#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ,পর্ব-১৩,১৪
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-১৩:
||
পিয়াসা স্পর্শের সাথে কোনো ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছে না। স্পর্শ যে তাকে ভুল বুঝে বসে আছে! এই ভুল ভাঙাতে না পারলে তার মন শান্ত হবে না।
ফোন হাতে নিয়ে পিয়াসা আনমনেই স্পর্শের কথা ভাবছিলো তখনই তুবা এসে পিয়াসার মাথায় ঠোঁকা দিলো।
পিয়াসা: তুবা তুই? কখন এলি?
তুবা: তুই যখন স্পর্শ চৌধুরীর ভাবনায় ডুবে ছিলি, ঠিক তখনই এলাম।
পিয়াসা শুকনো হাসি দিয়ে বললো,
পিয়াসা: ভালো করেছিস। একা একা ভালো লাগছিলো না আমার।
তুবা দরজার দিকে একনজর তাকিয়ে পিয়াসার হাত ধরে বললো,
তুবা: ওই মেয়েটা কে, দরজা খুলে দিলো যে!
পিয়াসা: রুনা, বাড়ি থেকে নানু পাঠিয়েছে। সারাদিন মা-বাবা বাসায় থাকে না। আর আমাকে একা এতো বড়ো বাসায় রেখে যাওয়াটা তাদের সুবিধাজনক মনে হচ্ছিলো না। তাই রুনাকে নিয়ে এসেছে।
তুবা কিছু একটা ভেবে বললো,
তুবা: আমার এক্সাম শেষ। কয়েক সপ্তাহ তোর সাথেই থাকবো।
পিয়াসা: আচ্ছা।
তুবা: তোর মন খারাপ মনে হচ্ছে?
পিয়াসা মাথা নেড়ে বললো,
পিয়াসা: না, তো! আমি ঠিক আছি। তুই বল, তোর সেই বাবু সোনার খবর কি?
তুবা মুচকি হেসে বললো,
তুবা: রাতুল? ওর সাথে তো ব্রেকাপ হয়ে গেছে।
পিয়াসা: সিরিয়াসলি? কিন্তু কেন?
তুবা: ও খুব পজেজিভ, ভালো লাগে না তাই।
পিয়াসা: তোর কাছে সম্পর্ক এতো সস্তা?
তুবা: ছাড় তো এসব কথা। আচ্ছা, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। এসে জম্পেশ আড্ডা দেবো।
কথাটি বলে তুবা ফ্রেশ হতে চলে গেলো। আর পিয়াসাও মন খারাপ করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ তুবার ফোনে একটা মেসেজ আসায় মোবাইলের স্ক্রিনটা জ্বলে উঠলো, আর পিয়াসার চোখ আটকে গেলো স্ক্রিনে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো তুবার ফোনে রাতুলের মেসেজ। যেখানে লেখা ছিলো, আমার বন্ধুকেও ছাড়ো নি…….
বাকীটা আর পড়তে পারে নি পিয়াসা, কারণ ফোনটা লক করা ছিলো। পিয়াসা মনে মনে ভাবছে,
পিয়াসা: বন্ধুকেও ছাড়ো নি বলতে কি বুঝাতে চাইছে রাতুল?
তুবা আসার আগে ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিলো পিয়াসা। তুবা ফোন হাতে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। বিছানায় শুয়ে মোবাইলের দিকে মনোযোগ দিলো তুবা। হঠাৎ খেয়াল করলো পিয়াসা তার দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত দৃষ্টিতে। ভ্রু কুঁচকে তুবা মাথাটা উঠালো, তারপর পা দুটি ভাঁজ করে পিয়াসার মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো,
তুবা: তুই ঠিক আছিস তো? আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
পিয়াসা শান্ত দৃষ্টিতে তুবার দিকে তাকিয়ে বললো,
পিয়াসা: রাতুলের সাথে ব্রেকাপ কেন করেছিস?
তুবা পিয়াসার প্রশ্ন শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাতুলের মেসেজ এসেছিলো।
মনে মনে বললো,
তুবা: পিয়াসা কি তবে মেসেজটা পড়ে ফেলেছে?
পিয়াসা: কি হলো? উত্তর দে।
তুবা: আমি তোকে আগেও বলেছি, রাতুল আমাকে অনেক সন্দেহ করে। আমি জাস্ট আর নিতে পারছি না ওর এসব মানসিক অত্যাচার।
পিয়াসা: তুই নতুন কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে যাস নি তো?
তুবা বিস্ফোরিত চোখে পিয়াসার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললো,
তুবা: রাতুলের আগে আরো দুইটা সম্পর্ক ছিলো, তাই সবাই আমাকেই খারাপ ভাবে৷ সমস্যাগুলো ওই ছেলেগুলোর মধ্যেই ছিলো। ঘুরেফিরে ঝগড়া করবে আর আমি নিজের জন্য স্ট্যান্ড নিলেই অপরাধী?
পিয়াসা তুবার পাশে বসে বললো,
পিয়াসা: তোকে অপরাধী বলি নি তুবা৷ কিন্তু এতোগুলো সম্পর্কে জড়ানো তোর জন্যই ক্ষতিকর। মেয়েদের সব ব্যাপারই অনেক সেনসিটিভ। আর এইটাই আমাদের সমাজ তুবা। তুই নিজেই দেখেছিস, রকি আমার নামে কতো বাজে কথা রটিয়েছিলো। কিন্তু দিনশেষে সে ওই এলাকার সর্দার, আর আমাকে সেই এলাকা ছাড়তে হয়েছে।
তুবা পিয়াসার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে পিয়াসাকে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর ধরা গলায় বললো,
তুবা: পিয়াসা, তুই অনেক ভালো৷ তোর এই বোন সবসময় তোর পাশে থাকবে। দ্বিতীয় বার কোনো রকি তোকে বিরক্ত করবে না।
পিয়াসাকে ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
তুবা: তুই শুধু স্পর্শকে নিয়েই চিন্তা কর।
স্পর্শের নাম শুনেই পিয়াসার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। তুবা দুই হাতের তালু দিয়ে পিয়াসার গাল চেপে ধরে বললো,
তুবা: স্পর্শ চৌধুরীর নাম শুনে মুখটা আবার শুকিয়ে গেছে কেন? কি হয়েছে বল!
পিয়াসা চেয়ারে হেলান দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
পিয়াসা: আমাকে ভুল বুঝেছে।
তুবা: কোন ব্যাপারে?
পিয়াসা: তুবা, এই এলাকায়ও একটা বখাটে আছে। মাঝে মাঝেই বাইক নিয়ে গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর আমাকে প্রচুর বিরক্ত করে। শুধু বিরক্ত না, অনেক খারাপ কথাও বলে। আমি আর মেনে নিতে পারছি না এসব। আর গতকাল রাতেও ওই ষ্টুপিড বাইকারটা আমাকে বিরক্ত করছিলো, আর হয়তো তখনই স্পর্শ আমাকে ওই ছেলেটার সাথে দেখে ফেলেছে। আমাকে ভুলে বুঝেছে ও। স্পর্শ ভাবছে ছেলেটার সাথে আমার সম্পর্ক আছে।
তুবা কিছু একটা ভেবে পিয়াসাকে বললো,
তুবা: স্পর্শ সেই ছেলেটা না যার বাবাকে খুন করেছিলো কিছু লোক? মানে তোদের আগের এলাকায় থাকতো!
পিয়াসা: হ্যাঁ!
তুবা আর কিছুই বললো না। তার মুখের ভাবটা মুহূর্তেই পালটে গেছে। অজানা ভয় তার মনে চেপে বসেছে।
পিয়াসা তুবার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো,
পিয়াসা: কি করবো বল!
তুবা পিয়াসার ঝাঁকুনিতে বাস্তবে ফিরে এলো। তারপর শান্ত কন্ঠে বললো,
তুবা: তোকে বলে নি কিভাবে খুন হয়েছে ওর বাবা?
পিয়াসা: না, আমি জিজ্ঞেস করি নি। ও আমাকে বারণ করেছে এসব জিজ্ঞেস করতে। আর জানিস, ও না অনেক দুঃখী। ওর মাও মানসিক ভাবে অসুস্থ। ওর বাবার মৃত্যুর পর থেকেই ওর জীবনটা এলেমেলো হয়ে গেছে। আর তাই আমার কাছে ফিরে আসতেও ওর দেরী হয়েছে। স্পর্শ আমাকে কখনোই ভুলে যায় নি। আমি ওর স্মৃতি যতোটুকু ধরে রেখেছি, ও তার চেয়ে বেশি আমাকে মনে রেখেছে। স্পর্শ আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি ওর ভালোবাসাটা অনুভব করতে পারি।
তুবা মনে মনে ভাবলো,
তুবা: অনুভব করে কি কাউকে চেনা যায়? মানুষ চেনা এতো সহজ হলে ধোঁকাবাজ, প্রতারক এমন শব্দের সৃষ্টি হতো না।
এলোমেলো চুল আর বিষণ্ণ মুখ বুঝিয়ে দিচ্ছে ভালো নেই পিয়াসা। আর পিয়াসার ভালো না থাকার একমাত্র কারণ স্পর্শ হুট করেই তাকে ভুল বুঝে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। অনেক চেষ্টা করেও স্পর্শের সাথে ফোনে কথা বলতে পারে নি সে। ইনবক্সের এতো এতো মেসেজের ভীড়ে স্পর্শের একটা রিপ্লাইও চোখে পড়ছে না পিয়াসার। একটা মানুষ কতোটা কঠোর মনের হলে এভাবে কাউকে উপেক্ষা করতে পারে, তা ভাবতেই অবাক লাগছে তার।
এদিকে বুকে হাত গুঁজে জানালার ফাঁক দিয়ে স্পর্শ তার সুচিস্মিতাকে দেখছে। কয়েকদিনে মেয়েটার মুখ একদম শুকিয়ে গেছে। কিন্তু কেন? স্পর্শের জন্য? স্পর্শ তাকে এতোটা প্রভাবিত কেন করবে? তবে কি সত্যিই সুচিস্মিতা এবার স্পর্শকে ভালোবেসে ফেলেছে? না, না, তা হয় না।
স্পর্শ বিড়বিড় করে বলছে,
স্পর্শ: তুমি আমায় ভালোবাসতে পারো না। তোমার শুধুই আকর্ষণ জন্ম নিচ্ছে আমার প্রতি। আর আকর্ষণ কখনোই ভালোবাসা হয় না। এটি শুধুই স্বল্প সময়ের আবেগ৷ যেই তুমি আমার সাথে প্রতারণা করে রকির মতো একটা বখাটে ছেলের সাথে সম্পর্ক রেখেছিলে, সেই তুমি কিভাবে একজন সভ্য মেয়ে হও? যার কাছে ভালোবাসা মানেই প্রভাবশালী পুরুষ আর ধনীর দুলাল, সে কিভাবে ভালোবাসার আসল অর্থটা বুঝবে? সুচিস্মিতা, তোমার কাছে ভালোবাসার অর্থ সময় কাটানো। নিজের জীবনে কিছু ফ্যান্টাসি মুহূর্ত সৃষ্টি করে উল্লাস করা। কিন্তু আমার কাছে এই মুহূর্ত গুলো অপ্রিয়। ভীষণ অপ্রিয়। কারণ তুমি সেই মুহূর্তগুলোর সঙ্গী, যেই তুমিটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলে, যেই তুমিটাকে আমি পাগলের মতো ভালোবেসেছিলাম, ততোদিন পর্যন্ত বেসেছিলাম, যতোদিন তোমার চরিত্রের সত্যতা জানতে পারি নি। তুমি যদি আমার কাছে একজন ধর্ষিতা হতে তবুও ভালোবাসতাম, কারণ স্বেচ্ছায় কেউ ধর্ষিতা হয় না। তুমি যদি আমার কাছে একজন অক্ষম মানবী হতে তবুও তোমায় আগলে রাখতাম। সবকিছু মেনে নেওয়া যেতো। কিন্তু আমি যে ছলনা মানতে পারি না। এখন কিভাবে তোমায় ভালোবাসবো? এখন আমার মনে তোমার জন্য অবশিষ্ট আছে শুধুই ঘৃণা। একদিন তুমি আমায় একটা গোলাপ দিয়েছিলে ধন্যবাদ স্বরূপ৷ আর আজ আমি সেই শুকনো গোলাপের বিনিময়ে আমার ঘৃণা ফিরিয়ে দেবো তোমায়। তখনই আমাদের দেনা-পাওনা শোধ হবে।
||
চলবে–
#অপ্রিয়_মুহূর্ত_ও_শুকনো_একটি_গোলাপ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-১৪:
||
পিয়াসাকে আনমনে বসে থাকতে দেখে তুবা পিয়াসার গাল টেনে বললো,
তুবা: তোকে এভাবে দেখতে প্রচুর বিরক্ত লাগছে। এভাবে মুখ ফুলিয়ে রাখলে কিন্তু আমি চলে যাবো।
পিয়াসা হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার মলিন হাসি দেখে তুবা বললো,
তুবা: হয়েছে। মিছেমিছি হাসতে হবে না। চল, আমরা বাইরে ঘুরবো আজ। সাথে ফুচকা, আইসক্রিম, বিরিয়ানি এবং কিটক্যাট চকোলেট হবে আমাদের সঙ্গী।
পিয়াসা এক গাল হেসে বললো,
পিয়াসা: সত্যি?
তুবা: ইয়েস, ডিয়ার পিয়ু।
পিয়াসার এই খাবারগুলো মারাত্মক প্রিয়। তার যদি কখনো মন খারাপ থাকে, বা কারো উপর যদি পিয়াসার অভিমান থাকে, তবে এই অভিমান আর মন খারাপ দূর করার একমাত্র উপায় এই চারটির মধ্যে যেকোনো একটা খাবার আয়েশ করে খাওয়া। আর চারটিই একসাথে খেলে তো কথায় নেই।
পিয়াসা তুবাকে জড়িয়ে ধরে ঘরে ঢুকে পড়লো বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরী হতে। এদিকে হঠাৎ পিয়াসার খুশি হওয়ার কারণটা বুঝতে পারলো না স্পর্শ। সে বারান্দায় এসে উঁকিঝুঁকি দিয়ে পিয়াসাকে দেখার চেষ্টা করছিলো। তখনই পেছন থেকে তার বন্ধু পিয়াল এসে বললো,
পিয়াল: ওরে, বাবা।
স্পর্শ প্রেমে অন্ধ, সুচিস্মিতার দুয়ার বন্ধ।
মন হচ্ছে বন্দি, যেখানে নেই কোনো সন্ধি।
প্রতিশোধ যেখানে স্পষ্ট, ভালোবাসা সেখানে আড়ষ্ট।
কখনো কি হবে এই গল্পের সমাপ্তি?
প্রেম নেই, যেখানে বাড়ছে আড়ির ব্যাপ্তি।
স্পর্শ পিয়ালের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
স্পর্শ: এই ছন্দযুক্ত কবিতাগুলো আমাকে শুনিয়ে লাভ নেই।
পিয়াল: আহা, তুই আমাকে বারবার বুঝিয়ে দিস, আমার কবিতাগুলো আমি অসৎ পাত্রে দান করছি। দেখ, মানুষ প্রেমে পড়লে কাব্য রচনা করতে শেখে।আর তুই প্রেমে পড়ে, ছ্যাকা খেয়ে, আধ বাঁকা হয়েও কাব্যের মর্ম বুঝিস নি। এর অর্থ কি দাঁড়ায়?
স্পর্শ: আমি কিভাবে বলবো?
পিয়াল: জানতাম এই উত্তরটাও তোর কাছে নেই। তবে এর অর্থ দাঁড়ায়, হয়তো তোর সৃজনশীলতার অভাব আছে, হয়তো বা তুই ভালোবাসাটাকেই সিরিয়াসলি নিস নি। এমনও হতে পারে তুই একাকীত্বকে সঙ্গ দিস নি। কারণ একা থাকলেই কষ্টটা ভালোভাবে বোঝা যায়, আর সেই কষ্ট জন্ম দেয় এক একটা ছন্দের।
স্পর্শ: আমাকে এতো জ্ঞান না দিয়ে নিজের মাঝেই জমিয়ে রাখ। ভবিষ্যতে কাজ দেবে।
পিয়াল: আমার মাঝে তো কবে থেকেই এই সুপ্ত জ্ঞানগুলো লুকিয়ে আছে। আচ্ছা, শোন। তকির বললো তুই নাকি ভার্সিটিতে সূচির সাথে অনেক কথাবার্তা বলিস। ব্যাপার কি?
স্পর্শ: মেয়েটা ভালো,অসম্ভব ভদ্রও। তাই কথাবার্তা বলি।
পিয়াল: প্রতিশোধ নেওয়া শেষ করে কি সূচির দিকে মনোযোগ দিবি?
স্পর্শ: কাউকে ঠকানো আমার স্বভাবে নেই। আর সূচি আমাকে নিয়ে ওভাবে চিন্তাও করে না।
পিয়াল: চিন্তা করা শুরু করলে?
স্পর্শ: ভেবে দেখবো। তবে আমার অতীত জানার পর হয়তো আর আগ্রহ দেখাবে না। তবে সূচি ভালো একটা মেয়ে। আই লাইক হার। সুযোগ পেলে অবশ্যই হাত বাড়িয়ে দেবো।
পিয়াল মাথা দুলিয়ে মুচকি হেসে কিছু একটা ভেবে চলে গেলো।
পিয়াল যাওয়ার পর স্পর্শ মনে মনে বললো,
স্পর্শ: আমি জানি সূচির কথা বলে তোরা আমাকে পরীক্ষা করছিস, আমি আদৌ সুচিস্মিতাকে ভালোবাসি কিনা তা দেখার জন্য। কিন্তু আমি কারো সামনে কখনোই প্রকাশ করবো না যে, সব হিংস্রতার ভীড়েও মনের কোথাও হয়তো সেই ছলনাময়ী এখনো বসে আছে।
পিয়াসা আজ কি ভেবে নীল শাড়ি পড়লো। শাড়ি পড়তে তার খুব ভালো লাগে। খারাপ অনুভূতি দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই হয়তো আজ নিজেকে সে নিজের ভালো লাগায় রাঙাতে চাইছে। কানে নীল ঝুমকো, হাতে নীল চুড়ি, কপালে নীল টিপ, মাঝে সিঁথি করে চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে, সাথে ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙ মাখিয়েছে, কালো রঙের কাজলও লাগিয়েছে।
তুবা পিয়াসাকে দেখে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো,
তুবা: আরেহ, আমি কি বলেছি আজ আমার বিয়ে, নাকি কেউ বলেছে আজ পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে?
পিয়াসা হেসে বললো,
পিয়াসা: নিজের জন্য সেজেছি। অন্যের জন্য নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারছি না আর। কিছু সময় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাইছি। এতে আর প্রশ্ন করার কিছু নেই।
তুবা: আহ! শান্তি পেলাম। ফাইনালি আমি আমার পিয়ুকে ফিরে পেয়েছি। এতোক্ষণ মনে হচ্ছিলো, আমার সামনে বসে আছে এক বিরহিণী। আর এখন মনে হচ্ছে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রূপা।
পিয়াসা: তবে আমার হিমুর প্রয়োজন নেই।
তুবা: তবে, কি প্রয়োজন রূপার?
পিয়াসা: ভালোবাসা, বিশ্বাস, শান্তি আর কিছু শুকনো গোলাপ।
তুবা: শুকনো গোলাপ?
পিয়াসা মুচকি হেসে বললো,
পিয়াস: স্পর্শ আমাকে যেই চারাটি দিয়েছিলো, সেই চারাতে যতোগুলো গোলাপ ফুল ফুটেছিলো, সব ফুল আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। এখন স্পর্শ আছে, কিন্তু সেই চারাটি আর নেই। শুকিয়ে গেছে। এই নির্জীব চারাটি দেখলে মনে হয়, এই সম্পর্কটাও হয়তো দিনদিন প্রাণ হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু আমি তবুও সেই টবে দ্বিতীয় কোনো চারা লাগায় নি। কারণ সব কিছুর মাঝেও প্রথম ভালোবাসা ভুলে যাওয়া যায় না। স্পর্শকেও আমি খুব ভালোবাসি। আর ওর স্মৃতি আমার সারাজীবন মনে থাকবে।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর স্পর্শ খেয়াল করলো যাকে এতোক্ষণ খুঁজছে, সে সেজেগুজে কোথাও যাচ্ছে! মুহূর্তেই রাগ উঠে গেলো স্পর্শের।
বিড়বিড় করে বললো,
স্পর্শ: জানতাম, সব তোমার ভণিতা। আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে না পেরে, তুমি মোটেও কষ্ট পাচ্ছো না। বরং এখন সেজেগুজে ঘুরতে যাচ্ছো! নিশ্চয় কোনো ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। আজ তোমাকে হাতেনাতে ধরবো আমি।
স্পর্শ দেরী না করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লো। এরপর পিয়াসা আর তুবার কাছ থেকে দূরত্ব রেখে হাঁটতে লাগলো। যদিও পিয়াসাকে এখনো ভালোভাবে দেখে নি সে।
হাঁটতে হাঁটতে রিকশায় উঠলো তুবা আর পিয়াসা। স্পর্শও তাদের পেছন পেছন একটা রিকশা নিয়ে নিলো। রিকশা থামলো বায়েজিদ গ্রিন পার্কের সামনে। স্পর্শ রিকশা থেকে নেমে মুখে মাস্ক পরে নিলো, যাতে পিয়াসা তাকে চিনতে না পারে। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে তারা পার্কে ঢুকলো। এবার ভালোভাবেই স্পর্শ পিয়াসাকে দেখতে পারছে৷
পিয়াসাকে দেখে স্পর্শ মনে মনে বললো,
স্পর্শ: এমনিতেই কি তুমি কম মায়াবী? আরো সেজেগুজে এসে মানুষকে কি দেখাতে চাইছো? তোমার এই রূপ পুরুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে শুধু। কিন্তু ভালোবাসা তো আত্মিক বন্ধন। এই বন্ধন মনের সাথে। যেখানে তোমার মনটাই কলুষিত, সেখানে তোমার এই সাজ কখনো আমাকে প্রভাবিত করবে না।
পিয়াসা একটা জায়গা খুঁজে নিয়ে বসে পড়লো। স্পর্শ খানিকটা দূরে পিয়াসার মুখোমুখি বসলো। পিয়াসার হাসিটা আজ অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। যেন সব কষ্টকে আড়াল করার চেষ্টায় এই হাসিটা একটা বড়ো মুখোশ।
কিছুক্ষণ পর তুবা দুই প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে হাজির।
তুবা: প্রথমে বিরিয়ানি, তারপর আইসক্রিম।
পিয়াসা: বাসায় যাওয়ার আগে ফুচকা তারপর কিটক্যাট চকোলেট।
তুবা: ওকে, ডান।
পিয়াসা: ডান।
দুজনেই হাইফাইভ দিয়ে বিরিয়ানির প্যাকেটটা খুললো।
পিয়াসা চেঁচিয়ে বললো,
পিয়াসা: ওয়ান সেল্ফি।
তুবা: হ্যাশট্যাগ বিরিয়ানি পার্টি।
পিয়াসা: উমমম, দারুণ।
স্পর্শ পিয়াসা আর তুবার পাগলামো দেখে মনে মনে বললো,
স্পর্শ: এই মেয়েটা শাড়ি পড়ে পার্কে শুধু বিরিয়ানি খেতে এসেছে? স্ট্রেঞ্জ।
পিয়াসা বিরিয়ানি খাওয়া শেষ করে এক গাল হাসলো।
স্পর্শ বিড়বিড় করে বললো,
স্পর্শ: যেভাবে হাসছে মনে হচ্ছে কোনো নোবেল পেয়েছে!
এর কিছুক্ষণ পর তুবা পিয়াসার জন্য একটা কোণ আইসক্রিম নিয়ে এলো।
পিয়াসা: তুই খাবি না?
তুবা: ঠান্ডা লাগবে।
পিয়াসা: আমি তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবো?
তুবা: আমি এখন তোকে সঙ্গ দিতে গেলে দেখা যাবে কাল তুই আমার জ্বর মাপছিস।
পিয়াসা: আচ্ছা, তাহলে তুই মুখটা ফিরিয়ে রাখবি। নয়তো আমার পেট কামড়াবে।
তুবা: ইশ, পাঁজি মেয়ে। আচ্ছা, আমি একটা ফোন কল করে আসছি।
তুবা চলে যাওয়ার পর পিয়াসা এদিক সেদিক তাকাচ্ছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে। হঠাৎ একটা ছেলে কিছু না বলেই পিয়াসার পাশে ধপ করে বসে পড়লো। পিয়াসা বিষয়টি তেমন পাত্তা দিলো না। কিন্তু স্পর্শের এসব দেখে রাগ উঠে গেলো। বসা থেকে সোজা দাঁড়িয়ে পিয়াসার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। স্পর্শ আসার আগেই ছেলেটা আরো কাছে এসে বসলো। ঠিক তখনই স্পর্শ পিয়াসার হাত ধরে হেঁচকা টানে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। পিয়াসার তো ভয়ে বুকটা ধক করে উঠলো। পাশে থাকা ছেলেটাও দাঁড়িয়ে গেলো সাথে সাথে।
পিয়াসা: ক…কে আ…প…
পিয়াসা স্পর্শের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেললো, তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা তারই স্পর্শ।
পিয়াসা: স্পর্শ আপনি?
স্পর্শ পিয়াসাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
স্পর্শ: কি করেছো এসব?
পিয়াসা স্পর্শের শার্টের দিকে তাকিয়ে বিস্ফোরিত চোখে তার আইসক্রিমের দিকে তাকালো।
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
পিয়াসা: আমার আইসক্রিম!
স্পর্শ মাস্ক খুলে পিয়াসার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
স্পর্শ: আমার শার্ট নষ্ট করে তুমি আইসক্রিমের কথা ভাবছো?
পিয়াসা তখনও আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।
পিয়াসা: আমার আইসক্রিমটা!
স্পর্শ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
স্পর্শ: আর আমার শার্ট?
পিয়াসা: ওটাতে ধুয়ে দিলেই চলে যাবে। কিন্তু এখন এই আইসক্রিম কিভাবে ফিরে পাবো আমি?
এতোক্ষণ স্পর্শ আর পিয়াসার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলো ছেলেটা। স্পর্শ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কড়া ভাষায় বললো,
স্পর্শ: আমার গার্লফ্রেন্ড! সো গেট লস্ট।
পিয়াসা ছেলেটার দিকে তাকাতে যাবে স্পর্শ মুখটা ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।
স্পর্শ: ওদিকে কি দেখছো?
পিয়াসা: আপনি কখন এলেন? মানে কোথা থেকে এলেন?
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে আকাশের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললো,
স্পর্শ: ওই যে দেখছো, ওইখান থেকে টপকে পড়েছি।
পিয়াসা: ওহ।
স্পর্শ চোখ ছোট করে পিয়াসার দিকে তাকিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। আর এক দৃষ্টিতে পিয়াসাকে দেখতে লাগলো।
||
চলবে–