#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,পর্ব-১৭
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||
পিয়াসা মলিনমুখে বসে আছে। স্পর্শ বন্ধুদের সাথে হাসি-তামাশায় ব্যস্ত। নিজেকে খুব একা একা লাগছে পিয়াসার। এক কোনে জড়সড় হয়ে বসে আছে সে। কেউ তার সাথে একটা কথাও বলছে না। পিয়াসা স্পর্শের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু স্পর্শের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে নিজের মতোই কথা বলে যাচ্ছে। হঠাৎ সূচি পিয়াসার পাশে এসে বসলো।
সূচি: তুমি একা একা বসে আছো যে?
পিয়াসা মুচকি হেসে বললো,
পিয়াসা: আমি আসলে কাউকে চিনি না।
সূচি: তাহলে পরিচয় হয়ে নেয়। আমি সূচি। তোমার নাম?
পিয়াসা: প…..
স্পর্শ পিয়াসাকে বলতে না দিয়ে নিজেই বললো,
স্পর্শ: সুচিস্মিতা।
পিয়াসা স্পর্শের মুখের দিকে তাকালো।
সূচি: ওয়াও, তোমার নামটা তো ভারী সুন্দর।
পিয়াসা সৌজন্যমূলক হাসি দিলো।
কিন্তু মনে মনে বললো,
পিয়াসা: স্পর্শ খুবই অদ্ভুত একটা ছেলে। আমার আসল নামটাও কখনো জানতে চায় নি। আর কাউকে জানাতেও দিচ্ছে না। আমি না স্পর্শকে একদমই বুঝতে পারছি না। কি চায় ও? কেন এমন করছে? বয়ফ্রেন্ডরা কি এমন হয়? এমন হলে তুবা আমাকে কেন বলে নি? তুবার বয়ফ্রেন্ডরা তো এমন ছিলো না।
সূচির কথায় ভাবনা থেকে ফিরে এলো পিয়াসা।
সূচি: স্পর্শ, তুমি তাড়াতাড়ি কেকটা কেটে ফেলো। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
সূচি স্পর্শের হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে গেলো। পিয়াসা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। সবাই স্পর্শকে ঘিরে রেখেছে। আর পিয়াসা অনেক দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। স্পর্শ একটিবারের জন্যও পিয়াসাকে ডাকছে না। এমনকি পিয়াসার দিকে তাকাচ্ছেও না। অনেক অপমানজনক লাগছিলো তার। কেক কাটা শেষে স্পর্শ প্রথম কেকটা সূচিকে খাইয়ে দিলো। তারপর একে একে সব বন্ধুদেরও খাইয়ে দিলো। কিন্তু পিয়াসাকে যেন ভুলেই গেছে স্পর্শ।
পিয়াসা চুপচাপ একটা চেয়ারে বসতে যাবে, তখনই সূচির বান্ধবী, জয়া পিয়াসাকে আস্তে করে একটা ধাক্কা দিলো। যার ফলে পিয়াসা হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেলো। আর তার হাতের সাথে লেগে দুটো গ্লাস মেঝেতে পড়ে ঝনঝন শব্দে ভেঙে গেলো।
মুহূর্তেই এমন কিছু ঘটে যাবে তা পিয়াসা মোটেও আশা করে নি। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার। তাড়াহুড়ো করে উঠতে যাবে তখনই কাচের টুকরো হাতে লেগে খানিকটা অংশ চিলে গেলো।
জয়া বলে উঠলো,
জয়া: স্পর্শ, তোমার কাজিনের কি ম্যানার্স নেই? নাকি এই প্রথম রেস্টুরেন্টে এসেছে! এভাবে কেউ হুড়োহুড়ি করে? ঠিকভাবে বসতেও জানে না।
পিয়াসা অপেক্ষায় ছিলো স্পর্শ তাকে ধরে উঠাবে। কিন্তু স্পর্শ সূচির পাশে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি জয়ার কথার কোনো প্রতিবাদও করলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিয়াসা নিজ থেকেই উঠে দাঁড়ালো।
স্পর্শ এবার পিয়াসার সামনে এসে বললো,
স্পর্শ: তুমি কি করেছো এটা? কি মনে করবে সবাই? আমার বন্ধুদের সামনে তুমি আমাকে ছোট করে দিলে?
পিয়াসা চাপা কন্ঠে বললো,
পিয়াসা: আমাকে এখানে জোর করে নিয়ে এসেছো কেন? আমি কি আসতে চেয়েছি?
স্পর্শ পিয়াসার এমন কথায় কিছুটা ভড়কে গেলো। পিয়াসার হাতটা শক্ত করে ধরে তাকে টেনে নিয়ে গেলো ওয়াশরুমের পাশে।
স্পর্শ: সুচিস্মিতা, তুমি রেগে যাচ্ছো কেন?
পিয়াসা: প্লিজ স্পর্শ, বন্ধ করুন আপনার নাটকগুলো!
স্পর্শ: তোমার কি মনে হচ্ছে আমি নাটক করছি?
পিয়াসা: না, আপনি আমাকে অপমান করছেন। আপনি…….
নিশান চলে আসায় কথাটির অর্ধপথেই বাঁধা পড়লো।
পিয়াসাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
নিশান: সরি। কিন্তু তুমি যা করেছো, তা আসলেই লজ্জাজনক৷ এতো বড়ো মেয়ে এমন করে?
পিয়াসা: এক্সিডেন্ট যদি আপনাদের কাছে লজ্জাজনক হয়। তাহলে মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না কখনো। লজ্জায় মাথা নত করে রাখতে হবে।
স্পর্শ পিয়াসার হাত চেপে ধরলো।
স্পর্শ: তুমি আমার বন্ধুর সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?
পিয়াসা: সরি। কিন্তু আমার এখন বাসায় যাওয়া উচিত।
পিয়াসা হন হন করে বের হয়ে যেতে নেবে তখনই জয়া পিয়াসার হাত ধরে বললো,
জয়া: কিছু খাবে না? নাকি খেতে পারবে না?
পিয়াসা: মানে?
জয়া: মানে, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই জানো না।
জয়া স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললো,
জয়া: তোমার কাজিন কি গ্রামে থাকে? তুমি শুধু শুধু ওকে এনে তোমার জন্মদিন পার্টিটা নষ্ট করে দিলে।
পিয়াসা হাঁ করে তাকিয়ে আছে স্পর্শের দিকে। জয়া কথাটি বলেই তকিরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো। তকির ইশারায় জয়ার অভিনয়ের প্রশংসা করলো। কিন্তু সূচির পিয়াসার প্রতি মায়া জন্ম নিয়েছে। সে পিয়াসার কাছে এসে বললো,
সূচি: শোনো, তুমি মন খারাপ করো না। আসো আমার সাথে।
সূচি জোর করে পিয়াসাকে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। অনেক কষ্ট করে নিজেকে আটকে রেখেছে পিয়াসা। এই মুহূর্তে স্পর্শের নাক ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
এদিকে ভাঙা কাচ পরিষ্কার করার পর সবাই খেতে বসলো। পিয়াসা ফোন বের করে তুবাকে মেসেজ করে সব কথা সংক্ষিপ্ত ভাবে জানালো।
পিয়াসা: তুবা, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যা প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না কিছু।
তুবা তখন অনলাইনে ছিলো। পিয়াসার মেসেজ দেখে তার নিজেরও অনেক খারাপ লাগলো।
তুবা: এড্রেস সেন্ড কর।
পিয়াসা লোকেশান অন করে শেয়ার করে দিলো।
তুবা: অনেক দূর। এতো দূর কিভাবে আসবো?
পিয়াসা: আমার রাস্তাও মনে নেই। এই জায়গায় আগে আসি নি। আমি বাসায় কিভাবে যাবো?
তুবা: আমার আড়াই ঘন্টা লাগবে আসতে। বাসে করেই আসতে হবে। তোর স্পর্শ চৌধুরীর মতো গাড়ি নিয়ে সাঁইসাঁই করে আসতে পারবো না।
পিয়াসা: এদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যার পরেও বের হবে না। তুই বরং এখনই রওনা দে।
স্পর্শ পিয়াসার সামনে ঠোকা দিয়ে বললো,
স্পর্শ: খাবে না?
পিয়াসা মাথা নেড়ে বললো,
পিয়াসা: না।
হঠাৎ জয়া পিয়াসাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
জয়া: তুমি স্পর্শকে কি গিফট করেছো জন্মদিনে?
পিয়াসা ভ্রু কুঁচকে তাকালো জয়ার দিকে। মনে মনে বললো,
পিয়াসা: মেয়েটা আমাকে ম্যানার্লেস বলেছে, আর এখন নিজেও উদ্ভট প্রশ্ন করছে ম্যানার্লেসের মতো।
জয়া: কি হলো?
পিয়াসা মুচকি হেসে বললো,
পিয়াসা: ভাইয়াকে গিফট করেছি, ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস করেন।
স্পর্শ: হোয়াট?
পিয়াসার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে স্পর্শ অবাক হয়ে গেলো।
পিয়াসা: হ্যাঁ, ভাইয়া। আপনি আপুকে দেখান নি আমার গিফট? ওই যে খুলশিতে দিয়েছিলাম, মনে আছে দুইঘন্টার সেই দিনটি?
নিশান আর তকির ভ্রু কুঁচকে স্পর্শের দিকে তাকালো। পিয়াল ফিক করে হেসে দেওয়ায় স্পর্শ আরো ভড়কে গেলো।
স্পর্শ: সুচিস্মিতা খেয়ে নাও। বেশি কথা বলো না।
পিয়াসা: কেন ভাইয়া? আজ আমার দেওয়া গিফটটা পড়ে আসলে ভালোই লাগতো। আপনার ব্লেজারের সাথে একদম মানাতো।
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে পিয়াসার দিকে তাকালো। এখনো পিয়াসার দেওয়া গিফট খুলেই দেখে নি সে। সেদিন বাড়িতেই রেখে এসেছিলো। আর অন্যদিকে পিয়াসা তাকে বার বার ভাইয়া ডাকছে, যেটি একদম ভালো লাগছে না তার।
স্পর্শ মনে মনে বললো,
স্পর্শ: এই ফাজিল দুইটাকে কে বলেছে জয়াকে উল্টোপালটা কথা শিখিয়ে দিতে। এখন আমাকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে।
এদিকে-
ওয়াশরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ চোখের জল ফেললো পিয়াসা। আজ স্পর্শের ভিন্ন রূপ দেখেছে সে। আয়নাতে নিজের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে আরো কান্না পাচ্ছে তার।
মনে মনে বললো,
পিয়াসা: আমি এখনো সেই বৃষ্টিসিক্ত বেলায় রেইনকোটে আবদ্ধ থাকা তোমাকেই খুঁজি আমার আশেপাশে। সেই অবেলায় ব্যস্ত রাস্তায় আগন্তুক হয়ে তোমার শার্টের কোণায় আঙ্গুল পেঁচিয়ে রাখার লোভটা হুটহাট জেগে উঠে। সেই কালো কালির অক্ষরে তোমার অনুভূতির পত্রগুলো আমার নিরব মন বার বার আওড়ে যায়। তোমার দেওয়া সেই গোলাপের চারাতে ফুটে উঠা অজস্র ফুলের মলিন রং আমাকে তোমার মাঝেই ডুবিয়ে রাখে। কিন্তু চোখ মেলে আমি আর সেই অতীতকে বর্তমানে খুঁজে পাই না। তুমি কি এমনই ছিলে, নাকি এখন এমন হয়ে গেছো? আমি কি তবে ভুল মানুষের অপেক্ষায় ছিলাম?
চোখ মুছে জামার দিকে একনজর তাকালো পিয়াসা। সাথে সাথেই কিছুক্ষণ আগে ঘটা ঘটনাগুলো মনে পড়ে গেলো তার।
পিয়াসা সূচির কথামতো চুপচাপ বসে ছিলো চেয়ারে। তখন স্পর্শ কেমন যেন রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। হয়তো ভাইয়া বলার কারণে তার রাগটা উঠেছে। কিন্তু পিয়াসারও বা কি করার আছে। স্পর্শ নিজেই তো সবার সামনে তাকে কাজিন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
তখন ওয়েটার কয়েক কাপ কফি টেবিলে দিয়ে যায়। কিন্তু পিয়াসার কপালটাই বড্ড খারাপ। আগের বার জয়ার ধাক্কা খেয়ে পিয়াসার হাত লেগে গ্লাস পড়ে গেলেও এবার পিয়াসা ভুলবশত কফির একটা কাপ ভেঙে ফেলে। শুধু কাপ ভাঙে নি, গরম কফিগুলো পিয়াসার গায়েও এসে পড়েছে। জামা তো নষ্ট হয়েছেই, সাথে শরীরের যেই অংশে কফিগুলো পড়েছে সেই অংশে বড্ড জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যায়।
এবারের এক্সিডেন্টটা স্পর্শ ও তার বন্ধুদের পরিকল্পনার বাইরে ছিলো।
অন্যদিকে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার এবার উঠে আসেন। তিনি মুখে কিছু না বললেও তাদের উপর প্রচুর বিরক্ত হোন। তাই স্পর্শ পিয়াসাকে সবার সামনে একটু কড়া ভাষায় বললো,
স্পর্শ: ইডিয়ট গার্ল। তোমাকে নিয়ে আসাটাই আমার ভুল ছিলো। কি করেছো এসব?
জয়া তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
জয়া: স্পর্শ, তুমি বরং মেয়েটাকে একটু বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলো। বা একটা কাজ করো, গাড়িতে উঠিয়ে দাও।
পিয়াসার দিকে তাকিয়ে বললো,
জয়া: তুমি বাসায় যেতে পারবে একা একা?
পিয়াসা কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে
আসে।
বর্তমানে-
পিয়াসা মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে স্পর্শ সূচির সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তাকে একটু দেখতেও এলো না? সে কোথাও পুড়ে গেছে কিনা সেই দিকেও স্পর্শের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
পিয়াসা আর কোনোদিকে না তাকিয়ে চেয়ারে পড়ে থাকা তার ব্যাগটি নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো। এরপর হাঁটতে লাগলো এলেমেলো ভাবে। হাঁটতে হাঁটতে একটা দিঘির পাড়ে এসে দাঁড়ালো। চারপাশে নিরবতা বিরাজ করছে। পিয়াসা নিজেই নিজের ফুঁপিয়ে উঠার শব্দ শুনতে পাচ্ছে। নিজেকে শান্ত করার জন্য ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এক নিঃশ্বাসে শেষ করে দিলো। এরপর ফোনটা হাতে নিয়ে তুবাকে মেসেজ দিতে লাগলো। সব কিছুই তুবাকে মেসেজে জানাচ্ছে আর তার চোখ বেয়েও পানি গড়িয়ে পড়ছে। অশ্রুসিক্ত চোখে সব কিছুই ঝাপসা লাগছে পিয়াসার। তাই অনেকটা দিঘির কিনারায় চলে এলো। তখনই স্পর্শের কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকাতেই পা ফসকে দিঘির জলে গিয়ে পড়লো।
পিয়াসা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই স্পর্শও বের হয়েছিলো। আর যা-ই হোক, স্পর্শ তার সুচিস্মিতাকে কি একটা অপরিচিত জায়গায় কখনো একা ছাড়বে? পিয়াসার পিছু পিছু এসে দেখে পিয়াসা একটা দিঘির কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। স্পর্শ তখনই পিয়াসাকে ডাক দিলো।
স্পর্শ: সূচিস্মিতা!
পিয়াসা পেছনে ফেরার পর পিচ্ছিল পাড়ে নিজের ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে যায়। এদিকে পিয়াসা সাঁতার জানে না। সে পানিতে পড়েই চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। মনে মনে ভেবে ফেলে আজ তার শেষ দিন। সে হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ি করতে থাকে। স্পর্শ দিঘির পাড়ে এসে থমকে যায়। তার চোখের সামনে পিয়াসা পানিতে ছটফট করছে, কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না। কিভাবেই বা সাহায্য করবে, সে নিজেই তো সাঁতার জানে না। আর হাত এগিয়ে দিয়েও কোনো লাভ হয় নি, কারণ পিয়াসা স্পর্শের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
স্পর্শ চেঁচামেচি করে সবাইকে ডাকতে লাগলো। ভয়ে তার বুকটা শক্ত হয়ে গেছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। স্পর্শের চোখ মুখ একেবারে লাল হয়ে গেছে। এখনই হয়তো কেঁদে দেবে সে।
হঠাৎ একটা ছেলে দিঘির পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সেই পানির ছিটেফোঁটা স্পর্শকে একদম ভিজিয়ে দিয়েছে। ছেলেটি পিয়াসাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। তারপর তাকে উঠিয়ে নিয়ে এলো। স্পর্শ ছেলেটির কোল থেকে পিয়াসাকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো। তারপর শক্ত করে পিয়াসার মাথাটা বুকের সাথে বেঁধে রাখলো।
ছেলেটি বললো,
কি করছেন মিস্টার জেন্টলম্যান? তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়ে এমন রোমান্টিক সিন ক্রিয়েট করছেন কেন?
স্পর্শ ছেলেটির কথা শুনে পিয়াসাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে লাগলো। পিয়াসা নিভু নিভু চোখে স্পর্শের মুখের দিকে তাকালো। স্পর্শের বন্ধুরাও ততোক্ষণে চলে এসেছে। পিয়াসাকে কোলে তুলে গাড়িতে উঠালো স্পর্শ। সবার ভীড়ের মাঝে স্পর্শ পিয়াসাকে নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। আর সেই হারিয়ে যাওয়া দৃশ্যটা দেখছে সেই ছেলেটি, যার চোখে এখনো লেগে আছে পিয়াসার মুখটি। একদম শান্ত, স্নিগ্ধ পিয়াসার চেহারায় পানির ফোঁটাগুলো চিক চিক করছিলো।
মেয়েদের মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতিতে আলাদা সুন্দর লাগে।
এদিকে স্পর্শ পিয়াসাকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলো। পিয়াসার মাথাটা একটু ভার ভার লাগলেও, শরীরের শক্তিটা হারিয়ে যায় নি। আর কেবিনেও কেউ ছিলো না তখন। তাই পিয়াসা গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে পড়লো কেবিন থেকে। বাইরে এসে ভেজা কাপড়ে হাঁটতে লাগলো সে। স্পর্শ পিয়াসাকে দেখে তাড়াতাড়ি ছুটে এলো তার কাছে।
পিয়াসাকে কেমন যেন উন্মাদ মনে হচ্ছে। স্পর্শ পিয়াসার গালে হাত দিয়ে বললো,
স্পর্শ: আই লাভ ইউ সুচিস্মিতা। প্লিজ একটু শুয়ে থাকো।
পিয়াসা: বাসায় যাবো আমি।
স্পর্শ: সরি, এবারের মতো ক্ষমা করো।
পিয়াসা চিৎকার করে বললো,
পিয়াসা: বাসায় যাবো আমি।
পিয়াসার চিৎকার শুনে স্পর্শের বন্ধুরা নিজেদের মাঝে কথা বলা বন্ধ করে পিয়াসার দিকে তাকালো। স্পর্শও মোটামুটি অপ্রস্তুত। আশেপাশের অনেকেই হাঁ করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
স্পর্শ: আচ্ছা, ঠিক আছে।
স্পর্শ তার ব্লেজারটা পিয়াসার গায়ে চড়িয়ে দিলো। পিয়াসা ব্লেজারটা সাথে সাথে খুলে ছুঁড়ে মারলো। তারপর হন হন করে চলে যেতে লাগলো। স্পর্শ তাড়াতাড়ি পিয়াসার হাত ধরে বললো,
স্পর্শ: সিঁড়ি বেয়ে নামতে পারবে তো?
পিয়াসা স্পর্শকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
পিয়াসা: বাচ্চা না আমি! পা আছে আমার।
স্পর্শ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। সিয়াম স্পর্শের কাঁধে হাত রেখে বললো,
সিয়াম: যেই প্রতিশোধ নিজেকে কষ্ট দেয়, সেই প্রতিশোধ ক্ষমায় রূপান্তর হওয়া ভালো।
স্পর্শ: ক্ষমা তাকে দেওয়া যায় যে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ভুল করে। জেনেশুনে ভুল করার কোনো ক্ষমা আমার কাছে নেই। এতো উদার মন নেই আমার।
সিয়াম: তবে কেন সেই মনটা আজ অনুতপ্ত হচ্ছে? কেন তার মাঝে খারাপ লাগার ঝড় বইছে? সেই মনের তো আজ আনন্দে থাকার কথা ছিলো।
স্পর্শ চুপ করে রইলো। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যে তার জানা নেই।
||
চলবে–