অবন্তর_আসক্তি,৫০,৫১,৫২

0
821

#অবন্তর_আসক্তি,৫০,৫১,৫২
#Sharmin_Akter_Borsha [লেখিকা]
৫০

গুড়ুম গুড়ুম মেঘেরা গর্জন করছে মাঝেমধ্যে পৃথিবী আলোকিত করে দিয়ে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি ও তেমন পরছে না। ঝিরিঝিরি জলের ফোঁটা বারান্দার গ্রিল দিয়ে পায়ের উপর এসে উপচে পরছে বর্ষা অভ্র’র। দশ মিনিট হবে বোধহয় দু’জনে বারান্দায় এসে পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে। বর্ষা অভ্রর একহাত জড়িয়ে ধরে কাঁধের উপর মাথা রাখে। গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে বাহিরে একমনে তাকিয়ে থেকে বর্ষা বলে উঠল, ‘ অভ্র একটা কথা বলি? ‘

অভ্র বর্ষার একহাত তার দুইহাতের মুঠির মধ্যে মুষ্টিবন্ধ করে নিয়ে বলল, ‘ হুম বলো ‘

বর্ষা অভ্রর কাঁধের উপর থেকে মাথা তুলে অভ্রর চোখে চোখ রেখে বলল, ‘ আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো? ‘

অভ্র বর্ষার গালে হাত ছুঁইয়ে স্লাইড করতে করতে বলল, ‘ ভালোলাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য কি জানো? ‘

বর্ষা অস্ফুটস্বরে বলল, ‘ জানি! ‘

অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কি বলো তো? ‘

‘ বর্ষা বলল, ভালোলাগা ক্ষীণস্থায়ী ও ভালোবাসা চিরস্থায়ী! ‘

অভ্র বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল যখন সে কথাগুলো বলছিলো পরক্ষণে বর্ষার থুতনিতে আঙুলের তর্জনী রেখে বলল, ‘ আরও একটি পার্থক্য আছে!’

বর্ষা ইচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জানতে চেয়ে বলল, ‘ সেটা কি? ‘

‘ অভ্র একহাতে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ভালোলাগা হচ্ছে প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে যাওয়ার পর মাঝে মধ্যে মনে পরা এটাই ভালোলাগা।
আর ভালোবাসা হচ্ছে প্রিয় মানুষটিকে ছাড়ার কথা চিন্তা করার পূর্বেই চোখে পানি চলে আসা। আমরা যে মানুষটি কে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি আমরা তাকে কোনো কিছুর মূল্যে হারাতে চাই না। ভালোবাসা খুবই অদ্ভুত যা ভাষায় বিশ্লেষণ করা খুবই কঠিন। অনূভুতি শুধু তার জন্যই আসে যাকে আমরা ভালোবাসি। তুমি আমার ভালোলাগা আমার ভালোবাসা আমার সূর্যের আলো ও আঁধার রাতের জ্যোৎস্না। আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্যে নহে। আমি আছি আর থাকবো সর্বদা তোমার ছাঁয়া হয়ে। ভালোবাসি শব্দটা বলা সহজ কিন্তু ভালোবেসে সারাজীবন পাশে থাকাটাই কঠিন। আমি এইভাবে তোমার হাতে হাত রেখে সারাজীবন কাটাতে চাই। ‘

বর্ষা চোখজোড়া ছোটছোট করে ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ তুমি হাত ধরে বসে থাকলে আমি ভাত খাবো কেমনে? ‘

বর্ষার কথার পিঠে নির্বাক ও নির্বাক্য হয়ে স্তব্ধ তাকিয়ে রইল অভ্র কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বর্ষার দুইগাল টেনে খানিক হেসে বলল, ‘ প্রয়োজন হলে আমি খাইয়ে দেবো। ‘

এক পলক সামনে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো তারপর আবারও দেখার জন্য সেদিকে তাকালো তখন বাড়ির গেটের বাহিরে কিছুটা দূরে দুটো গাড়ির হেডলাইটের আলো দেখতে পাচ্ছে অভ্র তার আর বুঝতে বাকি রইলো না বাড়ির মানুষ চলে আসছে।

অভ্র বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ আমাকে এখন যেতে হবে সবাই চলে আসছে তুমি ফ্রেশ হয়ে রুমটা গুছিয়ে নাও ততক্ষণে। কলিংবেল বাজলে আমি নাহয় দরজা খুলে দেবো।
এখন আমি আসছি। ‘

বলে অভ্র বর্ষার কপালে আলতো চুমু একে দিয়ে চলে গেলো বর্ষার রুম থেকে।
.
.
.
টিভি অন করে হল রুমে বসে আছে অভ্র যাতে সকলে ভাবে সে টিভি দেখছে কলিংবেল বাজতেই ছুট্টে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই সকলের শত-শত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল। বিয়ে ছেড়ে দু’জনে চলে আসছে কেন? ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এক প্রশ্নই সকলে করছে। অভ্র ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নেমে আসছে তিন্নি। সকলে তিন্নির দিকে তাকিয়ে দেখলো তিন্নি পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। সকলে তারাহুরো করে এসে তিন্নিকে ধরলো। পরে হাত ধরে নিয়ে সোফার উপর বসায়। তিন্নি সকলকে ‘শান্ত হও’ বলল, তারপর ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলতে লাগল, ‘ আমি সিঁড়ি দিয়ে তারাহুরো করে নামতে গিয়ে পরে গিয়েছিলাম। ‘

অভ্র চোখ জোড়া বড়সড় করে তিন্নির দিকে তাকালো সে জেনো আকাশ থেকে মাটিতে পরেছে এমন একটা অবস্থা হয়েছে ওর তিন্নি সিঁড়ি থেকে পরে গেছে আর ও কিছুই জানে না তাই অস্ফুটস্বরে চেঁচিয়ে বলল, ‘ তুই সিঁড়ি থেকে পরে গেছিলি? ‘

তিন্নি অভ্রকে ধমক দিয়ে বলল, ‘ তুই চুপ করবি? আমাকে বলতে দে। ‘

ততক্ষণে সবার মাঝে বর্ষা এসে হাজির হয়। বর্ষা দূর থেকে কিছুটা শুনে তিন্নিকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার পূর্বে তিন্নি অভ্র ও বর্ষার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো চোখের ইশারায় দুজনকে চুপ থাকতে বলল, তিন্নির দিকে স্থির বাড়ির সকলের দৃষ্টি।

তিন্নি আবারও বলতে শুরু করল, ‘ সিঁড়ি থেকে পড়ার পর অনেক কষ্ট করে বর্ষাকে কল দিয়ে সাহায্যের জন্য আসতে বলি। তারপরই কাউকে কিছু না বলে বর্ষা অভ্র দু’জনে বাড়ি চলে আসে। আমার অবস্থা তখন তেমন সুবিধার ছিলো না তাই ওরা কেউ আমাকে একা রেখে যেতে পারেনি। আমি যখন জোর করে পাঠাতে চেয়েছি তখনই বৃষ্টি চলে আসে। ‘

পেছন থেকে বৃষ্টি ফোঁস করে বলে উঠল, ‘ আমি কখন চলে আসছি? আমি তো ওখানে ছিলাম সবার সাথে এইমাত্র আসলাম। ‘

তিন্নি রাগী চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তিরতির করে বলল, ‘ তোর কথা বলছি আমি নাকি প্রকৃতির বৃষ্টির কথা বলছি? ‘

বৃষ্টি মুখের সামনে হাত নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘ আমি ভাবছিলাম, যাগ্গে দেখাও তো কোথাও ব্যাথা পাইছো? ‘

তিন্নি রাগে গজগজ করতে করতে বলল, ‘ এমনি এমনি রুমে যাবি নাকি থাপ্পড় খেয়ে যাবি? ‘

অভ্র আঁড়চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচু করে কিছু একটা ইশারা করলো হয়তো সে বলতে চাচ্ছে, কি হচ্ছে এসব?

বর্ষা অভ্রর দিকে তাকিয়ে দুইবার চোখের পলক ফেললো পরক্ষণে তিন্নিকে সাপোর্ট দিয়ে বলল, ‘ এত ব্যাথা নিয়ে কেনো তুমি নিচে নামতে গেলে আজব? চলো রুমে চলো!’

সকলের সামনে থেকে কোনোমতে বর্ষা অভ্র তিন্নিকে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়। রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে হাফ ছেড়ে বর্ষা বলল, ‘ থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ তাপ্পি আজ তোমার জন্য বেঁচে গেলাম। ‘

বর্ষার গালে হাত ছুঁইয়ে তিন্নি মৃদুস্বরে বলল, ‘ আমি তোদের দুজনকেই আসতে দেখেছি আর বুঝতে পারি দু’জনে রাগ করেছিস। বাই দ্য ওয়ে তুই যে বৃষ্টি তে ভিজে আসছিস তোর যদি কোনো সমস্যা হয়? ‘

বর্ষা মলিন কন্ঠে বলল, ‘ তখন অতকিছু মাথায় ছিলো বুঝি? যা দূর্যোগে ফেলে দিয়েছিলো আমায়। ‘

মাথানিচু করে কিছুক্ষণ তিন্নির রুমে দাঁড়িয়ে রইল অভ্র তারপর এগিয়ে গিয়ে বর্ষার হাত ধরে বললো, ‘ সরি আর হবে না। ‘
.
.
রাতের রান্না করতে বড়রা কিচেনে চলে গেছে বিয়ে বাড়িতে ভারী-ভারী খাবার খাওয়ার পর এখন রাতের জন্য হাল্কা কিছু খাবার রান্না করবেন এই তাদের প্রত্যাশা।

রাত দশটার মধ্যে সকলে খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে রুমে চলে যায়। রুমে এসে লাইট অফ করে বিছানার সাথে গা এলিয়ে দিতেই আচমকা বর্ষার ফোন বেজে উঠে, ফোন হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে তাকাতে দেখলো অভ্র ভাইয়া নামটি জ্বলজ্বল করছে দূর আকাশের ওই শুক তাঁরার মতো। কল রিসিভ করে দু’জনে দু’জনার মনের সকল লুকায়িত অনুভূতি দু’জনের সাথে বলে মন হাল্কা করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। অভ্রর কথার পিঠে মাঝেমধ্যে লজ্জায় বালিশে মুখ লুকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠছে বর্ষা। সে হাসির শব্দ ফোনের অপর প্রান্ত থেকে প্রাণ ভরে শুনছে অভ্র।

কিয়ৎক্ষণ নেশালো কন্ঠে অভ্র বলে উঠল, ‘ এভাবে হাসিস না রে পাগলি! নিজেকে সামলাতে পারবো না, পরে দেখবি এখুনি চলে আসবো। ‘

বর্ষা হাসি থামিয়ে ফট করে বলে উঠল, ‘ এই নাহহ! ‘

দুই সপ্তাহ পর –

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৫১
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখিকা]
_____________
হাত দিয়ে মুখের সামনে হাই তুলতে তুলতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো বর্ষা। বাড়ির মহিলাগণ সকলে একসাথে বসে কোনো এক গভীর বিষয়ে আলোচনা করছেন। তাদের মুখের অঙ্গীকার দেখে আন্দাজ করছে সে। বর্ষাকে দেখে আঁড়চোখে তার দিকে তাকায় সকলে। বর্ষা চোখ জোড়া গোলগোল করে তাদের সকলের দিকে তাকিয়ে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল, ‘ কি হয়েছে হুহহ? সকলে আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছো কেন? মনে হচ্ছে জেনো ভূত দেখেছো? ‘

বর্ষার আম্মু শানিতকন্ঠে বলল, ‘ কয়টা বাজে দেখছেন নবাব নন্দিনী তিনটা বাজে আর আপনি এখন ঘুম থেকে উঠছেন? এতকষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতে গেলেন কেন? আওয়াজ দিতেন সকালের ও দুপুরের খাবার দু’টো একসাথে রুমে দিয়ে আসতাম। ‘

বর্ষা কোমড়ে হাত দিয়ে ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে তার মা’র দিকে তাকিয়ে রইলো। পাশ থেকে বর্ষার বড় আম্মো বলল, ‘ এত দেরি করে ঘুম থেকে উঠছিস কেন মা? ‘

বর্ষা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে মনে মনে বলল, ‘ বড় আম্মু তুমি যদি জানতে? এখন তোমাকে কিভাবে বলি আমি পুরোরাত তোমার ছেলের সাথে ফোনে কথা বলে ভোরে ঘুমিয়েছি। ‘

শব্দ করে হেসে জবাব দিলো বর্ষা সে বলল, ‘ আর বলো না বড় আম্মো! রাত জেগে পড়ছি তো তাই দেরিতে ঘুমাইছি। তা তোমরা কি নিয়া কথাবার্তা বলতাছো? আমাকে দেখে চুপ হয়ে গেলে কেনো? ‘

সোফার উপর বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো সে। অভ্রর মা বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তোর অভ্র ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে কথা বলছি। ‘

মিসেস নার্গিসের কথা কান দিয়ে জেতেই ধোঁয়া বের হওয়ার অতিক্রম। চোখ জোড়া বড়সড় করে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে চেঁচিয়ে বলল, ‘ কিহহহ? ‘

পাশ থেকে রিয়ার আম্মু বললেন, ‘ কি নয় বলো জি। ছেলের বয়স তো আর কম হয়নি ২৮ পার হইছে বিয়ে তো দিতে হবে। তাছাড়া বেশির ভাগ সময় বাহিরে বাহিরে থাকে বিয়ে দিলে বাড়িতেই থাকবে তখন আর বউকে রেখে কোথাও যাবে না৷ ‘

বর্ষা ফোঁস ফোঁস করে বলে উঠল, ‘ অভ্র’র বিয়ের কথা তুলছো কেন তোমরা হাহহহ? ‘

বর্ষার কথা শেষ হতেই সকলে ভ্রু উঁচু করে তাকালো।

সকলের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বর্ষা আবারও বললো, ‘ না মানে ওই অভ্র ভাইয়ার হবে! ভাইয়াটা কথাটা আসলে মুখ দিয়ে স্লিপ করে গেছে৷ সেসব কথা এখন বাদ। তেমরা এটা বলো সকলে অভ্র ভাইয়ার বিয়ের পেছনে কেন লাগছো? অভ্র ভাইয়া তো কাব্য ভাইয়ার ছয় মাসের ছোট। সে হিসাবে বিয়ে আগে কাব্য ভাইয়ার হবে তারপর অভ্র ভাইয়ার। এখন কোনো বিয়ে টিয়ে হবে না। আমি মানি না এসব। ‘

বৃষ্টির আম্মু ধাতস্থ কন্ঠে বলল, ‘ তুই যেভাবে রিয়েক্ট করছিস মনে হচ্ছে বিয়েটা আজকেই হয়ে যাবে। ‘

অভ্রর মা আবারও বললেন, ‘ কাব্য তো গাজীপুর নেই জানিসই তো তোর বড় আব্বুর সাথে অফিসের কোনো কাজে ঢাকা গেছে। ‘

‘ তো ঢাকা কি সারাজীবন থাকবে নাকি? আসলে বিয়ে দিয়ে দিবা। ‘ রাগী গলায় বলে উঠল বর্ষা।

অভ্রর মা একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘ সে যাই বলিস না কেনো? অভ্রর জন্য একটা লক্ষী মেয়ে খুঁজে আমি বউ করে আনবো। ‘

বর্ষার একরাশ অভিমান হলো সে কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই ফট করে উঠে দাঁড়ালো আর বলে উঠল, ‘ মেয়ে খুঁজতে হবে কেন? আমাকে কি তোমাদের চোখে পরে না নাকি? আমি কি লক্ষী নই? ‘

পাহাড় সমান অবাক হয়ে মুখ হা করে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে সকলে। রাগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলে বর্ষা উপলব্ধি করতে পারে ও কি বলেছে? সকলে একসাথে অস্ফুটস্বরে বলে উঠে, ‘ কিহহ তুই? ‘

বর্ষা সকলের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো সে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে সকলের সামনে থেকে দৌঁড়ে পালালো। এক দৌঁড়ে বাড়ির বাহিরে চলে যায়। এদিকে বর্ষার কথা অতি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সবাই।

মিনিট পাঁচেক পর গাড়ির চাবির রিং শাহাদাত আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে সিঁড়ি দিয়ে নামছে অভ্র। বাড়ির সকলকে হতবিহ্বল হয়ে বসে থাকতে দেখে অভ্র তাদের উদ্দেশ্য বলল, ‘ কি হইছে তোমাদের সবার মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে রাখছো কেন? ‘

কেউ কিছুই বললো না একে একে সকলে উঠে চলে গেলো। অভ্র তাদের যাওয়ার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে ‘ না জানি বাবা একসাথে সবার কি হইছে’ বলে সে নিজেও বেরিয়ে গেলো। বাহিরে এসে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগে। গাড়ি চলছে লাগলো তার আপন গন্তব্যে।

চার’ঘন্টা পর-

হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠে, আঁড়চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তিন্নি কল দিয়েছে। সচরাচর মোস্ট ইমপোর্টেন্ট না হলে তিন্নি কল দেয় না। তাই কল রিসিভ করলো। কল রিসিভ করতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তিন্নি বলে উঠল, ‘ ভাই বর্ষাকে চার ঘন্টা ধরে খুঁজে পাচ্ছি না। ও তখন বাড়ি থেকে বের হইছে এখনও ফিরে আসেনি। আমরা কেউ জানি না ও কোথায় গেছে? ‘

তিন্নির কথা শোনা মাত্রই অভ্র গাড়ি ব্রেক কষে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, ‘ কিহ? ‘

হঠাৎ ব্রেক করায় পেছনে ধুরাম করে একটা আওয়াজ হলো। অভ্র শব্দ টা শুনে কান থেকে ফোনটা সরালো পরক্ষণে আবারও কানে ফোন লাগিয়ে তিন্নির উদ্দেশ্য বলল, ‘ তুই এখন ফোনটা রাখ আমি তোকে কিছুক্ষণ পর কল বেক করছি। ‘

ফোনটা পাশে রেখে সিট থেকে কিছুটা উঠে পেছনের সিটে দেখার চেষ্টা করলো। একটা মেয়ের লম্বা লম্বা চুল দেখতে পেলো। ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো তারপর দরজা খুলে বের হলো। পেছনের দরজা খুলতেই মেয়েটাকে দেখে চমকে গেলো। একহাত দিয়ে অন্য হাতের কব্জি ঢলছে৷ অভ্রর দিকে একনজর তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ এভাবে কেউ গাড়ি ব্রেক করে আজব? ‘

অভ্র অস্পষ্ট স্বরে বলে, ‘ তুমি এখানে কি করে? ‘

কোনো রকম প্রত্যত্তর না করে অভ্রকে ঢেলে গাড়ি থেকে নেমে আশে পাশে চোখ বুলাতে লাগে৷ সম্পূর্ণ একটা অচেনা জায়গা চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ মানুষ নেই একদম নির্জন একটা জায়গা।

চারপাশে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে হঠাৎ পেছনে ঘুরে অভ্রর উদ্দেশ্য বলল, ‘ আমার একটা ছবি তুলে দাও। ‘

অভ্র কিয়ৎক্ষণ নিরব থেকে ভ্রুযুগল কুঁচকে বলল, ‘ আপনি আমার গাড়িতে কি করছিলেন একটু আমায় পরিস্কার করে বলবেন ম্যাডাম? ‘

ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে অভ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল বর্ষা। আকাশে নীল নীল মেঘ গুলো উড়ে যাচ্ছে বর্ষা সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘ এই জায়গা টা কত সুন্দর কোন জায়গা এটা? ‘

অভ্র গাড়ির দরজার সাথে হেলান দিয়ে বলল, ‘ মুকাসবিল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূর। ‘

বর্ষা ফট করে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ কিহহ? ‘

অভ্র বর্ষার দিকে এগিয়ে আসলো বর্ষার একহাত ধরে বলে উঠল, ‘ আমি এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি। বল এখানে কি করছিস? ‘

বর্ষা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। তারপর কিছুক্ষণ আগের ঘটনা অভ্রকে জানায়। অভ্র পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে রাস্তার পাশের সবুজ সবুজ ঘাস গুলোর উপর বসে পরলো। দুই দাঁতের মধ্যে এক আঙুল রেখে বলল, ‘ এইজন্যই আমি বাড়ি থেকে বের হবার সময় আমার সাথে সকলে উদ্ভুত আচরণ করেছিলো। ‘

কেমন আচরণ করেছিলো জানার জন্য বর্ষা অভ্রর পাশে বসে জিজ্ঞেস করে, ‘ তোমার সাথে কেমন করেছে? ‘

অভ্র ওর এক হাত বর্ষার গালের উপরে রাখলো। অন্য হাত বর্ষার কোমড়ে রেখে এক টানে তার কোলের উপরে বসালো। বর্ষা কিছুটা কেঁপে উঠলো। অভ্রর দুইহাত শক্ত করে ধরে বলল, ‘ কি করছো ছাড়ো এটা রাস্তা। ‘

‘ অভ্র ন্যাকা স্বরে বলল, তাতে কি হইছে? আমি আমার বউকে কোলে নিছি! তাতে কোন বেডার কি? ‘

বর্ষা আর কোনো কিছুই বললো। অভ্র বর্ষার ঘাড়ের উপর থুতনিতে রেখে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষা অভ্র দু’জনে পশ্চিমের সূর্যাস্ত দেখছে। অস্ত যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির আরও এক সৌন্দর্য উপভোগ করছে। কিছুক্ষণ পর বর্ষা অভ্রর হাত ছাড়িয়ে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর বলতে লাগল, ‘ আমি বাড়ি যাবো এখনই তারাতাড়ি চলো।

অভ্র বর্ষার সামনে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ চার ঘন্টার রাস্তা এখনই বললে কি এখনই যাওয়া যাবে নাকি? ‘

বর্ষা তেজিস্বরে বলল, ‘ জানি না! আমার এখনই যেতে হবে। ‘

বলছে আর কৈ মাছের মতো লাফাচ্ছে। অভ্র ভ্রু কুঁচকে বর্ষার মতিগতি লক্ষ্য করে বলল, ‘ বাড়ি যেতে চাচ্ছো বুঝলাম কিন্তু এমন ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো লাফ পারছো কেন? ‘

বর্ষা রাগী গলায় বলল, ‘ বলতে পারবো না শুধু আমাকে বাড়ি নিয়ে যাও। ‘

অভ্র বর্ষার দুই কাঁধের উপর হাত রেখে বলল, ‘ কি হইছে আমাকে বলো৷ ‘

বর্ষা ওর পা দু’টো কিছু টা উঁচু করলো। আর অভ্রকে বলল, ‘ একটু নিচু হও! ‘

অভ্র বর্ষার দিকে একটু ঝুঁকে দাঁড়ালো বর্ষা অভ্রর কানে কানে বলল। অভ্র ডেবডেব করে অন্য দিকে মুখ ঘুরে তাকালো। বর্ষা মিনতি স্বরে বলল, ‘ বাড়ি যাবো। ‘

অভ্র আশেপাশে একনজর চোখ বুলালো পরক্ষণে আঙুলের ইশারায় জঙ্গলের কিছুটা ভেতরে একটা ঝোপঝাড় দেখিয়ে বলল, ‘ ওই ঝোপোর আড়ালে চলে যা। ‘

বর্ষা একনজর পেছনে তাকিয়ে ফের অভ্রর দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল, ‘ কিছুতেই না। ‘

‘ এখানে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই, তোমার কোনো সমস্যা হবে না তুমি যেতে পারো। বাড়ি যেতে চার ঘন্টা সময় লাগবে ততক্ষণ তুমি সামলাতে পারবে না। এই ঘন জঙ্গলে দাঁড়িয়ে এটাই বেস্ট অপশন। ‘

বাধ্য হয়ে বর্ষাকে যেতেই হলো ঝোপের আড়ালে। অভ্র বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল আড়ালে যেতেই অভ্র অন্য দিকে ঘুরে তাকালো। হঠাৎ শুনতে পেলো বর্ষার আর্তচিৎকার। দৌঁড়ে সেদিকে যেতে লাগে সে, ঝোপের আড়ালে এসে কোথাও বর্ষাকে দেখতে পাচ্ছে না। আশেপাশে তাকাচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে, ‘ অভ্র বলে চিৎকার দিয়ে কোথায় গেলে? ‘

তখনই চোখ পরলো মাটির উপরে বর্ষার হাতের ব্রেসলেট মাটিতে পরে আছে। সেখান থেকে ব্রেসলেট তুলে ঘাসের উপর ভালো করে লক্ষ্য করে দৌঁড় দিলো। কিছুদূর যেতেই দেখলো কয়েকটা ছেলে প্রায় ছয় থেকে সাতটা ছেলে বর্ষার হাত ধরে টেনে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অভ্র দ্রুত দৌঁড়ে তাদের কাছে চলে যায় এবং শানিতকন্ঠে বর্ষাকে ছেড়ে দিতে বলে কিন্তু তারাও অভ্রকে বলে তাদের সামনে থেকে চলে যেতে আর নয়তো শুধু শুধু একটা মেয়ের জন্য জীবন হারাতে হবে।

অভ্র কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে আসলো ওদের মধ্যে থেকে দু’জন এগিয়ে গেলো তিনজনের মধ্যে তুমুল লড়াই হচ্ছে। দু’জন একজনের সাথে পেরে উঠছে না দেখে আরও দু’জন এগিয়ে গেলো। এদিকে অভ্র তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে লড়াই করার লাইসেন্স পেয়ে গেছে। একে একে মেরে সকলকে আহত করে দিয়েছে। চারজন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পরে আছে দেখে বাকি তিনজন এবার একসাথে এগিয়ে গেলো। তাদেরকেও মেরে রক্তাক্ত করে মাটিতে ফেলে দিলো অভ্র। আধমরা হয়ে মাটিতে পরে আছে তারা। অভ্র বর্ষার কাছে এগিয়ে গেলো দুইগালে হাত রেখে শুধালো, ‘ তুমি ঠিক আছো তো? ‘

বর্ষা স্তব্ধ স্থির অভ্রর দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র বর্ষাকে নিয়ে গাড়ির কাছে যাওয়ার জন্য হাঁটা দিলো৷

গাড়ির ভেতর থেকে পানির একটা বোতল বর্ষার দিকে বাড়িয়ে দেয়। কাঁপা কাঁপা হাতে বোতলটা নেয় বর্ষা। ঢোকে ঢোকে কিছু পরিমাণ পানি পান করে। অভ্র বর্ষাকে শান্ত করতে তাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো বর্ষা। অভ্র’র পৌঁছাতে আরও দেরি হলে কি হতো? মনে মনে ভাবছে অভ্র।

বর্ষাকে শান্ত করতে অভ্র বলল, ‘ আমি আছি তো! আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না। ‘

বর্ষা উপর নিচ মাথা নাড়ালো কান্না কিছুটা কমলে বর্ষাকে রাগান্বিত করে তুলতে অভ্র বলল, ‘ ওই ঝোপের আড়ালে যে কাজের জন্য গিয়েছিলা সেটা কি হইছে? ‘

বর্ষা চোখমুখ খিঁচে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকিয়ে এক ধাক্কা দেয় তার থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, ‘ চোখের সামনে ছয় সাতটা লোক দাঁড়িয়ে থাকলে আর অন্য কিছু মনে থাকে? ভয়ে হাত পা জমে গিয়েছিল! ‘

অভ্র বর্ষার কথার পিঠে ফিক করে হেসে ফেলে হাসতে হাসতে গাড়ির দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়৷ রাগ হয়ে বর্ষা অভ্রর সামনে থেকে চলে যেতে নেয়। অভ্র দৌঁড়ে গিয়ে বর্ষার হাত ধরে তাকে পাঁজাকোলে তুলে নেয় হাসি থামিয়ে বর্ষার কপালে আলতো এক চুমু একে দেয়। তারপর বর্ষাকে গাড়িতে উঠিয়ে বসায় অন্য পাশে অভ্র নিজে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

চার ঘন্টা পর বাড়ি এসে পৌঁছালো তারা। বাড়ির ভেতরে এসে দূর থেকে সকলের কথাবার্তা পুরোটা না শুনেই কিছুটা শুনে লাফিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বর্ষা ব’লে উঠে, ‘ আমি রাজি! ‘

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৫২
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখিকা]
______________
কালো মেঘে ঢেকে গেছে নীলাভ আকাশ ৷ বাতাসের সাথে উড়ে যাওয়া মেঘের ফাঁক গলে চাঁদের ঝলকানিতে অনবদ্য সুন্দর কালো মেঘের রাশি গুলোকে মেঘকন্যা নামে আখ্যায়িত করা’ই যায় ৷ চাঁদ ঢেকে যেতেই সরু বিদ্যুৎ-এর ঝলকানি চারদিকে শুভ্র আলো ছড়িয়ে সেকেন্ডের মাঝেই নিরুদ্দেশ হয়ে আবার তীব্র আওয়াজে গম গম করে উঠছে ৷ ঠান্ডা বাতাসে শরীরে কাঁপুনি ধরছে, গাড়ির ছাদে বৃষ্টির ফোটা টুপটুপ করে পরছে। বর্ষা আহ্লাদী হয়ে গাড়ির কাচ নামিয়ে হাত বাহিরে বের করে নাড়াচাড়া করছে আর ফিক ফিক করে হাসছে। অভ্র বর্ষার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে একগাল হেসে বলে উঠল , ‘ পাগলী ‘

দুই ঘন্টা ধরে গাড়ি চলছে রাস্তা সে তো ফুরাবার নয়। এদিকে সচ্ছ গাছপালাকে তার ফোঁটায় ফোঁটায় ফুটিয়ে তুলতে বৃষ্টির আবির্ভাব ঘটেছে। মাথার উপর বৃষ্টি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। নির্জন রাস্তায় দু’জন একা গাড়ি দিয়ে যাচ্ছে। এ রাস্তায় যেকোনো সময় যেকেনো দূর্ঘটনা হতে পারে সন্ধ্যার পর এই রাস্তা সেভ নয়। অভ্র নিজের জন্য নয় তার চিন্তা ভাবনা তো বর্ষাকে নিয়ে। একবার এক দূর্ঘটনা থেকে বেঁচেছে তাই আর কোনো দূর্ঘটনায় তাকে সে কোনো ভাবেই ফেলতে চায় না। এর জন্য রাস্তায় যাই হয়ে যাক না কেনো কোনো ভাবেই গাড়ি থামানো যাবে না।

সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে এক ধ্যানে গাড়ি চালাচ্ছে আর এসব চিন্তা করছে। জানালা দিয়ে হাত বাহিরে রেখে বৃষ্টির জল হাতের তালুতে জমাট করছে বর্ষা। হাত ভেতরে ঢুকিয়ে হঠাৎ অভ্রর মুখের উপর পানি ছিটকে ফেললো আচমকা পানির ছিটেফোঁটা গায়ে পরতে লাফিয়ে উঠে সে সেকেন্ডেই ধ্যান ভেঙ্গে হুঁশশ ফিরে আসে। বাম গালের পুরো অংশ জুড়ে পানির ছিটেফোঁটা পরে আছে। অভ্র বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফুপে বর্ষার দিকে তাকায় বর্ষাকে খিলখিল করে হাসতে দেখে সে নিজেও হাসতে শুরু করলো।

বর্ষা হাসতে হাসতে অভ্রর কাঁধের উপর মাথা রাখে। অভ্র গাড়ি ব্রেক করে বর্ষার উদ্দেশ্য এক আঙুল দিয়ে জানালার বাহিরে ইশারা করে বলল, ‘ ওই দেখো আকাশে চাঁদ ‘

বর্ষা আঁড়চোখে আকাশে তাকিয়ে ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ বৃষ্টি হলে আকাশে চাঁদ থাকে নাকি? ‘

অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে নির্মূলকন্ঠে বলল, ‘ থাকে তো যেমন আমার পাশে বসে আছে। ‘

বর্ষা অভ্রর কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলে তারপর ঘুরে অভ্রর দিকে তাকায়। অভ্র এক ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষা কিছু বলতে যাবে তখন অভ্র বর্ষাকে বিস্মিত করে দিয়ে বর্ষার অষ্টদ্বয়ের সাথে নিজের অষ্টদ্বয় এক করে নেয়। এক গভীর উষ্ণতা অনুভবে শিহরন বয়ে যায়।

এক ধাক্কা দিয়ে অভ্রকে দূরে ঠেলে দেয় শানিতকন্ঠে বর্ষা জিজ্ঞেস করল, ‘ এটা কি হলো? ‘

অভ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, ‘ বুঝোনি কি হলো? আসো আরেকবার উম্মাহ দিয়ে বুঝিয়ে দেই। ‘

বর্ষা সিটের সাথে চিপকে লেগে থেকে বললো, ‘ একদম আমার কাছে আসবে না। ‘

‘ যদি আসি তো কি করবে? ‘ অভ্র ডেভিল হাসি দিয়ে বলল।

শুকনো ঢোক গিলে বর্ষা বলল, ‘ আমি তাহলে ‘

‘ তুমি তাহলে কি? ‘ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়লো অভ্র।

‘ তাহলে আমি জানালা দিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে যাবো৷ ‘

বোকা বোকা চাহনি ফেলে অভ্রর দিকে তাকিয়ে মুখে যা আসছে তাই বলে উঠছে। অভ্র গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বর্ষার দিকে তাকিয়ে উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো। বর্ষা বুঝতে পারলো সে এক বেহুদা কথা বলেছে যার কোনো ভিত্তি নেই লজ্জা পেলো সে তাই মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলো।

হাসি থামিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো অভ্র। বাহিরে এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা পরছে। বর্ষা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্ট গুলোর দিকে তাকিয়ে অভ্রর উদ্দেশ্য বলল, “ আমার সাথে এক সন্ধ্যা কাটাবে অভ্র এক কাপ চা সঙ্গে নিয়ে? কোনো এক ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোর নিচে বসে? ”

অভ্র বর্ষার দিকে এক নজর তাকিয়ে আবারও গাড়ি চালাতে মন দিলো। বর্ষা অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কি হলো উত্তর দিলে না যে? ‘

অভ্র বর্ষার গালে হাত রেখে বলল, ‘ তুমি বললে তো ল্যাম্পপোস্ট’টাকেই তুলে নিয়ে আসবো! ‘

বর্ষা রাগী গলায় বলল, ‘ তুলে নিয়ে আসতে বলিনি৷ বলছি খাবে বা বসবে কি না? ‘

স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে সে বলল,’ বেঁচে থাকলে কোনো একদিন ইন শা আল্লাহ! ‘
________________
বাড়িতে সকলে দুশ্চিন্তা করবে ভেবে অভ্র আগেই তিন্নিকে মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছিলো বর্ষা ওর সাথেই আছে। তিন্নি নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ির সকলকে বলে বর্ষার জন্য চিন্তা না করতে ও অভ্র ভাইয়ার সাথে আছে।

বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত আটটা বেজে যায়। গাড়ি গ্যারেজে রেখে দু’জনে দরজার সামনে আসে। কলিংবেল চাপতে যাবে তখন দরজা হাফ খোলা দেখে বেশ অবাক হয় অভ্র। ভেতরে ঢুকে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে হল রুমের দিকে হাঁটা দেয়।

বাড়ির বাচ্চা’রা খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। ছোট’রা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বড়’রা সোফার উপরে বসে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে। হেঁটে আসতে আসতে বর্ষা ও অভ্রর কান অব্ধি যতটুকু পৌঁছালো সেটা হচ্ছে, অভ্রর মা বর্ষার বাবার উদ্দেশ্য বলল, ‘ বর্ষার জন্য ভাইজান আপনি ছেলে খুঁজছেন আর আমরাও ভাবছি অভ্রর জন্য মেয়ে দেখবো। তাই আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে কেননা আমরা বর্ষা অভ্র’র দুইহাত এক করে দেই। ‘

অভ্র’র পাশ থেকে লাফিয়ে বর্ষা উৎকন্ঠে বলে উঠল, ‘ বড় আম্মু আমি রাজি! ‘

অভ্র বড়বড় চোখ করে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষার কন্ঠ শুনে সকলে ঘুরে ওদের দুজনের দিকে তাকালো। বৃষ্টি, রিয়া, রিমা, তিন্নি, মুন্নি ও পুতুল ওরা ওদের মুখ অর্ধেক হা করে বেআক্কেলের মতো তাকিয়ে আছে। অভ্র সকলের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো। পেছন থেকে বর্ষার পিঠে এক ঘুসি মারলো। বর্ষা অস্ফুটস্বরে, ‘আউচ’ বলল। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে বাড়ির সকলের দিকে তাকাচ্ছে বর্ষা। সকলে বর্ষার দিকে চোখ জোড়া ছোটছোট করে ভ্রুযুগল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনই সকলে বসা থেকে উঠে এসে এক এক করে এসে মারবে চড়। বর্ষা শুকনো ঢোক গিলে আমতাআমতা করে বলল, ‘ ওই আমার রুমে ভূমিকম্প হচ্ছে আমি দেখে আসি। ‘

বলেই সিঁড়ির দিকে দিলো দৌঁড়। বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কিয়ৎক্ষণ পর সকলে সশব্দে হেসে উঠলো। এইভেবে মিথ্যে বলে গেলেও সেটা কি রুমে ভূমিকম্প হচ্ছে? ভাবতেই সকলের হাসিরছটা থামছেই না।

বর্ষা চলে গেলে বর্ষা’র বাবা অভ্রকে তাদের কাছে গিয়ে বসতে বলেন।

নূর ইসলাম অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ দাদুভাই তুমি কি বর্ষাকে বিয়ে করবে? তোমার মতামত কি? ‘

অভ্র কাঠকন্ঠে বলল, “ অবশেষে তোমরা কি না আমার গলায় ওই হাফ মেন্টাল মেয়েটাকে ঝুলাতে চাচ্ছো। ”

দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে বর্ষা অভ্রর কথা শুনে রাগী কন্ঠে বলল, ‘ আমি হাফ মেন্টাল বজ্জাত? ‘

মনোয়ারা বেগম ধীর কন্ঠে বললেন, ‘ ঠিক আছে! তুমি বিয়ে করতে না চাইলে আমরা জোর করবো না। আমরা তোমার জন্য না হয় অন্য মেয়ে দেখবো। ‘

পরে গেলো তো অভ্র মিন্কার চিপায়, নিজেই নিজেকে ধাতস্থ কন্ঠে বলল, ‘ কেনো যে এত বকবক করতে গেলাম এবার পরে গেলাম তো নিজের ফাঁদে নিজেই। ‘ (মনে মনে)

জোরপূর্বক হেসে অভ্র বলল, ‘ আমার কোনো সমস্যা নেই। তোমরা রাজি থাকলে আমিও রাজি। বিয়ের তারিখ ঠিক করো! ‘

বলে অভ্র ও নিজেকে বাঁচিয়ে সকলের সামনে থেকে ছুট্টে চলে গেলো। সকলে অবাক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকালো পরক্ষণে সশব্দে হাসতে লাগলো।
____________

ঘন্টা খানেক পর-

খাবার টেবিলে সকলে জড়োসড়ো হয়েছে শুধু বর্ষা বাদে। যেহেতু এ বাড়ির নিয়ম সকলের একসাথে খাওয়ার। তাই বর্ষা না আসা অব্ধি কেউ খেতে পারছে না।

তিন্নি সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘ ও কি পরছে এসব? ও কি পাগল হইছে? ‘

সকলে তিন্নির দৃষ্টি লক্ষ্য করে পেছনে তাকালো। বর্ষা একসাথে তিন থেকে চার পাঁচটা শীতের পোশাক পরেছে ওকে দেখতে ইয়া মোটা লাগছে। মোটার জন্য তেমন ভাবে হাঁটতে পারছে না। সকলের দৃষ্টি স্থির বর্ষার ওই অদ্ভুত পোশাকের উপরে। বর্ষা হেঁটে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালে অপূর্ব বলে উঠল, ‘ এতগুলো সুয়েটার পরছিস কেন তাও এত মোটা মোটা? ‘

পাশ থেকে পুতুল বলল, ‘ পাগল হইছিস তুই? এতগুলো পোশাক একসাথে কেউ পরে তাও এত গরমের মধ্যে? ‘

নাহিদ পুতুলকে সাপোর্ট করে বলল, ‘ বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে তবুও আমরা বাড়ির ভেতরে থাকতে পারছি না। গরমের জ্বালায় আর তুই এত গুলো সুয়েটার কিভাবে পরে আছিস? ‘

বর্ষা একনজর অভ্রর দিকে তাকালো। অভ্র টেবিলের উপর হাত রেখে হাতের তালুতে থুতনি ভোর দিয়ে বর্ষার দিকে টেপটেপ করে তাকিয়ে আছে।

বর্ষা সকলের দিকে তাকিয়ে শানিতকন্ঠে বলল, ‘ আমি শুনেছি কেউ একজন কিছুক্ষণ আগে আমাকে বলছে আমি নাকি হাফ মেন্টাল আর হাফ মেন্টাল পার্সন যা ইচ্ছা তাই করতে পারে হুহহ! ‘

বলেই মুখ ভেংচি কেটে দেয়ালের দিকে তাকালো। বর্ষার কথা শুনে অভ্রর হাত টেবিলের উপর থেকে কিছুটা সরে গেলো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো সে নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো বর্ষার দিকে তাকিয়ে রইল। মনে মনে বলল, ‘ শুনে ফেলছে? ‘

এদিকে বর্ষার কথা শুনে ছোট বড় সকলের হাসতে হাসতে মাটিতে ঘোরাঘুরি খাওয়ার মতো অবস্থা হচ্ছে। কেউ কেউ টেবিলের উপর হাত চাপড়ে হেসে যাচ্ছে তো কেউ টেবিলের উপর মাথা রেখে হাসছে আর কেউ কেউ তো চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। সকলের হাসি দেখে অভ্র সে-ও হেসে ফেললো। আড়চোখে সকলকে হাসতে দেখে বর্ষা সে নিজেও ফিক করে হেসে উঠল।

অনেকদিন পর সকলে একসাথে মন খুলে হাসছে আর সেটা হয়েছে বর্ষার জন্য নূর ইসলাম বর্ষাকে ইশারা করে তার কাছে যেতে বললেন। বর্ষা তার দাদার কাছে গেলে তিনি বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ‘ বেঁচে থাক বোইন! আল্লাহ তোকে সারাজীবন এমন হাসি খুশি রাখুক। ‘

পরবর্তীতে অভ্রর হাত ধরে বর্ষার হাতের উপর রেখে বললো, ‘ তোরা চির সুখী হো! তোদের জেনো কারো নজর না লাগে। আল্লাহ তোদের জুটি সহিসালামত রাখুক। ‘

অভ্র হঠাৎ বর্ষার দিকে তাকায় আর দু’জনেরই চোখাচোখি হয়ে যায়। বর্ষা টুক করে একটা চোখ টিপ দিয়ে দেয়। অভ্র ভাবান্তর হয়ে চোখ জোড়া বড়বড় করে বর্ষার দিকে তাকায়। বর্ষা এবার ডেবিল হাসি দিয়ে সকলের সামনে থেকে চলে যায়। এবং বলে যায় সবাই খাওয়া শুরু করো আমি ড্রেস চেঞ্জ করে দু’মিনিটে আসছি। অভ্র স্বপ্নেও ভাবেনি বর্ষা সকলের সামনে তাকে চোখ টিপ মারবে তাও ভালো কেউ দেখেনি। দেখলে কি হতো? ইজ্জতের ফালুদা!

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here