অবন্তর_আসক্তি,৪৬,৪৭

0
799

#অবন্তর_আসক্তি,৪৬,৪৭
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
৪৬

সকাল সকাল বলা নেই কওয়া নেই অচেনা একটা মেয়ে বাড়ির ভেতরে এসে হট্ট গোল পাকিয়ে চলছে। একটা মেয়ের সাথে বাড়ির এত গুলো মহিলা কথায় পেরে উঠছে না। সকলের সাথে মেয়েটার এক প্রকার তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেছে।

কানের কাছে কে জেনো এসে ‘ বর্ষা ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলো বর্ষা। ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকিয়ে দেখলো রিমা বসে আছে।

গম্ভীর কণ্ঠে বর্ষা বলল, ‘ সমস্যা কি? এভাবে চিৎকার করলি কেন? আর একটু হলেই তো কানের পর্দা ফেটে বয়রা হয়ে যেতাম। ‘

রিমা শানিতকন্ঠে বলল, ‘ বাড়িতে সকাল সকাল একটা মেয়ের আবির্ভাব ঘটেছে আর সে নিচে এসেই একটা হট্টগোল পাকিয়ে তুলেছে। এদিকে তুই পরে পরে ঘুমাচ্ছিস। চল নিচে দেখবি চল। ‘

মেয়েটাকে একনজর দেখার জন্য না চাইতেও যেতেই হলো বর্ষাকে। নিচে এসে দেখলো সত্যি একটা মেয়ে কাকের মতো কা কা করছে। বর্ষা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে একটা মেয়ে ও ছয়টা মহিলার ঝগড়া দেখতে লাগলো। খালি মুখে ঝগড়াটা তেমন ঝমছিলো না। ডাইনিং টেবিলের উপর ফলমূল রাখা আছে। বর্ষা সেখান থেকে একটা আপেল তুলে নেয়। চোখ তুলে বাড়ির পূর্ব দিকে তাকাতে দেখলো বৃষ্টি, রিয়া, তিন্নী ওরা ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা ও তাদের পাশে গিয়ে পাশ কেটে দাঁড়ালো। হাতের মধ্যে আপেল নিয়ে খেলা করতে লাগলো। পরক্ষণে আপেলের গায়ে এক কামড় বসিয়ে দিলো বর্ষা। গালের মধ্যে আপেল একবার এদিক তো আরেকবার সেদিকে চাবাতে চাবাতে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ মেয়েটা কে? আর আমাদের বাড়িতে কেনো আসছে? ’

বর্ষার কথার প্রত্যত্তরে তিন্নি বলল, ‘ মেয়েটার নাম হিয়া। ‘

বর্ষা কপালের চামড়া ভাজ ফেলে চোখ দু’টো ছোট ছোট করে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মিস হিয়া আমাদের বাড়িতে কেন আসছে কাকে চাই তার? ‘

নির্মূলকন্ঠে বৃষ্টি বলল, ‘ অভ্র ভাইয়াকে চাই তার। ‘

বৃষ্টির কথা বর্ষার কান অব্ধি আসতেই চক্ষু জোড়া কপালে উঠে গেলো ওর বড়বড় চোখ করে বৃষ্টির দিকে তাকালো। হাত থেকে আপেলটা মাটিতে পরে গেছে সেই তখনই বৃষ্টির কথা শুনে। তিন্নি সহ বাকিরাও মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ হুম একদম সত্যি। ‘

বর্ষা রাগে চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘ আজ এই হিয়া ফিয়ার বারোটা বাজিয়ে ফেলবো কত্তো বড় সাহস অভ্র ভাইয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে আসছে এই মেয়ে একে তো আমি.. ‘

বলেই সামনে তাকাতেই দেখলো অভ্র হিয়ার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। সকলের সামনে গিয়ে অভ্র শানিতকন্ঠে বলল, ‘ হিয়া বাহিরে যাও ‘

মেয়েটা আর কিছু না বলে সে বাধ্য মেয়ের মতো বাহিরে চলে গেলো। অভ্র হিয়ার হয়ে সকলের থেকে ক্ষমা চাইলো তারপর সেও বেরিয়ে গেলো। বর্ষার মাথার উপর দিয়ে গেলো শুরু থেকে এই পর্যন্ত ঘটনা সবটা। এক ধ্যানে অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র চোখের আড়াল হতেই বর্ষা নিজের সজ্ঞেনে ফিরে আসলো। এক দৌঁড়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসলো। অভ্র আর হিয়া দু’জনে গাড়িতে উঠে ওরই সামনে দিয়ে চলে গেলো। মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল বর্ষা অস্ফুটস্বরে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো, ‘ কে এই হিয়া? তুমি কি সত্যিই ঠকাচ্ছো আমায় অভ্র? ’
.
.
.
চক্ষু জোড়া বেকুল হয়ে তাকিয়ে রয়েছে রাস্তার দিকে ভারী নিঃশ্বাস ফেলছে বারবার। সেই সকালে বের হয়েছে বিকেল হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আসার খবর নেই। সকাল থেকে এপর্যন্ত হিসাব ছাড়া কল দিয়েছে বর্ষা। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও ফোন বন্ধ। বর্ষার মাথায় গুনেপোকা’রা কামড়ে যাচ্ছে, তার মস্তিক তাকে বলছে, ‘ অভ্র যেই সময়টা ওই হিয়া নামে মেয়েটার কাছে থাকে তখনই হয়তো সে ফোন বন্ধ করে রাখে। তাহলে কি যখনই তার ফোন বন্ধ থাকে তখন সে ওই মেয়েটার কাছে থাকে? কি সম্পর্ক তাদের দু’জনের মধ্যে? তাহলে কি আমার চিন্তা ভাবনাই সত্যি? ‘

কড়া রোদ্দুরে অহেতুক বারান্দায় বসে রয়েছে সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। চিনচিন গরম পরেছে কিন্তু বর্ষার তাতে কেনো হেলদোল নেই। মনে হচ্ছে বাহিরে সীল দ্বারায় বৃষ্টি হচ্ছে আর সে বসে বসে উপভোগ করছে। কিন্তু নয়, হচ্ছে তার উল্টো।

গুরুগম্ভীর কন্ঠে পেছন থেকে কেউ বলল, ‘ এই কড়া রোদে তুমি বারান্দায় বসে আছো কেনো? ‘

মাথা পেছনে ঘুরিয়ে বর্ষা ওর আম্মুকে দেখে বলল, ‘ ভালো লাগছে না আম্মু! ‘

বর্ষার মা বর্ষাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ কি হয়েছে আমার মেয়ের তার ভালো লাগছে না কেনো শুনি? ‘

বর্ষা ধাতস্থ কন্ঠে বলল, ‘ কিছু হয়নি আম্মু এমনি। তা তুমি কেন আসতে গেলে? আমাকে ডাক দিলে তো আমিই যেতাম তোমার কাছে। ‘

বর্ষা মা বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ এই নিয়ে চার থেকে পাঁচ বার আওয়াজ দিয়েছি কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিজেই দেখতে আসলাম। ‘

বর্ষা ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ সরি আম্মু আমি শুনতে পাইনি। ‘

‘ কোনো ব্যাপার না চলো কিছু খাবে এমনিতেও দুপুরে ঠিক মতো খাওনি। তুমি তো জানো তোমার শরীর খুব দূর্বল আর এখন তোমার পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। নয়তো আগামীকাল আহিতার হলুদে গেলে তো দূর্বলতার জন্য মাথা ঘুরে পরে যাবে। ‘

প্রত্যত্তরে বর্ষা তেমন কিছুই বললো না শুধু বলল, ‘ ইচ্ছে করছে না। ‘

বর্ষাকে জোরপূর্বক রুমে নিয়ে আসলো ওর মা। রুমে এনে হালকা কিছু নাস্তা খাইয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন।

বর্ষা বিছানার উপর বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগল। হঠাৎ তার মনে হলো দরজার সামনে পর্দার আড়ালে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মোবাইল টা বিছানার উপর রেখে এগিয়ে গেলো সেথায়। দুই হাতে পর্দা মুঠি বন্ধ করে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে হামজা (বর্ষার ছোট ভাই) বর্ষা তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। কিয়ৎক্ষণ তার কিউট ফেসের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘ আমির হামজা হঠাৎ আমার দুয়ারে? ‘

বাচ্চা ছেলে কিছু না বুঝলেও ধীরকন্ঠে বলল, ‘ আমার নাম আমির না আমার নাম হামজা হামজা! ‘

বর্ষা হামজার থুতনিতে হাত রেখে বলল, ‘ আচ্ছা হামজা! তা এখানে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন? মোবাইলে কার্টুন দেখবা? ‘

হামজা ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ নাহ! ‘

বর্ষা চোখ জোড়া ছোটছোট করে বলল, ‘ তো? ‘

হামজা পর্দা দিয়ে মুখ ঢেকে বলল, ‘ আইসক্রিম খাবো। ‘

বর্ষা শব্দ করে হেসে দেয় কেননা হামজা দেখতে পুরো বর্ষার কপি। আবার সে তারই স্বভাবে বড় হচ্ছে এজন্য বর্ষার প্রায়ই তার বাবা মা ও বাকিদের কাছ থেকে শুনতে হয়, ‘ বাড়িতে একটা বর্ষা কি কম ছিল? হামজা পুরো বর্ষার মতো পাজি হয়েছে ছোট বেলায় বর্ষা তো এমনই ছিল। ‘

বর্ষার বাবা তাদেরকে সাই দিয়ে বলেন, ‘ বর্ষার থেকেও বেশি পাজি ও তেরা হইছে হামজা বর্ষাকেও হার মানিয়ে ফেলেছে। ‘

দাঁতে দাঁত চেপে সব কিছু শুনেও না শোনার মতো বসে থাকে বর্ষা। মাঝেমধ্যে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হামজার দিকে ওর জন্যই তো কথা শুনতে হয়।

বর্ষা হামজাকে পর্দার আড়াল থেকে বের করে কোলে তুলে নিলো। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে চেঁচিয়ে ওদের মা’য়ের উদ্দেশ্য বলল,’ আম্মু আমি হামজা কে নিয়ে দোকানে যাচ্ছি। ‘

দোকান থেকে একটা আইসক্রিম কিনে হামজার হাতে দিলো। হামজা বর্ষার উদ্দেশ্য বলল, ‘ খুলে দাও, আমি খুলতে পারি না। ‘

বর্ষা উপরের কাগজ খুলে দিলে হামজা খেতে শুরু করল। বর্ষা হামজার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মজা? ‘

হামজা হাসতে হাসতে বলল, ‘ হুম মজা, থ্যাঙ্কিউ ভেলি মাছ ‘

বর্ষা হামজার কথা শুনে শব্দ করে হাসতে শুরু করলো। পরক্ষণে হাসি থামিয়ে বলল, ‘ এইসব উল্টা পাল্টা ইংলিশ কোত্থেকে শিখছো? ‘

হামজা আইসক্রিম খেতে খেতে বলল, ‘ টিভি থেকে ‘

বন্ধ দরজার অপারে দাঁড়িয়ে রাগী গলায় চেঁচিয়ে বলল, ‘ ভুলে যেও না হিয়া তুমি কে? তোমাকে আমি আমার ফ্লাটে এনে রেখেছি তার কারণ তোমার বাবা। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি উনার জীবন ত্যাগ করেছিলেন। মৃত্যুর সময় তাকে আমি কথা দিয়েছিলাম তোমার সব দায়িত্ব আমার। তাই বলে এটা নয় তুমি আমার বাড়িতে গিয়ে সকলের সাথে বেয়াদবি করবে। নেক্সট টাইম আমি এসব সহ্য করবো না। তুমি শুধু মাত্র আমার কর্তব্য আর কিছু না। আমার পার্সোনাল লাইফে দখল দিলে ভালো হবে না তোমার জন্য সেটা আশা করি খুব ভালো করে জানো। পরবর্তী তে সাবধানে থেকো লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম। ভুল করেও যদি আবার ভুল করো তোমাকে মে’রে ফেলতে আমি দু’বার ভাববো না মনে রেখো। আমার লাইফে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার ফ্যামিলি এবং তারপরে গুরুত্বপূর্ণ বাকি সব কিছু। মাইন্ড ইট ‘

বলে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো অভ্র দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো হিয়া। আজ একমাস ধরে হিয়া অভ্রর কাছে আশ্রিত হয়ে আছে। হিয়া নিজেরই অজান্তে অভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা কি অভ্র বুঝে না? নাকি বুঝেও তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে?
.
.
.
রাত প্রায় এগারো টা বাজে সকলে প্রায় অর্ধেক ঘুমিয়ে গেছে। বর্ষা এখনো ঘুমায়নি রুমের লাইট জ্বালিয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে। পড়ায় কোনো মন নেই তার রাত পোহালে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান সেদিকেও কোনো খেয়াল নেই বর্ষার। তার সমস্ত চিন্তা ভাবনা জুড়ে শুধু অভ্র বিরাজ মান।

হঠাৎ কানে গাড়ির হনের শব্দ ভেসে আসলো। পড়ার টেবিল থেকে উঠে দৌঁড়ে বারান্দায় চলে গেলো বর্ষা। যা ভেবে ছিলো তাই অভ্রর গাড়ি মানে ও ফিরে আসছে। বারান্দা থেকে রুমে চলে আসলো ওড়না গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হলো ততক্ষণে অভ্র বাড়ির ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি অব্ধি চলে আসছে। বর্ষাকে সিঁড়ির উপর দেখে কিছুক্ষণ স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থেকে নিচ থেকে উপরে উঠে আসে। বর্ষাকে তোয়াক্কা না করে অভ্র পাশ কাটিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেলো। বর্ষা ও কম নয় সে-ও অভ্রর পেছন পেছন ছুটলো।

অভ্র রুমে ঢুকে শার্টের বোতাম খুলতে যাবে তখন রুমে প্রবেশ করলো বর্ষা। রাগী গলায় বলে উঠল, ‘ হিয়া কে? ‘

ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে পেছনে ঘুরে তাকালো অভ্র। বর্ষা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের লাইট অন বলে অভ্র বর্ষার চোখ জোড়া স্পষ্ট দেখতে পেলো। চক্ষু জোড়া লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ইচ্ছে মতো কেঁদেছে। শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলল শার্ট টা। অভ্রর কান্ড দেখে বর্ষার চোখ জোড়া চরক গাছ। সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকালো। অভ্র এক’পা দু’পা করে সামনে এগিয়ে এসে বর্ষার হাত ধরে নেয়। বর্ষা মাথা তুলে অভ্রর দিকে তাকানোর পরপরই অভ্র বর্ষাকে টেনে রুমের মধ্যে নিয়ে এসে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। অভ্র ওর অন্য হাত বর্ষার থুতনিতে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,’ are you jealous? ‘

বর্ষা অভ্রর চিবুকে হাত রেখে সজোরে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ মোটেও না। ‘

অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। বর্ষা রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল। পেছন থেকে আবারও অভ্র বর্ষার হাত ধরে ফেলে টান দিয়ে নিজের উন্মুক্ত বুকের আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে ধরলো। বর্ষা ছোটবার জন্য নড়াচড়া করতে লাগল। অভ্র শক্ত করে বর্ষার হাত জোড়া ধরে বর্ষার ঠোঁট জোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দিলো। বর্ষা শুরুতে ছুটবার চেষ্টা করলেও কিয়ৎক্ষণ পর স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পরে। মিনিট পাঁচেক পর অভ্র বর্ষাকে ছেড়ে দেয়। বর্ষার বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সশব্দে হেসে উঠল অভ্র। পিটপিট করে অভ্র দিকে চোখ মেলে তাকালো বর্ষা।

বর্ষা অভ্রর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, “ অসভ্য? ”

দুই হাত পেছনে নিয়ে বর্ষার দিকে কিছুটা ঝুঁকে ডেভিল হাসি দিয়ে অভ্র বলল, ‘ এবার বলো তুমি আমার কে? ’

বর্ষা ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে অভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র বর্ষার হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে এক নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো তুমি আমার কে? সেখানে অন্য কাউকে নিয়ে তুমি আমাকে সন্দেহ করে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছো? কেনো শুভ্র পরী? তুমি তো জানো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারীর স্থান নেই আমার জীবনে। ’

বর্ষা শানিতকন্ঠে বলল, ‘ আমার প্রশ্নের উত্তর এটা নয়৷ হিয়া কে? ’

অভ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফের বলল, ‘ সময় হলে জানতে পারবে। ‘

বর্ষা রাগে অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে নিজের সামনে থেকে ফ্লোরে ফালিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে অভ্রর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ফ্লোরের উপর দুই হাত দু’দিকে রেখেই বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অভ্র।

রুমের মধ্যে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় বর্ষা। মাত্রারিতিক্ত রাগ ও ক্ষোভে ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেরই ছিঁড়ে ফেলতে। রাগে বিড়বিড় করে বলল, “ অসভ্য লুচু একটা আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো আমার ঠোঁট জোড়া ইয়াক ছিহহ খাচ্চোর ”

বলতে বলতে রুমের লাইট অফ করে বিছানায় কাঁথা মুড়ো দিয়ে শুয়ে পরলো বর্ষাভ্র দুজনে দুই রুমে।

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি [৪৭]
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
_____________
সকালে একটার পর একটা আবিযাবি খাবার খাওয়ার পর থেকে পেটে ব্যাথা শুরু হয় বর্ষার।

সকালে নাস্তা না খেয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে বর্ষা, রিয়া, রিমা ও বৃষ্টি কিছুদূর সামনেই খোলা মাঠে এক ছোট খাটো মেলা বসেছে।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে তিনজনে বাহিরে গার্ডেনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনই বাহিরে গেইট দিয়ে ঢুকে সোজা ওদের কাছে দৌঁড়ে আসলো রিয়া হন্তদন্ত হয়ে বলল, ‘ বড়ই বাগানের সামনে মেলা বসেছে তোরা যাবি? ‘

মেলায় যাওয়ার কথা শুনে বাকি দু’জন রাজি হলেও বর্ষা হলো না। কেননা ঘন্টা খানেক পর তাদের তৈরি হয়ে আহিতার বাড়ি পৌঁছাতে হবে তাছাড়া শাড়ি পরা বড্ড ঝামেলা।

রিয়া আর বৃষ্টি নাছোরবান্দা নয় ছয় বুঝিয়ে বর্ষাকে রাজি করিয়ে ফেললো। বলল তারা এক ঘন্টার মধ্যে ঘুরে ফিরে আসবে। তৈরি হবে তো দুইটার পর এখন বাজে মাত্র দশটা।

ওদের কথা শুনে বর্ষা যেতে রাজি হলো। বাড়ির ভেতরে গিয়ে বড়দের থেকে পারমিশন নিয়ে বোরকা পরে চারজনে বেরিয়ে পরলো। হাঁটতে হাঁটতেই চলে এসেছে বেশি দূর নয় বৈকি।

এখানে আসার পর চারপাশে চোখ বুলিয়ে মলিনকন্ঠে বর্ষা বলল, ‘ আমি বাবা ভেতরে যাবো না। কত ভীর দেখছিস? ভেতরে যাবো কি ঠেলা খেতে? মোটেও না তোরা বরং গিয়ে ঘুরে আয় প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস থাকলে কিনে নিয়ে আসিস। আর হ্যাঁ চাইলে আমার জন্য ও আনিস। আমি মাইন্ড করবো না। ‘ বলেই হিহিহি করে হেসে ফেললো।

ভ্রুখানিক কুঞ্চিত করে ধাতস্থ কন্ঠে রিয়া বলল, ‘ তাহলে তুই একা এখানে দাঁড়িয়ে কি করবি শুনি? ‘

বর্ষা কিছুটা দূরে তাকালো সেদিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘ আঁচার খাবো। ‘

বৃষ্টি পেছনে তাকিয়ে দেখলো পরে বর্ষার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ খালি পেটে আঁচার? ‘

বর্ষা আমতা আমতা করে বলল, ‘ আমি কিছু কিনবো না তো অযথা মানুষ ঠেলে ভেতরে গিয়ে লাভ নেই তোরা যা। আর দেখ ওখানে আঁচার বাদেও অনেক কিছু আছে। আমি অন্য কিছু খেয়ে পরে আঁচার খাবো। তোদের ঘোরাঘুরি শেষ হলে ওখানে চলে আসবি। আমি তোদের জন্য ওখানেই বসে অপেক্ষা করবো। ওকে এখন যা। ‘

বাকিরাও কথা না বাড়িয়ে ভেতরে চলে গেলো। এদিকে বর্ষা ঝাঁলমুড়ি, চানাচুর, ভুটভাজা, পেঁয়াজু, হালিম, ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি একের পর এক খেয়ে যাচ্ছে। পেট ভরে গেলে একটা খালি চেয়ারে বসে রেস্ট নিতে থাকে বেচারি খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। গতকাল দুপুরে খায়নি, রাতেও খায়নি আজ সকালে খাবে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় বাহিরে বসে আড্ডা দিতে চলে যায়। যখন খাবার খাওয়ার চিন্তা করে তখন মেলায় চলে আসে। এদিকে পেটের মধ্যে ইঁদুর ছুটাছুটি করছে। খিদের জ্বালা বড় জ্বালা খিদে পেয়েছে পরিনাম চিন্তা না করেই এক ধারে খেয়ে গেছে।

এক ঘন্টা পূর্ণ হওয়ার আগেই রিয়া, রিমা, বৃষ্টি বর্ষার কাছে এসে উপস্থিত হয়। তারপর চারজনে হেঁটে আবারও বাড়িতে চলে আসে।

বাড়িতে আসার এক ঘন্টা পরই শুরু হয় বর্ষার পেটের জ্বালা। অসহ্যকর যন্ত্রণা শুরু হলো পেটে। দুই হাত দিয়ে তলপেট শক্ত করে চেপে ধরে ‘আম্মু’ বলে চিৎকার করতে লাগলো।

বাড়িতে তখন মুন্নি ছিলো হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্য রেডি হচ্ছে। বর্ষার চিৎকার শুনে ওর রুমে আসে। বর্ষা অস্ফুটস্বরে বলে ওর খুব পেট ব্যাথা করছে। মুন্নী গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করল বর্ষাকে তারপর উঠে ওর নিজের রুমে চলে যায়। ইতিমধ্যে বাড়ি সদ্য লোক বর্ষার রুমে চলে আসছে। বর্ষার অবস্থা খুব খারাপ ও উঠে দাঁড়াতে অব্ধি পারবে না। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করা নিতান্তই এখন অবান্তর।

কিছুক্ষণ পর চার থেকে পাঁচটা ঔষধের পাতা হাতে করে নিয়ে মুন্নি বর্ষার রুমে আবারও আসলো। এক গ্লাস পানি নিয়ে বর্ষার হাতের উপর তিনটা ঔষধ রাখলো ঔষধ গুলো পানি দিয়ে খেতে ইশারা করল মুন্নি। অভ্র বর্ষাকে উঠে বসার জন্য সাহায্য করলো। বর্ষা অভ্রর হাত শক্ত করে চেপে ধরে। অভ্রর চক্ষু জোড়া রাগে লাল হয়ে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। রুমের মধ্যে অন্যরা থাকায় সে খুব কষ্টে রাগ দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। অভ্রর ইচ্ছে তো করছে ঠাসস করে বর্ষার গালে এক চড় বসিয়ে দিতে উল্টা পাল্টা লাগাম ছাড়া খেতে কে বলছে ওকে?

মুন্নির দেওয়া তিনটি ঔষধ প্রথমে খাওয়ার পর সে আরও দুইটা ঔষধ বর্ষাকে দেয়। সেগুলো খাওয়ার পর আস্তে করে অভ্র বর্ষাকে বিছানায় শুয়ে দেয়।

মিনিট পাঁচেক পর বর্ষার কান্নার গতি কিছুটা কমে কিন্তু এখনো গুঙিয়ে যাচ্ছে। আরও মিনিট পাঁচেক পর বর্ষা একদম চুপ হয়ে যায়।

ব্যাথার ঔষধ তার কাজ করছে এখন এই সময়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থাকলে ব্যাথা পুরোপুরি কমে যাবে। মুন্নি হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বে বারবার করে বলে যায়, ‘ ঘুম থেকে উঠার পরপর খাওয়ার জন্য উমাউমা গরম এক গ্লাস দুধ দিবে বর্ষাকে। কেউ কিন্তু ভুলে যেও না! ‘

বর্ষা ঘুমের মধ্যেই গুঙিয়ে কেঁদে উঠছে। বর্ষার হাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে আছে অভ্র। চোখে মুখে চিন্তার আবাস।

দুপুরের পরপর বাকিরা যারা হলুদে যাবে তারা রেডি হয়ে চলে যায়।

এদিকে বর্ষা যেতে পারলো না বান্ধবীর হলুদে পেট ব্যাথার জন্য মিস করলো সব কিছু আর এখন তো সে ঘুমে বিভোরে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

❝ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি অভ্র ❞

হিয়া অভ্রর দুইহাত ধরে ওর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে মিনতি স্বরে বলতে লাগল! অভ্র হিয়ার দুইহাত ধরে ওর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে মৃদুস্বরে বলল, ❝ আমিও তোমাকে ভালোবাসি হিয়া ❞

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here