অপেক্ষা পার্ট_০২

0
2963

অপেক্ষা
পার্ট_০২
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
অপেক্ষার মানেই যন্ত্রনা। অপেক্ষার প্রতিটা প্রহর যেন সূচের মতো বুক চিরে চলে যায়।রেখে যায় গভীর ক্ষত।রেওয়াজের সেই প্রথম দেখায় আমাকে বাচানো,পাশাপাশি হাটা,এলোমেলো গল্প বলা,বিদায় বেলায় আমার কপালে আলতো করে চুমু খাওয়া প্রতিটাই আমার মনের মধ্যে খোদাই করা আছে।ওর সাথে কাটানো একটা মুহুর্তও ভুলিনি আমি।যেন আমার সামনে চলমান সিনেমা দৃশ্য। এই ভার্সিটির প্রতিটা অলি গলি সে আমাকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে।যেখানেই যাই না কেন ওর ছোয়া মিশে আছে।প্রায় ১ ঘন্টা যাবত ক্লাসে বসে আছি।প্রথম ক্লাস তাই স্যার সবার নাম জানছেন।পরিচয় পর্ব শেষ করে সবাই দল বেধে ছুটল ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে।আমি হাজার টা না করলেও কোন অযুহায় খাটল না।নতুন জায়গায় জোর খাটানোটাও কেমন স্বভাব বিরুদ্ধ।তবে যেখানেই যাই না কেন আমার নজর এক জনকেই খুজছে বারে বার।কোথায় সে!
আচ্ছা আমি কি তাকে আদৌ খুজে পাব!কিভাবে খুজব তাকে?শুধু নাম ছাড়া তো আর কিছুই জানি না।সবাই জানাজানি হলে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়াবে।চার মাস আগে যে ছেলে আমাকে এক গুন্ডার হাত থেকে বাচিয়েছিল আমাকে ভার্সিটি ঘুরিয়েছিল তাকে আমি পাগলের মত খুজছি।এটা পাগলের প্রলাপ নয়তো আর কি!
তবে আমি জানি আমি রেওয়াজকে কেন খুজছি।আমার কপালে ওর আলতো করে ঠোটের ছোয়াকে আবার অনুভব করতে চাই আমি।অবসান ঘটাতে চাই ওর আর আমার স্বল্প মিলনে সৃষ্ট অজানা অপেক্ষার প্রহরের।
.
.
কথায় বলে দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়। অপেক্ষার প্রহর ভালোবাসার ব্যাকুলতা বাড়ায় কাছে পাওয়ার ইচ্ছা জাগায়।আমারও খুব ইচ্ছে হচ্ছে রেওয়াজকে ভালোবাসতে। ওর হাত ধরে সেই পুকুর পাড়ে হাটতে। কিন্তু কোথায় সে! কোথায় পাব আমি তাকে?
ক্যানটিনে বসে আড্ডা দিচ্ছি সবাই হঠাত করে দিপা আপুকে দেখতে পেলাম।দূর থেকে দেখে প্রথমে চিনতে অসুবিধা হলেও পরে ঠিকি চিনে ফেলেছি।আপুকে দেখা মাত্রই আমি দৌড়ে গিয়ে উনার কাছে গেলাম।কাছে দাঁড়িয়ে পরিচয় দেওয়ার পর আপু বললেন
-ওহ আচ্ছা ঠিকাছে।
ব্যাস তারপর ব্যস্ত হয়ে পরলেন নিজ কাজে।আমি মোটেও অবাক হলাম না।এই চার মাসে আপুর লাইফে অনেকেই এসেছেন। অনেক জুনিয়রের সাথে পরিচিত হয়েছেন আজকে।হাজারের ভীড়ে আমাকে ভুলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আপু মাথা তুলে বললেন
-কিছু বলবে?দাঁড়িয়ে আছ যে!
-আসলে আপু…কিভাবে বলব বুঝতেছিনা…..।
-কোন সমস্যা? সংকোচ না করে বলে ফেল।
-আপু আমি কায়া।৪ মাস আগে ভার্সিটি ঘুরতে এসে একটা ঝামেলার কারনে আটকা পরেছিলাম।আপনি আমাকে আপনার হোস্টেলে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই রাতটা আপনার সাথেই ছিলাম আমি।
আমার কথা শুনে আপু খানিকটা মনে করার ভাব করে হেসে বললেন
-আসলে অনেকেই তো আসে থাকে আবার চলে যায় সবার কথা কিভাবে মনে রাখি বল!আচ্ছা তুমি চিন্তা কর না। মনে পরলে আমি বলব তোমাকে।তুমি এখন যেতে পার।
কথাটা বলেই আপু আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরবেন তার আগেই আমি বলে উঠলাম
-আপু রেওয়াজ কোথায়?
রেওয়াজের নামটা শুনতেই আপুর চেহারা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কে রেওয়াজ!আমি কোন রেওয়াজ কে চিনি না। দেখ মেয়ে নতুন এসেছ ভালো করে পড়াশুনা কর।
কথা শেষ হতে না হতেই আপু ব্যাগ হাতে তুলে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। দ্রুতপদে বেরিয়ে গেলেন ক্যাফের বাইরে। আমি আপুর পিছু নিব তখনি রিহাম ডেকে উঠল
-এই কায়া চল ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।
আমি পেছন ফিরে ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম।
.
.
ক্লাস হচ্ছে কিন্তু মনযোগ বসাতে পারছিনা।পুরোটা ক্লাস শুধু একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রেওয়াজের নাম শুনার সাথে সাথেই কেন দিপা আপুর চেহারার রঙ উড়ে গেল!দিপা আপু তো রেওয়াজকে চিনেন তবে কেন অস্বীকার করলেন?কেন বললেন যে উনি রেওয়াজকে চিনেন না?আচ্ছা আপু কি কিছু লুকাচ্ছেন?রেওয়াজ ঠিক আছে তো?
হঠাত করেই এক রাশ দুশ্চিন্তার কালো মেঘ মনের মধ্যে ভর করে এল।মনের আকাশ ভিজে উঠল অঝোর ধারায়।
ক্লাস থেকে বের হয়ে সোজা গিয়ে পৌছালাম গার্লস হোস্টেলে।আপুর রুম নাম্বার আমার মনে আছে।আল্লাহ করে যাতে আপু রুম চেঞ্জ না করেন।
৪০৯ নম্বর রুমের সামনে গিয়ে দরজা নক করলাম। বেশ খানিকক্ষণ নক করার পর আপু দরজা খুললেন। আমাকে দেখেই উনি যেন ভুত দেখার মত চমকে উঠলেন।কাপা কাপা গলায় বললেন
-তু…তু…তুমি…..?তুমি এখানে কি করছ?আ…আ..আমি ব্যস্ত আছি।পরে এসো
বলেই আপু দরজা লাগিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন।আমি বা হাত বাড়িয়ে দরজা আটকালাম।চোখে মুখে পাথর কঠিনতা ফুটিয়ে বললাম
-রেওয়াজ কোথায় আপু?
-কো..কো…কোন রেওয়াজ?আমি কোন রেওয়াজ কে চিনি না।
-৪ সেপ্টেম্বর ঠিক দুপুর ২ঃ০৫ মিনিটে যে রেওয়াজ আমাকে আপনার এই রুম থেকে হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল সেই রেওয়াজ কোথায় আপু?
-কি যা তা বলছ?আমি কোন রেওয়াজকে চিনি না।তুমি যাও তো এখান থেকে।
-আপু রেওয়াজ কোথায়?
-কোথায় আমি কি জানি!ভার্সিটিতে তো আরও মানুষ পরে। ১৭ ব্যাচে তো আরও মানুষ আছে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর না!আমার কাছে কেন এসেছ?যাও এখান থেকে।
কথাটা বলেই মুহুর্ত দেরী না করে আপু আমার মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিলেন।আমি মিনিট দুয়েক ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম দরজার সামনে।তারপর পেছন ফিরে বের হয়ে আসলাম হোস্টেল থেকে।
একমাত্র দিপা আপুই ছিলেন যে রেওয়াজকে চিনতেন। ওকে জানতেন।এখন দিপা আপুও মুখ ফিরিয়ে নিলেন।কিন্তু তাতে কি আপু একটা ক্লু তো দিয়েছেন। মানে রেওয়াজ ১৮ ব্যাচের। তাহলে আমি ১৭ ব্যাচের জকোন ভাইয়া বা আপুকে জিজ্ঞেস করলেই পেয়ে যাব রেওয়াজের ঠিকানা।
ভেবেছিলাম হয়তো সহজ হবে।কিন্তু নিয়তি তা মেনে নেয় নি।সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।কেই রেওয়াজের সন্ধান দেন নি।ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরছি গোধুলি লগ্নে ধাক্কা খেলাম এক ছেলের সাথে।যথেষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছে করে সে আমার সাথে ধাক্কা লাগিয়েছে। কলার ধরে থাপ্পড় দিতে যাব তখনি চোখ আটকে গেল তারদিকে।ধীরে ধীরে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে হাত নেমে এল।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই ছেলেটা যে সেদিন রেওয়াজের সাথে ছিল আর কথায় কথায় তাকে তেল দিচ্ছিল।
আমি নিচু স্বরে বলে উঠলাম
-সরি দেখিনি আপনাকে। ভুল করে ধাক্কা লেগে গিয়েছিল।
-আচ্ছা সমস্যা নাই।
বলেই ছেলেটা সামনে পা বাড়াল।
আমি পেছন থেকে ডেকে উঠলাম
-এই যে শুনুন….
ছেলেটা পিছনে ফিরে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল
-বললাম তো ঠিক আছে। এখন আবার কি?
-রেওয়াজ কোথায়?
আমার প্রশ্ন শুনে সে যেন চমকে উঠল।কোন কথা না বলেই দ্রুত পদে হাটতে লাগল।
আমি দৌড়ে গিয়ে তার পথ আগলে দাড়ালাম।
-আমি জানি আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন।আমি কোন সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছিনা।ভালোভাবে বলুন রেওয়াজ কোথায়…..
আমার কথা শুনে ছেলেটা কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে থাকল।নীরবতা কাটিয়ে বলে উঠল
-আসুন আমার সাথে……..
চলবে
{এটা আসলে গল্প ছিল না।কোন এক রাতের শেষ প্রহরে ঘুমিয়ে দেখা কিছু কাল্পনিক কাহিনি ছিল যেটাকে আমি শব্দে রুপ দেওয়ার চেস্টা করেছি।যদি গল্পটা শেষ করে দিয়েছিলাম কিন্তু আপনাদের অনুরোধ রক্ষার্থে আরও কিছু পার্ট সংযোজন করছি।কেমন হল জানাবেন।ধন্যবাদ}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here