অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,আংশিক পর্ব

0
720

#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,আংশিক পর্ব
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ

পাঁচ বছর পর লেখক সাহেব তার শিল্পী বর্ণালী মির্জার ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার পর ছুটে গেছে তাকে ফিরিয়ে আনতে৷ তাহলে কি বর্ণ এতো সহজে ক্ষমা করে দেবে লেখক সাহেবকে? কিন্তু কাউকে ভালোবাসা হয়তো একজন মানুষের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা। আর সেই দুর্বলতার কাছে হেরে গেলো বর্ণ। আদির উন্মাদনা তাকে বাধ্য করেছে ফিরে যেতে সেই পুরোনো মুহূর্তে। হোক সেই মুহূর্তগুলো ভীষণ অপ্রিয়। কিন্তু কিছু অপ্রিয় মুহূর্তের মাঝেও ভালোবাসা থাকে। তাই হয়তো প্রিয় মানুষটিকে ঘৃণা করেও করা যায় না। বর্ণ আর আদি আবার নতুন জীবনের জন্য একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। কিন্তু লেখক সাহেব যে অপূর্ণ রেখে দিলো পিয়াসা আর স্পর্শের প্রেমটিকে?

বর্ণ ম্যাগাজিন বন্ধ করে আদির দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি রিয়াদের সাথে পিয়াসার বিয়েটা দিয়ে দিলে যে? গল্পটা তো স্পর্শ আর পিয়াসার জন্য লিখছিলে।”

আদি গম্ভীরমুখে বললো,
“গল্পটা তো এখনো পিয়াসা আর স্পর্শের জন্যই লিখছি।”

“তাহলে রিয়াদ চরিত্রটি এনেছো কেন?”

“আমি তোমাকে হারিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছি। আর আমার কষ্ট অন্য কেউ বুঝবে না। ঠিক তেমনি একটা মানুষ যতোক্ষণ নিজে ওই অবস্থানে যাবে না, ততোক্ষণ সে অন্যকে বুঝবে না। অভিজ্ঞতা মানুষকে শিখিয়ে দেয়, জীবনের বহুমুখী স্বাদটা ঠিক কেমন হয়। স্পর্শও আঘাত না পেলে বুঝবে না, তার দেওয়া আঘাতটা কতো বড়ো ছিলো। কারণ পিয়াসা এই গল্পের একজন দুর্বল মনের চরিত্র। সে খুব সহজে আবেগী হয়ে পড়ে। আর এসব দুর্বল মনের মেয়েদের শক্ত রাখার একমাত্র উপায় তাদের জীবনে দায়িত্ব ঢেলে দেওয়া। আর এখন পিয়াসার সব দায়িত্বই রিয়াদের জন্য। আর এই দায়িত্বটাই হবে পিয়াসার শক্তি। তাই গল্পে রিয়াদকে এনেছি, কারণ সে এই গল্পের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।”

বর্ণ কিছু একটা ভাবতে ব্যস্ত হয়ে পড়লোম তখনই আদি বললো,
“তুমি জানো বর্ণ? আমি তোমাকে কেন ভুল বুঝেছি?”

“কেন?”

“আমি ভেবেছি তুমি আমার মায়ের মতো। মা আমার বাবাকে ধোঁকা দিয়েছিলো। আর আমি একদিন তোমার কাজিন রিফাতের সাথে তোমাকে দেখে ফেলেছিলাম। আর ওটাকেই আমি বিশ্বাস করে তোমাকে সন্দেহ করেছি। কিন্তু সত্যটা ছিলো ভিন্ন। তুমি আমাকে ভালোবাসতে, আর আমি ভেবেছি তুমি রিফাতকে ভালোবাসো। খুব গোঁজামিল হয়ে গিয়েছিলো সবকিছু। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার আমি কখনো তোমাকে বলি নি এসব। তোমাকে কিছু বলার সুযোগ দেই নি। কিন্তু নিজেকে বড্ড ঘৃণা করে ফেলেছিলাম। আমি চাইলে তোমাকে আরো কষ্ট দিতে পারতাম। যেমনটা স্পর্শ পিয়াসাকে দিয়েছে। কিন্তু আমাকে কেউ ইনফ্লুয়েন্স করে নি। স্পর্শকে ওর বন্ধুরা বাধ্য করেছিলো পিয়াসাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। আসলে বন্ধুরা এসব ব্যাপারে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভালো বন্ধু ভালো পরামর্শ দেবে, আর খারাপ বন্ধু খারাপ কাজ করতে উৎসাহিত করবে।”

বর্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“এরপর কি হবে স্পর্শ-পিয়াসার?”

আদি এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না। চেয়ার টেনে টেবিলের কাছাকাছি এসে ডায়েরীর পৃষ্ঠা উল্টালো। লিখতে বসলো পিয়াসাহীন স্পর্শের মুহূর্ত।

||

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে স্পর্শ। কোনোভাবেই সে নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। পুরো ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে আছে। সে নিজ হাতেই সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। সিয়াম স্পর্শকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছে না। স্পর্শের অবস্থা দেখে তার বাকী বন্ধুরা এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু পিয়াল সোফার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে মেঝের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। তার চোখ বেয়ে অশ্রুগুলো মেঝেতে এসে পড়ছে। স্পর্শের পাগলামো সে একদমই নিতে পারছে না। মনে মনে সে নিজেকেই অপরাধী মনে করছে। কিন্তু আজ তো তাদের আনন্দের দিন হওয়ার কথা ছিলো। স্পর্শ আর তার বন্ধুরা এতোকিছু যেই কারণে করেছিলো সেই কারণটির তো সমাপ্তি ঘটলো।

আজ রকির ফাঁসির রায় হয়ে গেছে। শুধু স্পর্শের বাবার খুনি হিসেবে নয়, আরো অনেক হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকায় তার উপর মামলাটা আরো দৃঢ় হয়ে উঠে। স্পর্শের পক্ষের উকিল আরো কিছু সাক্ষী জোগাড় করে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়, রকি এই সমাজের জন্য একজন ক্ষতিকর জীব। যার মৃত্যু না ঘটলে, আরো কিছু নিরীহ মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। কিন্তু এতো বড়ো সুসংবাদ স্পর্শকে একটুও নাড়া দেয় নি। কারণ সে একটি অন্যায়ের সংশোধন করতে গিয়ে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। বাবাকে ন্যায় দিতে গিয়ে, তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে অন্যায় করেছে।

আজই সে সব সত্য জানতে পেরেছে, যা এতোদিন তার আড়ালে ছিলো। আর এই সত্য প্রকাশ করেছে রাতুল, তুবার এক্স বয়ফ্রেন্ড।

এদিকে-

তুবা নির্বাক হয়ে বসে আছে মায়ের পাশে। তুবার মা রিজিয়া বেগম এলোমেলোভাবে মেঝেতে বসে আছেন। আর তার আশেপাশে ছড়িয়ে আছে কিছু ছবি। তুবা মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। আর তার চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে এলো। তুবার বাবা রুমেল হোসেন তার অফিসের এক মহিলা কলিগের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন। একবছর ধরেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলছিলো। রিজিয়া যদিও এতোদিন সন্দেহ করে এসেছিলো। কিন্তু আজ তিনি তার স্বামীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। ফোনে রুমেল হোসেন ও তার কলিগের কিছু আপত্তিকর ছবি পেয়ে যান রিজিয়া। আর সেই ছবিগুলো বের করে স্বামীকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
“এগুলো কি?”

আর রুমেলও সব স্বীকার করে নেন।

তুবার সামনেই তার বাবা বলে দেন, তিনি আর তাদের সাথে থাকতে চান না৷ তুবা বাবার কাছে এসে বললো,
“বাবা, তুমি আমাদের ফেলে চলে যাবে?”

মেয়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর রুমেল সাহেবের কাছে নেই। তাই তিনি চুপচাপ ব্যাগপত্র গুছিয়ে তার প্রেমিকার সাথে নতুন জীবন শুরু করার জন্য পুরোনো সংসার ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। আর স্বামী যাওয়ার পর পরই রিজিয়া পাগলের মতো কান্নাকাটি শুরু করে দেন।

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here