অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,পর্ব-০১

0
2409

#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,পর্ব-০১
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ

লাইব্রেরীতে এসে সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনটা হাতে নিলো বর্ণালি মির্জা। তার প্রিয় মানুষটির লেখা ছাপানো হয়েছে এই ম্যাগাজিনে। প্রিয় মানুষটিকে ছুঁয়ে দেখা, তার কাছাকাছি আসায় অনেক বাঁধা। কারণ মানুষটি তো জানেও না কতোটা প্রিয় সে বর্ণের কাছে।
ম্যাগাজিনের পাতা উলটে দেখলো বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা আছে, অপ্রিয় মুহূর্ত ও শুকনো একটি গোলাপ। তার নিচে ছোট অক্ষরে লেখা আদনান চৌধুরি আদি।

বর্ণ মুচকি হাসলো। চার-পাঁচদিন আগেই আদি ভার্সিটি থেকে তাকে নিয়ে গিয়েছিলো একটি বাগানে। সেই বাগানের চারপাশে বটবৃক্ষের ছড়াছড়ি। সেই বটতলায় বসে আদি শুনিয়েছিলো তাকে গল্পের প্রথম কয়েক অংশ। আর গল্পটি শুনেই লোভ জন্মে গেছে। এখন তো পুরো গল্পটা না পড়লে বর্ণের তৃষাতুর মনটা আর শান্ত হবে না।
ম্যাগাজিনের দাম মিটিয়ে বর্ণ রিক্সায় উঠলো। চলন্ত রিক্সার মিষ্টি হাওয়া তার সামনে আসা চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ বর্ণের চোখ গেলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ফুচকার গাড়িতে। একটি মেয়ে স্কুল ছুটির পর হয়তো ফুচকা খেতে এসেছে। তার মাথায় দুটো বেনী কাঁধের দুপাশে ঝুলছে।

আর মেয়েটি দোকানদারকে বলছে, মামা আরেকটু ঝাল দাও। আরেকটু।

মেয়েটির কথা শুনে বর্ণ হাসলো। মনে পড়ে গেলো পিয়াসার কথা। আদির গল্পের পিয়াসাও স্কুল ছুটির পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতো আর তার চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়তো। আর সেই চিকচিক করা চোখের জলে ডুবে গিয়েছিলো একটা ছেলে, স্পর্শ যার নাম।

বাসায় আসার পর বর্ণ ফ্রেশ হয়ে ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় বসলো। আর পাশে রাখলো এক কাপ চা। আদি বলেছে এক কাপ চা না খেলে নাকি তার লেখার কোনো গতি হয় না।
আদির এমন ছোটখাটো অভ্যাস নিজের মাঝেই ধারণ করতে চায় বর্ণ।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বর্ণ পড়তে লাগলো কালো অক্ষরে ছাপানো একটি অনুভূতির গল্প। ধীরে ধীরে আদির লেখার মাঝে হারিয়ে গেলো বর্ণ।

||
সকালের ঘুমটা বেশি আরামদায়ক মনে হয় স্পর্শের। কিন্তু কলেজের ক্লাস শুরু হয় সকাল আটটায়। তাই বিছানা ছাড়ার পর থেকে কলেজের ইউনিফর্ম পড়া পর্যন্ত পুরোটা সময় তার চোখের পাতা আধো খোলা, আধো বন্ধ থাকে। তারপর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে। প্রথম ক্লাসে কোনো দিনই মনোযোগ আনতে পারে নি সে। কারণ ঘুম কাটতে কাটতে দ্বিতীয় ক্লাস শুরুর ঘন্টা পড়তো।
স্পর্শ কলেজের মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে একজন। তাই মাঝে মাঝে স্যার-ম্যাডামদের চোখে তার ক্লাসে ঘুমানোর ব্যাপারটা পড়লেও বকা ছাড়া বেশি শাস্তি পেতে হয় নি। সবার ধারণা স্পর্শ রাত জেগে পড়ে। তবে সবার ধারণা সত্যি। সে রাত জেগে পড়ে ঠিকই, কিন্তু পাঠ্যপুস্তক নয়, সাহিত্যের বই হয় তার রাতের সঙ্গী।

ল্যাব ক্লাস শেষে কলেজ থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি খোলা মাঠে এসে দাঁড়ালো। আজ হুট করেই পায়ে ব্যথা করছে তার। তাই বাসায় ফেরার মতো শক্তি না থাকায় মাঠের ভেতর ঢুকে তার একপাশে কোণায় পড়ে থাকা একটি বেঞ্চে ধপ করে বসে পড়লো স্পর্শ।

মাঠটি বিশাল বড়ো। আর তার সামনে একটি স্কুল। তবে এটি স্কুলের মাঠ নয়। এটি এলাকার মাঠ। তাই সবার জন্যই উন্মুক্ত।

স্কুলের আশেপাশে গার্জিয়ানদের ভীড়। তাদের দেখে মনে হচ্ছে বড়সড় একটা রেইস হবে কিছুক্ষণ পর। মাঠে বাঁশির শব্দে যেমন দৌঁড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ঠিক তেমনই এখানেও হয়তো কিছুক্ষণ পর, স্কুলের গেইট খোলার সাথে সাথেই কার আগে কে তাদের সন্তানদের নিয়ে বের হতে পারবে সেই প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

মাঠের আশেপাশে আরো কিছু মহিলা গার্জিয়ান বসে আছেন আর উৎসুক দৃষ্টিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া গার্জিয়ানদের দেখছেন। আর কিছুক্ষণ পর পর গল্পের মধ্যে ডুব দিচ্ছেন। তাদের গল্পের মূল বিষয় বর বাসায় বসে বসে কি করে, বরকে কিভাবে সন্দেহ করা যায়, বরের সাথে কিভাবে ঝগড়া করা যায়, বরকে কিভাবে কন্ট্রোল করা যায়। আর এসব আলোচনার তুঙ্গে থাকেন সে-ই, যার বর অফিস থেকে বাসায় আসার পর তার জন্য কি আনে, তাকে বিবাহবার্ষিকীতে কি গিফট করে, আর ছুটির দিনে কোথায় কোথায় ঘুরতে নিয়ে যায় এসব নিয়ে গল্প করে।

স্পর্শ আন্টিগুলোর কথায় মুচকি হাসলো। কারণ স্পর্শের মাও এমন চাপাবাজী করেছিলো অনেকবার, যখন স্পর্শ স্কুলে পড়তো। তাকে স্কুল থেকে আনতে যাওয়ার পর থেকে শুরু করে বাসায় ঢুকা অবধি এইসব গল্প করতেই থাকতেন। আর একদিন তো স্পর্শ মায়ের কথা অবাক হয়ে শুনতে শুনতেই বেখায়ালে পাশের একটি নর্দমায় পড়ে গিয়েছিলো।
স্পর্শের বাবা মোটেও শৌখিন মানুষ নন। তিনি যথেষ্ট ব্যস্ত মানুষ। আর নিজেকে নিয়েই থাকেন। কথা কম বলেন, এমনকি স্ত্রীর সাথেও অপ্রয়োজনে কথা বলেন না। এমন ব্যক্তিত্বের মানুষের স্ত্রীরা যদি বরকে নিয়ে চাপাবাজী করে তখন কি ভালো লাগে? তবুও স্পর্শ এটি মায়ের মনের আক্ষেপ হিসেবে ধরে নেয়।

গেইট খোলার সাথে সাথেই একটা বড়সড় জটলা লেগে গেলো স্কুল গেইটের সামনে। মোটামুটি দশমিনিটের মাথায় ধীরে ধীরে জটলা কমলো। স্পর্শের পায়ের ব্যথা এখন একটু কমেছে, তাই ভাবলো সামনে থেকেই রিক্সা নিয়ে আজ বাসায় যাবে।
স্পর্শের বাবা খুব হিসেবি মানুষ। তিনি ছেলেকে হাত খরচ দেন না। যার কারণে প্রতিদিন কলেজটা পায়ে হেঁটে পার করতে হয়। তবে মাঝে মাঝে বন্ধুর কম্পিউটারে বসে এডিটিং এর কাজ করে অল্প কিছু টাকা আয় করে সে।

হাঁটতে হাঁটতে মাঠের বাইরে চলে এলো স্পর্শ। হঠাৎ তার চোখ আটকে গেলো রাস্তার বিপরীত পাশে ফুচকার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়েকে দেখে।
মেয়েটির পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম, আর কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ। মাথায় সুন্দর করে দুইটি বেণী করেছে। চেহারায় কোনো বিশেষত্ব নেই, তবে মায়াবী চেহারা। স্পর্শের চোখে মেয়েটি আলাদা হওয়ার কারণ মেয়েটি অস্থির প্রকৃতির। এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির স্বভাব নয়।
মেয়েটির নাম পিয়াসা৷ তবে তা স্পর্শের জানার বাইরে। জানবে কিভাবে, আজ প্রথমই তো দেখছে তাকে। পিয়াসা স্কুলের সবচেয়ে শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। তাকে দেখলে মনে হবে খুবই ভদ্র। কিন্তু ভেতরে ভেতরে শেয়ালের ফন্দি এঁটে বেড়ায়।
||

এতোটুকু পড়েই বর্ণ হাসলো। বর্ণের হঠাৎ আদির একটা কথা মনে পড়ে গিয়েছে।
আদি বলেছিলো, তোমাকে যতোটা ইনোসেন্ট ভেবে ছিলাম ততোটা ইনোসেন্ট কিন্তু তুমি একদমই নও।

বর্ণ পিয়াসার মাঝে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে। মনে মনে ভাবলো,
আদি কি আমায় কল্পনা করে বানিয়েছে এই চরিত্র?

কি ভেবে মুচকি হেসে বর্ণ আবার গল্পের মাঝে ডুব দিলো।

||
ফুচকাওয়ালা মামার কাছে গিয়ে পিয়াসা বললো,
পিয়াসা: মামা তুমি তোমার রেগুলার কাস্টমারকে অবহেলা করতে পারো না এভাবে!

দোকানদার দাঁত খেলিয়ে বললেন,
মামণি, তুমিই তো আমার ছোট দোকানটা আলো করে রাখছো। দেখতাছো তো কতো ভীড়! আমি বানায় দিতাছি তোমারে। একটু সবুর করো।

স্পর্শ রিক্সা নেওয়ার কথা ভুলে গেলো। পায়ের ব্যথার কথাও আর মাথায় নেই। দোকানদারের সাথে পিয়াসার ভাব দেখে ভালোই লাগছিলো তার।

স্পর্শ রাস্তা পার করে মেয়েটির কাছ থেকে একটু দূরে দাঁড়ালো। আর আড়চোখে তাকে দেখছিলো।
ফুচকার প্লেটটা নিয়ে একটা মুখে পুরে দিলো। পিয়াসার ফুচকা খাওয়া দেখে স্পর্শের ক্ষিধে মিটে গেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গিলছে তো গিলছে। তারপর হাতের আঙ্গুলে লেগে থাকলে সেটিও চেটে নিচ্ছে।

স্পর্শ বিড়বিড় করে বললো,
স্পর্শ: হাতটাও তো ধুয়ে নেয় নি!

পিয়াসা এক প্লেট ফুচকা শেষ করে একটা বেঞ্চে বসলো। চোখ দিয়ে টপ টপ পানি পড়ছে। মাথাটাও একটু ঝিনঝিন করছে। ঝালে তার ঠোঁট দুটি ফুলে লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। নাকটা লাল হয়ে গেছে। হাত লাগাতে পারছে না মুখে, নয়তো মুখটা জ্বালা করবে যে!

দোকানদার আংকেল এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন। সেটি দিয়ে হাতটা ধুয়ে, মুখে পানির ছিটা দিলো পিয়াসা। এরপর ব্যাগ থেকে একটা টিস্যু বের করে, হালকা ভিজিয়ে সেটি মুখের উপর মেলে ধরলো।
||

হঠাৎ দরজার কড়াঘাতে বর্ণ তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে ঘরে এসে ম্যাগাজিনটা বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেললো। মা একটা কাজে ডেকেছিলো তাকে। ডায়নিংয়ে এসে চোখ গেলো সদ্য ভাজা আলুর চপের দিকে। আর সাথে সাথেই মনে পড়ে গেলো ভার্সিটির প্রথম দিনের কথা। নতুন নতুন খাবার টেস্ট করা বর্ণের স্বভাব। আর প্রথম দিনও ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে ফুড ম্যানু দেখে সব ধরণের ঝাল নাস্তা অর্ডার করে গোগ্রাসে গিলেছিলো সে৷ ঝাল খেতে খেতে নাকের পানি, চোখের পানি একসাথে হয়ে গিয়েছিলো। আর তখনই একটা ছেলে এসে তার হাতে একটা ভেজা টিস্যু দিয়েছিলো। আর বলেছিলো মুখের উপর মেলে ধরলে একটু আরাম লাগবে। যদিও বর্ণ অতিরিক্ত ঝালের যন্ত্রণায় ছেলেটির মুখের দিকে একটুও তাকায় নি।

বর্ণ ভাবছে, তবে কি ছেলেটা আদি ছিলো?

||
স্পর্শের আজ আর বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই। পিয়াসার পিছু নিতে মন চাইছে। কিন্তু স্পর্শের সব আশায় পানি ঢেলে দিলো স্পর্শের এক বাল্য বন্ধু। রাস্তায় হঠাৎ স্পর্শকে দেখে তাকে টেনে নিজের বাসায় নিয়ে গেলো। বন্ধুটির বাসা কাছেই ছিলো। স্পর্শও আর ফেলতে পারছিলো না। অনেক জোর করছিলো সে। শেষমেশ চোখের পলকেই হারিয়ে ফেললো পিয়াসাকে। রাস্তা পার করেই দোকানের দিকে ফিরে তাকিয়ে পিয়াসার চিহ্নও পেলো না সে।

বাসায় ফিরলো মুখ ভার করে। বাসার অবস্থা দেখে আরো বিরক্ত লাগছে তার। চারদিন হলো নতুন বাসাটিতে উঠেছে। সব এখনো এলোমেলো। এখন ক্লান্ত শরীরে ঘর গুছানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। তাই ধপ করে কাভার ছাড়া বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আর সেখানেই ঘুম। ঘুমের মাঝেই পিয়াসার মুখটা ভেসে উঠলো। পিয়াসা স্পর্শের দিকে তাকিয়ে হাসছে। কি মিষ্টি সেই হাসি! চোখের গভীরে অশ্রুগুলোও চিকচিক করছে।

মায়ের চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙলো স্পর্শের। সাথে সুন্দর স্বপ্নটাও ভেঙে গেলো।

স্পর্শের মা: কি রে, আমি এই বাচ্চা দুইটা সামলাবো নাকি এই ঘর? আমাকে একটু সাহায্য কর না! কাজ শেষ করে, তারপর ফ্রেশ হয়ে না হয় ঘুমাবি!

স্পর্শ ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বাবা-মায়ের বড় সন্তান স্পর্শ। তার দুটি জমজ বোন আছে, বয়স এক বছর মাত্র। নাম রিমঝিম। তবে কার নাম রিম, আর কার নাম ঝিম তা স্পর্শের মাথায় একটু দেরীতে ঢুকে। বাচ্চা এখনো তাই আলাদা করতে সময় লাগে স্পর্শের। আর স্পর্শের বাচ্চা একদম অপছন্দ। রিমঝিমের সাথেও খুব কম সময় কাটায় সে। তাই বোনগুলোর চোখেও তাদের একমাত্র বড় ভাইয়া অপরিচিত মানুষ। দেখলেই ছুটে পালিয়ে যায়। স্পর্শও কাঁদানোর একটা সুযোগও ছাড়ে না। আবার মাঝে মাঝে মায়াও লাগে। কিন্তু তবুও আদর করার জন্য কাছে যাবে না তাদের।

স্পর্শ ঘর পরিস্কার করে ঘুছানোর কাজে লেগে পড়লো। কাজ করতে করতে বিরক্ত লাগছিলো খুব। তাই হাওয়া খাওয়ার জন্য একটু বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।
হঠাৎ চোখ আটকে গেলো সামনের বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে।
রুমের জানালাটি খোলা ছিলো আর সাথে পর্দা না থাকায় রুমের ভেতরের সম্পূর্ণ অংশ দেখা যাচ্ছে।
একটি মেয়ে বিছানায় দাঁড়িয়ে লাফাচ্ছে। আবার কারো সাথে হয়তো কথা বলছে, আবার হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। স্পর্শ এসব দেখে আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না। শব্দ করেই হেসে দিলো। তবে তাদের বিল্ডিয়ের মাঝে কিছুটা দূরত্ব থাকায় হাসির শব্দটি মেয়েটির কানে এসে পৌঁছায় নি আর।

মেয়েটি এখনো বিছানায় লাফাচ্ছে। স্পর্শের ইচ্ছে করছে চেঁচিয়ে বলতে,
স্পর্শ: তোমার স্ক্রু কোথায় পড়েছে আমায় বলো, আমি খুঁজে দিয়ে বানরের মান-সম্মান বাঁচিয়ে দেই।

হঠাৎ মেয়েটি দৌঁড়ে বারান্দায় এলো। হয়তো কিছু একটা খুঁজতে এসেছে। আবছা আলোয় মেয়েটির অবয়ব বোঝা যাচ্ছে।

মেয়েটি একটু জোরেই বললো,
তুবা লাইটটা জ্বালিয়ে আমার চোখ দুইটা উদ্ধার কর। অন্ধকারে পেঁচার চোখ লাগিয়ে রাখি নি আমি।

হঠাৎ লাইটা জ্বলে উঠলো। আর সেই আলোতে মেয়েটির মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

স্পর্শ: এইটা তো আজকের ঝাল ফুচকা খাওয়া মেয়েটি!

স্পর্শের এতো বেশি ভালো লাগছিলো যে, সে খুশিতে একটু জোরেই ‘ইয়েস’ বলে উঠলো।

আর পিয়াসা শব্দটি শুনেই বারান্দার এদিক ওদিক তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
পিয়াসা: তুবা, এখানে বিশাল বড়সড় একটা সাপ আছে।

তুবা পিয়াসার খালাতো বোন। সে এক সপ্তাহের জন্য বেড়াতে এসেছে খালামণির বাসায়। বারান্দায় এসে পিয়াসার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
তুবা: কোথায় সাপ?

পিয়াসা: হিসহিস একটা শব্দ শুনলাম।

পিয়াসার কথাটি শুনে স্পর্শ মুখ চেপে হাসলো। তারপর আস্তে করে ঘরে ঢুকে গেলো।
সারারাত স্পর্শ ঘরে ঘরে পায়চারি করেছে, আর কিছুক্ষণ পর পর জানালায় উঁকি দিয়ে পিয়াসার রুমের জানালার দিকে চোখটা ব্যস্ত রেখেছে।
কিন্তু রুমের লাইট জ্বলে আবার কিছুক্ষণ পর নিভে যায়। তবে কাউকে আর দেখা যায় না। ছটফট করছে স্পর্শের মন। এতোটা অস্থির আগে কখনো লাগে নি তার৷ এই অস্থিরতার কারণটা কি? একটা মেয়ে আজ প্রথম তার চোখে পড়েছে, আর একদিনেই তার পুরো হৃদয়ে জায়গা নিয়ে ফেলেছে? এই মেয়ে তো কোনো সাধারণ মেয়ে না। তবে এখন স্পর্শের মনের বাইরে আর যাবে না। কারণ যে একবার এই হৃদয়ে জায়গা নেয়, তাদের স্পর্শ সহজে ভুলতে পারে না। আগলে রাখে যত্নের সাথে।
||

ম্যাগাজিনটা বন্ধ করে বর্ণ সিলিং ফ্যানের দিকে তাকালো। মনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তার। আদিকে আগামীকাল জিজ্ঞেস করবে গল্পের পরের অংশে কি হবে। সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বলে কথা। এতো ধৈর্য বর্ণের নেই।

গল্পের স্পর্শ কি সেই রাতে আর ঘুমোতে পেরেছিলো? নাকি ভোর অবধি জানালায় উঁকিঝুঁকি দিয়ে পিয়াসাকে খুঁজেছিলো? স্পর্শের চোখে ঘুম আসুক বা না আসুক, বর্ণের চোখ ঘুমের নেশায় মত্ত ছিলো। তাই স্পর্শকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো বর্ণ।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here