলো? শুধু শুধু এসেছো।

শিহাব নীরার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো।

-তা যদি তুমি বুঝতে তাহলে তো আমার আর এতো কষ্ট করতে হতো না।

-হ্যা সব তো তুমি একাই বুঝে বসে থাকো।

-আমি ফিরে এসেই খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের ডেট ফাইনাল করে ফেলবো।

-তিতলি আর রেহান জানে যে তুমি এমন স্বভাবের? এরকম বাচ্চাদের মতো করছো কেন? এক কথা কয়বার বলবে!

-না জানে না। আর তুমি বলছো আমি কেন এমন করছি ! সব তোমার জন্য। তোমার জন্য আমি এমন হয়ে গেছি। এখন তো আমার দোষ দিলে চলবে না।

নীরা বিরক্ত হয়ে বাইরের দিকে তাকালো। শিহাব নীরার স্কুল থেকে একটু দূরে গাড়ি থামালো। নীরা শিহাবের দিকে তাকিয়ে বললো।

-আরে এখানে কেন আরেকটু সামনে যাও। আর বেশি সময় ও তো নেই তোমার কাছে।

শিহাব কোনো কথা না বলে নীরার হাত দুটো ধরলো এবং নীরার দিকে তাকালো। নীরা অবাক হয়ে গেল। পরপরই অস্বস্তি হলো। সে উসখুশ করতে লাগলো। শিহাব দুই মিনিট হাত ধরে অপলক তাকিয়ে রইলো। নীরা উসখুশ করছে দেখে দুই মিনিট পরে হাত ছেড়ে দিলো। তারপর বললো।

-বলেছিলাম সেদিন বিয়ে করে নেই। তুমি শুনলে না। সেদিন বিয়েটা করে ফেললে আজকে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারতাম।

নীরা একটু লজ্জা পেলো কথাটা শুনে। তবে তার পরপরই রাগান্বিত চোখে তাকালো। বললো।

-এই যে যখন তখন আমার হাত ধরো। এগুলো আমার পছন্দ না। হাত ও ধরবে না এখন থেকে বুঝলে?

শিহাব সুন্দর করে হেসে বললো।

-আচ্ছা ধরবো না।

বলেই গাড়ি একেবারে স্কুলের সামনে নিয়ে দাড় করালো। নীরা নেমে গেল। শিহাবও নামলো। নামার পর বললো।

-ফোন রিসিভ করবে কিন্তু। না করতে পারলে পরে কলব্যাক করবে। আমি বারবার বলে যাচ্ছি কিন্তু। নইলে ফিরে এসে ঝামেলা করবো।

-তুমি তো পারোই ঝামেলা করতে। তুমিও সাবধানে যেও।

-ওকে নিজের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।

নীরা শিহাবকে বিদায় দিয়ে স্কুলের ভেতরে ঢুকে গেল। শিহাব নীরার ভেতরে ঢোকা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। তারপর নিজেও চলে গেল। নয়তো তার দেরি হয়ে যাবে।

রেহান মিলার ডিপার্টমেন্টের সামনে দাড়িয়ে মিলার জন্য অপেক্ষা করছিলো। মিলা বেড়িয়ে দেখলো রেহান দাড়িয়ে আছে। আজকাল রেহান তেমন জ্বালায় না। আর মিলাও ক্ষেপে যায় না। হয়তো পড়ালেখা নিয়ে দুজনই ব্যস্ত এজন্য। মিলাকে বের হতে দেখে রেহান এগিয়ে গেল।

-হেই টিলা আমরা তো এখন বেয়াইন রাইট?

-রেহান তুমি আমাকে এসব উদ্ভট নামে ডাকবে না। তোমাকে আমি আগেই সতর্ক করে দিলাম। নইলে দেখবে কি হয়!

রেহান একটু ভয় পাওয়ার ভান করলো।

-আল্লাহ আমি তো খুব ভয় পেয়ে গেছি বেয়াইন।

মিলা রেহানের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকালো। বললো।

-না করেছি কিন্তু রেহান। এসব স্বস্তা ন্যাকামি আমার একদম পছন্দ না।

রেহান হাসলো।

-ওকে কুল। এখন আমার ঝগড়া করার মুড নেই। চলো ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খাই। আমি তোমাকে খাওয়াবো আজ।

-তোমার সাথে যাবো কেন? আর তোমার থেকেই খাবো কেন?

-কারন আমরা এখন আত্মীয় হতে যাচ্ছি রাইট? এজন্য।

মিলারও এখন ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। এমনিতেই তার অনেক পড়ার চাপ। ক্লাস করে সে ক্লান্ত হয়ে গেছে। আর রেহানও এখন আত্মীয় হতে যাচ্ছে। তাই সে ভাবলো রেহানের সাথে বেশি ঝামেলা না করাই ভালো। সাথেই যাওয়া যাক।

-আচ্ছা চলো।

রেহান খুশি হয়ে গেল। মিলা তাকে পাওা দিচ্ছে এটা অবিশ্বাস্য। সে খুশি খুশি গলায় বললো।

-আমাকে একটা চিমটি কাটো তো।

মিলা সত্যি সত্যিই জোরে একটা চিমটি কাটলো। রেহান চেঁচিয়ে উঠে হাত ডললো।

-মিলা তুমি সত্যিই একটা ডাইনি।

মিলা ক্ষেপে গেল।

-এই কি বললে তুমি? আবার বলো। তোমার সাহস তো কম না। বেয়াদব তোমার সাথে আসাই ভুল।

-আচ্ছা স্যরি তুমি ডাইনি না। এক্সট্রেমলি স্যরি। ভুলে বলে ফেলেছি আর বলবো না। এবার চলো।

মিলা কিছু না বলে চোখমুখ শক্ত করেই রেহানের সাথে ক্যান্টিনে গেল।

-খালামনি নীরার সাথে দেখা করার এটাই সঠিক সময়। শিহাবও নেই এখন। আমি কি বলছি তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো?

জায়মাকে ফোন করে তিশা কথাগুলো বললো। জায়মা বললেন।

-আচ্ছা এক কাজ কর ওকে ফোন করে বল আমরা ওর সাথে দেখা করতে চাইছি।

-খালামনি আজকের দিনটা যাক। শিহাব তিন-চারদিনের জন্য গেছে আর আজই গেছে। সো দুই একদিনের মধ্যে নীরার সাথে দেখা করলে বেটার হবে।

-আচ্ছা সেরকমই হোক তাহলে। তুই ফোন করে বলিস তাহলে।

-আচ্ছা। তবে আমার ভাবনা অনুযায়ী যদি সব নাহয়। তাহলে কি হবে!

জায়মা বিরক্ত হলেন। তিশা নিজেই সব প্ল্যান করলো। আর এখন নিজেই কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে। এটা একদম ভালো লাগলো না তার।

-তিশা তুই নিজেই সব প্ল্যান করেছিস। এখন পিছু হটলে কি করে হবে। শুরু তো করতেই হতো। তবে এখনই কেন নয়।

-আমি পিছু হটছি না খালামনি। আমার শুধু একটাই ভয় শিহাব যদি সব জেনে ফেলে তখন কি হবে!

-চিন্তা করিস না নীরাকে এমনভাবে বলতে হবে যেনো শিহাব জানতে না পারে।

-কিন্তু কিভাবে?

-সেটা আমাকে ভাবতে দে। সবকিছু ভেবেচিন্তেই করবো আমি। আমি শিওর শিহাব একদিন নিশ্চয়ই আমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।

-হু তোমার ভরসাতেই এগোনোর সাহস পাচ্ছি খালামনি।

জায়মা হাসলেন। বিয়েটা না হলে শিহাব ওনার কাছে একদিন না একদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেই। এটাই তার মনে হয়। মা হয়ে ছেলের কাছে আর ছোট হতে পারবেন না তিনি।

–চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here