অবন্তর_আসক্তি,৪৮,৪৯

0
740

#অবন্তর_আসক্তি,৪৮,৪৯
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
৪৮

ঘুমের ঘোরে কোলবালিশ বুকে জড়িয়ে ছটফট করছে। অভ্রকে ভেবে কোলবালিশ’কে বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে। হঠাৎ সে পর্যবেক্ষণ করলো অভ্র ধীরে ধীরে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে পরক্ষণে ❝ নাহ ❞ বলে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠলো হিয়া। মাথার উপরে ফ্যান চলছে তবুও সে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। বন্ধ রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো সে বিছানার উপর কোলবালিশ ধরে বসে আছে অভ্র কোথাও নেই৷ শুকনো ঢোক গিলে অস্ফুটস্বরে বলল, ❝ আল্লাহ করুক এই স্বপ্ন’টা জেনো সত্যি হয়। যে কোনো কিছুর মূল্যে অভ্র জেনো আমার হয়। ❞

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ক্ষণ যাবত ফোনে কারো সাথে কথা বলছে অভ্র। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট রাগী গলায় ফোনের অপর প্রান্তের লোকটিকে শাসিয়ে ফোন কেটে দিলো অভ্র। তার কানে ভেসে আসছে কিছু অদ্ভুত আওয়াজ। শব্দটি অনুসরণ করে রুমে আসতে অভ্র দেখলো বর্ষা বিছানায় শুয়ে নড়াচড়া করছে আর মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ বের করছে। আহিতার গায়ে হলুদে সকলে যাওয়ায় বাড়ি প্রায় ফাঁকা। সবাই গেলেও তিন্নি যায়নি৷ এক গেঁয়ো মেয়ে একটা সারাদিন রুমে থাকতেই পছন্দ করে সে বাহিরে ঘোরাঘুরি তেমন একটা তার পছন্দ নয়। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে সময় কাটাতেও সে তেমন একটা সাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। নিজের মধ্যে একা থাকতেই ভালোবাসে।

অভ্র বর্ষার সাথে আছে বলে বাকিরা চিন্তা মুক্ত হয়। যাবে ও কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে বলে গেছেন বর্ষার মা।

বর্ষার মাথার দিকটায় বসলো অভ্র। বর্ষার দুইপাশে দুইহাত দিয়ে বর্ষার উপরে কিছুটা ঝুঁকে বসেছে অভ্র। বর্ষা ঘুমের ঘোরে মাথা এদিক সেদিক নাড়াচ্ছে আর চোখ কেমন জেনো পিটপিট করছে। অভ্র ঠোঁট উল্টিয়ে শালিনকন্ঠে বলল, ‘ না জানি? আবার কি সব উল্টা পাল্টা স্বপ্নে দেখছে এই মেয়ে। ’

অভ্রর কথা বলার মাঝখানেই বর্ষা হুট করে চোখ মেলে তাকালো। অভ্র বর্ষার তাকানোর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। এদিকে বর্ষা মনে মনে ভাবছে, ‘ এটা কি স্বপ্ন? আমি কি স্বপ্ন দেখছি? যদি স্বপ্নই হয় তাহলে এর পুরো ফাঁয়দা উঠানো উচিত আমার স্বপ্ন আমার যা ইচ্ছে তাই করবো! ’

ভাবতে ভাবতে কাঁথার নিচ থেকে দুইহাত বের করে অভ্রর কাঁধের উপর রেখে হিচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। অভ্র হাল্কার উপর ভোর দিয়ে রেখেছিলো দুইহাতে বর্ষা হঠাৎ টান দেওয়ায় সে তার উপরে পরে যায়। বর্ষা সঙ্গে সঙ্গে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে অভ্রর ঠোঁট জোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দেয়। এক মিনিট পর অভ্রর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলো অভ্র আগের ন্যায় দুইপাশে হাতের উপর ভোর দিয়ে বসে এক দৃষ্টিতে বর্ষাকে লক্ষ্য করছে। বর্ষা চোখ জোড়া বন্ধ রেখেই ফিক করে হেসে ফেললো। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো অভ্র আগের মতোই বসে আছে। মূহুর্তেই হাসি মলিন হয়ে গেলো বর্ষার। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে কিছুক্ষণ অভ্রর মুখপানে তাকিয়ে বর্ষা জড়ানো কন্ঠে বলল, “ এটা স্বপ্ন ছিলো না? ”

অভ্র ভ্রু কুঁচকালো চোখ জোড়া ছোটো-ছোটো করে ডানে বামে দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে বলল, ❝ উঁহু ❞

বর্ষা অবাক হওয়ার মতো করে চোখ জোড়া বড়বড় করে অভ্রর দিকে তাকায় পরক্ষণে শুকনো ঢোক গিলে অস্ফুটস্বরে ‘ আল্লাহ গো ’ বলেই কাঁথার নিচে মুখ লুকালো।

অভ্র ফিক করে হেসে দিলো কাঁথা ধরে টান দিতে দিতে বলল, ‘ আমার মতো বেচারা ছেলের মান ইজ্জত ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এখন কাঁথা মুড়ো দেওয়া হচ্ছে? ’

বর্ষা মলিনকন্ঠে বলল, ‘ আমি কিছু করিনি। আমি ভেবেছি স্বপ্ন দেখছি। ’

দরজার সামনে থেকে তিন্নি শানিতকন্ঠে বলল, ‘ তুই কি করিসনি? ‘

তিন্নির কন্ঠস্বর শুনে কাঁথার নিচ থেকে বের হলো বর্ষা। বিছানার উপর উঠে বসতেই নজর গেলো বারান্দার দিকে, ভ্রু কুঁচকে কিয়ৎক্ষণ বাহিরে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল, ‘ বাহিরে কি সন্ধ্যা হয়ে গেছে? নাকি আমি সত্যি স্বপ্ন দেখছি? ‘

ট্রের উপর থেকে এক গ্লাস দুধ বর্ষার দিকে বাড়িয়ে দিলো তিন্নি পরক্ষণে বলল, ‘ সত্যি সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর তুই মোটেও স্বপ্ন দেখছিস না। আর নে এটা পুরো টা খেয়ে শেষ কর। ‘

‘ সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ তোমরা কেউ আমাকে ডাকোনি কেনো? সকলে কোথায় আহিতার বাড়িতে যেতে হবে ভুলে গেছে নাকি? ’ বর্ষা তারা দিয়ে বলল।

অভ্র বর্ষার হাত ধরে বলে উঠল, ‘ সকলে চলে গেছে তোমার শরীর বেশ খারাপ হওয়ায় আমিই বলেছিলাম তাদের তোমাকে না ডাকতে। ‘

বর্ষা মনমরা হয়ে বলল, ‘ কিন্তু? ‘

অভ্র চোখের ইশারায় দুধের গ্লাসটা দেখিয়ে বলল, ‘ কোনো কিন্তু নয় দুধটা খেয়ে রেস্ট করো। আগামীকাল সুস্থ হলে কাল বিয়েতে চলে যাবে। বিয়ের আনন্দ তোমার হেল্থের থেকে বেশি ইমপোর্টেন্ট নয়। ‘

বর্ষা অভ্রর কথার পিঠে আর কোনো কথা বলল না। গ্লাসে ঠোঁট লাগিয়ে চুমুক দিতেই অভ্রর ফোন বেজে উঠল বর্ষা আড়চোখে দেখলো ফোনের স্কিনে স্পষ্ট ‘হিয়া’ নামটি ভেসে উঠেছে। অভ্র কল রিসিভ করে সোজা বেলকনিতে চলে যায়।

বর্ষা ও অভ্রর মা তারাতাড়ি অনুষ্ঠান পুরো শেষ না হতেই বাড়িতে চলে আসেন। উনারা বাড়িতে এসেই কিচেনে চলে যায় তিন্নি বর্ষা ও অভ্রর জন্য রান্না করতে লাগেন।

রাতে খাবার খেয়ে বর্ষা তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরে। বাকিরাও ঘুমাতে চলে যায়।

পরদিন ~

দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে চারজনে সাজতে বসেছে। বর্ষা আলমারির কাভার্ড থেকে লেহেঙ্গা টা বের করে বিছানার উপর রাখলো। তা দেখে শত প্রশ্ন জুড়ে দিলো বাকিরা। বর্ষা সাজতে সাজতেই তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো। লেহেঙ্গা অভ্র কিনে আনছে শুনেই তারা একটু হিংসে বোধ করছে। রিয়া ফোঁসফোঁস করে বলল, ‘ আমরাও তো তারই বোন কখনো তো আমাদের জন্য কিছু আনে না। ‘

বৃষ্টি টিটকারি মেরে বলল, ‘ আমরা বোন হই আর উনি তো বাম পাঁজরের হাড় ‘

বলেই বৃষ্টি ও রিমা হাসতে লাগলো। বর্ষা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজে তৈরি হতে লাগলো। এমন সময় হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে লক্ষ্য করে ফোনটা বর্ষার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে রিমা বলল, ‘ এই নে তোর চিঠিবাজের কল আসছে ‘

বর্ষা বিরক্তির সাথে বলল, ‘ উফফ তোরাও না পারিস। ’

কল রিসিভ করতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে অভ্র হাফসাফ ছেড়ে বলল, ‘ কি পরবো আজ বলো তো? শার্ট নাকি পাঞ্জাবি? ’

বর্ষা ভাবান্তর হয়ে বলল, ” পাঞ্জাবি পরো। ‘

‘পাঞ্জাবি পরলে তো গরম লাগবে!’ বলল অভ্র।
‘তাহলে শার্ট পরো!’
‘ কিন্তু শার্ট পরলে তো তোমার সাথে ম্যাচ করবে না। ‘
‘ তাহলে পাঞ্জাবি পরো ‘
‘ তুমি তো জানো পাঞ্জাবি পরলে আমার অস্তিত্ব হয়। ‘

বর্ষা বিরক্তিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে চেঁচিয়ে বলল,’ তাহলে কিচ্ছু পোরো না এমনি যেও! ‘

বলে ফোন কেটে দেয় রাগী চোখে বৃষ্টি, রিয়া, রিমার দিকে তাকালে তারা অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। মেয়েদের সাজ বলে কথা এক ঘন্টায় ও হয় না। তিন ঘন্টা পর কমপ্লিট সেজে রুম থেকে বের হলো চারজনে। অভ্র ফোনে কথা বলতে বলতে আগেই বের হয়ে গেছে। বাকিরা আগেই তার গাড়িতে উঠে বসে পরছে। ওদের চারজনের জায়গা হবে না বৈকি ওরা অন্য গাড়িতে উঠে বসলো।

বিয়ে বাড়ি বলে কথা তর্জাব কম নয়। বাড়ি ভর্তি মানুষ উল্টো দিকে গান বাজনা। গাড়ি থেকে নামতে অভ্রর চোখ পরলো বর্ষার উপরে সে সকলের অগোচরে বর্ষার কাছে গিয়ে রাগী গলায় বলল, ‘ এত সাজতে কে বলছে তোকে হুহহ? আজ কত ছেলে তোকে দেখে ক্রাশ খাবে কোনো ঠিক আছে? মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাখবি কেউ জেনো তোকে না দেখে বলে দিলাম। ‘

বর্ষা মুখ ভেংচি কেটে অভ্রর সামনে থেকে চলে গেলো। সকলে মিলে আহিতার পাশ গেষে বসে আছে এদিকে আহিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে বাহিরে চেচামেচি শুরু হয়ে গেলো সকলে বলছে, ‘ বর এসেছে বর এসেছে। ‘

আহিতাকে একা রেখে সকলে বর দেখতে গেইটের সামনে চলে আসলো। ইতিপূর্বে অনেকেই গেইট ধরে দাঁড়িয়ে আছে টাকা না দিলে কেউ ভেতরে ঢুকতে দেবে না। বর্ষা বৃষ্টি সেখানের সকলকে ঠেলে সবার সামনে চলে আসলো। রিয়া ও রিমা আগে থেকেই গেইট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সব মেয়েরা একসাথে বলছে, ‘ আমাদের দশ হাজার টাকা না দিলে গেইট দিয়ে ঢুকতে দেবো না। ‘

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন ছেলে বলে উঠল, “ কিসের দশ হাজার বিশ ত্রিশ হাজার টাকা না দিলে তো আমরা এখান থেকে সরবোই না। ”

বর্ষা মাঝখান থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠল, ‘ কিসের দশ বিশ ত্রিশ হাজার টাকা বলছো তোমরা একমাত্র দুলাভাই টাকা চাইলে চাইবা পঞ্চাশ হাজার। আমাদের পঞ্চাশ হাজার টাকা না দিলে বরকে গেইট দিয়ে ঢুকতে দেবো না। ’

মুরাদ চোখ জোড়া বড়বড় করে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আসতে আসতে বলল, ‘ তোর মতো বন্ধুর থেকে শত্রু ও ঢের ভালো। সু্যোগ পেয়ে বাঁশ দিচ্ছিস! ‘

বর্ষা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল, ‘ তা অবশ্য দিচ্ছি। ‘

মুরাদের পাশ থেকে একটা আকাশী রংয়ের পাঞ্জাবি পরা ছেলে বলে উঠল, ‘ পঞ্চাশ হাজার টাকায় কতগুলো শূন্য হয় সেটা জানো আপু? ‘

বর্ষার পাশ থেকে রিয়া ধাতস্থ কন্ঠে বলে উঠল, ‘ আপনি কি এখানে আমাদের পঞ্চাশ হাজারে কতগুলো শূন্য হয় সেটা শিখাতে আসছেন? আপনার কাছে কি আমাদের মূর্খ মনে হচ্ছে? ‘

বৃষ্টি শানিতকন্ঠে ছেলেটার উদ্দেশ্য বলল, ‘ আপনি কে এত চটরপটর করছেন কেন? ‘

ছেলেটা বলল, ‘ আমি ও আমরা সকলে বর পক্ষ ‘

বর্ষা ফিক করে হেসে বলে উঠল, ‘ ও তাহলে আপনি ও আপনারা সকলে বরের চামচা ‘

বর্ষার কথার পিঠে সকলে সশব্দে হেসে উঠল। দু’পক্ষই টাকা নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। কেউ কারো থেকে কম নয়। মুরাদের দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে। এক পাশে তারই বন্ধুগণ তো অন্য পাশে তারই ভাই। বাধ্য হয়ে মুরাদ বলে উঠল, ‘ বর্ষা যা চাইছে ওকে দিয়ে দে আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। ‘

বর্ষা মুরাদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল, ‘ ছাতা এনে দিবো দুলাভাই? ‘

মুরাদ বর্ষার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘ এখান থেকে একবার মুক্তি পাই তারপর দেখাবো তোদেরকে মজা? ‘

দূর থেকে চিলের নজরে সবটা পর্যবেক্ষণ করে চলেছে অভ্র কোনো কিছুই তার চোখের আড়াল হচ্ছে না।

টাকা পেয়ে গেলে গেইট ছেড়ে দিয়ে সকলে চলে যায়। সকলকে হিসাব করে টাকা দিলে তারা নিজেদের ভাগ নিয়ে কেটে পরে। বর্ষা একাই নিয়েছে দশ হাজার টাকা, সে টাকা গুনতে গুনতে হাঁটছিলো তখন হটাৎ এক সুটাম দেহের সাথে ধাক্কা লাগে। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, ‘ আব্বে কেঠা? ‘

বলে মাথা তুলে দেখলো অভ্রকে। অভ্রর চেহারা দেখেই বর্ষা ওর দুইহাত পেছনে লুকিয়ে ফেললো। অভ্র কিছু বলতে যাবে তখনই সেখানে এসে উপস্থিত হয় সেই আকাশী রংয়ের পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা। এসে আগ বাড়িয়ে বর্ষার সাথে কথা বলতে লাগে। ছেলেটা অভ্রকে দেখিয়ে বলে, ‘ এটা কে? ‘

বর্ষা অভ্রর দিকে একনজর তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘ ভাই ‘

ছেলেটা অভ্রকে বর্ষার ভাইয়ের মতো ট্রিট করে বললো, ‘ আমার নাম ইরাক ‘

অভ্র ইরাকের সাথে পরিচয় হওয়ার আগ থেকেই বর্ষার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সুযোগ বুঝে বর্ষা অভ্রর সামনে থেকে কেটে পরলো। অন্য দিকে প্যান্ডেলের সামনে গিয়ে দেখলো সকলে বরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা সেদিকে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াতে যাবে তখনই পেছন থেকে কে জেনো লেহেঙ্গার ওড়না ধরে টান মারলো। বর্ষা পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো দশ এগারো বছরের একটা মেয়ে। বর্ষা তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ কি হয়েছে ওড়না ধরে টান দিলে কেনো কিছু বলবে? ‘

মেয়েটা উপর নিচ মাথা দুলিয়ে বলল, ‘ হুম! বাহিরে আম গাছের নিচে একটা ভাইয়া তোমাকে ডাকছে সে তোমাকে এক মিনিটের মধ্যে যেতে বলেছে! ‘

বর্ষা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভারী নিঃশ্বাস ফেললো কেননা সে ভালো করেই জানে সে ভাইয়া টা আর কেউ নয় স্বয়ং অভ্র। বর্ষা প্যান্ডেলের বাহিরে গিয়ে আম গাছ খুঁজতে লাগলো। কিছদূর যেতেই একটা আম গাছ নজরে পরলো। লেহেঙ্গা কিছুটা উপরে তুলে সেদিকে চলে গেলো। অভ্র গাছের বিপরীতে একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে। বর্ষাকে দেখে সে বলল, ‘ এদিকে আসো। ‘

বর্ষা আস্তে আস্তে অভ্রর পাশে রাখা অন্য চেয়ার টায় বসে পরলো। কোনো কিছু বলার আগেই অভ্র বর্ষার দিকে ঘুরে বর্ষার দুইগাল ওর দুইহাত দিয়ে চেপে ধরে গষতে লাগলো। অভ্র ওর ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে বলল, ‘ কিসের ভাই? এই আমি তোর কিসের ভাই? জামাই বল জামাই। আগের সম্পর্ক বাদ এখন আমি তোর কি এটা ক্লিয়ার কর। ‘

বর্ষা ব্যাথায় কুঁকড়াচ্ছে এমতাবস্থায় ঠোঁট জোড়া গোলগোল করে বলল, ‘ জামাই জামাই ‘

অভ্র মুখ দিয়ে, ‘ হুহহ মনে থাকে জেনো ‘ বলে বর্ষার গাল ছেড়ে দেয়। বর্ষার গাল জোড়া লাল হয়ে গেছে। বর্ষা দু-হাত ওর দুই গালের উপর রেখে পিটপিট করে অশ্রু সিক্ত নয়নে অভ্রর দিকে তাকিয়ে রইল।

অভ্র ধীর কন্ঠে বলল, ‘ কোনো ছেলের আশেপাশে ঘেঁষবি না বলে দিলাম। তাহলে ফল ভালো হবে না। ‘

বলে চেয়ার থেকে উঠে সে সিঁটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।

বর্ষা নাক টেনে অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সেও চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে কাজি চলে আসবে তারপর বিয়েও সম্পূর্ণ হবে।

সূর্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে মেঘে ঢেকে আছে পুরো আকাশ। বৃষ্টি আসবে আশঙ্কা করছে সবাই। ঘন্টাখানেক আগে সকল মেহমানদের প্যান্ডেলে বসে খাওয়া দাওয়া সম্পূর্ণ হয়েছে কিছুক্ষণ দাওয়াতি খাওয়া শেষে চলে গেছেন। কাজী আসলেই বিয়ে পরিয়ে বিদায় দেওয়া হবে। অভ্র সর্বদা বর্ষার পেছন পেছন হাঁটছে যাতে করে কেউ ওর সাথে কথা বলতে এগিয়ে না আসে। নিভ অভ্রকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বাহিরে যাওয়ার জন্য তার ইশারা বুঝে অভ্র চলে যায়।

বর্ষাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে ইরাক। বর্ষা তার সাথে কথা বলার কোনো আগ্রহ না দেখালে সে একটা বুদ্ধি বের করে। কিয়ৎক্ষণ পর সেই মেয়েটা এসে বর্ষার ওড়না ধরে টান দিয়ে বলল, ‘ আপু একটা ভাইয়া তোমাকে ওই আম গাছের ওখানে যেতে বলেছে। ‘

বর্ষা ভ্রুযুগল কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে সে গাছের দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। বর্ষার ধারনা তাকে এবারও অভ্র ডেকেছে।

গাছের নিচে আসতেই বিয়ে বাড়ির ঝাড়বাতির আলোয় বর্ষা লক্ষ্য করলো এটা অভ্র নয় কেননা অভ্র সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরেছে আর এ ছেলের পরণে আকাশী রঙের পাঞ্জাবি। ভ্রু কুঞ্চিত করে বর্ষা জিজ্ঞেস করলো, ‘ কে আপনি? ‘

অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলো ইরাক বর্ষার কন্ঠ শুনে পেছনে ঘুরে তাকালো ইরাক কে দেখে বর্ষার চোখ জোড়া চরক গাছ।

নিভ’র সাথে কথা শেষ করে প্যান্ডেলে ফিরে যায় অভ্র সেখানে কোথাও বর্ষাকে দেখতে পায়না। বাচ্চা মেয়েটা অভ্রর সামনে দিয়ে ছুটে যেতে লাগলে অভ্র তার হাত ধরে বর্ষার কথা জিজ্ঞেস করলো। মেয়েটা বলে বর্ষাকে কেউ গাছের নিচে যেতে বলেছে। অভ্র ভাবান্তর হয়ে সেদিকে পা বাড়ায়।

ইরাকের উদ্দেশ্য বর্ষা বলল, ‘ আপনি আমাকে এখানে কেন আসতে বলছেন? ‘

ইরাক বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে বলতে লাগল, ‘ আমি তোমাকে যখন প্রথম দেখেছি তখনই তোমাকে আমার ভালো লেগে গেছে। আমার এখন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই তুমি শুধু আমার হবে বলো বর্ষা____ ’

কিছুটা দূরে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পরে অভ্র ছেলেটার সব কথা শুনতেই তার মাথায় রক্ত উঠে যায়। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে দুই হাত মুঠ করে ওদের দিকে আসতে যাবে তখনই অভ্রকে বিস্মিত করে দিয়ে ইরাক বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে।

বর্ষা কিছুক্ষণের জন্য পাথরের মতো দাঁড়িয়ে পরে পরক্ষণে দুইহাত দিয়ে ইরাক কে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে তার উদ্দেশ্য কিছু বলতে যাবে তখনই ওর নজরে পরলো তাদের থেকে কিছুটা দূরে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছে অভ্র।

বর্ষা অভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে ইরাক বর্ষার হাত আবারও ধরে নেয়। অভ্র কোনো কিছু না বলে পেছন ঘুরে সেখান থেকে চলে যেতে যায়। বর্ষা ইরাকের হাতের মধ্য থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে সজোরে তার গালে এক থাপ্পড় মেরে বসে। কোনো কিছু না বলে অভ্রর পেছন পেছন ছুটতে লাগলো।

অভ্র পার্কিং স্পট থেকে গাড়ি বের করে তীব্র গতিতে গাড়ি চালাতে লাগে। বর্ষা তার পিছু পিছু একটা ট্যাক্সিতে উঠে বসে ও ড্রাইভার কে বলে অভ্রর গাড়িটাকে ফলো করতে। এরইমধ্যে মুসুল দ্বারায় বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বার বার মাথা বের করে বর্ষা অভ্রর গাড়িটা দেখছে। ভয়ে হৃৎস্পন্দন কাঁপছে যেভাবে অভ্র গাড়ি চালাচ্ছে আল্লাহ না করুক কোনো এক্সিডেন্ট না হয়। চিন্তিত কন্ঠে বর্ষা ড্রাইভারের উদ্দেশ্য বলল, “ আঙ্কেল একটু তারাতাড়ি চালান প্লিজ ”

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি [৪৯]
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
_____________
আকাশে বিকট শব্দে বজ্রপাত হচ্ছে সেই সাথে যখনই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তখনই দু’হাত কানে চেপে ধরছে বর্ষা। আকাশের এই বিকট শব্দে বুক ভারী হয়ে উঠছে তার। ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে প্রতিটা গর্জনের মুহূর্তে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছে বাহিরে তুলুম বর্ষণ।

ভারী বর্ষণের কারণে রাস্তা ঘাট ও অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে গাড়ির হেডলাইটের আলোয় সামনের রাস্তা টুকু সামান্য স্বচ্ছ যা দেখা যাচ্ছে।

চোখ জোড়া ছোটছোট করে সামনে অভ্রর গাড়ি দেখার বৃথা চেষ্টা করছে বর্ষা। অন্ধকারে ওতগুলো গাড়ির মাঝে অভ্রর গাড়িটা জেনো হারিয়ে গেছে। ক্ষীণস্বরে তাড়া দিয়ে বর্ষা বলল, ‘ আঙ্কেল একটু তারাতাড়ি চালান না প্লিজ ‘

ভয় ও আতঙ্কে বর্ষার কন্ঠস্বর অসাড় হয়ে আসছে। কথা বলতে চেয়েও বারবার আঁটকে আঁটকে যাচ্ছে যখনই মুখ খুলে কিছু বলতে যাচ্ছে তখনই আমতা করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে। ড্রাইভার হয়তো বর্ষার বর্তমান অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে তিনি নির্মূলস্বরে বললেন, ‘ আপনি ভয় পাবেন না আমি গাড়িটা দেখতে পারছি। আপনি একটু শান্ত হয়ে বসুন। এত উত্তেজিত হবেন না অতিরিক্ত উত্তেজিত শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ‘

বর্ষা ড্রাইভারের উদ্দেশ্য বলল, ‘ আমাকে নিয়ে ভাববেন না আপনি প্লিজ তারাতাড়ি গাড়িটা চালান। ‘

কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ থেকে ড্রাইভার আবারও বলল, ‘ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? ‘

বর্ষা ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে সরুকন্ঠে বলল,’ জি বলুন! ‘

‘ যে গাড়িটাকে আমরা ফলো করছি ওই গাড়ির মধ্যে যে আছে সে আপনার কি হয়? ‘

বর্ষা এক বাক্যে উত্তর দিলো ও বলল, ‘ সে আমার স্বামী! বান্ধুবীর বিয়েতে আমাদের মাঝে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয় আর সে ওখান থেকে রেগে বেরিয়ে আসে আঙ্কেল আমার খুব ভয় করছে আপনি প্লিজ তারাতাড়ি গাড়ি চালাবেন। ‘

‘ আপনি শান্ত হন আমি দ্রুত গাড়ি চালানোর চেষ্টা করছি। ‘ সান্ত্বনা স্বরূপ বললেন ড্রাইভার।

বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় গাড়িগুলো আঁটকে আছে জ্যামে বসে রয়েছে। গাড়ি চলছে তো চলছে না। দশ থেকে বিশ মিনিট ধরে জ্যামে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছে বর্ষা। বারংবার অভ্রর নাম্বারে ডায়াল করছে রিং হচ্ছে কিন্তু কল রিসিভ করছে না। আর কোনো কিছু চিন্তা করতে না পেরে কান্না জুড়ে দেয় বর্ষা।

আরও মিনিট পাঁচেক পর গাড়ি আবারও চলতে শুরু করলো। ড্রাইভার আশেপাশে তাকিয়ে বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ গাড়িটা কোথাও দেখতে পারছি না হয়তো জ্যামে পরার আগে চলে গেছে। ‘

বর্ষা জানালা দিয়ে বাহিরে যতটা সম্ভব তাকালো অভ্রর গাড়ি কোথাও দেখতে না পেয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। গাড়ির সিটের সাথে হেলান দিয়ে স্তব্ধ বসে রয়। পরক্ষণে মোবাইলে অভ্রর লোকেশান চেক করে ড্রাইভারের উদ্দেশ্য একটা এড্রেস দিয়ে বলল ওকে সেখানে নামিয়ে দিতে।

মুসুল দ্বারায় বৃষ্টি পরছে গুড়ুম গুড়ুম শব্দে মেঘেরা গর্জন করছে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালেই বাহিরে সবটা আলোকিত হয়ে উঠছে বিদ্যুৎ চমকানোতে। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বাহিরে তাকিয়ে আছে বর্ষা। গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে। বৃষ্টি হচ্ছে বৈকি রাস্তা গুলোয় কাঁদা পানি জমে গর্তগুলো ভোরে গেছে গাড়ির একটা চাকা সে গর্তে পরে গেলো অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি তুলতে পারলেন না ড্রাইভার। চারদিকে অন্ধকার ও নিস্তব্ধতা বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কোনো মানুষও নেই কাউকে যে সাহায্যের জন্য বুলাবে তারও উপায় নেই। অতি চেষ্টা করেও যখন গাড়ি তুলতে পারলেন না তখন ড্রাইভার চাপা কন্ঠে বর্ষাকে বললেন, ‘ গাড়ি আর সামনে যাবে না সামনের চাকা গর্তে পরে গেছে। এর আগের রাস্তা আপনাকে হেঁটেই যেতে হবে। ‘

জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিল বর্ষা ড্রাইভারের কথাগুলো সে শুনতে পেয়ে ভারী নিঃশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো সাথে সাথে আকাশে আবারও বিদ্যুৎ চমকালো। বর্ষা নিজেকে নিয়ে ভাবছে না এখন, তার চিন্তা তাকে যে করেই হোক অভ্রর কাছে পৌঁছাতে হবে। প্রত্যত্তরে কোনো কিছু না বলে ড্রাইভারকে পর্যাপ্ত ভাড়া দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলো সে। বৃষ্টির কারণে প্রকৃতির ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে উপচে পরছে তার। ঠান্ডায় সে কেঁপে কেঁপে উঠছে বারংবার চোখ জোড়া বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে লাগে। দশ মিনিট হাঁটলেই সে বাড়ি পৌঁছে যাবে। বৃষ্টির মধ্যে কোনো রিক্সা ও পাবে না। রাস্তায় কাঁদা পানি ছিটকে বর্ষার সাদা লেহেঙ্গা রঙিন প্রচ্ছদে পরিনত করছে।

অন্ধকারে তেমন কোনো কিছুই নজরে আসছে না তার তবুও হার না মেনে এগিয়ে চলছে সে।

গাড়ি গ্যারেজে রেখে দরজা খুলে মাত্র বাড়ির ভেতরে ঢুকলো অভ্র। কপালে হাত দিয়ে দরজা বন্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই কলিংবেল বেজে উঠল। একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে এগিয়ে গেলো সে। দরজা খুলেই বর্ষাকে দেখে ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে দরজার সামনে থেকে চলে যায়। বর্ষা বাড়ির ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে অভ্রর পেছনে ছুটতে লাগলো মাঝেমধ্যে অস্ফুটস্বরে বার কয়েক ‘অভ্র’ বলে ডেকেছে কিন্তু অভ্র শুনেও না শোনার মতো করে চলে যাচ্ছে।

হঠাৎ বর্ষা অস্ফুটস্বরে ‘আহহ’ বলে একটু জোরেই চিৎকার দেয়। পেছনে ঘুরে অভ্র তাকিয়ে দেখে বর্ষা সিঁড়ির উপটে উপচে পরে আছে। সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নেমে সে বর্ষার কাছে আসে। কোনো কিছু না বলেই দু-হাতে তাকে কোলে তুলে নেয়।

দু’জনের একজনও কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। অভ্র বর্ষাকে ওর রুমে নিয়ে যায়। বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে আলমারি থেকে পরার জন্য পোশাক বের করে বিছানার উপর রেখে রাগী গলায় বলল, ‘ ভেজা জামা ছেড়ে এগুলো পরে নে ‘

বলে সে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগে। পেছন থেকে দ্রুত পায়ে বর্ষা অভ্রর দিকে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে অভ্রর হাত ধরে ক্ষীণস্বরে বলল, ‘ তুমি যা দেখেছো ওটা সত্যি নয়। চোখের দেখা সব সময় সত্যি হয় না অভ্র। ‘

হয়তো বর্ষা আরও কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু সে সুযোগ তাকে না দিয়ে অভ্র তার হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগী গলায় বলল, ‘ ইরাকের কোন অংশ আমার চেয়ে ভালো? ইরাক তোমায় বিনোদিত করার জন্য নোংরা কথা বলে? সে বলেছিল তুমি দেখতে এবং শক্তিশালী ক্ষমতার সাথে সুন্দর। আমি এমন নোংরা কথা বলিনি। আমি পারিনি! কিন্তু তুমি কি সত্যিই দেখতে পারো না আমি তোমার সাথে কেমন আচরণ করি? ‘

বর্ষা অভ্রর চোখে চোখ রেখে মিনমিন করে বলল, ‘ তুমি সত্যিই ঈর্ষান্বিত? ‘

অভ্র বর্ষার হাত দেয়ালের সাথে আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘ আমি বুজতে পারিনি যে এত দেরি হয়ে গেছে বা তুমি আমার সাথে এমন আচরণ করবে বলে আশা করিনি। ‘

বর্ষা অভ্রর চোখে চোখ রেখে বলে উঠল, ‘ তাই তুমি ঈর্ষান্বিত হয়ে সেখান থেকে বৃষ্টির মধ্যে চলে এলে? ‘

অভ্র বর্ষার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজেও পিঠ ঠেকিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিরস্ত কন্ঠে বলল, ‘ আমি কি করব তা নিয়ে ভাবছিলাম। কিন্তু একটি উপায় সঙ্গে আসতে পারেনি। ইরাক কে হ’ত্যা করা একটি ভাল ধারণা হতে পারে। যাইহোক, সম্ভবত, তুমি এ সমস্ত জেনে দু:খিত হবে। ‘

বর্ষা অভ্রর কথাটাকে অতোটা গুরুত্ব না দিয়ে হেয়ালি করে বলল, ‘ আল্লাহকে ধন্যবাদ! তুমি এখনও আমার অনুভূতি সম্পর্কে যত্নশীল এবং তাকে হত্যা করোনি। ‘

অভ্র মৃদুস্বরে বলল, ‘ তুমি আমাকে দুঃখ দিলেও, আমি একজন মানুষ হয়ে কিভাবে তোমাকে দুঃখিত করবো? ‘

বর্ষা পা দিয়ে মেঝেতে আকু ঝাকু করতে করতে বলল, ‘ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি বলছো তুমি নিফটি শব্দ বলতে পারবে না। ‘

অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত কন্ঠে বলল, ‘ এইটা নিখুঁত শব্দ ছিল? ‘

বর্ষা অভ্রর দিকে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো অভ্র দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা ভারী দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভ্রর কাছাকাছি দাঁড়ালো তারপর ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ তোমার ঈর্ষার একটি সীমা থাকা উচিত। এটা নিয়ন্ত্রণে আনার সময় এসেছে। ‘

অভ্র বর্ষার কথাটি শোনা মাত্রই ভারর নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো। বর্ষা মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে অভ্রর কানের কাছে এসে ফিসফিসে আওয়াজে বলল, ‘ আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি! আমি কিভাবে অন্য কাউকে পছন্দ করতে পারি? ‘

বর্ষার কথাটি অভ্রর কান অব্ধি যেতেই অভ্র চট করে চোখ খুলে তাকালো। বর্ষা আর কোনো কিছু না বলেই অভ্রর গালে এক চুম্বন একে দিলো পরক্ষণে লজ্জা পেয়ে অভ্রর সামনে থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়।

অভ্র স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইল একহাত তুলে গালে আলতো ভাবে রাখে ঠোঁটের কোণে তার এক চিলতে প্রস্ফুটিত হাসি ফুটে উঠে। এক দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে সে।

বাহিরে এখনো মুসুল দ্বারায় বৃষ্টি হচ্ছে। যার জন্য বাড়ির কেউই বাড়িতে ফিরে আসতে পারছে না তারা আহিতাদের বাড়িতে আঁটকে আছে।

এমন এক দারুণ রোমাঞ্চকর মৌসুমে অভ্র ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে হেসে বর্ষার দিকে এগিয়ে যায়। বাহিরের টুপটুপ বৃষ্টি পরার আওয়াজ জানালা দিয়ে কান অব্ধি আসছে বর্ষার। জানালার এক থাই খোলা থাকায় বৃষ্টির ছিটেফোঁটা জানালার গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে রুমে আসছে। সাথে বাহিরের ঠান্ডা বাতাস গা শীতল করে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। অভ্র বর্ষাকে বিস্মিত করে দিয়ে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বর্ষার কানে কানে বলল, ‘ মাথা ঘুরছে ‘

বর্ষা অভ্রর হাত ধরে বিছানার উপর নিয়ে বসালো তারপর মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘ তোমার কি জ্বর আসবে? ‘

অভ্র মাথা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ হয়তো! এখন কাঁথা টা দাও। ‘

বর্ষা অভ্রর হাতে কাঁথার এক কোণা ধরিয়ে দিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল, ‘ চলো তোমাকে তোমার রুমে দিয়ে আসি? ‘

অভ্র কোনো প্রত্যত্তর না করেই বর্ষার এক হাত ধরে টান মারলো। বর্ষা অপ্রস্তুত হয়ে অভ্রর উপরে পরে যায়। অভ্র সঙ্গে সঙ্গে কাঁথা মুড়ো দিয়ে দু’জনে কাঁথার নিচে চলে গেলো। বর্ষা একহাত দিয়ে কাঁথা উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এই কি করছো? তোমার না মাথা ব্যাথা? ‘

অভ্র বর্ষার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল, ‘ তোমার আর ইরাকের মধ্যে যদি কিছু না-ই থাকে তাহলে সে তখন তোমাকে জড়িয়ে ধরলো কেন? ‘

বর্ষা চোখ জোড়া বড়বড় করে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তুমি এখনো সেখানেই পরে আছো? সত্যি বলছি তার সাথে আমার কিচ্ছু নেই! ‘

অভ্র বর্ষার কপালে এক আঙুল রেখে নেশালো কন্ঠে বলল, ‘ নাহ! আমি এখন অন্য কোথাও থাকতে চাই! আর রইলো আমার মাথা ব্যাথা আপাতত ভুলে যাও সে কথা। ‘

বলেই অভ্র আবারও কাঁথা টেনে মুড়ো টেনে দেয়। বর্ষার আঙুলের প্রতিটা ভাজে ভাজে অভ্র তার আঙুল রেখে শক্ত করে চেপে ধরে বর্ষার অষ্টজোড়ায় এক গভীর চুম্বন একে দিয়ে দু’জনের অষ্টদ্বয় এক করে নেয়।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here