অপেক্ষা পার্ট_০৭

0
3373

অপেক্ষা
পার্ট_০৭
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
ঘড়ির কাটায় এখন প্রায় রাত ১২ টা বাজে।আজ টিউশন শেষে আর হলে ফিরিনি।পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে এতক্ষন নোট করছিলাম।পড়তে পড়তে সময় কোন দিক দিয়ে চলে গিয়েছে টেরই পাইনি।ঘড়ির কাটায় যখন ১১ঃ৩৫ তখনি তড়িঘড়ি করে উঠে বের হয়ে আসলাম।রাত বেশী হওয়ায় এখন রাস্তাঘাট বেশ ফাকা।জ্যাম নেই বললেই চলে।হালকা মৃদু মন্দ বাতাস এসে চোখ মুখ ছুয়ে যাচ্ছে।বেশ ভালো লাগছে ব্যাপারটা। তাছাড়া আজ আমার মন বেশ ভালো।
অটো ভাড়া মিটিয়ে লেক পাড়ে যখন নামলাম ঘড়ির কাটা তখন মাতে মধ্যরাতের কাটগোড়া পার করেছে মাত্র।কয়েক কদম আগাতেই ল্যাম্পোস্টের আবছা আলোয় একটা ছায়া মূর্তি দেখতে পেলাম।নিশব্দে কাছে গিয়ে দাড়ালাম তার। তার দৃষ্টি সীমার সবচেয়ে নিকটতম বস্তু এখন আমি কিন্তু তার দৃষ্টি নিবদ্ধ দূর আকাশের সন্ধাতারার পানে।নিষ্প্রান পলকহীন নয়নে চেয়ে আছে সে গগনপানে৷আমি এককদম এগিয়ে গিয়ে তার কাছ ঘেষে দাড়ালাম।পুরো মুখটা একটা গামছার কাপড় দিয়ে বাধা শুধু চোখ দুটোকে বেধে রাখতে পারেনি।আমি মুখের কাপড়টা সরিয়ে পা উচিয়ে ঠোটের কোনে গাঢ় করে একটা চুমু খেলাম।কিন্তু তার কোন ভাবান্তর নেই।আমি দুচোখে অসীমতম ভালোবাসা ফুটিয়ে তার দিকে এক পলক চেয়ে তার বুকে জায়গা করে নিলাম।বুকের বাম পাশে গাল ঘেষে ঠিকভাবে জায়গা করে নিলাম যাতে তার হৃদস্পন্দে আমার নাম শুনতে পাই।অনুভব করতে পারি তার প্রতিটা নিশ্বাসে আমার উপস্থিতি।সে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও তার হৃদপিন্ড এখনো আমার ছোয়ায় উত্তেজিত৷পাগলা ঘোড়ার মত ছুটে চলছে আপন বেগে।যেন কোন লম্বা দৌড় প্রতিযোগীতা শেষ করে এসেছে।মাথা তুলে দেখি এখনো সে নির্বিকার চিত্ত।বুকের মধ্যে তার ঝড় বয়ে চলছে অথচ তার চোখে মুখের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে।মুচকি হেসে ওকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় ডান হাতে পকেট থেকে বের করে ছোট পেনড্রাইভটা গুজে দিলাম তার হাতে।
.
.
কয়েকদিন পর ভার্সিটিতে সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হয়ে যাবে।ক্লাস সব শেষের পথে৷ সবাই তল্পি তল্পা গুছিয়ে পড়াশুনা করছে এখন।আশেপাশের এমন সময় হঠাত একটা নিউজ যেন সবার মাথার এটম বোমের মত ফাটল।রেওয়াজ ভার্সিটির বিরুদ্ধে মানহানীর কমপ্লেইন করেছে।তার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়ে ভুয়া সাক্ষী প্রমান হাজির করে তাকে বহিষ্কার করার জন্যে হাইকোর্টে রীট জানিয়েছে।সবার মধ্যেই একটা হৈহৈ রৈরৈ পরে গেছে।একটা চাপা কৌতুহল সবাইকে গ্রাস করে রেখেছে।এমন সময় গায়ে কালো চাদর গায়ে চোখ মুখের মলিনতা বজায় রেখে ক্যাম্পাসের মাটিতে পা রাখল রেওয়াজ৷আজ আধ বছর হয়ে যাচ্ছে প্রায় রেওয়াজ ভার্সিটির মাটিতে পা রাখেনি৷ আজ দীর্ঘ সময় পর নিজের প্রান প্রিয় ক্যাম্পাসে পা রেখে যেন বুক ভরে নিশ্বাস নিল সে।কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা পা বাড়াল ভিসির রুম বরাবর। এর পরের দৃশ্য আমার অজানা নয়৷ সেখানে না থেকেও আমি খুব ভালোভাবেই জানি কী ঘটছে সেখানে।
রেওয়াজ স্বভাববশত রুমে ঢুকে সালাম দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবে।ওকে দেখেই ভিসি স্যার গর্জে উঠবেন।
-এসব কি শুরু করেছ রেওয়াজ?
-শুরু তো আমি করিনি স্যার। শুরু করেছেন আপনারা।
-রেওয়াজ তুমি অন্যায় করেছ। তোমাকে তোমার অন্যায়ের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।এতে ভুলের কি আছে!
-স্যার আপনি যে ভুলের কথা বলেছেন সে ভুল যে আদৌ আমি করিনি।
রেওয়াজের কথার জবাবে ভিসি স্যার গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিবেন
-সেটা তোমার তদন্তের সময় বলা উচিত ছিল রেওয়াজ। তোমার পক্ষে তখন তুমি কোন সাক্ষী প্রমান উপস্থাপন করতে পারো নি।বরং সকল সাক্ষী প্রমান তখন তোমার বিপক্ষে ছিল।
উনার কথা শুনে রেওয়াজ মুচকি হেসে বলবে
-স্যার আমি প্রমান উপস্থাপন করতে পারিনি?নাকি আপনারা আমাকে প্রমানের সুযোগ দেন নি।
ভিসি স্যার রেগে গিয়ে গর্জে উঠবেন
-রেওয়াজ তুমি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে অপমান করছ।
-স্যার এও বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে।আমাকে নতুন করে বাচতে শিখিয়েছে।নিজের মায়ের পরেই আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসি স্যার তার অপমান করার নূন্যতম ইচ্ছাটুকুও আমার মনের মধ্যে নেই।আমি শুধু আমার ভাগের অধিকারটুকু চাচ্ছি স্যার এর বেশি কিছু না।
আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করেছেন আমি আমার পক্ষের চেস্টা টুকু করছি স্যার।আসি আসসালামু আলাইকুম।
ভিসি স্যারকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রেওয়াজ রুম থেকে বের হয়ে আসবে।
.
.
ক্লাস শেষ করে হলে ফিরছি। দেখি দিপা আপু তড়িঘড়ি করে হল থেকে চোরের মত বের হয়ে যাচ্ছেন কোথাও। আমিও সুযোগমত আপুর পেছন পেছন গেলাম।
আপু একটা কালো বোরখা পড়েছেন।চোখ মুখ ঢেকে রাখা তাতে। আমি ছুটলাম আপুর পিছু পিছু। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে থামলেন আপু।এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা টিকিট কাটে বাসে চড়ে বসলেন। আমি এগিয়ে গিয়ে কৌশলে জিজ্ঞেস করলাম
-মামা এই বাস কোথায় যাবে?
-গাজীপুর। আপনে কই যাবেন?
-গাজীপুরেই আমাকেও একটা টিকিট দেন।
মামা টিকিট কেটে দিলেন।দিপা আপু নিজের ফোনে ব্যস্ত এমন সময় আমি টুপ করে ওড়না দিয়ে মুখ পেচিয়ে উঠে পড়লাম বাসে।দীপা আপুর ঠিক পেছন বরাবর সিটটাতে গিয়ে বসলাম যাতে উনি আমাকে দেখতে না পান।হাত চালিয়ে অনেক আগেই ছোট একটা ম্যাসেজ টাইপ করে রেখেছিলাম৷
-গাজীপুর যাচ্ছি আসবে?
সামান্য চাপেই ম্যাসেজখানা ঠিক গন্তব্যে চলে গিয়েছে।
মাগরিবের নামাজ শেষে মুসল্লিরা তখন পুনরায় যার যার কাজে অগ্রসর হচ্ছেন। এমন সময় বাস এসে থামল গাজীপুর বাস স্ট্যান্ডে।দিপা আপু বাস থেকে নেমেই তড়িঘড়ি করে একটা রিক্সা ডাকলেন।আমিও ছুটলাম তার পিছু পিছু।প্রায় এককিলোর মত রাস্তা যাওয়ার পর রিক্সা থামল একটা ছোট খাটো আধপাকা বাড়ির সামনে।বাসাটার চারদিকে কোন দেওয়াল নেই। আপু এগিয়ে গিয়ে দরজায় টোকা দিলেন। খুব সম্ভবত আপু তার বাসায় এসেছেন।আপু ভেতরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলেন।আমি অনেক খুজে বাছে বাড়ির পেছনের দিকে একটা জানালা খুজে পেলাম।সেখান থেকে স্পষ্ট সব দেখা ও শোনা যাচ্ছে।
-……দীপা কি করছিস এসব?তুই কি পাগল হয়েছিস?কাপড় চোপড় গোছাচ্ছিস কেন?কি হয়েছে বলবি তো।
-অত কিছু বলার সময় নেই মা।আমাদেরকে এক্ষুনি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।
-কি যা তা বলছিস!বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাব কেনই বা যাব?
-মা রেওয়াজ ভার্সিটির রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে কেস করেছে।সেই কেস আবার পুনর্বিবেচনা করা হবে।আবার নতুন করে কবর খোড়া হবে।
-মানে কি বলছিস এসব তুই!?
-বাবা আমি ঠিকি বলছি।তোমার মনে নেই মাস কয়েক আগে কি হয়েছিল?আমাকে আর রাফিয়াকে কিভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।আরে মানলাম রাফিয়া না হয় দোষ করেছিল ওর ভিডিও ছিল রাজীবের কাছে কিন্তু আমি! আমি কি দোষ করেছিলাম বাবা!আমি তো বলেছিলাম আমি কোন কথা বলব না!তারপরেও ওরা আমার ১০ বছরের ছোট ভাইটাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।যে রেওয়াজ আমাদেরকে বাচাল সেই রেওয়াজকেই রাজীব ফাসিয়ে দিল। আজকে রেওয়াজ বেচে থেকেও মৃত।রাজীব ক্ষমতার বলে সব প্রমান মিটিয়ে দিয়েছিল। মুহুর্তেই সব পালটে দিয়েছিল সে।আজ আমাকে হুমকি পাঠিয়েছে সে যদি এবারো কোন চালাকি বা মুখ খোলার চেস্টা করি তাহলে সবাইকে মেরে ফেলবে সে।
কথাগুলো বলে বিছানায় বসে মুখে হাত দিয়ে কাদতে লাগল দিপা আপু।
-তাই বলে অন্যায় মেনে নিয়ে মাথা পেতে চুপ করে থাকবে? চোখের সামনে একটা ছেলের জীবন নষ্ট হতে দেখবে?
আমার কথা শুনে এদিক ওদিক ফিরে তাকালেন তারা। কিন্তু কাউকেই খুজে পেলেন না।আমি আড়াল থেকে বের হয়ে সামনে আসতেই যেন দিপা আপু বিষ্ময়ে ফেটে পরলেন।কাপা কাপা গলায় বললেন
-ত…ত…ত..তুমি????তুমি এখানে?
কয়েক সেকেন্ড লাগল আপুর আমাকে ধাতস্ত করতে। নিজেকে সামলে নিয়ে আমাকে দেখেই আবার হাউমাউ করে কেদে উঠল সে।
আমি কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম।
সোডিয়াম আলোয় আলোকিত রাস্তায় যান্ত্রিকতার হৈ চৈ। গাড়িগুলো তীব্রবেগে ছুটে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে।অগনিত আলোছায়ার মাঝে ও পাশে মুর্তিমান এক মানবকে দেখতে পেলাম।
.
.

আজকে শেষ ক্লাস ।তারপরে দুই সপ্তাহ প্রস্তুতির ছুটি শেষে শুরু হবে ফাইনাল পরীক্ষা।আমি ধীরে সুস্থে ঘুম থেক্র উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেড়ে নিলাম।সকাল ৯ টায় ক্লাস।এখন বাজে ৮ঃ৪৫। আজ ইচ্ছা করেই দেরী করে গিয়ে পৌছালাম ভার্সিটিতে কানে হেডফোন গুজে ফুল ভলিউমে গান শুনতে শুনতে ক্লাসে গিয়ে পৌছালাম আমি।গিয়ে শুনি ক্লাস ক্যান্সেল করা হয়েছে।রিনা আমাকে দেখে দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বলল
-ভিডিও দেখেছিস?
আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম
-কিসের ভিডিও?
রিনা আমার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিল।ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আমার ঠোটে একটা প্রসারিত হাসি ফুটে উঠল।…..
চলবে
{প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে লিখছি। মাইগ্রেন আমাকে মারে ফেলতেছে। মেডিসিনেও কাজ হচ্ছেনা।যথাসাধ্য বড় করে দেওয়ার ট্রাই করছি।কেউ বলিয়েন না ছোট হইছে?}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here