অপেক্ষা পর্ব — ১৭

0
261

অপেক্ষা
পর্ব — ১৭
লেখা – হুমায়ুন আহমেদ

শীতকালের সকাল। মিতু মন খারাপ করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আশৈশবের চেনা ছাদটাকে চেনা যাচ্ছে না। ছাদের চারদিকে রেলিং হয়েছে। রেলিং এর ধার ঘেসে ফুলের টব। জমিলুর রহমান সাহেবের হঠাৎ করে গাছের নেশা হয়েছে। তিনি রোজই ফুলের টব কিনে আনছেন। বস্তা ভর্তি মাটি আনছেন, সারা আনছেন। মহা উৎসাহে মাটি এবং সার মাখিয়ে মিকচার তৈরি হচ্ছে। সেই মিকচার টবে ভরা হচ্ছে। তাঁর একত্ৰিশটা টাব আছে শুধুই গোলাপের। ফুটন্ত গোলাপের সংখ্যা সাতচল্লিশ। জামিলুর রহমান রোজ সকালে এসে একবার করে গোলাপের সংখ্যা গুণেন। ব্যবসায়ী মানুষ বলেই হয়ত সাতচল্লিশকে মনে মনে পাঁচ দিয়ে গুণে ফেলেন। দুইশ পয়ত্রিশ। অর্থাৎ ছাদের বাগানের গোলাপের বর্তমান বাজার দর পাঁচ টাকা করে পিস ধরলে দুইশ পয়ত্ৰিশ টাকা। তাকে তখন অত্যন্ত আনন্দিত দেখায়। তিনি যে শুধু ফুটন্ত গোলাপের হিসাব রাখেন তাই না, কতগুলি কুড়ি আছে তারও হিসাব রাখেন। কুড়ির বর্তমান সংখ্যা বাষট্টি।
মিতুর এইসব ভাল লাগে না। ছাদটা নষ্ট হয়ে গেল। এই ভেবে তার মন খারাপ হয়। আগের খোলামেলা মাঠ মাঠ ভাব নেই। চারদিকে রেলিং উঠায় ছাদের চরিত্র বদলে গেছে। এখন মনে হয় মিনি জেলখানা। মিতু এক সময় ছাদের শেষ প্রান্তে পা ঝুলিয়ে বসে থাকত, সেটা আর হবে না। তাছাড়া ছাদে উঠলেই একা হয়ে যাবার যে ব্যাপার ছিল তা এখন ঘটছে না। জমিলুর রহমান সাহেবকে সকাল বিকাল দুবেলাই ছাদে পাওয়া যাচ্ছে। মিতুর আশংকা তার বাবার উৎসাহ যে ভাবে বাড়ছে তাতে কিছুদিন পর দেখা যাবে তিনি দিনরাত ছাদেই পড়ে আছেন। মানুষ অদ্ভুত প্ৰাণী, কখন কোন নেশা ধরে যায় বলা কঠিন।
শীতের এই সকালে জামিলুর রহমানকে একটা গেঞ্জি গায়ে দেখা যাচ্ছে। তার নাক-মুখ রুমাল দিয়ে বাধা। তিনি গোলাপের গাছে ইনসেকটিসাইড স্প্ৰে করছেন। গোলাপের গাছে কীট পতঙ্গের সংক্রমণ দ্রুত হয়। সুন্দরের প্রতি শুধু যে মানুষের আকর্ষণ তা না, কীট পতঙ্গেরও তীব্র আকর্ষণ।
মিতু বাবার দিকে এগিয়ে গেল। জমিলুর রহমান স্পে করা বন্ধ করে বললেন, কাছে আসিস না মা। দূরে থাক। তীব্ৰ বিষ।
মিতু দাঁড়িয়ে গেল। জামিলুর রহমান বললেন, মিতু তুই একটু নিচে যা, তোর মা ডাকছে। আমার জন্যে এক কাপ চা পাঠিয়ে দিস।
মিতুর নিচে যেতে ইচ্ছে করছে না। কারণ আজ তাকে দেখতে লোক এসেছে। মিতু চায়ের ট্রে নিয়ে যাবে এবং কাপে করে সবাইকে চা তুলে তুলে দেবে। ছেলে নিজেও এসেছে। মিতুর রাগে শরীর জুলছে। ছেলেটার কি লজ্জা বলেও কিছু নেই। বাড়ি বাড়ি মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছে। এর আগেও নিশ্চয়ই সে অন্য সব মেয়েদের বাসায় গিয়েছে। মেয়ের হাতে বানানো চা খেয়েছে। গল্প গুজব করেছে। মিতুকে দেখার পরেও আরো অনেকের বাড়িতে যাবে। তারপর বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই মেয়েটা ফর্সা। তবে একটু খাটো। ঐ মেয়েটা লম্বা আছে। তবে শ্যামলা। মগবাজারের মেয়েটার সবই ভাল ছিল শুধু একটা দাঁত ভাঙ্গা। ঝিকাতলার মেয়েটার চুল। লালচে। লালচে চুলের মেয়ের স্বভাব চরিত্র ভাল হয় না।
জামিলুর রহমান বললেন, দাঁড়িয়ে আছিস কেন মা? নিচে যা।
মিতু বলল, ওরা কি এসে গেছে?
জামিলুর রহমান বললেন, জানি না। নটার মধ্যেতো আসার কথা।
তুমি যাবে না?
উহুঁ। আমার যাবার দরকারও নেই। তোর মেজো খালা আছে। সে একাই একশ।
ছেলে কি করে তুমি কি জান?
পেট্রোবাংলায় কাজ করে। ইনজীনিয়ার। স্কলারশীপ নিয়ে বাইরে যাচ্ছে। তোর মেজো খালা বলছিল ছেলে খুব সুন্দর।
তাহলেতো ভালই। যে সব ছেলে খুব সুন্দর তারা আবার রূপবতী মেয়ে পছন্দ করে না। সুন্দরী মেয়েদের তারা নিজেদের রাইভ্যাল মনে করে। কাজেই আমার ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে।
জামিলুর রহমান বিস্মিত হয়ে বললেন, তুই কি অসুন্দর না-কি? তোর মত সুন্দরী মেয়ে বাংলাদেশে কাঁটা আছে? মিতু হাসতে হাসতে নিচে নামল।
ছেলের নাম জুবায়ের। দেখতে সুন্দর। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার মতই সুন্দর। কথাবার্তাও ভাল। রসবোধ আছে। মজা করে কথা বলতে পারে। একসময় হাসতে হাসতে বলল, আমার এক বন্ধু আছে। ওরস্যালাইন টাইপ…
মিতু বলল, ওরস্যালাইন টাইপ মানে?
দেখেই মনে হয় পেটের অবস্থা এ রকম যে ওরস্যালাইন খেয়ে ঘর থেকে বের হয়েছে। ফিরে গিয়ে আবারো খাবে।
মিতু হেসে ফেলল।
ভদ্রলোক বললেন, চা-টা খুব ভাল হয়েছে। আমি কি আরেক কাপ চা পেতে পারি?
মিতু পট থেকে চা ঢালল। সে নিজের জন্যেও চা নিল। ভদ্রলোক বললেন, আপনার অনার্স পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
বেশি সুবিধার হচ্ছে না।
ভদ্রলোক খুবই গম্ভীর গলায় বললেন, ফেল করবেন?
মিতু আবারও হেসে ফেলল।
মেয়ে দেখতে আসা লোকজন চা-টা খাওয়া হবার পর হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়। চলে যাবার জন্যে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মুরুদ্ৰব্বীদের একজন গলা নীচু করে, ষড়যন্ত্র করছেন এমন ভঙ্গিতে বলেন, ভাইসাহেব পরে যোগাযোগ করব। আপনাদের মেয়ে মাশাল্লাহ ভাল।
এদের বেলা সে রকম হল না। তারা যাবার আগে মিতুর মেজো খালাকে বললেন, মেয়ে তাদের খুবই পছন্দ হয়েছে। আগামী শুক্রবার খুব ভাল দিন। ঐ দিন পান-চিনি করতে চান। বিয়ে অনার্স পরীক্ষা শেষ হবার পর হবে। তাদের কোন দাবি দাওয়া নেই। শুধু মেয়ের বাইরে যাবার টিকিটাটা যদি করে দেন তাহলে ভাল হয়। আর না দিলেও ক্ষতি নেই।
মিতুর মেজো খালা বললেন, টিকিট আমরা করে দেব কোন সমস্যা নেই।
শুক্রবারের পান-চিনির তারিখটা ফাইন্যাল করে দিন। আমাদের আত্মীয় স্বজনদের খবর দিতে হবে।
এখনই দিতে হবে?
বিয়ে সাদীর ব্যাপারটা এমন যে, যত দেরি হবে তত প্যাঁচ লেগে যাবে। কি দরকার?
মিতুর মেজো খালা বললেন, পান চিনি শুক্রবার করতে চান করুন। আমাদের কোন আপত্তি নেই।
ফাতেমা আয়োজন করে কাঁদতে বসলেন। মেজো খালা মিষ্টি কেনার জন্যে লোক পাঠালেন। তিনি টেলিফোন করে সবাইকে খবর দিতে লাগলেন—বললে বিশ্বাস করবেন না, মিতুর কি ভাগ্য। প্রথম যারা দেখতে এসেছে তারাই পছন্দ করে ফেলেছে। এ রকমতো কখনো হয় না। তাছাড়া বললে বিশ্বাস করবেন না, মিতু কোন রকম সাজগোজ করে নি। কোন মেকাপ না, কিছু না। শাড়ি যেটা পরেছিল সেটাও খুব সিম্পল শাড়ি। সূতি শাড়ি। হালকা সবুজ জমিনের উপর সামান্য কাজ।
বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় মিতুকেও খুব আনন্দিত মনে হল। এই উপলক্ষ্যে আনা মিষ্টি সে দুটা খেয়ে ফেলল। একটা সাদা মিষ্টি আরেকটা কালো মিষ্টি। মিষ্টি খেতে খেতে হাসি মুখে বলল, আমার বিয়েটাতো ব্ল্যাক এণ্ড হোয়াইট। এই জন্যে সাদা-কালো মিষ্টি খেলাম।
মেজো খালা বিস্মিত হয়ে বললেন, তোর বিয়ে ব্ল্যাক এণ্ড হোয়াইট মানে?
বর ফর্সা, আমি কালো। এই জন্যেই বিয়েটা ব্ল্যাক এণ্ড হোয়াইট।
তোরাতো আশ্চর্য মেয়ে, এখনো বিয়ে হয়নি। বর ডেকে যাচ্ছিস।
আমরা হচ্ছি। এই যুগের স্মার্ট মেয়ে। আমাদের মুখে কোন লাগাম নেই। যা ইচ্ছা বলতে পারি।
রকিব যদি টেলিফোন করে, কথা বার্তা একটু সাবধানে বলবি। বিয়েটা হয়ে যাক তারপর যা ইচ্ছা বলবি।
টেলিফোন করবে না-কি?
টেলিফোন করবেই। কথা বার্তা যা বলবি, সাবধানে বলবি, রেখে ঢেকে বলবি। পান-চিনির পরেও বিয়ে ভাঙ্গে।
মিতু তার ঘরে পড়ছে। সুন্দর একটা উপন্যাস-টমাস হার্ডির Tress of the durbervilles। পরীক্ষার জন্যে পড়া বলেই ব্যাকরণ বইয়ের মত লাগছে। অথচ টেস এর চরিত্র লেখক কি সুন্দর করেই না তুলে এনেছেন। এই সুন্দরে কাজ হবে না। এই সুন্দরকে চালুনী দিয়ে ছাকতে হবে। মাইক্রোসকোপের নিচে ফেলতে হবে। চরিত্র চিত্ৰনে লেখক কি কি ভুল করেছেন তা বের করতে হবে। লেখকের মানস কন্যা কি সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পেরেছে? লেখক কি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে চরিত্রটি দেখেছেন না তার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছেন? লেখকের উদ্দেশ্য কি ছিল? নিছক গল্প বলা? না-কি গল্প বলার ফাঁকে ফাঁকে তিনি লেখকের সামাজিক দায়িত্বও পালন করছেন? Of all the great English novelists, no one writes more eloquently of tragic destiny than Hardy. ব্যাখ্যা কর।
আচ্ছা হার্ডি যদি টেসকে শান্ত, ভদ্র এবং বিনয়ী একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিতেন তাহলে কেমন হত? উপন্যাস হিসেবে সেটা দাড়াত না, তবে মেয়েটার জীবনতো সুন্দর হত।
মিতু বই বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। মাথার কাছের ছোট্ট জানোলা দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। পিঙ্গল আকাশ। কোন মেঘ নেই। এই পিঙ্গল আকাশে যদি সাদা মেঘের বিশাল একটা স্তুপ থাকতো তাহলে সুন্দর দেখাতো। মিতু চোখ বন্ধ করে ফেলল। পিঙ্গল আকাশ দেখতে ইচ্ছা করছে না, বরং চোখ বন্ধ করে অন্য কোন বিষয় নিয়ে ভাবা যাক।
বিয়ে নামক ইন্সটিটিউশনটা নিয়ে ভাবা যাক। বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে কুৎসিত লাগছে। সম্পূর্ণ অচেনা একটি মেয়ে এবং একটা ছেলে। দুজনকে দুপ্রান্ত থেকে এনে বলা হল এখন থেকে তোমরা এক সঙ্গে থাকবে। তারা দু জন প্রথমবারের মত একসঙ্গে ঘুমুতে গেল। প্রশস্ত খাট, ফুল তোলা চাদরে কিছু ফুল। খাটটা সাজানো হয়েছে জরির মালায়। ছেলেটা মেয়েটার গায়ে হাত রাখবে। মেয়েটা লজ্জা এবং ভয়ে চুপ করে থাকবে। আতংক নিয়ে অপেক্ষা করবে–তারপর কি হয়।
আফা ও আফা।
মজিদের মা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ ভর্তি হাসি। পান খাওয়া লাল দাঁত সবকটা বের হয়ে আছে।
ও আফা টেলিফোন।
কার টেলিফোন?
নতুন দুলাভাই। হিহিহি।
হি হি করতে হবে না। নিচে যাও, আমি আসছি।
মিতু টেলিফোন হাতে নিয়ে খুব সহজ ভঙ্গিতে বলল আপনি কেমন আছেন?
জুবায়ের একটু ইতস্ততঃ ভঙ্গিতে বলল, ভাল। তুমি কেমন আছ? তুমি করে বললাম। আশা করি কিছু মনে করছ না?
জি না মনে করছি না।
টেলিফোন পেয়ে বিরক্ত হচ্ছি নাতো?
বিরক্ত হচ্ছি না।
আমি আবার খুব ভয়ে ভয়ে টেলিফোন করলাম।
ভয়ে ভয়ে কেন?
তুমি আবার কি মনে কর।
আমি কিছু মনে করছি না।
তোমার পরীক্ষাতো এখন চলছে—তাই না?
জ্বি।
মাঝে গ্যাপ আছে না?
আছে। কাল পরশু এই দুদিন পরীক্ষা নেই। আপনি কি আমাকে বাইরে লাঞ্চের দাওয়াত করতে চাচ্ছেন?
আশ্চর্য! তুমি বুঝলে কি করে?
আমার ই এস পি ক্ষমতা আছে। আমি মানুষের মনের কথা প্রায়ই ধরতে পারি।
তোমাকে বিয়ে করাতো তাহলে খুবই বিপদজনক!
কিছুটা বিপদজনকতো বটেই।
তুমি এমন ভাবে কথা বলছি যেন সত্যি সত্যি তোমার ই এস পি ক্ষমতা আছে।
আসলেই আছে। প্রমাণ দেব? আপনি এই মুহুর্তে সাদা একটা প্যান্ট পরে আছেন। ক্রিকেট খেলোয়াড়রা যেমন সাদা প্যান্ট পরে সে রকম সাদা প্যান্ট। হয়েছে?
হ্যাঁ হয়েছে। মাই গড—তুমিতো সত্যি সত্যি আমাকে ঘাবড়ে দিচ্ছি। মিতু শোন, আজতো তোমার পরীক্ষা নেই?
জি না নেই।
আজকে আমার সঙ্গে বাইরে খেতে চল। খেতে খেতে তোমার ই এস পি পাওয়ার নিয়ে গল্প করব।
জ্বি আচ্ছা।
তোমার পড়ার ক্ষতি হবে নাতো?
একটু হবে। কি আর করা। অবশ্যি আমার এখন পড়তেও ভাল লাগছে না।
তাহলে কাপড় পরে তৈরি হয়ে থোক। আমি এসে নিয়ে যাব।
জি আচ্ছা।
তোমার গলার স্বরটা এমন লাগছে কেন?
কি রকম লাগছে?
বিষাদময় লাগছে। ইংরেজীতে যাকে বলে Plaintive Voice. তোমার কি মন খারাপ?
জ্বি মন খারাপ। বেশ খারাপ।
কারণটা কি জানতে পারি? অবশ্যি বলতে যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।
না। আমার কোন আপত্তি নেই। আপত্তি কেন থাকবে? আমার এক ফুপাতো ভাই আছে। সেও অনার্স পরীক্ষা দিচ্ছিল। আজই খবর পেয়েছি একটা পরীক্ষা দিয়ে সে আর পরীক্ষা দিচ্ছে না। মনটা খুব খারাপ হয়েছে।
পরীক্ষা দিচ্ছে না কেন?
জানি না। অনেকদিন ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।
টেলিফোনে খোঁজ নেয়া যায় না?
ওদের টেলিফোন নেই।
তাহলে একটা কাজ করা যেতে পারে, দুপুরে লাঞ্চের পর ওদের বাসায় গিয়ে আমরা খোঁজ নিতে পারি। আমার সঙ্গে গাড়ি থাকবে, ট্রান্সপোর্ট কোন সমস্যা হবে না। আর তুমি যদি মনে কর তুমি একা যাবে-তাহলে গাড়িটা আজ সারাদিনের জন্যে তুমি রেখে দিতে পার।
না। তার দরকার নেই। আমি আসলে জানতেও চাচ্ছি না। যা হবার হবে।
তোমার ফুপাতো ভাই ছাত্র কেমন?
ও খুব ভাল ছাত্র। এস. এস. সি, এইচ. এস. সি. দুটাতেই ষ্ট্যান্ড করেছে।
ওর নামটা তুমি কি বলেছিলে? আমি ভুলে গেছি।
নাম আপনাকে বলিনি, ওর নাম ইমন।
তাকে কি তুমি খুব পছন্দ করা?
হ্যাঁ করি। তবে ও রোবট টাইপের তো কারো পছন্দ অপছন্দের ধার ধারে না। পছন্দ করলেও ক্ষতি নেই। না করলেও ক্ষতি নেই।
বললে তো আপনি আবার রাগ করবেন।
না মোটেই রাগ করব না, তবে তুমি এই যে আপনি আপনি করে কথা বলছ এতে রাগ করছি। সামান্য হলেও রাগ করছি। তুমি কি দয়া করে আমাকে তুমি করে বলবে?
আপনি বললে বলব।
আমি বলছি।
বালছ যখন তখন অবশ্যই তুমি করে বলব।
এখন বল আমি কোন টাইপের মানুষ?
তুমি গায়েপড়া ধরণের মানুষ। একদল পুরুষ আছে যারা মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে খুব পছন্দ করে। তুমি সেই টাইপ।
ও।
রাগ করলে?
না রাগ করিনি।
মিতু হাসল।
জুবায়ের বলল, হাসছ কেন?
মিতু বলল, আমার কথা শুনে তুমি খুব হকচকিয়ে গেছে। এই জন্যে হাসি আসছে।
ও আচ্ছা।
আরেকটা মজার ব্যাপার কি জান? তোমার সঙ্গে শেষ পর্যন্ত কিন্তু আমার বিয়ে হবে না।
কেন?
কেন ঠিক জানি না। আমার সিক্সথ সেন্স তাই বলছে।
তোমার বিয়েটা কার সঙ্গে হবে? ঐ যে ইমন না-কি যেন নাম তার সঙ্গে?
বাহ তোমার সিক্সথ সেন্সও তো খুব ভাল।
মিতু খিলখিল করে হাসছে। সে শুনল ওপাশে টেলিফোন রিসিভার নামিয়ে রাখা হয়েছে। তারপরেও সে হাসছে। কেন জানি তার খুব মজা লাগছে। তার সিক্সথ সেন্স বলছে ভদ্রলোক তাকে নিয়ে লাঞ্চে যাবার উৎসাহ এখন আর পাচ্ছেন না। তিনি এখন মিতু নামক মেয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর শুরু করবেন। এবং শুক্রবারের পান চিনি উৎসব বাতিল হয়ে যাবে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here