অবন্তর_আসক্তি #পর্ব_১২,১৩,১৪

0
1219

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১২,১৩,১৪
#Sharmin_Akter_Borsha
১২

‘ সব কিছুর একটা লিমিট থাকে, পেয়েছে টা কি সে আমাকে? ‘ চেচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে নিলাম। এমন ভাবে চেচানো শুনে পুতুল আপু মুন্নী আপু ও তিন্নি আপু রুম থেকে বের হয়ে আসল। আমার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

‘ কি হয়েছে? কে তোকে কি পেয়েছে? ‘

আমি উপর নিচ তাকিয়ে বেক্কেলের মতো প্রশ্ন ছুঁড়লাম, ‘ আমি কখন বলেছি আমাকে কেউ কিছু পেয়েছে? ‘

তিনজনে আঁড়চোখে একে অপরকে দেখে আবারও বলল, ‘ দুই মিনিট আগেই তো চেচিয়ে বললি। ‘

‘ আমি কিছু বলিনি তোমাদের তিনজনের কানে সমস্যা যাও ডাক্তার দেখাও, দুনিয়ার যতগুলা বয়রা সব আমার বংশেই আল্লাহ দিছেন ‘ বলে তাদের সামনে থেকে চলে গেলাম

‘ কি বলে গেলো? ‘ পুতুল আপু বলল।

‘ আমাদের বয়রার সার্টিফিকেট দিয়ে গেলো। ‘ মুন্নী আপু বলল।

‘ ও নিজে পাগল সেটা ও জানে? ‘ তিন্নি আপু বলল।

রুমে এসে ঝটপট রেডি হয়ে গেলাম। কলেজ যেতে হবে আমার কোনো ভাবেই আজ কলেজ মিস করা যাবে না। রেডি হয়ে কলেজের জন্য বেরিয়ে পরলাম।

একাই আসতে হলো রিয়ার পেটে ব্যাথা তাই বাড়িতে রেস্ট নিচ্ছে। কলেজে এসেও শান্তি নেই একটু ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছি না। আমার আমার বান্ধপী গুলান (বান্ধবী গুলো) আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে। আরও একজন সে আজ কলেজে আসেনি।

নিঝুম: দোস্ত ওইদিন রাস্তায় তোর অভ্র ভাইয়া কে দেখেছি বুঝছিস বাইক কি স্পিডে চালিয়ে যাচ্ছি যা জোস লাগছিল না।

আমি ভ্রু কুঁচকালাম আড়চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লাম, ‘ বাইক চালাচ্ছিল আর তুই তাকে দেখে ফেলেছিস? তোর চোখ তো চিলের চোখের থেকেও একধাপ এগিয়ে। ‘

নিঝুম: আরে কি যে বলিস না তুই। আমি বাজারে গিয়েছিলাম আম্মুর সাথে তখন দেখলাম একটা ব্লাক পাঞ্জাবি পরা ছেলের ব্যাক। তো পেছন থেকেই দেখে এতটা ক্রাশিত লাগছিল কি বলবো। তাই আমি ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম মুখ টা দেখার জন্য, মিনিট কয়েকপর সে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। পেছনে ঘুরলে আমি তাকে দেখে শূন্য ভাসতে লাগলাম। উনার চেহারা দেখে চিনলাম সে তোর অভ্র ভাই আর বলিস না যা কিউট রে কি বলবো আমি।

‘ হইছে হইছে তোর ন্যাকামি বন্ধ কর। ওই মোটামুটি একটু কিউট আর কি ‘

‘ কি বলিস দোস্ত এইসব? তুই তাহলে তাকে ভালো করে দেখিসই নি দেখলে নিশ্চয়ই ক্রাশ খেতি আল্লাহ সে এত কিউট? তুই জানিস তাকে দেখার পর আমার বুকের ভেতর চিলিক পেরে উঠেছিল। মাই লাভ মাই ক্রাশ ‘

ওর কথা আর হজম হচ্ছে না, তাই দুই হাত দিয়ে ওর চুল ধরে টান মারলাম। নিঝুম ব্যাথা পেয়ে, ‘মা গো ‘ বলে চেচিয়ে উঠল৷ স্যার ভ্রু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকালেন কন্ঠকঠোর করে বললেন,

‘ কত দিন বলছি তোমরা চারজন একসাথে বসবে না। তবুও কেন বসো? বের হয়ে যাও আমার ক্লাসরুম থেকে পুরো ক্লাস বাহিরে থাকবে। ‘

এমনিতেই মুড অফ তার উপরে বাঁচাল টার বকবক শোনার থেকে বাহিরে গিয়ে গাছের নিচে বসে বাতাস খাওয়াই ভালো। হনহনিয়ে বের হয়ে চলে আসলাম ক্লাস থেকে, বাহিরে এসেও শান্তি নেই। বাহিরে তীব্র রোদ তার উপরে ফাজিল অসভ্য মেয়ের অভ্র ভাইয়া কে নিয়া গুনগান আমার মাথা গরম করে ফেলছে।

স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেই আমরা তিনজন ঢুকে পরি। বিরক্তি নিয়ে ক্লাস শেষ করলাম।

কলেজ গেইটের সামনে এসেই চরম লেভেলের অবাক হলাম, চোখ জোড়া কপালে উঠে গেলো।
কলেজ গেইটের সামনে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অভ্র ভাইয়া পরনে ব্লু শার্ট, হাতা ফোল্ড করা, কালো প্যান্ট, চুলগুলো কপালের এক পাশে পরে আছে। হাতে মোবাইল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। আমি দেখিনি প্রথমে, দেখেছে নিঝুম ওর নজরে পরতেই চেচিয়ে উঠল, ‘ আরে আমার ক্রাশ ‘

নিঝুমের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনে তাকিয়ে দেখি উনি দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেখতে অবশ্য কিউট লাগছে তাতে আমার কি?
ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম তবুও সে দেখে ফেলছে।
পেছন থেকে ঢেকে বলল, ‘ বর্ষা দাঁড়া ‘

আমি ঠোঁট উল্টো করে দাঁত দিয়ে হাল্কা চাপ দিলাম। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেই। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে নিঝুমকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

‘ কোণ্থে কুত্তার ঘেউঘেউ আওয়াজ আসছে রে? ‘

দোমকা হাওয়ার মতো সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল, ‘ কি বললি তুই? ‘

অবাক হওয়ার মতো ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থেকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম,

‘ জি আমাকে বলছেন? ‘

রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ তোকেই বলছি তুই আমাকে কুত্তা কেন বললি? ‘

‘ নিঝুম উনি কে? আর যেইহোক উনাকে বলে দে আমি কারো নাম ধরে বলিনি। আমি জাস্ট কুত কুত্তা বলেছি। আর উনি কি কুত্তা নাকি যে উনার গায়ে লাগছে? ‘

নিঝুম, ‘ দোস্ত ব্লু শার্টে যা জোস লাগছে না রে ‘
নেশালো কন্ঠে আমার কানে কানে বলল।
পেছনে তাকিয়ে ওর পায়ের উপর পা দিয়ে পাড়া দিয়ে ফুসতে লাগলাম। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে কিভাবে আমারই পেছনে আমারই কানে কানে তাকে সুন্দর বলে ননসেন্স। রাগ দেখিয়ে চলে যেতে নিলে সে ডেকে বলল,

‘ আমি তোকে পিক করতে আসছি বাইকে উঠ ‘

‘ সকালে চুল ধরে টান মেরেছিলি মনে নেই। কিছুতেই তোর সাথে যাবো না। ‘

‘ কাল অব্ধি আপনি করে বলছিলি আর এখন তুই? ‘

নিঝুম আমাকে টেনে অভ্র ভাইয়ার সামনে থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে আসল কানে কানে আবারও বলল, ‘ দেখ দোস্ত আমার কলিজায় লাগে তুই কেন আমার ওর সাথে এমনে কথা বলছিস? ‘

আমি জেনো আকাশ থেকে পরলাম অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বের হয়ে আসল, ‘ তোর ও মানে? ও তোর কবে হলো? ‘

‘ যবে থেকে আমি ওকে দেখেছি ‘

‘ তুই চুপ করবি নিঝুম সকাল থেকে মাথা খেয়ে ফেলছিস ওই ঘুরেফিরে এক কথাই বলছিস। তোর ও না যা ওর কোলে গিয়ে বসে থাক। আর যদি তাও না হয় গিয়ে বল তোকে বাড়িতে ড্রপ করে দিতে আমার মাথা খাস না। ‘

বলে নিঝুম কে এড়িয়ে হাঁটতে লাগলাম। অসহ্য হয়ে গেছে কি আছে ওই ওর মধ্যে যার জন্য যেই দেখে সেই প্রেমে পরে যায় আজব। নিজের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলছিলাম। হঠাৎ মাথা তুলে রাস্তায় এক নজর তাকাতেই চোখ আঁটকে গেলো। সত্যি সত্যি অভ্র ভাইয়া নিঝুমকে বাইকের পেছনে তুলে বাইক স্পিডে চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকাতে জেনো আরও স্পিড বাড়ালো সাথে নিঝুম আমার উদ্দেশ্যে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো। রাস্তার মাঝে ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি, প্রচুর ম্যাজাজ খারাপ হলো, আমি যাইনি বলে কি আমার ফ্রেন্ড কে নিতে হবে নাকি? আমাকে আর দুই একবার বললেই আমি হয়তো রাজি হয়ে যেতাম। রাগ উঠে গেলো মাত্রারিতিক্ত, আমার মস্তিষ্ক আমাকে জানান দিচ্ছে আমাকেও কিছু একটা করতে হবে হার মানলে চলবে না৷ তখনই রাস্তায় আমার পাশে একটা বাইক এসে থামলো, চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকালাম। ছেলেটার গায়ের রং শ্যামল বর্ণের তবে ফেস কাটিং ওতো টা খেয়াল করিনি। একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। ছেলেটা আমার হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে বাইক স্লো টানছে, আমি কয়েকবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ছিলাম লোকটার দিকে, খারাপ মনে হলো না তাই আমিও পাত্তা না দিয়ে জোরে পা চালিয়ে হাঁটতে লাগলাম।

সে আমার সামনে বাইক থামিয়ে বলল, ‘ একা একা যাচ্ছেন চাহিলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারি? ‘

আমার মস্তিষ্ক তখন শূন্য মাথায় ঘুরছে তখন অভ্র ভাইয়ার সাথে নিঝুম চলে গেছে। ছেলেটা ড্রপ করার কথা বলার পরপরই আমি কোনো কিছু না ভেবেই একটা অচেনা ছেলার সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলাম। আমি বাইকের পেছনে উঠে বসতেই উনি বাইক স্টার্ট দিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর খেয়াল করলাম আমাদের রাস্তার আনাচে-কানাচেতে কোথাও অভ্র ভাইয়া নেই।

বাড়ির সামনে এসে উনি আমাকে নামিয়ে দিলেন, আমি উনাকে কয়েকবার বাড়িতে আসতে বলেছি কিন্তু তাতে উনি দ্বিধা বোধ করলেন। বললেন, ‘ পরে একদিন সময় করে আসবো। ‘

আমিও মুচকি হেঁসে উনাকে বিদায় জানিয়ে গেইটের ভেতরে ঢুকলাম। দারওয়ান দাদাকে সালাম জানিয়ে চলে আসি।

সিঁড়ি দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে উঠছিলাম। সিঁড়ির উপর পা স্লিপ করে পরে যাই।

‘ বাবা গো ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠি, উপরের রুম থেকে আমার সবগুলো ভাইবোন বের হয়ে আসে। আমি পরে গেছি ছুটে এসে আমাকে তুলে উঠাবে তা না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবগুলো অট্টহাসিতে মেতে উঠেছে। প্রচুর খারাপ লাগছে আমার পায়ে লাগা ব্যাথার জন্য না৷ আমি পরে গেছি ওরা হাসছে তা দেখেই।

চোখের কার্নিশে এক ফোঁটা অশ্রু জমাট বেঁধেছে। গড়িয়ে পরবে এমন সময় কারো শক্তপোক্ত হাতের হিচকা টানে দাঁড়িয়ে পরলাম। মাথা তুলে দেখবো কে সেটুকুও সময় পাইনি। সে আমাকে দাঁড় করিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে পাঁজাকোলে তুলে নিয়েছে।

সিঁড়ি দিয়ে উঠে সোজা আমার রুমে নিয়ে আসে। রুমের মাঝ বরাবর দাঁড় করিয়ে দেয়। পায়ে আমার এখনও টনটন ব্যাথা করছে। আমাকে ছেড়ে দিয়ে সে দরজা আটকিয়ে দিলো। আমার সামনে এসে দাঁড়ালো, চোখাচোখি হতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চোখগুলো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। চোখ দিয়ে মানুষকে ধ্বংস করে দিবে এমন। আমি ভীতু কন্ঠে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সে আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে বলল, ‘ ওই

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৩
#Sharmin_Akter_Borsha
_________
তার পুরুষালী শক্তপোক্ত হাতে এমন ভাবে চেপে ধরেছে৷ এই বুঝি আমার হাতের হাড় কট করে ভেঙে যাবে। দাঁত কিলবিল করে কঠোর গলায় বলল,

‘ ছেলেটা কে ছিলো? ‘

আমি মিনমিন কন্ঠে বললাম, ‘ আমি চিনি না। ‘

‘ চিনিস না তো বাইকের পেছনে কেন উঠেছিলি? ‘ চেঁচিয়ে ধমকের স্বরে বলল।

ধমকের স্বর এতটাই তীক্ষ্ণ ছিল যে, চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলি। হাত আমার আরও শক্ত করে চেপে ধরল যার জন্য আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম, ‘ উহহ, লাগছে আমার। ‘

‘ আমারো লেগেছিল যখন তোকে ওই ছেলের বাইকের পেছনে দেখেছিলাম। কোন সাহসে তুই অন্য একটা ছেলের বাইকে উঠলি? আমি যখন গিয়েছিলাম তখন আমার বাইকের পেছনে কেন তেজ দেখিয়ে উঠিসনি? ‘

‘ আমার ইচ্ছা হয়েছিল তাই উঠেছি তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে যাবো না হাত ছাড়ো আমার নাহলে। ‘

‘ নাহলে কি করবি তুই আমার? ‘

বলে কিছুটা টান মারল। আমি তাল সামলাতে না পেরে উপচে পরলাম তার বুকে। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছিলাম। মাথার সাথে বুকের ছোঁয়া লাগতেই আমি নিজ থেকে সরে যেতে চাইলাম। অভ্র ভাইয়া সে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার দুই বাহু তার দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল। আমাকে কিছুটা ঝাঁকিয়ে বলল,

‘ কি হয় ছেলেটা তোর বয়ফ্রেন্ড? ‘

আমার বুদ্ধি শুদ্ধি লোভ পেয়েছিল হয়তো তাই প্রতিত্তোরে আমি তেড়া কথা বলি। জানি না কেনো উনি হঠাৎ এমন বিহেভ করছে? আমার বুঝার বাহিরে,

‘ হ্যাঁ আমার বয়ফ্রেন্ড তাতে আপনার কি? ‘

‘ বর্ষা’হহহহহহ ‘

বলে হাত ছেড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় আমাকে মেঝেতে। আমার রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় দরজা বিকট শব্দ তুলে বন্ধ করে যায়। ইচ্ছে তো করছিল চুল গুলো টেনে টেনে ছিঁড়ে দিতে গরু কোনহান কার। আহহ পায়ের ব্যাথা এখনও রয়েছে, তার সাথে এখন হাতও ব্যাথা করছে মরন।
__________
এক ঘন্টা ধরে একটা ম্যাথ নিয়ে বসে রয়েছি আন্ডা ঘোড়ার ডিমও পারছি না কিছুতেই স্লভ করতে, ইচ্ছা করতাছে বই খাতা দু’টো কেই ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিতে কিন্তু বই ছিঁড়লে স্যার আমাকে গরম পানিতে সিদ্ধ করবেন। অনেকক্ষণ চুলের মধ্যে হাত গুঁজে বসে থাকতে দেখে রুমে আসল তিন্নি আপু আমার কাঁধের উপর হাত রেখে বলল,

‘ আবারও ম্যাথে সমস্যা? ‘

আমি তারদিকে মুখ তুলে তাকিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়ালাম। তিন্নি আপু আমার সামনে একটা চেয়ার টেনে বসল। আমার হাত থেকে বই ও খাতা টা সে নিয়ে নেয়। বেশ কিছুক্ষণ বই ও খাতায় চোখ বুলিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, ‘ বর্ষ্যু তুই বরং অভ্র ভাইয়ার কাছে যা সে তোকে সবটা ক্লিয়ার করে বুঝিয়ে দিবে। আমার একটা ইমপোর্টেন্ট কল করতে হবে আসছি আমি। ‘

বলে খাতাটা টেবিলের উপর রেখে চলে গেলো। কি ভাবছেন সত্যি সত্যি কল করতে গেছে। ডাহা মিছা কথা, পারছিল না তাই ডপ মেরে পালিয়েছে। কিন্তু যাওয়ার আগে ভালো বুদ্ধি দিয়ে গেছে। কিন্তু আমি এখন অভ্র ভাইয়ার রুমে যাবো কিভাবে সে তখন আমার সাথে কি বাজে ব্যবহার টাই না করেছিল। ‘

বলে চুপটি মেরে কিছুক্ষণ মুরগির বাচ্চার মতোন ঝিমোচ্ছিলাম। কলমের উল্টো দিক দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলাম,

‘ আমি তো তার কাছে দরকারে যাবো আর সে তো বলেই দিয়েছিল দরকার ছাড়া তার রুমে না যেতে, এখন তো আমার দরকার তাই যেতেই পারি। কিন্তু দুপুরের মতো লাগামছাড়া বিহেভ করলে তখন আবারও যদি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়? আরে ধূর দিলে দিবে, রুমে বসে বসে এত চিন্তা করতে পারবো না গিয়ে তো দেখি কি করে। যদি বকে চাচি আম্মুর কাছে বিচার দিমু। ‘

বলেই বই খাতা কলম হাতে নিয়ে বের হয়ে পরলাম।
মনের মধ্যে চড়ুইপাখির বাসার মতো ছোট্ট ভয় বাসা বেঁধেছে না জানি এখন কি হয়?

রুমের সামনে এসে বিপদ তারানি ফু দিলাম চিবুকে। শুকনো ঢোক গিলে রুমের দরজায় নক করলাম সে ভেতর থেকে বলল,, ‘ দরজা খোলা আছে ‘

দরজা আলতো হাতে খুললাম। ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি উনি করছে টা কি? এমন সময় সে না দেখেই ফসফস করে বলে উঠল,

‘ কোনো প্রয়োজন থাকলে ভেতরে আসতে পারিস আর নয়তো আমার রুমে উঁকি ঝুঁকি পারার জন্য চড় লাগাবো। ‘

দরজা ঠাস করে খুলে দাঁড়িয়ে ভেজা বিড়ালের মতো বললাম,

‘ ওই আম, আমা, আমার ম্যা ম্যাথ ‘ আমতা আমতা করে বলছি মুখ দিয়ে জেনো কথাই বের হচ্ছে না।

‘ বই আর খাতা টেবিলের উপর রেখে দুই হাত দূরে দাঁড়া মোটেও আমার গা ঘেঁষে দাঁড়াবি না। ‘

ইচ্ছে করছে বইগুলো টেবিলের উপর না রেখে তার মাথায় রাখি অসভ্য, যেভাবে বলছে মনে হচ্ছে জীবনেও কোনো মেয়ের সঙ্গে চিপকা চিপকি করেনি। আজকেও তো নিঝুমকে বাইকের পেছনে। (মনে মনে)

‘ তোর ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে বাস্তবে ফিরে আয়। ‘

তার কথা শুনলে কেনো জানি শরীর জ্বলে আমার রাগে দাঁত কটমট করছি। বই খাতা টেবিলের উপর রেখে আমি কিছু টা দূরে সরে দাঁড়ালাম।
শুরুতে ভালোই ছিল, সে যে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ছিল। তার সেইদিনে কোনো ভাবান্তর নেই। সে একদম নরমাল বসে রয়েছে।

বিপত্তি তো তখন ঘঠে যখন সে আমার বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখতে লাগে। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছে আর বলছে, ‘ আর কোনো জায়গায় প্রবলেম হলে বলতে পারিস। ‘

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই অভ্র ভাইয়ার ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো। সে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে বলল, ‘ এইটা কি? ‘

আমি তার দৃষ্টি নিক্ষেপ দেখে ভয় পেয়ে দুকদম পিছিয়ে যাই। সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার সামনে এসে আমার হাত আবারও শক্ত করে চেপে ধরল। ব্যাথায় আমি আবারও কুঁকড়ে উঠলাম। কান্না পাচ্ছে আমার ভীষণ এখানে আসা আমার উচিতই হয়নি। ব্যাথার উপরে আবারও ব্যাথা এক জায়গা তেই আবারও চেপে ধরেছে। আমি চোখ জোড়া পিটপিট করে তার দিকে তাকালাম। সে রাগী গলায় বলল,

‘ এই চিরকুট কিসের কে দিয়েছে তোকে এই চিরকুট? ‘

আমি তার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বই সহ চিরকুট আমার দিকে ছুঁড়ে মারল,
আমার উপর বইটা পরল, গা ছুঁয়ে মেঝেতে পরে যায়। মেঝে থেকে বই ও চিরকুট টা হাতে নিলাম। খুলে দেখলাম তাতে কি লিখা রয়েছে ।
খুবই সুন্দর হাতের লেখা, হাতের লেখা দেখে জেনো আমি ক্রাশ খেয়েছি, চিরকুটে লেখা :-

‘ যখন তুমি আমার কাছাকাছি থাকোনা তখন তোমাকে স্মরণ করেই আমি পরম সুখ অনুভব করি প্রিয়তমা। আমার সময় গুলো তোমাকে ছাড়া সুখে কাটানো যায় না। আমার হৃদয়ের অনুভূতি এবং সুখের কল্পনার আশেপাশে রয়েছো কেবল তুমি। আমি চিরকালের জন্য তোমার মিষ্টি এবং প্রেমময় স্পর্শ পেতে চাই।

তোমার প্রেমিক পুরুষ ‘

লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ যেই দিক না কেনো বেটা জন্মের রোমান্টিক। নিজের মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটছে, ভুল বসত মুখ দিয়ে বের হয়ে আসল।

‘ ওয়াও, টোটাল ফিদা। ‘

বলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকাতেই ভয়ে স্বস্ত হয়ে গেলাম। এতটা নিস্তব্ধতা আমাকে জানান দিচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস। আমি কিছু বলার আগেই সে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল, ‘ টোটাল ফিদা না কে দিয়েছে লাভ লেটার তোকে নিশ্চয়ই ওই বাইকের ছেলেটা দিয়েছে সে তো আবার তোর বয়ফ্রেন্ড। নাম কি ওর? ‘

শেষের টুকু ধমকের স্বরে চেচিয়ে বলল। আমি তার হাত থেকে নিজের হাত অতি কষ্টে ছাড়িয়ে নিলাম। উনার চোখের দিকে চোখ জোড়া ছোটছোট করে তাকিয়ে রয়েছি। উনার দৃষ্টি আমার চোখের মধ্যে সীমাবদ্ধ। একহাত দিয়ে টেবিলের উপর থেকে খাতাটা হাতে নিয়ে বুকে সাহস সঞ্চয় করে বললাম,

‘ নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। আবার দেখা হলে জিজ্ঞেস করবো তখন না হয় তোমাকে জানিয়ে দিবো। ‘

বলে রুম থেকে ছুটে পালালাম। সে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে রইল৷ পেছনে হয়তো বা আসতো কিন্তু তার আগেই উনার ফোনের রিংটোন বেজে উঠে। দাঁত কটমট করে ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।

যেভাবে ছুটে এসেছি আমার হাত পা শরীর কাঁপছে। বিছানার উপর বসে রয়েছি এদিকে হাঁপাচ্ছি। রুমের মধ্যে বৃষ্টি রিয়া রিমা প্রবেশ করল আমাকে এভাবে হাঁপাতে দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ কি হয়েছে? ‘

আমি কিছু বলার আগেই রিমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল আমার হাতের নীল চিরকুট টা। কালার পেপার, পেপারের কালার টা নীল তার মধ্যে লেখা শব্দ গুলো। যা যে পড়বে তারই লেখকের প্রেমে পরতে ইচ্ছা হবে। হাত থেকে ‘ছ’ মেরে কাগজ টা নিয়ে নিলো। মুখ দিয়ে বলতে বলতে কাগজ টা খুলছে, ‘ কিসের কাগজ এটা? ‘

আমি বললাম, ‘ নিজেই খুলে দেখে নে ‘

কাগজের ভাজ খুলে তা পরক্ষণ করতেই রিমা হা হয়ে গেলো। বাকিরা রিমার অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে তারাও ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,

‘ কি হয়েছে কি এমন পড়লি যার ফলে এমন ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছিস? ‘

রিমা কোনো কথাই বলল না শুধু কাগজটা বাকি দু’জনের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ওদের ও লেখাটা পড়ে একই অবস্থা তিনজনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে আমি লজ্জা পেয়ে বিছানার ঠাস করে শুয়ে পরি। ওরা তিনজন আমার পাশ কেটে শুয়ে বলল,

‘ কে রে তোর প্রেমিক পুরুষ? ‘

আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বললাম। ‘ আরে আমি যদি জানতাম কে ধরে বেঁধে বিয়ে না করে নিতাম ‘

রিয়া, ‘ ও হো হো, জল গড়িয়ে এত দূর আর আমরা কিছুই জানি না। ‘

‘ তেমন কিছুই না, আমিও জানি না কে সে? আমার বইয়ের পৃষ্ঠার মধ্য থেকে হুট করে বের হয়ে আসছে জানি না কে রেখেছে আর কোণ্থেকা আসলো বা কে দিয়েছে? ‘

‘ লাইক সিরিয়াসলি ‘ বৃষ্টি ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুড়ল।

‘ ইয়াহ ‘

‘ তোর প্রেমিক পুরুষ কে খুঁজে বের করতে হবে। ‘ রিমা বলল।

‘ তা তো বের করতেই হবে। ‘

তখনই দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করল।

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_১৪
#Sharmin_Akter_Borsha
_________
ক্যাম্পাস ভর্তি ছেলে পোলের সামনে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ জোড়া ছলছল করছে এই বুঝি টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরবে। কিন্তু আমি যথা সম্ভবত অশ্রু আঁটকে রাখার চেষ্টা করছি। কলেজের সকল ছাত্রছাত্রীদের সামনে ছিদকাদুনি মেয়েদের মতো কাঁদলে আমার ইমেইজ নষ্ট হয়ে যাবে তাদের সামনে। কিন্তু চোখ যে বাঁধা মানতে নারাজ চাইছে অশ্রু বিসর্জন দিতে। নির্দয়া পাশান ব্যক্তি সজোড়ে কষে গালে থাপ্পড় মারল তার কি মায়া দয়া হয় নাই নাকি? মনে তো হচ্ছে হয়নি! এভাবে কেউ মারে?

কান্না পাচ্ছে খুব। সকলের দৃষ্টি এখন আমাদের দু’জনের উপর স্থির। সকলে ঘুরে ঘুরে দেখছে আমাদের দু’জন কে, সাথে মনে মনে উপন্যাস তৈরি করছে। চোখের জল আঁটকিয়ে রাখার চেষ্টায় সফল হয়ে ছিলাম। কিন্তু অবশেষে ব্যর্থ হয়ে গেলাম তার চিৎকার শুনে। টুপ করে কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরল এক ফোঁটা নোনাজল।

‘ কলেজে ছেলেদের সাথে ঠলাঠলি করতে আসিস? ছেলেদের গায়ের সাথে গা কষতে খুব ভালো লাগে নাকি? আয় আমিই কষিয়ে দিচ্ছি দেখি কত ভালো লাগে? ‘

কঠোর গলায় কথাগুলো বলল। মাথা নত করে কথাগুলো হজম করলাম অশ্রুকণা চোখ বেয়ে গড়িয়ে তখনই পরল যখন সে আমার হাতের কব্জি শক্ত করে চেপে ধরে কলেজের এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে আমাকে পাশাপাশি দাঁড় করালেন। ভাইয়ার হাতের সাথে আমার হাত কষা লাগতেই আমার চোখ দিয়ে পানি পরে। ইচ্ছে করছে তাকে ধরে কষে উল্টো হাতে এক থাপ্পড় মারি। কিন্তু তা আমি করতে পারবো না। নিজেকে অতি দূর্বল মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি নির্ঘাত চড় মারতে দু’বার ভাবতাম না। কিন্তু উনাকে কিভাবে? রাগ কন্ট্রোল করতে পারছি না বলেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে গাল ল্যাপ্টে যাচ্ছে। আমি দুই হাত দিয়ে কলেজ ড্রেস শক্ত করে চেপে ধরি মুঠি বন্ধ করে নিয়ে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেই।
খানিক বাদ শুকনো এক ঢোক গিললাম। জোরে নিঃশ্বাস ফেলে চোখ জোড়া চট করে খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালাম। দাঁতে দাঁত চেপে কর্কশকন্ঠে চেচিয়ে বললাম,

‘ সমস্যা কি আপনার বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এসে চড় মেরে দিয়েছেন? পেয়েছেন টা কি? দুইদিন ধরে দেখছি আপনি আমার সাথে রুডলি বিহেভ করছেন কারণ কি তার? আপনি বিনা দোষে আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। দোষ করলে শাসন করার জন্য আমার বাবা মা জীবিত রয়েছে। আপনাকে তারা শাসন করার দায়িত্ব দেয়নি৷ আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে দুষ্টামি ফাজলামি করতেই পারি তার জন্য আপনি কোন আক্কেলে আমার গায়ে হাত তুললেন? ভাবেন টা কি আপনি নিজেকে? মুরাদ আমাদের ফ্রেন্ড অন্য দিক দিয়ে আহিতার বয়ফ্রেন্ড। ও আমার হাত থেকে চিরকুট টা ছিনিয়ে নিয়ে ছিল। আমি সেটাই ওর কাছ থেকে নিতে গেছিলাম। ও আমার থেকে লম্বা হওয়ায় আমি ওর হাত অব্ধি নাগাল পাচ্ছিলাম না। সে জন্যই লাফাচ্ছিলাম যাতে করে চিরকুট টা হাতে পেতে পারি। মোটেও আমি মুরাদের গায়ের সাথে কষাকষি করছিলাম না। আপনি যথেষ্ট শিক্ষিত আপনার মুখে এসব ভাষা সোভা পায় না৷ তাও সেটা নিজের ছোট বোনদের সাথে। চোখ দিয়ে কোনো কিছু দেখেই সেটা সত্যি মনে করবেন না। সত্য টা আগে যাচাই করবেন তারপর সিনক্রিয়েট করবেন। বড় ভাই বলে আমি কিছু বললাম না। অন্যথায় ইট মারার অপরাধে পাটকেল আমিও মারতে জানি মিস্টার আফনান আহমেদ অভ্র।

কথাগুলো বলে ক্যাম্পাস থেকে সোজা বেরিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য অডিটোরিয়ামে যাওয়া সেখানেই আড্ডা দিচ্ছে ও রিহার্সাল করছে আমার ক্লাসমেট গুলা সাথে আমার বোন ও বান্ধবী গুলাও। আমি মুরাদের সাথে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। জুনিয়র একটা মেয়ে এসে বলেছিল আমার জন্য ক্যাম্পাসে কেউ একজন অপেক্ষা করছে। আমি একাই যাচ্ছিলাম পেছন থেকে মুরাদ বলল সেও যাবে আমার সাথে। আমি, আহিতা, মাহিরা, নিঝুম, রিয়া, মুরাদ চারজন বেস্ট ফ্রেন্ড তবে জানি না কিভাবে আহিতা ও মুরাদ রিলেশনশিপে চলে গেছে তাও চার মাস হতে চলল।
হাঁটতে হাঁটতে আমি চিরকুটটার প্রসংজ্ঞ তুললাম। হাতে নিয়ে দেখছিলাম তখনই মুরাদ সেটা ‘ছ’ মেরে নিয়ে নেয়। আমিও হন্ন হয়ে পরি ওর হাত থেকে সেটা নেওয়ার জন্য লাফালাফির ফলে মুরাদের হাতের সাথে কয়েকবার আমার হাত টাচ লাগছিল। তখনই পেছন থেকে কেউ একজন আমার হাত ধরে হিচকা টান মেরে তার দিকে ঘুরায়৷ আমি কোনো কিছু বুঝার আগেই সে আমার গালে থাপ্পড় মারে। গালে হাত দিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। মাথা ঝিম মেরে আসছে দুনিয়া দাঁড়ি ঘুরছে। না আমি নিজেই ঘুরছি বুঝতে পারছি না। নিজেকে সামলে সামনে তাকালাম। মাটিতে শুধু দুইটা পা দেখতে পাচ্ছিলাম, এক হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলাম এখনো ঝিম মেরে আসছে। চড় টা যে মেরেছে তার মুখটা দেখার জন্য মাথা তুললাম সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুঠাম দেহের লোকটার দিকে তাকালাম। অভ্র ভাইয়া কে দেখে আমি অবাক হই বুঝতে পারছি না সে কেনো মারল আমাকে কি দোষ করেছি আমি?

অডিটোরিয়ামে আসতেই ভূত দেখার মতো ফেস বানিয়ে সকলে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তাদের মাঝখানে ধপ করে বসে পরলাম। তাদের মুখের দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে চেচিয়ে ধমকের স্বরে বললাম,

‘ কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? জীবনে দেখিসনি আমাকে? নাকি আসতো গিলে খাবি? ‘

তখনই সকলের দৃষ্টি গেলো আমার পেছনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটার উপরে সে তাদের সবগুলোকে চোখ ও হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলছে। ও যার যার মতো বসে থাকার জন্য ইশারা করছে। ভ্রু কুঞ্চিত করল সকলে, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। তারা জানতে ইচ্ছুক আমার গালে পাঁচ পাঁচ টা আঙুলের ছাপ কেনো?

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here