#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,পর্ব-৩৩
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
বর্ণালী আর আদির বিয়েটা আদির ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছিলো। আদি বর্ণালীকে ভালোবাসতো ঠিকই, কিন্তু হঠাৎ ভুলে বুঝেই তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে শুরু করে। যার ফলস্বরূপ আজ পাঁচটা বছর সে তার ভালোবাসার মানুষটি থেকে দূরে আছে। বর্ণই আদিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। কারণ আদির তিক্ত ব্যবহার সে মেনে নিতে পারে নি। আর বর্ণ চলে যাওয়ার পর থেকেই আদি নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করে। আর সেই ঘৃণার প্রতিফলিত রূপ স্পর্শ।
বর্ণ তার জীবনে আসার পরই সে তার লেখা চরিত্র পিয়াসাকে বর্ণের মতোই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলো। কিন্তু হুট করেই তার ভালোবাসায় ফাঁটল ধরতে শুরু করে। এরপর অনেক মাস সে আর কলম ধরে নি।
মাঝে মাঝে ভালোবাসা লেখকের কলমকে জাগিয়ে তুলে, আবার প্রতারণা সেই কলমকে খালি করে দিয়ে যায়। আদিও ভালোবেসে কলম ধরেছিলো, কিন্তু ভ্রান্তির মাঝেই সে কলম আটকা পড়ে যায়। অবশেষে সব ভুল-ভ্রান্তির অবসান ঘটলেও ভালোবাসার মানুষটিকে সে আর খুঁজে পায় নি। তাই সেই কলমটি এখন লেখকের মনের আক্ষেপ, হতাশা আর বিষাদের গল্প লিখে যাচ্ছে।
ম্যাগাজিনে ছাপানোর পর স্পর্শের পিয়াসার প্রতি ভালোবাসা পাঠকদের যতোটা কাছে টেনে নিয়েছিলো, ততোটাই সেই স্পর্শকেই সবাই ঘৃণা করতে শুরু করে। কারণ লেখকই সেই গল্পটিতে টেনে এনেছে নতুন মোড়। সে তার জীবনের শিল্পীকে হারানোর পর থেকেই ধিক্কার দিতে থাকে প্রতিশোধপরায়ণ সেই প্রেমিকদের, যারা ভুল বুঝে ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট দেয়।
একদিনের ঘটনা-
আদনান চৌধুরী আদি অফিস থেকে বের হতেই দু’একজন অপরিচিত উঠতি বয়সী মেয়ে-ছেলে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। আদি তাদের দেখে কিছুটা অবাক হলো। ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমাদের তো ঠিক চিনলাম না?”
তাদের মধ্য থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো,
“ভাইয়া, আমরা আপনার পাঠক ছিলাম। আপনার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে ছাপানো “অপ্রিয় মুহূর্ত ও শুকনো একটি গোলাপ” গল্পটি পড়তাম আমরা। কিন্তু অনেকদিন গল্পটি ম্যাগাজিনে ছাপানো হয় নি। আমরা খোঁজ নিয়ে জানলাম, আপনি আর লিখছেন না। কিন্তু কেন লিখছেন না ভাইয়া?”
আদি মলিন হাসলো। সেই মূহুর্তে তার কাছে কোনো উত্তর ছিলো না। কারণ তার জীবনের গতিপথটা হুট করেই পালটে গেছে। আর সেই এলোমেলো জীবনের একটা অংশও সে কারো কাছেই প্রকাশ করতে পারছিলো না।
তবে সেদিন বাসায় এসে অনেক চিন্তাভাবনার পর সে সিদ্ধান্ত নিলো, তার অপ্রিয় মুহূর্তের গল্পটি সে আবার লিখবে। তবে এবার ভালোবাসার চেয়ে প্রাধান্য পাবে ঘৃণা। মূলত এটি তার ভালোবাসার প্রতি ঘৃণা নয়, বরং তার নিজের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
অনেকেই আদিকে প্রশ্ন করেছিলো,
“এ আবার কেমন প্রেম?”
আদির উত্তর ছিলো,
“জীবনে বহু প্রেম আসে। আবার হারিয়েও যায়। তবুও কিছু প্রেম হৃদয়ে জায়গা পায়। প্রিয় মানুষটিকে অনুভূতির কথা বলতে না পারার ব্যর্থতাটা মনকে মাঝে মাঝে কাঁপিয়ে দেয়। কোনো এক মধ্য রাতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মনে পড়ে যায় সেই রাতের কথা যেই রাতে প্রিয় মানুষটি ছিলো একদম চোখের কাছাকাছি৷ ব্যস্ততার ভীড়েও হঠাৎ কষ্টটা চেপে বসলে সব এলোমেলো মনে হয়। ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় আবার সেই বিকেল বেলায়, যখন মানুষটি তার খুব প্রিয় একজন ছিলো। তবে সময় পালটে যায়। বিষাদ আসে জীবনে। যেই মুহূর্তগুলো খুবই প্রিয় হওয়ার কথা ছিলো। তা ঝড়ের বেগেই অপ্রিয় হয়ে উঠে। সাথে ভালোবাসার গোলাপটিও শুকিয়ে যায়। শুরু হয় নিশ্চুপ অপেক্ষা। আকাশের বুকে কালো মেঘের ভীড় জমলে মন আকুল কন্ঠে গেয়ে উঠে,
এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন।
কাছে যাবো, কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?”
এসব ভাবতে ভাবতেই আদি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। চোখের পলকেই ঝাপসা হয়ে এলো চারপাশ।
মনে মনে বললো,
“বর্ণ, আমার শিল্পী, তুমি কোথায় হারিয়ে গেছো? আমার মনটা এই বদ্ধ ঘরে থাকতে চাইছে না। তুমি হীনা আমার ঘর, আমার জীবন, এমনকি আমি নিজেও রিক্ত শূণ্য। তুমি একটাবার ফিরে এসো। আমি আর কতো কষ্ট পাবো?”
বিরহ মনে আদি আবার লিখতে বসলো, আর ফুটিয়ে তুললো তার কাল্পনিক শিল্পীর আশাহীন সিক্ত চোখের গভীরতা।
||
সেইদিন পিয়াসা স্পর্শকে তুবা সম্পর্কে বেশি কিছুই জানালো না। শুধু বলেছিলো, তুবা তার কাজিন। কিন্তু স্পর্শ বুঝতে পারলো, এখানে একটা কিন্তু আছে। আর তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো, তুবা সম্পর্কে সব তথ্য বের করবে। কিন্তু নিশান আর তকির স্পর্শের সিদ্ধান্ত জোর করেই পালটে দিলো।
নিশান বললো,
“দেখ, অতিন্দ্রিয়া কে এটা আমাদের ভাবার বিষয় না। আমাদের মূল বিষয় রকি কাকে অতিন্দ্রিয়া মনে করতো। আর রকি পিয়াসাকেই অতিন্দ্রিয়া ভাবছে। এখন সে যদি অতিন্দ্রিয়া নাও হয়, তবুও রকি এই স্বীকারোক্তি একমাত্র তার সামনেই দেবে যাকে সে অতিন্দ্রিয়া ভেবেছিলো। তাই তো? বুঝেছিস আমার কথা?”
স্পর্শ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“পিয়াসা যদি অতিন্দ্রিয়া না হয়, তাহলে আমি ওকে কেনো আটকে রাখবো? আমি ওকে কেন আঘাত করবো? আমি পিয়াসাকে ভালোবাসি।”
তকির চেঁচিয়ে বললো,
“রাখ তোর ভালোবাসা। তোর কাছে বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নাকি দুই-তিন বছরের প্রেমিকা?”
নিশান এবার তকিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তকির, আমার কি মনে হচ্ছে জানিস? এই পিয়াসা মেয়েটাই মূলত অতিন্দ্রিয়া। সে এখন ফেঁসে যাওয়ার পর, ইচ্ছে করে স্পর্শকে গুলিয়ে ফেলছে।”
স্পর্শ কথাটি শুনে অবাক দৃষ্টিতে নিশানের দিকে তাকালো।
এবার তকির বললো,
“হ্যাঁ, যেই মেয়ে একটা ছেলের সাথে এতো রসিয়ে রসিয়ে চ্যাট করতে পারে, যাকে খুন করার মতো অপকর্মেও জড়িয়ে ফেলেছিলো, সে কি কথার জালে, মায়া কান্না দেখিয়ে স্পর্শকে বশে আনতে পারবে না?”
স্পর্শ তকির আর নিশানের কথা শুনে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। নিশান স্পর্শের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“ভাই, মেয়েরা আসলেই ছলনা করে। তুই মেয়েটাকে বিশ্বাস করিস না। তুই বরং আজ রাতেই তোর কাজ সেরে ফেল।”
স্পর্শ স্তব্ধ হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি কাজ?”
নিশান কপাল চাপড়ে বললো,
“কি কাজ সেটাও বুঝি বলতে হবে? মেয়েটাকে যে রকির কাছে পাঠাবি, একা ছাড়লে যদি সে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়? তখন সব প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ভালো হবে মেয়েটাকে আজ রাতেই নিজের আয়ত্তে নিয়ে এলে। আর ব্ল্যাকমেইল করার জন্য কিছু ছবি তুলে নিবি…..”
স্পর্শ কথাগুলো হজম করতে পারলো না। সে নিশানের কলার চেপে ধরে চেঁচিয়ে বললো,
“তুই এসব নোংরা চিন্তা কিভাবে করতে পারলি? আমি আমার সুচিস্মিতার সাথে এমন নোংরামি কখনোই করবো না।”
সিয়াম সেই সময় একটু বাইরে গিয়েছিলো। বাসায় এসে তাদের হাতাহাতি দেখে তাড়াতাড়ি স্পর্শকে ছাড়িয়ে নিলো। এরপর সব শুনে সিয়াম রাগী কন্ঠে নিশানকে বললো,
“স্পর্শের মূল উদ্দেশ্য রকিকে শাস্তি দেওয়া, খুনীর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ বের করা। আর তুই ওকে উলটো বলছিস, অন্যায় করতে? রকির শাস্তি যদি মৃত্যুদন্ড হয়, তবে স্পর্শ যদি এমন কিছু করে ওর শাস্তিও তেমনই হবে। আর আমি এর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবো। পিয়াসাকে অপহরণ করা আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। আর এছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না। কারণ ও-ই একমাত্র রকিকে খুনি হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে।”
তকির বললো,
“কিভাবে প্রমাণ করবে? এখন মেয়েটাকে যদি বলিস রকির কাছে যেতে, প্রমাণ নিয়ে আসতে, কিন্তু ও যদি সেখানেই না যায়? যদি সে পালিয়ে যায়? তখন কি করবি?”
স্পর্শ বললো,
“ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবো। আর আমি জানি পিয়াসার দুর্বলতা, ওর বাবা-মা। তাদের কোনো ক্ষতি করার কথা বললেই, পিয়াসা চোখ বন্ধ করে সব মেনে নেবে।”
এদিকে-
তুবা পিয়াসার নিখোঁজ হওয়ার খবরটি শুনে প্রচন্ড অবাক হলো। সবাই বলাবলি করছে পিয়াসা তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তুবা জানে এটা মিথ্যে। প্রথমত, পিয়াসা পালিয়ে যাওয়ার মতো মেয়ে নয়। আর দ্বিতীয়ত, পিয়াসার একমাত্র প্রেমিক স্পর্শ, যার সম্পর্কে সব সত্য জানার পর সে পালিয়ে যাবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই তুবা সিদ্ধান্ত নিলো, সে সব সত্য অন্তত রিয়াদকে জানাবে। কারণ রিয়াদ সত্যটা জানলে পিয়াসাকে ভুল বুঝবে না।
তুবা দেরী না করে রিয়াদকে ফোন করে বললো, তার খুব জরুরি কথা আছে। রিয়াদও আর না বললো না। সে তুবার সাথে দেখা করতে রাজি হলো।
এরপর সন্ধ্যায় তুবা আর রিয়াদ একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করলো।
তুবা রিয়াদকে বললো,
“ভাইয়া, আমি যেই কথাটি বলতে আপনাকে এখানে ডেকেছি, কথাটি পিয়াসাকে নিয়েই।”
রিয়াদ চুপ করে তুবার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার নিঝুম সম্পর্কে এমন কোনো তথ্য থাকতে পারে, যা জানানোর জন্য তুবা তাকে এখানে ডেকে এনেছে, এটা ভাবতেই কেমন শিউরে উঠলো রিয়াদ। পিয়াসাকে সে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে। আর এই মুহূর্তে ভালোবাসার মানুষটি তাকে বিয়ে না করে পালিয়ে গেছে, এসব কথাবার্তা শুনে তার মানসিক অবস্থা একদম খারাপ। যদিও সে বিশ্বাস করে পিয়াসা পালিয়ে যায় নি। কিন্তু ব্যাপারটা শুধু বিশ্বাসের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই, পারিপার্শ্বিক অবস্থাও রিয়াদের উপর প্রভাব ফেলছে। আর সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, তার বাবা-মা এখন পিয়াসাকে প্রচন্ড ঘৃণা করা শুরু করে দিয়েছে। আর এই মুহূর্তে পিয়াসাকে নির্দোষ প্রমাণ করতেই সে তুবার কথামতো চলে এসেছে, এই আশা নিয়ে যে তুবা বলবে পিয়াসা পালিয়ে যায় নি।
তুবা বললো,
“পিয়াসা একটা ছেলেকে পছন্দ করতো। প্রচন্ড ভালোবাসতোও। কিন্তু ছেলেটা পিয়াসার সাথে প্রতারণা করছিলো। পিয়াসা তা জানার সাথে সাথেই ছেলেটার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে। আর আমি জানি এই সম্পর্কে দ্বিতীয়বার পা দেওয়ার কোনো ইচ্ছেই পিয়াসার ছিল না।”
রিয়াদ বললো,
“তাহলে তুমি কি বলতে চাইছো?”
“পিয়াসা পালিয়ে যায় নি। আমার মনে হচ্ছে ছেলেটা পিয়াসাকে তুলে নিয়ে গেছে। ভাইয়া, পিয়াসা বিপদে আছে। ছেলেটা পিয়াসার ক্ষতি করতে পারে।”
রিয়াদ বললো,
“ছেলেটার বাসার ঠিকানা জানো?”
“আগে ছেলেটা পিয়াসাদের এলাকায় থাকতো। কিন্তু এখন হয়তো বাসা পরিবর্তন করেছে।”
রিয়াদ সব শুনে সিদ্ধান্ত নিলো সে নিজেই পিয়াসাকে খুঁজে বের করবে। তবে সে তুবা থেকে শুধু এইটুকু জানতে পারলো ছেলেটির নাম স্পর্শ চৌধুরী। নামটা শুনার সাথে সাথেই তার মনে পড়ে গেলো, ছেলেটির সাথে রাদিতের ইউনিভার্সিটিতে দেখা হয়েছিলো। আর পিয়াসাই ছেলেটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো, আর বলেছিলো স্পর্শ তার প্রতিবেশী আপুর বন্ধু। অথচ পিয়াসা সেদিন কোনো প্রতিবেশী আপুর সাথে রাদিতের ইউনিভার্সিটিতে যায় নি, সে গিয়েছিলো স্পর্শ নামের ছেলেটির সাথে। আর স্পর্শকে অন্য একটি মেয়ের সাথে কাপল ডান্স করতে দেখেই সে অভিমান করে রিয়াদের সাথে বাসায় চলে এসেছিলো।
রিয়াদ আনমনেই হিসেব মিলাতে লাগলো। তারপর বাসায় এসে রাদিত থেকে স্পর্শ সম্পর্কে জেনে নিলো।
স্পর্শ চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ। এইটুকুর বেশি তথ্য রাদিতের কাছে ছিলো না। রিয়াদ সিদ্ধান্ত নিলো, আগামীকাল ক্যাম্পাসে গিয়েই বাকী তথ্য বের করে নেবে। যদিও পিয়াসার বাবা থানায় মিসিং রিপোর্ট লিখে এসেছেন। তবুও শুধু পুলিশের ভরসায় বসে থাকলে চলবে না। রিয়াদ নিজ থেকেই কিছু দায়িত্ব নিতে চায় তার নিঝুমকে ফিরে পাওয়ার জন্য।
রাতে-
পিয়াসা শব্দ করে কাঁদছে, আর স্পর্শ তার মুখোমুখি বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে স্পর্শ জোর করেই তার সাথে নিজের ছবি উঠিয়েছে। যদিও কোনো ঘনিষ্ঠতা ছিলো না। তবুও যতো টুকু কাছে এসে ছবি উঠিয়েছে, সেটাও পিয়াসার কাছে ভয়ংকর মনে হচ্ছে। কারণ স্পর্শ হুমকি দিয়েছে আগামীকাল রকির স্বীকারোক্তি আনতে না পারলে এই ছবি ভাইরাল করে দেবে।
পিয়াসা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“ছবিটা তুমি ডিলিট করে দাও, প্লিজ।”
স্পর্শ হেসে বললো,
“ডিলিট করার জন্য তো ওঠায় নি। আর শুনো, এই ছবি ভাইরাল হলে যারা এখনো জানতে পারে নি, তুমি কোথায় আছো, তারাও জেনে যাবে। একটা মেয়ে দুই দিন ধরে নিখোঁজ। সবাই এতোদিন ভেবেই নিয়েছে তুমি নষ্ট হয়ে গেছো। আর এই ছবি দেখলে তো কোনো সন্দেহই থাকবে না। আজ দুই দিন, দুই রাত আমার সাথে আছো, কেউ কি বিশ্বাস করবে আমি তোমার কোনো ক্ষতি করি নি?”
পিয়াসা কান্না থামিয়ে স্পর্শের গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
“আর কতো রূপ দেখবো তোর? তুই শুধু বেইমান না, তুই একটা নিকৃষ্টতর জীব। তোকে মানুষ বললে মনুষ্য জাতির অপমান হবে।”
স্পর্শ গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো। তারপর বললো,
“আগামীকাল রকির কাছ থেকে সত্যটা বের করতে না পারলে তোমার বাবা-মার জীবনে ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে।”
স্পর্শ পিয়াসাকে শাসিয়ে চলে গেলো। আর পিয়াসা পার করলো আরো একটি ভয়ংকর রাত।”
||
চলবে–