অপেক্ষা ২য়_পর্ব
#গল্প
পুরো রাত নিপা মরার মত বিছানায় পড়ে রইলো।সামনের দিনগুলোতে আর কী কী অপেক্ষা করছে ওর জন্য, সেসব ভাবনাতে কেটে গেলো পুরো একটা রাত।কেন ওর জীবনটা এমন হলো? বিয়ে-শাদী নাকি ভাগ্যের ব্যপার, নিয়তির ব্যাপার। এ কেমন নিয়তি !
সকাল সাতটার দিকে নিপার ছোট ননদ ভাবী ও ভাবী বলে ডাকতে ডাকতে সোজা নিপার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো।
-এসো রিনা, ভেতরে এসো।
শান্ত গলায় নিপা বললো।
-ভাবী ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর চলো নাস্তা খাই। ভাইয়া কই ?
নিপা কোন রাখঢাক না করেই বললো,
-বারান্দায় ঘুমাচ্ছে মনে হয়। আচ্ছা রিনা, তোমার ভাইয়া যে অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করে, আর বিয়েও তাকে করবে, তোমরা জানতে না? এতবড় সর্বনাশ তোমরা করলে আমার ! তুমি তো ছোট নও রিনা। আমার বয়সি হবে। তা তুমিও তোমার মায়ের মেয়ে, তোমার ভাইয়ের বোন। তোমার সাথে এমন হলে কেমন লাগবে তাদের? তোমারই বা কেমন লাগবে?
রিনার মুখে কোন কথা নেই আর।এই মুহূর্তে এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচে সে ! তবুও মাথা নীচু করে বললো,
-ভাবী, চলো মা ডাকছে, খাবে চলো।
রাগে ঘৃণায় নিপার চোখ মু্খ জ্বলে যাচ্ছে।
-তুমি এখানেই বসো রিনা। আমি মুখ হাত ধুই। তোমার সাথেই যাবো আমি।
নাস্তার টেবিলে তেমন কেউই নেই। নিপার শাশুড়ি, শ্বশুর আর একজন বয়স্ক মত মহিলা বসে আছে।রিনার সাথে নিপাও এসে বসলো একটা চেয়ার টেনে নিয়ে।নিপাকে চেয়ারে বসিয়ে রিনা হাওয়া হয়ে গেলো। খাবার ঘরে সবাই কেমন চুপচাপ বসে আছে। কারো প্লেটেই কোন খাবার নেই। হটাৎ বয়স্ক মহিলাটি নিপার প্লেট নিজের দিকে টেনে নিলো। তা দেখে নিপা বললো,
-আমি নিজেই তুলে নিতে পারবো। দেন প্লেট আমাকে দেন।
বয়স্ক মহিলাটি বললো,
-কেন মা আমি দিলে কী হবে? লজ্জা পাচ্ছো মনে হয়!
নিপা, গলায় বেশ শক্তি সঞ্চয় করে বললো,
-খাবার খাওয়ার মধ্যে বোধয় লজ্জার কিছু নেই। মানুষ খাবে সেটাই খুব স্বাভাবিক। যাক সে কথা, আপনার সাথে আমার পরিচয় হয়নি। কে আপনি ?
মুখ খুললো নিপার শাশুড়ি।
-বৌমা, উনি তোমার বড় শাশুড়ি। মানে রেজার আব্বার প্রথম পক্ষ।
নিপা অবাক হয়ে শুনছে শাশুড়ির কথা। ওর মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ এই বাড়িতে থাকলে পাগল হয়ে যাবে। মাথা কেমন এলোমেলো লাগছে। ততক্ষণে মাথা নিচু করে নিপার শ্বশুর খেতে শুরু করেছে। লোকটির মুখে কোন কথা নেই। নিপা শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-আপনার সাথে আমার কথা আছে। শুধু আপনি আর আমি থাকবো কথা বলার সময়।
-এখনই বলবে নাকি পরে?
-চলেন আপনার রুমে। কথা এখনই বলবো।
নিপা চুপচাপ শাশুড়ির পেছন পেছন এসে একটি রুমে বসলো।
-বল বউমা, কী কথা?
-আচ্ছা আপনি জেনে বুঝে শুনে আমার সাথে আপনার ছেলের বিয়ে দিলেন কেন? জানেন তো আপনি যে, আপনার ছেলে বিয়ে করবে তার প্রেমিকাকে।
-আরে মা চুপ করো তো তুমি। অল্প বয়সে কত কিছুই হয়। ওই বয়সে মাথা মগজ সবই থাকে রঙীন। তাই বলে আমরাও কী রেজার মত ছাগল নাকি? ও যা বলবে আমরা তাই শুনবো, বলো তো?
-আপনার ছেলে ছোট? ঢাকায় চাকরী করে, পড়ালেখা করেছে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, আর আপনি তার সম্পর্কে এসব কথা বলছেন। এই আপনাদের মত মায়েদের কারণে আমার মত অনেক মেয়ে আজ ‘ডিভোর্সি’ নাম নিয়ে ঘুরছে। অথচ এমন ঘটনাগুলোতে মেয়েদের কোন দোষই নেই। কিন্তু সমাজ তা বুঝবে কেন ?
নিপার শাশুড়ি নরম স্বরে বললো,
-মাগো মেয়েরা পারে না হেন কোন কাজ নেই। তুমি আমার ছেলেটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তোমার মত করে নাও মা। আমাদের উপর রাগ করো না। আমরা তোমার মুরুব্বী।
-হুম আপনাদের মত মুরুব্বীদের জন্য আজ কত শত মেয়েদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সে খবর রাখেন ? শোনেন আপনারও একটা মেয়ে আছে, মনে রাখবেন। আর একটা কথা, আপনি নিজে মা হয়ে পারেননি ছেলেকে ঠিক করতে, তাহলে কী করে আশা করেন পরের বাড়ির মেয়ে এসে আপনার নষ্ট ছেলেকে সুপথে আনবে, এটা আদৌই কী সম্ভব ?
নিপা আর এক মুহূর্ত না বসে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দিলো। রুমে গিয়ে দেখে তখনো রেজা বারান্দায় ঘুমাচ্ছে। নিপার দু’চোখ দিয়ে সমানে জল গড়িয়ে পড়ছে। গতকালের পর এখন পর্যন্ত ওর মা বাবা ভাই বা ছোটবোন কেউই ওকে ফোন করেনি। এর কারণটাই বা কী ? নিপা নিজের ফোন হাতে নিলো।মাকে ফোন করবে সে।সাফ জানিয়ে দেবে এই বাড়িতে আর এক মুহূর্তও থাকবে না। কিন্তু ফোন তো ওর মায়ের নেই। ফোন করতে হলে হয় বাবা, নয় ভাইকে ফোন করতে হবে। নিপা ভাই এর নম্বরে ফোন দিলো।
নজরুল বোনের ফোন পেয়ে খুব খুশি।
-হ্যাঁ বল নিপা কী খবর ? তোরা কখন আসবি এ বাড়িতে? নাকি আনতে যাবো আমি ?
নিপা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। এদিকে ওর চিৎকারে রেজার ঘুম ভাঙে। ছুটে আসে রেজা ঘরের মধ্যে। ঘরে এসে নিজের মাথায় হাত দিয়ে বিছানার এক কোনে বসে পড়লো । ওদিকে নিপার কান্না বেড়েই চলেছে।
-ভাইয়া, তাড়াতাড়ি আসেন এই বাড়িতে। নইলে আমি রাস্তায় গিয়ে ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দেবো। আপনারা আমার এত বড় সর্বনাশ করবেন, কল্পনাও করিনি আমি। সত্যি করে বলেন, আপনি কী আমার আপন ভাই ?
নিপার চিৎকার শুনে রেজার মা’ও দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। মহিলা কিছু বলবার জন্য মুখ খুলতেই নিপা তেড়ে গিয়ে বললো,
-একটা কথাও বলবেন না আপনি। আপনারা ‘হা’ করলেই বুঝি কোন হাদিস বলবেন।
নজরুল, বাসায় নিয়ে আসে নিপাকে। রেজা আসেনি। এখন নিপা মায়ের বিছানায় শুয়ে আছে। প্রচন্ড জ্বর ওর। মাথায় পানি ঢালছে নিরু। নিপার মা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।এই বাড়িতে মেয়ে মানুষের কোনো কথা চলে না। কথা চলে শুধু দু’জন পুরুষের। নিপার শরীরের এই অবস্থায়ও ওর ভাই বলছে,
-ছেলেদের অমন একটু দোষ থাকেই। এসব মেনে নিয়ে চলতে হয়। খুব শিক্ষিত হয়ে গেছিস তো, তাই বেশি বুঝিস। আবারও তোকে ওই বাড়িতেই ফিরতে হবে। আমি রেখে আসবো।
কথাটা বলেই মায়ের দিকে কটমট করে তাকিয়ে আবারও নজরুল বললো,
-এই জন্যই বলেছিলাম মেয়েকে এত লেখাপড়া করানোর দরকার নেই। এখন দেখছেন তো, শিক্ষিত মেয়ের মোটা মোটা কথা। আসলেই এসব মেয়েরা সমাজ সংসারের জন্য ভয়ংকর! কখনো সংসারী হতে পারবে না এমন মেয়েরা।
নিপা ঠিক করেছে কোনভাবেই ফেরত যাবে না শ্বশুরবাড়ি।স্বামী তাকে বউ বলে মানছে না। সেখানে কিসের দাবী নিয়ে ওই বাড়ি যাবে ? আজ মেয়ে বলেই তাকে এভাবে অপমান করা হলো।তার মতামতের কোনো মূল্য দেওয়া হলো না।জোর করে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হলো। আর এই কাজগুলো করলো স্বয়ং ওর নিজের বাবা আর ভাই।রেজা লোকটার প্রতিও ঘেন্না ঝরে ঝরে পড়ছে নিপার। তবুও নিপা আজ লোকটার সাথে কথা বলবে। সবাই ঘর থেকে বের হলেই নিপা ফোন করবে রেজাকে। জানিয়ে দেবে, সে নিজেই তালাক দেবে রেজাকে। নিশ্চয় এতে খুব খুশি হবে লোকটা ! অবশ্য খুশি হবারই কথা !
মেয়ের চরম সর্বনাশ দেখে নিপার মা আর চুপ থাকতে পারছে না।সারাজীবন স্বামীর ন্যায় অন্যায় সব কিছুকেই মাথা পেতে মেনে নিয়েছে। এবার মেয়ের হয়ে কথা বলবে সে, স্বামী আর ছেলের সাথে। প্রয়োজনে স্বামীর টাকা নেবে না, মেয়ের বাকি পড়ালেখা শেষ করবার জন্য। বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া জায়গা জমি বিক্রী করবে মেয়ের ভালোর জন্য। দরকার হলে নিজের গহনাও বিক্রী করতে প্রস্তুত নিপার মা। এমএ পাশ করতে মাত্র তো আর একটি বছর বাকি। তারপর একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে।
-নিপা তুই ভয় পাস না মা। আমি আছি তোর সাথে। আমি তোকে টাকা দিবো, তুই পড়ালেখা চালিয়ে যা। নিজের পায়ে দাঁড়া। আমার মত ধুঁকে ধুঁকে বাঁচবি না তুই। মাথা উঁচু করে বাঁচার মত বাঁচবি মা।
নিপা বিছানা ছেড়ে মায়ের মুখোমুখি বসলো।তারপর মাকে জড়িয়ে ধরলো।
-সত্যি বলছেন আম্মা ? সত্যি ?আপনি সাথে থাকলে আমার আর কিচ্ছু চাই না। আম্মা আমি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছি। আপনাদেরকে জানাইনি। ভাইয়ার ভয়ে বলিনি। পরীক্ষাও ভালো হয়নি। হয়তো চান্স পাবো না।
নিপা ফিরে এসেছে তার চিরচেনা শহরে।প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠে। নিজ থেকে নিপা কাউকেই বলেনি ওর সাথে ঘটে যাওয়া কদিন আগের দুর্ঘটনার কথা। এ ভারী কষ্টের কথা , বলবেই বা কেন ! সুখের গল্প সবাইকে বলতে ইচ্ছে করে। দুঃখের নয়।তবুও সহপাঠীদের অনেকেই কানাকানি করছে, ‘একদিনের সিদ্ধান্তে নিপার বিয়ে হয়েছিলো আবার রাতটুকু পার হতেই তালাক। না জানি আসল ঘটনা কী’! নিপা অবাক হয়ে যাচ্ছে এসব কথা শুনে। কী জানি হয়তো মন্দ খবর বাতাসের আগে আগে যায় !
নিপার তালাক হবার পাঁচ ছয় মাস পরই ওর বড় ভাই নিজের বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। নজরুল কদিন থেকেই ‘বিয়ে করবো’ বলে মুখে ফ্যানা তুলছে। যদিও মায়ের কথাকে সে পাত্তা দেয় না, তবুও বিয়ের মত ব্যাপারে মায়ের অনুমতি নিতে চাচ্ছে। সকালে মায়ের ঘরে ঢুকে বেশ নরম গলায় বললো,
-আম্মা, শরীর কেমন আপনার ? রাতদিন শুধু মেয়েদের কথাই ভাবেন। আমি যে আপনাদের একমাত্র ছেলে, সেদিকে কোন নজরই নেই।
ছেলের কথাতে মুখে এক টুকরো হাসি ফুটলো নিপার মায়ের। হাসতে হাসতেই বললো,
-আমার খোঁজ খবর নিতে এসেছিস নাকি তোর কোন জরুরী কথা বলবি, বল।
-আম্মা, আমি লিজাকেই বিয়ে করবো।
-ও..তোর নিজের বেলায় তুই পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করতে চাস। অথচ বোনটার সর্বনাশ করলি !
নজরুল চরম রেগে গেলো মায়ের ওপর।
-উফ ! ফের পুরনো কথা তুলছেন ? ছ’মাস আগের কথা মনে হচ্ছে ভুলতে পারছেন না আপনি।
নজরুলের বিয়ে আজ। পুরো বাড়ি সেজেছে বিয়ের সাজে।সাত দিনের জন্য নিপা গ্রামের বাড়িতে এসেছে। যতটা পারছে গ্রামের আত্মীয়-স্বজন হতে দুরে দুরে থাকছে সে।আজ দুর সম্পর্কের এক দাদীর মুখোমুখি পড়তেই বললো,
-কিরে নিপা বিধবা হয়েই থাকবি নাকি ? বিয়ে শাদী কর আবার।
এমনতর কথা শুনে নিপা ‘থ’ বনে গেলো। ‘বিধবা’ ! এক দৌড় দিয়ে সেই যে নিপা ঘরে ঢুকলো আর বেরই হলো না। নিরু কয়েকবার বোনের কাছে এসে বসলো।বোনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-আপা, আপনি কবে কথা বলা শিখবেন ? মানুষের মুখের উপর উচিত কথা বলবেন। দেখবেন লোকজনই ভয় পাবে আপনাকে। কই ওঠেন তো, একটু সাজগোজ করেন।
নিপা কাঁদছে।
-নারে নিরু আমি সাজবো না। এই ঘরেই থাকবো। লক্ষ্য রাখিস কেউ যেন এদিকটাই না আসে। জীবনটা আমার শেষই হয়ে গেলো। কেন এত কষ্টের মধ্যে ফেললেন আল্লাহ আমাকে ?
নিরু, বোনের চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।
-ভালো কাজের সাথে আল্লাহ থাকে, জানেন ? আপনার সাথে যা হয়েছে, এর সাথে জড়িত সবকটা শয়তান। যেমন আমাদের ভাইয়া আব্বা আর ওই বাড়ির সব লোকগুলো। আপা, আমি সব সময় আপনার জন্য দোয়া করি। দেখবেন আপনার ভালোই হবে। আর অপেক্ষা করেন ওদের ভয়ংকর পরিণতি দেখার জন্য। ইশ ভাইয়ার বউ যদি ভাইয়াকে আচ্ছা মত টাইট দিতো, তবে শান্তি পেতাম।
নিপা, বোনের মাথায় হাত রাখলো।
-আহ হা নিরু, এমন বলে না। সবার মঙ্গল কামনা করতে হয়।
নজরুলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে দু’দিন আগে। আজ নিপা রাজশাহী চলে যাবে, বিকেলের বাসে। তাই মায়ের কাছে থাকতেই বেশি ভালো লাগছে ওর।এদিকে নতুন ভাবীর সাথেও তেমন একটা কথা বার্তা হয়নি ওর। ক’মাস আগে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা ওর জীবনটাই যেন ওলট পালট করে দিয়েছে। নিজের এতবড় অপমান কোন ভাবেই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি নিপা। আর ওর ভেতরের সেই কষ্টটা কেউই উপলব্ধি করতে পারেনি আর পারবেও না কখনো ! ও যে এখনো সুস্থ শরীরে দিব্যি বেঁচে আছে, এটার জন্য আল্লাহর কাছে নিজেই শুকরিয়া আদায় করে মেয়েটি। নিজের সাথেই প্রতিনিয়ত ওর লড়াই চলছে।
নতুন বউ লিজা, লাল টুকটুকে শাড়ি পরে ছোট ননদের হাত ধরে শাশুড়ির ঘরে ঢুকলো।নিপা,তখনো মায়ের কোলে মাথা রেখে গল্প করছে। আর নিপার মা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হটাৎ নতুন বউকে ঘরে ঢুকতে দেখে নিপা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। হাসি মুখে বললো,
-আসেন ভাবী, আসেন বসেন।
লিজা, শাশুড়ির পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।তারপর বিছানার এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে বসলো।নতুন বউয়ের মুখে কোন কথা নেই। তবে থেকে থেকেই নিপার দিকে তাকাচ্ছে। কী যেন দেখছে !বিষয়টা বেশ অস্বস্তিকর নিপার জন্য। বিষয়টিকে সহজ করবার জন্য নিপা বললো,
-আপনার কেমন লাগছে ভাবী, আমাদের বাড়িতে ?
নতুন বউয়ের ঝটপট উত্তর !
-মেয়েদের তো শ্বশুরবাড়ি মানেই নিজের বাড়ি। ভালোই লাগছে এখানে।তোমারও উচিত ছিলো তোমার সংসারটা টিকিয়ে রাখা। খামোখা বাপের বাড়িতে পড়ে আছো ভাই।
নতুন বউয়ের কথা শুনে নিপার শরীরের মধ্যে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেলো যেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো মেয়েটি। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললো,
-মুখে যখন যা আসে, সব সময় তা বলতে নেই ভাবী। আপনি নতুন আসছেন এই বাসায়, তাই আপনাকে সম্মান দিয়ে কথা বলছি। শুনেছি কলেজে নাকি পড়ান ? আল্লাহ জানেন স্টুডেন্টদের কী শিক্ষা দেন !
নতুন বউ চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে নিপার দিকে। মনে হচ্ছে ওই চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দেবে ননদকে।
জুবাইদা পারভীন লিপি
৪-৩-২০২১
#১ম_পর্বের_লিংক
https://m.facebook.com/groups/pencilglobal/permalink/2945766625712002/?comment_id=2946076139014384¬if_t=group_comment¬if_id=1614840647670821&ref=m_notif